আল্লাহর দিকে বিশ্বমানবতার প্রত্যাবর্তন
আধুনিক জাহিলিয়াত এবং তার ধারক-বাহক তাগুতেরা মনে মনে ধারণা করে বসেছে যে, তারা আল্লাহর দ্বীনকে চূড়ান্তভাবে উৎখাত করেছে।
হ্যাঁ, আধুনিক জাহিলিয়াতের এই ধারণাটা নেহায়েত ভিত্তিহীন নয়। এরূপ ধারণা করার তার অধিকার আছে। কেননা যে লোকই দুনিয়ার মানচিত্রের ওপর হালকাভাবে দৃষ্টিপাত করবে, সে স্পষ্ট দেখতে পাবে যে, প্রতিটি দেশের বুকের ওপর জাহিলিয়াতের গঠিত পতাকা পত পত করে উড়ছে। আর ইসলামের পতাকা সর্বত্রই অবনমিত।
কিন্তু মানবতা আল্লাহর দ্বীনের একমাত্র অভিভাবক নয়, যেমন পূর্ববর্তী অধ্যায়ের শেষে বলে এসেছি।
(আরবী************************************************************)
আল্লাহই তাঁর ব্যাপারে বিজয়ী, যদিও বহু মানুষই তা জানে না। (সূরা ইউসুফঃ ২১)
জাহিলিয়াত আজই প্রথমবার ইসলামের বিরুদ্ধে ইসলামকে ঘৃণা করা ও ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষন ও যুদ্ধ করার জন্যে ওঠে পড়ে লাগেনি। এ তো তার চিরকালীন ভূমিকা।
তা হলে? তাহলে মানুষ তো আল্লাহর দ্বীনের চূড়ান্ত ফয়সালাকারী হতে পারে না। ফয়সালা করবেন তো একমাত্র আল্লাহ। তিনিই ইসলামকে যে ভাবে রাখতে চান তাই রাখবেন। দ্বীন-ইসলামের অগ্রগতির থে জাহিলিয়াত যতই বাধার সৃষ্টি করুক, তাতে কিছুই আসবে যাবে না।
চূড়ান্ত ফয়সালা আল্লাহই করবেন। তিনি ইসলামের পথের বাধা জাহিলিয়াতকে হয় দূর করে দেবেন, না হয় এই জাহিলিয়াতকেই ইসলামের দিকে হেদায়েত করবেন।
(আরবী**********************************************************************)
এবং আমহরা নূহকে তার সময়ের লোকদের প্রতি পাঠিয়েছিলাম। সে ববল –হে জনগণ, তোমারা আল্লাহর বন্দেগী কবুল করো, তিনি ছাড়া তোমাদের ইলাহ কেউ নেই। আমি তোমাদের ওপর কঠিন দিনের আযাবের ভয় পাচ্ছি। জনগণের মধ্য থেকে বড় লোকেরা বললঃ আমরা তো তোমাকে সুস্পষ্ট গুমরাহীর মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। বললঃ হে জনগণ! আমার মধ্যে কোনো গুমরাহী নেই; আমি তো রব্বুল আলামীনের রাসূল। আমি আমার সৃষ্টিকর্তা –প্রতিপালকের রিসালাত তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিই এবং তোমাদেরকে নসীহত করছি। আমি আল্লাহর কাছ থেকে তাই জানি, যা তোমরা জানো না। তোমাদের সৃষ্টিকর্তা-প্রতিপালকের কাছ থেকে উপদেশবাণী তোমাদের মধ্যেরই এক ব্যক্তির কাঠেছ এসেছে দেখে তোমরা বিস্ময় বোধ করছ কি?… তা এসেছে তো এজন্যে যে, সে তোমাদের সাবধান করবে এবং যেন তোমরা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করো এবং যেন তোমরা রহমান প্রাপ্ত হও। কিন্তু পরে তারা তাকে অসত্য মনে করে অমান্য করল। তখন আমরা তাকে ও তার সঙ্গীদের নৌকায় আরোহন করায়ে বাঁচিয়ে দিলাম এবং ডুবিয়ে মারলাম সেই লোকদের, যারা আমার আয়াতসমূহকে অসত্য মনে করেছে। আসলে ওরা অন্ধ-জ্ঞানহীন লোক ছিল।
(সূরা আরাফঃ ৫৯-৬৪)
আ’দ কওমের লোকদের প্রতি তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম, সে বললঃ হে জনগণ! তোমরা আল্লাহর বান্দা হয়ে থাকো, তিনি ছাড়া তোমাদের ইলাহ কেউ-ই নেই। তোমরা কি ভয় পেয়ে নিজেদের বাঁচাবে না? জনগণের মধ্যে যে বড় লোকেরা কুফরী নীতি গ্রহন করেছিল তারা বললঃ আমরা তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় নিমজ্জিত দেখছি। আর তোমাকে আমরা মনে করি মিথ্যাবাদীদের একজন। বলল, হে জনগণ! না, আমার কোনো নির্বুদ্ধিতা নেই, আমি তো বরং রাব্বুল আলামীনের রাসূল। আমি তো আমার সৃষ্টিকর্তা-প্রতিপালকের রিসালাত তোমাদের কাছে পৌঁছাই। আমি তোমাদের জন্যে বিশ্বস্ত ও কল্যাণকামী। তোমাদের মধ্যে থেকেই এক ব্যক্তির কাছে হেদায়েতের বিধান এসেছে যেন সে তোমাদের সাবধান করে, তাতে কি তোমরা আশ্চর্যান্বিত হয়েছ? তোমরা স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন আল্লাহ তোমাদেরকে নূহ-এর পর খলীফা বানিয়ে ছিলেন এবং সৃষ্টির মধ্যে তোমাদেরকে খুবই সচ্ছল-সুস্বাস্থ্যবান বানিয়েছেন। তাহলে তোমরা স্মরণ করো আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামনের কথা, সম্ভবত তোমরা সফল হতে পারবে। তারা বললঃ আমরা কেবল আল্লাহর ইবাদত করব এবং আমাদের পিতৃপুরুষদের মা’বুদদেরকে ত্যাগ করব, এই কথা বলতেই কি তুমি আমাদের কাছে এসেছ? তাহলে তুমি সেই আযান নিয়ে আস আমাদের কাছে যার ওয়াদা তুমি আমাদের করছ, যদি তুমি একজন সত্যবাদী ব্যক্তি হয়ে থাকো। সে বললঃ তোমাদের সৃষ্টিকর্তা-প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি তোমাদের ওপর ফেটে পড়েছে, এসেছে তাঁর গজব। তোমরা কি আমার সাথে সেই নামগুলো নিয়ে ঝগড়া করতে চাও, যা তোমরা ও তোমাদের পূর্ব-পুরুষরা রেখেছে? যার পক্ষে আল্লাহ কোনো সনদ নাযিল করেন নি? …তাহলে তোমরাও অপেক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে সাথে অপেক্ষায় রইলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা অনুগ্রহ করে হুদ ও তার সঙ্গীদের বাঁচিয়ে দিলাম। আর তাদের মল উৎপাটন করলাম, যারা আমাদের আয়াতসমূহকে অসত্য মনে করেছে। তারা আসলে ঈমান আনতেই রাজি ছিল না।
