ডঃ তাহা হোসাইনঃ মিশরের বুদ্ধিজীবিদের মূর্ত প্রতীক
প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে ড৬ তাহা হোসাইন মিশরের বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায়ের মূর্ত প্রতীক ছিলেন তাঁর গুণগ্রাহীরা তাঁকে শেখ মোহাম্মদ আবদুহর শিষ্য বলতেন। তবে ডঃ তাহা হোসাইন কখনো তাঁর সাহচর্যে ছিলেন কিনা এটা সন্দেহের বিষয়। অবশ্য তাঁর আধুনিক চিন্তা এবং কাজকমৃ তাঁকে প্রভাবিত করেছে এতে কোন সন্দেহ নেই।
নীল নদের উপরিভাগের একটি ক্ষুদ্র গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শিশু অবস্থায় তিনি চক্ষু রোগে আক্রান্ত হন। অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও তাহা হোসাইন মাত্র ১৩ বছর বয়সে সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ রাখার কৃতিত্ব দেখান। এই সময় তিনি হাফেজ হিসাবে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি লাভ করেন। কায়রোয় অধ্যয়নকালে তিনি ইউরোপীয় ছাত্রদের সাহচর্য লাভের চেষ্টা করেন। তাদের সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে হতাশায় তিনি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন, তাঁর এই প্রাথমিক জীবনের বিবরণ আধুনিক আরবী ভাষায় লিখিত ‘দিনের স্রোত’ নামক আত্মজীবনীতে রয়েছে। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর তাঁকে পি এইচ ডি ডিগ্রী দেয়া হয় এবং সরকারী বৃত্তি দিয়ে প্যারিসে অধ্যয়নের জন্যে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি আরেকটি পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করেন এবং তাঁর স্ত্রী সুজানে ব্রেসু-র সাক্ষাৎ পান। ১৯১৮ সালে তিনি এই মহিলাকে বিয়ে করেন। মিশরে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী সাহিত্যের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং পরে এর ডীন নিযুক্ত হন। এই সময় তিনি তাঁর বিতর্কিত গ্রন্হ ‘ইসলামী গোঁড়ামীর’ তীব্র সমালোচনা সম্বলিত বইটি রচনা শুরু করেন।
১৯২৬ সালে প্রতারণামূলক শিরোনামযুক্ত ‘ইসলাম পূর্ব কবিতা সম্পর্কিত বইটি প্রকাশিত হলে বোমা বিস্ফোরিত হয়। এই বই এর লক্ষ্য ছিল কোরআন এবং হাদীসের যথার্থতা সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করা। খোদা মানুষের মন সৃষ্টি করেছেন যা সন্দেহ করে তৃপ্তি এবং উদ্বেগ ও বিমূঢ়তার মধ্যে আনন্দ পায়। এই পদ্ধতির প্রয়োজনীয় ফলাফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার পরিণাম বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব ছাড়া আর কিছুই নয়।
এই গ্রন্হে ডঃ তাহা হোসাইন ইসলামের ইতিহাসের প্রথমদিকের চিন্তানায়ক, বিচারক এবং ধর্মতত্ত্ববিদদের সম্পর্কে পরিহাস করার কোন সুযোগই নষ্ট করেননি। তাঁর মতে তাঁরা স্পষ্ট চালকির দ্বারা কোরআন সৃষ্টি এবং হাদীস তৈরী করেছেন। এতে সন্তুষ্ট না হয়ে তিনি আরও লিখেন মূসা (আ) নামে কেউ ছিলেন না এবং ইব্রাহিম (আ) ও ইসমাঈল (আ) সম্পর্কিত কোরআনের কাহিনী রূপকথার রাজ্য থেকে নেয়া। তাওরাতে ইব্রাহিম এবং ইসমাঈল সম্পর্কে বলা হতে পারে এবং কোরআন ও তাদের কথা বলতে পারে কিন্তু কোরআন এবং তাওরাতে তাদের কথা বলাই তাদের অস্তিত্বের জন্যে যথেষ্ট নয়। কোরআন ইব্রাহিমের পুত্র ইসমাঈলের মক্কায় অভ্যুদয়ের কথা এবং সেখানে আরব জাতির জন্মের কতা বলা হয়েছে। আমরা এই গল্পের মধ্যে আরব এবং ইহুদী জাতি এবং ইসলাম ও ইহুদী ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্যে এক ধরনের রূপকথা দেখতে বাধ্য।[Egypt in search of political Community p-155.]
তাঁর অপর গ্রন্হ The Future of Culture in Egypt সমসাময়িকদের মনে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত এই গ্রন্হের লক্ষ্য হচ্ছে মিশরকে সাংস্কৃতিক দিকে থেকে ইউরোপের অংশ হিসেবে প্রতীয়মান করা এবং সেভাবে জনশিক্ষার কর্মসূচী প্রণয়ন। ডঃ তাহা হোসাইন বলেন- মিশর কি পূর্বের না পশ্চিমের? আররা বিষয়টির ব্যাখ্যা এভাবে করতে পারি। একটি মিশরীয়মন কি চীনা, বা হিন্দু বা ইংরেজ অথবা ফরাসীকে সহজে বুঝতে পারবে? আমাদের সাংস্কৃতিক ভিত্তি সম্পর্কে চিন্তা করার আগে আমাদেরকে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। (পৃঃ৩)
এরপর তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেনঃ ইতিহাসের শুরু থেকে দু’টি পৃথক প্রতিদ্বন্দ্বী সভ্যতা বিরাজমান ছিল। একটি ইউরোপের অপরটি দূর প্রাচে। ইতিহাসের কি সরল ব্যাখ্যা! যদি স্মরণাতীত সময় থেকে ইউরোপেই একক সভ্যতা না থেকে থাকে দূর প্রাচ্যের ব্যাপারে এটা কতদূর প্রযোজ্য। দূর প্রাচ্য সাংস্কৃতিক দিক থেকে কখনো একরূপ ছিল না। হিন্দু ভারত এবং কনফুশিয়াসের চীনের পার্থক্য মধ্যযুগীয় ইউরোপের সঙ্গে পার্থক্যের মতই সুস্পষ্ট।
গ্রীসের সঙ্গে প্রাচীন মিশরের সম্পর্ক এবং দূর প্রাচ্যের সঙ্গে যোগাযোগের অভাবের কারণে ডঃ তাহা হোসাইন যুক্তি দেন যে, মিশর বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সব সময় ইউরোপের অবিচ্ছেদ্য অংগ ছিল। বিজ্ঞ ডক্টর ভুলে গেছেন যে, কেবলমাত্র মহামতি আলেকজাণ্ডারের দ্বারা হেলেনীয় যুগেই মিশর সাংস্কৃতিক দিক থেকে ইউরোপের সঙ্গে এক ছিল। তবে pericles এবং Byzantium এর এথেন্স এর চাইতে ফেরাউনী এবং ইসলামী মিশরের ঐতিহাসিক পারম্পর্য কম ছিল।
ডঃ তাহা হোসাইন জোর দিয়ে বলেন ইসলাম এবং আরবী ভাষা গ্রহণের ফলে মিশর যতটুকু প্রাচ্য রূপ নিয়েছে খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে ইউরোপ তার চাইতে বেশী পরিবর্তিত হয়েছে। মিশরের সবচাইত বিজ্ঞ ব্যক্তি ইসলাম এবং খ্রীষ্টান ধর্মের মধ্যে কোন ঐতিহাসিক পার্থক্য স্বীকার করেন না। তাঁর দেশের পশ্চিমীকরণে ইসলামের কোন বাধা নেই- এ কথা প্রমাণের জন্যে তিন ইতিহাসের ঘটনাবলীর নীতি জ্ঞান শূণ্য বিকৃতি ঘটিয়েছেন।
“আমরা মিশরীয়রা পশ্চিম থেকে আমাদের গ্রহণের পরিমাণের ভিত্তিতে আমাদের জাতীয় অগ্রগতি পরিমাপ করে থাকি। আমরা ইউরোপের কাছ থেকে শিখেছি কিভাবে সভ্য হতে হয়। ইউরোপীয়রা আমাদের টেবিলে বসে কাঁটা চামচে খেতে শিখিয়েছে। মেঝে শোওয়ার পরিবর্তে বিছানায় শু’তে এবং পশ্চিমা পোষাক পরিধান করতে শিখিয়েছে। আমরা আমাদের সরকার পরিচালনার জন্যে খেলাফত থেকে কোন পথনির্দেশ চাই না। এর পরিবর্তে আমরা জাতীয় ধর্মনিরপেক্ষ আদালত প্রতিষ্ঠা করেছি, ইসলামী আইনের বিকল্পে পশ্চিমা ভাবধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইন প্রণয়ন করেছি। আমাদের সময়ের অনস্বীকার্য সত্য হচ্ছে আমরা দিন দিন ইউরোপের নিকটবর্তী হচ্ছি এবং সবদিক থেকে তার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হচ্ছি। (পৃঃ ১১-১২)
