জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

ইসলামী অর্থনীতি

অন্তর্গতঃ অর্থনীতি, উচ্চতর অধ্যয়ন
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. আমাদের কথা
  2. গ্রন্থকারের কথা
  3. ভূমিকা
  4. সবকথার গোড়ার কথা
  5. প্রথম খণ্ডঃ ইসলামের অর্থনৈতিক দর্শন
    1. প্রথম অধ্যায়ঃ মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা ও তার সমাধান
      1. খণ্ডিত বিষয়পূজার বিপর্যয়
      2. অর্থনৈতিক সমস্যা আসলে কি?
      3. অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আসল কারণ
      4. প্রবৃত্তিপূজা এবং বিলাসিতা
      5. বস্তু পূজা
      6. প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক [Antagoinstic Compitiion] অর্থব্যবস্থা
      7. আরো কতিপয় ব্যবস্থা
      8. সমাজতন্ত্রের প্রস্তাবিত সমাধান
      9. নতুন শ্রেণী
      10. নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা
      11. ব্যক্তিত্বের বলি
      12. ফ্যাসিবাদের সমাধান
      13. ইসলামের সমাধান
      14. ইসলামের মূলনীতি
      15. সম্পদ উপার্জন নীতি
      16. ইসলামের স্বত্বাধিকার নীতি
      17. ১. ইসলামে ব্যায়নীতি
      18. ২. অর্থপূজার মূলোচ্ছেদ
      19. ৩. সম্পদ বন্টন ও জননিরাপত্তা
      20. ভাববার বিষয়
    2. দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ কুরআনের অর্থনৈতিক নির্দেশনা
      1. ১. মৌলিক তত্ত্ব
      2. ২. বৈধ অবৈধের সীমা নির্ধারণের অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহর
      3. ৩. আল্লাহ-নির্ধারিত সীমার ভেতরে ব্যক্তিমালিকানার স্বীকৃতি
      4. ৪. অর্থনৈতিক সাম্যের অস্বাভাবিক ধারণা
      5. ৫. বৈরাগ্যনীতির পরিবর্তে মধ্যপন্থা এবং বিধিনিষেধ
      6. ৬. অর্থসম্পদ উপার্জনে হারাম হালাল বিবেচনা করা
      7. ৭. অর্থসম্পদ উপার্জনের অবৈধ পন্থা
      8. ৮. কার্পণ্য ও পুঞ্জিভূত করার উপর নিষেধাজ্ঞা
      9. ৯. অর্থপূজা ও লোভ লালসার নিন্দা
      10. ১০. অপব্যয়ের নিন্দা
      11. ১১. অর্থ ব্যয়ের সঠিক খাত
      12. ১২. আর্থিক কাফফারা
      13. ১৩. দান কবুল হবার আবশ্যিক শর্তাবলী
      14. ১৪. আল্লাহর পথে অর্থব্যয়ের বাস্তব গুরুত্ব
      15. ১৫. আবশ্যিক যাকাত ও তার ব্যাখ্যা
      16. ১৬. মালে গনীমতের এক পঞ্চমাংশ
      17. ১৭. যাকাত ব্যয়ের খাত
      18. ১৮. উত্তরাধিকার আইন
      19. ১৯. অসীয়তের বিধান
      20. ২০. অজ্ঞ ও নির্বোধের স্বার্থ সংরক্ষণ
      21. ২১. জাতীয় মালিকানায় সমাজের স্বার্থ সংরক্ষণ
      22. ২২. করারোপের ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি
      23. ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
      24. গ্রন্থসূত্র
    3. তৃতীয় অধ্যায়ঃ ইসলামী অর্থব্যবস্থা ও পুঁজিবাদের মধ্যে পার্থক্য
      1. এক: উপার্জনে বৈধ অবৈধের পার্থক্য
      2. দুই: ধন সঞ্চয়ের নিষেধাজ্ঞা
      3. তিন : অর্থ ব্যয় করার নির্দেশ
      4. চার: যাকাত
      5. পাঁচ: মীরাসী আইন
      6. ছয়: গনীমতলব্ধ ও সম্পদ ও বিজিত সম্পত্তি বন্টন
      7. সাত: মিতব্যয়িতার নির্দেশ
    4. চতুর্থ অধ্যায়ঃ ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূলনীতি ও লক্ষ্য
      1. ইসলামী অর্থব্যবস্থার ধরন
      2. ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মৌল উদ্দেশ্য
        1. ক. ব্যক্তিস্বাধীনতা সংরক্ষণ
        2. খ. নৈতিক ও বৈষয়িক উন্নতির সাঞ্জস্য
        3. গ. সহযোগিতা, সামঞ্জস্য ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা
      3. ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূলনীতি
        1. ক. ব্যক্তিমালিকানা ও তার সীমারেখা
        2. খ. সমবন্টন নয়, ইনসাফপূর্ণ বন্টন
        3. গ. ব্যক্তির সম্পদে সমাজের অধিকার
        4. ঘ. যাকাত
        5. ঙ. উত্তরাধিকার আইন
      4. শ্রম, পুঁজি ও সংগঠনের মর্যাদা
      5. যাকাত ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন
      6. সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা
      7. অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার সম্পর্ক
    5. পঞ্চম অধ্যায়ঃ কুরআনের আলোকে অর্থনৈতিক জীবনের কতিপয় মৌলিক নীতিমালা
      1. ১. ইসলামী সমাজের তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য
      2. ২. নৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির ইসলামী পদ্ধতি
      3. ৩. জীবিকার ধারণা এবং ব্যয়ের দৃষ্টিভংগি
      4. ৪. ব্যয়ের মূলনীতি
      5. ৫. মিতব্যয়ের মূলনীতি
      6. ৬. অর্থনৈতিক সুবিচর
  6. দ্বিতীয় খন্ডঃ ইসলামী অর্থব্যবস্থার কতিপয় দিক
    1. ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ ভূমির মালিকানা
      1. ১. কুরআন এবং ব্যক্তিমালিকানা
      2. ২. রাসূল (সা) ও খেলাফতে রাশেদার যুগের দৃষ্টান্ত
