ছয়
মালয় দ্বীপপুঞ্জে ইসলামের প্রসার
মালয় দ্বীপপুঞ্জে ইসলাম প্রচার করেন আরব ও ভারতীয় বণিকগণ। পর্তুগালের সামুদ্রিক ঔপনিবেশিকতার সূচনা হওয়ার আগে এ বণিকরাই ছিলেন চীন ও সমগ্র পূর্ব-ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ব্যবসায়-বাণিজ্যের ওপর একক কর্তৃত্বের অধিকারী। তারা স্পেনীয় ও পর্তুগীজদের ন্যায় যুদ্ধজয়ী হয়ে আসেননি কিংবা তারা তরবারীর জোরে ধর্ম প্রচারেও ইচ্ছুক ছিলেন না। তাদের কাছে এমন কোনো শক্তিও ছিল না যার কল্যাণে তারা প্ররাক্রান্ত শক্তি হয়ে থাকতে পারতেন। তাদের ছিল শুধু ঈমানী শক্তি। তারা সাথে নিয়ে এসেছিলেন এক সত্য ও ন্যায়ের বাণী। এ হাতিয়ার দিয়েই তারা মালয় দ্বীপপুঞ্জ কে জয় করেন। এর সাহায্যেই তারা সরকারসমূহকে পদানত করেন। এ শক্তির বলেই তারা এতটা প্রভাবশালী হন যে, ৬শ’ বছরের মধ্যে গোটা দ্বীপপুঞ্জের ৫কোটির মধ্য থেকে প্রায় ৪ কোটি অধিবাসী মুসলমান হয়ে যায়। প্রাচীন পৌত্তলিক ধ্যান-ধারনা পদে পদে তাদের পথ অবরোধ করে স্পেন ও পর্তুগালের প্রমত্ত ঔপনিবেশিক লালসা বারবার তাদের ওপর খড়গ তুলেছে। আর হল্যাণ্ডের খৃষ্টীয় সাম্রাজ্যবাদ তাদের মনোবল ভাঙতে চেষ্টার ত্রুটি করেনি। কিন্তু তাদের ইসলামের সেবা করার দুর্দম বাসনাকে কোনো কিছুই পরাস্ত করতে পারেনি। তারা নিজেদের প্রতিভা ও ধন-সম্পদকে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধির কাজে না লাগিয়ে ইসলামের শক্তি বৃদ্ধির কাজে লাগিয়েছে। তাদের চেষ্টায় গত ছয় শতাব্দীর মধ্যে মালয় দ্বীপপুঞ্জে যেভাবে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে, তার ইতিহাস অত্যন্ত শিক্ষাপ্রদ।
সুমাত্রা
সুমাত্রায় ইসলামের সূচনা হয় ইতজা থেকে। এখানে আবদুল্লাহ আরিক নামক জনৈক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি সর্বপ্রথম ইসলামের আওয়াজ বুলন্দ করেন।
তারপর তার মুরিদ বুরহান উদ্দীন পারিয়ামান পর্যন্ত সমগ্র পশ্চিম উপকূলে ইসলামের বিস্তার ঘটান। ১২০৫ সালে গোটা ইতজা রাজ্য ইসলাম গ্রহণ করে এবং স্বয়ং রাজাও মুসলমান হয়ে যান। তাঁকে ‘জাহানশাহ’ উপাধি দেয়া হয়। এখান থেকে বাণিজ্যিক জাহাজে চড়ে ইসলাম উত্তর সুমাত্রায় পৌঁছে। পারলাক ও পাসুরীতে মুসলমানদের বাণিজ্যিক কুঠি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৪শ’ শতাব্দীতে শেখ ইসমাঈলের নেতৃত্বে মকআর কতিপয় আলেম সুমাত্রায় আসেন এবং তারা লামবেরী থেকে নিয়ে আরু পর্যন্ত গোটা উপকূল অঞ্চলকে ইসলামের আলোকে আলোকিত করেন। অবশেষে মাসুদরা রাজ্যের রাজা মুসলমান হয়ে যান এবং তাকে “আল মালিকুস সালেহ” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর চেষ্টায় পালকাক রাজ্যও ইসলাম গ্রহণ করে। ইবনে বতুতা তার পর্যটনক্রমে যখন এখানে পৌঁছেন তখন ক্ষমতাসীন ছিলেন ‘আল মালিকুস সালেহ”-এর পুত্র “আল-মালিকুজ জাহের” এবং সুলমান মুহাম্মদ তুঘলকের সাথে তার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল।