আর সামুদের প্রতি পাঠিয়েছিলাম তাদেরই ভাই সালেহকে। সে বললঃ হে জনগণ! তোমরা এক আল্লাহর দাসত্ব কবুল করো, তিনি ছাড়া তোমাদের ইলাহ কেউ-ই নেই। তোমাদের কাছে তো অকাট্য প্রমাণ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে তোমাদের সৃষ্টিকর্তার-প্রতিপালকের কাছ থেকে আল্লাহর এক উষ্ট্রীটি। এটি তোমাদের জন্যে একটি নিদর্শন। অতএব ওটিকে মুক্ত করে ছেড়ে দাও, ওটি আল্লাহর জমিনে খাদ্য খেয়ে বেড়াবে। ওটির গায়ে কোনো খারাপ মনোভাব দিয়ে হাত লাগিও না। অন্যথায় একটা মর্মবিদারী আযাব তোমাদেরকে পরিবেষ্টিত করবে। স্মরণ করো সেই সময়ের কতা যখন আল্লাহ আদ বংশের লোকদের পরে তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত বানিয়েছিলেন এবং পৃথিবীতে তোমাদেরকে এই মর্যাদা দিলেন যে, আজ তোমরা তার সমতল ভূমিতে উঁচু উঁচু দালান-কোঠা বানাচ্ছ এবং পাহাড়গুলোকে ঘর-বাড়ি রূপে বানিয়ে নিচ্ছ। অতএব তাঁর কুদরতের কীর্তিকলাপের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করো না এবং পৃথিবীতে অশান্তির সৃষ্টি করো না। জনগণের মধ্যে যারা বড় হয়ে বসেছিল সে সব দুর্বল লোকদের ওপর যারা ঈমান এনেছিল, বললেঃ তোমরা কি বাস্তবিকই জানো যে, সালেহ তাঁর সৃষ্টিকর্তা –প্রতিপালকের নবী? তারা বললঃ নিঃসন্দেহে যে পয়গাম সহ সে প্রেরিত হয়েছে তার প্রতি আমরা ঈমানদার। সেই বড় অহংকারী লোকেরা বললঃ তোমরা যে জিনিসের প্রতি ঈমান এনেছ, আমরা তার প্রতি কুফরী করেছি। পরে তারা উষ্ট্রীর পা কেটে দেয় ও তাদের সৃষ্টিকর্তা-প্রতিপালকের আদেশ অহংকারবশত অমান্য করল। তারা বললঃ হে সালেহ! তুমি যদি সত্যিই একজন প্রেরিত ব্যক্তি হয়ে থাকো, তাহলে সেই আযাব আমাদের ওপর নিয়ে আসো, যার ওয়াদা তুমি আমাদের কাছে করেছ। শেষ পর্যন্ত এক ভয়াবহ বিপদ তাদেরকে গ্রাস করল এবং তারা নিজেদের ঘরেই উল্টোভাবে পড়ে থাকল। আর সালেহ তাদের বসতি থেকে এই বলে বের হয়ে চলে গেল যে –হে আমার জনগণ! আমি তোমাদের বহু কল্যাণ কামানও করেছি। কিন্তু আমি কি করব, তোমরাই তোমাদেরে কল্যাণকামীকে পছন্দ করো না।
আর লূতকে আমরা নবী বানিয়ে পাঠালাম। সে লোকদের বললঃ হে জনগণ! তোমরা এত নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছ যে, তোমরা এমন নির্লজ্জ কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে দুনিয়ায় কেউ কখনও করেনি। তোমরা নারীদের পরিবর্তে পুরুষদের দ্বারা নিজেদের যৌন লালসা চরিতার্থ করছ। সত্য কথা হচ্ছে, তোমরা সর্বশেষ সীমা লংঘনকারী লোক। কিন্তু তার এই কথার জবাবে জনগণের পক্ষ থেকে এছাড়া বলার মতো আর কিছুই ছিল না যে, বহিস্কৃত করো এই বলে জাহির করছে। শেষ পর্যন্ত আমরা লূত ও তার ঘরের লোকদেরকে –তার স্ত্রী বাদে যারা পিছনে পড়ে থাকা লোকদের মধ্যে ছিল –বাঁচিয়ে বের করে নিয়ে গেলাম এবং সেখানকার জনগনের ওপর এমন বৃষ্টি বর্ষালাম যে, অপরাধীদের পরিণতি কি হয়েছিল, তা সত্যিই দেখার মতো।
আর মাদাইয়ানবাসীদের প্রতি পাঠালাম তাদের ভাই শুয়াইবকে। সে বলল, হে ভাইগণ! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল করো। কেননা তিনি ছাড়া তোমাদের ইলাহ আর কেউ নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর স্পষ্ট পথ-নির্দেশ এসে গেছে। অতএব তোমরা পরিমাপ ও ওজন পূর্ণ কর, লোকদেরকে তাদের পণ্যে ক্ষতি করো না এবং পৃথিবীতে অশান্তির সৃষ্টি করো না, যখন তথায় শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাক করছে। তাতেই তোমাদের কল্যাণ নিহিত যদি তোমরা সত্যিকার ঈমানদার হয়ে থাকো। আর জীবনে প্রতিটি পথে তোমাদের ডাকাত হয়ে বসো না যে লোকদিগকে ভীত-সন্ত্রস্ত করণে ও ঈমানাদর লোকদেরকে আল্লাহর পথে চলতে বাধাগ্রস্ত করতে থাকবে। আর সরল ঋজু পথকে বাঁকা করে দেওয়ার জন্যে ব্যস্ত হবে। স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন তোমরা ছিলে স্বল্পসংখ্যক। পরে আল্লাহ তোমাদেরকে বিপুল সংখ্যক বানিয়ে দিলেন। আর চক্ষু উন্মুক্ত করে দেখ দুনিয়ার ফাসাদকারীদের কি পরিণাম হয়েছে?
তোমাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক লোক যদি সেই শিক্ষার প্রতি ঈমান আনে, যা সহ আমি প্রেরিত হয়েছি, আর অন্য লোকেরা তার প্রতি ঈমান না আনে তাহলে ধৈর্য সহকারে লক্ষ্য করতে থাকো, যতদিন না আল্লাহ আমাদের মাঝে ফয়সালা করে দিচ্ছেন। তিনিই তো সর্বোত্তম ফয়সালাকারী। তার জনগণের মধ্যে অহংকারে নিমজ্জিত লোকেরা তাকে বলতে লাগলঃ হে শুয়াইব, আমরা এবং তোমাদের সঙ্গে যারা ঈমান এনেছে আমাদের বসতি থেকে বহিস্কার করে দেবে অথবা তোমরা আমাদের মিল্লাতে ফিরে আসতে বাধ্য হবে। শুয়াইব জবাবে বললেন, ‘আমরা ফিরে আসতে রাজি না হলেও জোরপূর্বক আমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। তাহলে তো আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা দোষারোপকারী হয়ে পড়ব, যদি আমরা তোমাদের মিল্লাতে ফিরে যাই। অথচ যাওয়া আর কোনো ভাবেই সম্ভব নয় –আমাদের সৃষ্টিকর্তা-প্রতিপালক নিজেই তা চাইলে ভিন্ন কথা। আমাদের সৃষ্টিকর্তা-প্রতিপালকের জ্ঞান সর্ব পরিব্যাপ্ত। তাঁরই প্রতি আমরা নির্ভরতা গ্রহণ করেছি। হে আমাদের সৃষ্টিকর্তা-প্রতিপালক! তুমিই আমাকে ও আমাদের জ্ঞানের মধ্যে যথাযথ ফয়সালা করে দাও সত্যতা সহকারে। তুমিই সর্বোত্তম উন্মুক্ততা দানকারী ফয়সালাকারী। জনগণের মধ্য থেকে কাফের হয়ে যাওয়া লোকেরা সাধারণ লোকজনকে বললঃ তোমরা শুয়াইবকে মেনে চলবে, তোমরা তখন অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পরে মহা ধ্বংস সৃষ্টিকারী একটি আযাব তাদের গ্রাস করে ফেলল এবং তারা নিজেদের ঘরে উল্টে পড়ে রইল। যারা শুয়াইবকে অসত্য মনে করেছিল তারা এমনভাবে নির্মূল হয়ে গেল যে, যেন তারা তাদের ঘরে কখনোই উপস্থিত ছিল না। শুয়াইব এই কথা বলে সেই বসতি থেকে বের হয়ে গেল যে, হে জনগণ ভাইরা! আমি আমার সৃষ্টিকর্তা-প্রতিপালকের পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি এবং তোমাদের কল্যাণ কামনার চূড়ান্ত করেছি, এখন আমি সেই লোকদের প্রতি কেন দুঃখ বোধ করব, যারা কুফরীর নীতি অবলম্বন করেছে।
এমন কখনও হয়নি যে, কোনো জনবসতিতে আমরা নবী পাঠিয়েছি অথচ প্রথমেই আমরা তাদের পাকড়াও করিনি দুঃখ বিপদসহ, এই মনে করে যে, তারা নম্রতা ও বিনয় কান্নাকাটির পন্থা অবলম্বন করবে। পরে আমরা তাদের দুরবস্থাকে অচ্ছলতায় বদলিয়ে দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত তারা খুবই সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরপুর হয়ে গেল ও বলতে লাগল, আমাদের আগের পুরুষদের ওপরেও অনেক দুঃখ-বিপদ এসেছে। পরে তাদেরকে সহসাই পাকড়াও করলাম; যদিও তারা টেরও পায়নি। বসতির লোকেরা যদি ঈমান আনত ও তাকওয়ার পথ অবলম্বন করত, তাহলে আমরা তাদের প্রতি আসমান ও জমিন থেকে বরকতের দুয়ারসমূহ খুলে দিতাম। কিন্তু তারা অবিশ্বাস করে বসল, ফলে আমরা তাদের খারাপ কাজের জন্যে তাদের পাকড়াও করলাম, যা তারা নিজেরাই করত।
বসতির লোকেরা কি এই দেখে ভয়মুক্ত হয়ে গেছে যে, আমাদের পাকড়াও কখনও সহসা রাত্রিকালে এসে পড়বে না, যখন তারা শয্যাশায়ী হয়ে থাকে।
কিংবা বসতির অধিবাসীরা কি এই নিরাপত্তা লাভ করেছে যে, আমাদের কঠোর শক্ত হস্ত কখনও তাদের ওপর দিনের বেলায় এমন অভস্থায় এসে পড়বে না, যখন তারা খেল-তামাসায় লিপ্ত রয়েছে। ওরা কি আল্লাহর কৌশলের ব্যাপারে নির্ভীক হয়ে গেছে? অথচ আল্লাহর কৌশলপূর্ণ কাজ থেকে নির্ভীক হয় কেবল সেই লোকেরা, যারা শেষ পর্যন্ত ধ্বংসই হয়ে যায়।
(আল-আ’রাফঃ ৬৫-৯৭)
বিশ্বমানবতার প্রতি আল্লাহর এইরূপই আচরণ হয়ে এসেছে, যার সুদীর্ঘ কাহিনী উপরে উদ্ধৃত হল।
(আরবী*************************************************************************)
কাফের লোকরেদ সম্পর্কে একথা মনে করো না যে, তারা পৃথিবীতে পালিয়ে আমাকে পরাজিত করে দেবে। (সূরা নূরঃ ৫৭)
(আরবী**********************************************************)
আল্লাহই বিজয়ী তাঁর নিজের সব ব্যাপারে। কিন্তু অধিকাংশ লোকই তা জানে না। (সূরা ইউসুফঃ ২১) জাহিলিয়াত যতই প্রবল ও প্রচণ্ড হোক, তা কখনোই আল্লাহকে পৃথিবীতে পরাজিত করতে পারবে না। বরং আল্লাহর সুন্নাতই পৃথিবীতে শাশ্বতবাবে কার্যকর থাকবে চিরকাল। আর তাঁর সুন্নাত হচ্ছে, তিনি মানুষকে কঠিন বিপদ-আপদে নিমজ্জিত করে তাদের পরীক্ষা করেন, সম্ভবত তারা ভয় পেয়ে আল্লাহর কাছে কাতর হয়ে কান্নাকাটি করবে। কিন্তু রোকেরা যদি ভয়-ই না পায়, তাহলে আল্লাহ খারাপকে ভালো দ্বারা পরিবর্তন করে দেন এবং লোকদেরকে অপরিমেয় নেয়ামতসমূহ দান করেন। তাতে তারা মশগুল হয়ে গিয়ে আল্লাহকেই ভুলে যায়। বলতে শুরু করে, আমাদের পূর্বপুরুষরাও তো এরকম বিপদ-আপদে পড়েছিল, আবার তারা বিপুল সচ্ছলতাও পেয়েছে। উভয় অবস্থার মধ্যেই তাদের জীবন অতিবাহিত হয়েছে। আমরা তাদেরই মত কখনও স্বল্পতা সংকীর্ণতার মধ্যে পড়ে যাই, আবার কখনও বিপুল সচ্ছলতাও লাভ করি। কিন্তু আল্লাহর সুন্নাত হলো লোকদের অবস্থা যখন উক্তরূপ হয়, আল্লাহ তা’আলা সহসাই তাদের পাকড়াও করেন, যা তারা জানতেও পারে না।
আমরা এক্ষণে অনুভব করতে পারছি, মানবতার মধ্যে একটা আমূল পরিবর্তন আল্লাহর ইচ্ছায় হয়ে গেছে। হয় জাহিলিয়াতে নিমজ্জিত ব্যক্তিরা চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে –কেননা তারা বিশ্ব ভূ-মণ্ডলকে জাহিলিয়াতের পাপ-পংকিলতায় কানায় কানায় ভরে দিয়েছে অথবা এই মানবতার মধ্য থেকেই তিনি একটা নতুন বংশধর গড়ে তুলবেন, যারা আল্লাহর দ্বীনকে নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। বিশ্বমানবতাকে জাহিলিয়াতের ব্যাপক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে। আসলে আল্লাহই এই ব্যাপারে চির বিজয়ী। যদিও অনকে লোকই তা জানে না, বুঝে না, সেদিকে লক্ষ্য দেয় না।
এক্ষণে আমরা যদি আবার বিশ্ব মানচিত্রের অধ্যয়ন করি, তাহলে প্রথম বারের মানচিত্র দর্শনে যেমন প্রথম দৃষ্টিতেই সমগ্র জগত জাহিলিয়াতের পুঞ্জীভূত অন্ধকারে নিমজ্জিত দেখতে পাই, তেমনি নিশ্চয়ই দেখতে পাব না। বরং দূরে দূরে কিছু আলোর ঝলকানি দৃষ্টিগোচর হবে।
সেই আলোর ঝলকানিতেই এই গ্রন্থ লেখা হলো। আমরা বলতে চাচ্ছি, জাহিলিয়াতের প্রভাব দিগন্তে নতুন সূর্যের কিরণ ফুটে উঠছে বলে মনে হচ্ছে, এটি সেই নতুন দিনের সূর্যোদয়ের পূর্ব লক্ষণ?