        1. প্রথম প্রকারে ভূমির মালিকানা বিধান
        2. দ্বিতীয় প্রকারের ভূমির মালিকানা বিধান
        3. তৃতীয় প্রকারের ভূমির মালিকানা বিধান
        4. চতুর্থ প্রকারের ভূমির মালিকানার বিধান
        5. চাষাবাদের ভিত্তিতে মালিকানার অধিকার
        6. সরকার কর্তৃক দানকৃত জমি
        7. ভূমি দান করার শরয়ী বিধান
        8. জমিদারীর শরয়ী নীতি
        9. মালিকানা অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
      3. ৩. ইসলাম ব্যবস্থা এবং একক মালিকানা
      4. ৪. কৃষি জমির সীমা নির্ধারণ
      5. ৫. বর্গাচাষ পদ্ধতি এবং ইসলামের সুবিচার নীতি
      6. ৬. অধিকারভূক্ত সম্পদ ব্যয়ের সীমা
    2. সপ্তম অধ্যায়ঃ সুদ
      1. ১. সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান
        1. রিবার অর্থ
        2. জাহেলী যুগের রিবা
        3. ব্যবসা ও রিবার মধ্যে নীতিগত পার্থক্য
        4. রিবা হারাম হবার কারণ
        5. সুদ হারামের ব্যাপারে কঠোর নীতি
      2. ২. সুদের প্রয়োজন : একটি বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যালোচনা
        1. সুদ কি যুক্তিসম্মত
          1. ক. ঝুঁকি ও ত্যাগের বিনিময়
          2. খ. সহযোগিতর বিনিময়
          3. গ. লাভে অংশীদারিত্ব
          4. ঘ. সময়ের বিনিময়
        2. সুদের হারের যৌক্তিকতা
        3. সুদের এ হর নির্ধারণের ভিত্তি
        4. সুদের অর্থনৈতিক ‘লাভ ও তার প্রয়োজন’
        5. সুদ কি যথার্থ প্রয়োজনীয় ও উপকারী?
      3.  ৩. সুদের বিপর্যয়
      4. ৪. সুদমুক্ত অর্থনীতি বিনির্মাণ
        1. কয়েকটি বিভ্রান্তি
        2. সংস্কারের পথে প্রথম পদক্ষেপ
        3. সুদ রহিত করার সুফল
        4. সুদবিহীন অর্থব্যবস্থায় ঋণ সংগ্রহের উপায়
        5. ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ
        6. বাণিজ্যিক প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ
        7. সরকারের অলাভজনক প্রয়োজনের ক্ষেত্রে
        8. আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে ‍ঋণ গ্রহণ
        9. লাভজনক কাজে পুঁজি বিনিয়োগ
        10. ব্যাংকিং এর ইসলামী পদ্ধতি
      5. ৫. অমুসলিম দেশ থেকে অর্থনৈতিক ও শিল্পঋণ গ্রহণ
    3. অষ্টম অধ্যায়ঃ যাকাতের তাৎপর্য এবং গুরুত্ব
      1. ১. যাকাতের তাৎপর্য এবং গুরুত্ব
        1. যাকাতের অর্থ
        2. যাকাত নবীগণের সুন্নত
      2. ২. সামাজিক জীবনে যাকাতের স্থান
      3. ৩. যাকাত দানের নির্দেশ
      4. ৪. যাকাত ব্যয়ের খাত
      5. ৫. যাকাতের মৌলিক বিধান
      6. ৬. যাকাতের নিসাব ও হার কি পরিবর্তন করা যেতে পারে?
      7. ৭. কোম্পানীর শেয়ারে যাকাত
      8. ৮. শ্রম ও অর্থের অংশীদারী অবস্থায় যাকাত
      9. ৯. খনিজ সম্পদে যাকাতের নিসাব
      10. ১০. যাকাত ও ট্যাক্সের মধ্যে পার্থক্য
      11. ১১. যাকাতের পরও কি আয়কর আরোপ করা বৈধ?
    4. নবম অধ্যায়ঃ ইসলাম ও সামাজিক সুবিচার
      1. হকের বেশে বাতিল
      2. পয়লা প্রতারণা : পুঁজিবাদ এবং ধর্মহীন গণতন্ত্র
      3. দ্বিতীয় প্রতারণা : সামাজিক সুবিচার ও সমাজতন্ত্র
      4. শিক্ষিত মুসলমানদের চরম মানসিক গোলামী
      5. সামাজিক সুবিচারের অর্থ
      6. সামাজিক সুবিচার কেবল ইসলামেই রয়েছে
      7. সুবিচারই ইসলামের লক্ষ্য
      8. সামাজিক সুবিচার
      9. ব্যক্তিত্বের বিকাশ
      10. ব্যক্তিগত জবাবদিহি
      11. ব্যক্তিস্বাধীনতা
      12. সামাজিক সংস্থা ও তার কর্তৃত্ব
      13. পুঁজিবাদ ও সমাজিতন্ত্রের ত্রুটি
      14. সমাজতন্ত্র সামাজিক নিপীড়নের এক নিকৃষ্ট রূপ
      15. ইসলামের সুবিচার
      16. ব্যক্তিস্বাধীনতা সীমা
      17. সম্পদ অর্জনের শর্তাবলী
      18. অর্জিত সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ
      19. সমাজসেবা
      20. যুলুম নির্মূল করা
      21. জনস্বার্থে জাতীয়করণের সীমা
      22. রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যয়ের শর্ত
      23. একটি প্রশ্ন
    5. দশম অধ্যায়ঃ শ্রম, বীমা ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ
      1. ১. শ্রম সমস্যা ও তা সমাধানের পথ
        1. বিকৃতির কারণ
        2. আসল প্রয়োজন
        3. সমস্যার সমাধান
        4. সংস্কারের মূলনীতি
      2. ২. বীমা
      3. ৩. মূল্য নিয়ন্ত্রণ
    6. একাদশ অধ্যায়ঃ অর্থনৈতিক আইনে পুনর্বিন্যাস ও তার মূলনীতি
      1. সংস্কারের পূর্বে চিন্তার প্রয়োজন
      2. ইসলামী আইনের পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন
      3. পুনর্বিন্যাসের জন্য অপরিহার্য শর্তাবলী
      4. প্রথম শর্ত
      5. দ্বিতীয় শর্ত
      6. তৃতীয় শর্ত
      7. চতুর্থ শর্ত
      8. কঠোরতা হ্রাসের সাধারণ নীতি
      9. সুদের ক্ষেত্রে কঠোরতা হ্রাসের কতিপয় অবস্থা

