অষ্টাদশ অধ্যায়
বহুশক্তি ইখওয়ানকে তাদের সংগঠনের নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে সম্মত করতে প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এ জন্য এমন কিছু যুক্তি পেশ করা হয়েছে যে, কিছু সংখ্যক ইখওয়ান তা করতেও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু অধিকাংশ ইখওয়ানী এ ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে। সমর্থকদের যুক্তি ছিল, যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে যে, নাম পরিবর্তনের পর ইখওয়ান স্বাধীনভাবে দাওয়াতী তৎপরতা চালিয়েযেতে পারবে। তাই নাম পরিবর্তনে ক্ষতি কি? কিন্তু নাম পরিবর্তনের সত্যিই ক্ষতি ছিল। যেমন:
১-এই প্রস্তাব উত্থাপন যখন ইখওয়ানুল মুসলিমুনের অবাধ তৎপরতার সুযোগ প্রদানের ওয়াদা করেছেন তখন নাম পরিবর্তনের কি অর্থ থাকতে পারে? স্বীয় অবস্থানের ওপর অবিচল থেকে কেবলমাত্র নাম পরিবর্তন করে আমরা কি সেইসব লোকদেরকে সান্ত্বনা দিতে পারবো এই কাজের বিরোধী। প্রকৃতপক্ষে নাম পরিবর্তনের দাবী আন্দোলনের দুশমনদের প্রথম অপপ্রয়াস ও দূরভিসন্ধি। এর পরই পর্যায়ক্রমে অন্যান্যস্তর অতিক্রম করা তাদের উদ্দেশ্য। প্রতারক, চরিত্রহীন ও লম্পট রাজনীতিবিদদের কর্মনীতি ও তৎপরতা এমনই হয়ে থাকে।
২-এ নাম তো কুরআন মজীদ থেকে গৃহীত। কুরআন ঘোষণা করছে (আরবী*****) (নিশ্চয়েই মু’মিনগণ পরস্পরের ভাই)” –তাইতো আমাদের পরিচয় ইখওয়ান (আরবী*******) “আর তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না।” অথচ আল্লাহর শোকর যে আমরা সকলেই মুসলিম। অতএব আমরা সকলেই ইখওয়ানুল মুসরিমুন।
৩-এ নাম গোটা মুসলিম জাহানে পরিচয় লাভ করেছে এবং মুসলিম চিন্তাবিদও নেতৃস্থানীয় ইসলামী ব্যক্তিগণ একে বিশ্বস্ত ও সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। ফলে মুসলিম রাষ্ট্রেই আমাদের ভাইয়েরা এই সংগঠনের ঢংয়ে ইকামাতে দ্বীনের জন্য সুসংগঠিত হয়ে গেছে। মনে করুন ইখওয়ান যদি মিসরে তাদের সংগঠনের নাম পরিবর্তন করতে সম্মত হয়ও তাহলে অন্যান্য আরব রাষ্ট্র পশ্চিমা দেশসমূহে এর কি প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হবে? নাম বদল করার ফলে বিভিন্ন দেশে আমাদের সুসংগঠিত আন্দোলন বিচ্ছিন্নতার শিকার হয়ে পড়বে। আর আমরাদের দুশমনরা ঐকান্তিকভাবে এটাই চায়। তারা অনেক দুর থেকে এই উদ্দেশ্য হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু সফলকাম হতে পারেনি। এখন তারা ভেতর থেকে এই লক্ষ্য অর্জন করতে মেতে উঠেছে। ইখওয়ানুল মুসলিমুনের কোন নিবেদিত প্রাণ কর্মী কি তাদের এই অভিলাষের সামনে মাথা নত করতে পারে?
৪-বিংশ শতাব্দীর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বসমূহের মধ্যে ইমাম হাসানুল বান্নার নাম সমধিক উল্লেখযোগ্য। ইখওয়ান এই অনুভূতি ও সচেতনতার সাথেই তার হাতে বাইয়াত করেন যে, তারা ইসলামী পুনর্জাগরণে ও রেঁনেসা আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হতে যাচ্ছে। ইসলামের পুত-পবিত্র বিধি-বিধানকে কিছু সংখ্যক লোক নির্মূল করতে চায় এবং তার দ্বীপ্তি নির্বাচিত করে ফেলার জন্য ফুঁৎকার দিচ্ছে। কিন্তু এই অশুভ উদ্দেশ্য লাভের ক্ষেত্রে তারা কোন দিন সফলতার মুখ দেখবে না। ইখওয়ান ইমাম শহীদের হাতে এই মর্মে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন যে, তিনি ইখওয়ানুল মুসলিমুনের মুর্শিদে আ’ম। তার ইনতিকালের পর কি করে এই বাইয়অতের বিরুদ্ধাচরণ করা যেতে পারে? কোন মুসলিমের দ্বারা এমন কাজ হতে পারে না যে, তার অংগীকার ভংগ করবে এবং অবিশ্বস্ততার পরিচয় দেবে। ইমাম শহীদ আমাদেরকে যে নীতি পদ্ধতির ওপর রেখে তিনি তার রবের রাস্তায় শাহাদাতের মর্যাদায় অভিষিক্ত হন সেইপন্থা ও প্রক্রিয়াতে আমরা কিভাবে পরিবর্তন সাধন করতে পারি?
