বাংলাদেশের উপযোগী সরকার পদ্ধতি
সরকার পদ্ধতি ( পলিটিকাল সিস্টেম )
দেশ শাসন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার গঠন অপরিহার্য। কোন ছোটখাটো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানকেও সক্রিয় রাখতে হলে এর জন্য ওয়ার্কিং কমিটি বা কর্ম পরিষদ বা কার্যকরী কমিটি গঠন করতেই হয়। আর রাষ্ট্রের মত সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্যে সরকার গঠন করা ছাড়া উপায় নেই।
এ সরকার গঠন সব কালে এবং সব দেশে একরকম হয় না। বর্তমান যুগেও বহু দেশে সরকারী ক্ষমতা কোন কোন রাজবংশের হাতে রয়েছে। বাদশাহ বা রাজা ঐ বংশের বাইরে থেকে হতে পারে না। বাদশাহ যে মন্ত্রী সভা গঠন করেন তার মধ্যে ঐ বংশের বাইরেরও কিছু লোক থাকলেও তারা তার আস্থাভাজনই হয়ে থাকেন। এ ধরণের সরকারকে রাজতন্ত্র বা মনারকী বলা হয়। এসব দেশে নামে মাত্র নির্বাচিত পার্লামেন্ট থাকলেও আসল ক্ষমতা বাদশাহ এব্বং তার বংশের লোকজনের হাতেই কুক্ষীগত থাকে।
কোন দেশে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে দেশ পরিচালনা করলে তাকে স্বৈরতন্ত্র, একনায়কত্ত বা ডিক্টেটরশিপে ( Dictatorship ) নামে পরিচিত হয়।
আর যেসব দেশে জনগনের দ্বারা নির্বাচিত লোকেরা দেশ শাসন করে থাকে সে সরকার পদ্ধতিকে গণতন্ত্র বলা হয়। গণতন্ত্রে সরকারী ক্ষমতা কোন বংশ, এলাকা বা শ্রেনীর লোকদের হাতে কুক্ষিগত হতে পারে না। জনগন যাদেরকেই নির্বাচিত করে তারাই সরকার গঠন করবে। পরবর্তী নির্বাচনের ফলে আবার আরেক দলের হাতে ক্ষমতা চলে যেতে পারে। গণতন্ত্রের আসল রাজনৈতিক ক্ষমতা জনগনের হাতে।
দুনিয়ায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিই আদর্শ হিসেবে স্বীকৃত। যে দেশে রাজতন্ত্র আছে সে দেশের জনগণও গণতন্ত্র চায়। কিন্তু দুনিয়ার ইতিহাসে কোথাও গণতন্ত্র কোন দান খয়রাতের মাধ্যমে কায়েম হয়নি। যে ইংল্যাণ্ড বর্তমানে আদর্শ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রশংসিত সেখানেও জনগণ কয়েকশ বছর সংগ্রাম করার পর সফল হয়েছে। আধুনিক যুগে গণতন্ত্র কায়েমের আন্দোলনের এতো দীর্ঘ সময় না লাগলেও বিনা সংগ্রামে কোন দেশে গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম হতে পারে না। ( ৯৩ সালে কারাগারে রচিত )
গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি
গণতান্ত্রিক বিশ্বে প্রধানত দুই ধরণের সরকার পদ্ধতি চালু রয়েছে। একটার নাম পার্লামেন্টারি সিস্টেম বা সংসদীয় পদ্ধতি। অপরটি প্রেসিডেন্টশিয়াল সিস্টেম বা রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতি।
পার্লামেন্টারি সিস্টেমের পরিচয় নিম্নরূপঃ
১। জনগনের ভোটে নির্বাচিত পার্লামেন্ট বা সংসদই সরকারী ক্ষমতার অধিকারী। রাজনৈতিক এবং আইনগত সার্বভৌমত্ব সংসদের হাতে ন্যস্ত। সংসদের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই।
২। সংসদ সদস্যদের অধিকাংশের সমর্থন যে দল ভোগ করে সরকারী ক্ষমতা সেই দলের হাতেই থাকে। প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রী পরিষদ এ দলের মধ্য থেকেই নিয়োগ করে থাকেন। সংসদে কোন একটি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে একাধিক দলের সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠিত হতে পারে।
৩। মন্ত্রী পরিষদ সংসদের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য। জনপ্রতিনিধিগণ সরকারের যাবতীয় কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রশ্ন বা অভিযোগ করতে পারেন।
৪। প্রধানমন্ত্রীই সরকার প্রধান হিসেবে গণ্য। সরকারের সকল প্রকার দায় দায়িত্ব তার।
৫। রাষ্ট্রপ্রধান নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি মাত্র। দেশের শাসন ক্ষমতা তার হাতে থাকে না। শাসনযন্ত্র যে কয়টি দায়িত্ব তার উপর অর্পণ করে এর অতিরিক্ত কোন ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার তার নেই। শাসনতন্ত্রে উল্লেখ থাকলে তিনি সরকারকে পরামর্শ দিতে পারেন।
প্রেসিডেন্টশিয়াল সিস্টেম বা রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতির পরিচয় নিম্নরূপঃ
১। প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্রপতি একই সাথে রাষ্ট্রপতি এবং সরকার প্রধান। তিনিই দেশের প্রধান শাসনকর্তা।
২। প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই জনগনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতে হবে।
৩। জনগনের নির্বাচিত সংসদ শাসনতন্ত্র অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অংশীদার।
৪। শাসনতন্ত্রে এমন ভারসাম্য থাকবে যাতে প্রেসিডেন্ট বা সংসদ কেউই একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী না হয়।
৫। প্রেসিডেন্টের মন্ত্রী সভার সদস্যদের জনগনের দ্বারা সরাসরি নির্বাচিত হওয়া আবশ্যক নয়।
( ৯৩ সালে কারাগারে রচিত )
দুই পদ্ধতির পার্থক্য
পার্লামেন্টারি এবং প্রেসিডেন্টসিয়াল পদ্ধতি দুইটির মধ্যে প্রধান পার্থক্য। যেমনঃ