গায়বের জ্ঞান আল্লাহ তা’আলা কাউকেই দেননি –আমাদেরও নেই। তবে আমরা আল্লহার শাশ্বত সুন্নাত –অপরিবর্তনীয় নিয়ম –অবশ্যই অধ্যয়ন করতে পারি, সেই আল্লাহরই প্রদর্শিত নিয়মে।
আল্লাহর সুন্নাত-ই উদাত্ত কণ্ঠে ডেকে বলছেঃ
হয় আল্লাহর দিকে হেদায়েথ গ্রহণ করো, না হয় চিরন্তন ধ্বংসের মধ্যে বিলীন হয়ে যাও।
এক্ষণে আল্লাহর নির্ধারিত মানবতার চূড়ান্ত ধ্বংসই যদি লিপিবদ্ধ হয়ে না থেকে থাকে, তাহলে আল্লাহর দিকের হেদায়েত গ্রহণ একান্তই অপরিহার্য। তৃতীয় কোনো পথ নেই।
আমরা মানবতায় বিশ্বাসী, মানবতার আল্লাহর দিকের হেদায়েত গ্রহণ করবে, এই বিশ্বাসও আমাদের রয়েছে। আর এই মহা সুখময় ভবিষ্যতের শুভ সংবাদ জাহিলিয়াতের নিরবচ্ছিন্ন অন্ধকার বুক দীর্ণ করে ঝকমক করে উঠছে, আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
বর্তমান জাহিলিয়াতের গ্রাসে পড়ে বিশ্বমানবতা এক মহাদুর্ভাগ্যের ও নিতান্তই অশুভ অবস্থার মর্মান্তিক শিকারে পরিণত হয়েছে।
মানুষের দুঃখ, পীড়া, বঞ্চনা ও নিপীড়নের কোনো অন্ত নেই। অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা জনগণের স্নায়ু নিয়ে সম্পূর্ণ রূপে অকর্মণ্য করে দিয়েছে।
রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, নৈতিকতা, দুই লিঙ্গের মানুষের পরস্পরের সম্পর্ক ও শিল্প সংস্কৃতি ….সব কিছুই চরম ও ভয়াবহ বিপর্যয়ের গ্রাসে পড়ে গেছে, মানবতা অত্যাচারিত, নিপীড়িত, শ্বাসরুদ্ধ প্রায়, আর এই সবই অকাট্য নিদর্শন হচ্ছে মানবতা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।
মানবতার এই দুর্ভাগ্য তার সহ্য শক্তিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে। এক মহা আযাব মানবতাকে তিল তিল করে পিষে মারছে।
বর্তমানের জাহিলিয়াত আল্লাহর দুশমন। এই কারণে তা মানুষের দুর্ভাগ্য ও জ্বালা-যন্ত্রণার অসীম অবস্থা দেখেও নির্বিকার। অতবা তার আংশিক স্বার্থ-সুবিধা ও লালসা-কামনার চরিতার্থতা মানবতাকে এই অবস্থার মধ্যে ফেলে রেখে-ই হতে পারে বলে তা সম্পূর্ণ নিশ্চুপ।
কিন্তু ব্যাপার তো জাহিলিয়াতের প্রতিবাদহীনতার নয়। মানবতার গোটা সত্তার গভীর অন্তঃস্থলে ধ্বংস ও বিপর্যয় পরিব্যাপ্ত। অতঃপর নিশ্চিত ধ্বংস, চিরতরে বিলীন হয়ে যাওয়া অবধারিত। ত
আল্লাহর সাথে শত্রুতাকারী মানবতা বর্তমান বংশও চরিতরে বিলীন হয়ে যাবে অনিবার্যভাবে।
কিন্তু দূর-দিগন্তের নিলিমার কোল থেকে যে নবতর বংশধরদের অভ্যুদয় ঘটতে যাচ্ছে ….তারা তো এই অবস্থাকে প্রত্যখ্ষ করছে। এই বিলীয়মান বংশের কাছ থেকে –মানবতার এই নির্মম পরিণাম থেকে অবশ্যই উচিত শিক্ষালাভ করবে। ….তাই বলছিলাম, তারা অবশ্যই আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে। বর্তমান বংশধর বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে আল্লাহকে অস্বীকার করছে। কেননা বর্তমান দুনিয়ার বড় বড় শয়তানেরা তাদের বুঝিয়েছে যে, বিজ্ঞান আল্লাহর প্রতি ঈমানের পরিপন্থী। মধ্যযুগীয় এস কুসংস্কারকে বিজ্ঞান নিতান্তই ভিত্তিহীন প্রমাণ করেছে, সেই সবের ব্যাপার চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, বিজ্ঞানের উন্নতি অগ্রগতি ও বিকাশ এই শয়তানদের হাতে একটা নিকৃষ্ট ও মারাত্মক অস্ত্র হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই বিজ্ঞানের উন্নতি, অগ্রগতি যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানবতা আল্লাহ থেকে ততই দূরে সরে যাচ্ছে।
কিন্তু যে বিজ্ঞানীরা লোকদেরকে কুফরীর দিকে নিয়ে গিয়েছিল তারাই এক্ষণে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে শুরু করে দিয়েছে।
এখানে আমরা বিজ্ঞানীদের কিছু স্বীকারোক্তি উদ্ধৃত করব, যা পূর্বেও করেছি, তার সাথে আরও কিছু এখানে যোগ করব।
প্রকৃতি পদার্থ বিজ্ঞানী ও অংকশাস্ত্র পারদর্শী স্যার জিমস জীনস বলেছেনঃ প্রাচীন বিজ্ঞানী আমাদের বলত, প্রকৃত পদার্থ কেবল একটি মাত্র দিকেই গতিবান, যে দিকটি তার জন্যে চিরদিনের জন্যে স্থির ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এটা কার্যকারণের শেষহীন ধারাবাহিকতা ‘ক’ সংঘটিত হলে ‘খ’ অবশ্যই সংঘটিত হবে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বলছেঃ ‘ক’ এর পর ‘খ’ও আসতে পারে। আসতে পারে ‘গ’ বা ‘ঙ’-ও। খুব বেশি বলতে শুধু এতটুকুই বলা যায়, ‘খ’ আসার সম্ভাবনা ‘গ’ আসার সম্ভাবনার তুলনায় বেশি এবং ‘গ’ ও ‘ঙ’ আসার সম্ভাবনাকে নতুন করে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু দৃঢ় নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যায় না। কেননা আধুনিক বিজ্ঞান কেবল সম্ভাবনার বিষয়েই কথা বলতে পারে, আর যা অনিবার্যভাবে সংঘটিত হওয়া আবশ্যক, তা মূল্যমানের ওপরে ছেড়ে দেওয়া।
ফ্রাঙ্কফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ ও জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক অর্নেষ্ট চার্লস রাসেল বলেছেনঃ