ডঃ তাহা হোসাইনের মতে ইউরোপীয়দের সঙ্গে মিশরীয়দের মৌলিক পার্থক্য থাকলে পশ্চিকীকরণ কষ্টকর হবে। একইভাবে এই ব্যাপারে জাপানের তুলনায় পিছিয়ে থাকার জন্যে তিনি তাঁর জাতিকে তিরস্কার করেন- আমরা কি চীনের ধর্ম ও দর্শন গ্রহণ করবো যখন তারা দ্রুত পশ্চিমীরূপ নিচ্ছে? যেসব মিশরবাসী পশ্চিমা সভ্যতাকে উপহাস করে তারা কখনো চীনা বা হিন্দুদের মত বাস করতে চাইবে না।
ডঃ তাহা হোসাইন কেন চেয়েছেন তাঁর জাতি দু’টির যে কোন একটি গ্রহণ করুক। কেন মিশরীয়দেরকে হয় ইংরেজ নতুবা চীনা হতে হবে? কেন তারা মুসলমান হিসেবে গর্ববোধ করবে না্ ডঃ তাহা হোসাইন উদ্দেশ্য- প্রণোদিতভাবে এই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন। সম্ভবতঃ স্বতন্ত্র্য ও পূর্ণাঙ্গ সভ্যতার ধারক হিসেবে ইসলামকে তাঁর পাঠকদের চোখে খাট করার জন্যই তিনি এই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন।
‘মিশর ইউরোপের অংশ’ খেদিব ইসমাঈলের এই বিবৃতিতে বাড়াবাড়ি বা অতিরঞ্জন নেই। খোদা যদি আমাদেরকে তুর্কী বিজয় থেকে রক্ষা করে থাকেন আমরা ইউরোপের সঙ্গে এবং তার রেনেসাঁর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য থাকব। এটা মিশরীয়দের জন্যে নিম্চয়ই একটা স্বতন্ত্র সভ্যতার সৃষ্টি করবে, যার মধ্যে আমরা এখন বাস করছি (পৃঃ৯)। অবশ্য খোদা আমাদের দুর্ভাগ্য এবং দুযোর্গ পুষিয়ে নেয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। বর্তান অগ্রগতি সাধনের জন্যে বিম্বকে শত শত বছর সংগ্রাম চালাতে হয়েছে। এক জেনারেশনের মধ্যেই এখন আমরা সেই অগ্রগতি সাধন করতে পারব। সুযোগ গ্রহণ না করলে আমাদের জন্যে তা দুঃখজনক হবে। সত্যিকার ঘটনা হচ্ছে মধ্যযুগে ইসলামী বিশ্বে যা বিরাজিত ছিল ইউরোপীয়রা তা গ্রহণ করেছে। আমরা এখন যা করছি তারাও তাই করছে। এটা মাত্র সময়ের হেরফের। (পৃঃ১৩)
ডঃ তাহা হোসাইনের মত অধিকাংশ হীনমন্য সাহিত্যিকদের মত হচ্ছে- ইউরোপীয়রা আরবদের কাছ থেকে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার প্রেরা সঞ্চার করেছে, সেই কারণে পশ্চিমীকারণ প্রচেষ্টায় মুসলমানরা শুধু মাত্র তাদের ঐতিহ্যিক অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবী করছে। এই ধরনের ভ্রান্তিপূর্ণ যুক্তি দিয়ে আধুনিক শিক্ষিত মুসলমানরা তাদের ঈমান পরিত্যাগ করাকেই আইনসঙ্গত করতে চাচ্ছে। ডঃ তাহা হোসাইন এই ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করছেন যে, মুসলিম বিশ্ব থেকে গ্রীক শিক্ষা ইউরোপে আসার অর্থ কখনো তাকে ইসলামী সভ্যতার অংশ হওয়া নয়। যদিও মধ্যযুগের ইউরোপ মুসলিম বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের সাফল্যকে স্বাগত জানিয়েছে, সে কখনো তার সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ত্যাগ করেনি, যা ডাঃ তাহা হোসাইন তাঁর দেশের জন্যে চাচ্ছেন।
“কোন শক্তিই মিশরীয়দেরকে ইউরোপীয় জীবন পদ্ধতি থেকে দূরে রাখতে পারবে না। সভ্যতার ক্ষেত্রে ইউরোপীয়দের সমকক্ষ হওয়ার জন্যে মিশরীয়দেরকে পুরোপুরি পশ্চিমা সভ্যতার অনুকরণ করতে হবে। যে এর বিপরীত পরামর্শ দেবে হয় সে প্রতারক নতুবা নিজে প্রতারিত। (পৃঃ ১৫)
১৯৫২ সারে বাদশাহ ফারুককে ক্ষমতাচ্যুত করার কিছু পূর্ব পর্যন্ত ডঃ তাহা হোসাইন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। এ সময় তিনি তাঁর কর্মসূচী বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন। তিনি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়কে যুগোপযোগী করার জন্যে বিস্তারিত পরামর্শ দেন। প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুল নাসের তাঁর এই পরামর্শ গ্রহণ করে ১৯৬১ সালের ১৮ই জুলাই এক আদেশ জারী করেন। এই আদেশে আল আজহার তার সরাসরি নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ডঃ তাহা হোসাইনের কর্মসূচী মোতাবেক প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুল নাসের আল আজহারে সম্পূর্ন ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা পদ্ধতি চালূ করেন। নতুন পরিকল্পনায় ইসলামের স্টাডিজ বিভাগ অপাংতেয় এবং নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরিণত হয়। ডঃ তাহা হোসাইনের পরামর্শে প্রেসিডেন্ট মাত্র একটি আঘাতে বিশ্বের ইসলামী শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ধ্বংস করে দেন।
ডঃ তাহা হোসাইনের পক্ষ সমর্থনকারী ক্ষমা প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন তিনি যৌবনের কার্যাবলীর জন্যে দুঃখিত, তার সাম্প্রতিক লেখায় ইসলামের প্রতি বেশ আনুগত্যের স্বাক্ষর রয়েছে। সুতরাং তার পূর্বেকার কাজের জন্যে তাকে ক্ষমা করা উচিৎ। আমি তা বিশ্বাস করি না। তার লেখার কুফল রচনার সময়ের চাইতে এখন বেশী প্রকট অথচ তিনি প্রকাশ্রে আগের লেখার ভুল স্বীকার করেননি এবং এ জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করেননি।
রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইসলাম বনাম আরববাদ
অনেক সরলপ্রাণ কিন্তু ভুল পথে পরিচালিত মুসলমান বিশ্বাস করেন আল্লাহ আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছেন, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (রা) এবং তার প্রাথমিক অনুসারীরা ছিলেন আরব অতএব সমগ্র আরব ঐতিহ্য ইসলামী সাংস্কৃতিক ঐহিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। শত শত বছর ধরে মুসলমানরা এই বংশসূত্রে গর্ববোধ করে আসছেন অথচ তারা ভুলে যান যে, ইসলামের সবচাইতে বড় শক্রু আবু জেহেল, আবু লাহাব মহানবীর খুবই নিকটতম আত্মীয় ছিলেন। সরলপ্রাণ মুসলমানরা আরব জাতীয়তাবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে চিন্তা করে থাকেন- আরবই হচ্ছে দারুল ইসলামের প্রাণ কেন্দ্র অতএব পর্যায়ক্রমিক মুসলিম ঐক্যের জন্যে আরবের সংহতির সংগ্রাম অপরিহার্য। তাদের মতে আরব জাতীয়তাবাদ বিদেশী প্রভুত্বের বিরুদ্ধে আরবদের বিদ্রোহ প্রকাশ করে। এসব সরলপ্রাণ লোকেরা যদি আরবদের সূত্রপাত, ইতিহাস এবং আদর্শ সম্পর্কে অবহিত হতেন তাহলে কখনো তাকে ইসলামের সঙ্গে গোঁজামিল দেয়ার কথা ভাবতেন না।