পালমবাং-এ হিন্দু ধর্মের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী। জাভার শ্রেষ্ঠ ইসলাম প্রচারক রাডান রহমত এখানে ইসলাম প্রচার করেন এবং তার পরেও ইসলামের প্রসার অব্যাহত থাকে। পরে যখন এ অঞ্চলে হল্যাণ্ডের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং খৃষ্টান মিশনারীদের প্রতিরোধের জন্য মুসলমানরা অক্লান্ত চেষ্টা-সাধনা শুরু করে দেন তখনই সত্যিকারভাবে এখানে ইসলামের প্রসার ঘটতে আরম্ভ করে। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই এখানকার পৌত্তলিক অধিবাসীরা ব্যাপকভাবে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে।
দক্ষিণ সুমাত্রায় ইসলামের বিস্তার ঘটে সবার শেষে। এখানে ইসলামের প্রথম প্রচারক ছিলেন জাভাবাসী এক সরদার মিনাক কুমালা বুমী। ইতি বাটনামে ইসলাম গ্রহণ করেন। পরে মক্কায় ইসলামী জ্ঞান অর্জন করেন এবং লাম্পাং-এ বহু সংখ্যক পৌত্তলিক গোত্রকে ইসলামে দীক্ষিত করেন। এ অঞ্চল যখন চারদিক থেকে মুসলিম রাজ্যের ঘেরাও হয়েছিল তখন ইসলামের কোলে আশ্রয় নেয়নি। কিন্তু হল্যাণ্ডের মুসলিম পীড়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দ্রুত ইসলামের দীক্ষিত হয়। হল্যাণ্ড শক্তির বলে ইসলামের প্রসার ঠেকাতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এতে মুসলমানদের প্রচার স্পৃহা তীব্রতর হয় এবং তারা খৃষ্টান প্রচারকদের পর্যুদস্ত করেন। একজন মিশনারী বর্ণনা করেছেন যে, একবার পুরো একটা গ্রাম খৃষ্ট ধর্মের প্রাথমিক দীক্ষা নিয়েও সহসা ইসলাম গ্রহণ করে। এমনিভাবে মসজিদের এক ইমামের চেষ্টায় ‘সেপরুফ’ নামজ একটি জেলার সব লোকেরা মুসলমান হয়ে যায়। অপর একজন ধর্ম প্রচারক সম্পর্কে খৃষ্টান মিশনারীরা বলেছেন যে, তিনি দশ বছর ধরে চেষ্টা করে একটা পৌত্তলিক গোত্রকে খৃষ্ট ধর্মের প্রভাব থেকে মুক্ত করে ইসলামে দীক্ষিত করেন। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, স্বয়ং হল্যাণ্ড সরকারের বেতনভুক্ত মুসলিম কর্মচারীরাও ইসলাম প্রচার করেন এবং সরকার তা অপছন্দ সত্ত্বেও ঠেকাতে সক্ষম হয়নি।
সুমাত্রা দ্বীপ থেকে ইসলাম পৌঁছে মালয় উপদ্বীপে। ১২’শ শতাব্দীতে সুমাত্রার বহু সংখ্যক মুসলিম বণিক বাণিজ্যোপলক্ষে সিঙ্গাপুরে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। এক শতাব্দী পর তারা মালাক্কা বন্দরের নিকট উপনিবেশ স্থাপন করেন। তাদের চেষ্ট্যায় উপকূলের অধিকাংশ বাণিজ্যিক জনপদ ইসলাম গ্রহণ করে এবং তাদের মাধ্যমে মালয়ের অভ্যন্তরভাগে ইসলাম বিস্তার করে। ১৪’শ শতাব্দীতে এখানকার রাজাও আবদুল আজীজ নামক জনৈক আবর বণিকের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। অতপর তার নাম বদলে রাখা হয় সুলতান মুহাম্মদ মাহ। ১৬শ’ শতাব্দীর প্রারম্ভে মালয়ের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য ‘কোয়েডা’ও ইসলামের প্রভাবাধীনে এসে যায় এবং ১৫০৫ সালে সেখানকার রাজা পেরাওং মহাওংসা শেখ আবদুল্লাহ নামক জনৈক মুসলমান আলেমের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখা হয় সুলতান মুজলাফ শাহ। এই রাজা তার সমগ্র জীবন ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত করেন এবং মৃত্যুর পূর্বে কোয়েডা রাজ্যের একটি বিরাট অংশকে পৌত্তলিকতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করেন।