নিষ্প্রাণ প্রস্তর জগত থেকে কি ভাবে জীবন উন্মোচিত হল, এই পর্যায়ে কয়েক প্রকারের মতবাদ উপস্থিত করা হয়েছে। কোনো কোনো গবেষকের মত হচ্ছে জীবন ‘প্রোটোজীন’ থেকে উদ্ভুত অথবা ‘নীলকান্তমণি’ থেকে হয়েছে কিংবা প্রোটিন-এর কোনো কোনো বড় বড় অংশের পারস্পরিক মিলিত হওয়ার কারণে উন্মোচিত হয়েছে। লোকদের ধারণা, প্রস্তুর জগত থেকে জীবন রূপায়িত হওয়ার মধ্যবর্তী শূন্যতা পূরণ করে দিয়েছে। কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে, প্রস্তুর থেকে জীবনের উন্মেষ লাভ সংক্রান্ত সমস্ত মতবাদই সম্পূর্ণ ভুল। কেননা হঠাৎ করে যা ঘটনাবশত কতিপয় অংশের একত্রে মিলিত হয়ে যাওয়ার দরুন জীবন উন্মোচিত হয়েছে তার পরে তা সেই রূপ ধারণ করছে, যা আমরা জীবন শেষে লক্ষ্য করছি –আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকারকারী কোনো ব্যক্তিও এই কথার সমর্থনে কোনো যুক্তি বা প্রমাণ পেশ করতে পারবে না। প্রত্যেক ব্যক্তিরই স্বাধীনতা রয়েছে, ইচ্ছা হলে জীবন উন্মোচিত হওয়া পর্যায়ের এই বিশ্লেষণটিকে নির্ভুল মেনে নিতে পারে। এই বিশ্লেষণকে সত্য মেনে নেওয়ার পর –মানুষ আল্লাহর ওপর নির্ভরতা গ্রহণ করলে তিনি স্বীয় নির্ভুল ব্যবস্থাধীন সবকিছু সৃষ্টি করেছেন –যতটা জটিলতার মধ্যে পড়ে যেতে পারে, তার চাইতেও অনেক বেশি জটিলতার মধ্যে পড়ে যাবে। আমি মনে করি, প্রতিটি জীব-কোষে এতবেশি জটিলতা নিহিত যে, তা অনুধাবন করা খুবই কঠিন। পৃথিবীর বুকে বিরাজমান কোটি কোটি জীব কোষ আল্লাহর অস্তিত্বের নির্ভুল ও অকাট্য সাক্ষ্য পেশ করছে। এই কারণে আমি তো আল্লহার প্রতি অতীব দৃঢ়তা সহকারে ঈমান এনেছি।
‘উইলিয়াম এয়ারফ’ এডী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট লব্ধ উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ ও মিশগান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। তিনি বলেছেনঃ
বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আমাদেরকে এই জ্ঞান দিতে অক্ষম যে, এই অশেষ ও অসাধারণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিন্দুসমূহ কিভাবে অস্তিত্ব লাভ করল। আর জীবন রূপায়নে সেগুলো পরস্পরে কিভাবে মিলিত হয়। আমি প্রাণী তত্ত্ব অধ্যয়নে যথেষ্ট সময় অতিবাহিত করেছি। জীবনের অধ্যয়নের জন্যে প্রাণীবিজ্ঞান একটা বড় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ও কেন্দ্র। আল্লাহর সৃষ্টিকুলের অধ্যয়ন একিট চিন্তাকর্ষক ব্যাপার। পথের পার্শ্বে উদ্ভূত ত্রি-পত্র উদ্ভিদ (Terfoil)-কে দেখো, মানুষের বানানো সমস্ত যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার সমৃদ্ধ ও এই সামান্য নগণ্য উদ্ভিদের সমান হতে পারে না। তা একটি জীবন্ত যন্ত্র যা রাত দিন সর্বক্ষণ কর্মে নিরত এবং সহস্র রাসায়নিক ও পদার্থগত অবস্থা অতিক্রম করে অগ্রসর হচ্ছে। আর এই সমস্ত কার্যক্রম প্রোটোপ্লাজমের অধীন হচ্ছে। তা-ই হচ্ছে সেই জড় জীবন্ত যন্ত্র কোত্থেকে এলো? …আল্লাহই তো সৃষ্টি করেছেন এবং তা তিনি কেবল এই একটিকেই এমনিভাবে সৃষ্টি করেন নি; তিনি জীবন সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেকটিকে স্বশক্তিতে বেঁচে থাকার ও নিজেকে রক্ষা করার সমর্থ বানিয়েছেন। তাকে যুগের পর যুগ ধরে অব্যাহত থাকার যোগ্যতাও দিয়েছেন। সেইরক্ষা করছে স্ভীয় সব বিশেষত্ব ও পার্থক্যকারী বৈশিষ্ট্য। এই জিনিসই তাকে অন্যান্য উদ্ভিদ থেকে পৃথক হয়ে থাকার কাজে তাকে সাহায্য করে।
জীবনের বিপুলতার অধ্যয়ন আল্লাহর কুদরত প্রকাশে অধিক সাহায্যকারী এবং জীব-জগত অধ্যায়নে অধিক প্রেরণা দানকারীও।
এখানে শুধু দৃষ্টান্তস্বরূপ কয়েকটি উক্তি উদ্ধৃত করলাম। এগুলো নিতান্তই নমুনাস্বরূপ মাত্র। এসব এমন একখানি গ্রন্থ থেকে গৃহীত যার একটার মধ্যেই আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকারের বহুশত উক্তি শামিল রয়েছে। যদিও এর বেশ কয়েকটির ওপর জাহিলিয়াতের প্রচ্ছায়া পড়েছে বরে স্পষ্ট মনে হয়।–[বিজ্ঞানের যুগে আল্লাহর স্পষ্ট স্বীকৃতি।]
বিজ্ঞানীদের এমনি সাক্ষ্য ও স্বীকারোক্তি অসংখ্য রয়েছে। এরা সেই বিজ্ঞানী যারা বর্তমান সময়ের মানব বংশকে কুফরীর দিকে টেনে নিয়েছিল। আর এক্ষণে তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনের আহবান জানাচ্ছে।
বর্তমান যুগের বিভিন্ন জীবন ব্যবস্থার ধ্বংসও বিশ্বমানবতাকে আল্লাহর দিকে নিয়ে যাচ্ছে, সেই দিকের পথ দেখাচ্ছে।
পুঁজিবাদ দুনিয়ার বহু দেশেই একটি বিশ্বাস ও সমাজ ব্যবস্থা হিসেবে অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারেনি, ধ্বংস হয়ে গেছে, যদিও আমেরিকায় বর্তমানেও তা বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে। কিন্তু সেখানেও তা এখন মুমূর্ষ অবস্থায় পৌঁছে গেছে, অন্যান্য দেশে তার যে নিশ্চিত অনিবার্য পরিণতি হয়েছে, তথায়ও তাই হতে যাচ্ছে। তবে তা অর্থনৈতিক বা বস্তুগত কিংবা ঐতিহাসিক নিশ্চিত অনিবার্যতার ভিত্তিতে নয়, তার বিলুপ্তি হবে আল্লাহর সুন্নাতের ভিত্তিতে। কেননা অন্যায় জুলুম শোষণের পথে তা সীমালংঘন করে গেছে, কাজেই আল্লাহর সুন্নাত অনুযায়ী তার বিলুপ্তি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
কমিউনিজম সমাজতন্ত্র জাহিলিয়াতের নতুন উৎপাদন, তাও বিলুপ্ত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তীব্র গতিতে।