দশম অধ্যায়ঃ শ্রম, বীমা ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ

১. শ্রম সমস্যা ও তা সমাধানের পথ

[এ অংশটি শ্রদ্ধেয় গ্রন্থাকারের সেই বক্তৃতার অংশ, যা তিনি ১৯৫৭ সালের ১৩ মে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান লেবার ওয়েলফেয়ার কমিটির কনভেনশনে প্রদান করেছিলেন। (সংকলক)]
বর্তমানে শিল্প শ্রমিক (INDUSTRIAL LABOURERS) এবং কৃষক সমাজ যেসব জটিলতা ও সমস্যায় নিমজ্জিত, তার মূলকারণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিকৃতি। আর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিকৃতির জন্যে দায়ী হলো সেই অধপতিত সমাজ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যার একটি অংশ মাত্র। যতোদিন গোটা জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তন না হবে এবং তার ফলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও কল্যাণমুখী হবে না, ততোদিন শ্রমজীবী মানুষের এসব সমস্যা এবং জটিলতাও সম্পূর্ণরূপে বিদূরিত হতে পারে না।

বিকৃতির কারণ

বর্তমানে আমাদের দেশে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু রয়েছে, তা কবেল ইংরেজ শাসনের স্মারকই নয়, বরঞ্চ ইংরেজ শাসনের পূর্ব থেকেই এ ব্যবস্থায় ঘূণে ধরেছিল। শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভী (র) এর রচনাবলী থেকে জানা যায়, তখনো লোকেরা অর্থনৈতিক শোষনের বিরুদ্ধে চিত্কার করতো, তখনো লোকেরা অর্থনৈতিক শোষণের কবলে নিষ্পেষিত হতো। ইংরেজরা এসে সে সময়কার অন্যায় ও বিকৃতির সাথে আরো অসংখ্য অন্যায় এবং বিকৃতি যোগ করে দিলো, তারা পূর্বের তুলনায় আরো নিকৃষ্টতর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চাপিয়ে দিলো।
ইংরেজ আমলে অন্যায় আর বিকৃতি বৃদ্ধি পাবার একটি কারণ হলো এই যে, তারা ছিলো নিরেট বস্তুবাদী সভ্যতার পতাকাবাহী। দ্বিতীয়ত, সে সময়টা ছিলো পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উত্থানকাল। পুঁজিদাররা ছিলো সম্পূর্ণ স্বাধীন, নিয়ন্ত্রণমূক্ত। তৃতীয় কারণটি হলো, ইংরেজরা তো এসেছিল সম্রাজ্যবাদী স্বার্থ হাসিলের জন্যে। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো এদেশের লোকদের সহায় লুটপাট ও শোষণ করে তাদের নিজ জাতির স্বার্থ হাসিল করা। এই তিনিটি কারণের সমন্বয়ে তাদের চাপিয়ে দেয়া ব্যবস্থা পরিণত হয় যুলুম শোষনের হাতিয়ার।
পরবর্তীকালে আমরা তাদের গোলামী থেকে মুক্তি পেয়েছি বটে, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, তাদের চলে যাবার পরও তাদের রেখে যাওয়া ব্যবস্থায় কোনো প্রকার পরিবর্তন সাধিত হয়নি। এর কারণ হলো, এই রাজনৈতিক বিপ্লব তো কোনো প্রকার নৈতিক ও আদর্শিক চিন্তু চেতনাজাত চেষ্টা সংগ্রামের ফলে সাধিত হয়নি। বরঞ্চ এ ছিলো একটি কৃত্রিম বিপ্লব। এ বিপ্লব সাধিত হয় কেবল একটি রাজনৈতিক টানা হেঁচড়ার ফলশ্রুতিতে। স্বাধীনতা লাভের একদিন আগেও কারো কাছে ভবিষ্যতের কোনো পরিকল্পনা ছিলোনা। কোনো একটি জীবন ব্যবস্থার সুস্পষ্ট রূপ কাঠামো বর্তমান ছিলোনা। জাতির সামনে এমন পরিকল্পনা ছিলোনা, যা বাস্তবায়নের জন্যে তারা অগ্রসর হতে পারতো।
স্বাধীনতা লাভের পর থেকে আজ পর্যন্ত দেশের কোনো একটি অন্যায়, অপরাধ ও বিকৃতি কমেনি। বরং দিনদিন বেড়েই চলছে। ইংরেজরা পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং বস্তুবাদের বুনিয়াদের উপর যে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলো, আজো তাইহুবহু প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এর পরিবর্তন করা তো দূরের কথা, বরং সেটার গোড়াতেই পানি ঢালা হচ্ছে। সেই ব্যবস্থাকে রক্ষা করার জন্যে যেসব আইন তৈরী করা হয়েছিল, দেশ স্বাধীন হবার পর তাতে কিছুমাত্র পরিবর্তন পরিমার্জনের প্রয়োজন পর্যন্ত অনুভব করা হয়নি। ইংরেজরা তাদের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে মজবুত করার জন্যে যেসব আইন কানুন ও নিয়মনীতি তৈরী করেছিল, সেগুলো এখনো সেভাবেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। দেশ চালাবার সেই নীতিই কার্যকর রয়েছে, এমনকি তাদের প্রদত্ত শিক্ষা ব্যবস্থাই আজও চালু রয়েছে।
আমাদের স্বাধীনতা যদি নৈতিক ও আদর্শিক চেষ্টা সংগ্রামের স্বাভাবিক ফলশ্রুতিতে লাভ করা হতো, তাহলে পয়লা দিন থেকেই আমাদের সামনে একটি পরিবল্পনা থাকতো, যা দেশে বাস্তবায়ন করা হতো। এই পরিকল্পনা অনেক আগেই তৈরী করে রাখা হতো এবং স্বাধীনতা লাভের পর একটি দিনও নষ্ট না করে আমরা পরিকল্পিত পথে চলতে শুরু করতাম। কিন্তু তা হয়নি। তাই আজ আমাদের গোলামী যুগের অন্যায়, অনাচার কমার পরিবর্তে বেড়েই চলেছে, বরং ইংরেজ আমলের অন্যায় অনাচারের সাথে এখন আমাদের স্বাধীন দেশে আরো হাজারো অন্যায় অনাচারের সংযোজন করা হয়েছে এবং সেগুলোকে দুধকলা খাইয়ে তরিক্কি দেয়া হচ্ছে।

আসল প্রয়োজন

এখন আমাদের আসল প্রয়োজন হলো, সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তন। যতোক্ষণ পর্যন্ত একাজ করা না হবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত কোনো অসুবিধা, কোনো অভিযোগ এবং কোনো বিকৃতি পরোপুরি দূর হওয়া অসম্ভব। যাবতীয় বিকৃতির আসল দাওয়াই হলো, গোটা জীবন ব্যবস্থাকে তার আদর্শিক ও নৈতিক ভিত্তিমূল সহ পাল্টে দেয়া এবং তাকে অন্য এমন একটি নৈতিক ও আদর্শিক ভিত্তিমূলের উপর প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া, যা হবে সামাজিক সুবিচারের (SOCIAL JUSTICE) গ্যারান্টি। জীবন ব্যবস্থার এরূপ পরিবর্তন হলে সুবিচার এমনিতেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। আর তখন শ্রমজীবী মানুষের যাবতীয় সমস্যা অভিযোগ অনায়াসে দূরীভূত হয়ে যাবে।
আমাদের মতে সত্যিকারভাবে সামাজিক সুবিচারের গ্যারান্টি দিতে পারে এমন জীবন ব্যবস্থার মূলনীতি কেবল ইসলামই সরবরাহ করতে পারে। আর সেই জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যেই আমরা আমাদের সমস্ত চেষ্টা তত্পরতা নিয়োগ করেছি।আজকাল বহুলোক ইসলামী ইনসাফের বিভিন্ন রকম ধারনা পেশ করছে। তাদের কারো ইসলামী ইনসাফের ব্যাখ্যা এক রকম, আবার অপর কারো মতে আরেক রকম। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হলো, ইসলামী সুবিচারের আসল ধারণা এবং রূপ কাঠামো ইসলামের আসল উত্স কুরআন এবং সুন্নাহতেই বর্তমান রয়েছে। এই সুবিচারের সেই ব্যাখ্যাই কেবল গ্রহনযোগ্য যার স্বপক্ষে কুরআন সুন্নাহর দলীল প্রমান বর্তমান পাওয়া যাবে। আর মুসলিম উম্মাহর জনগণই ফয়সালা করবে যে, কোন ব্যাখ্যাটি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য আর কোনটি গ্রহনযোগ্য নয়। সুতরাং ব্যাখ্যার বিভিন্নতা দেখে পেরেশান হবার কোনো কারণ নেই। কুরআন সুন্নাহর আদর্শিক ভিত্তি ও মূলনীতির উপর যে গণতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থাই প্রতিষ্ঠিত হবে, ইনশাল্লাহ তা সুবিচারের গ্যারান্টি দেবে।