৫-ইখওয়ানুল মুসলিমুনের আন্দোলন অন্যান্য ইসলামী সংগঠন থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী। এটা শুধুমাত্র একটি দলই নয় বরং প্রশিক্ষণ স্কুল ও আন্দোলন। এখানে ইসলামের পূর্ণাংগ বিধান শিক্ষা দেয়া হয়। এমন কতিপয় সাথী যারা আন্দোলন ত্যাগ করে চলে গেছে এবং নিজেরা অন্য নামে পৃথক দল গঠন করেছে। ইতিহাস এই ফায়সালা দিয়ে রেখেছে যে, তারা তাদের পৃথক সত্তা নিয়ে কোথাও টিকে থাকতে ও আত্মরক্ষা করতে পারেনি। কতিপয় বন্ধু যারা আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে তারাও এই নামের মাহাত্ম উপলব্ধি করে আজও নিজেদেরকে ইখওয়ানুল মুসলিমুন নামেই পরিচয় দিয়ে থাকে।
৬-মুসলিম জাহানে বহু আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এটা আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানী যে, অন্য কোন সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমুনের ন্যায় সমগ্র বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি। ইসলাম বৈরী শক্তিগুলো এই আন্দোলনকে সমূলে বিনাশ করার জন্য যত বেশী শক্তি প্রয়োগ করেছে তার দৃষ্টান্ত অন্য কোথাও পরিলক্ষিত হয় না। এত কিছু করা সত্ত্বেও ইখওয়ানকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা সম্ভব হয়নি। তারা অনেক বাধা বিপত্তি ও কণ্টাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলোর কাছে ইখওয়ানুল মুসলিমুনের অস্তিত্ব আজও আতঙ্কের কারণ। এই শতাব্দিতে হাসানুল বান্নাই ছিলেন সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলামী দাওয়াতের ইতিহাস ইলমকে আমলে রূপায়িত করেন। এমনকি ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি যে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাই ছিল ইখওয়ানুল মুসলিমুন।
৭-এই আন্দোলন শত সহস্র শহীদানের আত্মত্যাগ ও কুরবানীর নজরানা পেশ করেছে। শাহাদাতের এই মিছিলের সর্বেোগ্র ছিলেন এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাত নিজে। এসব শহীদ এই জ্ঞান গর্ব, আমলী ও প্রকৃত নামের পশ্চাতে নিজেদের জীবনে নজরানা পেশ করেছেন। তাদের চলে যাবার পর এই নামকে যা এই সালফে সালেহীনগণ তাদের রক্ত দিয়ে লিখে গেছেন পরিবর্তন করা কোন ভাল কাজ হতে পারে না।
৮-ইসলামী দাওয়াতের মধ্যে কোন কোন বিষয় উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম এর মর্যাদা রাখে। ইসলামের প্রথম যুগেও আমরা দেখতে পাই যে, বাইয়াতে রেদওয়ানে অংশগ্রহণকারী এবং বদরযুদ্ধে শরীক সাহাবাদের সম্মান ও মর্যাদা ছিল সর্বাধিক। ইখওয়ানর জন্যও জরুরী যে, মুখের জোরে যারা গাজী সেজে বসেছে তাদের পশ্চাতে চলার পরিবর্তে নিজেদের পরিচয় ও কৃতিত্বের হেফাযত করবে। আমাদের অমংগলকামীদের সকল তৎপরতা নিঃশেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের দল ও তার নাম পবিত্রতা ও মহত্বের সাথে আজও বর্তমান। এই নাম আমাদের ইতিহাসের আমানতদার।