১৯৬৪ সনের মার্চ মাসে ক্রুশ্চেভ বলেছিল, শ্রমিকদের মজুরিতে নিরংকুশ সমতার ব্যবস্থা খতম করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অধিক উৎপাদনের জন্যে ব্যক্তিগত চেষ্টাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্যে সেই অনুপাতে মজুরি দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা ছাড়া উপায় নেই। এছাড়া সামষ্টিক সমাজতান্ত্রিক চাষ প্রথা উৎপাদনের চরম ব্যর্থতা নিয়ে এসেছে।–[ক্রুশ্ভেভের পর রাশিয়ায় কয়েক দফা বিপ্লব ঘটেছে; কিন্তু মজুরী পর্যায়ে সর্বশেষ বিপ্লবও ক্রুশ্চেভের সিদ্ধান্ত থেকে ব্যতিক্রম কিছু হয়নি।]
ক্রুশ্চেভের এই কথা রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতারই প্রমাণ করে অকাট্যভাবে। শুধু তাই নয় এই উক্তি মার্কসবাদ লেনিনবাদের স্পষ্ট অস্বীকৃতি। অথচ কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র বলতে তো ঐ ব্যবস্থাকেই বোঝায়। তা ত্যাগ করে অপর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য প্রমাণ করেছে। কিন্তু কি গ্রহণ করা হবে, তা আল্লাহই ভালো জানেন।
আধুনিক জাহিলিয়াতের প্রধান খুঁটি তো এই দুই ব্যবস্থাই। এই দুটিই যদি বিলীন হয়ে যায়, একটি দৃঢ় মত, বিশ্বাস হিসেবে যদি টিকেই না তাকে, তাহলে নবতর এক ব্যবস্থার দিকে চলে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কি উপায় হতে পারে। অবশ্য এ দুটির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির প্রতি আমরা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছিনা। কেননা এই শক্তির কোনো নিশ্চয়তা নেই। আসল শক্তি হচ্ছে বিশ্বাস ও মতাদর্শ। তাই রাজনৈতিক শক্তি সংগ্রহ ও সুসংবদ্ধ করে এবং জীবন সংগ্রামের ক্ষেত্রে তাই নিয়ে আসে প্রকৃত সাহায্য ও বিজয়।
এর পর থাকে একমাত্র ইসলাম।
অবশ্য পুঁজিবাদ ও সমাজন্ত্রের পরই নতুন কোনো বাস্তব পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি।–[বিগত তিন বছর ধরে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সফল হওয়ার পর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বর্তমান মুহুর্ত পর্যন্ত তার ফল খুবই উৎসাহব্যঞ্জক, যদিও উভয় শক্তিই তাকে ব্যর্থ করতে চাচ্ছে।–অনুবাদক] তবে উক্ত দুটি জীবন ব্যবস্থা দুই প্রান্তিক সীমায় পৌঁছে যাওয়া ব্যবস্থা। একিট যদি চরম ডানদিকে অবস্থিত তাহলে অপরটি চরম বাম দিকে। মধ্যবর্তী জীবন ব্যবস্থা একমাত্র ইসলাম। আল্লাহই এই নামকরণ করেছেন। এবং এর অনুসারী ও ধারক-বাহকদের নাম দিয়েছেন ‘মুসলিমীন’।
(আরবী*******************************************************************************)
তিনি তোমাদের নামকরণ করেছেন মুসলিম, এর পূর্বে এবং এই গ্রন্থেও, যেন রাসূল তোমাদের সাক্ষী (পথ-প্রদর্শক) হয়, আর তোমরা হও লোকদের ওপর সাক্ষী (পথ-প্রদর্শক) (সূরা হজ্জঃ ৭৮)
(আরবী***************************************************************)
এমনিভাবেই আমরা বানিয়েছি তোমাদেরকে এক উন্নত মধ্যম মানের উম্মত, যেন তোমরা সাক্ষী (পথ-প্রদর্শক) হও এবং রাসূল হবে তোমাদের সাক্ষী (পথ-প্রদর্শক)। (সূরা বাকারাঃ ১৪৩)
এসব যেমন সুসংবাদ, অকাট্য দলীল, যা প্রমাণ করেছে যে, বিশ্বমানবতাকে অবশ্যই আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে।
এ পর্যন্ত যে-কয়টি নিদর্শনের উল্লেখ করা হয়েছে, তা ছাড়াও ঐতিহাসিক অকাট্য প্রমাণ রয়েছে, যা এসব কয়টির অপেক্ষাও অধিক প্রকটভাবে প্রমাণ পেশ করছেন যে, বিশ্বমানবতা শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দিকেই ফিরে আসবে।
আমেরিকা আধুনিক জাহিলিয়াতের প্রাণকেন্দ্র। আমেরিকাই এশিয়া ও আফ্রিকার ইসলামকে চূড়ান্তবাবে খতম করার জন্যে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে।–[এশিয়ার ইরানে আমেরিকা যা করেছে, তা তথাকার ইসলামী বিপপ্লবকে প্রথমে রুখবার জন্যে এবং পরে তাকে অংকুরে খতম করার লক্ষ্যে করেছিল, এখনও করে যাচ্ছে। কিন্তু সবকিছুই চরম ব্যর্থতায় পর্যবসিত। ইরানে ইসলামী জীবন-বিধান পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হয়েছে।] এ উদ্দেশ্যে বৈষয়িক উপায়-উপকরণ-অস্ত্র ও কৌশল যতকিছু সংগ্রহ ও ব্যবহার করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল, সবই সে করেছে, কিছুই বাদ রাখেনি। ইতিহাসের জাহিলিয়াত যত নিকৃষ্টতম উপায়ই আজ পর্যন্ত ব্যবহার করেছে, তা সবই সে করেছে। তাতে সমানভাবে শরীক রয়েছে খ্রিষ্টান ইহুদী ষড়যন্ত্র। কেননা উভয়েরই চরম লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামকে হত্যা করা। এই উদ্দেশ্যে যেখানেই কোনো ইসলামী বিপ্লবী আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তাকেই তারা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে চেয়েছে। তারা এই আত্মপ্রবতারই পড়ে গেছে মনে করে বসেছে, ইসলামকে তর জন্মস্থানেই নির্মূল করে দিয়েছে। এক্ষণে ইসলামে টিকে থাকার বা মোকাবিলায় মাথা তোলার কোনো শক্তিই অবশিষ্ট নেই। সর্বত্রই জাহিলিয়াতের ভক্ত-অনুরক্তরা আনন্দে ও উৎফুল্লতা সহকারে নিজেদের সিংহাসনে আসীন হয়েছে এবং নিজেদের সাফল্য দেখে হাত তালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করছে।