সমস্যার সমাধান

কিন্তু যতোদিন জীবন ব্যবস্থার এই আমূল ও সর্বাংগীন পরিবর্তন না হবে, ততোদিন যতোটা সম্ভব সুবিচার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা আমাদের চালিয়ে যেতে হবে, শ্রমজীবী জনগণের দু:খ কষ্ট দূর করার জন্যে যা কিছু করা সম্ভব, তা করতে হবে এবং এ ব্যপারে কোনো প্রকার অবহেলা করা যাবে না। শ্রমজীবী জনগণের সমস্যাকে পুঁজি করে তাদেরকে ইসলাম ছাড়া অন্য মতবাদ প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না।
এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে শেষোক্তটি কিছুটা ব্যাখ্যার দাবি রাখে। পৃথিবীতে বিভিন্ন মানুষের মানসিকতা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন এক ব্যক্তি রোগ যন্ত্রনায় মাটিতে পড়ে ছটফট ও আর্তনাদ করছে। আরেক ব্যক্তি তার এই অবস্থা দেখে ভাবলো, এই লোকটির কাছে যা কিছু আছে, তা লুটে নেয়া, তার রোগ যন্ত্রনার সুযোগে আমার স্বার্থ হাসিল করা এবং তা বিপদকে আমার স্বার্থোদ্ধারের কাজে ব্যবহার করার এইতো মহাসুযোগ।অপর এক ব্যক্তি লোকটির অবস্থা দেখে ভাবলো যতোক্ষণ তার পূর্ণ চিকিত্সার ব্যবস্থা না হবে, ততোক্ষণ আমাকে তার জন্যে ফর্স্ট এইডের ব্যবস্থা করতে হবে এবং যতোটা সম্ভব তার যন্ত্রনা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। শ্রমজীবী শ্রেণীর ব্যাপারে বর্তমানে এই উভয় ধরনের মানসিকতা কাজ করছে। শ্রমজীবী মানুষ বর্তমানে কঠিন সমস্যার বেড়াজালে আবদ্ধ। আধুনিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা তাদেরকে সীমাহীন কষ্ট এবং সমস্যায় নিমজ্জিত করে রেখেছে। একদল মানুষ তাদের এ সমস্যাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়। তাদের আসল উদ্দেশ্য এদের সমস্যা ও অভিযোগ দূর করা নয়; বরঞ্চ এদের সমস্যা আরো বৃদ্ধি করা এবং এদেরকে আরো অধিক দু:খ কষ্টে নিমজ্জিত করা। এদের কোনো সমস্যা দূর করা সম্ভব হলেও তারা দূর না করে বরং দু:খ কষ্ট আরোও বৃদ্ধি করে, এবং এদেরকে উচ্ছৃংখলতার দিকে ঠেলে দিয়ে আইন শৃংখলার বিধি বন্ধন চূরমান করে দিয়ে এদেরকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করাই তাদের উদ্দেশ্য।
সমাজতান্ত্রীরা যে রাষ্ট্রেব্যবস্থাকে শ্রমিকদের স্বর্গ বলে প্রচার করে বেড়াচ্ছে, প্রকৃতিপক্ষে তা হলো শ্রমিকদের জাহান্নাম। একথা সূর্যালোকের মতো সত্য যে, শ্রমিকদের আসল দুর্ভাগ্য শুরু হবে সেদিন থেকে, যেদিন খোদা না করুন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। শ্রমিকরা আজো অবর্ননীয় দুরবস্থায় আছেন একথা ঠিক, কিন্তু সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে তারা যে অবস্থায় নিমজ্জিত হবেন, তা কল্পনা করতেও শরীর শিউরে উঠে। আজ তো আপনারা আপনাদের দাবি দাওয়া পেশ করতে পারছেন। দাবি মানা না হলে ধর্মঘট করতে পারছেন। সভা সমাবেশ এবং মিছিল মিটিং করতে পারছেন। সকলের কানে আপনাদের আওয়াজ পৌছে দিতে পারছেন। প্রয়োজনে এক জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় কর্মসংস্থানের চেষ্টা করতে পারছেন। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক স্বর্গরাজ্যে এসব কিছুর দরজাই সম্পুর্ন বন্ধ থাকবে। কারন সে রাজ্যে সকল কলকারখানা, জমি, সংবাদ মাধ্যম, সংবাদপত্র, যাবতীয় জীবন সামগ্রী এবং মত প্রকাশের সমগ্র উপকরণ থাকবে কেবল সেই শক্তির হাতে যার করায়ত্তে থাকবে পুলিশ, ইআইডি, সেনাবাহিনী, আইন আদালত এবং কারাগার। সে রাজ্যে শ্রমিকরা যতো কষ্ট আর যাতনাই ভোগ করুক না কেন, টু শব্দটিও করতে পারবেনা। সভা সমাবেশ, মিছিল, ধর্মঘট ইত্যাদির তো প্রশ্নই উঠেনা।
তাদের এই সমাজতান্ত্রিক স্বর্গরাজ্যে ভাগ্য পরীক্ষার জন্যে একাধিক দুয়ার খোলা থাকবে না। সারাদেশে জমিদার একজনই হবে। সকল চাষীকে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তারই জমিতে চাষাবাদ করতে হবে। সারাদেশে কলকাখানার মালিক একজনই হবে। তার ওখানে শ্রম দেয়া ছাড়া শ্রমিকদের জন্যে শ্রম দেয়ার দ্বিতীয় কোনো জায়গা থাকবেনা। পারিশ্রমিক সে যা দেবে শ্রমিককে তা-ই গ্রহণ করতে হব, তাতে তার সংসার চলুক বা না চলুক তাতে মালিকের কিছু যাবে আসবেনা। সেই স্বর্গরাজ্যে প্রতিষ্ঠার জন্যেই সমাজতন্ত্রীরা শ্রমজীবী শ্রেণীর মানুষকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এ উদ্দেশ্যেই তারা গরীব শ্রেণীর মানুষের সমস্যাকে পুঁজি হিসেবে লুফে নেয়, যাতে তাদের সমস্যার কোনো সমাধান না হয়। এভাবে তারা এদের উস্কিয়ে এবং উত্তেজিত করে পরিবেশ পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটানোর জন্যে এদেরকে ব্যবহার করতে চায়।
তারা কৃষক শ্রমিকদের এই বলে প্রতারিত করে যে, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে জমিদার এবং পুঁজিদারদের হাত থেকে সমস্ত জমি এবং কারখানা ছিনিয়ে এনে শ্রমিকদের মালিকানায় অর্পন করা হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঘটনা হবে এর উল্টো। জমি এবং কারখানা ছিনিয়ে নিয়ে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের হাতে অর্পণ করা হবে। রাষ্ট্রই হবে সমস্ত জমি ও কারখানার মালিক। কৃষক শ্রমিকদের বাধ্য হয়ে রাষ্ট্রের অনুগত কৃষক এবং শ্রমিকে পরিণত হয়ে থাকতে হবে। সমাজতন্ত্রীরা সারা বিশ্বে শ্রমিকদের জন্যে ধর্মঘটের অধিকার দাবি করে বেড়াচ্ছে, কিন্তু বিশ্বের যেখানেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শ্রমিকদের এমন কোনো অভিযোগ আপত্তিই থাকবে না, যার ফলে ধর্মঘট করার প্রয়োজন পাড়বে। অথচ এটি একটি সম্পূর্ণ অসম্ভব কথা। যেখানে কোটি কোটি মানুষ গুটিকয়েকজ শাসক ব্যক্তির অধীনে কাজ করবে, সেখানে কর্মচারীদের কখনো অভিযোগ সৃষ্টি হবে না, তা কিছুতেই সম্ভব হতে পারে না। প্রশ্ন হলো, তাদের মধ্যে যদি কোনো অভিযোগ সৃষ্টি হয় তাহলে তা পেশ করার জন্যে তারা কি কোন সংস্থা সমিতি গঠন করতে পারবে? তারা কি কোনো স্বাধীন সংগঠন তৈরী করতে পারবে যার মঞ্চে দাঁড়িয়ে তারা নিজেদের দাবি উত্থাপন করতে পারবে? তারা কি কোনো স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম পাবে, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের দু:খ কষ্টের কথা প্রকাশ করতে পারবে? অভিযোগ উচ্চারণের সংগে সংগেই তো তারা কারা-প্রকোষ্ঠ নিক্ষিপ্ত হতে বাধ্য হবে।
এসব কারণে আমরা মনে করি কৃষক এবং শ্রমিকদের সাথে পুঁজিপতি, জমিদার এবং কারখানা মালিকরা আজ যে যুলুম করছে, তার চেয়েও কঠিনতর যুলুম করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সমাজতন্ত্রিরা- সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সাধনের অগ্নি প্রজ্জলিত করে।