বর্ণ, ভাষা, গোত্র এবং স্বাদেশিকতার শ্লোগান আরব জাতীয়তাবাদ হাজার হাজার বচর আগে প্রাক-ইসলামী আরবে জন্ম নেয়। যখন কোরআন এবং মহনবী (স)-এর শিক্ষায় খুব জোর দেয়া হলো যে, ঈমানদাররা বর্ণ, ভাষা, জন্মসূত্র নির্বিশেষে একে অপরের ভাই তখন তারা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলেন। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে প্রতিটি মানুষকে তার কাজের হিসাব আল্লাহর কাছে দিতে হবে অপরদিকে আরবাদের শিক্ষা ছিল তার জবাব দিতে হবে গোত্র প্রধানের কাছে। তার নিজের গোত্রের বাইরে যে কোন নিষ্টুর আচরণের অনুমতি ছিল। প্রাচীন আরবদের সত্যিকার কোন ধর্ম ছিল না। আধুনিক ইউরোপীয় ও মার্কিনীদের মত তারা পুরোপুরি বস্তুবাদী ছিল। হযরত (স)-এর জন্মের প্রায় একশত বছর আগের একটি কবিতায় পার্থিব জীবনের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তার মূল বক্তব্য হচ্ছে- সুস্বাদু খাদ্য, সুপেয় পানীয়, সুন্দরী নারী, আরাম-আয়েশের জীবনই মানুষের একমাত্র কাম্য। জীবন সংক্ষিপ্ত বা দীর্ঘ হোক মৃত্যু অনিবার্য। অতএব যেটকু সময় হাতে পাওয়া যায় তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা দরকার। আরবী সাহিত্যের সবচাইতে উচ্চ প্রশংসিত কবিতা হচ্ছে ইমরুল কায়েসের ‘the golden ode’ নবীর জন্মের প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে এটি রচিত হয়। ‘মোয়াল্লাকাত’ কবিতায় কবি তার চাচাতো বোনের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্কের যে বিবরণ দিয়েছেন তার মধ্যে দৈহিক সংসর্গ, যৌন সম্ভোগ, রূপের বর্ণনা, সঙ্গমের আগে ও পরের অনুভূতি তার প্রতি চাচাতো বোরনের আচরণ- প্রভৃতি ইনিয়ে বিনিয়ে তুলে ধরা হয়েছে।
এইভাবে প্রাক ইসলামী আরবী সভ্যতা এবং সংস্কৃতি ভোগবাদী ও বস্তুবাদী দর্শনে আকীর্ণ ছিল। আব্বাসীয় এবং উমাইয়া শাসনামলেও এসব অনিষ্টকর জিনিসের প্রাধান্য বিরাজিত ছিল। অপরদিকে প্রাক ইসলামী আরবের সারল্য, মনুষ্যত্ব, সাহস এবং কঠোর পরিশ্রমের দিকটি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যাত হয়। ৮১০ খৃঃ আবু নুয়াসের কবিতায় তার জন্মস্থান বাগদাদের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তাতে ভোগ বিলাস এবং আরাম-আয়েশের কথা ছাড়া আর কিছু নেই।
ইসলামের আবির্ভাবের শত বছর পরও জাহেলিয়াত বা অন্ধকার আরব যুগের আচার প্রথার প্রাধান্য বিরাজিত ছিল। প্রাক ইসলামী আরব যুগের ক্লাসিক্যাল কবিতার যুগের পর আরেকজন কবি খুবই সুখ্যাতি অর্জন করেন। তিনি হচ্ছেন আবু তৈয়ব আল মুতান্নবী। তার নামে শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ভূয়া নবী। তাঁর কবিতায় তিনি প্রাক ইসলামী আরব পূর্বসূরীদের আদর্শকে সমুন্নত করেন। আরবী সাহিত্যের অপর খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব সিরিয়ার অন্ধ কবি আবুল আলা মারী (৯৭৩-১০৫৭)। তিনি তার ‘লুজুমিয়াতৱ কবিতায় নাস্তিকতার প্রচার করেন।
এইসব কবিরা তাদের কাব্যের মধ্য দিয়ে যে ভাব প্রকাশ করেছেন তা আরবী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসলামের বিশ্বাস এবং ইসলামী ধ্যান-ধারণা সঙ্গে এ সবের কোন সঙ্গতি নেই। পাঠক আরব সংস্কৃতির আবরণে আরব জাতীয়তার কিছুটা পরিচয় পেলেন। আমরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করব। অনেকে জেনে আশ্চর্যান্বিত হবেন যে, মার্কিন প্রটেষ্টান্ট মিশনারীদের সরাসরি প্রভাব ও পৃষ্ঠপোষকতায় লেবাননে প্রথম আরব জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন দু’জন খ্রীষ্টান পণ্ডিত Nasif yazeji (1800-1971) এবং utrus Bhustani (১৮১৯-১৮৮৩)। তাদের নীতি বাক্য ছিল দেশপ্রেম ঈমানের একটি অঙ্গ। পশ্চিমা পাণ্ডিত্যের চশমায় আরব ইতিহাস অধ্যয়ন করে তারা সিদ্ধান্ত পৌঁচেন যে, আরবী সভ্যতার উপকরণ ইসলামের অধীন নয়। তারা আরব প্রেমের মাহাত্ম্য প্রচারমূলক কবিতার দ্বারা তুর্কী শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের উত্তেজিত করেন।
বৈরুতের মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরব জাতীয়তাবাদ আন্দোলন চূড়ান্ত শক্তি লাভ করে। ১৮৬৬ সালে মিশনারী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রথম দিকে সিরীয় প্রটেষ্টান্ট কলেজ নামে পরিচিত এই কলেজের প্রভাব শীগগীরই সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে অনুভূত হয়। বৈরুত বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের শক্র সৃষ্টির ব্যাপারে বিশেষ স্বাতন্ত্রের দাবী করতে পারে। খুবই চাতুর্যের সঙ্গে মুসলমান ছাত্রদের বিভিন্ন পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্য বহির্ভূত কাজের মাধ্যমে ইসলামের আচার অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানসিকভাবে গড়ে তোলা হয়। ইসলাম বিরোধী প্রচারণা এতই শক্তিশালী ছিল যে, অধিকাংশ ছাত্রই ইসলামের আচার-অনুষ্ঠান পরিত্যাগ করে। সব চাইতে খারাপ ব্যাপার হচ্ছে এসব ব্যক্তিরাই বংশ পরস্পরায় আরব বিশ্বের নেতৃত্ব লাভ করে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে মিশর-এর দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়। কারণ তুর্কী অত্যাচারে বহু খ্রীষ্টান এবং মুসলমান গ্রাজুয়েট সেখানে আশ্রয় নেয়। খেদিব ইসমাঈল তাদের স্বাগত জানান তাঁর নীতিবাক্য “মিশর ইউরোপের একটি অংশ”।
মিশরে প্রথম যিনি জাতীয়তাবাদের সংগ্রাম করেন তিনি হচ্ছেন লুৎফী আসসাঈদ। শিষ্যদের কাছে তিনি ছিলেন জেনারেশনের শিক্ষক। তিনি ফেরাউনের কাছ থেকে সাংস্কৃতিক প্রেরণা লাভের জন্য তার দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন প্যান ইসলামের জন্যে আমাদের কোন সহানুভূতি নেই কারণ এটা ধর্ম এবং আমাদের বিশ্বাস জাতীয়তা ও প্রগতিই আমাদের খ্যাতনামা পদক্ষেপের পথ নির্দেশিকা। লুৎফী আসাঈদের একজন খ্যাতনামা সহকর্মী হচ্ছেন সাদ জগলুল। তার সময়ই মিশরের রাজনীতি থেকে ইসলামের সর্বশেষ প্রভাব বিতাড়িত হয়। তার নীতিবাক্য ছিল- “ধর্ম আল্লাহর জন্যে এবং দেশ জনগণের জন্যে”। আজ পর্যন্ত তিনি আরব জাতীয়তাবাদের গুরু হয়ে আছেন। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে মুসলমানদের উচিত আরব জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন করা এই মনোভাব প্রচার পদ্ধতির প্রতারণামূলক ভ্রান্তি। আরব বিশ্বের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সতর্ক পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তারা সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতার পরিবর্তে তাকে উৎসাহিত করার জন্যেই সবকিছু করেছেন।