১। পার্লামেন্টারি পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধান এক ব্যক্তি নয়। অপরটিতে একই ব্যক্তি দুইটি মর্যাদা ভোগ করেন। প্রথমটিতে প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান। দ্বিতীয়টিতে কোন প্রধানমন্ত্রী নেই। প্রেসিডেন্টই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার অধিকারী।
২। পার্লামেন্টারি পদ্ধতিতে পার্লামেন্ট বা সংসদ দেশ শাসন করে এবং সংসদের পক্ষ থেকে মন্ত্রীসভা প্রশাসনের নেতৃত্ব দেয়। অপরটিতে প্রেসিডেন্ট এবং তার মন্ত্রী সভা দেশ শাসন করে এবং পার্লামেন্ট শাসনতন্ত্র অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় অংশীদার হয় ও প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করে।
৩। পার্লামেন্টারি পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপ্রধানের কোন শাসন ক্ষমতা নেই। রাষ্ট্রপ্রধান সম্পূর্ণ দল নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেন। সরকার গঠন, সরকার পরিবর্তন, আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন ইত্যাদির ব্যাপারে শাসনতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করেন এবং শাসনতন্ত্রের অভিভাবকের ভূমিকাও পালন করেন। রাষ্ট্রপ্রধান অবশ্যই রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে গণ্য। যখন সরকার ভাংগে এবং গড়ে তখনও রাষ্ট্রপ্রধান সপদে বহাল থাকেন।
( ৯৩ সালে কারাগারে রচিত )
গণতান্ত্রিক বিশ্বের সরকার পদ্ধতি
যতগুলো দেশে গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম আছে তার মধ্যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ( United states of America- USA ) ছাড়া আর কোথাও প্রেসিডেন্টসিয়াল সিস্টেম চালু হয়নি। প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশে পার্লামেন্টারি সিস্টেম প্রচলিত আছে। অবশ্য ফ্রান্স এবং জার্মানি এই দুইটি পদ্ধতির কোনটাকেই হুবহু নকল করেনি। তবু বলা চলে যে, পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সাথে এই দুইটি দেশের বেশী মিল রয়েছে।
পলিটিকাল সিস্টেম হিসেবে আমেরিকার পদ্ধতিটি পূর্ণ গনতন্ত্রসম্মত বলে স্বীকৃত হলেও আর কোন দেশেই তা হুবহু গ্রহণ করা হয়নি। সে দেশে প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান হওয়া সত্ত্বেও শাসন ক্ষমতায় সিনেটের অংশীদারিত্ব এবং কমিটি সিস্টেমের মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদের ব্যাপক ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যবস্থা থাকায় গণতান্ত্রিক নীতিমালা সেখানে বহাল রয়েছে।
আমেরিকার পদ্ধতি পূর্ণ গণতান্ত্রিক হওয়া সত্ত্বেও আর কোন দেশে তা চালু না হওয়ার দুইটি কারনঃ
১। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে একটি রাষ্ট্র বটে, কিন্তু একসময় তা ছিল না। দুইশ বছর আগে ১৩ টি স্বাধীন রাষ্ট্র মিলে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তুলতে গিয়ে তাদেরকে অনেক নতুন নিয়ম- পদ্ধতির পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে হয়। রাজনৈতিক ক্রমবিকাশের মাধ্যমে সে দেশে যে ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে তা অন্যত্র অনুপস্থিত। তাই প্রেসিডেন্টসিয়াল পদ্ধতি আমেরিকার জন্য যতই উপকারী হোক অন্য কোন দেশ তা নিজ দেশের জন্য উপযোগী মনে করেনি।
২। বিশেষ করে সেখানে শাসন বিভাগ ( Executive ) ও আইন বিভাগেরই ( Legislature ) মধ্যে একদিকে সাংগঠনিক পার্থক্য, আর একদিকে ক্ষমতার অংশীদারীত্ব এমন নিয়ন্ত্রণ এবং ভারসাম্যতা ( Check and Balance ) কায়েম করেছে যা রীতিমত জটিল। এ জটিল পদ্ধতির নকল করার ঝামেলা আর কোন দেশ পোয়াতে চায়নি।
ব্রিটিশ পদ্ধতিকে সহজবোধ্য ও অনুকরণের অধিক যোগ্য বলে বিবেচনা করেই হয়তো প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশে তা চালু করা হয়েছে। তাছাড়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো স্বাধীন হবার পূর্ব থেকেই এ পদ্ধতির সাথে পরিচিত বলে সেসব দেশে এর গ্রহণ যোগ্যতাও বেশী।
( ৯৩ সালে কারাগারে রচিত )
সরকার পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক
তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধানের ক্ষমতা একই ব্যক্তির হাতে রয়েছে। এসব দেশের কোনটিতেই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা নেই। এর অনেক কয়টিতে নির্বাচিত সংসদও রয়েছে। কিন্তু শাসন ক্ষমতা রাষ্ট্রপ্রধানের হাতেই কুক্ষীগত। এসব দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করলে ও সংসদীয় গণতন্ত্রের দাবী তুললে রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে চালাকী করে বলা হয় যে, প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির গনতন্ত্র চালু রয়েছে এবং এটা অগণতান্ত্রিক নয়। অথচ বাস্তবে চরম স্বৈরাচারী ব্যবস্থাই চালু রয়েছে।
জনগনকে ধোঁকা দেবার জন্য এসব দেশের ডিক্টেটররা আমেরিকার দোহাই দিয়ে দাবী করে যে, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এক হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকার গণতন্ত্র স্বীকৃত হলে অন্য দেশে কেন হবে না ? সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের গোলামী থেকে স্বাধীন হবার পর তাদের সরকার পদ্ধতির নকল করার প্রয়োজন কি ? এ জাতীয় কুযুক্তি দেখিয়ে স্বৈরশাসকরা শাসন ক্ষমতা নিজেদের হাতে কেন্দ্রীভূত করে রাখার অপচেষ্টা চালায়।
