জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

ইসলামী অর্থনীতি

অন্তর্গতঃ অর্থনীতি, উচ্চতর অধ্যয়ন
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. আমাদের কথা
  2. গ্রন্থকারের কথা
  3. ভূমিকা
  4. সবকথার গোড়ার কথা
  5. প্রথম খণ্ডঃ ইসলামের অর্থনৈতিক দর্শন
    1. প্রথম অধ্যায়ঃ মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা ও তার সমাধান
      1. খণ্ডিত বিষয়পূজার বিপর্যয়
      2. অর্থনৈতিক সমস্যা আসলে কি?
      3. অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আসল কারণ
      4. প্রবৃত্তিপূজা এবং বিলাসিতা
      5. বস্তু পূজা
      6. প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক [Antagoinstic Compitiion] অর্থব্যবস্থা
      7. আরো কতিপয় ব্যবস্থা
      8. সমাজতন্ত্রের প্রস্তাবিত সমাধান
      9. নতুন শ্রেণী
      10. নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা
      11. ব্যক্তিত্বের বলি
      12. ফ্যাসিবাদের সমাধান
      13. ইসলামের সমাধান
      14. ইসলামের মূলনীতি
      15. সম্পদ উপার্জন নীতি
      16. ইসলামের স্বত্বাধিকার নীতি
      17. ১. ইসলামে ব্যায়নীতি
      18. ২. অর্থপূজার মূলোচ্ছেদ
      19. ৩. সম্পদ বন্টন ও জননিরাপত্তা
      20. ভাববার বিষয়
    2. দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ কুরআনের অর্থনৈতিক নির্দেশনা
      1. ১. মৌলিক তত্ত্ব
      2. ২. বৈধ অবৈধের সীমা নির্ধারণের অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহর
      3. ৩. আল্লাহ-নির্ধারিত সীমার ভেতরে ব্যক্তিমালিকানার স্বীকৃতি
      4. ৪. অর্থনৈতিক সাম্যের অস্বাভাবিক ধারণা
      5. ৫. বৈরাগ্যনীতির পরিবর্তে মধ্যপন্থা এবং বিধিনিষেধ
      6. ৬. অর্থসম্পদ উপার্জনে হারাম হালাল বিবেচনা করা
      7. ৭. অর্থসম্পদ উপার্জনের অবৈধ পন্থা
      8. ৮. কার্পণ্য ও পুঞ্জিভূত করার উপর নিষেধাজ্ঞা
      9. ৯. অর্থপূজা ও লোভ লালসার নিন্দা
      10. ১০. অপব্যয়ের নিন্দা
      11. ১১. অর্থ ব্যয়ের সঠিক খাত
      12. ১২. আর্থিক কাফফারা
      13. ১৩. দান কবুল হবার আবশ্যিক শর্তাবলী
      14. ১৪. আল্লাহর পথে অর্থব্যয়ের বাস্তব গুরুত্ব
      15. ১৫. আবশ্যিক যাকাত ও তার ব্যাখ্যা
      16. ১৬. মালে গনীমতের এক পঞ্চমাংশ
      17. ১৭. যাকাত ব্যয়ের খাত
      18. ১৮. উত্তরাধিকার আইন
      19. ১৯. অসীয়তের বিধান
      20. ২০. অজ্ঞ ও নির্বোধের স্বার্থ সংরক্ষণ
      21. ২১. জাতীয় মালিকানায় সমাজের স্বার্থ সংরক্ষণ
      22. ২২. করারোপের ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি
      23. ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
      24. গ্রন্থসূত্র
    3. তৃতীয় অধ্যায়ঃ ইসলামী অর্থব্যবস্থা ও পুঁজিবাদের মধ্যে পার্থক্য
      1. এক: উপার্জনে বৈধ অবৈধের পার্থক্য
      2. দুই: ধন সঞ্চয়ের নিষেধাজ্ঞা
      3. তিন : অর্থ ব্যয় করার নির্দেশ
      4. চার: যাকাত
      5. পাঁচ: মীরাসী আইন
      6. ছয়: গনীমতলব্ধ ও সম্পদ ও বিজিত সম্পত্তি বন্টন
      7. সাত: মিতব্যয়িতার নির্দেশ
    4. চতুর্থ অধ্যায়ঃ ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূলনীতি ও লক্ষ্য
      1. ইসলামী অর্থব্যবস্থার ধরন
      2. ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মৌল উদ্দেশ্য
        1. ক. ব্যক্তিস্বাধীনতা সংরক্ষণ
        2. খ. নৈতিক ও বৈষয়িক উন্নতির সাঞ্জস্য
        3. গ. সহযোগিতা, সামঞ্জস্য ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা
      3. ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূলনীতি
        1. ক. ব্যক্তিমালিকানা ও তার সীমারেখা
        2. খ. সমবন্টন নয়, ইনসাফপূর্ণ বন্টন
        3. গ. ব্যক্তির সম্পদে সমাজের অধিকার
        4. ঘ. যাকাত
        5. ঙ. উত্তরাধিকার আইন
      4. শ্রম, পুঁজি ও সংগঠনের মর্যাদা
      5. যাকাত ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন
      6. সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা
      7. অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার সম্পর্ক
    5. পঞ্চম অধ্যায়ঃ কুরআনের আলোকে অর্থনৈতিক জীবনের কতিপয় মৌলিক নীতিমালা
      1. ১. ইসলামী সমাজের তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য
      2. ২. নৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির ইসলামী পদ্ধতি
      3. ৩. জীবিকার ধারণা এবং ব্যয়ের দৃষ্টিভংগি
      4. ৪. ব্যয়ের মূলনীতি
      5. ৫. মিতব্যয়ের মূলনীতি
      6. ৬. অর্থনৈতিক সুবিচর
  6. দ্বিতীয় খন্ডঃ ইসলামী অর্থব্যবস্থার কতিপয় দিক
    1. ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ ভূমির মালিকানা
      1. ১. কুরআন এবং ব্যক্তিমালিকানা
      2. ২. রাসূল (সা) ও খেলাফতে রাশেদার যুগের দৃষ্টান্ত
        1. প্রথম প্রকারে ভূমির মালিকানা বিধান
        2. দ্বিতীয় প্রকারের ভূমির মালিকানা বিধান
        3. তৃতীয় প্রকারের ভূমির মালিকানা বিধান
        4. চতুর্থ প্রকারের ভূমির মালিকানার বিধান
        5. চাষাবাদের ভিত্তিতে মালিকানার অধিকার
        6. সরকার কর্তৃক দানকৃত জমি
        7. ভূমি দান করার শরয়ী বিধান
        8. জমিদারীর শরয়ী নীতি
        9. মালিকানা অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
      3. ৩. ইসলাম ব্যবস্থা এবং একক মালিকানা
      4. ৪. কৃষি জমির সীমা নির্ধারণ
      5. ৫. বর্গাচাষ পদ্ধতি এবং ইসলামের সুবিচার নীতি
      6. ৬. অধিকারভূক্ত সম্পদ ব্যয়ের সীমা
    2. সপ্তম অধ্যায়ঃ সুদ
      1. ১. সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান
        1. রিবার অর্থ
        2. জাহেলী যুগের রিবা
        3. ব্যবসা ও রিবার মধ্যে নীতিগত পার্থক্য
        4. রিবা হারাম হবার কারণ
        5. সুদ হারামের ব্যাপারে কঠোর নীতি
      2. ২. সুদের প্রয়োজন : একটি বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যালোচনা
        1. সুদ কি যুক্তিসম্মত
          1. ক. ঝুঁকি ও ত্যাগের বিনিময়
          2. খ. সহযোগিতর বিনিময়
          3. গ. লাভে অংশীদারিত্ব
          4. ঘ. সময়ের বিনিময়
        2. সুদের হারের যৌক্তিকতা
        3. সুদের এ হর নির্ধারণের ভিত্তি
        4. সুদের অর্থনৈতিক ‘লাভ ও তার প্রয়োজন’
        5. সুদ কি যথার্থ প্রয়োজনীয় ও উপকারী?
      3.  ৩. সুদের বিপর্যয়
      4. ৪. সুদমুক্ত অর্থনীতি বিনির্মাণ
        1. কয়েকটি বিভ্রান্তি
        2. সংস্কারের পথে প্রথম পদক্ষেপ
        3. সুদ রহিত করার সুফল
        4. সুদবিহীন অর্থব্যবস্থায় ঋণ সংগ্রহের উপায়
        5. ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ
        6. বাণিজ্যিক প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ
        7. সরকারের অলাভজনক প্রয়োজনের ক্ষেত্রে
        8. আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে ‍ঋণ গ্রহণ
        9. লাভজনক কাজে পুঁজি বিনিয়োগ
        10. ব্যাংকিং এর ইসলামী পদ্ধতি
      5. ৫. অমুসলিম দেশ থেকে অর্থনৈতিক ও শিল্পঋণ গ্রহণ
    3. অষ্টম অধ্যায়ঃ যাকাতের তাৎপর্য এবং গুরুত্ব
      1. ১. যাকাতের তাৎপর্য এবং গুরুত্ব
        1. যাকাতের অর্থ
        2. যাকাত নবীগণের সুন্নত
      2. ২. সামাজিক জীবনে যাকাতের স্থান
      3. ৩. যাকাত দানের নির্দেশ
      4. ৪. যাকাত ব্যয়ের খাত
      5. ৫. যাকাতের মৌলিক বিধান
      6. ৬. যাকাতের নিসাব ও হার কি পরিবর্তন করা যেতে পারে?
      7. ৭. কোম্পানীর শেয়ারে যাকাত
      8. ৮. শ্রম ও অর্থের অংশীদারী অবস্থায় যাকাত
      9. ৯. খনিজ সম্পদে যাকাতের নিসাব
      10. ১০. যাকাত ও ট্যাক্সের মধ্যে পার্থক্য
      11. ১১. যাকাতের পরও কি আয়কর আরোপ করা বৈধ?
    4. নবম অধ্যায়ঃ ইসলাম ও সামাজিক সুবিচার
      1. হকের বেশে বাতিল
      2. পয়লা প্রতারণা : পুঁজিবাদ এবং ধর্মহীন গণতন্ত্র
      3. দ্বিতীয় প্রতারণা : সামাজিক সুবিচার ও সমাজতন্ত্র
      4. শিক্ষিত মুসলমানদের চরম মানসিক গোলামী
      5. সামাজিক সুবিচারের অর্থ
      6. সামাজিক সুবিচার কেবল ইসলামেই রয়েছে
      7. সুবিচারই ইসলামের লক্ষ্য
      8. সামাজিক সুবিচার
      9. ব্যক্তিত্বের বিকাশ
      10. ব্যক্তিগত জবাবদিহি
      11. ব্যক্তিস্বাধীনতা
      12. সামাজিক সংস্থা ও তার কর্তৃত্ব
      13. পুঁজিবাদ ও সমাজিতন্ত্রের ত্রুটি
      14. সমাজতন্ত্র সামাজিক নিপীড়নের এক নিকৃষ্ট রূপ
      15. ইসলামের সুবিচার
      16. ব্যক্তিস্বাধীনতা সীমা
      17. সম্পদ অর্জনের শর্তাবলী
      18. অর্জিত সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ
      19. সমাজসেবা
      20. যুলুম নির্মূল করা
      21. জনস্বার্থে জাতীয়করণের সীমা
      22. রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যয়ের শর্ত
      23. একটি প্রশ্ন
    5. দশম অধ্যায়ঃ শ্রম, বীমা ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ
      1. ১. শ্রম সমস্যা ও তা সমাধানের পথ
        1. বিকৃতির কারণ
        2. আসল প্রয়োজন
        3. সমস্যার সমাধান
        4. সংস্কারের মূলনীতি
      2. ২. বীমা
      3. ৩. মূল্য নিয়ন্ত্রণ
    6. একাদশ অধ্যায়ঃ অর্থনৈতিক আইনে পুনর্বিন্যাস ও তার মূলনীতি
      1. সংস্কারের পূর্বে চিন্তার প্রয়োজন
      2. ইসলামী আইনের পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন
      3. পুনর্বিন্যাসের জন্য অপরিহার্য শর্তাবলী
      4. প্রথম শর্ত
      5. দ্বিতীয় শর্ত
      6. তৃতীয় শর্ত
      7. চতুর্থ শর্ত
      8. কঠোরতা হ্রাসের সাধারণ নীতি
      9. সুদের ক্ষেত্রে কঠোরতা হ্রাসের কতিপয় অবস্থা

