ছাব্বিশতম অধ্যায়
ইসলাম না সমাজতন্ত্র?
আমাদের শাসকগণ এবং তথাকথিত চিন্তাবিদগণ সমাজতন্ত্রের ঢাকঢোল পিটাচ্ছেন যা ভিনদেশ থেকে আমাদানীকৃত অনৈসলামী মতবাদ। আল্লাহর কিতাব এবং রাসূল (সা) – এর সুন্নাহর বর্তমানে আমাদের অন্য কারো কাছে আদর্শের সন্ধান করা নির্বুদ্ধিতা নয়তো আর কি? তাদের বক্তব্য হলো, সমাজতন্ত্র শ্রেণীগত বিভেদের চুড়ান্ত পরিসামাপ্তি সেদিনই হয়ে গিয়েছিলো যে, দিন রাসূল (সা) বিশ্ববাসীর সম্মুখে দ্বীন ইসলাম পেশ করেছিলেন।
ইসলামে বর্ণ ও গোত্রের ভিত্তিতে কেউ কারো ওপর কোন মর্যাদা ও সম্মান লাভ করতে পারে না। কেউ আর্য হোক বা সেমিটিক, ধনী হোক আর গরীব তাতে কিছুই যায় আসে না। আমাদের দ্বীনে শ্রেষ্ঠত্বের বুনিয়াদ তাকওয়া ও আমল। যে-ই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুটি অর্জনের লক্ষ্যে মুসলিমদের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করে সেই সর্বোত্তম।
সমাজতন্ত্র মানবীয় স্বাধীনতার দাবী করে ঠিকই কিন্তু কোন সমাজতান্ত্রিক দেশে আজ পর্যন্ত তার প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায়নি। ইসলাম আদেশ ও নিষেধের সীমার মধ্যে এমন এক আদর্শ কায়েম করেছে যার ছায়ায় মানবতা দীর্ঘ দিন পর্যন্ত সৃষ্টির জন্য স্রষ্টার নির্ধারিত স্বাধীনতাসমূহ ভোগ করে। সমাজতন্ত্রের শ্লোগান হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সর্বদা কাজ ও উন্নতির সুযোগ প্রদান করা হবে। কিন্তু সমাজতন্ত্রীরা বাস্তবে এর কোন উদাহরণ পেশ করতে পারে না। অথচ ইসলামী এর যাত্রার দিন থেকেই মানবতাকে প্রকৃত সাম্যের নিয়ামত দান করেছে। তাফসীর ও হাদীস এবং ফিকাহশাস্ত্রে মুসলিম উম্মাহ কোন প্রকার সংরক্ষণ ছাড়াই এমন সব লোকদের নেতৃত্ব স্বীকার করেছে যারা ছিল দাস বংশোদ্ভত। শুধু তাই নয় বরং দাস বংশের অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি ইসলামী দেশসমূহে সরকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন।
দাস আর প্রভু বলে কিছুই রইল না
আমাদের ইতিহাসে হযরত ওমর বিন খাত্তাবের একটা কথা অত্যন্ত স্মরণীয়। তাঁর ওপর যখন প্রাণনাশী আক্রমণ করা হয়েছিল তখন নতুন খলিফা নির্বাচনের জন্য তিনি ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি নিয়োগ করে বললেনঃ “ যদি (হযরত হুযায়ফার ক্রীতদাস) সালেম জীবিত থাকতো তাহলে আমি কমিটি গঠনের পরিবর্তে তাকেই আমার স্থলাভিষিক্ত করতাম।” সমাজতন্ত্র সাম্যবাদের জন্য শুধুমাত্র গালভরা বুলি আওড়ায় কিন্তু আমাদের কাছে এই শ্লোগানের বাস্তব নিদর্শন রয়েছে। একবার জনৈক কুরাইশ বংশীয় সর্দার কোন এক হাবশী গোলামকে বললো, “হে কালো মায়ের সন্তান।” রাসূলুল্লাহ (সা)- এর চেহারা একথা শুনে লাল হয়ে ওঠে। তিনি ক্রোধভরে বলতে লাগলেন, “এটা জঘন্য প্রকৃতির জুলুম এটা সুস্পষ্ট সীমা লংঘন।” কুরাইশ সরদার রাসূল (সা)- এর ক্রোধের মাত্র দেখে ভীত হয়ে এবং মাটিতে শুয়ে পড়ে। সে তার গন্ডদেশ মাটির ওপর রেখে আল্লাহর নামে শপথ করে বলতে থাকে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই ক্রীতদাস তার গন্ডদেশে তার পা রেখে না দাঁড়াচ্ছে ততক্ষণ জীবন্ত দৃষ্টান্ত পুনরায় তাজা করতে চাই। মানুষ একে সেকেলে চিন্তা বলে অভিহীত করতে পারে। কিন্তু আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, একদিন আমরা এ লক্ষ্য অর্জনে সফল হবো। “আর স্মরণ করো সেই দিনের কথা যেদিন মু’মিনগণ আল্লাহর সাহায্যে খুশী হবে।”
যারা আসতে চাও জাহাজ জ্বালিয়ে দিয়ে এসো!