বাংলাদেশে জেনারেল এরশাদের স্বৈরশাসনামলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন এ বিতর্করেই সম্মুখীন হয়েছিল। আমেরিকার জটিল গণতন্ত্র সম্পর্কে খুব কম লোকই অবহিত বলে এ জাতীয় প্রচারণার আশ্রয় নেয়া সম্ভব হচ্ছে। জেনারেল আইয়ুব খানও এ বিষয়ে একই ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি তথাকথিত বুনিয়াদী গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে আমেরিকার পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করার প্রতারণামূলক দাবীই করেছিলেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও যেসব কারনে সেখানে গণতন্ত্র বহাল রয়েছে সেসব অনুসরণ না করে শুধু পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হওয়াকেই আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র নাম দিয়েছিলেন।
আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান ও এরশাদের আমলে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, সরকার দলীয় প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনী প্রধান একই ব্যক্তি থাকায় প্রকৃতপক্ষে এর কোনটাই গণতান্ত্রিক সরকার ছিলনা। শেখ মুজিবের একদলীয় বাকশাল শাসনের পরিবর্তে জেনারেল জিয়া বহু দলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন বটে, কিন্তু ক্ষমতা তখনো এক ব্যক্তির হাতেই কেন্দ্রীভূত ছিল বলে তাকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা চলে না।
( ৯৩ সালে কারাগারে রচিত )
গণতান্ত্রিক সরকার
সরকার পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্ব আলচনা থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌছতে পারি যে, আমাদের দেশের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি মোটেই উপযোগী নয় এবং তা অনুকরণ করা এদেশে সম্ভবও নয়। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, ব্রিটেনের পার্লামেন্টারি পদ্ধতি কি হুবহু নকল করা সম্ভব ? ইংল্যাণ্ডের রাষ্ট্রপ্রধান ব্রিটিশ ক্রাউন। জাপান ও মালয়েশিয়ায় কিং বা রাজা থাকায় তারা ব্রিটিশ সিস্টেম মোটামুটি হুবহু নকল করতে পেরেছে। কিন্তু তারাও রাজনৈতিক দলের সংখ্যার দিক দিয়ে ইংল্যাণ্ডকে অনুসরণ করতে পারেনি। ইংল্যান্ডে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রয়েছে যারা অদল বদল করে ক্ষমতায় আসে। এতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবনহগ ভারসাম্য বহাল থাকে। এমনটা আর কোন পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রে সম্ভব হয়নি। তাহলে ব্রিটিশ পদ্ধতি হুবহু নকল করার কোন উপায় নেই। আরও বহু দেশে কিং বা রাজা ছাড়াই সংসদীয় সরকার কায়েম রয়েছে। এর দ্বারা একথাই প্রমান হয় যে, যে কোন দেশের সরকার পদ্ধতি আরেকটা দেশের পক্ষে শতকরা একশো ভাগ নকল করা সম্ভব নয়। আসলে এর কোন প্রয়োজনও নেই। সব গাছ যেমন সব দেশে হয় না, সব ফলও যেমন সব মাটিতে ভালো ফলে না, তেমনি সামাজিক ও রাজনৈতিক পদ্ধতিও সবদেশে হুবহু একই রকম হতে পারে না। প্রত্যেক দেশের মানুষের মন মানসিকতা, ঐতিহ্য- ইতিহাস, সমাজ কাঠামো মিলিয়ে যে পরিবেশ গড়ে উঠে এর সাথে খাপ খায় এমন সরকার পদ্ধতি গড়ে তোলা সেদেশের নেতৃবৃন্দেরই দায়িত্ব।
একই সংসদীয় সরকার পদ্ধতি কায়েম থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে কাঠামোগত কিছু পার্থক্য থাকতে পারে। আসল বিষয় হচ্ছে গণতন্ত্রের দাবী পূর্ণ হওয়া। যদি সত্যিকার গণতান্ত্রিক নীতি চালু থাকে তাহলে সরকার পদ্ধতিতে ব্রিটিশ সিস্টেম থেকে ভিন্নতর কিছু থাকলেও বিশ্বে গণতান্ত্রিক সরকার হিসেবেই স্বীকৃতি পাবে।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিশ্বজনীন এবং চিরন্তন। দেশ- কাল পাত্র ভেদে ঐ মূল্যবোধকে ভিত্তি করে পলিটিকাল ইন্সটিটিউশন গড়ে তুলতে গিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারের বাহ্যিক রূপ এক রকম নাও হতে পারে। বাহ্যিক বিভিন্নতা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বহাল থাকতে পারে। ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানির সরকার কাঠামো ভিন্ন হলেও এসব দেশেই পূর্ণ গণতন্ত্র চালু রয়েছে বলে সবাই স্বীকার করে।
যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং যারা সত্যিকারভাবে গণতন্ত্রের শাসন চান তারা নিম্নরূপ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পর্কে একমত। —-
১। রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধানের দায়িত্ব এক ব্যক্তির উপরে থাকা উচিত নয়। এক ব্যক্তির উপর উভয় দায়িত্ব থাকলে স্বৈরাচারের আশংকা থেকেই যাবে।
২। দেশ শাসনের প্রকৃত ক্ষমতা জনগনের নির্বাচিত সংসদের হাতে থাকবে। অর্থাৎ শাসকগণ বা মন্ত্রী পরিষদ সংসদের কাছে জবাব দিতে বাধ্য থাকবেন।