৯-ইসলামের নিজের বৈশিষ্ট রূপ ও পরিচয় আছে। এবং তার রুকনসমূহের জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট শব্দাবলী। এসব শব্দাবলীও অর্থহীন নয় বরং এগুলো বাস্তবতার পরিচয়বাহী। ইসলামের একটা হচ্ছে বুনিয়াদ বা ভিত্তি আর অপরটা হচ্ছে ইমারত। একদিকে রয়েছে চিন্তা অপরদিকে রয়েছে বাহ্যিক রূপ ও আকৃতি, যেমন বুনিয়াদ হচ্ছে: িএক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্য করা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা। ইবাদাতের মুল প্রাণসত্তা হচ্ছে নিয়াত-আর নিয়াতের সম্পর্ক অন্তরের সাথে। নিয়াত যদি বিশুদ্ধ হয় এবং যথাযথ পন্থায় ইবাদাত করা হয় তাহলে সেই ইবাদত আল্লাহ তায়ালার নিকট গ্রহণযোগ্য। যে ব্যক্তি ওজর চাড়াই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স)-এর প্রদর্শিত সালাত আদায় করে না সে অমুসলিম। যদিও সে দিবারাত্র মনগড়া পন্থায় সালাত আদায় করতে থাকে।
ইখওয়ানুল মুসলিমুনের নামও এই আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। যা তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের প্রতিনিধিত্ব করছে। এই নামের যৌক্তিকতা ও তাৎপর্য লক্ষ্য করে অগণিত লোক এই দাওয়াতের সাথে সম্পৃক্ত। এই নাম পরিবর্তন করার সকল প্রকার উদ্যোগ আয়োজন এসব বাস্তবতা বদলে দেবারই নামন্তর। এসব এখন পাহাড়ের ন্যায় অনড় এবং বলিষ্ঠভাবে বদ্ধমূল হয়ে গেছে। নাম বদলে ফেললে বহু সংখ্যক মর্মার্থেরও বিলুপ্তির সম্ভাবনা ও আশংকা রয়েছে। সর্বোপরি নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজনই বা কি? আমরা কি আল্লাহর পথের ইখওয়ান নই? আমরা কি মুসলিম নই? এই পুত-পবিত্র নামের সাথে কার কি স্বার্থ জড়িত আছে? এমন নয় তো যে, কিছু লোক আমাদর মুসরিম হওয়া এবং ইখওয়ান হওয়াকে আদৌ পছন্দ করে না? গোটা দুনিয়াও যদি আমাদের সাথে এই বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয় তথাপি আমরা এই নাম পরিত্যাগ করবো না।
আমরা কখনো এমন কথা বলিনি যে, শুধু আমরাই মুসলমান। আমরা ছাড়া আর কেউ মুসলমান নয়। আমরা কোন দিন সগীরা এমনকি কবিরা গোনায় লিপ্ত মানুষকে কাফের বলিনি। আমরা সহযোগিতা প্রদান করতেও কখনো অস্বীকার করিনি। যখনই আল্লাহর কোন বান্দাহ আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়াত বাস্তবায়িত করার আহ্বান জানিয়েছে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা দান করেছি। তাহলে নাম পরিবর্তনের আসল উদ্দেশ্য কি? হে আল্লাহ! তুমিই উত্তমরূপে জান যে, আমরা তোমারই ভালবাসা, তোমার পথে জিহাদ ও চূড়ান্ত সংগ্রাম সাধনা এবং তোমার দ্বীনের স্বার্থেই পারস্পরিক সম্প্রীতি সৌহার্দ ও বৌভ্রাতৃত্বের জন্যই এই নামকে মজবুতভাবে ধারণ করে আছি। আমরা আমাদের মুর্শিদের পবিত্রতা বর্ণনা করি না। হে আল্লাহ! আমরা তোমার নবী ব্যতীত আর কারো নেতৃত্ব ও অভিভাবকত্ব মেনে নিতে প্রস্তুত নই। অতএব হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ঈমানের হেফাজত করো, আর তোমার সার্বিক সাহায্যের হাত আমাদের জন্য প্রসারিত করে দাও। তুমি ব্যতীত নিশ্চিতই আর কোন উপকারী নেই। সকল প্রকার সাহায্য ও বিজয় শুধু মাত্র তোমার পক্ষ থেকেই লাভ করা যেতে পারে।
১০-সমস্ত বিশ্ববাসী জানে যে, এই নামেই ইখওয়ানের অন্তরে পরস্পরের প্রতি অকৃত্রিম বালবাসা সৃষ্টি হয়েছে। তারা তাদের ভাইদেরকে নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এই নামের পতাকা উত্তোলন করে ইখওয়ান আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে এবং শহীদি কাফেলার খুন এক জন থেকে অন্য জনের ধমনীতে সঞ্চারিত হয়েছে। যে নাম পরিচয় তাদেরকে শাহাদাতের গৌরবোজ্জ্বল মর্যাদা প্রদান করেছে সেই নামকে আমরা কি করে মুছে ফেলতে পারি?