ফিলিস্তিনের দুঃখনক ঘটনা শুধু আরবদের নয় বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্যে একটা দুযোর্গ। জাতীয়তাবাদীরা ফিলিস্তনে আরব অধিকারের মূখ্য রক্ষাকর্তা হিসেবে নিজেদেরকে তুলে ধরে সকল মুসলমানের কাছ থেকে ব্যাপক সহানুভূতি পেয়েছেন। অন্যান্য বিষয় বাদ দিয়ে তারা কেবল এ বিষয়ে বহু গ্রন্হ লিখেছেন এবং বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু আমরা কি দেখি? ইংরেজদেরা কাছে যেমন ইংল্যান্ড ঠিক তেমনি ইহুদীদের কাছে ফিলিস্তিনকে গড়ে তুলতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ Chaim Weizmann এবং অন্যান্য শীর্ষ স্থানীয় নেতার সঙ্গে আমারী ফয়সল আপোষ আলাচনা করেছেন। পরবর্তী দশকে ইহুদীরা ক্রমেই শক্তিশালী হয়েছে। তবে তার মত অনেক আরবই ইহুদীদের কাছে জমি বিক্রি করে প্রচুর অর্থের মালিক হয়েছেন। ১৯৪৯ সালের অক্টোবরে ওয়াশিংটনে সিরিয়ার সাবেক মন্ত্রী এবং সিরীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকটর Dr. Zurayk ‘the meaning of disaster’ নামে ফিলিস্তিন সম্পর্কে একটি গ্রন্হ প্রকাশ করেন। তিনি লিখেন- ইস্রাইলের ইহুদীরা বর্তমানে বাস করছে, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে আর আমরা আরবরা এখনও অতীতের স্বপ্ন দেখছি। আরবদের চিন্তা ও কাজে বিপ্লব সাধন করে নতুন সমাজ গঠন করতে হবে। এই সমাজকে হতে হবে গণতান্ত্রিক সর্বোপরি প্রগতিমনা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যে-
১. রাষ্ট্র থেকে ইসলামের প্রভাব সম্পূর্ণ নির্মূল করতে হবে।
২. শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রয়োগিক ও পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
৩. আধ্যাত্মিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং পশ্চিমা সভ্যতার বস্তুগত দিকের প্রতি উদারমনা হতে হবে।
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, ইহুদীদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্যে জাতীয়তাবাদীরা ইহুদীদের অনুসারী হওয়া অপরিহার্য মনে করতেন। যারা আধুনিক আরব জাতীয়তাবাদ ও ইসলামের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখেন না তাদের জন্যে কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হলো- আরবী ভাষা প্রষঙ্গে বুলেটিন অফ দি ইজিপশিয়ান এডুকেশন ব্যুরো পত্রিকার ১৯৪৭ সালের মে সংখ্যায় The teaching of Araic শিরোনামে আহমদ খাকী লিখেন- মিশরের কথিত আরবী, আঞ্চলিক আরবী এবং কোরআনের ক্লাসিক্যাল আরবীর মধ্যে বিরাট ব্যবধার বিরাজমান। আমাদের অধিকাংশ শিশুই চিন্তা ও কথা বলে একভাবে এবং পড়ে ও শিখে অন্যবাবে। যদিও ভাষার দু’টি ধারার মধ্যে একই শব্দ রয়েছে, লিখিত ভাসার জন্যে ব্যাকরণের যে নীতি অনুসৃত হয় তাতে অনেক শব্দের রূপ পরিবর্তন ও অবস্থানের পরিবর্তন প্রয়োজন। না হয় ১০ বছরের আরব বালকের জন্যে কোরআনের ভাষা বোধাতীত থেকে যাবে।
যতদিন বাড়ীতে কথিত আরবী ভাষা আঞ্চলিক থাকবে এবং যতদিন স্কুলের পাঠ্যক্রমের অধিকাংশ ভাষা এই আরবী থাকবে ততদিন এটাই প্রধান জীবন্ত ভাষা। কোরআনের ক্লাসিক্যাল ভাষা বিশ্বাস হিসেবেই থেকে যাবে। আমাদের যুবকেরা এ ধরনের বিলাস বরদাশত করবে না এবং এটা যদি তাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়, এটাতে পাণ্ডিত্য অর্জিত হল কি না সে পরোয়া তারা করবে না।
The ideas of Arab nationalism গ্রন্হে জর্দানের পররাষ্ট মন্ত্রী Hasem Zaki nuseibah বলেছেন- আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষতার আলোকে একটি জাতি হিসেবে আবরদেরকে প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। বস্তুতঃ তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে একনজ আরবের কাছে ধর্মই যখন জীবনের ভিত্তি হয় তখন ভাল ব্যবহারে গুণাগুণ ও মাপকাঠি নির্ধারিত থাকে। এই মাপকাঠি সকল সময় এবং সব জায়গায় গৃহীত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে- ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তির কারণে ইসলামের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য উমাইয়া শাসনকে সার্বজনীনভাবে নিন্দা করা হয়ে থাকে। এসব ইতিহাসের অধিকাংশই আব্বাসীয় যুখে লেখা হয়েছে, ফলে পক্ষপাতিত্ব এড়ানো সম্ভব হয়নি। অবশ্য এতেও সন্দেহের অবকাশ নেই যে, ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাপারে বাড়াবাড়ির কারণে উমাইয়ারা সাধারণ মুসলমানদের বিরাগভাজন হন।
একজন আধুনিক আরব জাতীয়তাবাদীকে উমাইয়াদের প্রতি তার পূর্ব পুরুষদের দেয়া রায়কে পুনঃ ব্যাখ্যা ও পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। আধুনিক জাতীয়তাবাদী ধ্যান-ধারণায় উমাইয়াদের ধর্মনিরপেক্ষ কাজের প্রশংসা করতে হবে যা এক সময় নিন্দিত হয়েছিল। উমাইয়াদের পতনের সঙ্গে সঙ্গে আবরদের ভাগ্যের বিপর্যয় ঘটেছে পৃঃ ৬১-৬২। National consciousness গ্রন্হে Dr. Zurayk ইসলামের ইতিহাসকে উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্যে কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় নিম্নোক্ত উদ্ধৃতিতে- মুহাম্মদ (স) শুধু আরবদের নবী ছিলেন না বরং আরব ঐক্যের স্থপতি ছিলেন। কেউ কেউ বলতে পারেন তখন ধর্মীয় বন্ধন জাতি বন্ধনের চাইত শক্তিশালী ছিল এবং ইসলাম আরববাদের চাইতে জোরদার ছিল। এর উত্তর হচ্ছে মধ্যযুগে এর বিপরীত হওয়া সম্ভব ছিল না এবং এটা ইসলামিক প্রাচ্য ও খ্রীষ্টিয় পাশ্চাত্যের বেলায় একইভাবে সত্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইসলামের ইতিহাসের প্রথম দিকে আমরা আরবদের মধ্যে বেশ সচেতনতা দেখতে পাই যখন ধর্মীয় আবেগ খুবই উত্তপ্ত ছিল। মুসলমানরা অনারব খ্রীষ্টানদের চাইতে আরব খ্রীষ্টানদের প্রতি অনেক উদার ছিলেন এবং কিছু আরব খ্রীঃ প্রথম দিকে মুসলমানদের পাশাপাশি ধর্ম প্রচার করেছেন। আরব গোত্রের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার পর এই আরব সচেতনতা আরও বৃদ্ধি পায়। পার্সী, তুর্কী এবং অন্যান্যদের হামলার মোকাবিলায় এই ভাব আরও জোরদার হয়। এই ভাব আজ পর্যন্ত জোরদার হচ্ছে, জাতীয়তাবাদের বন্ধন অন্য সকল বন্ধনের চাইতে শক্তিশালী। (পৃঃ ১২৮-৩২)
