সকল ক্ষেত্রেই বিপর্যয়
এ জাহিলিয়াতের সব কিছুই বিপর্যস্ত। বিপর্যয়ে পড়েনি এমন কোনো জিনিস আছে কি? আমরা এ গ্রন্থের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মানুষের সকল দিক ও বিভাগ বা ক্ষেত্রেরই পর্যালোচনা করেছি, আতিপাঁতি করে অনুসন্ধান চালিয়েছি। মানুষের মনস্তত্ত্ব, সমাজ সমষ্টি, রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক জীবন, নৈতিকতা ও শিল্পকলা, ধারণা ও বাহ্যিক আচার-আচরণ, বিশ্বাস ও বাস্তব জীবনে কোনো একটি জিনিসও, কোনো একটি দিক বা ক্ষেত্রও বিপর্যয়ের কঠিন আঘাত থেকে রক্ষা পায়নি।
তবে বর্তমান জাহিলিয়াতের একটি মাত্র দিক এমন, যা নিয়ে মানুষ বলিষ্ঠভাবে গৌরব প্রকাশ করছে, মানুষের চোখ ঝলসিয়ে দিচ্ছে।
তা হচ্ছে জ্ঞান ও বিজ্ঞান। এই বিজ্ঞান মানব জীবনে যে সুযোগ সুবিধা, সহজতা ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বিপুলতার সৃষ্টি করেছে, তার জ্ঞান মানুষের সম্মুখে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। সেই সাথে গড়ে তুলেছে বড় বড় সংস্থা-সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা। বিজ্ঞানই মানুষকে এসব করার জন্যে সক্ষম বানিয়ে দিয়েছে।
এই কারণেই মানুষ বর্তমান জাহিলিয়াতের দিকে অত্যন্ত আকৃষ্ট। তার উদঘাটিত উৎসসমূহ থেকে প্রতিনিয়ত সুখের সম্পদ দুই হাতে লুটে নিচ্ছে। এই কঠিন জাহিলিয়াতে নিমজ্জিত থেকেও তারা এই কল্পনায় বিভোর যে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের যতই অগ্রগতি ও উন্নতি-উৎকর্ষ হবে, মানব জীবনও তারই সাথে সাথে উন্নতি অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। তাদের পদক্ষেপ সম্মুখের দিকে হবে সম্পূর্ণ নির্ভুল ও যথার্থ।
কিন্তু এ যে ভীষণ ভুল ধারণা, নিতান্তই খামখেয়ালী। আর তা এই জাহিলিয়াতেই সৃষ্টি। ..ইতিহাসে তার অসংখ্য দৃষ্টান্ত বিধৃত।
প্রতিটি জাহিলিয়াতেরই একটা সভ্যতা সংস্কৃতি রয়েছে। মূলত বিকৃত ও বিপথগামী সেই সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে লোকেরা মহাকল্যাণময়, বরকতে ভরপুর এবং এমন উন্নয়ন মনে করেছে, যার ঊর্ধ্বের কোনো উন্নয়নই কল্পনা করা যায় না।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি মাত্র নিশ্চিত অনিবার্যতাই ফল হয়ে দাঁড়াল। সে সভ্যতা ও সংস্কৃতি অথবা সেই জাহিলিয়াতই নির্মমভাবে বিলীন ও বিলুপ্ত হয়ে গেল। তা-ও এজন্যে যে, মূলত তা ছিল জাহিলিয়াত, বিপথগামিতাই তার আসল প্রকৃতি।