১১-ইখওয়ানের উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান সুদীর্ঘ ইতিহাস ইখওয়ানের দুশমনদেরকেও তাদের বীরত্ব শৌর্যবীর্য, অনমনীয়তা ও দাওয়াতে হকের পথে অসীম ত্যাগ ও কুরবানী স্বীকৃতি প্রদানে বাধ্য করে। তারা এই নামের আমানতদার। ইখওয়ানের পবিত্র রক্ত যা ফিলিস্তিনের মাটিকে সিক্ত করেছে তা এই আকীদা বিশ্বাসের গভীল প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করেছে। তা এমন এক কৃতিত্ব যা আমাদের হৃদয় স্পন্দনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। সুয়েজের তীরের ভূখন্ড তার সাক্ষ্য বহন করছে। আমাদের ইতিহাস এই নামের সাথে সাথে এসব কৃতিত্ব দ্বারা সৌন্দর্যমন্ডিত হয়েছে। যে নাম পরিচয নিয়ে আমরা জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম তা কি ভুলে যেতে পারি?
১২-এই আমের কি দোষ? কোন কোন মানুষ এই নাম শুনামাত্রই হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে এবং নানা প্রকার দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতে থাকে। এখন তো সরকারের দায়িত্বশীলরাও মাঝে মধ্যে বলে থাকেন, যে নির্যাতন ও সন্ত্রাসের সাথে ইখওয়ানুল মুসলিমুনের নূন্যতম কোন সম্পর্কও নেই—। কোন ব্যক্তি বিশেষের পক্ষ থেকে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে গোটা দলের মাথায় তা চাপিয়ে দেয়ার যুক্তি কোথায়? প্রতিটি পরিবার সমাজ ও জাতির মধ্যে কি সৎ ও ভুল পথগামী লোক থাকে না? তাহলে ইখওয়ানে কোন ব্যক্তি বিশেষের ভুল-ত্রুটির দায়-দায়িত্ব গোটা দলের ঘাড়ে চাপানোর অর্থ কি?
১৩-এই নামের ত্রুটি কোথায়? এই নাম কি জীবন, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আত্মত্যাগের প্রমাণ বহন করছে না? েএই নাম কি সমস্ত মুসলিম জাহানের দৃষ্টি দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য গুরুত্বপূর্ণ অংশের প্রতি আকৃষ্ট করেনি? যা দীর্ঘ দিন থেকে মানুষ বেমালূম ভুলে আছে? এই নামই কি মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দ্বীনের রাস্তায় ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করেনি?
১৪-মানুষ কি তার উৎসের পবিত্রতা এবং মহত আকাংখার জন্য গর্ববোধ করে না? আমরা কি এই ব্যাপারে আমাদের দায় দায়িত্বের কথা অস্বীকার করে বসবো যে, আমরা সালফী তো বটে কিন্তু সালফেসালেহীনদের সাথে আমাদের আদৌ কোন সম্পর্ক ও যোগসূত্র নেই? আমরা সেই নাম ও পরিচয়েই পরিবর্তন সাধন করে ফেলবো যা যুবকদের অন্তরে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর প্রেরণা উজ্জীবিত করেছে?
১৫-ইখওয়ান একটা বিরাট সংস্কার কর্মসূচী পেশ করেছে। সেই কর্মসূচীর ভিত্তি আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ। এই কর্মসূচী খেলাফতে রাশেদার প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির পতাকাবাহী। কাজেই যে-ই এ নামের পরিবর্তন করতে চায় সে মূলত এই কর্মসূচীতে অসন্তুষ্ট নয়। আমরা কি করে তার কথা শুনতে পারি এবং কিভাবে তার নির্দেশ মেনে নিতে পারি? িএমন জঘন্য কাজ আমাদের দ্বারা কস্মিনকালেও হতে পারে না?