এর ফলে আমরা দেখি প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুল নাসের মিশরের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে আসওয়ান বাঁধের ফলে সৃষ্ট পানিস্ফীতি থেকে প্রাক-ইসলামী আরবদের মন্দির এবং মূর্তি রক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি সব সময় ফেরাউনের গুণকীর্তন করে গান গাইতেন এবং তাকে আরবদের গৌরব বলে আখ্যায়িত করেন। কায়রোয় বিরাট মূর্তি স্থাপন করে তার স্মৃতি রক্ষা করা হয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা নির্ভয়ে বলতে পারি আরব প্রত্নতত্ববিদরা শীগগীরই আরব ঐতিহ্য বৃদ্ধির জন্য বালি খনন শুরু করবেন। তারা কি পাবেন বলে মনে করেন! হুব্বাল, আললাত, আল মানাত, আল উজ্জা! হ্যাঁ এসব মূর্তি পুনরায় কাবা গৃহে স্থাপিত হবে এবং তখন হজ্জের প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে আবু জেহেল ও আবু লাহাবের প্রশংসা কীর্তন করে কে কত সুন্দর কবিতা লিখতে পারে। এই হবে জাতীয়তাবাদের প্রতিযোগিতা্
এই বিপর্যয় প্রতিরোধের জন্যে আরব মুলমানদেরকে সজাগ হতে হবে এবই এই পদক্ষেপসমূহ নিতে হবেঃ
১. ডঃ সাইদ রজমানের নেতৃত্বে আল ইখওয়ানুল মুসলিমুন-এর পুনরুজ্জীবনের জনে পূর্ণ সমর্থন ও আর্থিক সহযোগিতা দিতে হবে। মুসলিম ভ্রাতৃসংঘই আরবে একমাত্র আন্দোলন যা নির্ভেজাল ইসলামের প্রচার করেছে এবং জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। বিশ্বের অন্যান্য যায়গার মুসলমানদেরও ইখওয়ানের পুনরুজ্জীবনের জন্যে মিশরের উপর চাপ সৃষ্টি করা উচিৎ।
২. আরবের ভবিষ্যৎ বংশধরদেরকে এটা বোঝাতে হবে যে, আরব জাতীয়তাবাদের শ্লোগান খ্রীষ্টান মিশনারী, ইহুদীবাদ এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্ত। আরবদেরকে ইসলামী বিশ্ব থেকে দুরে সরানোই এই চক্রান্তের একমাত্র লক্ষ্য।
৩. আরব নেতাদেরকেও বুঝতে হবে যে, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র বা মার্কসবাদ নয় বরং ইসলামই আরব ঐক্য সংহত করতে পারে। বিশ্বের মুসলমানদের সঙ্গে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ঐক্য পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্যে শিক্ষা ব্যবস্থা ও গণসংযোগ মাধ্যমের সাহায্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
৪. আরব যুবকদেরকে বোঝাতে হবে যে, ফিলিস্তিন সমস্যা কেবল আরবদের নয় বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের উদ্বেগের কারণ। ইহুদীবাদের বিরুদ্ধে বিলম্ব ছাড়াই সর্বাত্মক জিহাদ সংগঠন করতে হবে। মুসলিম ভ্রাতৃসংঘের নেতৃত্বে সমগ্র বিশ্বের মুসলমান যুবকদেরকে নিযে আন্তর্জতিক বাহিনী গঠন করতে হবে।
৫. এই ব্যাপারে প্রক্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুনের (১৩৩২-১৪০৬) মন্তব্যের প্রতি আমি আরবদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- নবীর ঐশী বাণী ছাড়া রাজনৈতিক ঐক্য ও স্থায়িত্ব অর্জয়নে আরবরা অক্ষম। কারণ চারিত্রিক কঠোরতা, গর্ব, বর্বরতা এবং রাজনৈতিক ব্যাপারে পরস্পরের প্রতি হিংসা তাদের মজ্জাগত। ইচ্ছা ও আকাঙ্কার ঐক্য ছাড়া এগুলো দূরীভূত হওয়া খুবই কষ্টকর। নবীর ধর্মই তারেদ রুক্ষতা ও প্রতিহিংসাকে দমন করতে পারে। কারণ এই ধর্মই তাদেরকে বর্বর জাতি থেকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত করেছে। তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তির আবির্ভাব হওয়া উচিৎ যিনি তাদেরকে সত্যের দিকে আহ্বান জানাবেন, অসত্য থেকে বিরত রাখবেন। তবেই তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে এবং নেতৃত্ব করতে পারবে। (মুকাদ্দীমা)
“ইসলামী’ জাতীয়তাবাদ
আমারেদ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন যে, কেয়ামতের আগে মুসলমানরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইহুদী এবং খ্রীষ্টানদের অনুকরণ করবে। এই ভবিষ্যৎ বাণী কার্যকর হয়েছে। বিধর্মীদের অনুকরণের ক্ষেত্রে সবচাইতে জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের যায়গায় আধুনিক ভৌগলিক, বর্ণ ও ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাকে স্থান দেয়া। সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ বিশ্ব মুসলিম সংহতির পক্ষে যেরূপ ক্ষতির কারণ হয়েছে ঠিক তেমনি ঈমানকে আরেকটা জাতীয়তাবাদ হিসেবে দেখার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। নতুন ‘ইসলামী’ জাতীয়তা জোর দিচ্ছে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের খারাপ দিক, অমুসলমানদের হাতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের দুঃখ দুর্দশা, সর্বোপরি ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা ও পশ্চিমী ধারায় সামাজিক ‘অগ্রগতি’র ওপর। এ ব্যাপারে মুসলিম জাতীয়তাবাদীদের ধারণা ইসলাম মুসলমানদের তাৎক্ষণিক বস্তুগত কল্যাণের নিমিত্তে অপর একটি রাজনৈতিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পদ্ধতি। তারা কখানো খোদাভিত্তিক, শেষ বিচারের দিন বা পারলৌকিক জীবনের কল্যাণ- অকল্যাণের কথা বলে না।
অমুসলমানদের হাতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের অত্যাচার, ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরের মুসলমানদের দুঃখ-দর্দশার কথা বলার পরক্ষণেই তারা শিল্পোৎপাদনে ক্ষতি করে রোজা রাখার নিন্দা করেন, ঈদুল আযহার দিনে পশু জবাই করে আর্থি ক্ষতির কথা বলেন এবং ‘বৈদেশিক মুদ্রার নিদারুণ’ ঘাটতির অজুহাতে হজ্জযাত্রীর সংখ্যা কমিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন। এর পরও তারা সদম্ভে বলে থাকেন যে, ‘আমরা মুসলমান’। মুসলিম জাতীয়তাবাদীদের কাছে ইসলাম কোন ধর্ম নয়- আরেকটি রাজনৈতিক শ্লোগান।
ইখওয়ানুল মুসলিমুনের নেতা ডঃ সাইদ রমজান পরিষ্কার ভাষায় বলেছেনঃ মুসলিম জাতীয়তাবাদীরা কোন সময় বংশগত বিরোধ, বা উগ্র স্বদেশ প্রেমিক এবং কোন সময় ইসলামের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের মধ্যে তাদের আবেগের স্ফূরণ দেখতে পান। বস্তুতঃ এটা এ সবের সমষ্টি হতে পারে। এ ধরনের আন্দোলন যদি ফল হয় ‘ইসলামাবাদ’ আরেকটি উগ্রতায় রূপ নেবে। এটা তকন একটি নতুন ধরনের জাতীয়তার জন্ম দেবে। এখন পর্যন্ত আমাদের দাবী হচ্ছে- আমরা মিশরী বা সিরিীয় বা আরব অথবা অনারব। এখন আমরা বলতে শুরু করেছি ‘আমরা মুসলমান’। এ ধরনের আন্দোলনের সাফল্যের অর্থ ইসলামের সাফল্য নয়… এটা কেবলমাত্র স্বদেশপ্রেমে অন্ধ আরেকটি দল সৃষ্টি যা ইসলামী নয়। ইসলাম বিশ্ব প্রভু আল্লাহর কাছে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পনের নাম। জীবনের সবদিককে আল্লাহর আদেশের কাছে সোপর্দ করার নাম। এটা না হলে মুসলমানদের কোন ঐক্যই ইসলামী জামায়াত হতে পারে না।[“Contemporary Islam and Nationalism- A case study of Egypt”. Zafar Ishaq Ansari, The word of Islam vol. VII. No 1-4 E J. Brill, Leiden p. 16.]