একাদশ অধ্যায়ঃ অর্থনৈতিক আইনে পুনর্বিন্যাস ও তার মূলনীতি

[‘সুদ’ গ্রন্থ থেকে গৃহীত।]
আমরা স্বীকার করি, যুগের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। দুনিয়ার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার বিরাট বিপ্লব সূটিত হয়েছে। এ বিপ্লব অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক লেনদেনের চেহারাই পালটে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইসলামের প্রাথমিক যুগে হেজায, ইরাক, সিরিয়া ও মিসরে তদানীন্তন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যে ইজতিহাদী আইন প্রণীত হয়েছিল মুসলমানদের বর্তমন প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে তা মোটেই যথেষ্ট নয়। ফকীহ্ তথা ইসলামী আইনবিদগণ সে যুগে শরীয়তের বিধানসমূহের বে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তা তাদের চারপাশের দুনিয়ার লেনদেনের অবস্থার সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। কিন্তু বর্তমান সেসব অবস্থার অনেকগুলোই বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আবার অনেক নতুন অবস্থারও সৃষ্টি হয়েছ, তখন যেগুলোর কোনো অস্তিত্বই ছিল না। এজন্য ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনীতি সম্পর্কিত যেসব আইন আমাদের ফিকাহর প্রাচীন গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছে বর্তমানে তার মধ্যে নিঃসন্দেহে অনেক কিছু পবির্তন ও পরিবর্ধন প্রয়োজন। কাজেই অর্থনৈতিক লেনদেন সম্পর্কিত ইসলামী বিধানের পুনর্বিন্যাস হওয়া উচিত- এ ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য নেই, বরং মতৈক্য আছে এ পুনর্বিন্যাসের ধরন সম্পর্কে।