৩। শাসনযন্ত্রকে সরকারী দলের স্বেচ্ছাচারিতা থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপটে শাসনতন্ত্র বিপন্ন না হয়।
৪। সত্যিকার নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে অরাজনৈতিক কেয়ারটেকার সরকারের পরিচালনায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সরকারী দল নির্বাচনের সময় প্রশাসনকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের সুযোগ না পায়।
দেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবার পর জাতীয় সংসদ সর্বসম্মতিক্রমে এ পদ্ধতি তুলে দিতে পারে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য গড়ে না উঠা পর্যন্ত অন্য কোন দেশের নযীর দেখিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের প্রয়জনীয়তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
( ৯৩ সালে কারাগারে রচিত )
পার্লামেন্টারি সিস্টেমের রাষ্ট্রপ্রধান
পার্লামেন্টারি সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- সরকার প্রধান থেকে ভিন্ন এক ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হবেন। যুক্তরাজ্যই এই সিস্টেমের জনক। ব্রিটিশ ক্রাউন না রাজ সিংহাসনের অধিকারীই সেখানে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে স্বীকৃত। ব্রিটিশ ক্রাউন ব্যতীত ব্রিটিশ পলিটিকাল সিস্টেম চলতে পারে না। সেখানে রাজা বা রানী উত্তরাধিকার সূত্রে একটি পরিবার বা বংশ থেকেই হয়ে থাকে। অথচ গণতন্ত্রের পাদপীঠ বলে সারা দুনিয়ায় যুক্তরাজ্য পরিচিত।
পার্লামেন্টারি সিস্টেমে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই সরকার প্রধান হবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পৃথক এক ব্যক্তির সত্তার হাতে থাকতে হবে। এ সিস্টেমে রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধান এক ব্যক্তি হতে পারবে না। ইংল্যাণ্ডে রাজবংশের যে ব্যক্তি সিংহাসনে থাকবেন সেই রাষ্ট্রপ্রধান হবেন। সে পুরুষ বা স্ত্রী যাই হোক না কেন।
ব্রিটিশ ক্রাউন সহ যে পার্লামেন্টারি সিস্টেম তা কি বাংলাদেশে হুবহু চালু করা সম্ভব ? ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুকরণ করা সম্ভব হলেও রাষ্ট্রপ্রধানের বেলায় ভিন্ন ব্যবস্থা ছাড়া উপায় নেই বলে সবাইকে স্বীকার করতেই হবে।
ভারত সহ কয়েকটি দেশে এ সিস্টেম চালু আছে তাদের রাষ্ট্রপ্রধান একই নিয়মে নির্বাচিত বা নিযুক্ত হয় না। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রাদেশিক এবং কেন্দ্রীয় আইন সভার সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় নিজ নিজ সরকারের সুপারিশের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ক্রাউনের দ্বারা নিযুক্ত হয়।
দেখা গেলো যে, ব্রিটিশ সিস্টেম ঐ কয়টা দেশ অনুসরণ করা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপ্রধানের বেলায় নিজ দেশের উপযোগী ভিন্ন ধরণের ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বেলায় কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে সে বিষয়ে একাধিক মত থাকতে পারে। যুক্তির কষ্টি পাথরে যাচাই করেই কোন একটি পদ্ধতিকেই প্রাধান্য দিতে হবে। কোন মতের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেই তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করতে হবে।
( বাংলাদেশের রাজনীতি )
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পদ্ধতি
বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পদ্ধতি কি হওয়া উচিত ? পূর্বে একথা স্পষ্টভাবে বলেছি যে, রাষ্ট্রপতি এবং সরকার প্রধানের দায়িত্ব এক ব্যক্তির উপরে থাকা ঠিক নয় এবং মন্ত্রী সভা জাতীয় সংসদের নিকটই দায়ী থাকবে। এটা যে পার্লামেন্টারি সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য তা সবারই জানা। বাংলাদেশে এসব বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন পলিটিকাল সিস্টেমের পক্ষে প্রায় সব দলই একমত। মতপার্থক্য দেখা যায় প্রধানত প্রেসিডেন্টের নির্বাচন এবং মর্যাদা সম্পর্কে।
শেখ মুজিবের আমলে প্রথম দিকে যখন পার্লামেন্টারি পদ্ধতি চালু ছিল তখন জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীই সাক্ষী যে তিনি কতটুকু মর্যাদা পেয়েছিলেন। সম্ভবত বিচারপতি ছিলেন বলেই কতকটা আত্মসম্মানবোধ তাকে মর্যাদাহীন পদটি ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল। এরপর অবশ্য এমন এক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপ্রধান করা হল যার হয়তো মর্যাদাবোধের কোন বালাই ছিল না বা সরকারের নির্দেশ পালনকেই তিনি তার দায়িত্ব বলে মনে করতেন।
গণতন্ত্রের দাবী অনুযায়ী সংসদের হাতেই পূর্ণ শাসন ক্ষমতা থাকতে হবে। কিন্তু ক্ষমতা যদি নিরংকুশ হয় তাহলে সীমালঙ্ঘনের আশংকা অবশ্যই প্রবল হয়। ফলে ক্ষমতার দাপটে শাসনতন্ত্র ক্ষমতাসীন দলের খেলনায় পরিনত হয়। আইনের শাসনের পরিবর্তে দলের শাসন গনতন্ত্রকে নস্যাৎ করে দেয়। শেখ মুজিবের আমলে তাই হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট যদি সরকারী দলের হাতের পুতুল হয় তাহলে এমন হওয়াই স্বাভাবিক।