হাসানুল বান্না শহীদ ও হাসান আল হুদাইবি মরহুম কিংবা তাদের পরে আগত ইখওয়ান কর্মীগণ মানুষের সম্মুখে কখনো এমন দাবী করেনি যে, আমরা তাদের সকল পত্যাশা পূরণ করে দেবো এবং তাদের জন্য আকাশের তারকা এনে দেবো। বরং আমরা বলে থাকি যে, আল্লাহর রাস্তায় আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি তিনিই এই কল্যাণের পথের অভিযাত্রীদের সংরক্ষক এবং তাঁর সাহায্যেই আমরা আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো। “ নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন উত্তম আমলকারীর আমল বিনষ্ট করেন না।” বিগত নির্বাচনে অভিজ্ঞতা থেকে আমার আল্লাহ তায়ালার সাহায্য ছাড়া এমন কথা বলতে পারি না যে, সফলতা সমাগত। তথাপি আমাদের ইস্পাত কঠিন সংকল্প হচ্ছে, রাস্তা দুর্গম হওয়া সত্ত্বেও আমাদের যাত্রা অব্যাহত থাকবে। এই পথ কখনো ফুল বিছানো ছিল না। আরো কত দুর্গম ঘাঁটি এখনো অতিক্রম করতে হবে তা আল্লাহই ভাল জানেন। মনযিল বহুদূর এবং সফর আরো কঠিন। তা সত্ত্বেও লক্ষ্য সেটাই যা নির্ধারিত হয়ে গেছে।
বিশ্বরাজনীতি পরিক্রমা ও ইখওয়ান
বৈদেশিক বিষেয়ে ইখওয়ানের দৃষ্টিভংগী এই মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত যে কোন দিক ঝুঁকে না পড়েই নিজেদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে এবং সকল প্লাটফর্মে সত্য ও ন্যায়ের সমর্থনে এগিয়ে যেতে হবে। ইসলাম শান্তি ও নিরাপত্তার জীবন ব্যবস্থা। বিশ্ববাসী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও আঞ্চলিক দল গঠন করে শান্তি শৃংখলা লাভ করার শত চেষ্টা করেও সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কতিপয় দেশ একটা বিশ্ব সংগঠনের ভিত্তি স্থাপন করে। কিন্তু তা খুব বেশী দিন চলতে পারেনি। এই সংগঠন যা “লীগ অব নেশানস্” নামে পরিচিত ছিল। এটা ছিল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অগ্রজ। সম্মিলিত জাতি পুঞ্জের চার্টার খুবই আকর্ষণীয়। কিন্তু এর ধোঁকা ও প্রতারণা ব্যতীত এর বাস্তবতা বলতে কিছুই নেই। পরাশক্তিগুলো ভেটো পাওয়ার তাদের নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছে। যা সরাসরি জুলুম এবং দুর্বলদের অধিকার মারারই নামান্তর। বড় বড় শক্তিগুলো পরস্পরে এমন গাঁটছাড়া বেঁধে রেখেছে যে, তার তাদের নিজেদের স্বার্থে মনগড়া কার্যকলাপ চালতে থাকে কিন্তু কেউই তাদের ত্রুটি নির্দেশ করতে পাঁরে না।
ভালুক ও নেকড়ের বানরের ন্যায় পিঠা বন্টন
বম্ভবত সবার মনে আছে যখন রাশিয়া তার সৈন্য বাহিনী আফগানিস্তানে প্রেরণ করে তখন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্টার যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তার অর্থ ছিল এই যে, রাশিয়ার বাহিনীর আফগানিস্তান অনুপ্রবেশের ব্যাপারে আমেরিকার কোন আপত্তি ছিল না। অপরদিকে ইস্রাঈলের ধৃষ্ঠতামূলক তৎপরতার প্রতি লক্ষ্য করুন যার সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছে আমেরিকা। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া নীরব দর্শক হিসেবে তামাশা দেখছে কিংবা খুব বেশী কিছু করলে কখনো শৃগালের ন্যায় ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে থাকে। সমগ্র দুনিয়া এই দৃ’টি ব্লকে বিভক্ত। কিছু দেশ আমেরিকার ক্রোড়ে আশ্রিত আবার কিছু দেশ রাশিয়ার তপ্লীবাহী্ লাল উপনিবেশবাদ হোক বা র্পুঁজিবাদী গণতন্ত্র সবই ইসলামের সমান দুশমন। ভারতকে দেখুন এ দেশটি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের স্তম্ভ। মিসর যখন রাশিয়ার তৈরি মিগ জঙ্গী বিমানের জন্য ভারতের নিকট খুচরা যন্ত্রাংশ চায় তখন সে টালবাহানা শুরু করে এবং রাশিয়ার নিকট অনুমতি কামনা করে। যেহেতু মিসর রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলো। এজন্য কটিউনিষ্ট সরকার ভারতকে স্পেয়ার পার্টস মিসরের নিকট বিক্রি করতে নিষেধ করে দেয়। এতে একদিকে জানা গেলো যে, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন শুধুমাত্র ঢং। অপরদিকে জানা গেল পৃথিবীর বড় বড় রাষ্ট্র রাশিয়া ও আমেরিকার ইংগীতেই চলে থাকে। আমাদের মুসলিমদের জন্য এতে একটা শিক্ষা রয়েছে। আহ! আমাদের চোখ যদি খুলে যেতো এবং আমরা দেখতে পেতাম যে, কমিউনিষ্ট, হিন্দু, ইহুদী ও ঈসায়ী তথা সকল অনৈসলমিক শক্তিই আমাদের দুশমন- “আল – কুফরু মিল্লাতুন ওয়াহেদাহ” –সকল কুফরী শক্তিই এক ও অভিন্ন।
আত্মনির্ভরতার অভাব ও মানসিক গোলামী
এটা ঠিক যে আমরা আজ যে যুগে বাস করছি তা হচ্ছে বস্তু যুগ এবং উন্নত দেশগুলো আমাদের চেয়ে কতবেশী শক্তিশালী। কিন্তু আমাদেরকে নিজেদের বাহ্যিক কর্মকৌশল চিন্তা- ভাবনা করে বিন্যাস করা উচিত। আমাদেরকে বিশ্বের শক্তিধর দেশসমূহের দ্বন্দ-সংঘাত থেকে দূরে অবস্থান করে সুইজারল্যান্ডের ন্যায় নিজেদেরকে জোট নিরপেক্ষ রাখা উচিত। আমাদের অবস্থা খুবই করুণার যোগ্য। রুশদের পদতলে যুগ যুগ ধরে নতজানু হয়ে থাকি। সেখান থেকে গুতা খেয়ে পথিমধ্যে কোথাও না থেমে সোজা আমেরিকার চরণ তলে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করি। আমাদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা নেই। মানুষের কাছেও আমাদের কোন মান-সম্মান নেই। আমরা যে ব্লকেই যাই না কেন এই সত্য কিছুতেই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, দুই ব্লকই ইস্রঈলের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দানের ক্ষেত্রে সমভাবে অংশগ্রহণ করছে। কবির ভাষায়ঃ
(**************)
“তোমার দাওয়াই না আছে জেনেভায় না আছে লন্ডনে ফিরিংগীদের জীবন ইহুদীদের থাবায় আমি শুনেছি গোলামীর জিঞ্জিল থেকে উম্মতের মুক্তি আছে আত্মবিশ্বাসের প্রতিপালন ও তার বলে বলীয়ন হওয়ার।”
আমরা যে চোরাবালিতে আটকে আমি তাথেকে মুক্তি লাভ করা বাস্তবিকই কঠিন কাজ। আর যে আক্টোপাস আমাদের রক্ত শোষণ করে চলেছে তার থেকে রক্ষা পাওয়া অসম্ভব। আমরা অবশ্য এমন দাবী করছি না যে, ইখওয়ানুল মুসলিমুন রাতারাতি জাতিকে এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আমাদের দাবী হচ্ছে, যদি সঠিক লক্ষ্যে পদেক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তাহলে কখনো না কখনো মনজিল দৃষ্টিগোচর হবেই। এই জটিল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন বছরের পর বছরের। কিন্তু মুসলিম সরকারগুলো যদি তাদের জনগণকে সাথে নিয়ে এক দেহ এক আত্মার রূপ পরিগ্রহ করতে পারে তাহলে সকল বিপদের মোকাবিলা করা যেতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতি চলতে দিয়ে আমরা কোনদিনও নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবো না।
মিসরের অর্থনীতি এবং সরকারের ধ্বংসনীতি
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের সরকার বড় রকমের ভুল করেছে। মিসর মুলত একটা কৃষি প্রদান দেশ। অথচ সরকার কৃষির তুলনায় শিল্পকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছে এবং এর পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। তথাপি শিল্প ক্ষেত্রে তেমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ হয়নি। কিন্তু কৃষি ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া ও অনগ্রসরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুদানের সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবিই ভাল। এই দুই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ এবং ঐক্য ও সংহতি জোরদার করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ত্যাগ ও কুরবানী স্বীকার