সংস্কারের পূর্বে চিন্তার প্রয়োজন

আমাদের সংস্কারপন্থী চিন্তাবিদগণ যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন আমরা যদি তার অনুরসরণ করতে চাই এবং তাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী ইসলামী আইনের পুনর্বেন্যাসের কাজ শুরু হয়ে যায়, তাহলে এর ফলে আসলে ইসলামী শরীয়তের বিধানসমূহের পুনর্বিন্যাস হবে না; বরং তর বিকৃতি সাধনই হবে। অন্যকথায় বলা যায়, এর ফলে অর্থনৈতিক জীবনে আমরা ইসলাম থেকে মুরতান হয়ে যাবো। কারণ এরা যে পদ্ধতির দিকে আমাদেরকে এগিয়ে নিতে চাচ্ছেন উদ্দেশ্য, আদর্শ ও মূলনীতির দিক দিয়ে তা ইসলামী পদ্ধতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নিছক ধন উপার্জন। অন্যদিকে ইসলামী উদ্দেশ্য হচ্ছে হালাল খাদ্য আহরণ। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, বৈধ অবৈধ যে কোনো উপায়ে হোক না কেন মানুষকে লাখপতি ও কোটিপতি হতে হবে। কিন্তু ইসলামের লক্ষ্য হচ্ছে, মানুষ লাখ বা কোটি পতি নাইবা হলো, তার যাবতীয় উপার্জন বৈধ পদ্ধতিতে হতে হবে এবং এজন্য অন্যের অধিকার হরণ করাও চলবে না। যারা ধন উপার্জন করেছে, অর্থ উপার্জনের সর্বাধিক ইপকরণাদি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে এবং এসবের মাধ্যমে আরাম আয়েশ, শক্তি প্রতিপত্তি, সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হয়েছে তাদেরকেই তারা সফলকামমনে করে । তাদের এ সাফল্যের মূলে যতই স্বার্থপরতা, যুল্‌ম, অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা, মিথ্যা, প্রতারণা ও নির্লজ্জতা নিহিত থাক না কেন, এজন্য তারা নিজেদের স্বজাতির অধিকার যতই হরণ করুক না কেন এবং নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থের জন্য ‍দুনিয়ায় বিশৃংখলা, বিপর্যয় ও চারিত্রিক নৈরাজ্য সৃষ্টি করে মানবতা েবস্তুগত, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিক না কেন তাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সফলকাম হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে সততা, বিশ্বস্ততা ও সদুদ্দেশ্য সহকারে অন্যের অধিকার ও স্বার্থ পুরোপুরি সংরক্ষন করার সাথে সাধে ধন উপার্জনে প্রবৃত্ত হয়। এভাবে ধন উপার্জন করে যদি সে কোটিপতি হয়ে যায় তাহলে তা আল্লাহর দান হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু ধন উপার্জনের এ পথ অবলম্বন করে যদি তাকে সরা জীবন ‍দুমুঠো অন্নের উপরই নির্ভর করত হয়, তার পরিধানের জন্য তালি দেয়া পোশাক, বসবাসের জন্য একটি ভাঙ্গা কুড়েঘরই কেবল ভাগ্যে জোটে, তাহলেও ইসলামের দৃষ্টিতে সে ব্যর্থ নয়। দৃষ্টিভঙ্গির এ বিভিন্নতার কারণে তারা ইসলামের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী নির্ভেজাল পুঁজিবাদের পথে অগ্রসর হয়। এ পথে চলার জন্য তাদের যে ধরনের সুযোগ সুবিধা, অবকাশ ও বৈধতার প্রয়োজন ইসলামে তার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইসলামের নীতি ও বিধানসমূহকে টেনে হিঁচড়ে যতই লম্বা করা হোক না কেন, যে উদ্দেশ্যে এ নীতি ও বিধানসমূহ রচিত হয়নি তা পূর্ণ করার জন্য এ থেকে কোনো কর্মনীতি লাভ করা সম্ভব নয়। কাজেই যে ব্যক্তি এ পথে চলতে চায় তা নিজেক ও দুনিয়াকে প্রতারিত করার কোনো সঙ্গত কারণ থাকতে পারে না। তাকে ভালোভাবে একথা বুঝে নিতে হবে যে, পুঁজিবাদর পথে চলার জন্য তাকে ইসলামের পরিবর্তে কেবলমাত্র ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, মূলনীতি ও বিধান অনুসরণ করতে হবে।
তবে যারা মুসলমান হিসাবে পরিচিত এবঙ যারা এ পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়, যারা কুরআন রাসূলে করীম (সা)-এর পদ্ধতির উপর ঈমান রাখে এবং বাস্তব জীবনে এরই আনুগহত্য ও অনুসরণ করা অপরিহার্য মনে করে তাদের একটা নতুন বিধি-ব্যবস্থার প্রয়োজন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে যাতে তারা লাভবান হতে পারে অথবা ইসলামী আইনে তাদের জন্য এমন ধরনের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা যার ফলে তারা কোটিপতি ব্যবসায়ী, পুঁজিপতি বা কারখানা মালিক হতে পারে, এজন্য এ নতুন বিভি ব্যবস্থার প্রয়োজন নয় বরং আধুনিক যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা ও ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে নিজেদের কর্মপদ্ধতিকে ইসলামের সঠিক নীতির ভিত্তিতে ঢেলে সাজানো এবং লেনদেনের যে পদ্ধতি আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় নয়, তা থেকে নিজেকে বাঁচাবার জন্য এর প্রয়োজন। যেখানে অন্যান্য জাতির সাথে লেনদেন করার ক্ষেত্রে তারা যথার্থ অক্ষমতর সম্মুখীন হয় সেখানে ইসলামী শরীয়তের গন্ডীর মধ্যে এ জন্য যেসব ‘রুখসাতের’ অবকাশ আছে তা থেকে লাভবান হবার জন্য এর প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে অর্থনীতি সংক্রান্ত ইসলামী আইরে পুনর্বিন্যাস নিঃসন্দেহে অপরিহার্য। এ জাতীয় প্রয়োজন পূর্ণ কারার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো আলেম সমাজের কর্তব্য।

ইসলামী আইনের পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন

ইসলামী আইন কোনো স্থবির অনঢ় ও গতিহীন আইন নয়। একটি বিশেষ যুগ ও বিশেষ অবস্থার জন্য যে কাঠামোয় এ আইন রচিত হয়েছিল তা চিরকাল অপরিবর্তি থাকবে এবং স্থান, কাল ও অবস্থার পরিবর্তনের পরও সে কাঠামোয় কোনো প্রকার পরিবর্তন করা যাবে না, ইসলামী আইনের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য নয়। যারা একথা মনে করেন তারা ভ্রান্তির শিকার হয়েছেন। বরং আমি বলবো, তারা ইবলামী আইনের প্রাণসত্তা উপলব্ধি করতে অক্ষম। ইসলামে মূলত ‘হিকমাত’ ও ‘আদল’ অর্থাৎম প্রজ্ঞা, গভীর বিচারবুদ্ধি, ন্যায়-নিষ্ঠা ও ভাসাম্যের উপর শরীয়তের ভিত্তি স্থপন করা হয়েছে। আইনের প্রণয়নের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও লেনদেনকে এমনভাবে সংগঠিত করা যার ফলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে সহযোগিতা ও সহানুভূতিপূর্ণ কর্মধরার সৃষ্টি ও বিকাশ সাধিত হয়। তাদের পারস্পরিক দায়িত্ব ও অধিকার যথাযথ ইনসাফ ও ভারসাম্য সহকারে নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। সমাজ জীবনে প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজে ক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী উন্নতি করার পরিপূর্ণ সুযোগ দিতে হবে। এই সাথে সে যেনো অন্যের ব্যক্তিত্বের বিকাশে সহায়ক পথ উন্মুক্ত করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে, মানব প্রকৃতি ও দ্রব্যগুণ সম্পর্কিত যে জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারোর আয়ত্তাধীন নয় তারই ভিত্তিতে, আল্লাহ মানব জীবনে প্রতিটি বিভাগের জন্য কতিপয় নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল তাঁরই প্রদত্ত সে জ্ঞানের ভিত্তিতে এ নির্দেশগুলো বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত ও প্রতিষ্ঠিত করে আমাদের সামনে একটি আদর্শ পেশ করেছেন। এ নির্দেশগুলো একটি বিশেষ অবস্থায় ও বিশেষ যুগে প্রদত্ত হয়েছিল এবং একটি বিশেষ সমাজে এগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এতদসত্ত্বেও এগুলোর শব্দাবলী এবং এগুলেঅ কার্যকর করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন তা থেকে আইনের এমন কতিপয় ব্যাপক ও সর্বব্যাপী নীতি পাওয়া যায়, যা সর্বযুগে ও সর্বাবস্থায় ন্যায় ও ভারসাম্যপূর্ণ নীতির ভিত্তিতে মানব সমাজকে সংগঠিত করার জন্য সমভাবে কল্যাণকর ও কার্যকর। ইসলামের এ মূলনীতিগুলোই হচ্ছে স্থায়ী অপরিবর্তনীয় ও অসংশোধনযোগ্য। প্রত্যেক যুগের মুজতাহিদগণের দায়িত্ব হচ্ছে, বাস্তব জীবনের অবস্থা ও ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে শরীয়তের এ মূলনীতি থেকে বিধান বিনির্মাণ করতে থাকা এবঙ পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সেগুলোকে এমনভাবে প্রবর্তিত করা যায় ফলে শরীয়ত প্রণেতার আসল উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়। শরীয়তের মুলনীতি থেকে মানুষ যেসব আইন রচনা করেছে সেগুলো ঐ মূলনীতির ন্যায় অপরিবর্তনীয় নয়। কারণ মূলনীতির প্রণেতা হচ্ছেন আল্লাহ স্বয়ং আর এ আইনগুলো রচনা করেছে মানুষেরা সবাই মিলে। আবার ঐ মূলনীহিতিগুলো হচ্ছে সর্বকালের, সর্বযুগের ও সর্বাবস্থার জন্যে আর এ আইনগুলো হচ্ছে বিশেষ কালে ও বিশেষ অবস্থার জন্যে।