এই আমেরিকাতেই একটি জীবন্ত ও সক্রিয় ইসলামী আন্দোলন জেগে উঠেছে। পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করাই এই আন্দোলনের লক্ষ্য। এটা নিশ্চয়ই জাহিলিয়াতের প্রতি মহান আল্লাহর একটা বিদ্রূপ। জাহিলিয়াতের গালে একটা প্রচণ্ড চপেটাঘাত। তার কপালে লেপিত একটা বড় রকমের কলংক। আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যর্থতার এমন একটা অকাট্য প্রমাণ আল্লাহ তা’আলাই এর ব্যবস্থা করেছেন।
অথচ খ্রীষ্টীয়-ইহুদীবাদে মিলিত শক্তি ইসলামী দেশগুলোতে অভ্যন্তরেই ইসলামী জীন বিধান প্রতিষ্ঠার সমস্ত চেষ্টা-প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্যে চেষ্টার কিছুই বাকী রাখেনি।
এক্ষণে তাদের নিজেদের ঘরের অভ্যন্তরেই সহসা এই দুর্ঘটনাটি ঘটে গেছে। এ থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার কোনো পথই তারা খুঁজে পাচ্ছে না। এ আন্দোলন একটুও থেমে নেই, ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে ও ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে আমেরিকার ইসলাম দুশমনশক্তি নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে নেই। সে শক্তি ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নকামী মুসলিমদের ওপর নানাবিধ অত্যাচার-জুলুম-নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে, হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। বহু মানুষকে বিনা অপরাধে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। এ ছাড়া ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা প্রচার করে জনগণের মনে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও ঘৃণারও উদ্রেক চলেছে। মুনলসাদেরকে সে পরিবেশের মধ্যে আকটে দেওয়ারও প্রাণপণ চেষ্টা চলেছে। মুসলমানদেরকে সেই পরিবেশের মধ্যে আটকে দেওয়ারও প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছে, যা তারাই মুসলিম দেশগুলোতে আগে থেকেই সৃষ্টি করে রেখেছে।
ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ যে সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন, এই ঘটনাটি তারই একটি নমুনা।
(আরবী*****************************************************)
ইসলামের দুশমনেরা অনেক ষড়যন্ত্র করেছে, আল্লাহ তাদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আর আল্লাহই হচ্ছেন ষড়যন্ত্র ব্যর্থকারীর সর্বোত্তম ব্যবস্থাকারী। (সূরা আলে-ইমরানঃ ৫৪)
(আরবী**************************************************************)
ওরা কি আল্লার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করার দিক দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে?
(সূরা আরাফঃ ৯৯)
আল্লাহর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করার ব্যবস্থা সম্পর্কে নিরাপত্তা বোধ করে কেবলমাত্র ফাসিক ব্যক্তিরা।
ভবিষ্যতে দুনিয়ায় কি ঘটতে যাচ্ছে উপরি উল্লিখিত ঘটনাটি তার একটা বিশেষ দৃষ্টান্ত।
জাহিলিয়াত তো মনে করে বসেছে যে, তা দুনিয়ার বুকে দ্বীন ও ধর্মের সব ছায়া চিরদিনের জন্যে বিলীন করে দিয়েছে। দ্বীন সম্পর্কিত ধারণাকেও তারা অসম্ভব বানিয়ে দিয়েছে। তাদের যাবতীয় জাহান্নামী উপায় উপকরণ ব্যবহার করে।
কিন্তু না, আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে মানুষ কখনোই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী হতে পারে না। যেসব লোক জাহিলিয়াতের গর্ভে জীবন যাপন করছে এবং জাহিলিয়াতের সমস্ত বিষ দিনরাত আকণ্ঠ পাণ করতে বাধ্য হচ্ছে, তারা যদি হঠাৎ করে ইসলাম গ্রহণ করে বসে, জাহিলিয়াতের সে বিষগুলো উপড়িয়ে ফেলে দেয়, আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে, তাঁর সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে এবং দুনিয়ার মুসলমানরাও তাদের ব্যাপারে বিশেস কৌতুহলী হয়ে ওঠে তাহলে বুঝতে হবে, আল্লাহর সুন্নাত কাজ শুরু করে দিয়েছে। এটা তার একটা বাস্তব দৃষ্টান্ত।
এই ধরনের ঘটনা ও জাহিলিয়াতের অধীন বসবাসকারী মানুষের এমনিভাবে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন তা যে কারণে ও যে পথেই হোক –অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, ভবিষ্যতের বিশ্বমানবতা নিশ্চয়ই আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে।
আর এ কাজ মহান আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে খুব সহজেই তাঁর নিজের দিকে ফিরিয়ে আনতে পারেন। এখনকার দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকেও আমরা এই কথার বাস্তবতা দেখতে পাচ্ছি। মানুষ সত্যিই আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে শুরু করেছে। জাহিলিয়াত যত ষড়যন্ত্রই করুক, আসতে যতই বাধা দিক, এসে যাওয়া লোকদেরকে ফিরে যেতে যতই বাধ্য করুক, মহান আল্লাহর দিকে লোকদের প্রত্যাবর্তনকে রোধ করার সাধ্য কারোরই নেই। তারা এখনও যা করছে, যতই ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছে, আল্লাহর কাছে তার এককানা-কড়িও মূল্য নেই। তিনি নিজেই যদি দুনিয়ায় ইসলামের বিজয় চান ও তার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে এ সব চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র সম্পূর্ণ ব্যর্থ ও নিস্ফল হয়ে যাবে।