করতে হলেও সেজন্য কোনরূপ ইতস্তত করা ঠিক হবে না। সুদানে রয়েছে বিস্তর চাষাবাদের ভূমি আর মিসরের আছে প্রচুর জনশক্তি ও পর্যাপ্ত কারিগরি সাজসরঞ্জাম। দু’দেশ পারস্পরিক সগযোগিতায় এতবেশী কৃষিজাত পন্ন উৎপন্ন করতে পারে যার ফলে সর্বক্ষেত্রে শুধুমাত্র স্বাবলম্বীই হবে শুধু তাই নয় বরং রপ্তানীও করা যেতে পারে। ইখওয়ানুল মুসলিমুন এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করার জন্য সদা প্রস্তুত রয়েছে। পরিকল্পনা প্রণয়নকারীগণকে আল্লাহ তায়ালা যেন তাওফীক দেন যাতে তারা এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রহণ করতে পারেন। কবি কতই না চমৎকার গেয়েছেনঃ
(*************)
মওসুম উত্তম, পানি পর্যাপ্ত আর মাটিও অত্যন্ত উর্বর এতদসত্ত্বেও যে উৎপন্ন করতে পারে না সে কেমন কৃষক।
বস্তুত কোন জাতিই অলস ও শ্রমবিমুখ হয়ে কোন উন্নতি ও অগ্রগতি অর্জন করতে পারে না। এজন্য পরিশ্রম ও কষ্ট ক্লেশ নীরবচ্ছিন্নভাবে সহ্য করতে অভ্যস্ত হওয়া আবশ্যক। বর্তমানে ভ্রান্ত নীতির ফলে পরিস্থিতির এত অবণতি হয়েছে যে, আমাদের লক্ষ লক্ষ যুবক ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা জীবন সমাপনান্তে অলিগলি ও সড়ক মহাসড়কগুলোতে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। তাদের কোথাও কর্মসংস্থান হয় না। ফলে তারা কফিখানা ও রাস্তাঘাটে বসে আড্ডা দিয়ে নিজেদের সময়ও নষ্ট করে এবং যোগ্যতাও ধ্বংস করে। এ যুবক যুবতীদের প্রতিভা ও যোগ্যতা দ্বারা দেশ ও জতির বড়ই উপকার হতে পারে যদি আমরা বিচক্ষণতার সাথে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারি।
সমৃদ্ধি লাভ কি এভাবেই সম্ভব!
আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক। যদি তারা অনীহা প্রকাশ করে তবুও আমাদেরকেই সম্মুখে অগ্রসর হয়ে তাদেরকে কাছে টেনে আনতে হবে। যদি তারা কোন ব্যাপারে সীমালংঘন করে তা হলে আমরা তা সহ্য করবো। তারা যদি কখনো অশালীন ও অশোভন আচরণ করে বসে তবুও আমরা তা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবো। যেখানেই প্রয়োজন দেখা দেয় সেখানে সমাধানও অবশ্যই পাওয়া যায়। আমাদের হারানো মর্যাদা পুনরুদ্ধার রাজনৈতিক ও সামাজিক দেউলিয়াপনার প্রতিকার ও পতিবিধান এবং ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের রহস্য মুসলিম উম্মার নিষ্ঠাপূর্ণ ঐক্য ও সংহতির মধ্যেই লুকায়িত।
আমাদের দেশসমুহে প্রচার মাধ্যমসমূহ ফিতনা ও বিপর্যয় ছাড়ানো ছাড়া আর কিছুই করছে না। উলঙ্গপনায় পরিপূর্ণ চরিত্র বিধ্বংসী ও নগ্ন ছায়াছবি প্রদর্শন করা হয়ে থাকে এবং নৈতিকতা বিবর্জিত অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। তাছাড়াও অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্র সম্বন্ধে শত্রুতামূলক প্রেপাগান্ডা চালানো হয় আর এভাবে এসব দেশের যুব সমাজ অন্য দেশের জনগণের ব্যাপারে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিবর্তে বিদ্বেষ ও ঘৃণার মনোভাব অন্তরে লালন করতে থাকে। তা না হলে কেন সিরিয়া, মরক্কো, মিসর, ইরান, আলজিরিয়া, সুদান ও অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের উলামা ও জ্ঞানীগুণীদেরকে একদেশ হতে অন্য দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রচার মাধ্যমগুলোর সাহায্যে যুবসমাজকে উপদেশ দানের সুযোগ দেয়া হয় না? যদি তা কারা হয় তবে উম্মাতে মুসলিমার বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ব্যক্তিগণ একে অন্যের ব্যাপারে সঠিক ধরণা লাভ করতে পারবে এবং পরস্পর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার মত পরিবেশ সৃষ্টি হবে। কবির ভাষায়ঃ
(***************)