পুনর্বিন্যাসের জন্য অপরিহার্য শর্তাবলী

কাজেই অবস্থার পরিবর্তন ও ঘটনাবলীর বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে শরীয়তের মূলনীতির আওতাধীনে তার বিধানসমূহের মধ্যে পরিবর্তন সাধন করা এবং যখনই আবশ্যক তা দেখা দেবে সে অনুযায়ী আইন রচনা করার পূর্ণ অবকাশ ইসলামে আছে। এ ব্যাপারে প্রত্যেক যুগের প্রত্যেক দেশের মুজতাহিদগণকে স্থান কাল ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিধান রচনা ও জীবনক্ষেত্রের বিভিন্ন বিষয়াদি নির্ণয় করার পূর্ণ অধিকার দেয়া হয়েছে। কোনো বিশেষ যুগের আলেমগণকে কিয়ামত অবধি সকল যুগের ও সকল জাতির জন্য আইন প্রণয়নের চার্টার দান করে অন্য সবার অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে- এমনটি ধারণা করার কোনো অবকাশই ইসলঅম নেই। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি অনুযায়ী যে কোনো বিধান পরিবর্তন করা ও মূলনীতিগুলো ভেঙ্গে বা বিকৃত করে তার উল্টা পাল্টা ব্যাখ্যা দেয়া এবং আইনগুলোকে শরীয়ত প্রণেতার যথার্থ উদ্দেশ্যের বিপরীত দিকে ঠেলে দেয়ার এখতিয়া দেয়া হয়েছে। বস্তুত পক্ষে ইসলামী আইনের সংস্কার ও সংশোধনের জন্যেও কতিপয় শর্ত সম্বলিত একটি নীতি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

প্রথম শর্ত

খুঁটিনাটি আইন রচনার জন্য সর্বপ্রথম শরীয়তের অন্তর্নিহিত প্রকৃতকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। কুরআন মজীদের শিক্ষা ও নবী করীম (সা) এর সীরাত সম্পর্কে নিবিষ্ট চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমেই এ উপলব্ধি ও গভীর জ্ঞান অর্জিত হতে পারে। [এখানে এ আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, আজকের যুগে ইজতিহাদের দুয়ার বন্ধ হবার আসল কারণ হচ্ছে কুরআন ও রাসূল (স)-এর সীরাত অধ্যয়নের বিষয়সূচী আমাদের দ্বীনী শিক্ষা সিলেবাস থেকে বাদ পড়ে গেছে এবং ফিকাহর কোনো একটি মাযহাবের শিক্ষা সেই স্থানে জুড়ে বসেছে। এ শিক্ষাও এমনভাবে দেয়া হয় যার ফলে প্রথম থেকে আল্লাহ ও রাসূল (সা)-এর নির্দেশিত সুস্পষ্ট বিধান ও মুজতাহিদগণের ইজতিহাদের মধ্যে যথার্থ ছাত্রদের সামনে তুলে ধরা হয়না। অথচ কোনো ব্যক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতিতে কুরআনের গভীর জ্ঞান অর্জনে সক্ষম না হলে এবং রাসূলুল্লাহর (সা) কর্মপদ্ধতি ও কর্মনীতিকে গভীরভাবে অধ্যয়ন না করলে ইসলমে অন্তঃপ্রকৃতি ও ইসলামী আইনের মূলনীতি অনুধাবনে সক্ষম হতে পারে না। এটি ইজতিহাদের জন্য অপরিহার্য এবং সার্ জীবন ফিকাহর কিতাব পড়লেও এ বস্তুটি অর্জিত হতে পারে না।] এ দুটি বিষয়ের উপর যে ব্যক্তির দৃষ্টি ব্যাপক, প্রসারিত ও গভীর তর হবে সে হবে শরীয়তের প্রকৃত সচেতন ব্যক্তি। বিভিন্ন সময় তার গভীর জ্ঞান ও উপলব্ধি তাকে এ কথা জানিয়ে দেবে যে, বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্য থেকে কোন পদ্ধতিটি শরীয়তের প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যশীল এবং কোন্ পদ্ধতি অবলম্বন করলে তার প্রকৃতিতে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে। এ গভীর জ্ঞান সহকারে শরীয়তের বিধানের মধ্যে যে পরিবর্তন করা হবে তা কেবল সঙ্গত ও ভারসাম্যপূর্ণই হব না, বরং শরীয়ত প্রণেতার আসল উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য তাঁর নিজের নির্দেশের অনুরূপই হবে। এর দৃষ্টান্ত স্বরূপ বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করা যেতে পারে। যেমন, হযরত উমর (রা) এর নির্দেশ, যুদ্ধকালে কোনো মুসলমানের উপর শরীয়তের দন্ডবিধি জারী করা যাবে না এবং এ প্রসঙ্গে হযতর সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস কর্তৃক মদ্যপান করার জন্য আবু মেহজান সাকাফীকে ক্ষমা দেয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। হযরত ওমর (রা)-এর এ সিদ্ধান্তও উল্লেখযোগ্য যে, দুর্ভিক্ষের সময় কোনো চোরের হাত কাটা যাবে না। এ বিষয়গুলো আপাত দৃষ্টিতে শরীয়ত প্রণেতার সুস্পষ্ট বিধানের পরিপন্থী মনে হলেও শরীয়তের প্রকৃতি সচেতন ব্যক্তি মাত্রই জানেন যে, এসব বিশেষ অবস্থায় সাধারণ নির্দেশেল কার্যকারিতা মুলতবী রাখা শরীয়ত প্রণেতার েউদ্দেশ্যের যথার্থই অনুকূল। হ৮াতিব ইবনে আবী বালতাআর গোলামদের ঘটনাও এই একই শ্রেণীভুক্ত। মুযাইনা গোত্রের এক ব্যক্তি হযরত উমর (রা)-এর নিকট অভিযোগ করেন যে, হাতিবের গোলামরা তার উট চুরি করেছে। হযরত উমর (রা) প্রথমে তাদের হাত কাটার হুকুম দেন; কিন্তু পর মুহুর্তেই তিনি সচেতন হয়ে উঠেন এবং বলেন, তুমি ঐ গরীবদেরকে খাটিয়ে নিয়েছো। কিন্তু তাদের অনাহারে শুকয়ে মেরেছো এবং তাদেরকে এমন অবস্থায় পৌঁছিয়ে দিয়েছো যার ফলে তারা যদি কোনো হারাম বস্তু খেয়ে ফেলে তাও তাদের জন্য বৈধ হয়ে যাবে। একথা বলে তিনি ঐ গোলামদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং তাদের মালিকের নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে উটওয়ালাকে দান করেন। অনুরূপভাবে তিন তালাকের ব্যাপারেও হযরত উমর (রা) যে নির্দেশ দেন তাও রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুগের কার্যধারা থেকে ভিন্ন ছিল। কিন্তু যেহেতু শরীরয়েতের প্রকৃতি অনুধাবন করার পর শরীয়দের বিধানের মধ্যে এসব পরিবর্তন সাধন করা হয়েছিল, তাই এগুলোকে কেউ অসঙ্গত বলতে পারেন না। বিপরীতপক্ষে, এই উপলব্ধি ও গভীর জ্ঞান ছাড়াই যে পরিবর্তন করা হয় তা শরীয়তের প্রকৃতিতে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে এবং ফলে বিপর্যয় দেখা দেয়।