আর জ্ঞান-বিজ্ঞান? …তা নিশ্চয়ই জাহিলিয়াতের ফলশ্রুতি বা অবদান নয়। জ্ঞান বিজ্ঞান তো ক্রমোন্নতিশীল, চির অগ্রসরমান। তা কখনোই কোথাও থেমে থাকে না। ব্যতিক্রমও ঘটে, তবে কচিৎ এবং বিরল। মানবতার অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহতভাবেই চলে এসেছে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত।
জ্ঞান ও বিজ্ঞান একটা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ শক্তি। তা স্বতঃই কল্যাণময় নয়, নয় খারাবিতে ভরা। যে তার ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হয়, তা তারই খিদমতে নিয়োজিত থাকে। তখন তার অগ্রগতি হতেই থাকে। কল্যাণের পথে সে অগ্রগতি হবে, না অকল্যাণ ও অন্যায়ের পথে, তা নির্ভর করে সেই মনিব বা চালকের ওপর, যার কর্তৃত্বাধীন হয়েছে সে জ্ঞান। তাহলে বিজ্ঞান ও জাহিলিয়াত কখনোই এক ও অভিন্ন জিনিস নয়। তা প্রত্যেকটিই স্বতন্ত্র, অন্যনিরপেক্ষ।
বিজ্ঞানের আসল উদ্বোধক হচ্ছে স্বয়ং মানুষের প্রকৃতি। আল্লাহ তা’আলাই মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রেমিক, শক্তি অর্জনের জন্যে প্রবল আগ্রহী। এবং প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের ওপর বেশি বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করার উদগ্র পিপাসাই মানুষকে বিজ্ঞান জগতের অভিযাত্রী বানিয়েছে।
এ কারণেই তা মানব সত্তার ক্ষেত্রে ভাল বা মন্দ হওয়ার দিক থেকে অনেক দূরে অবস্থিত।
বিজ্ঞানের উৎস হচ্ছে বিবেক শক্তি, মন নয়। আর বিবেক মানব জীবনের মহাযাত্রায় সাধারণত কোথাওই থামেনা। মানুষের অগ্রগতির সাথে সাথে থাকে। এ কারণে বিজ্ঞান সব সময়ই অগ্রসর হতে থাকে, কোথাও থামতে রাজি হয় না। ব্যতিক্রম আছে অবশ্য। আর বিজ্ঞানের এই বিরামহীন অগ্রযাত্রা যেমন হেদায়েতের পথে, তেমনি গুমরাহীর পথেও সমানভাবে চলে।
ভালো বা মন্দ –হেদায়েত বা গুমরাহী নিহিত রয়েছে বিজ্ঞানকে কাজে লাগানোর পন্থা ও পদ্ধতিতে। যে ক্ষেত্রে তাকে ব্যবহার করা হয়, সেই ক্ষেত্রে ভাল বা মন্দ –হেদায়েত বা গুমরাহী হওয়ার ওপর নির্ভর করে।
তাহলে নিশ্চিতভাবে মনে করতে হবে, বিজ্ঞান ও জাহিলিয়াত এ দুয়ের মাঝে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। দুটি দুই স্বতন্ত্র দিগন্তে অবস্থিত।
বিজ্ঞান এ জাহিলিয়াতের সৃষ্ট বা উদ্ভাবিত নয়। এমন নয় যে, জাহিলিয়াত না হলে বিজ্ঞান হতো না, হতো না বিজ্ঞানের এতটা উন্নত, উৎকর্ষ। অতএব বিজ্ঞান নিতে হলে জাহিলিয়াতকেও নিতে হবে, নতুবা বিজ্ঞানকে পাওয়া যাবে না, এই কথা সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক। জাহিলিয়াত ব্যতিরেকে বিজ্ঞানের গতি থেকেও যাবে না। তবে জাহিলিয়াত যদি অপসৃত হয় এবং তদস্থলে ইসলামী পদ্ধতি বাস্তবায়িত হয়, তা হলেই বিজ্ঞানের প্রকৃত কল্যাণ পাওয়া সম্ভব হবে, বাঁচা সম্ভব হবে তার সব অকল্যাণ থেকে; এ কথায় কোনোই সন্দেহ নেই।
