আটাশতম অধ্যায়
শোকাহত হৃদয়ের বেদনাদায়ক ক্ষত
এ স্মৃতিকথা লিপিবদ্ধ করে আমি যুবসম্প্রদায় এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের অন্তরে ইসলামের মর্যাদা বোধের প্রেরণা সৃষ্টি করতে চাচ্ছি। এক সময় মুসলিম উম্মাহ বিশ্বব্যাপী শক্তি ক্ষমতা ও শৌর্য-বী্র্যর প্রতীক ছিল এবং দুনিয়ার সকল বাতিল শক্তি তাদের ভয়ে সদা প্রকম্পিত থাকতো। দুর্ভাগ্যবশত আজ মুসলিম মিল্লাহ যে অপমান ও লাঞ্ছনার অসহায় শিকার তা থেকে মুক্তি লাভের কোন চিন্তাই করা হচ্ছে না। এক্ষণে আমাদের অবস্থা দাঁড়িয়েছে এই যে, আমাদের সার্বিক কর্মকান্ডের ফায়সালা আমাদের দুশমনদের হাতে সোর্পদ করা হয়েছে। তারা আমাদের অবগতি ও অনমতি ছাড়াই যা ইচ্ছা তাই ফায়সালা করে। মনে হয় আমরা যেন মশা মাছির সমতুল্য। আমি রেঁনেসার রূহ জাগরিত করে তুলতে চাই। যার ফলে উম্মাতের প্রত্যেক ব্যক্তি নিত্য নতুন প্রেরণা ও জীবন্ত অনুভূতির মূর্তপ্রতীক হিসেবে পরিদৃষ্ট হতে পারে। উম্মতের অপমান ও লাঞ্ছনা তার জন্য হয়ে উঠবে অসহ্য। এমনকি সে নিজে নিজেকে জ্বলন্ত অংগারের ওপর পার্শ্ব পরিবর্তনরত বলে অনুভব করবে। এরূপ অনুভূতি চাংগা হয়ে ওঠার পরই একজন মুসলিম যুবক চিন্তা-ভাবনা করতে সক্ষম হবে যে, সে কোন আকাশের বিচ্যুত তারকা। বর্তমাকালের মুসলিম শাসক ও শাসিত সবাই লাঞ্ছনার চাদর মুড়ি দিয়ে খরগোশের ন্যায় সুখ স্বপ্নে বিভোর। কারো ব্যক্তিত্ব ও অস্তিত্বের ওপর হামলা হলেই সে কত অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে। এমনকি কোন কোন সময় হত্যা ও প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য অগ্রসর হয়। অথচ আকীদা ও ঈমান ব্যক্তিগত মর্যাদা অপেক্ষা কত বেশী মূল্যবান। আর মুসলিম ভ্রাতৃদের অপমান যা খানায়ে কা’বা থেকেও বেশী সম্মানিত- তার দৃষ্টিতে কোন প্রকার গুরুত্বই বহন করে না। আমার ঐক্যান্তিক কামনা এই যে, আজকের যুবকরা ইসলামী মর্যাদাবোধ দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে প্রকৃত ইজ্জতকে বহাল করতে সক্ষম হোক এবং যেভাবে তাদের পূর্বসূরীগণ দ্বারা মাথার মুটুককে পদ পিষ্ট করে ছিলেন। তারা নিজেরাও সেরূপ সকল তাগুতকে মস্তকাবনত করার বজ্রকঠিন শপথ গ্রহণ করুক।
জাতীয় আত্মমর্যাদাবোধ অধপতন থেকে মুক্তির পথ
ইহুদীরা ফিলিস্তিন ভূ-খন্ডের ওপর তাদের আধিপত্য বজায় রেখেছে এবং মুসলিম সমাজের রক্ত দ্বারা হলিখেলা অব্যাহত রয়েছে। তারপরও এমন কিছু সংখ্যক মুসলিম রয়েছে যারা ইহুদীদের সাথে সখ্যাত বজায় রেখেছে। এমনকি তাদের সাথে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক স্থাপন করতেও কোন প্রকারন লজ্জা অনুভব করে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেন তাদের নিকট ফিলিস্তিনের মাটি মুসলিমদের নয় এবং ফিলিস্তিনবাসীও মুসলিম নয়। কাফেলার সাজ সরঞ্জাম হারিয়ে যাওয়ার জন্য কি কম দুঃখ ছিল? এখন সেই কাফেলার অন্তর থেকে ক্ষয়ক্ষতির অনুভূতিও লোপ পেতে বসেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে!