সংস্কারের মূলনীতি

পক্ষান্তরে আমরা চাই, সামাজিক সুবিচারপূর্ণ ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে; আর তার পূর্বে যতোটা সম্ভব শ্রমজীবী মানুষের দু:খ কষ্ট দূর করতে। আমরা কোনো প্রকার রাজনৈতিক এজিটেশনের জন্যে তাদেরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবো না আর অপর কাউকেও ব্যবহার করতে দেবোনা।
আমরা শ্রেণীসংঘাত সমর্থন করিনা। আমরা বরং শ্রেণীচেতনা এবং শ্রেণীগত শ্রেষ্ঠত্ব মিটিয়ে দিতে চাই। কোনো সমাজ মূলত ভ্রান্ত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার কারণেই বিভিন্ন শ্রেণী সৃষ্টি হয়। নৈতিক অধ:পতন তাদের মধ্যে শ্রেণীচেতনা জাগ্রত করে তোলে। আর যুলুম শোষণ অন্যায় অবিচার তাদের মধ্যে জাগিয়ে তোলে শ্রেনীসংঘাত।
আমরা সমাজকে এক দেহের বিভিন্ন অংগের মতো মনে করি। একটি দেহের বিভিন্ন অংগ প্রত্যংগ থাকে এবং প্রতিটি অংগেরই অবস্থান এবং কর্মক্রিয়া পৃথক পৃথক হয়ে থাকে, কিন্তু পায়ের সাথে হাতের, হৃদপিন্ডের সাথে মস্তকের কোনো সংঘাত হয় না। বরং দেহ এভাবেই জীবিত থাকে যে, তার প্রতিটি অংগ নিজ নিজ অবস্থানে থেকে স্বীয় কর্ম ও দায়িত্ব সম্পাদনের মাধ্যমে অপরাপর অংগের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করে। আমরা চাই ঠিক অনুরূপভাবেই মানব সমাজের প্রতিটি অংগ (সদস্য) নিজ নিজ অবস্থানে থেকে স্বীয় যোগ্যতা, দক্ষতা ও জন্মগত শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী কার্য সম্পাদন ও দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অপরাপর অংগের সাথী, বন্ধু ও সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করবে এবং তাদের মাঝে শ্রেণীসংঘাত তো দূরের কথা শ্রেণীচেতনা পর্যন্ত জাগ্রত হবে না।
আমরা চাই, শ্রমদাতা এবং শ্রমগ্রহীতা প্রত্যেকে নিজের অধিকারের এগে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবগত ও সচেতন হবে এবং তা যথার্থভাবে সম্পাদনের চিন্তা করবে। মানুষের মধ্যে যতো বেশী দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ বৃদ্ধি পাবে, ততোই সংঘাত দূর হতে থাকবে এবং সমস্যার জন্ম হবে খুবই কম।
আমরা মানুষের মধ্যে নীতিবোধ এবং নৈতিক চেতনা জাগ্রত করতে চাই। আমরা নৈতিক মানুষ-কে সেই যালিম পশুর থাবা থেকে মুক্ত করতে চাই, যে মানুষের উপর চেপে বসে আছে। মানুষের ভেতরের এই নৈতিক মানুষ যদি তার উপর জেঁকে বসা পশুত্ব থেকে মুক্ত হয়ে সঠিকভাবে কাজ করতে আরম্ভ করে, তবে অন্যায় আর বিকৃতির উত্সই শুকিয়ে যাবে।
আমাদের মতে সংস্কারপন্থীদেরকে একই সাথে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারের কাজও করে যেতে হবে আর সেইসাথে শ্রমগ্রহীতা এবং শ্রমদাতা উভয়কেই সঠিক পথ দেখাতে হবে।
শ্রমগ্রহীতাদের বলতে চাই, আপনারা নিজেদের কল্যান চান এবং নিজেদের ধ্বংস ও ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত করতে না চান, তাবে অধিক অধিক অর্থোপার্জনের ধান্দায় অন্ধ হয়ে যাবেন না। হারাম খাবেন না। অবৈধ পথে অর্থোপার্জন ত্যাগ করুন। অবৈধ পথে মুনাফা করা পরিত্যাগ করুন। আপনারা যাদের শ্রম গ্রহণ করছেন, তাদের বৈধ অধিকার উপলব্ধি করুন এবং তা যথাযথভাবে প্রদান করুন। দেশের উন্নাতির যাবতীয় সুবিধা কেবল নিজেরাই কব্জা করে নেবেন না। বরঞ্চ তা জাতির সাধারণ মানুষের হাতেও পৌছুতে দিন, যাদের সামষ্টিক চেষ্টা সাধনা এবং সামষ্টিক উপায় উপকরণের সাহায্যে এ উন্নাতি সাধিত হচ্ছে তাদেরকে ন্যায্যা অংশ দান করুন। কেবল পুঁজি দিয়েই সম্পদ অর্জিত হয় না বরঞ্চ সেইসাথে যোগী ব্যবস্থাপনা, দক্ষ কর্মী ও কারিগর এবং শ্রম অপরিহার্য। এসবগুলোর সমন্বয়েই মুনাফা অর্জিত হয়। আর সেই মুনাফারই অপর নাম হলো অর্থসম্পদ। এই অর্থসম্পদ অর্জনের ব্যাপারে রাষ্ট্র নামক গোটা সমাজ ব্যবস্থাই সাহায্যকারী হয়ে থাকে। এসব মুনাফা যদি সুবিচারের সাথে সকল উত্পাদক মন্ডলীর মাঝে বন্টন করা হয় এবং ইসলাম নিষিদ্ধ যাবতীয় পন্থা পদ্ধতি যদি পরিহার করা হয়, তবে এসব ধ্বংসাত্মক আন্দোলন সৃষ্টি হবার কোনো অবকাশই সৃষ্টি হবে না, যা শেষ পর্যন্ত আপনাদেরই ধ্বংসের কারণ হয়।
শ্রমজীবীদের বলতে চাই, সুবিচারের দৃষ্টিতে আপনাদের বৈধ অধিকার কি তা আপনারা বুঝতে চেষ্টা করুন। সেই সম্পদের উপর বিনিয়োগকারীদের, ব্যবস্থাপনা ও বাণিজ্যিক দক্ষতা বিনিয়োগকারীদের এবং কারিগরি দক্ষতা প্রয়োগকারীদের বৈধ অংশ কতটুকু, যা তাদের ও আপনাদের শ্রমের সংমিশ্রনের ফলে অর্জিত হয়, সেটা বুঝাবার চেষ্টা করুন। আপনারা আপনাদের অধিকারের জন্যে যে আন্দোলনই করুন না কেন, তা যেনো অবশ্যি ন্যায় ও সুবিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। আপনারা কখনো নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে এমন অবাস্তব ও অতিশয় চিন্তা করবেন না, যা শ্রেণীসংগ্রামের প্রবক্তরা, আপনাদেরকে তাদের সংঘাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্যে আপনাদের সামনে পেশ করছে। নিজেদের বৈধ অধিকারের জন্যে আপনারা সে চেষ্টা সংগ্রামই করুন না কেন, তা যেনো অবশ্যি বৈধ উপায়ে এবং বৈধ পন্থায় পরিচালিত হয়। আপনারা যদি তাই করেন, তাহলে প্রত্যেক সত্যপন্থী ব্যক্তির কর্তব্য হবে আপনাদের সহযোগীতা করা।
দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আমরা যেসব সংস্কার কাজ করতে চাই এখন আমি সেগুলো পেশ করছি।
১। সুদ, প্রতিজ্ঞাপত্র, জুয়া ইত্যাদি হারাম ঘোষিত পন্থা পদ্ধতিকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। মানুষের জন্যে কেবল বৈধ উপার্জনের দুয়ারই খোলা রাখতে হবে। তাছাড়া অবৈধ পথে অর্থ ব্যয় করার পথও বন্ধ করে দিতে হবে। কেবল এভাবেই পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার শিকড় কেটে দেয়া সম্ভব। আর সেই স্বাধীন ব্যবস্থাও কেবল এভাবেই টিকে থাকতে পারে যা গণতন্ত্রের জন্য অপরিহর্য
২। এযাবত অবৈধ ও হারাম পথে এবং ভ্রান্ত ব্যবস্থার কারণে সম্পদের যে অবিচারমূলক সঞ্চয় গড়ে উঠেছে তা অপনোদন করার জন্যে ইসলামী নীতিমালার ভিত্তিতে সেইসব লোকদের কঠোর মুহাসাবা করতে হবে, যাদের কাছে অস্বাভাবিক অর্থসম্পদ পুঞ্জিভূত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বরং সেইসাথে হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ তাদের থেকে ফেরতও নিতে হবে।
৩। দীর্ঘকাল কৃষি জমির মালিকানার ব্যাপারে ভ্রান্ত ব্যবস্থা চালু থাকার কারনে যেসব অসম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো দূরীভূত করবার জন্যে ইসলামী শরীয়ার : “অস্বাভাবিক অবস্থার সংস্কারের এমন অস্বাভাবিক পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে যা ইসলামী নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক হবে না“- এ নীতির ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। এই নিয়মের ভিত্তিতে :