ইসলামের ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা
ইসলামী জ্ঞানের সবচাইতে বড় প্রয়োজন হচ্ছে কোরআনের ভিত্তিতে ইসলামের ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়ন। অতীতের মুসলিম সভ্যতার ব্যাপারে যেসব ব্যাখ্যা বর্তমানে চালূ রয়েছে, তা ইসলামের জন্যে খুবই ক্ষতিকর। আমাদের পণ্ডিতেরা যতদিন এ ধরনের ক্ষমাপ্রার্থী রোমান্টিকতায় নিয়োজিত থাকবেন ততদিন ইসলামী পুনর্জাগরণ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের আবির্ভাবের পর থেকে মুসলমানরা নিজেদেরকে এতই অপদস্ত ও হীনবল ভাবতে শুরু করেছেন যে, অতীতের কাল্পনিক চিত্র অংকন আমাদের লেখকদের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অতীত ঐতিহ্য গাঁথা প্রণয়নে তারা অনেক ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ির পরিচয় দিয়েছেন এবং মুসলিম সাম্রাজ্যের বস্তুগত ও পার্থিক সুখ-সমৃদ্ধিকে ইসলামী সমৃদ্ধি হিসেবে চিত্রিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। তারা কখনো বিষয়টি চিন্তা করে দেখেননি যে, এই পার্থিব উৎকর্ষতা ও শ্রীবৃদ্ধি ইসলামের কোন কল্যাণে এসেছে কিনা।
পণ্ডিতদের এটা জানা থাকা উচিৎ ছিল যে, মুসলিম ছদ্মাবরণে বিধর্মী আচরণকে কোরআন নিন্দে করেছে। অতীতের ব্যাপারে আমাদের মতামত পুনর্গঠনে আমাদেরকে এই মুহূর্তে পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ ও বস্তুবাদী বিকৃত দৃষ্টিতে ইতিহাসের মূল্যায়ন বন্ধ করতে হবে। প্রথমতঃ আমাদের স্মরণ রাকা উচিৎ ‘মুসলিম’ সংস্কৃতির উদগাতা হিসেবে পরিচিত আলকিন্দি, ইবনে ফারবী, ইবনে সিনা এবং ইবনে রুশদ প্রাচীন গ্রীক দর্শনের আলোকে ইসলামের ব্যাখ্যা দেয়ার কারণে তাদের যুগের প্রখ্যাত আলেমদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। পরবর্তী পর্যায়ে তাঁদের খ্যাতি ইউরোপেই সীমাবদ্ধ ছিল। মুসলিম বিশ্বে তাদের কোন প্রভাব ছিল না। পশ্চিম দেশীয় প্রাচ্য গবেষকদের দ্বারা নতুন করে পরিচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বে তাদের নামগন্ধও ছিল না।
তথাকথিত ‘মুসলিম’ দর্শন সক্রেটিস, প্ল্যাটো এবং এরিষ্টটলেরই শিক্ষা, ইসলামের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। বেশ কয়েক শতক ধরে মুসলিম বিশ্বে উন্নতিপ্রাপ্ত বিজ্ঞান এবং গণিত শাস্ত্রের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, মুসলিম নামধারী অধিকাংশ বিজ্ঞানী এবং গণিত শাস্ত্রবিদই মুতাজিলা ঐতিহ্যের অনুসারী। যদিও প্রাকৃতিক বিজ্ঞনের বিভিন্ন বিভাগে তাদের সাফল্য গ্রীক এবং রোমের প্রাচীন দর্শনেই সীমাবদ্ধ। অবশ্য এ কথার অর্থ এ নয় যে, ইসলাম ঐতিহ্যগতভাবে বিজ্ঞান গবেষণার বিরোধী। এর অর্থ হচ্ছে ঐতিহাসিক ঘটনা পরম্পরায় প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ধর্ম বিরোধী মূল্যবোধের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। এটা এইরূপ হওয়া উচিৎ ছিল না, কিন্তু হয়ে গেছে।
আমাদের মহান মুজাদ্দিগণ মুতাজিলাদের দর্শন প্রত্যাখ্যান করলেও পদার্থ বিজ্ঞানে তাদের সত্যিকার অবদানকে অস্বীকার করেননি।
মুসলিম বিজ্ঞানী এমনকি আমাদের শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদগণও বিজ্ঞানকে গ্রীক দর্শনমুক্ত করে কোরআনের ভিত্তির উপর স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে বিজ্ঞান ইসলামের শক্রদের হাতে চলে গেছে এবং মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানুষগুলো সুফীবাদ এবং ধর্মতত্বিক বিচার-বিশ্লেষনে আত্মনিয়োগ করেছেন। এই সুযোগ ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ তার উন্নত প্রযৌক্তিক সমরাস্ত্রের দ্বারা মুসলমানদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার ও প্রভুত্ব করার সুযোগ পেয়েছে।
আমাদের পণ্ডিত এবং ঐতিহাসিকদেরকে এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। রোমান্টিকতা ও স্বেচ্ছাচারী চিন্তায় কোন লাভ নেই। অতীতে মুসরিম সংস্কৃতিতে যেসব প্রাচীন ধ্যান-ধারণা অনুপ্রবেশ করেছে তা প্রত্যাখ্যঅন করতে হবে। কারণ এখানকার ধর্মবিরোধী শক্তির মতই এগুলো ইসলামের সঙ্গে আপোষহীন। শুধুমাত্র বস্তুবাদী মেধা ও পার্থিব সাফল্য না দেখে আমাদেরকে ধর্মনিষ্ঠার বিচারে যারা শ্রেষ্ঠ তাদের কাছ থেকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক প্রেরণা নিতে হবে।
‘প্রগতিবাদ’ আমাদের মারাত্মক শক্র
ধর্মীয় মতবাদকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করেই ‘প্রগতির’ দর্শনের কাছে তাকে সমর্পণ করা হয়েছে এবং ‘প্রগতির’ দর্শনই সার্বজনীনভাবে গৃহীত হয়েছে। এই মতবাদের প্রবক্তাদের ধারণা হচ্ছে বিবর্তনবাদ ইতিহাসের অপরিবর্তনীয় আইন। এই কারণে মানব জাতির অব্যাহত অগ্রগতিকে সামগ্রিক বস্তুগত সাফল্যের বিচারে শুধুমাত্র প্রশংসনীয় নয় বরং অনিবার্য হিসেবে ধরে নেয়অ হয়। OHIO-র হিব্রু ইউনিয়ন কলেজের ইহুদী ইতিহাসের অধ্যাপক Ellis Rivkin বলেন: ইহুদীবাদের অগ্রগতি একটি সাধারণ ধারণাই বদ্ধমূল করে যে, কোন মতবাদ তা যতই ঐশী বলে দাবী করা হকো পরিবর্তিত, উন্নয়নশীল ও অভিনব বিশ্বে যথাযথ থাকতে পারে না। আমাদের আধুনিকতাবাদীরা সর্বান্তকরণে ইসলামের বেলায়ও তা সত্য মনে করেন।