দ্বিতীয় শর্ত

শরীয়তের প্রকৃতি অনুধাবন করার পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, জীবনের যে বিভাগের আইন প্রণয়ের প্রয়োজন দেখা দেয় সে বিভাগ সম্পর্কিত শরীয়ত প্রণেতার যাবতীয বিধান দৃষ্টি সমক্ষে রাখতে হবে এবং সে সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে একথা জানতে হবে যে, শরীয়ত প্রণেতা অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা) এ বিভাগটিকে কিভাবে সংগঠিত করতে চান, ইসলামী জীবনের ব্যাপকতর পরিকল্পনায় এ বিশেষ বিভাগটির স্থঅন কোথায় এবং স্থানের প্রেক্ষিতে শরীয়ত প্রণেতা এ বিভাগে কি কার্যকর নীতি অবলম্বন করেছন, এ বিষয়টি অনুধাবন না করে যে আইন প্রণীত হতে অথবা পূর্ববর্তী আইনে যে পরিবর্তন পরিবর্ধন সাধন করা হবে তা শরীয়ত প্রণেতার উদ্দেশ্যের সাথে সংগতিশীল হবে না এবং এর ফলে আইনের গতিধারা কেন্দ্র থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে।
ইসলামী আইনে কোনো বিধানের বাইরের আবরণের ততটা গুরুত্ব নেই যতটা গুরুত্ব আছে তার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যের । ফকীহ ও ইসলামী আইনবিদের প্রধান কাজই হচ্ছে শরীয়ত প্রণেতার উদ্দেশ্য এবং তাঁর বিধানের অন্তর্নিহিত গভীর জ্ঞানের প্রতি দৃষ্টি রাখা, এমন অনেক বিশেষ ক্ষেত্র আছে যেখানে বিধানের বহিরাঙ্গকে (সাধারণ অবস্থাকে সামনে রেখে যা প্রণীত হয়েছিল) কার্যকর করতে গেলে তার আসল উদ্দেশ্যেই খতম হয়ে যায়। এহেন অবস্থায় বহিরাঙ্গকে বাদ দিয়ে এমনভাবে তাকে কার্যকর করতে হবে যাতে শরীয়ত প্রণেতার আসল উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়। কুরআন মজীদে সৎকর্মের আদেশ ও অসৎ কর্মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জোর তাকীদ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও তিনি যালেম ও নিপীড়ক শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জান্ডা বুলন্দ করতে নিষেধ করেছেন। কারণ শরীয়ত প্রণেতার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিপর্যয় ও বিশৃংখলাকে সংশোধন করা ও সুকৃতিতে বদলে দেয়া। যখন কোনো কাজে আরো অধিক বিপর্যয় ও বিশৃংখলা সৃষ্টি হবার আশংকা থাকে এবং সংশোধনের কোনো আশাই না থাকে তখন তা থেকে সরে আসাই উত্তম। ইমাম ইবনে তাইমিয়ার জীবনেতিহাসে দেখা যায়, তাতারী ফিতনার যুগে তিনি একটি স্থান অতিক্রম করার সময় দেখেন তাতারীদের একটি দল মদ্যপানে মত্ত। ইমামের সাথীরা তাদেরকে মদ্যপান থেকে বিরত রাখতে চাইলেন। কিন্তু ইমাম তাদেরকে বাধা দিয়ে বললেন, ফিতানা-ফাসাদ ও বিপর্যয় বিশৃংখলার পথ রোধ করার জন্য আল্লাহ মদ হারাম করেছেন; কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে মদ এ যালেমদেরকে একটি বড় ফিতনা অর্থাৎ নরহত্যা ও সম্পদ লুন্ঠন থেকে বিরত রেখেছে। কাজেই এ অবস্থায় তাদেরকে মদ্যপারে বিরত রাখার চেষ্টা করা শরীয়ত প্রণেতার উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। এ থেকে জানা যায়, অবস্থঞা ও ঘটনাবলীর বিশেষত্বের কারণে শরীয়তের বিধানের মধ্যে পরিবর্তন সাধন করা যেতে পারে। কিন্তু পরিবর্তন এমন হতে হবে যার ফলে শরীয়ত প্রণেতার আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ না হয়ে যেন তা সফল হয়।
অনুরূপভাবে কোনো কোনো বিধান বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে বিশেষ শব্দাবলীর মাধ্যমে দেয়া হয়েছিল। অবস্থার পরিবর্তন সত্ত্বেও ঐ বিশেষ শব্দাবলীর মধ্যে আটকে থাকা কোনো ফকীহর কাজ নয়। বরং তাঁকে ঐ শব্দগুলোর মধ্যে নিহিত শরীয়ত প্রণেতার আসল উদ্দেশ্য অনুধাবন করতে হবে এবং ঐ উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যথোপযোগী বিধান রচনা করতে হবে। যেমন সাদকায়ে ফিত্‌র হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সা) এক সা’ খেজুর বা এক সা’ যব অথবা এক সা’ কিসমিস দেয়ার হুকুম দিয়েছিলেন। এর অর্থ এ নয় যে, সেকালে মদীনায় যে সা’ এর প্রচলন ছিল এবং রাসূলুল্লাহ (সা) যে শস্যদ্রব্যগুলোর কথা বলেছেন হুবহু এগুলোই এখানে উদ্দেশ্য। শরীয়ত প্রণেতার আসল উদ্দেশ্য কেবল এতটুকু যে ঈদের দিন প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তিকে এতখানে সাদকা দিতে হবে যার ফলে তার একজন অভাবী ভাই কমপেক্ষে তার ঈদের সময়টা সানন্দে অতিবাহিত করতে পারে। শরীয়ত প্রণেতার নির্ধারিত পদ্ধতির নিকটবর্তী অন্য কোনো পদ্ধতিতেও এ উদ্দেশ্যটি পূর্ণ করা যেতে পারে।

তৃতীয় শর্ত

এই সাথে শরীয়ত প্রণেতার আইন প্রণয়ন নীতিও যথাযথভাবে অনুধাবন করতে হবে। এভাবে স্থান কালের চাহিদা অনুযায়ী বিধান প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে তাঁর নির্ধারিত নীতি ও পদ্ধতির অনুসরণ করা সম্ভবপর হবে। এটা ততোক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব নয় যতোক্ষণ না সামগ্রিকভাবে শরীয়তের কাঠামো এবং এককভাবে তার প্রত্যেকটি বিধানে বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করা হবে। শরীয়ত প্রণেতা কিভাবে বিধানসমূহের মধ্যে ভারসাম্য ও ন্যায়নীতি কায়েম করেছেন, কিভাবে তিনি মানব প্রকৃতির দুর্বলতার জন্য তাকে সুবিধা দান করেছেন, বিপর্যয় ও বিশৃংখলা রোধ করা এবং সুকৃতির পথ উন্মুক্ত করার জন্য তিনি কি পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন, কিভাবে তিনি মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও লেনদেনের সংগঠন এবং তাদের মধ্যে সুব্যবস্থা কায়েম করতে চান, কোন্‌ পদ্ধতিতে তিনি মানুষকে তার উন্নততর উদ্দেশ্যের দিকে নিয়ে যান এবং এই সাথে তার প্রাকৃতিক দুর্বলতাগুলো সামনে রেখে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা দান করে তার পথকে সহজতর করেন- এসব বিষয়ে যথেষ্ট চিন্তা গবেষণার প্রয়োজন দেখা দেয় এবং এজন্য কুরআনের আয়াতের শাব্দিক ও অর্থগত প্রতিপাদ্য এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কথা ও কর্মের গভীর তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। যে ব্যক্তি এ ধরনের বিদ্যাবত্তা ও গভীর তত্বজ্ঞানের অধিকারী হন তিনি স্থান-কাল অনুযায়ী শরীয়তের বিধানসমূহের মধ্যে আংশিক পরিবর্তনও করতে পারেন এবং যেসব বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট নির্দেশ নেই সেসব বিষয়ে নতুন বিধানও রচনা করতে পারেন। কারণ এহেন ব্যক্তি ইজতিহাদের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি অবলম্বন করবেন তা ইসলামের আইন প্রণয়ন নীতি থেকে বিচ্যুত হবে না। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, কুরআন মজীদে কেবল আহলে কিতাবদের নিকট থেকে জিযিয়া গ্রহণ করার নির্দেশ পাওয়া যায়। কিন্তু সাহাবাগণ ইজতিহাদের মাধ্যমে এ নির্দেশটিকে আজমের অগ্নিপূজারী, হিন্দুস্থানের পৌত্তলিক ও আফ্রিকার বারবার অধিবাসীদের মধ্যেও বিস্তৃত করেন। অনুরূপভাবে খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলে বিবিন্ন দেশ বিজিত হবার পর অন্যান্য জাতির সাথে এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটে যেগুলোর ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহয় কোনো সুস্পষ্ট বিধান ছিল না। সাহাবাগণ নিজেরাই সেসব ব্যাপারে আইন প্রণয়ন করেন। ইসলামী শরীয়তের প্রাণসত্তা ও তার মূলনীতির সাথে সেগুলো পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল ছিল।