রাশিয়া আফগানিস্তানের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণ করতঃ আধিপত্য বজায় রেখেছে। কিন্তু কিছু সংখ্যক মুসলিম এ অন্যায় আচরণকে আদৌ কোন গুরুত্ব দিতে চায় না। এমনকি উল্টো তারা রুশদের সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা প্রদানেও সদা তৎপর। গোলান ও দক্ষিণ লেবাননকে ইস্রাঈলীরা তাদের নাপাক পায়ের নীচে দলিত মথিত করে চলেছে। অথচ আমরা শুধু মৌখিক জমা খরচ ব্যতীত আর কিছু করার হিম্মত দেখাতে পারছি না। এরীপ প্রতিবাদ বিবরণে ইস্রাঈলের দিল ও দেমাগ আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে এই শূন্যগর্ভ বিবৃতি মুসলিমদের অন্তরের ওপর করাত চালানোরই নামান্তর। আমরা সেই মর্যাদাবোধকে চাংগা করে তুলতে চাই যা আমাদেরকে আমাদের পবিত্র ভূমিসমূহ পুনরুদ্দার করতে অনুপ্রাণীত করতে সক্ষম হবে। আমরা হৃদয়ের পরতে পরতে যে অলসতা-উদাসীনতার সে প্রলেপগুলোর মূলোৎপাটিত করতে চাই যেগুলো আমাদের জীবনকে উদ্দেশ্যহীন এবং আমাদের অস্তিত্বকে নিরর্থক করে দিয়েছে। আমদের প্রয়াস-প্রচেষ্টা যদি সার্থকতা মন্ডিত হয়ে যায় তাহলে একাধারে ফিলিস্তিন, গোলান, দক্ষিণ লেবানন ও আফগানিস্তান তথা সমগ্র অধিকৃত মুসলিম অঞ্চল উম্মতে মুসলিমার অন্তরের দীপ্তি ও হৃদয়ের কম্পনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়ে যাবে। এ প্রাণপ্রিয় ও মাহমূল্যবান ভূ-খন্ড দুশমনদের আধিপত্য ও ছোবল থেকে ইসলামী মূল্যবোধ ও চেতানার সাহায্যেই কেবল পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে। নিজেদের হৃত ভূ-খন্ড পুনরায় ফিরে পাওয়ার চিন্তা সফরতার দিকে প্রথম পদক্ষেপ স্বরূপ। অলসতা উদাসীনতা ও নির্লিপ্ততার ফল এই দাঁড়াবে যে, পরিস্থিতির আরো অবণতি ঘটবে এবং পশ্চাদপদতার মেঘারাশি অধিকতর পাঢ়রূপ বৈরী শক্তি ইরাক-ইরান যুদ্ধের পশ্চতে উস্কানি দিয়ে চলেছে । অথচ এ বিধ্বংসী যুদ্ধ দ্বারা দু’টো ভ্রাতৃপ্রতীম মুসলিম রাষ্ট্রই তাদের শক্তি ও ক্ষমতা নিঃশেষ করে চলেছে। অতি সম্প্রতি আবার ইরাকের কুয়েত জবর দখল একই ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধেরই পুনরাবৃতি মাত্র। এ দৃশ্য দেখে ইস্রাঈল আনন্দে আটখানা। তার পোয়াবারো এই ভেবে যে তার শক্তি বৃদ্ধি করার সূবর্ণ সুযোগ এসে গেছে। ইস্রাঈল এ অশান্ত পরিস্থিতি জনিত সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুনরায় সিনাইয়ের ওপর অধিপত্য স্থাপন করে বসে কি না। বিপদের গাঢ় কৃষ্ণ মেঘ চক্ষুম্মান লোকদের দৃষ্টি সমক্ষ যথার্থই ভেসে উঠেছে। কিন্তু আরব ও অন্যান্য ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ ভোগ বিলাসের মহা সমুদ্রে নিমজ্জিত রয়েছেন। এ শাসনকর্তাদের আচর আর্চরণ দেখে সকল ধৈর্যশীল ও শান্তপ্রকৃতির লোকের মন-মেজাজও বিদ্রোহী হয়ে উঠবে এবং প্রত্যেক ধৈর্যধারণকারী মুসলিম ব্যক্তির ধৈর্যও নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
আমাদের ঐকান্তিক কামনা হচ্ছে মুসলিম জাতির আত্মমর্যদাবোধ জেগে উঠুক এবং সর্বোচ্চ আসন থেকে এমন কার্যকরী ঘোষণা দেয়া হোক যার ফলে দেখা যাবে যে মুসলিমদের অন্তর থেকে ঈমানের অগ্নিস্ফুলিঈ আজও সম্পূর্ণ নির্বাপিত হয়ে যায়নি। তাদের ওপর চেপে বসা অপমান ও লাঞ্ছনা সত্ত্বেও তারা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের লাঠি থেকে একেবারে বঞ্চিত হয়ে যায়নি। তারা তাদের হারানো গৌরব ও সম্মান পুনরায় লাভ করতে পারে। পারে শত্রুদের সমস্ত চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের ইন্দ্রজাল নিষ্ক্রিয় করে দিতে। ইচ্ছা ও ইস্পাত কিঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে কি করা সম্ভব নয়?