কেননা ‘আল্লাহ তাঁর নিজের ব্যাপারে সর্বজয়ী …….যদিও অনকে লোকই তা জানে না’।
মুসলিম দেশগুলোর অধিবাসী তথাকথিত মুসলমানরা আল্লাহর কাছে নিজেদের অকমর্ণতা অপদার্থতার জন্যে আফসোস করেও কুল-কিনারা পাবে না।
কেননা দ্বীনের প্রতি গুরুত্ব না দেওয়ায় বরং তার প্রতি চরম উপেক্ষা প্রদর্শন করায় এবং এক আদর্শ ইসলামী সমাজ গড়ে তোলার জন্যে চেষ্টা না করায়, জাহিলিয়াতের অন্ধ অনুসরণ করতে ব্যস্ত থাকায়, জীবনের জাহিলী ব্যাখ্যা গ্রহণ করায় এবং জাহিলিয়াতের দেওয়া দ্বীনের ভুল ব্যাখ্যা নীরবে মেনে নেওয়ায় মুসলিম উম্মত যে মহা অপরাধ করেছে, তার জন্যে আল্লাহর কঠিন আযাব থেকে তারা কিছুতেই রেহাই পেতে পারে না।
ভবিষ্যতে মুসলমানদের এই গুনাহর মাত্রা আরও অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়ে যাবে, যখন এসব নামকাওয়াস্তের মুসলমানরা তাদের অজ্ঞতা-মুর্খতা, দুর্বলতা ও সাহসিকতা, তাদের নফসের খাহেশ অনুসরণ ও চরম লাঞ্ছনা-গঞ্জনার মধ্যে নিমজ্তি থেকে যাবে, অথচ বিশ্বমানবতা আল্লাহর দ্বীনকে ‘স্বাগতম’ জানাবার জন্যে –তাকে জীবনে-সমাজে-রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করার দিক দিয়ে অনেক দূরে অগ্রসর হয়ে যাবে।
তখন আল্লাহর দ্বীন তো কায়েম হয়ে যাবে; কিন্তু মুসলিম নামধারীরা সেই দ্বীনের প্রতি নিজেদের অনাগ্রহ, অপমান ও চরম উপেক্ষার আচরণ করেই যাবে। কেননা-
(আরবী*****************************************************************************)
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা কোনো জনগোষ্ঠীর অবস্থাকে পরিবর্তিত করে দেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা উঠে নিজেদের অবস্থাকে পরিবর্তিত করে দেবে।
(সূরা রা’আদঃ ১১)
সেই সাথে এই সত্য অনস্বীকার্য যে, যেসব লোক নিজেদের জন্যে নিজেরাই অপমান, লাঞ্ছনা, দুর্বলতা ও কাপুরুষতাকে বিশেষ বিশেষত্ব বানিয়ে নেবে, আল্লাহ কখনোই তাদের হাতে দ্বীন-ইসলাম বিজয় সূচিত করেন না।
প্রয়োজন হলে তিনি তাঁর দ্বীনের মান-মর্যাদা সংরক্ষণ ও বিজয়-সাধনের জন্যে ওদের পরিবর্তে সম্পূর্ণ ভিন্নতর ও নতুনতর জনগোষ্ঠী সংগ্রহ ও তৈরি করে নেন, যারা নিজেরা সাগ্রজে ইসলামের আনুগত্য করবে এবং প্রকৃত ইসলামকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে যাবে।
(আরবী*****************************************************)
আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে সরিয়ে নিয়ে যাবেন হে লোকেরা, আর তোমাদের স্থলে অন্য ্যেলাকদের নিয়ে আসবেন। আর আল্লাহ তো তা করতে সর্বতোভাবে সক্ষম। (সূরা আন-নিসাঃ ১৩৩)
আর এই নবাগত জনগোষ্ঠী যখন ইসলামকে গ্রহণ করে ইসলামের বিজয় পতাকা ঊর্ধ্বে উড্ডীন করে এগিয়ে যাবে, তখণ এই নামধারী মুসলমানরা লজ্জা-শরমে অসম্মানে মস্তক অবনত করে দাঁড়িয়ে থাকবে, তাদের পক্ষে তখন হয়ত কিছুই করা সম্ভব হবে না।
তারা তাদের কাল-নিদ্রায় নিমজ্জিত থাক কিংবা তারা ইসলামকে নিয়ে উঠুক, তাতে কোনো পার্থক্য হবে না।
আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে এই পাগলা যুদ্ধ ও হীন ষড়যন্ত্র থেকে যাক কিংবা পাগলীয় উল্লাসে ও পূর্ণ দাপট সহকারে তা বলতেই থাকুক, তাতেও অবস্থার মধ্যে কোনো তারতম্য ঘটবে না।
মানুষ আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে। ভবিষ্যতের মানুষ নামধারী মুসলমান ….বংশীয় মুসলমান হবে না, তারা হবে প্রকৃতই খাঁটি মুসলিম।
আজ বিশ্বব্যাপী কুফর-এর সর্বগ্রাসী রাজত্ব। আজ বিশ্বমানবতা কঠিনতর আযাব ও শোষণ-পীড়নে নিষ্পেষিত হচ্ছে। তাগুতী অন্ধকার সারা পৃথিবীকে গ্রাসের মধ্যে নিয়ে গেছে তা যতই হোক, ভবিষ্যতের পৃথিবী আল্লাহর দ্বীনের নির্মল আলোতে ততই সমুদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। সে আলোকচ্ছটা জাহিলিয়াতের অন্ধকারে বুক দীর্ণ করেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে।
আল্লাহর দ্বীন আগামী কালের পৃথিবীর নির্মেঘ আকাশে মধ্যাহ্ন কালীন সূর্যের মত দেদীপ্যমান হয়ে উঠবে।
আমাদের এই সংক্ষিপ্ত জীবনে দ্বীনের সূর্যের সেই অভ্যুদয় স্বচক্ষে দেখতে পারব কিংবা আমাদের পরবর্তী বংশধরই হয়ে উঠবে সে দ্বীনের সূর্যসেনা, তা আল্লাহই ভালো জানেন।
কিন্তু বিশ্বমানবতা যে আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে, পুরোপুরি গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠিত করবে আল্লাহর এই দ্বীনকে তাতে আমাদের মনে এক বিন্দু সন্দেহ বা সংশয় নেই।
(আরবী****************************************)
আল্লাহ তাঁর দ্বীন-এর আলোকে সম্পূর্ণ করে দেবেন, কাফের মুশরিকরা তা যতই অপছন্দ করুক না কেন। (সূরা সফঃ ৮)
সমাপ্ত