‘প্রগতিবাদের’ দর্শন নিম্নোক্ত অনুমানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে-
১। চার্লস ডারউইনের মতবাদ কোন প্রকার প্রশ্র ব্যতিরেকে গ্রহণ। নিম্নশ্রেণীর খুবই ক্ষুদ্র কীট থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ জন্মলাভ করেছে এই ধারণা বদ্ধমূল করে নেয়ার পর মানব দেহের ক্রমবিবর্তনেও বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়,
২। ডারউইনের জীবতাত্মিক মতবাদ মানব সমাজের বেলায়ও গ্রহণ করা হয়েছে,
৩। অতএব আধুনিক পশ্চিমা সংস্কৃতিকে অগ্রাহ্য করা বিবর্তনের আইনকে অস্বীকার করার সামিল। প্রগতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকৃতিক আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বলে ধরে নেয়া হয়েছে। নিম্ন ও আদিম সংস্কৃতি থেকে অত্যাধুনিক সংস্কৃতিতে উত্তরণ শুধুমাত্র আকাঙ্খিত নয় বরং প্রকৃতির অপরিবর্তনীয় আইন। সকল পরিবর্তন যখন প্রগতির একধাপ অগ্রগতি সুতরাং নতুনটাই ভাল এবং পুরাতনটা সমর্থন করার মানে আদিমতায় ফিরে যাওয়া,
৪। আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ঐশীভিত্তিক সকল ধর্মকে বাতিল করেছে এবং অতীন্দ্রিয় মূল্যবোধকে সেকেলে আখ্যায়িত করেছে। যে সমাজ সকল সময় তাদের যাবতীয় কাজকে ঐশী আইনের দ্বারা পরিচালিত করে সে সমাজের সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব অনিবার্য, কারণ পরিবর্তন চাড়া প্রগতি অসম্ভব।
প্রগতিবাদ অপশ্চিমী জাতিসমূহকে হতাশ করার জন্যে একটি মনস্তাত্বিক হাতিয়ার দ্বারা এই প্রচারণাকেই বদ্ধমূল করেছে যে, পশ্চিমা সাংস্কৃতিরই ভবিষ্যৎ রয়েছে এবং একে প্রতিহত করার সকল প্রচেষ্টা দুরাশা মাত্র।
প্রগতিবাদ যখন পরিবর্তনকে পূজা করার আহ্বান জানিয়ে থাকে তার অর্থ হচ্ছে কোন কিছুই স্থানীয় নয় সেটা চারিত্রিক, নৈতিক বা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ যা-ই হোক না কেন, কোন পদ্ধতি যদি ঐশী ভিত্তিক হওয়ার কারণে স্থায়িত্ব বা অবিনম্বরতা দাবী করে থাকে তবে তা তার অভ্যুদয়ের একটা নির্দিষ্ট সময় বা কালের জন্যে। পরবর্তীকালে তা সেকেলে হয়ে যাবে। এই দৃষ্টিভঙ্গীতে ইসলামের ইতিহাসের বিকৃতির চেষ্টা করা হয়েছে। বলা হয়েছেঠ মুহাম্মদ (স)-এর আগমনী বার্তা ইতিহাসে আশার সঞ্চার করেছে। কিন্তু তাঁর আগমনের সঙ্গে সঙ্গে তা শেষ হয়ে গেছে, কারণ মুহাম্মদ (স) শেষ নবী, তার পর আর কোন পরিপূর্ণতা আশা করা যায় না। অতএব ইতিহাসকে হয় মুহাম্মদকে অতিক্রম করতে হবে নতুবা তার বক্তব্য অনুসারে চলতে হবে। ইসলামী মতে অতীতের মধ্যে পরিপূর্ণতা চাইতে হবে, এখনকার সকল কাজ অতীতের আলোকে বিচার করতে হবে। (Ibid p-16) প্রগতিবাদীরা বলে থাকেন বর্তমান সমাজ নবীর সময়ের সঙ্গে কোনদিক থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অতএব ইসলাম যুগের অনুপযোগী। আমাদের শরিয়তের বিধান আধুনিক জীবনের সঙ্গে সঙ্গতিহীন, ফলে আজকের সমস্যার কোন সমাধান তাতে পাওয়া যাবে না। প্রগতিবাদী মূল্যবোধের পরিণতি হচ্ছে- স্থিতিশীল বিশ্বে একজনের পরিবেশও স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু আজকের পৃথিবীতে পরিবেশ এবং বন্ধুর সীমাহীন ব্যত্যয় ঘটে। এসব পরিবর্তনের মুখে পুরুষ বা নারীরও পরিবর্তন ঘটতে বাধ্য। তাদের মনোভাব এবং ইচ্ছা প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। এ বছরের গভীর বিশ্বাস আগামী বচর তামাসায় পরিণত হয়। যার প্রতি আজ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা রয়েছে তা কাল পদদলিত হয়।[A Study of Modern American Suberb, Richard E. Gordon, Katherin K. Gordon and Man Gunther Dell Publishing Company. New York. 1960 P-114]
অধ্যাপক Wilfred Cantwell Smith- এর মতে একজন ‘প্রগতিবাদী’ সামাজিক পরিবর্তনের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তা করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন অপরদিকে একনজ ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ ‘প্রগতি’কে পরিহার করার জন্যে শুধু এর বিরোধিতাই করে না উপরন্তু পরিবর্তনকে ঠেকানোর জন্যে পূর্বেকার সামাজিক বিধানকে সংস্কারের প্রচেষ্টা চালায়। নতুন সমাজে প্রবেম না করে আদিম সমাজকে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করে। এ মতানুসারে যারা ইসলামী সমাজকে আঁকড়ে থাকতে চায় তারা ‘প্রতিক্রিয়াশীল’।
আমরা যারা ইসলামকে চাই, বিরোধীদের দ্বারা প্রতিক্রিয়াশীল আখ্যায়িত হওয়ায় তাদের ভীত হওয়া উচিঃ নয়। একথা আমাদের বোঝা উচিৎ এই আখ্যা আমাদের কোন ক্ষতি করবে না বরং ইসলামকে ‘যৌক্তিক’ ‘আধুনিক’ ‘বৈজ্ঞানিক’ ‘গতিশীল’ উদার’ ও ‘প্রগতিশীল’ করে অমুসলিমদের তুষ্ট করার চেষ্টাই আমাদের জন্যে ক্ষতিকর। বস্তুবাদী আদর্শের ছত্রছায়ায় ইসলামকে বর্তমান যুগের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রচেষ্টা আত্মঘাতী। কোরআনও সুন্নার প্রতি আমাদের নিষ্ঠার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা হলে আমাদেরও পাল্টা প্রম্ন রাখা উচিৎ যে, সেখানে অন্যায় কোথায়?