বিশ্বমানবতা আল্লাহর পদ্ধতির বাস্তব অভিজ্ঞতা ইতিপূর্বে লাভ করেছে। আল্লাহর পথে চলার কারণে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিস্ময়কর উন্নতি ও অগ্রগতি সাধিত হওয়াও সম্ভবপর হয়েছে। এমন এক বিরাট বৈজ্ঞানিক আন্দোলন সূচিত হয়েছিল, যার ফলে ইউরোপকে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান পদ্ধীতর সাথে পরিচিত করা সম্ভবপর হয়েছিল, ইউরোপীয় লোকেরা মাগরিব ও আন্দালুসিয়ার মুসলমানদের কাছে থেকেই তা লাভ করেছিল। তার যে শুভ ফল পাওয়া গেছে এবং নিত্য বর্ধমান শুভ ফল পাওয়া যাচ্ছে, তার দরুনই ইউরোপ আজ এতটা অগ্রসর হতে পেরেছে এই ক্ষেত্রে।
আগেই বলেছি, বিজ্ঞান আধুনিক পাশ্চাত্য জাহিলিয়াত সৃষ্ট বা উদ্ভাবিত নয়। বরং সত্যি কথা হচ্ছে, আধুনিক জাহিলিয়াতই বরং বিজ্ঞানকে অন্যায় পাপ উৎস উদ্ভাবন ও ধ্বংসের পথে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে।
আসলে বিজ্ঞঅন মানবীয় চেষ্টা-সাধনা ও মেধারই ফলশ্রুতি। ইতিহাসের গভীরতর তলদেশে তার শিকড়সমূহ বিস্তীর্ণ ও সম্পৃক্ত। এক জনগোষ্ঠী অপর জনগোষ্ঠীর কাছে জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ভাণ্ডার হস্তান্তর করে আসছে যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী কাল ধরে। শেষ পর্যন্ত তা এসে ইউরোপীয়দের হাতে পড়েছে। ইউরোপীয়রা তার সাহায্যে দুনিয়া জয়ের অভিযানে সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে। কিন্তু তারা পূর্বের মতই বিপথগামী ছিল বলে বিজ্ঞানকেও ভুল ও মারাত্মক পথে ব্যবহার করেছে। ফলে তারা মানুষের নৈতিকতা বিপর্যস্ত ও গোটা বিশ্বকে ধ্বংস করেছে এই বিজ্ঞানেরই সাহায্যে।
এক্ষণে আমরা যদি বিজ্ঞানকে আধুনিক জাহিলিয়াতের কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হই, তা হলে তখন এক অন্ধ জাহিলিয়াতই দাঁড়িয়ে থাকবে, যা হবে অত্যন্ত ভয়াবহ ও অন্ধকারাচ্ছন্ন।
সন্দেহ নেই, এই জাহিলিয়াতের যুগে ভালো বা শুভ ও কল্যাণ কিছু না কিছু এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
মানবতা সম্পর্কে কিছু চিন্তা গবেষণাও রয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের। রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিকতা, নৈতিক চরিত্র ও শিল্প পর্যায়ে কিছু না কিছু গবেষণা অবশ্যই হয়েছে। কিছু আংশিক ন্যায়পরতা, আংশিক মর্যাদা-বৈশিষ্ট্য, কিছু কিছু আংশিক কল্যাণ উপার্জনও মানুষ করতে সক্ষম হয়েছে।