প্রেসিডেন্টকে প্রকৃতপক্ষে শাসনতন্ত্রের অভিভাবকের মহান দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ কাজটি এমন এক ব্যক্তির পক্ষেই পালন করা সম্ভব যিনি শাসক দলের করুণার পাত্র নন।
যিনি ক্ষমতাসীন দলের নিযুক্ত বা সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নির্বাচিত ব্যক্তি তিনি সরকারের মর্জির বিরুদ্ধে শাসনতন্ত্রের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব কি করে পালন করতে সক্ষম হবেন ?
যারা পার্লামেন্টারি সিস্টেম চান তারা ভালো করেই জানেন যে, ইংল্যান্ডের ক্রাউন রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচিত না হওয়ায় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করে থাকেন। বাংলাদেশে আমরা কোন ক্রাউন তৈরি করতে চাই না। কিন্তু ক্রাউনের ঐ দায়িত্বটা পালন করার জন্য এমন প্রেসিডেন্ট অবশ্যই আমাদের প্রয়োজন যিনি ক্ষমতাসীন দলের হুমকী বা দলীয় রাজনৈতিক কোন্দলের স্বীকার হতে বাধ্য মনে করবেন না। যদি জাতীয় সংসদের সদস্যদের দ্বারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলে তাহলে ঐ হুমকী এবং কোন্দল থেকে তিনি নিজেকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারবেন না। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর দশা যাতে কোন প্রেসিডেন্টের না হয় সে ব্যবস্থাই করা প্রয়োজন।
কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, ভারতে তো আইন সভার সদস্যদের ভোটেই রাষ্ট্রপতির নির্বাচন হয়। বাংলাদেশে কেন এ পদ্ধতি চলবে না ? যারা এ প্রশ্ন করেন তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, এক দেশে এ ব্যবস্থা চালু থাকলেই তা অন্য দেশের জন্য উপযোগী হয়ে যায় না। তাছাড়া ভারত ফেডারেল রাষ্ট্র হওয়ায় সেখানের অবস্থা বাংলাদেশের মত নয়।
ভারতে কেন্দ্রীয় আইন সভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট এবং প্রাদেশিক আইন সভা ২৫ টি। এসব আইন সভার বিরাট সংখ্যক সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন হয় বলে প্রেসিডেন্টকে কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন দলের খেলনায় পরিনত হওয়া সেখানে সহজ নয়। সবচেয়ে বড় কথা হল, ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে যোগ্য নেতৃত্বে গণতন্ত্র ক্রমেই ভারতে স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী একবার ডিক্টেটর হবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। গণতন্ত্র সেখানে আবার বহাল হয়েছে। দ্বিতীয়বার যখন গণতান্ত্রিক পন্থায়ই ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় এলেন তখন পূর্বের জনতা সরকারের আমলের নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানকে অপসারণের কোন চেষ্টা করেননি। দীর্ঘদিনে ভারতে যে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে তার ঠিক বিপরীত অবস্থা বাংলাদেশে বিদ্যমান।
বাংলাদেশে ১৯৪৭ সাল থেকেই রাজনীতির যে ধারা চলছে তাতে গণতন্ত্রের বিকাশ হতেই পারেনি। ক্ষমতাসীনরা যেমন বিরোধীদলকে নিরাপত্তা আইন ও সরকারী ক্ষমতার ডাণ্ডা দিয়ে ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করেছেন ঠিক তেমনি এর প্রতিক্রিয়ায় কোন কোন বিরোধীদল হিংসা- বিদ্বেষ ও গুণ্ডামির হাতিয়ার ব্যবহার করে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সমালোচনায় এখনো যে অশালীন ভাষা ব্যবহার করা হয় এবং কোন কোন দল যেভাবে অস্ত্রের ভাষা ব্যবহার করে তার গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য তো দুরের কথা, এদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কি তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলার সময় আসেনি। এ পরিস্থিতিতে যদি সরকারী দল এবং প্রেসিডেন্টের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা করা না হয় তাহলে গণতন্ত্রের সম্ভাবনাটুকুও খতম হয়ে যাবে। ( বাংলাদেশের রাজনীতি )
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব
গণতন্ত্রের প্রয়োজনে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে তিনটি দায়িত্ব পালন করতে হবে। যেমনঃ
১। প্রেসিডেন্ট যাতে শেখ মুজিবের আমলের মত প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের খেলনায় পরিনত না হতে পারে সেজন্য প্রেসিডেন্টকে যোগ্যতার সাথে সরকারের বাড়াবাড়ি অন্যায় হস্তক্ষেপ থেকে শাসনযন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে। শাসনতন্ত্রের মজবুত অভিভাবকের দায়িত্ব পালনের ভার প্রেসিডেন্টের হাতে থাকাই স্বাভাবিক।
২। কোন কারনে একবার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে বিকল্প সরকার গঠন পর্যন্ত বা বার বার সরকার ভেঙ্গে যাবার দরুন স্থিতিশীল সরকারের অভাবে প্রেসিডেন্টকে শাসনতন্ত্রের সঠিক বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করতে হবে। শাসনতন্ত্র যাবতীয় সরকারী ক্ষমতার উৎস হিসেবে এর সঠিক মর্যাদা বহাল রাখা এসব পরিস্থিতিতে অত্যন্ত কঠিন দায়িত্ব।