চতুর্থ শর্ত

অবস্থা ও ঘটনাবলীর যে পরিবর্তন শরীয়তের বিধানের মধ্যে পরিবর্তন অথবা নতুন বিধান প্রণয়নের দাবি করে তাকে দুটো পর্যায়ে যাচাই করা প্রয়োজন। এক. ঐ ঘটনাগুলো কোন্ শ্রেণীভুক্ত, তাদের বৈশিষ্ট্য কি এবং তাদের মধ্যে কোন্ ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং প্রত্যেকটি পরিবর্তন শরীয়তের বিধানের মধ্যে কোন্ ধরনের পরিবর্তন প্রত্যাশী।
দৃষ্টান্ত হিসেবে আমাদের আলোচ্য সুদের বিষয়টি উল্ল্যে করা যায়। আধুনিক ইসলামী অর্থনৈতিক বিধান রচনার জন্যে আমাদেরকে সর্বপ্রথম বর্তামন অর্থনৈতিক জগতে পর্যালোচনা করতে হবে। গভীর অন্তর্দৃষ্টি সহকারে আমাদেরকে অধ্যয়ন করতে হবে অর্থনীতি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও লেনদেনের আধুনিক পদ্ধতিগুলো। অর্থনৈতিক জীবনের অভ্যন্তরে যেসব শক্তি কর্মতৎপর সেগুলো অনুধাবন করহে হবে। তাদের আদর্শ ও মূলনীতির সাথে পরিচিত হতে হবে এবং যেসব বাস্তব আকৃতির মধ্যে ঐসব আদর্শ ও মূলনীতিহর প্রকাশ ঘটবে সেগুলো সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। অতঃপর আমাদেরকে দেখতে হবে পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় ঐসব ব্যাপারে যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে তাদেরকে কোন্ কোন্ শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারে এবং প্রত্যেক শ্রেণীর উপর শরীয়তের প্রকৃতি, তার উদ্দেশ্যাবলী ও আইন প্রণয়ন নীতির সাথে সামঞ্জস্যশীল করে কোন ধরনের বিধান প্রচলিত হওয়া উচিত।
খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বাদ দিয়েও এই পরিবর্তনগুলোকে আমরা নীতিগতভাবে মোটামুটি দুটো শ্রেণীতে বিভক্ত করতে পারি।
এক: সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে যেসব পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। যে পরিবর্তনগুলো আসলে মানুষের তাত্বিক, বৃদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও অগ্রগতি, আল্লাহর গোপন ধনভান্ডারের ব্যাপক আবিষ্কপার, বস্তুগত উপকরণাদির উন্নতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি, উৎপাদন উপকরণের পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যাপক বিস্তৃতির স্বাভাবিক ফলশ্রুটি। ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে এ ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে স্বাভাবিক ও যথার্য়। এ পরিবর্তনের বিলুপ্তির সম্ভব নয় এবং বিলুপ্তি কাঙ্খিতও নয়। বরং এক্ষেত্রে প্রয়োজন শুধু এতটুকু যে, এ পরিবর্তনের প্রভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা ও বিষয়াবলী এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের যে নতুন নতুন চেহারা দেখা দিযেছে তাদের জন্য শরীয়তের মূলনীতিহর ভিত্তিতে নবতর বিধান রচনা করা। এভাবে পরিবর্তিত অবস্থায় মুসলমানরা যথার্থ ইসলামী পদ্ধতিতে নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।
দুই : এমন অনেক পরিবর্তন আছে যা আসলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির স্বাভাবিক ফল নয়, বরং বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থঅ ও আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত বিষয়াবলীতে যালেম পুঁজিপতিদের নিরঙ্কুষ আধিপত্যের ফলে উদ্ভূত। জাহেলী যুগে যে যুলম ভিত্তিক পুঁজিবাদের প্রসার ছিল [এখানে পুঁজিবাদ শব্দটিকে আমরা সীমি অর্থে ব্যবহার করিনি, যেমন আজকাল পারিভাষিক অর্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। বরং যথার্থ পুঁজিবাদের মধ্যেই যে ব্যাপক অর্থ লুকিয়ে রয়েছে সে অর্থে আমরা একে ব্যবহার করেছি। পারিভাষিক পুঁবিজাদ ইউরোপের শিল্প বিপ্লব থেকে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আসলে পুঁজিবাদ একটি অতি প্রাচীন বস্তু। যখন থেকে মানুষ নিজের সমাজ-সভ্যতা সংস্কৃতির নেতৃত্ব শয়তানের হাতে তুলে দিয়েছে তখন থেকেই এই পুঁজিবাদ বিভিন্ন আকারে প্রতিপত্তি বিস্তার করে আসছে।]এবং শত শত বছর ধরে ইসলাম যাকে মাথা তুলতে দেয়নি তাই আজ পুনর্বার অর্থনৈতিক জগতের উপরে প্রতিপত্তি বিস্তার করেছে, সভ্যতা ও সংস্ককৃতির উন্নততর উপকরণাদির সহায়তায় নিজের পুরাতন মতাদর্শকে নতুন আদলে অর্থনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিয়েছে। পুঁজিবাদের এ প্রতিপত্তির কারণে যেসব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে, সেগুলো আসল ও স্বাভাবিক পরিবর্তন নয় বরং সেগুলো হচ্ছে কৃত্রিম পরিবর্তন। শক্তি প্রয়োগ করে সেগুলোকে খতম করা যেতে পারে এবং মানবজাতির কল্যাণার্থে সেগুলো খতম করা একান্ত অপরিহার্য। সেগুলোকে খতম করা যেতে পারে এবং মানবজাতির কল্যাণার্থে সেগুলো খতম করা একান্ত অপরিহার্য। সেগুলো নিশ্চিহ্ন করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা এবং ইসলামী নীতির ভিত্তিতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করা মুসলমানের প্রধান কর্তব্য। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার দায়িত্ব একজন কমিউনিষ্টের তুলনায় মুসলমানের উপর অধিক পরিমাণে বর্তায়। কমিউনিষ্টের সম্মুখে আছে নিছক রুটির প্রশ্ন। কিন্তু মুসলমানের নিকট প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে দীন-জীবন বিধান ও নৈতিকতার; কমিউনিষ্ট নিছক প্রলেতারিয়েতের জন্য সংগ্রাম করে। কমিউনিষ্টের সংগ্রামের ভিত্তি হচ্ছে স্বার্থ-চিন্তা। আর মুসলামনের সংগ্রাম হয় আল্লাহর জন্যে। কাজেই আধুনিক যুল্ম ভিত্তিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সাথে সাথে মুসলমান কোনোদিন আপোষ করতে পারে না। ইসলামের পূর্ণ অনুসারী প্রকৃত ও যথার্থ মুসলমান এই যুল্মপূর্ণ ব্যবস্থা নিশ্চিহ্ন করার জন্য হামেশা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং এ প্রচেষ্ঠা ও সংগ্রামে সম্ভাব্য সকল প্রকার ক্ষতির পুরুষোচিত মোকাবিলা করবে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব। অর্থনৈতিক জীবনের এ বিভাগে ইসলাম যে আইন প্রণয়ন করবে তার উদ্দেশ্য মুসলমানের জন্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া নয়। তার বিভিন্ন সংস্থায় অংশগ্রহণ করা ও তার সাফল্যের উপকরণাদি সংগ্রহের ক্ষেত্র সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে দেয়া নয়, বরং তার একমাত্র উদ্দেশ্য হবে যুল্মভি্ত্তিক ও অবৈধ পুঁজিবাদের পরিপোষণকারী দুর্গন্ধময় আবর্জনা থেকে মুসলমান তথা বিশ্ব মানবতাকে সংরক্ষিত রাখা।