আমরা যখন আমাদের পক্ষ থেকে সকল চেষ্টা প্রচেষ্টা শেষ করবো এবং এতদসত্ত্বেও অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থকাম থেকে যাবো তখন সর্বজ্ঞানী আল্লাহ অবশ্যই তার সাহায্য সাহযোগিতা হস্ত প্রসারিত করে দেবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আজও যদি বদরের প্রান্তর সৃষ্টি করে নেয়া যায় তাহলে আকাশ থেকে দলে দলে ফেরেশতা অবতীর্ণ হবে। নিজেদের সাজ-সরঞ্জাম ও উপায়-উপকরণ ব্যবহার করার পর যখন সর্বশক্তিমানের দরবারে হাত তোলা হয় তখন তা খলি ফিরিয়ে দেয়া হয় না। “অসহায় নিরাশ্রয়ের ডাকে কে সাড়া দেয়- যখন তাকে আহবান করা হয় এবং তার ওপর আপতিত বিপদাপদই বা কে দূরীভুত করে দেয় আর কেইবা পৃথিবীতে তোমাদেরকে তার প্রতিনিধির মর্যদাদানে ধন্য করেছেন।” আমরা চাচ্ছি এ স্মৃতি কথা নিকট ও দূর ভবিষ্যতে আমাদের সূক্ষ্ম আত্মমর্যাদাবোধের উম্মেষ সাধনে এবং সুপ্ত অনুভূতিকে জাগ্রত করার জন্য যেন উপলক্ষ হতে পারে।
ইসলামের দুশমনেরা আজ আমাদেরকে চলমান লাশ সদৃশ্য মনে করে। তাদের মতে আমাদের মাঝে জীবনের চাঞ্চল্য আর অবশিষ্ট নেই। হে যুব সম্প্রদায়! তোমরা কি বাস্তবিকই এ অবস্থার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে গেছো? ইমাম শহীদ তার জীবদ্দশায় যুবকদের মধ্যে একটা বিদ্যুৎপ্রবাহ সঞ্চারিত করে ছিলেন। তাদেরকে জিহাদী চেতনায় অনুপ্রাণিত করেছিলেন। যুবকদের ভেথর এরূপ জীবন দায়িনী মনোবল ও বলিষ্ঠতা দেখে আমাদের শত্রুদের অন্তরাত্ম কেঁপে ওঠে। তারা তাদের অনুগত ও বিশ্বাস্ত সেবকদের নির্দেশ প্রদান করে যেন এ আন্দোলনকে অম্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়া হয়। যার ফলে মুসলিম শাসনকর্তারা ইসলামের দুশমনদের প্রতি তাদের বিশ্বস্ততার হক পুরোপুরি আদায় করতে গিয়ে হকের পথে আহবানকারীদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান আরম্ভ করে দেয়। এতে বিগত দিনের স্মৃতি চারণ মাত্র। হে যুব সমাজ! তোমরা কি কোন মূল্যবান কীর্তিগাঁথা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করে যেতে চাও না? যা দেখে ভবিষ্যত প্রজন্ম গৌরব বোধ করতে পারে। ওঠো! এবং বাতিলের চোখে চোখে নিঃশম্কচিত্তে ঘোষণা করে দাওঃ (************)
পলায়ন পর রত্রির অন্ধকার শেষ পর্যন্ত প্রখর সূর্যর দীপ্তিতে দেদীপ্যমান হয়ে উঠবে;
এ বাগান তাওহীদের সুমধুর সংগীতের মূর্ছনায় মুখরিত হয়ে উঠবে।
আরো শুনে রাখো, যদি উম্মতে উসলামিয়া অপমান ও লাঞ্ছনার পোশাক ছুঁড়ে ফেলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ না হয় তাহেল স্থায়ী লানতের বেড়ি তাদের নবীব হবে। আমি দিগন্তের কিনারে প্রত্যাশার আলোকচ্ছটা ঝলমলিয়ে উঠতে দেখছি। আকাশের অসীম নীলিমা থেকেও প্রদিপ্ত আশার আলোকে রাশ্মি প্রদীপ্ত হয়ে বেরিয়ে আসার দৃশ্য আমি প্রত্যক্ষ করছি। হতাশা ও নিরাশায় ভেংগে পড়ার কোনই কারণ নেই। সত্য পথের পথিকদের সর্বাপেক্ষা বড় আশ্রয় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এবং সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা রহমতে রাব্বুনী। হে গভীর নিদ্রায় অচেতনরা! অনেক ঘুমিয়েছো অলসভাবে কাটিয়ে দিয়েছো অনেক সময়। এবার উঠে পড়ো। তাকিয়ে দেখো এক্ষণে প্রভাতকালীন ঊষার আলো আকাশ থেকে আয়না সদৃশ্য পোশাক পরিধান করে ধরণীর বুকে আগমন করতে যাচ্ছে এবং রাতের সকল অন্ধকার এখনই শূন্যে মিলিয়ে যেতে চাচ্ছে।