এই জাতির লাভ ও লোকসান এক ও অভিন্ন সকলের নবী (সা) ও একজন, দ্বীন এক, ইসানও এক হারামে পাক, আল্লাহ এবং কুরআনও এক কতই বড় ব্যাপার হতো যাদ মুসলিমরাও হয়ে যেতো এক।
করার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ
আজকের যুবসমাজ আগামীতে ক্ষমতার আসনে সমাসীন হবে। প্রশ্ন হলো, আমরা আমাদের যুব শ্রেণীকে এই গুরুদায়িত্ব বহন করার জন্য তৈরী করেছি কি? আমি কখনো নিবাশ হই না। বিশেষত যুবকদের ব্যাপারে আমি খুবই আশাবাদী। কিন্তু এই অসহায় যুবকদেরই অপরাধ কি?
(***********)
গলা টিপে তোমাকে হত্যা করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকগণ আর কোথা থেকে উচ্চারিত হবে কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর আওয়াজ?
আমি তো একথাই বলতে চাই যে, আমাদের ভরসা করা উচিত একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সত্তার ওপর। সাথে সাথে কাজে লাগাতে হবে তারই প্রদত্ত সমস্ত উপায় উপকরণ। প্রত্যেক যুবক যুবতীকে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আমি খুব ভাল করেই জানি যে, আমাদের সরকার ও কর্তৃপক্ষ সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে একবারেই অসতর্ক। অকস্মাৎ যে কোন মুহুর্তে তারা যার মুখোমুখি হতে পারে। অথচ আমাদের দুশমনেরা সদাসচকিত এবং প্রস্তুত। এমতাবস্থায় নারী পুরুষসহ জাতির আবালবৃদ্ধবনিতা সকলকেই প্রতিরক্ষার জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
যারা ইরাকের এটমিক এনার্জি কেন্দ্র ধ্বংস করেছিলো। তারা অন্য যে কোন মুসলিম রাষ্ট্রের সাথেও অনুরূপ আচরণ করতে পারে। কোন প্রতিশ্রুতি এবং চুক্তিই তাদের হাত সংযত রাখতে পারবে না। তাই এখন আমাদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে সমরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য সযত্ন উদ্যেগ গ্রহণ করা। যার উদ্দেশ্য হবে শুধু আত্মরক্ষা করা। কারো ওপর আক্রমণ করা নয়। ইসলাম সামরিক প্রস্তুতির যে নির্দেশ প্রদান করেছে তা কারো ওপর আক্রমণ করার জন্য নয় বরং এজন্য যে, আমাদের শত্রুরা আমাদের ব্যাপারে ভীত সন্ত্রস্ত থাকে এবং আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকাবারও সাহস না পায়। (******)
“তোমাদের দুশমনদের মোকাবিলায় তোমাদের মাধ্যানুযায়ী শক্তি সঞ্চয় করো এবং সমরিক শক্তি সঞ্চয়ের মাধ্যমে অশ্বারোহী বাহিনী গঠন করে তা দিয়ে তোমরা আল্লাহর দুশমন ও তোমাদের দুশমনদের ভয় দেখাবে।”
অবশ্য আমাদেরকে সকল দেশের সাথেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং নিজস্ব মূলনীতির ওপর অটল থেকে প্রত্যেকের সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। ধোঁকা, প্রতারণা এবং নাজায়েজ কাজ-কারবারের সম্মুখে প্রবিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ইসলামী রাষ্ট্রসমূহের বাজারকে উন্মুক্ত করত আন্তর্জাতিক ব্যাবসা বণিজ্যের দরজা খুলে দিতে হবে।
মুসলিম দুতাবাসগলোর স্বপ্ন
আমাদের দূতাবাসগুলোর পুনর্গঠন খুবই জরুরী। আমরা বাহ্যিক শান শাওকাত ও চাকচিক্যের ওপর অত্যন্ত বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কিন্তু দক্ষতা ও দূরদৃষ্টি একবারেই নেই। দূতাবাসের কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে যে কোন বিষয়ের গভীরে গিয়ে তা উপলব্ধি করা। অথচ বর্তমানে আমাদের দূতাবসগুলোর অবস্থা হচ্ছে এই যে, কতিপয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া সারা বছর ঘুমিয়ে কাটায়। কায়রোতে আমরা বিদেশী দূতাবাস কর্মচারীদেরকে দেখি তারা অফিসের চার দেয়ালের মধ্যে বসে থাক না বরং কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া, আসিয়ুত এবং অন্যান্য শহরে বন্দরে ঘুরে বেড়ায়। তারা যদিও তাদের বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সদা