৩। নির্বাচনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে সত্যিকার গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য গড়ে তুলতে হলে ক্ষমতাসীন দলসমূহের দলীয় স্বার্থ থেকে প্রেসিডেন্টকে ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। তাকে নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব হিসেবে জনগন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে।
বলা বাহুল্য এসব দায়িত্ব ইংল্যাণ্ডের ব্রিটিশ ক্রাউন পালন করে থাকে। বাংলাদেশ এ দায়িত্ব পালনের উপযোগী মর্যাদায় যাকে অধিষ্ঠিত করা হবে তিনি যদি সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের অনুগ্রহ ভাজন হন তাহলে এ মহান দায়িত্ব তিনি কখনোই পালন করতে পারবেন না।
( বাংলাদেশের রাজনীতি )
জনগনের প্রেসিডেন্ট
দেশের অতীত অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান পরিস্থিতির দাবী এটাই যে, শাসনতন্ত্রের অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে ও সরকারী ক্ষমতায় বিভিন্ন অংশের মধ্যে ভারসাম্য বহাল রাখার প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রেসিডেন্টকে জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটেই নির্বাচিত হতে হবে। জনগনের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাসীন দল কখনোই দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবেনা। প্রেসিডেন্টের হাতে দেশ শাসনের ক্ষমতা থাকবে না বলে নিঃস্বার্থভাবে রাজনৈতিক শক্তিসমূহের সাথেও তিনি ইনসাফ পূর্ণ ব্যবহার করতে পারবেন।
এমন মর্যাদা সম্পন্ন প্রেসিডেন্ট তিনিই হতে পারবেন যিনি একমাত্র জনগনের নিকট দায়ী থাকবেন। শুধু ক্ষমতাসীন দলের একক ভোটে তাকে অপসারণ করা চলবে না। প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। ব্রিটিশ ক্রাউনের সমমর্যাদার অধিকারী প্রেসিডেন্ট একমাত্র এভাবেই যোগাড় করা সম্ভব।
বাংলাদেশে কয়েকবার জনগনের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর গণতন্ত্রের স্বার্থেই এ থেকে পিছিয়ে আসা উচিত নয়। যারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনগণকে ভোট দেবার অধিকার দিতে চান না তারা যতই পার্লামেন্টারি পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি দিক নির্বাচনে এটাকে কি তারা নির্বাচনী ইস্যু বানাতে সাহস করবেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনগনের ভোটের প্রয়োজন নেই বলে কি তারা জনগণকে বুঝাতে পারবেন ? সুতরাং পূর্বে জনগন যখন সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছেন তখন এ অধিকার তারা কিছুতেই ত্যাগ করতে রাজী হবেন না। এ বিষয়টা গণভোটে দিলে জনগন কি রায় দেবে তা সবারই জানা।
এ পর্যন্ত একটি যুক্তিই এর বিপক্ষে পাওয়া গেছে। এ গরীব দেশে এ জাতীয় নির্বাচনে সরকারী দল বিপুল অর্থ খরচ করবে এবং বিরোধী দলের প্রার্থী এতো খরচ করতে পারবে না। প্রকৃতপক্ষে এ কথা সংসদ সদস্য নির্বাচনের বেলায়ও সত্য। এটা হচ্ছে রাজনৈতিক দুর্নীতি। সরকারী ক্ষমতা এবং সুযোগ কোন নির্বাচনেই দল বিশেষের হাতে কুক্ষিগত থাকা ঠিক নয়। এ সমস্যাটি ভিন্ন একটা আপদ। এর সাথে প্রত্যক্ষ ভোটের কোন সম্পর্ক নেই।
জনগনের ভোটে প্রেসিডেন্টের মত “টিটিউলার হেড” বা শাসন ক্ষমতাহীন পদের নির্বাচনে স্বাভাবিকভাবেই যে বিরাট অংকের খরচ হবে তাতে যদি কারো আপত্তি থাকে তাহলে তাদের নিকট শাসনতন্ত্রের নিরাপত্তা এবং অভিভাবকত্ব তেমন গুরুত্ব পায়নি বলে মনে হয়। একটা দেশের রাজনৈতিক সিস্টেমকে গণতন্ত্রের নীতি অনুযায়ী টিকিয়ে রাখা যদি সরকারী স্থিতিশীলতা ও অস্তিত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে নির্বাচনের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের ব্যাপারে কৃপণতা দেখানো বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। অবশ্য নির্বাচনের ব্যয় কমাবার উদ্দেশ্যে পারলামেন্ত এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একই সাথে অনুস্থান করে যেতে পারে। ( বাংলাদেশের রাজনীতি )
বাংলাদেশের পলিটিকাল সিস্টেম
যে কোন দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রধানত সে দেশের উপযোগী পলিটিকাল সিস্টেমের উপর নির্ভর করে। শাসনতন্ত্রে যতো ভালো কথাই লেখা থাকুক তার বাস্তব প্রয়োগ দেশের পলিটিকাল সিস্টেমের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সিস্টেমকে বাংলায় সরকারী অবকাঠামো বলা যেতে পারে।
বাংলাদেশে কোন স্থিতিশীল সিস্টেম এখনো গড়ে উঠেনি। ইংরেজ শাসনের অবসানের পর কয়েক দশকেও কোন সিস্টেম গড়ে না উঠার প্রধান কারণই গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি। একই সময়ের মধ্যে ভারতে একটি সিস্টেম স্থিতিশীল হয়ে গেলো, অথচ পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ তা সম্ভব হল না। এর কারন বিস্তারিত বিশ্লেষণের অবকাশ এখানে নেই। তবে প্রধান কারন একটাই। শুরু থেকেই দেখা গেছে যে, রাষ্ট্র ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে যিনিই অবস্থান নেবার সুযোগ পেয়েছেন, তিনি নিজের গদী মজবুত করারই পরিকল্পনা করেছেন। জনগণকে রাষ্ট্র ক্ষমতার উৎস মনে করে তাদের প্রতিনিধিদের মরজি অনুযায়ী দেশ শাসনের নীতি গ্রহণ না করার এটাই পরিনতি।