১৬-ইসলামের শত্রুরা যখন এই নাম পরিবর্তনের জন্য অব্যাহতভাবে চাপ সৃষ্টি করে তখন নিশ্চিতই তাদের সম্মুখে এমন সব অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে যাতে মুসলিম সমাজের জন্য কোন কল্যাণ থাকতে পারে না। সুতরাং আমরা কি নির্বুদ্ধিতা ও উদাসীনতার এমন পর্যায়ে গিয়ে উপনতি হতে পারি যেখান থেকে আমাদের বিরুদ্ধবাদীরা অনায়াসেই তাদের উদ্দেশ্য হাসিলকরে নিতে পারে? আমরা যদি আমাদের শত্রুদের ইচ্ছার আনুগত্য করি তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য ও দূরাবস্থা যে কোথায় গিয়ে পৌঁছতে পারে তা কল্পনা করাও সম্ভব নয়।
১৭-বিভিন্ন দলের সফলতার গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তার নামের ওপর পূর্ণ আস্থা। আস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত অর্জিত হতে পারে না যতক্ষণ না এই দলের আহ্বানকারীগণ বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক উভয়ভাবে তার নামের সাথে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি না করে। নিজেদের দল ও তার কর্মসূচীর ওপর কি আমাদের আস্থা এতই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, আমরা এর নামই পরিবর্তন করে ফেলবো? অন্ততপক্ষে তার যুক্তিসংগত কোন কারণ দেখা দেয়া আবশ্যক?
১৮-মিসরের সমস্ত দল এমনকি কোন কোন ইসলামী সংগঠনও ইখওয়ানুল মুসলিমুনের ওপর আক্রমণ করেছে এবং তাদের সম্পর্কে অবান্তর কথাবার্তা ছড়িয়েছে। তারা মনে করেছিল যে, ইখওয়ানুল মুসলিমুনও প্রত্যুত্তরে তাদের ওপর অনুরূপ হামলা চালাবে। কিন্তু এই দলটি তাদেরকে অতি বড় রকমের শিক্ষা দিয়ে ছেড়েছে। এই শিক্ষা ছিল তাদের সমালোচনার মোকাবিলায় আমাদের নীরবতা অবলম্বন এবং অন্যায় ও অশ্লীলতার জবাব অন্যায় দ্বারা না দেয়ার নীতি। আমরা মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও দূরত্ব সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকি। কিচু মনে না করা এবং ক্ষমা করে দেযার এই শিক্ষা খুবই কার্যকরী ও ফলপ্রসূ। এই দলের নাম একথাই প্রমাণ করে যে, এটা মুসলিমদেরকে সমবেত করে, বিভেদ সৃষ্টি করে না। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনা করে থাকে- প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে না। আপন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গভীর মনোনিবেশ সহকারে সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকে। সকলের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করে। বস্তুত আমাদের সামনে এতবেশী বড় বড় কাজ রয়ছে যে, এসব খুঁটিনাটি ব্যাপারে নাক গলানোর ফুরসতই আমাদের নেই।
১৯-ধরে নিন, আমরা যদি নাম পরিবর্তন করেই ফেলি তাহলে কেউ কি একথা মেনে নেবে যে, আমরা এখন আর ইখওয়ানুল মুসলিমুন নই। এমন অনেক লোক যারা আন্দোলনের রজ্জু নিজেদের গলদেশ থেকে খুলে ফেলে রেখে চলে গেছে তারা এই নামের সাথে তাদের সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেছে। কিন্তু তাতে তারা লাভবান হয়নি। যারা এই নামের পরিবর্তন আনয়নের অভিলাষী তারা তাদের সম্পর্কচ্ছেদের সত্যতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে এই হতভাগার দল সংগঠনের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকার সৌভাগ্য থেকেও বঞ্চিত হয়ে গেছে এবং যেখানে গিয়ে তারা যোগদান করতে চাচ্ছিলো তারাও তাদের প্রত্যাখান করেছে। অতএব আমরা যদি নাম পরিবর্তন করেও ফেলি তবুও এই দাবী উত্থাপনকারীদের মনোভাব ও দৃষ্টিভংগী আমাদের সম্পর্কে থাকবে এক ও অভিন্ন। সমস্ত মানুষ এক বাক্যে যদি এরূপ সাক্ষ্যও প্রদান করে যে, তোমরা ইখওয়ানুল মুসলিম নও-তথাপি তা হবে বাস্তব সত্যের অপলাপ মাত্র। কাজেই এমন কাজের পশ্চাতে আমাদের কালক্ষেপনের কি প্রয়োজন যা আমাদের জন্য কোন উপকারিতা লাভের উপলক্ষ হবে না, হতে পারে না। বরং এটাই কি অধিকতর সম্মানজনক নয় যে, আমরা ইখওয়ানুল মুসলিমুনই থেকে যাই? এটা কোন অহংকার ও অন্ধ অনুসরণের কারণে নয় বরং আত্মস্মান এবং উত্তরাধিকারের নিরাপত্তা বিধানের প্রেরণায়। আর যদি আমরা তাও করতে না পারি তাহলে আমাদের উপমা হবে এমন নির্বোধ উত্তরাধিকারীদের সাথে যারা তাদের পূর্ব পুরুষের উত্তরাধিকারকে বিনষ্ট কর ফেলে।