সক্রিয় কিন্তু ভাবখানা দেখায় যেন ভ্রমণের জন্য কিংবা কোন বন্ধু-বান্ধবের সাথে সাক্ষাত করতে গিয়েছেলেন। অথবা হাওয়া বদলের জন্য এক শহর থেকে অন্য শহরে গিয়েছেলেন এসবই বাহ্যিকরূপ। তারা তাদের সরকারসমূহকে স্বার্থসিদ্ধির উপযোগী তথ্যাবলী ও রিপোর্ট পাঠানোর জন্য অত্যাধুনিক ঘটনা তথ্য সরবরাহ করে থাকে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট সরকারসমূহ যখন আমাদের ব্যাপারে কোন পলিসি প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণ করে তখন তাদেরকে অন্ধকারে হাতড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। বরং তাদের কাছে থাকে সঠিক এবং বিস্তারিত তথ্যাবলীল সমন্বয়ে পূর্বপ্রস্তুতকৃত ফাইল। আমরা দেখি বিদেশী দূতাবাস কর্মীরা পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীর অফিসে প্রায়ই ঘোরাঘুরি করেন। সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও লেখকদের সাথে থাকে তাদের বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক এবং এভবে লাভবান হতে তারা সদা তৎপর থাকে। পক্ষান্তরে আমাদের দূতাবাস প্রতিনিধিরা আরাম আয়েশ ও ভোগ বিলাসে মত্ত থাকা ছাড়া আর কোন কাজই করে না।
সাংস্কৃতিক দল! উম্মতে মুসলিমার প্রতিনিধি
ইসলামই আমারেকে শান্তি ও নিরাপত্তার শিক্ষাদান করেছি। আমরা না কারো সীমালংঘন সহ্য করে থাকি, না কারো ওপর অত্যাচার করা বৈধ বলে মনে করি। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, আমরা অন্য দেশের প্রতিনিধিগণকে আমাদের এখানে ডেকে আনবো এবং নিজেদের প্রতিনিধিগণকে তাদের দেশে প্রেরণ করবো যারা আমাদের দৃষ্টিভংগী সেসব দেশের জনসাধারণের সম্মুখে উত্তমরূপে উপস্থাপন করবে। আমরা সাংস্কৃতিক দলের যে বিনিময় করে থাকি তাও আমাদের সুনাম সুখ্যাতির ওপর কলম্ক লেপন করে থাকে। নৃত্যর্গীতকারী ভাঁড়া এবং নৃত্য ও সংগীতে পারদর্শিনী গায়িকারা দেশের বাহিরে গিয়ে আমাদের যে ভাবমূর্তি তুলে ধরে তা কারো অজানা নয়। শিল্পকলার দিক থেকেও প্রায় সকল কন্ঠশিল্পীই অত্যন্ত ভাসা ভাসা প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। অনেক সময় তারা সংগীতগুলো মুখস্ত করে নেয় বটে কিন্তু তা উপস্থাপনায় অনেক সাহিত্য ও শিল্পগত ভুল করে ফেলে।
আমাদের দূতাবাস ও কুনস্যুলেটগুলোকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে নতুনভাবে বিন্যাস করা আবশ্যক। উন্নত বিশ্ব আমাদের কাঁচামালের মুখাপেক্ষী আর আমরা তাদের শিল্প সামগ্রী। যদি আমরা পদযুগল ছড়িয়ে ঘুমানোর পরিবর্তে চিন্তা-গবেষণা ও বিচার-বিশ্লেষণ করি তাহলে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক কিছু লাভ করতে পারি। আমরা নিজেদেরকে সুদ ভিত্তিক অর্থব্যবস্থার জটাজালে শৃংখলিত করে ফেলেছি এব এরই সূত্র ধরে বিশ্বশক্তি এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ খুব মজা করে আমাদের রক্ত শোষণ করছে। এসব এই মিথ্যা তাথাকথিত সাহায্যের নামে তারা আমাদেরকে তাদের গোলাম বানিয়ে রেখেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমাদের নিকট সকল বিষয়েই এত বিপুল সংখ্যক অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ জনশক্তি রয়েছে যে, তাদের সাহায্যে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম নিজেরাই প্রস্তুত করতে ও চালাতে পারি। কিন্তু অবস্থা এই যে, আমাদের এসব কারখানার পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদেশীরা। এটা একটা মারাত্মক ভূল। আমাদের মুসলিম বিজ্ঞানীগণ পাশ্চাত্য দেশসমূহে গৌরবজনক কাজ সম্পাদন করছে। তাদের ওপর আস্থা রেখে ও কাজে লাগিয়ে নিজেদের দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করার কার্যকরী উদ্যোগ কেন গ্রহণ করা যাবে না?