বাহ্যত তা বিরাট –কেননা নব্যযুগে প্রতিটি জিনিসই তার বিরাটত্ব দ্বারা পরিমাপ করা হয়।
কিন্তু জাহিলিয়াতের এই সব মূলধন ও কল্যাণের মানদণ্ড এই নয় যে, জাহিলিয়াত যেভাবে এসব কল্যাণকে বড় আকার দানকারী দর্পনের সাহায্যে বড় করে দেখিয়েছে, তা আসলেও বুঝি খুব বড় কিছু। দর্পণে প্রতিফলন দেখেই আপনি সন্তুষ্ট ও উল্লসিত হয়ে উঠলেন। সত্যিখার নির্ভুল মানদন্ড হচ্ছে এইসব কল্যাণের বিপরীতে খারাপ কতটা জুলুম-পীড়ন ও সীমালংঘনতা কতটা। কেননা একটুখানি সামান্য কল্যাণের বিনিময়ে এক বিরাট ও ভয়াবহ পাপ ও অন্যায় অশুভ শক্তি গোটা মানবতাকেই গিলে ফেলে দেবে –সর্বত্র তাই তো লক্ষ্য করা যাচ্ছে –তা তো কোনো ক্রমেই সমর্থনীয় হতে পারে না।
বিচ্ছিন্ন ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একটুখানি কল্যাণ যত বড়ই হোক, মানবতা বিধ্বংসী এই অন্যায় ও অর্শুভকে তার বিনিময়ে গ্রাহ্য করা যায় না।
এ পর্যায়ে আমাদের স্মরণ করতে হবেঃ
পুঁজিবাদী স্বৈরতন্ত্র ও প্রোলেটারী স্বৈরতন্ত্র এবং তার অধীন মানবতার যে অপমান ও লাঞ্ছনা তা আমরা কি করে ভুলে যেতে পারি?
রাজতান্ত্রিক বা ব্যক্তি-মালিকানা ব্যবস্থাধীন স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় প্রজা সাধারণকে যেভাবে দাসানুদাস বানানো হয়, আবার ব্যক্তি-মালিকানা হরণ করে জনগণকে যেভাবে ক্রীতদাসে পরিণত করা হয়, তার কথা কি ভুলে যাওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব?
ব্যক্তিতন্ত্র যে সামাজিকতাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে, আর সর্বাত্মক সামাজিকতাবাদ যেভাবে ব্যক্তির অস্তিত্ব ও স্বাতন্ত্রকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় –আর এই উভয় ক্ষেত্রে যে লজ্জাস্করভাবে নৈতিকতাকে ক্রমাগতভাবে ধ্বংস করা হয়, কোনো সচেতন মানুষই কি তা ভুলে যেতে পারে?
নারী ও পুরুষ এই দুই লিঙ্গের পারস্পরিক সম্পর্কে যে মারাত্মক বিপর্যয় এনে দিয়েছে, আর তদ্দরুণ মানুষের মনে ও সমাজে চূড়ান্ত মাত্রার অস্থিরতা, ভীতি বিহবলতা এবং পুরুষ নারী শিশুর জীবনে যে অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে, তা কি কোনো প্রকারেই উপক্ষণীয়?
শিল্পের ভুল ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ব্যাখ্যা তো মানুষের মনে প্রত্যাঘাত করে ও তাকে ভেঙ্গে গুড়া গুড়া করে দেয়।
কোনো জিনিসই তো বিপর্যয়ের সর্বগ্রাসী মহাপ্লাবনের হাত থেকে রেহাই পায়নি!