আধুনিকতা সমাজের জন্যে ও ব্যক্তি মানুষের জন্যে অকল্যাণকর এই কথা বলার সৎসাহস আমাদের অর্জন করতে হবে। ইসলাম অতীতের, বর্তমানের বা ভবিষ্যতের নয় বরং সকল যুগের। খারাপ বা ভাল সময়, স্থান ও পরিবেশের উপর নির্ভরশীল নয়। খারাপ খারাপই এবং ভাল ভালই। ইসলামের স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও স্বয়ং সম্পূর্ণ জীবন পদ্ধতিতে আমরা সন্তুষ্ট। কোন মানব রচিত আদর্শের সঙ্গে তাকে তুলনা করার কোন প্রয়োজন নেই।
পাঠকদের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়া উচিৎ যে, ইসলামের আত্মরক্ষামূলক ব্যাখ্যা কিভাবে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক ধ্বংস ডেকে আনছে। যতই আমরা এ পথে বাড়ব ততই আমরা দুর্বল হবো।
বলা হয়ে থাকে যে, একন ইসলামের সামাজিক আইনের পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু যতদিন আমরা ইসলামের নৈতিক ও ধর্মীয় আইন কড়াকড়িভাবে অনুসরণ করব না, ততদিন ইসলামের সামাজিক আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আশা করা যায় না। অতএব, আমরা বিচার করারও ক্ষমতা রাখি না যে, ইসলামের সামাজিক আইন কিবাবে পরিবর্তন করতে হবে বা আদৌ পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কিনা। আমাদের ইজতেহাদের আকাঙ্খা ইসলামের প্রতি ভালবাসা প্রসুত নয়। এটা তার প্রতি বদ্ধমূল ঘৃণা এবং অন্য আদর্শের প্রতি ভালবাসার ফল। এর লক্ষ্য ইসলামের সত্যিকার ভিত্তি আবিষ্কার বা ব্যাখ্যা নয় বরং ইসলামকে অন্য আদর্শের কাছাকাছি আনার জন্যে এবং সেসব আদর্শের অনুরাগীদের সন্তুষ্টির জন্যে। এটা সত্যিকার ইজতিাদ নয়, শরীয়ত থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবেও এর প্রকাশ ঘটেনি বরং অন্যান্য আদর্শ থেকে যত বেশী সম্ভব ইসলামের বিকল্প খোঁজ করাই এর লক্ষ্য।
পশ্চিমা সভ্যতা এবং তার সকল উপায়-উপকরণের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের সাহস না থাকলে আমাদের পক্ষে ইসলামী পুনর্জাগরণ অসম্ভব। কোন মানুষই যেমন এক সঙ্গে দুই প্রভুর গোলামী করতে পারে না, ঠিক তেমনি একই সঙ্গে সম্পূর্ণ বিরোধী দুটি আদর্শের অনুসরণ একজন ব্যক্তির পক্সে অসম্ভব। তাকে দুটির যে কোন একটি বাছাই করতে হবে। পশ্চিমা সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ দৈহিক বিচ্ছিন্নতা নয় বরং পূর্ণ নৈতিক ও বুদ্ধিভিত্তিক স্বাধীনতা। ইসলামকে বিদেশী মাপকাঠিতে ব্যাখ্যাদান চিরদিনের জন্যে বন্ধ করে আমাদেরকে এই স্বাধীনতা প্রদর্শন করতে হবে। কোন অমুসলমানের পছন্দ বা অপছন্দের তোয়াক্কা না করে আমাদেরকে নির্ভেজাল ইসলামের হেফাজতের জন্যে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।
আমাদেরকে এটা অনুধাবন করতে হবে যে, কোন অমুসলমানদের দেয়া ইসলাম সম্পর্কিত ব্যাখ্যা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্র নয়। কারণ যে মূল্যবোধের মাপকাঠিতে সে বিচার করতে পারে, বৌদ্ধ বৌদ্ধ মন, ইহুদী ইহুদী মন, খ্রীষ্টান খ্রীষ্টান মন, অজ্ঞেয় মানবতাবাদী উদার সমাজতন্ত্র এবং কম্যুনিষ্ট দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের দর্শন দিয়ে ইসলামকে বিচার করতে পারে। নৈতিক মূল্যবোধের ব্যাপারে নিরপেক্ষ হওয়া মনস্তিাত্বিকভাবে অসম্ভব। প্রত্যেকেই তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে অন্যকে বিচার করে থাকে। ইসলামের নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যার সূত্র কোনটি?
সমসাময়িক কালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহাব (১৭০০-১৭৮৭) বিশ্বব্যাপী যে ইসলামী রেনেসাঁর ভিত্তি স্থাপন করেছেন তাই প্রকৃত ভিত্তি। নির্ভেজাল ইসলামের বাস্তবায়নের জন্যে তিনি আত্মোৎসর্গ করেছেন। ওহাবী আন্দোলনের নাম শোনার সঙ্গে সঙ্গে যাঁরা প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মোন্মাদ বলে চীৎকার করে থাকেন তাঁদের পূর্বসূরী ও উত্তরসূরীদের বোঝা উচিৎ যে, তাঁরা ডারউইনের বিবর্তনবাদের উপর ভিত্তিকৃত পশ্চিমী বস্তুবাদী চশমা দিয়ে ইতিহাসকে দেখছেন।
ইসলাম পার্থিব প্রগতি এবং পশ্চাৎগতি দিয়ে ইতিহাসের বিচার করে না বরং অতীন্দ্রিয় ভাল এবং মন্দের আলোকে বিচার করে। সত্য অবিনশ্বর, ঐশী এবং চিরন্তন, বিবর্তনবাদী বা মানবরচিত নয়, সময় স্থান বা পরিস্থিতিতে সীমাবদ্ধও নয়। ইতিহাসের কোরআন ভিত্তিক ধারণায় আদম (আ)-ই প্রথম মানুষ এবং সত্যিকার আল্লাহর নবী, নির্ভেজাল একাত্মবাদী মুসলমান। ডারউইনের ব্যাখ্যাকৃত ইতিহাস অনুসারে আদম (আ) ছিলেন আধা-বান, গুহায় বসবাসকারী পশুর মত নগ্ন, অসভ্য প্রাণী। বৈপরিত্য এতই সুস্পষ্ট যে এর কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।
আধুনিক পশ্চিমী সভ্যতা কেন বিশ্বজয় করলো? আমরা মুসলমানরা ধরে নিয়েছি যে, পরাজিত হওয়ার কারণে আমরা সবক্ষেত্রেই নিকৃষ্টতর। যদিও এই মনস্তাত্বিক প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং বোধগম্য কিন্তু এর সঙ্গে সত্যের কোন সম্পর্ক নেই। আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতা যে পার্থিব সাফল্য অর্জন করেছে এতে তার সাংস্কৃতিক মুল্যবোধের কোন প্রেরণা নেই, কিন্তু সম্ভব সংক্ষিপ্ত সময়ে সর্বোচ্চ ক্ষমাত, সম্পদ, আরাম-আয়েশ ও আনন্দ লাভের অদম্য সংকল্পই তাকে এ সাফল্য দিয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যে বাকী সবকিছুই বিসর্জন দেয়া হয়েছে। অপর কথায় পশ্চিমা জগত কি চায় তা জানতো এবং তা অর্জনের জন্যে কোন প্রচেষ্টাই তারা বাকী রাখেনি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভবিষ্যৎ জয়ের আত্মবিশ্বাস। আমরা মুসলমানরা যদি ইসলামী আদর্শের শ্রেষ্ঠত্বে আত্মবিশ্বাসী হই তা বাস্তবায়নের জন্যে এক মন এক ধ্যানে আত্মনিয়োগ করি, কোন কিছুই আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। ইসলাম নয়, আমাদেরকেই পরিবর্তন সাধন করতে হবে। সাবান যেমন কাপড় পরিষ্কার করে আমরা তেমনি অপবিত্র অবস্থায় ইসলামে প্রবেশ করি এবং সুশৃংখল ও পরিষ্কার হয়ে তার থেকে বের হই।
মরিয়ম জামিলা।
লেখিকা একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। তার পূর্ব নাম ছিলো মার্গারেট মারকিউস। ইসলামের শ্বাশত আবেদনে মুগ্ধ হয়ে তিনি তাঁর নিজ ইহুদী ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। দশ বচর বয়স থেকেই ইসলামের প্রতি তাঁর অনুরাগ জন্মে। তখন তিনি ইহুদীদের রবিবাসরীয় স্কুলের ছাত্রী। বয়সন্ধিকাল পর্যন্ত তিনি মানবতাবাদী দর্শনে প্রভাবিত ছিলেন। বুদ্ধি পরিপক্ক হওয়ার র তিনি আর নাস্তিক্যবাদী আদর্শে বিশ্বাস রাখতে না পেরে ইসলামী আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। প্রথমে বাহাইদের সাথে কাজ শুরু করেন। তারপর পর্যায়ক্রমে তিনি আলজেরিয়ার মরহুম শেখ ইবরাহীম, ওয়াশিংটনের ডঃ মাহমুদ এফ হোবাল্লা, প্যারিসের ডঃ হামিদুল্লাহ, জেনেবার ডঃ সৈয়দ রমজান এবং পাকিস্তানের মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদীর সাথে যোগাযোগ করেন।
অতপর ১৯৬১ সালে ইসলামের সুমহান আদর্শ গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে মরিয়ম জামিলা নাম ধারণ করেন। মরিয়ম জামিলা তাঁর জীবনের মিশন হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করেন। এ জন্যে তাঁর জন্মভূমি আমেরিকা ত্যাগ করে পাকিস্তান চলে যান ১৯৬১ সালে। ঐ বছরই লাহোরের একজন মুসলমানকে বিয়ে করেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার মানসে নিরলসভাবে কাজ করার ইচ্ছা এবং কাজের সাথে জীবনের সমন্বয় থাকায় মরিয়ম জামিলার বইয়ের আবেদন হৃদয়স্পর্শীী লেখিকার মূল বক্তব্য Either accept Islam in to to or keep it aside, Islam admits no compromise.
এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি বারত উপমহাদেশ, তুরস্ক ও আরব জগতের মুসলিম নেতা ও পণ্ডিতদের কাজের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন এ গ্রন্হে।
সমাপ্ত