ইরাক-ইরান যুদ্ধ ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ ছাড়া কিছু নয়
বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে আমরা বর বার ভুল করে ছলেছি। ইরাক-ইরান যুদ্ধে আমাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত ভ্রান্ত। মুসলিম রাষ্ট্র হোক বা অমুসলিম রাষ্ট্র কোন দেশের সাথেই আমাদের অকারণে শত্রুতামূলক মনোভাবের পরিচয় দেয়া উচিত নয়। আমাদের যুদ্ধ ও সন্ধি কেবলমাত্র ইসলামী মূল্যবোধ, ন্যায়নীতি ও সত্যের ভিত্তিতে সম্পন্ন হওয়া আবশ্যক।
ইরানের বর্তমান সরকার মাঝে মধ্যে ইখওয়ানের ওপর এমনকি স্বয়ং আমর ব্যক্তিত্বের ওপর অন্যায়ভাবে আক্রমণ করেছে এবং এমন অভিযোগ করেছে যে, আমরা আমেরিকার এজেন্টে। আমরা যদি বাস্তবিকই আমেরিকার এজেন্ট হিসেবে কাজ করতাম তাহলে তাদের আক্রমণের জবাবে আমরাও তাদেরই সুরে সুরে মিলিয়ে কথা বলতাম। ইসলামের দুশমন শক্তিগুলো তাদের এজেন্টদের সাহায্যে মুসলিমদের মধ্যে বিরোধ ও কলহ সৃষ্টি করে থাকে। এই দাবানল প্রজ্জলিত করার ক্ষেত্রে আমাদের বিচক্ষণ শত্রুগণ ছাড়াও আমাদের অজ্ঞ বন্ধুদেরও যথেষ্ট ভূমিকা থাকে। ইখওয়ানের ওপর ইরানের এসব আক্রমণ মোকাবিলায় আমাদের জবাব নীরবতা। তাছাড়া ইরানের দায়িত্বশীলদের এসব আক্রমণ সত্ত্বেও আমরা এই ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে ইরানের বিরুদ্ধে কখনো মুখ খুলিনি। আমরা বুঝতে পারি যে, এই যুদ্ধে দ্বারা উভয় দেশই ইসলামের প্রভূত ক্ষতি করে চলেছে।
ইরাক ও ইরানের মধ্যে লড়াই যখন শুরু হয় তার ঠিক আগের দিনই আমি রাব্বুল আলামীনের সমীপে আরজ করেছিলাম, “হে আল্লাহ! আরব ও মুসলিম সরকারগুলোকে তুমি তাওফীক দাও তারা যেন এই সর্বগ্রাসী ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধকে বন্ধ করতে পারে।” এই লড়াই যুগপৎভাবে দু’মুসলিম রাষ্ট্রকে ধ্বংসের গভীর পম্কে নিমজ্জিত করেছে। অনর্থক নরহত্যা, অর্থনীতির ধ্বংস সাধন ইসলামের শত্রুদের জন্য নিশ্চিত উল্লাসের কারণ। আল্লাহ তায়ালার সমীপে আমি এই দোয়াই করছি। তিনি যেন মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটানোর তাওফীক দান করেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ব্যাপারে সাইয়েদ হোসনী মোবারকের নীতিতে আমিও আশাবাদী। কেননা তিনি মিসরীয় সংবাদপত্র ও সাময়িকীসমূহে কোন মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন কিছু লিখতে নিষেধ করে দিয়েছেন। এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তির জন্যও তাকেই সর্বশক্তি নিয়োগ করে চেষ্টা করতে হবে। এজন্য নিরপেক্ষ উদ্যোগ ও প্রয়াস যারপরনই অত্যাবশ্যক।
হোসনী মোবারক ও জাফর নিমেরীর সাক্ষাতকার