কর্মফলেই জান্নাত ও জাহান্নাম
নিজে নিজেকে তুচ্ছ মনে করো না এবং স্বীয় দুশমনদের সম্মুখে নতজানু হয়ে বসো না। কর্মতৎপরতাই জীবনের পরিচায়ক, আর অলসতা ও কর্মবিমুখতা মৃত্যুরই নামান্তর। শ্রমের প্রতি অবহেলা ও অমনোযোগিতাই দুঃখ ডেকে আনে। বিপদ মুসিবত সহ্য করেই স্বর্ণে পরিণত হওয়া যায়। মৃত্যুর দরজা অতিক্রম করতে মুহুর্ত মাত্র দরকার হয়। তারপরই পরীক্ষা নিরীক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে এবং জান্নাতের সুসংবাদ মিলে। এভাবে যে বাতিলের পতাকাবাহী হয়ে পড়ে কিংবা তার ছাত্রছায়ায় থাকতে সন্তুষ্ট হয়ে ন্যক্কারজনক জীবন যাপন করতে থাকে- তাদেরকেও তো শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর হিমশীতল শরাব পান করতেই হয়। এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য এই যে, শেষোক্ত মৃত্যুর ঘঅট পাড়ি দিয়ে সোজা জাহান্নামবাসী হতে হয়। এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আপনার নিজেরই দায়িত্ব যে দ’টি ঠিকানার মধ্যে কোন ঠিকানা আপনি নিজের জন্য বেছে নেবেন। মানুষ যে বীজ বপন করে সে ফসলই ঘরে তুলতে পারে। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ওপর কখনো কোন জুলুম ও অন্যায় করেন না।
১৯২৮ সালে মিসরে যদি ইখওয়ানুল মুসলিমুনের আন্দোলন আরম্ভ না হতো তাহলে কে জানে আজ এখানে কি পরিস্থিতি বিরাজ করতো! যদি এ আন্দোলন দানা বেঁধে না উঠেতো তাহলে ইস্রাঈল ফিলিস্তিনকে এমনভাবে গলধকরণ করতো যে, প্রতিবাদ পর্যন্ত করা হতো না। তার নিন্দা জ্ঞাপনের জন্যও কেউ মুখ খুলতো না। আর করো সমালোচনা মুখর হয়ে ওঠার তাওফীক হতো না। ইমাম শহীদ শুরু থেকেই এ পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাই লাগাতর সর্তকবাণী উচ্চারণ করতে ও বিপদ সংকেত বাজাতে থাকেন। তিনি সর্ব-সাধারণের মনে আসন্ন এই বিপদের অনুভূতি সৃষ্টি করেন এবং ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারীদের সক্রিয় করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু আফসোস! দয়িত্বশীল ব্যক্তিগণ সক্রিয় হলেন বটে কিন্তু নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে। জিহাদের যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ সাধারণ মানুষের মনে ইতিমধ্যেই সৃষ্টি হয়েছিলো তাকে তাদেরে শ্লোগান বর্বস্ব বক্তৃতা এবং অন্তসারশূন্য বিবৃতির সাহায্যে নির্বাপিত করে ফেলে। মুসলিম শাসকেদের গাদ্দারীকে আমরা কখনো ভুলে যেতে পারি না। নাকরামীপাশার মন্ত্রীসভা ইস্রাঈলের সাথে শান্তি ও আপোষ আলোচনা করে কার্যক্ষেত্রে ফিলিস্তিন ভূ-খন্ডের ওপর ইস্রাঈলকে তা থাবা বিস্তার কারার সুবর্ণ সুযোগ করে দেয়। আমাদের জন্য জরুরী ছিল ইস্রাঈলের