ক. এমন সকল নতুন পুরাতন জমিদারী সম্পূর্ণরূপ খতম করে দিতে হবে, যা কোনো শাসনামলে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছিল। কেননা শরয়ী দিক থেকে সেগুলোর মালিকানাই বিশুদ্ধ নয়।
খ. পুরাতন মালিকানার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত (যেমন একশ‘ কিংবা দুইম একর) মালিকানা সীমাবদ্ধ করে দিতে হবে। এর অধিক মালিকানা সুবিচারমূলক দামে ক্রয় করে নিতে হবে। এই সীমা নির্ধারনের কাজ কেবল সাময়িকভাবে পুরাতন অসমতা দূর করার জন্যে করা যেতে পারে, একে কোনো আইন এবং অন্যান্য এবং শরয়ী আইনের সাথে সাংঘর্ষিক।
গ. সরকারী মালাকানাধীন হোক, কিংবা উপরোল্লেখিত উভয় পন্থায় অর্জিত হোক অথবা নতুন বিরাজের মাধ্যমে চাসাবাদের উপযোগী হোক- সমস্ত জমি ভূমিহীন চাষী কিংবা স্বল্প জমির মালিকদের কাছে সহজ কিস্তিতে বিক্রয় করে দেয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী এলাকার অধিবাসীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকার ঘেঁষা লোক কিংবা সরকারী কর্মকর্তার কাছে জমি সস্তায় বিক্রয় করে দেয়া কিংবা দান করে দেয়ার রীতি বন্ধ করে দিতে হবে, আর যাদেরকে এভাবে জমি প্রদান করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে সে জমি ফেরত নিতে হবে। এছাড়া নিলামে বিক্রির পদ্ধীতও পরিত্যাগ করতে হবে।
ঘ. চাষাবাদের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে ইসলামী আইন প্রয়োগ ও অনুসরণ করতে হবে। অনৈসলামী সকল পন্থা প্রক্রিয়া আইনগতভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। এগুলো এজন্যে করতে হবে। যেনো কোনো জমিদারী যুলুমে পরিণত হতে না পারে।
৪। পারিশ্রমিকের বেলায় বর্তমানে তাদের বেতন ক্ষেত্রে এক এবং একশতের তফাত বিরাজ করছে, এ ব্যবধান অবিলম্বে এক এবং বিশের মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। অতপর পর্যায়ক্রমে তা এক এবং দশের মধ্যে নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া, শ্রমিকদের পারিশ্রমিক এমন পর্যায়ে নির্ধারণ করতে হবে, যা সমকালীন মূল্যমানের হিসেবে একটি পরিবারের মৌলিক প্রয়োজন মেটাবার জন্যে অপরিহার্য।
৫। স্বল্প বেতনভোগী কর্মচারীদেরকে বাসা, চিকিত্সা এবং সন্তান সন্ততির শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
৬। সব ধরণের শিল্প কারখানার শ্রমিকদেরকে নির্ধারিত ন্যূনতম বেতন প্রদান ছাড়াও নগদ বোনাস দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া বোনাস শেয়ারের মাধ্যমে তাদেরকে শিল্প কারখানার অংশীদার বানিয়ে নিতে হবে। যাতে সংশ্লিষ্ট শিল্পের উন্নয়নের ব্যাপারে তাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং তাদের শ্রম যুক্ত হয়ে যে মুনাফা অর্জিত হবে তাতে তারা অংশীদার হয়।
৭। বর্তমান শ্রম আইন পরিবর্তন করে এমন একটি সুবিচারপূর্ণ আইন প্রণয়ন করতে হবে, যা পুঁজি এবং শ্রমের সংঘাতকে সহযোগিতায় পরিণত করে দেবে; শ্রমজীবী সম্প্রদায়কে তাদের বৈধ অধিকার ফিরিয়ে দেবে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা ও সহযোগিতার ইনসাফপূর্ণ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করবে।
৮। রাষ্ট্রিয় আইন এবং ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক নীতিমালা (POLICY) এমনভাবে সংস্কার ও সংশোধন করতে হবে, যাতে শিল্প ও বানিজ্যের ক্ষেত্রে মুষ্টিমেয় কতিপয় ব্যক্তির একচ্ছত্র দখলদারী খতম হয়ে যায় এবং সমাজের সাধারণ মানুষ অধিক থেকে অধিকতর হারে শিল্পের মালিকানা ও মুনাফায় অংশীদার হতে পারে।
তাছাড়া, আইন এবং নীতিমালার সেইসব ত্রুটিও দূর করতে হবে, যেগুলোর কারণে লোকেরা অবৈধ মুনাফা কারার সুযোগ পায় এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আল্লাহর সৃষ্টজীবের জন্যে জীবন যাপন কঠিন করে তোলে এবং জনগণেকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির কল্যান থেকে বঞ্চিত করে।
৯। যেসব শিল্প কারখানা মৌলিক এবং ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত হলে সমাজ ও সমষ্টির জন্যে ক্ষতিকর হলে বিবেচিত হবে সেগুলোকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় চালাতে হবে। তবে কোন কোন শিল্প কারখান জাতীয় মালিকানায় পরিচালিত হবে, তা ফুায়সালা করার দায়িত্ব জনগনের স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের (জাতীয় সংসদের) হাতে ন্যস্ত থাকবে। এ ধরণের ফায়সালা করার সময় জাতীয় সংসদকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে, এসব শিল্প কারখানা জাতীয় মালিকানায় আনার পর কোনো বুরোক্রেসীর সেই অতিপরিচিত দুশ্চরিত্রতা ও ধ্বংসের শিকার না হয়। কারণ সে অবস্থায় কোনো শিল্প কারখানা জাতীয় মালিকানায় পরিচালনা করাটা লাভজনক হবার পরিবর্তে নির্ঘাত ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াবে।
১০। বর্তমানে যে ব্যাংক ও বীমা ব্যবস্থা চালু রয়েছে, তা আসলে ইহুদী পুঁজিপতিদের দেমাগপ্রসূত। আমাদের দেশেও সে ব্যবস্থারই অনুকরণ করা হচ্ছে। এই ব্যাংক বীমা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেংগে দিয়ে ইসলামের মুশারাফা, মুদারাবা ও পারস্পরিক সহযোগিতা নীতির ভিত্তিতে এর পুননির্মান করতে হবে। এই মৌলিক সংস্কার ছাড়া এ দুটি প্রতিষ্ঠানের বিপর্যয় কিছুতেই ঠেকানো যাবে না। এমনকি, এগুলোকে পুরোপুরি জাতীয় মালিকানায় নিলেও নয়।
১১। আজ পর্যন্ত কোনো জীবন ব্যবস্থাই যাকাতের তুলনায় উত্তম সামাজিক নিরাপত্তার কোনো স্কীম প্রদান করতে পারেনি। যাকাত আদায় ও বন্টনের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে জননিরাপত্তার এই ইসলামী স্কীমকে কর্যকর করতে হবে। এটা জননিরাপত্তার এমন এক ব্যবস্থা, যা কর্যকর করা হলে দেশে কোনো ব্যক্তি খাদ্য, বস্তু, বাসস্থান, চিকিত্সা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকতে পারে না।
সর্বোপরি এ কথাটি খুব ভালোভাবে বুঝে নেয়া দরকার যে, কেবল অর্থনীতিই মানব জীবনের আসল এবং একমাত্র সমস্যা নয়; বরং অর্থনীতি মানব জীবনের অন্যান্য বিষয়ের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। যতোদিন ইসলামের নির্দেশনা ও বিধানের আলোকে নৈতিক চরিত্র, পারস্পারিক সম্পর্ক, শিক্ষা দীক্ষা, রাষ্ট্র-রাজনীতি, আইনকানুন ও নিয়ম নীতির সকল বিভাগে পূর্ণাংগ সংস্কার সাধিত হবে, ততোদিন কেবলমাত্র অর্থনৈতিক সংস্কারের কোনো কর্মসূচীই সফল ও সুফলদায়ক হতে পারে না।