কঠোরতা হ্রাসের সাধারণ নীতি

অবস্থা ও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে শরীয়তের বিভিন্ন বিধানের কঠোরতাকে নরম করার যথেষ্ট অবকাশ ইসলামী আইনে রাখা হয়েছে। এজন্য ফিকাহর একটি অন্যতম নীতি হচ্ছে। (আরবী********) এবং (আরবী**********)
(অর্থাৎ ‘প্রয়োজন অনেক অবৈধ বস্তুতে বৈধ বানিয়ে দেয়’ এবং ‘যেখানে শরীয়তের কোনো নির্দেশ কার্যক করা কঠিন হয় সেখানে কঠোরতা হ্রাস করা হয়’।) কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন স্থানে শরীয়তের এই নীতির প্রতি ইংগিত করা হয়েছে।
(আরবী**********)
আল্লাহ কাউকে তার শক্তি সামর্থ্যের বেশী কষ্ট দেন না। [ আল বাকারা: ২৮৬] (আরবী**************)
আল্লাহ তোমাদের কাজকে সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না। [আল বাকারা : ১৮৫] (আরবী**************)
তিনি তোমাদের উপর দীনের ব্যাপারে কোনো কড়াকড়ি করেননি। -আল-হাজ্জ: ৭৮
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে: (আরবী**************)
‘সাদাসিধে ও নরম দীনেই হচ্ছে আল্লহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়; ইসলামে কোনো ক্ষতি ও ক্ষতিকারক নেই।’
কাজেই ইসলামের এ নীতি স্বীকৃতি লাভ করেছে যে শরীয়তের বিধানে কোথাও কষ্ট ও ক্ষতি দেখা গেলে সেখানে বিধানটি নরম ও সহজ করে দিতে হবে। এর অর্থ প্রত্যেকটি কল্পিত প্রয়োহজনে শরীয়তের বিধান ও খোদার নির্দেশিকা সীমানাকে শিকেয় তুলে রাখা নয়, শরীয়তের কঠোরতা হ্রাসের নীতি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে সহজেই বুঝা যায় যে, এজন্য কতিপয় নীতি-নিয়ম রয়েছে।
এক: দেখতে হবে কষ্টটি কোন্ পর্যায়ের। প্রতিটি সাধারণ কষ্টের জন্যে শরীয়ত আরোপিত দায়িত্ব খতম করা যেতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে আর কোনো আইন বাকী থাকবে না। শীতে অযু করার কষ্ট, গরমে রোযা রাখার কষ্ট, সফরে হজ্জ ও জিহাদ করার কষ্ট। এ সমস্ত কষ্ট নিঃসন্দেহে কষ্টের শ্রেণীভুক্ত। কিন্তু এগুলো এমন কোনো কষ্ট নয় যার জন্যে শরীয়ত আরোপিত দায়িত্ব গুলো খত করে দিতে হবে। আইনের কঠোরতা হ্রাস বা আইনটি প্রয়োগ রহিত হবার জন্যে অন্ত কষ্টটি ক্ষতিকারক পর্যায়ের হতে হবে। যেমন সফরে অনিবার্য সংকট, রোগের কষ্টকর অবস্থা, কোনো যালেমের নির্যাতন ও নিষ্টেষণ, চরম অভাব-অনটন, কোনো অস্বাভাবিক বিপদ, সাধারণ বিপর্যয় অথবা কোনো শারীরিক ত্রুটি। এ ধরনের বিশেষ অবস্থায় শরীয়ত তার বহুতর বিধানের কঠোরতা হ্রাস করেছে এবং এবং এগুলোর উপর অন্যান্য কঠোরতা হ্রাসের বিষয়গুলোও কিয়াস করা যেতে পারে।
দুই : কষ্ট ও অক্ষমতা যে পর্যয়ভুক্ত হয় কঠোরতা হ্রাসও ঐ একই পর্যয়ভুক্ত হতে হবে। যেমন, যে ব্যক্তি রুগ্নাবসথায় বসে নামায পড়তে পারে তার জন্য শুয়ে শুয়ে নামায পড়া জায়েয নয়। যে রোগের কারণে রমযানের দশটি রোযা কাযা করা যথেষ্ট তার জন্য সারা রমজান মাস রোযা না রেখে খেয়ে দেয়ে কাটিয়ে দেয়া নাজায়েয। এক ঢোক মদ্যপান বা এক-দুই লোকমা হারাম খেয়ে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হলে এই যথার্থ প্রয়োজনের চেয়ে বেশী পান বা আহার করার অধিকর নেই। অনুরূপভাবে শরীরের গুপ্ত অংশের মধ্য থেকে যতটুকু ডাক্তারের নিকট উন্মুক্ত করা একান্ত অপরিহার্য তাকে তার অধিকার উন্মুক্ত করার অধিকার কোনো ব্যক্তির নেই। এ নীতির ভিত্তিতে কষ্ট ও প্রয়োজনের পরিমাণ অনুযায়ী সকল প্রকার কঠোরতা হ্রাসের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
তিন: কোনো ক্ষতিকারক বস্তু বা বিষয় দূর করার জন্যে এমন কোনো উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে না যা সব পরিমাণ বা অধিক ক্ষতিকারক। বরং এক্ষেত্রে কেবল এমনসব উপায় অবলম্বনের অনুমতি দেয়া যেতে পারে যেগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম। এর কাছাকাঠি আর একটা নীতি হচ্ছে এই যে, কোনো বিপর্যয় সৃষ্টিকারী বিষয় থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য তাকে তার চেয়ে বড় একটি বিপর্যয় সৃষ্টিকারী বিষয়ে জড়িয়ে পড়া জায়েয নয়। তবে দুটো বিপর্যয় সৃষ্টিকারী বিষয়ের মুখোমুখি হয়ে যখন কোনো একটির সাথে জড়িয়ে পড়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে, এক্ষেত্রে বড় বিপর্যয় সৃষ্টিকারী বিষয়টিকে খতম করার জন্যে ছোট বিপর্য় সৃষ্টিকারী বিষয়টি গ্রহণ করা জায়েয।
চার: সৎকাজ করার চেয়ে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজ নির্মূল করে দেয়া অগ্রাধিকার লাভ করে। শরীয়তের দৃষ্টিতে সৎকাজের নীতি মেনে চলা এবং ফরয ও ওয়াজিব কাজসূহ সম্পাদন করার তুলনায় অসৎ বৃত্তিসমূহ দূর করা এবং হারাম থেকে আত্মরাক্ষা করা ও বিপর্যয় বিশৃংখলা দূর করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য কষ্টের সময় শরীয়ত যে পরিমাণ ঔদার্য সহকারে ফরযগেোর কঠোতা হ্রাস করে অনুরূপ ঔদার্য সহকারে নিষিদ্ধ কাজগুলোর অনুমতি দেয় না। সফর ও পীড়িত অবস্থায় নামায, রোযা ও অন্যান্য ওয়াজিব কাজ সমূহের কঠোরতা যে পরিমাণ হ্রাস করা হয়েছে, নাপডাক ও হারাম বস্তুগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনুরূপ কঠোরতা হ্রাস করা হয়নি।
কষ্ট ও ক্ষতির আপনোদনের সাথে সাথেই কঠোরতা হ্রাসের নীতিও রহিত হয়ে যায়। যেমন, রোগ নিাময়ের পর তায়াম্মুমের অনুমতি খতম হয়ে যায়।