এই মারাত্মক অবস্থার বিপরীতে এদিকে ওদিকে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকা কল্যাণ আকারে তাকে যত বড় করেই দেখানো হোক খুবই সামান্য ও নগণ্য প্রমাণিত হবে।
ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত কিছু ছিটেফোটা কল্যাণের আসল তত্ত্ব হল, তাগুতী শক্তি মানবতাকে ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে খুবই হালকা ও নগণ্য ধরনের ‘ভালো’ করে দেখায়, যেন তার নিরংকুশ সার্বভৌমত্ব অপ্রতিরোধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আর জনগণ কোনোরূপ উচ্চ-বাচ্য না করে তাগুতী শক্তির গোলামীর ফাঁদ নিজেদের গলায় পরতে প্রস্তুত হয়। অতঃপর বেঁচে থাকবে শুধু সেই তাগুতী শক্তিই। সকল ফায়দা, মধু ও কর্তৃত্ব সে একাই ভোগ করবে নির্বিঘ্নে, নির্ভয়ে, অবাধে।
এই সব সত্ত্বেও পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত নবতর জাহিলিয়াত ভয়াবহ ভবিষ্যতের সম্মুখীন হয়ে আছে। মানুষ যতই স্বতঃস্ফুর্তভাবে তাগুতী শক্তির দাসত্ব গ্রহণ করুক কিংবা গোলামী রশিটা খুলে দূরে নিক্ষেপ করার জন্যে চেষ্টা ও সংগ্রাম করুক, জাহিলিয়াতের ভবিষ্যৎ রক্ষা করা কোনোক্রমেই সম্ভব হবে না।
আল্লাহর বানানো ‘তাকদীর’ এবং তজ্জনিত ‘বাধ্যবাধকতা’ ও মানব জীবনে নিজস্ব ভূমিকা পালন করে থাকে। আল্লাহর পূর্ব নির্ধারিত তাকদীর এবং আল্লাহর চাপিয়ে দেওয়া বাধ্যবাধকতার অনিবার্য দাবি হচ্ছে, এ জাহিলিয়াত চিরস্থায়ী নয়, চিরদিন তা থাকবে না, থাকতে পারবে না। কোনো না কোনো একদিন তাকে অবশ্যই বিলীন হয়ে যেতে হবে। আর বিলীন হবে এই কারণে যে, তার মধ্যে বেশির ভাগ রয়েছে পাপ অন্যায় অশুভ ও অকল্যাণ। এই কথাই আল্লাহ বলেছেন এ আয়াতটিতেঃ
(আরবী********************************************************)
পূর্বে অতীত হয়ে যাওয়া লোকদের ক্ষেত্রে এ হচ্ছে আল্লাহর নিয়ম। আর আল্লাহর নিয়মে তুমি কখোনই ব্যতিক্রম বা পরিবর্তন পাবে না। (সূরা আহযাবঃ ৬২)
কিন্তু আল্লাহর যে সুন্নত এই জাহিলিয়াতের চূড়ান্ত অবসানকে নিশ্চিত ও অনিবার্য করেছে, তা চায় না যে, এ জাহিলিয়াতের অবসানের পর স্বতঃই কল্যাণেল শাসন কায়েম হয়ে যাবে। এ তো মানুষের ইচ্ছাধীন। তাগুতের অবসানের পর সে ইচ্ছা করলে আল্লাহর হেদায়েতকে গ্রহণ করতে পারে, ইচ্ছা করলে অপর একটি তাগুতকে নিজের ওপর তুলে নেবে, সুযোগ করে দেবে প্রতিষ্ঠিত হতে। পুঁজিবাদের তাগুত যেমন করে ধ্বংস হয়ে গেল, আর অমনি সমাজতান্ত্রিক তাগুত লোকদেরকে সহসাই গ্রাস করে ফেলল। এ পর্যায়ে আল্লাহর নিয়ম স্থায়ীভাবে ঘোষিত হয়েছেঃ
(আরবী***********************************************************************)
নিশ্চয়ই আল্লাহ নিজে থেকে কোনো জনগোষ্ঠীর অবস্থারই পরিবর্তন করে দেন না, যতক্ষণ না সেই জনগোষ্ঠী নিজেরাই তাদের অবস্থাকে পরিবর্তন করবে। (সূরা-রা’আদঃ ১১)
এ কারণে একটি জাহিলিয়াতের অবসানের পূর্বেই গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করে নেওয়া জনগণের কর্তব্য যে, অতঃপর তারা কোন পথে অগ্রসর হবে। বর্তমানের তাগুতের অবসানের পর নিজেদেরকে নতুন কোনো তাগুতের অধীন বানিয়ে দেবে কিংবা তাগুতের কর্তৃত্ব থেকে প্রকৃত মুক্তির পথ তারা খুঁজে নেবে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কি এই অবস্থার প্রতিকার, রোগের চিকিৎসা, মুক্তির সেই পথ?