২. বীমা

প্রশ্ন : বীমার ব্যাপারে আমি সংশয়ে ভুগছি। বীমা করা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ না অবৈধ তা আমি বুঝতে পারছি না। বর্তমান বীমা ব্যবসা নাজায়েয হয়ে থাকলে তাকে জায়েয বানানোর জন্য কি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে? বর্তমান অবস্থায় বীমা পরিহার করলে দেশের লোকেরা অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ ব্যবসাটি সারা দুনিয়াতে চলছে। প্রত্যেক দেশে প্রত্যেক জাতি ব্যাপকভাবে ইনস্যুরেন্স সংগঠন করেছে। তারা এ থেকে লাভবান হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো এ ব্যাপারে দ্বিধা ও দোটানার ভাব রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আপনি সঠিক পথের সন্ধান দিলে কৃতজ্ঞ হবো।
জবাব : ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইস্যুরেন্সের ব্যাপারে তিনটি মৌলিক প্রশ্ন রয়ে গেছে, যার ভিত্তিতে তাকে বৈধ গণ্য করা যেতে পারে না।
এক. ইনস্যুরেন্স কোম্পানীগুলো প্রিমিয়াম হিসেবে যে অর্থ আদায় করে থাকে তার বিরাট অংশ তারা সুদের ব্যবসায়ে খাটিয়ে লাভ করে। যেসব লোক যে কোনো আকারেই হোক নিজেদেরকে বা নিজেদের কোনো জিনিসকে তাদের কাছে ইনসিয়োর কারায় তারা আপনাআপনিই ঐসব ব্যবসায়ে অংশীদার হয়ে যায়।
দুই. মৃত্যু, দুর্ঘটনা বা ক্ষতির বিনিময়ে এ কোম্পানীগুলো যে অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব নেয় তার মধ্যে নীতিগতভাবে জুয়ার অস্তিত্ব বিদ্যমান।
তিন. এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর যে অর্থ প্রদান করা হয় ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে তা মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তির পরিণত হয়, যা আসলে শরীয়ত নির্দেশিত ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন হওয়া উচিত। কিন্তু এ অর্থ মীরাস হিসেবে বন্টন করা হয় না; বরং সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ এ অর্থ লাভ করে ইনসিয়োরকারী যাদেরকে এ অর্থ দান করার জন্য অসিয়াত করে যায়। অথচ ওয়ারিশের নামে অসীয়ত করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়।
তবে ইনস্যুরেন্সের ব্যবসাকে কিভাবে ইসলামী নীতির ভিত্তিতে পরিচালনা করা যেতে পারে, এ প্রশ্নটা যতটা সহজ এর জবাব ততটা সহজ নয়। এ জন্য প্রয়োজন একটি বিশেষজ্ঞ দলের। এ দলটি যেমন একদিকে ইসলামের নীতি সম্পর্কে অবগত থাকবেন তেমনি অন্যদিকে এর থাকবে ইনস্যুরেন্স ব্যবসায়ের জ্ঞান। এ বিশেষজ্ঞ দলটি সমগ্র বিষয়টি পর্যালোচনা করে ইনস্যুরেন্স ব্যবসায়টিতে এমন সব সংস্কার সাধনের পরিকল্পনা পেশ করবেন যার ফলে এ ব্যবসাটি সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারবে এবং সংগে সংগে শরীয়তের নীতিও লংঘিত হবে না। যতোদিন এটা হচ্ছে না ততোদিন আমাদের অন্তত: একথা স্বীকার করা উচিত যে, আমরা একটা ভুল কাজ করে যাচ্ছি। ভুলের অনুভূতিটুকুও যদি আমাদের মধ্যে না থাকে তাহলে সংস্কর সাধনের প্রচেষ্টার প্রশ্নই আসে না।
নি:সন্দেহে বর্তমান যুগে ইনস্যুরেন্স অত্যধিক গুরুত্ববহ। সারা দুনিয়ার এর প্রচলন। কিন্তু প্রযুক্তিটি কোনো হারামকে হলাল করে দিতে পারে না। অথবা কোনো ব্যক্তি দাবি করতে পারে না, দুনিয়ায় যা কিছু চলছে তা সব হলাল বা তার হলাল হওয়া উচিত। কারণ তা সারা দুনিয়ায় প্রচলিত। মুসলমান হিসেবে আমাদের অবশ্যি জায়েয নাজায়েযের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে এবং নিজেদের বিষয়গুলো জায়েয পদ্ধতিতে পরিচালনা করার উপর জোর দিতে হবে। (তরজমানুল কুরআন, জুলাই ১৯৬২)
প্রশ্ন : বীমা সম্পর্কে আপনার এ ধারণা সঠিক যে, এতে মৌলিক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তাবে আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে, এ জন্য অত্যন্ত দীর্ঘ ও অবিশ্রান্ত চেষ্টা সাধনা আবশ্যক। আমার বীমা কোম্পানীতে আমি এযাবত জীবন বীমা এড়িয়ে চলেছি। তবে ভেবেচিন্তে এখন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, জীবনবীমার দোষত্রুটিগুলো নিম্নলিখিত উপায় অবলম্বন করে দূর করা সম্ভব।
১. জামানতের অর্থ সরকারের কাছে জমা দেয়ার সময় এরূপ নির্দেশ দেয়া যেতে পারে যে, এই অর্থকে সুদভিত্তিক কারবারে না লাগিয়ে কোনো সরকারী বা বেসরকারী কারখানার শেয়ার ক্রয় করা হোক। চেষ্টা করা হলে আশা করা যায়, সরকার এ অনুরোধ মেনে নেবেন। এভাবে সুদভিত্তিক কাজে শরীক হওয়ার হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়া সম্ভব।
২. নিয়ম অনুযায়ী বীমা কোম্পানীর এখতীয়ার থাকে যে, ইচ্ছা করলে যে কোনো ব্যক্তির বীমা বাতিল করতে পারে কিংবা প্রথমেই অগ্রাহ্য করতে পারে। আমরা বিধিমালা এরূপ ব্যবস্থা রাখতে পারি যে, যে কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করলে স্বীয় টাকা শরীয়ত মোতাবিক উত্তারাধিকারীদের মধ্যে বন্টন করার নির্দেশ দিতে পারে। এরূপ শর্ত আরোপ করেও ইসলামী বিধি কঠোরভাবে পালন করা যেতে পারে যে, যারা শরীয়তবিধি মোতাবিক বন্টনে সম্মত হবেনা, তাদের পলিসি গ্রহণ করা হবে না। এতে করে আমাদের কাংখিত শরীয়তবিধি মান্যকারীরাই শুধু আমাদের কাছে বীমা করাতে পারবে।
৩. জুয়ার সংমিশ্রন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বীমাকারীদেরকে এরূপ নির্দেশ দিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যে, তাদের মৃত্যু ঘটলে শুধুমাত্র প্রিমিয়ামের মাধ্যমে যত টাকা জমা দেয়া হয়েছে, তত টাকাই উত্তারাধিকারীদের মধ্যে বন্টন করা হোক।
দৃশ্যত যদিও বর্তমান অবস্থায় এই কারবারে অন্যায়ের দিকটা খুবই প্রবল, তবে এটাকে ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার অবকাশও রয়েছে। কিছুদিন আগে একবার এ কারবারের কুৎসিত দিকগুলোর প্রচন্ডতা অনুভব কর আমি নিজের বীমা কোম্পানী বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরে ভাবলাম এমন একটা পন্থা উদ্ভাবন করা যাক, যাতে অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে পারে এবং ইসলামী বিধির আওতায় ইনস্যুরেন্সের কারবার চালানো যেতে পারে। একটু কষ্ট করে আমাকে পথ প্রদর্শন করুন।
জবাব : বীমা ব্যবসাকে বিশুদ্ধকরণের যে পন্থা আপনি লিখেছেন তা দ্বারা তা অবৈধতার কারণগুলো দূর হবে বলে আমি আশা করি। আমার মতে এটিকে বৈধতার গন্ডীতে আনার জন্য কমপক্ষে যে কাজগেো করা দরকার তা নিম্নরূপ:
১. সরকারকে এ ব্যাপারে সম্মত করাতে হবে যে, কোম্পানীর কাছে সঞ্চিত জামানতের অর্থকে সে কোনো সরকারী অথবা আধা সরকারী শিল্প কিংবা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে অংশীদারী নীতির ভিত্তিতে বিনিয়োগ করবে এবং কোম্পানীকে নির্দিষ্ট হারে নয় বরং আনুপাতিক হারে লভ্যাংশ দেবে।
২. কোম্পানী তার অন্যান্য পুঁজিকেও এরূপ লাভজনক কাজে বিনিয়োগ করবে, যা থেকে সে সুদের বগলে লভ্যাংশ পাবে। কোনো সুদভিত্তিক কারবারে তার পুঁজির কোনো অংশই বিনিয়োগ করবেনা।
৩. বীমাকারীর মৃত্যুর পর তার জমাকৃত সমস্ত টাকা উত্তরাধিকারীদেরকে দেয়া হবে এবং শরীয়তৈর বিধি অনুযায়ী ঐ টাকা কেবল উত্তরাধিকারীর মধ্যে বন্টন করা হবে, এই দু’টো কথা যারা মেনে নেবে, কেবল তাদেরই জীবনবীমা গ্রহণ করা হবে।
৪. বীমাকারীদের মধ্যে যারা স্বীয় টাকার বাবদে লাভ চাইবে, তাদের টাকা তাদের অনুমতিক্রমে উপরে ২নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত বাণিজ্যিক কাজে অংশীদারী নীতির ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে।
এই চারটে সংস্কার কার্যক্রম যদি আপনি বাস্তবায়িত করতে পারেন, তাহলে আপনার কোম্পানীর কারবার তো পবিত্র হবেই সেই সাথে যারা বীমা ব্যবসায় সংশোধন কামনা করেন তারাও অত্যন্ত সার্থক পথনির্দেশ লাভ করবেন।
(তরজমানুল কুরআন, ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৬)