সুদের ক্ষেত্রে কঠোরতা হ্রাসের কতিপয় অবস্থা

উপরে বর্ণিত নীতিগুলো সামনে রেখে চিন্তা করুন, বর্তমান অবস্থায় সুদের ব্যাপারে শরীয়তের বিধানসমূহের মধ্যে কি পরিমাণ কঠোরতা হ্রাস করা যেতে পারে।
এক: সুদ দেয় ও সুদ নেয়া দুটো একই ধরনের অবস্থা বা কাজ নয়। অনেক সময় মানুষ সুদী ঋণ নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু সুদ খেতে বাধ্য হওয়ার কোনো যথার্থ কারণ থাকতে পারে না। ধনী ব্যক্তিই সুদ নিয়ে থাকে, অথচ সে এমন কি অক্ষমতার সম্মূখীন হয় যার ফলে তার জন্য হারাম হালালে পরিণত হয়?
দুই : সুদীঋণ নেয়ার জন্য প্রত্যেকটি প্রয়োজনকেই অক্ষমতার আওতাভুক্ত করা যায় না। বিয়ে-শাদী ও সুখ-দুঃখের অনুষ্ঠানে অযথা অর্থ ব্যয় করা কোনো যথার্থ প্রয়োজনের তাকীদ নয়। গাড়ী কেনা বা পাকা বাড় তৈরী করা কোনো যথার্থ অক্ষমতার অবস্থা সৃষ্টি করে না। বিলাসদ্রব্য সংগ্রহ করা বা ব্যবসায়িক উন্নতির জন্য অর্থ সংগ্রহ করা কোনো প্রয়োজনীয় কাজ নয়। এসব কাজ এবং এ ধনের আরো বিভিন্ন কাজকে ‘প্রয়োজন’ ও ‘অক্ষমতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এসব কাজের জন্যে পুঁজিপতিদের নিকট থেকে হাজার হজার লাখো লাখো টাকা ঋণ নেয়া হয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে এ প্রয়োজন ও অক্ষমতাগুলোর কানাকড়িও গুরুত্ব নেই এবং এসব উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্যে যারা সুদ দেয় তারা মারাত্মক গুনাহগার। যে ধরনের অক্ষমতায় হারামও হালালে পরিণত হয়, একমাত্র সে ধরনের অক্ষমতার ক্ষেত্রে শরীয়ত সুদী ঋণ নেয়ার অনুমতি দিতে পারে। অর্থাৎ এমন কোনো কঠিন বিপদ, যেক্ষত্রে সুদীঋণ নেয়া ছাড়া নেই। যেমন প্রাণ ও মান-সম্মান বিপদের সম্মুখীন হওয়া অথবা কোনো অসহনীয় কষ্ট বা ক্ষতির যথার্থ আশংকা দেখা দেয়া। এ অবস্থায় একজন অক্ষম ও নাচার মুসলমানের জন্য সুদীঋণ নেয়া জায়েয বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু এ অবস্থায় যেসব সচ্ছল ও সামর্থবান মুসলমান তাদের এক ভাইযের এহেন বিপদের দিন সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি এবং এর ফলে সে একটি হারাম কাজ করতে বাধ্য হয়েছে, তারা সবাই গুনাহগার হবে। বরং আমি বলবো, এক্ষেত্রে সমগ্র মুসলমান সমাজই গুনাহগার হবে। কারণ এ সমাজ যাকাত, সাদাকা ও আওকাফের সম্পত্তির যথার্থ সংগঠন করার ক্ষেত্রে অবহেলা ও গাফলতি দেখিয়েছে, যার ফলে তার সদস্যর্গ অসহায় হয়ে পড়েছে এবং নিজেদের প্রয়োজনের ক্ষেত্রে পুঁজিপতিদের কাছে হাতপাতা ছাড়া তাদে গত্যন্তর থাকেনি।
তিন : চরম অপারগ অবস্থায় কেবল প্রয়োজন অনযায়ী সুদীঋণ নেয়া যেতে পারে এবং তাও সামর্থ্য ও সক্ষমতা ফিরে আসার সাথে সাথেই প্রথম সুযোগেই তা পরিশোধ করে দিতে হবে। কারণ প্রয়োজন পূর্ণ হয়ে সক্ষমতা ফিরে আসার পর এক পয়সা সুদ আদায় করাও হারাম। কারণ প্রয়োজন পূর্ণ হয়ে সক্ষমতা ফিরে আসার পর এক পয়সা সুদ আদায় করাও হারাম। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রয়োজন অপরিহার্য কিনা তা আর অপরিহার্য হলে তা কোন্ পর্যায়ভুক্ত এবং কখন সক্ষমতা ফিরে এসেছে-এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দায়িত্ব অক্ষতা অবস্থায় নিপতিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বুদ্ধি-জ্ঞান ও দীনী অনুভূতির উপর ছেড়ে দেয়া হবে। সে যতোবেশী দীনদার ও খোদাভীরু হবে এবং তার ঈমান যতোবেশী শক্তিশালী হবে ততোবেশী সে এ ব্যাপারে সতর্ক ও সংযমী হবে।
চার : যারা ব্যবসায়িক অক্ষমতা বা নিজের সম্পদ সংরক্ষণ অথবা বর্তমান জাতীয় নৈরাজ্যের কারণে নিজের ভবিষ্যত নিশ্চিন্ততা ও নিশ্চয়তার জন্যে ব্যাংকে অর্থ জমা রাখে বা ইনস্যুরেন্স কোম্পানীতে বীমা করায় অথবা কোনো নিয়মের আওতাধীনে প্রভিডেন্ট ফান্ডে অংশগ্রহণ করে, তাদের অবশ্যি কেবলমাত্র নিজের আসল পুঁজি বা মূলধনকেই নিজের সম্পদ মনে করতে হবে এবং এ মূলধন থেকে বছরে শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত দিতে হবে। কারণ এভাবে যাকাত না দিলে সঞ্চিত অর্থ তাদের জন্যে অপবিত্র হয়ে যাবে; তবে এজন্য শর্ত হচ্ছে, তাদের খোদাপরস্ত হতে হবে, অর্থ-পূজারী হলে চলবে না।
পাঁচ : ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স কোম্পানী বা প্রভিডেন্ড ফান্ড থেকে তাদের খাতে যে সুদ জমা হয় তা পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেয়া জায়েয নয়। কারণ এগুলো ঐ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের হাতকে আরো শক্তিশালী করবে। এজন্য এক্ষেত্রে সঠিক পথ হচ্ছে, যেসব দারিদ্রপীড়িত ও অনশনক্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুরবস্থা তাদের জন্যে হারাম খাওয়া জায়েয করে দিয়েছে, সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থগুলো তাদের মধ্যে বন্টন করা উচিত। [আমার এ প্রস্তাবটি যথার্থতা বিচারের আর একটি মাপকাঠি হচ্ছে এই যে, মূলত সুদ আসে গরীবদের পকেট থেকে। সরকারী ট্রেজারী, ব্যাংক বা ইনস্যুরেন্স কোম্পানী সবখানেই সুদের মূল উৎস হচ্ছে গরীবের পকেট।]
ছয় : অর্থনৈতিক লেনদেন ও ব্যবসাযের ক্ষেত্রে যেসব মুনাফা সুদের আওতভুক্ত হয় অথবা যেগুলোর সুদ হারাম ব্যাপার সন্দেহ থাকে, সেগুলোকে যথাসাধ্য এড়িয়ে চলা সম্ভব না হলে এক্ষেত্রে আমাদের পাঁচ নম্বরে বর্ণিত পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। এসব ব্যাপারে একজন ঈমানদার মুসলমানের দৃষ্টি থাকতে হবে মুনাফা অর্জনের পরিবর্তে ক্ষতি ও বিপর্যয় দূরীকরণের প্রতি যদি সে আল্লাহকে ভয় করে ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাহলে ব্যবসায়ে উন্নতি ও আর্থিক মুনাফা অর্জনের চেয়ে হারাম থেকে দূরে থাকা ও আল্লাহর নিকট জবাবদিহি থেকে নিষ্কৃতি লাভের চিন্তাই তার নিকট অধিকতর প্রিয় হওয়া উচিত।
কেবলমাত্র ব্যক্তির জন্যে এ কঠোরতা হ্রাসের অবকাশ রয়েছে। তবে এ নিয়ম জন্যেও প্রযোজ্য হতে পারে, যদি সমগ্র জাতি অন্যের অধীনতা শৃংখলে আবদ্ধ থাকার দরুন নিজের স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থঅ গড়ে তোলার ক্ষমতা না রাখে। কিন্তু কোনো স্বাধীন-স্বতন্ত্র মুসলমান গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা জাতি, নিজের সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা যার করতলগত, সে সুদের ব্যাপারে নিজের জন্যে এ কঠোরতা হ্রাসের দাবি করতে পারে না, যতোক্ষণ না একথঅ প্রমাণ হয়ে যায় যে, সুদ ছাড়া অর্থনীতি, ব্যাংকিং, ব্যবসা, শিল্প কোনো কিছুই চলতে পারে না এবং এর কোনো বিকল্পও নেই। তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যদি একথার ভ্রান্তি প্রমাণিত হয়ে থাকে এবং বাস্তবে একটি সদবিহীন অর্থ-ব্যবস্থা সাফল্যের সাথে রচনা ও পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে থাকে, তাহলে এরপরও পশ্চিমা পুঁজিবাদের নিকট ঘনিষ্ঠ আত্মনিবেদন এবং তকে কার্যকর করার জন্যে নিজেদের সকল শক্তি সামর্থ্য বয় করতে থাকা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা ছাড়া আর কিছুই নয়।

— সমাপ্ত —

Page 12 of 12
Prev1...1112

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক

@BJI Dhaka City South