মিসর ও সুদানের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে যেসব ব্যক্তিগত সাক্ষাত হচ্ছে সেগুলোর ব্যাপারে আমার মতামত হচ্ছে, তাতে দু্ই দেশের রাষ্ট্রপতি ছাড়াও প্রত্যেক দেশের পক্ষ থেকে ন্যূনপক্ষে একজন করে প্রতিনিধি শরীক হওয়া আবশ্যক। এসব সাক্ষাতের বিষয়বস্তু দুই রাষ্ট্রপ্রধানের ব্যক্তিগত ব্যাপারে নয় বরং উভয় দেশের স্বার্থ সম্পর্কেও আলোচনা হয়ে থাকে। মানুষ মাত্রই যে কোন সময় ক্ষণস্থয়ী এ দুনিয়া থেকে প্রস্থান করতে পারে। আল্লাহ না করুন যদি এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে আলোচনার টেবিলে স্থিরকৃত বিষয়াবলী সম্পর্কে দেশবাসীকে কে অবহিত করেব। ঘটনার প্রত্যেক্ষ সাক্ষী এবং জাতির দায়িত্বশীল কোন ব্যক্তিই এরূপ পরিস্থিতিতে ভুল বঝাবুঝির অবসান ঘাটাতে পারে।
আমি অবশ্য সরকারী প্রটোকল সম্বন্ধে সম্পূর্ণ না ওয়াকিফ। তাই হয়ত আমার এ দৃষ্টিভংগীর তেমন কোন গুরুত্ব নেই। তথাপি আমি আমার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করলাম। কারণ অনেক সময় অনেক অনভিজ্ঞ ব্যক্তির কথাও বেশ উপকারী হয়ে থাকে।
মানুষের মৌলিক অধিকারসমূহই নাগরিকদের মধ্যে দায়িত্বানুভুতি সুষ্টি করতে পারে।
আভ্যান্তরীণ রাজনীতির ব্যাপারে আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই। এটা আমার বিশ বছরের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সারনির্যাস। যে জাতিকে স্বধীনতার সুফল থেকে বঞ্চিত করা হয়। সংস্কারকদের প্রাণন্তকর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাদের থেকে কল্যাণকর কোন কিছুই প্রত্যাশা করা যায় না। এরূপ দাবী যে শান্তি ও নিরাপত্তার হিফাজত এবং সন্ত্রাসবাদীদের মূলোৎপাটন প্রয়োজন। এই যুক্তি-প্রমাণও উপস্থাপন করে যে, আযাদী ও স্বাধীনতাই মস্তব[ নিরাপত্তা বিশেষ। এমনকি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিকশিত করার জন্য প্রকৃত আযাদীর প্রয়োজন সর্বাপেক্ষা বেশী। কাগুজে নাগরিকতার দ্বারা কোন কল্যাণ লাভ ততদিন পর্যন্ত সম্ভব নয় যতদিন নাগরিকগণ দেশের স্বাধীনতার স্বাদ কার্যত গ্রহণ করতে পারে। যে দেশে নাগরিকদের অধিকারসমূহ নিরাপদ ও সুরক্ষিত নয় এবং তার কোন মতামত- যা হয়তো যথার্থ- কিন্তু তাতে সমকালীন শাসক সন্তুষ্ট নয় বরং এর ফলে যদি তার জান-মালের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয় তাহলে এমন নাগরিকত্ব অনর্থক। আর এমন দেশ মাতৃভূমি আখ্যায়িত হওয়ার যোগ্য নয়। অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের সমস্যাবলী এবং অন্যান্য সমস্যার সমাধান একটাই, আর তা হচ্ছে এই যে, নাগরিকদেরকে তাদের মৌলিক অধিকার প্রদান করা। মৌলিক অধিকারসমূপ লাভ করার পর নাগরিকগণ নিজেদেরকে সরকারের কার্যাবলীতে অংশীদার বলে মনে করে। এখান থেকেই দেশ প্রেমের অনুভূতি বিকশিত হতে শুরু করে এবং প্রত্যেক ব্যক্তিই দেশের নিরাপত্তাও দেশবাসীর স্বার্থের অনুভূতিতে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। বাকী থেকে যায় সেই সব জনগণ যাদেরকে ভেঁড়া বকরীর মত শাসকরা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় তাদের মধ্যে উন্নত চরিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং মহৎ উদ্দেশ্য অর্জনের অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে না।