৩. মূল্য নিয়ন্ত্রণ

[তরজমানুল কুরআন: জুলাই-অক্টোবর সংখ্যা ১৯৪৪ ইং থেকে সংকলিত।]
প্রশ্ন : এটা হচ্ছে কন্ট্রোল রেটের যুগ। কিন্তু দোকানদাররা কন্ট্রোল রেটে কোনো মাল পায় না। তারা কালোবাজারীতে (Black Market) মাল খরিদ করে গ্রহকদের সরবরাহ করে। এ ধরনের মাল কন্ট্রোল রেটে বিক্রী করলে তার যে লোকসান হবে, তা একেবারে জনা কথা। তাই বাধ্র হয়ে তারা দর বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু কেউ কেউ এরূপ কেনা-বেচাকে বেঈমানী বলে আখ্যায়িত করেন এবং পুলিশও তাদের উপর চড়াও হয়। এ বিষয়ে শরীয়তৈর হুকুম কি?
জবাব: নৈতিক দিক থেকে সরকার ততোক্ষণ পর্যন্ত কোনো মালের মূল্য নিয়ন্ত্রণের (Price control) অধিকার রাখেনা যতোক্ষণ না সে নিজের নির্ধারিত মূল্যে লোকদের মাল দেয়ার ব্যবস্থা করবে। মাল সাপ্লাই না করে কেবল মূল্য নির্ধারণ করার ফল এরূপ দাঁড়াতে বাধ্য যে, এতে মজুতদাররা মাল লুকিয়ে রেখে বিক্রী বন্ধ ক দেবে কিংবা আইনকে ফাঁকি দিয়ে গোপনে বেশী দামে বিক্রী করবে। কেবল পুঁথিগত বিদ্যার মাধ্যমেই নয়, বরঞ্চ অভিজ্ঞতার আলোকে এ পরিণতি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হওয়া সত্ত্বেও সরকর যদি শুধুমাত্র মূল্য নির্ধারণের পন্থা অবলম্বন করে তবে ক্রেতা সাধারণ এবং ব্যবসায়ীদেরকে নির্ধারিত মূল্যের অনুসরণ করতে বাধ্য করার কোনো অধিকার নৈতিকভাবে সরকারের নেই।
এরূপ পরিস্থিতিতে এটাই দেখা যায় যে, ক্রেতা সাধারণ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যদি মজুতদারী ও মহাজনেদের নিকট থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে কোনো জিনিস ক্রয় করতে চায় তবে তাদেরকে বিমুখ হয়ে ফিরে আসতে হয়। তাদেরকে যদি কালোবাজারীতেই মাল ক্রয় করতে হয়, তবে খোলাবাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যে মাল বিক্রয় করা তাদের জন্যে কিভাবে সম্ভব হতে পারে? এমতাবস্থায় নিজের প্রয়োজনীয় উপার্জন কিংবা জরুরত নৈতিক অপরাধে অপরাধী হতে পারে না। সে যদি এ মাল সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে বিক্রী করে, তবু কোনো অবস্থাতে সে নৈতিকভাবে অপরাধী হয় না। এরূপ কোনো ব্যক্তিকে বন্দী করে যদি দন্ড প্রয়োগ করা হয়, তবে এটা হবে সরকারের অতিরিক্ত আরেকটি যুল্ম। প্রসংগক্রমে যেহেতু “মূল্য নিয়ন্ত্রণের” কথা আলোচিত হয়েছৈ, তাই এখানে আমি সংক্ষেপে এ সম্পর্কিত ইসলামের নীতি বলে দিতে চাই।
নবীপাক (সা)-এর যামানায় একবার মদীনায় দ্রব্যমূল বেড়ে যায়। লোকেরা নবীপারেক নিকট আরয করলো, আপনি মূল্য বেঁধে দিন। জবাবে তিনি বললেন:
“মূল্য বৃদ্ধি এবং কমতির ব্যাপারটা আল্লাহর হাতে (অর্থাৎ খোদায়ী বিধির অধীন)। আর আমি আল্লাহর নিকট এমন অবস্থায় উপস্থিত হতে চাই যে, আমার বিরুদ্ধে যুল্ম এবং নাইনসাফীর কোনো অভিযোগকারী থাকবে না।
এরপর তিনি তাঁর খুতবায়, কথাবার্তায় এবং লোকের সংগে সাক্ষাতকালে ক্রমাগতভাবে একথা বলতে থাকলেন যে: (আরবী*******)
“বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহকারীরা জীবিকা ও অনুগ্রহ লাভ করে আর মজুতদাররা লাভ করে অভিশাপ।”
তিনি বলেন: (আরবী*****************)
“মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যে চল্লিশ দিন খাদ্যসামগ্রী মওজুদ রাখে, আল্লাহ তার সাথে এবং সে আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীন।”
(আরবী******)
“কতইনা নিকৃষ্ট সে ব্যক্তি যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বাজারে সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং দাম কমলে বেজার হয় আর দাম বাড়লে খুশী হয়” (আরবি*******************************)
“কোনো ব্যীক্ত চল্লিষ দিন খাদ্যসামগ্রী মওজুত রাখার পর সেগুলো যদি দানও করে দেয় তবু তার এ মজুতদারীর গুণাহের কাফফারা হবে না।”
নবী পাক (সা) এভাবে মজুতদারী ও অবৈধ মুনাফাখোরীর বিরুদ্ধে অবিরাম প্রচার ও প্রশিক্ষণের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। এতে করে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই পরিশুদ্ধ হয়ে যায় এবং যেসব দ্রব্যসামগ্রী মওজুদ করা হয়েছিলো, তা সব খোলা বাজরে এসে যায়।
সর্বোত্তম নৈতিক গুণাবলীর উপর প্রতিষ্ঠিত সরকাররের এ হচ্ছে কর্মনীতি। এরূপ সরকারের আসল শক্তি পুলিশ, আদাল, মূল্য নিয়ন্ত্রণ কিংবা অর্ডিন্যান্স নয়; বরঞ্চ সে মানব হৃদয়ের কন্দর থেকে খারাবী বের করে দেয়, মানুষের নিয়াত তথা লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে পরিশুদ্ধ করে দেয়, ধ্যান-ধারণা ও মানসিকতার পরিবর্তন সাধন করে দেয়, সম্মান ও মর্যাদর মাপকাঠি পরিবর্তন করে দেয়। মানুষকে স্বেচ্ছায় সেই সব বিধানের অনুগত বানিয়ে দেয়, যা সঠিক নৈতিক বুনিয়াদের উপর প্রতিষ্ঠিত। এর বিপরীত এসব দুনিয়ার শাসকগোষ্ঠী, যাদের নিজেদের নিয়াত ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যেই ভ্রান্ত, যারা নিজেরাই নৈতিকভাবে অধপতিত, শাসন চালানোর জন্যে যাদের নিকট বল প্রয়োগ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো হাতিয়ার নেই, তারা এরূপ অবস্তায় সম্মুখীন হলে বল প্রয়োগ করে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার চেষ্টা করে এবং নৈতিক সংশোধনের প্রক্রিয়া অবলম্বনের পরিবর্তে সাধারণ মানুষের নৈতিক অধপতনের যেটুকু বাকী আছে সেটুকুও অধপতিত করে ছাড়ে।
(তরজমানুল কুরআন: রযব-শাওয়াল ১৩৬৩ হিঃ জুলাই-অক্টোবর ১৯৪৪ ঈসায়ী)

Page 11 of 12
Prev1...101112Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক

@BJI Dhaka City South