ব্যক্তিভিত্তিক সিস্টেম
নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান, গোলাম মুহাম্মাদ, ইস্কান্দার মির্জা, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান এবং শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন কালের বিশ্লেষণ করলে একথাই প্রমানিত হয় যে, তারা বিশুদ্ধ গণতান্ত্রিক পন্থায় আস্থাশীল ছিলেন না। তারা নিজস্ব সিস্টেমে মনগড়া পদ্ধতি চালু করার চেষ্টা করায় তাদের ক্ষমতাচ্যুত হবার সাথে সাথে সিস্টেমও খতম হয়ে গিয়েছে। লিয়াকত আলীর একক শাসন, গোলাম মুহাম্মাদের স্বেচ্ছাচার, ইস্কান্দার মির্জার কন্ট্রোল্ড ডেমক্রাসী, আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র, ইয়াহিয়া খানের গদীতন্ত্র এবং শেখ মুজিবের একদলীয় সিস্টেম তাদের গত হবার সাথে সাথেই বিলীন হয়ে গিয়েছে।
জেনারেল জিয়াউর রহমানের দেয়া সিস্টেমে বহু দলীয় গণতন্ত্র থাকলেও রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, দলীয় প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনী প্রধান একই ব্যক্তি হওয়ায় এবং প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির নামে পার্লামেন্ট পংগু করে রাখায় সংগত কারনেই কোন সন্তোষজনক গণতান্ত্রিক সিস্টেম গড়ে উঠেনি। জেনারেল এরশাদও নিজস্ব সিস্টেমের পরিকল্পনা নিয়েই ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তিনি সশস্ত্র বাহিনীকে শাসন ক্ষমতায় এতোটা অংশীদার করার পক্ষপাতী ছিলেন যাতে সামরিক শাসনের দরকার না হয় এবং সেনাপতিরা রাজনৈতিক সরকারের সক্রিয় অংশীদার হতে পারেন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর সংসদীয় সরকার পদ্ধতি কায়েম হয়েছে বটে কিন্তু সত্যিকার গণতান্ত্রিক বিধি- বিধান মেনে চলার ঐতিহ্য গড়ে না উঠা পর্যন্ত রাজনৈতিক সুস্থিরতা ও স্থতিশীলতা আশা করা যায় না।
বিশেষ করে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের যে পদ্ধতি চালু হয়েছে তাতে প্রেসিডেন্টের পক্ষে সরকারের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার কোন সম্ভাবনা নেই। বর্তমান প্রেসিডেন্ট শুধু সরকারী দলের প্রতিনিধি। তিনি শ্বাসতন্ত্রের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সরকারের উপর সামান্যতম চাপ সৃষ্টি করারও পজিশন ভোগ করেন না।
১৯৯৩ সালের ৩রা জানুয়ারী জাতীয় সংসদের ৮ম অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে সরকারী দলের একান্ত অনুগত ব্যক্তির দায়িত্ব বিশ্বস্ততার সাথে পালন করতে তিনি সক্ষম হয়েছেন। দেশের ১২ কোটি মানুষের নেতার দায়িত্ব পালন করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সরকারী কর্মকাণ্ডের প্রশংসা ছাড়া কোন বিষয়েই উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করতেও তিনি সক্ষম হননি। এই ব্যক্তিই যদি জনগনের ভোটে নির্বাচিত হতেন তাহলে অবশ্যই তিনি আরও বলিস্থ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হতেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বর্তমান পদ্ধতি চালু থাকলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠার আশংকা রয়েছে।
গণতান্ত্রিক সিস্টেম
বাংলাদেশের অতীত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, বর্তমান সংকট এবং জটিলতা ও স্থিতিশীল রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে একটা ভারসাম্যপূর্ণ সিস্টেমের প্রস্তাব এখানে পেশ করা হয়েছে। এ প্রস্তাবটির পক্ষে এবং বিপক্ষে যতো যুক্তি থাকতে পারে তা ধীরস্থিরভাবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব রাজনীতি সচেতন মহলের।
এ প্রস্তাবটিতে ৫ টি দফা রয়েছে যা বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছাড়াই পেশ করা হচ্ছে। সংসদীয় পদ্ধতি এবং প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি সম্পর্কে ইতিপূর্বে যে আলোচনা করা হয়েছে তাতে এ প্রস্তাবের যৌক্তিকতা সুস্পষ্ট বলেই আমার ধারণা। ( বাংলাদেশের রাজনীতি )
৫ দফা প্রস্তাব
১। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট
ক। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন।
খ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় একই সাথে জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
গ। প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের কার্যকাল হবে ৫ বছর।
ঘ। কোন কারনে প্রেসিডেন্টের পদ শুন্য হলে নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট সে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং জাতীয় সংসদ অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। কোন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না।
ঙ। যদি প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সংবিধান গুরতরভাবে লংঘিত হয় বা যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন তাহলে সংসদ সদস্যদের তিন চতুর্থাংশের ভোটে প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করা যাবে।