সাথে কোন প্রকার আপোষ আলোচনায়ই না বসা। একান্তই যদি আলাপ আলোচনা করতে হতো তাহলে মিসরের বৃটেনের সাথে মতামত বিনিময় করা উচিত ছিলো। কেননা জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের তত্বাবধানের দায়িত্ব বৃটেনের ওপরই অর্পণ করা হয়েছিলো। এ আলাপ আলোচনার সময় আমাদের একথা স্পষ্ট করে তুলে ধরা উচিত ছিলো যে, আমরা ইস্রাঈল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নিতে পারি না। তাছাড়া ফিলিস্তিনের ওপর ইস্রাঈলকে চাপিয়ে দেয়ার অধিকার করো নেই।
নব্য ক্রুসেডের যুদ্ধসমূহ
ইখওয়ানুল মুসলিমুনের আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া দেখে রাশিয়া ও আমেরিকা দু’পরাশক্তিই তাকে খতম করতে তৎপর হয়ে ওঠে। তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তারা ইখওয়ানের জনপ্রিয়তা হ্রাস করা এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে ইসলামের নামেই কিছু সংগঠন তৈরী করে এবং পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেয়া হয়্। ইখওয়ানুল মুসলিমুন বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বতিল শক্তির সম্মুখে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। জেলাখানার অভ্যন্তরে্ ইখওয়ানের সাথীগণ সশ্রম কারাদন্ডের নির্যাতন ও অমানুষিক নিপীড়ন ভোগ করেন। ইখওয়ানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলেই আজ কারাগারগুলোর সংস্কারের প্রতি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে জিন্দানকানাগুলো জেল বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন করে দেয়া হয়েছে।
এ দাওয়াতকেই লক্ষ্যবস্তু বানানোর জন্য আবদুন নাসের ও সাদাত এমন পন্থা অবলম্বন করে যা কল্পনা করতেই শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়। ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাদাতের নির্দেশেই যে ব্যাপক ধরপাকড় পরিচালিত হয় তা উদ্দেশ্য লোককে গ্রফতার করা হয়। দেশে স্থায়ীভাবে জরুরী আইন জারী কা হয় যা অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে। এ কাজও কর হয় ইখওয়ানকে লক্ষ্য বানানোর জন্য।
ইখওয়ানুল মুসলিমুনের আন্দোলন গোটা প্রাচ্য জগতে পরিস্থিতি পরিবর্তন সাধন করে। ক্রুসেডের যুদ্ধ সুপরিচিত রূপে বহুদিন পূর্বেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এ আন্দোলনের প্রারম্ভে সুদীর্ঘ নয়শত বছরের নীরবতার পর পুনরায় যদ্ধের সূচনা নতুনভাবে হয়। প্রাচ্য জগত আমেরিকা ও রাশিয়ার মাঝে বিভক্ত। এ দু’টি শক্তির লক্ষ্য হচ্ছে, ইসলামী আন্দোলনের বিনাশ সাধন করতে হবে। কেননা তা তাদের নেতৃত্ব কোন কৃমেই মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। ইখওয়ানুল মুসলিমুনের ওপর যখন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তখন আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও ফ্রন্সের চাপ তার পশ্চাতে কার্যকরী ছিল। এটা কি ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেড নয়?
ইখওয়ানুল মুসলিমুন এসব বিদেশী শক্তির দুশমন। কারণ তারা নিজের দেশকে তাদের নাপাক প্রভাব থেকে পূর্ণরূপে মুক্ত করতে চায়। আমরা কেবলই শ্লোগান দিতে অভ্যন্ত নই। আমরা সিদ্ধান্তকরী যুদ্ধ লড়ার পক্ষপাতি। কে জানে না যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলা কালে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের ডিপো সুয়েজখালের তীরে কারা উড়িয়ে দিয়েছিল? সেই মহাপুরুষের নাম আমি উল্লেখ করতে চাই না। যিনি উপনিবেশবাদ থেকে নিজ দেশকে আযাদ করানোর জন্য এই দৃঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, পশ্চিমা শক্তিসমূহ ইখওয়ানুল মুসলিমুনের সাহসিকতা ও বীরত্ব সম্পর্কে খুব ভালভাবেই অবগত। তাই তারা প্রত্যক্ষ বিংবা পরোক্ষভাবে শয়তানী কূটকৌশল প্রয়োগ করে এ আন্দোলনকে ধরা পৃষ্ঠ থেকে মুছে ফেলার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
মহাবিচারকের আদালত
আমরা যেখানে দেশের স্বাধীনতা ও ইসলামের সমৃদ্ধির জন্য সকল বিপদ হাসি মুখে বরণ করে নিতে প্রস্তত সেখানে আমাদের এ অবস্থাও রয়েছে যে, আমরা দেশের বিরুদ্ধে কখনো কোন তৎপরতায় অংশগ্রহণ করাকে জায়েযই মনে করি না। আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আরোপকারীদের চিন্তা করা উচিত যে, একেতো এসব অভিযোগের স্বরূপ আপনা থেকেই উন্মোচিত হয়ে পড়বে। অন্যথায় মহাবিচারকের আদালতে সকল সত্য কোন প্রকার কম বেশী না করেই গোটা মানবতার সম্মুখে উপস্থাপন করা হবে। জাভীয়াতুল হামরা নামক স্থানে যে অপরাধ সংঘটিত হয় তার রহস্য শীগ্র হোক বা বিলম্বে হোক লোকের সম্মুখে উদঘাটিত ও প্রকাশিত হবেই। এ অপরাধের অভিযোগও ইখওয়ানের বিরুদ্ধে করা হয়েছিলো। অথচ তার পশ্চাতে অন্য কোন অপরাধীর হাত ছিল। যেদিন ঘটনা সংঘটিত হয় সেদিন প্রত্যুষেই আমাকে তৎকালীন স্বরাষ্ট মন্ত্রী ডেকে পাঠান। আমি মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে বহু বিশ্বস্ত লোকের নাম উল্লোখ করালম যারা এ ভয়াবহ ঘটনা স্বচক্ষে অবলোকন করেছিলেন। মন্ত্রী সাহেব সেসব লোককে ডেকে পাঠান এবং তাদের বর্ণনা শ্রবণ করেন। তারপরও আমার বিম্ময়ের অবধি রইলো না যে, এতসব সাক্ষ্য প্রমাণের পরও ঘটনার সমস্ত দয়দায়িত্ব ইখওয়ানের ওপরই চাপানো হয়। ভ্রাতৃপ্রতীম মহামান্য শেখ সোলায়মান রাবী, শেখ মুহাম্মাদ আল গাযালী, শেখ হাফেজ সালামাহ্ এবং শেখ সালাহ আবু আসমাঈল আজও সন্ত্রাস নির্মূল করার জন্য অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে আমার সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের প্রস্তাব পেশ করেছিলাম। ঐসময়ই আমাকে “আমীরুল উমারা” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। যার জন্য আমি উল্লাসিত নই কিংবা সে জন্য আমি অভিলাষীও ছিলাম না।
ইখওয়ানুল মুসলিমুনের আন্দোলন যদি না থাকতো তাহলে আবদুন নাসের এবং সাদাতের বেআইনি কাজকর্ম এবং জুলুম-নির্যাতন সম্পর্কে সমগ্র দুনিয়া থাকতো সম্পূর্ণ নাওয়াকিফ। এসব লোক পার্লামেন্টকে রাবার ষ্ট্যাম্প বানিয়ে রেখেছে। আমরা তাদের দাসত্ব কবুল করতে প্রস্তুত নই তাই তাদের প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছি। যখনই আমি মিসরের বাইরে গিয়েছি কিংবা ফিরে এসেছি তখনই আমাকে এয়ারপোর্টে খামাকা ভয় দেখানো হতো, তামাশা করা হতো। আবার ছাড়া পাওয়ার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো। অন্য কোন দেশে আমি যখন গিয়ে পৌছাতাম তখন সেখানেও আমার সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাখা হতো যে, একজন মস্ত বিপজ্জনক লোক সফরে আসছে। একবার মিউনিখ বিমান বন্দরে আমাকে আধাঘন্টা পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। কর্তব্যরত ইমিগ্রেশন অফিসার ওয়ারলেস যোগে তার সিনিয়ার অফিসারদরকে কিছু জিজ্ঞেস করতে থাকে। আমার পক্ষে তার কিছুই বুঝা সম্ভব ছিল না। কিন্তু বার বার আমার নাম উচ্চারণ করা ও পাসপোর্টের বরাত দেয়াতে আমি এতটুকু বুঝতে সক্ষম হই যে, আমার সরকার আমার সম্পর্কে এখানে তথ্য সরবরাহ করেছেন। এ ধরনের কষ্টদায়ক ও অবমাননাকর পরিস্থিতির অসহায় শিকার কেবলমাত্র আমিই নই। সমস্ত ইখওয়ানী ভাইকেই হতে হাচ্ছিলো। আমার মনে পড়ে, শুধু একবার মাত্র অর্থাৎ ১৯৮৪ সালের ১৫ই আগষ্ট বৃহস্পতিবার কায়রো প্রত্যাবর্তনের সময় আমাকে সাধারণ মুসাফিরদের ন্যায় কোন প্রকার হয়রানি ব্যতীতই এয়ার পোর্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিলো। আমাদের সাথে এ ধরনের আচরণ এজন্য করা হতো না যে, আমরা কোথাও কোন বেআইনি কাজের সাথে জড়িত ছিলাম কিংবা আমাদের কোন কাজ-কারবার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে এমনটি করা হতো। আমরা হচ্ছি দাওয়াতের হকের কর্মী। এ কারণেই আমাদেরকে অনুরূপ মেহেরবানীর উপযুক্ত বলে মনে করা হতো। এ লড়াই শুধু জালিমদের এবং ইখওয়ানদের লড়াই নয়। এসব নির্বোধরা খোদ আল্লাহ তায়ালার বিরুদ্ধেই যুদ্ধ জারী রেখেছে। অথচ তাদের জানা নেই যে, মহাশক্তির আধার সেই সাথে লড়াইয়ের সূচনা করে তারা কি মারাত্মক পরিণতির শিকার হবে!
আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে
ইখওয়ানুল মুসলিমুনের অব্যাহত আন্দোলনের ফলে আজ দশজন নিষ্ঠাবান দায়ী ইলাল্লাহ্ পার্লামেন্টে পৌছেছেন। ইনশাআল্লাহ ভাবিষ্যতে ক্রমশ এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকবে। ইখওয়ানের নিবেদিত প্রাণ কর্মী এবং অন্যান্য ইসলামী শক্তির সাহায্যে মরীয়াতে ইসলামীর বাস্তবায়িত হবে। সুদানে ইসলামী আইন প্রবর্তনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের পশ্চাতে ইখওয়ানের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কথা অনস্বীকার্য। সকল মুসলিম রাষ্ট্র থেকেই ইসলামের পতাকাবাহী পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী প্রকাশিত হচ্ছে। এবং সমগ্র পৃথিবীতে ইসলামী সাহিত্যের প্রকাশ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথাও যদি সাহিত্যের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয় তাহলে বর্তমানে ইসলামী সহিত্যিকদের রচিত বই পুস্তক ছাড়া তা পূর্ণঙ্গ ও সার্থক মনে করা হয় না। মুসলিম ও অমুসলিম রাষ্ট্রসমূহ প্রতি দিনই অব্যাহত গতিতে ইসলামী কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন প্রত্যেক দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ইসলামী আইন প্রবর্তনের দাবী করে আসছে। অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রে ওয়াফক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেখান সাধারণত উলামায়ে দ্বীন ও ফকীহগণকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়ে থাকে। এসব গঠনমূলক ও ইতিবাচক দিক বর্তমান সময়ের আন্দোলনেরই ফল মাত্র।
এ আন্দোলনের মোকাবিলা করার জন্য আমেরিকা ও রাশিয়া নিজ নিজ পছন্দের বহু সংগঠন কায়েম করেছে। সমাজতান্ত্রিক ইসলাম ও আমেরিকান ইসলাম কিভাবে সফলতা লাভ করতে পারে? এ আন্দোলনের প্রভাবের ফল এই যে, বর্তমানে কোথাও কোন হাউজিং তৈরী করা হলে তাতে অবশ্যই মসজিদও নির্মিত হয়ে থাকে। ইখওয়ানুল মুসলিমুন উম্মাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক। অথচ মানুষ তা বেমালুম ভুলে বসেছে। এ আন্দোলনের চিন্তা ও চেতানার ধারা এমনভাবে বদলে দিয়েছে যে, বর্তমানে সকল ট্রেড ইউনিয়নের দায়িত্বশীর ব্যক্তিই ইসলামের পতাকাবাহী।
নাসের ইখওয়ানুল মুসলিমুনের অগ্রগতি স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য তাদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করে। ফলে গণমানুষের মধ্যে বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা দানা বাঁধতে থাকে। সে জনপ্রিয়তা অর্জন করার জন্য সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করার অভিনয় করে। এই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে আমাদের যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে ইতিপূর্বে ইংগিত দিয়েছি। ১৯৫৬ সালের ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যে লড়াইয়ের সূচনা হয় তাতে যদি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আইসেন হাওয়ার