চ। এভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট কেয়ারটেকার সরকারের দায়িত্ব পালন করলে কোন দলের আপত্তি থাকবে না।
ছ। ভাইস প্রেসিডেন্টকে স্পীকারের দায়িত্ব অর্পণ করলে সংসদে দল নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার বেশী সুযোগ পাবেন এবং তিনি সহজেই সকল দলের আস্থা অর্জন করতে পারবেন।
২। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব
ক। শাসনতন্ত্রের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের নিরপেক্ষ হাতে ন্যস্ত থাকবে। কিন্তু দেশের শাসন কর্তৃত্ব তার হাতে থাকবে না।
খ। প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের নিরপেক্ষ মর্যাদা বজায় রাখার প্রয়োজনে তারা দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে সক্রিয়ভাবে দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত থাকতে পারবেন না।
গ। নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার স্বার্থে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট তাদের পদে বহাল থাকা অবস্থায় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। অবশ্য নির্বাচনের ৬ মাস পূর্বে পদত্যাগ করলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
ঘ। সরকার যদি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার মর্যাদা হারায় এবং অন্য কেউ যদি সরকার গঠনে সক্ষম না হন তাহলে প্রেসিডেন্ট জাতীয় সংসদ ভেংগে দিয়ে ৪ মাসের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।
ঙ। প্রেসিডেন্ট সরকারকে উপদেশ দিতে পারবেন। তবে তা বাধ্যতামূলক হবে না।
৩। শাসন ক্ষমতা
ক। জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতেই সরকার গঠনের প্রকৃত ক্ষমতা ন্যস্ত থাকবে এবং জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত সরকারই প্রকৃত পক্ষে দেশ শাসন করবেন।
খ। প্রধানমন্ত্রীই সরকার প্রধানের মর্যাদা ভোগ করবেন। প্রেসিডেন্ট শাসনতন্ত্র বহির্ভূত পন্থায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় কোনরকম হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
গ। প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী সভা জাতীয় সংসদের নিকট দায়ী থাকবেন এবং সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন না হারানো পর্যন্ত সরকারী ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারী থাকবেন।
ঘ। জাতীয় সংসদ এবং প্রেসিডেন্টের মধ্যে কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে সুপ্রিমকোর্ট সে বিষয়ে শাসনতন্ত্র অনুযায়ী চূড়ান্ত ফায়সালা দিবেন।
ঙ। সরকারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনে সংসদ সদস্যগণ দল পরিবর্তন করতে পারবেন না। যে দলের টিকিট নিয়ে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সে দল ত্যাগ করলে তিনি সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে ধরা হবে।
৪। জাতীয় সংসদ নির্বাচন
ক। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩ মাস পূর্বে মন্ত্রী সভা এবং জাতীয় সংসদ ভেংগে দিতে হবে।
খ। পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি অরাজনৈতিক কেয়ারটেকার সরকার দেশের শাসন কাজ পরিচালনা করবেন।
গ। এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় সংসদের কোন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারবেন না।
ঘ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন কমিশনের সাথে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন এবং এর উপর কোনরকম হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
ঙ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক মাসের মধ্যেই নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করবেন।
৫। নির্বাচন কমিশন
ক। সুপ্রিমকোর্টের সর্বোচ্চ বেঞ্চ একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব অর্পণ করবেন।
খ। নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস্যগণ প্রধান বিচারপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন।
গ। প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে শাসনতন্ত্র অনুযায়ী যাবতীয় ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের উপরে ন্যস্ত থাকবে।
ঘ। নির্বাচন সক্রান্ত সকল কাজে গোটা প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবেন।
ঙ। প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় নির্বাচন একই সাথে অনুষ্ঠিত হবে।
দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন, স্থিতিশীল সরকার, আইনের শাসন, জনগনের সত্যিকার প্রতিনিধিদের সরকার কায়েম এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাস রোধ করতে হলে উপরোক্ত পলিটিকাল সিস্টেমের চাইতে উন্নত কোন প্রস্তাব কারো কাছে থাকলে সকলের বিবেচনার জন্য পেশ করা হোক।
( বাংলাদেশের রাজনীতি )
সমাপ্ত