হস্তক্ষেপ করে মিসরকে রক্ষা না করতো তাহলে ১৯৬৭ সালে পরাজয়ের গ্লানি নাসের সাহেবকে তখনি ভোগ করতে হতো। আবদুল করিম কাশেম ও আবদুন নাসেরের মঝে মত্যনৈক্য সৃষ্টি হলে বাগদাদে বড় বড় মিছিল হয়। সেসব মিছিলে “নাসের মুর্দাবাদ” শ্লোগান দেয় হয়। নাসের যখন এ সম্পর্কে অবগত হন তখন আবদুল করিম কাশেমকে টিলিফোনে বলেন, “আমিও জানি আর তুমিও জান যে, এসব কিভাবে করা হচ্ছে।” নাসেরের একথা সত্য ছিল। কারণ স্বৈরাচারী ও একনায়করা এ ধরনের নাটকের অভিনয় করে থাকে। নাসেরের পুরো শাসনামলেই তো এরূপ নাটকের মধ্যে দিয়েই অতিবাহিত হয়েছে।
ইখওয়ানুল মুসলিমুনের ও নাসের নির্যাতন চালাতে চালাতে শুরু করলে বহু ইখওয়ন অন্য দেশে চলে যায়। সেখানেও তারা তাদের দাওয়াত সম্প্রসারণের কাজ অব্যাহত রাখে। আর এভাবে দাওয়াতের দুশমনদের হাতেই আমাদের পয়গাম বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করে। ইখওয়ানুল মুসলিমুনে তাদের সামর্থ অনুসারে রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজনীতি, দর্শন ও বিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ইসলামের উপস্থাপিত রূপরেখা জতির সম্মুখে পেশ করতে সচেষ্ট হয়। কতিপয় স্বার্থন্ধ ও জ্ঞানপাপী অজ্ঞতার ভান করে জিজ্ঞেস করে থাকে, “আজ পর্যন্ত ইখওয়ানুল মুসলিমুন কি কি কাজ করেছে।” এরূপ প্রশ্ন তারা জানার উদ্দেশ্যে করে না বরং এসব বিকারগ্রস্ত মানসিকতার বহিপ্রকাশ মাত্র। এরা উজ্জল দিবালোক অস্বীকার করাকে প্রগতিবাদিতা বলে মনে করে। বাস্তবতাকে অস্বীকার করে বসলেই সত্য বদলে যায় না। অদূর ভবিষ্যতে ইখওয়ানের ইতিহাস তার উজ্জল দীপ্তিতে ভাস্বর হয়ে মানুষের সম্মুখে এসে যাবে। অনন্তর কর্ণকুহরে জোর পূর্বক তুলে ঢুকিয়ে দেয়া এবং চোখের ওপর পট্রি স্থাপনকারী লোকেরা আল্লাহর ডাংকা শুনতে পাবে এবং সত্যের স্বরূপ দেখতে সক্ষম হবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, ইনশাআল্লাহ সেদিন আর বেশী দূরে নয়।
আমি বার বার একথারই পুনরাবৃত্তি করে এসেছি যে, ১৯৩৬ সাল থেকে আরম্ভ করে আজকের এদিন পর্যন্ত মধ্যপ্রচ্যে উদ্ভূত সামাজিক, রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক ঘটনাবলীর মেরুদন্ডে রয়েছে এক ও অভিন্ন আর তা হচ্ছে ইখওয়ানুল মুসলিমুন। একথা বলতে আমার কোন দ্বিধা নেই যে, এ গতিশীল অকুতোভয়, দৃঢ়তাপূর্ণ ও সুস্পষ্ট দাওয়াতকে ইসলামের শত্রুরা তাদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের জন্য মস্তবড় বিপদ বলে মনে করে। আমি বলতে চাই যে, ইনশাআল্লাহ মিসরের মাটিতে কোন তাগুত তার আনুগত্যের জোয়াল চাপিয়ে দিতে সক্ষম হবে না। ইখওয়ানুল মুসলিমুনের দাওয়াত তার প্রভাব আরো বৃদ্ধি করবে এমনকি অলসতা ও আপাদমস্তক আন্দোলনের দোলায় সক্রিয় হয়ে উঠবে। জেগে উঠবে গভীর ঘুমে অচেতন অসাড় সকল মানুষ। সব শ্রমবিমুখ কর্মচঞ্চল ও সৃজনশীল প্রতিবার অধিকারী হয়ে যাবে।
( আরবী ************)
“হে ঈমানদাররা তোমরা ধৈর্যধারণ করো পরস্পরে ধৈর্যর প্রতিযোগিতা করো এবং আল্লাহর পথে দৃঢ় পদে দাঁড়িয়ে যাও আর আল্লাহকে ভয় করো। এভাবে নিশ্চয়ই তোমরা সফলকাম হবে।”