মালয় থেকে ইসলামের আলো পৌঁছে থাইল্যাণ্ডে। সিঙ্গাপুরের মুসলিম বণিকরা তা পরে ইন্দোচীন পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেন। আজকাল এসব দেশে ইসলামের যেটুকু প্রভাব দৃষ্টিগোচর হয় তা সব ঐ বণিকদেরই চেষ্টার ফল।
জাভা
–[এটা ১৯২৫ সালের ঘটনা। জাভা বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার একটি অঙ্গরাজ্য।]
মালয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে পৌত্তলিকতা ও হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বেশী প্রভাব ছিল জাভা দ্বীপে। মুসলমানদের উচ্চশিক্ষঅ সত্ত্বেও কাল্পনিক খোদার উপাসনাজনিত রকমারি বাতিল আকীদা-বিশ্বাস ও অলিক ধ্যান-ধারণা তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। ১৭৬৮ সাল পর্যন্ত মনুর ধর্মশাস্ত্র প্রচলিত ছিল বলে ইতিহাসে প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু ইসলামের নীরব প্রচারকগণ কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই সেসব গভীর প্রভাব নির্মূল করে দেন। ফলে আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মুষ্টিমেয় সংখ্যক লোক বাদে সমগ্র জাভা দ্বীপের অধিবাসীরা মুসলমান হয়ে গেছে। অধিকন্তু জাভী মুসলমানদের ইসলাম প্রিয়তা পূর্ব-ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে অধিক।
জাভার এ কৃতিত্বপূর্ব ঘটনার সূচনা করেন জাভারই একজন বণিক হাজী পুরওয়া। তিনি পাজা জারনের রাজার পুত্র ছিলেন। তিনি রাজকীয় মুকুট ও সিংহাসন –যা উত্তরাধিকার হিসাবে তার প্রাপ্য ছিল –নিজের ছোট বাই এর জন্য রেখে দেন এবং নিজে ব্যবসা পণ্য নিয়ে ভারতবর্ষে চলে আসেন। এখানে এসে পার্থিব সামগ্রীর পরিবর্তে তিনি আখেরাতের সামগ্রী পেয়ে যান। তারপর নিজের দেশবাসীকে ঐ অমূল্য সম্পদ পৌঁছিয়ে দেয়া তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। তিনি একজন আরব আলেমকে নিয়ে জাভায় পৌঁছেন এবং সারা জীবন ইসলামের খেদমত করতে থাকেন। এরপর আরব ও ভারতীয় বণিক ও পর্যটকদের দৃষ্টি ঐ দ্বীপের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তাঁরা ব্যাপকভাবে এখানে আসেন এবং উপকূল এলাকায় ইসলামের আলো বিস্তার করতে থাকেন। এ ধরনের পর্যটকদের সবচেয়ে বড় দলটি আসে ১৪শ শতাব্দীতে মাওলানা সৈয়দ ইবরাহDমের নেতৃত্বে এবং গ্রীসফ নামক স্থানে অবস্থান করেন। এ দলটি প্রচারকার্যের কল্যাণে। বর্মণ রাজ্যের রাজা ইসলাম কবুল করেন এবং সেখান থেকে আশপাশের রাজ্যগুলোতে ইসলামের প্রসার ঘটতে আরম্ভ করে। জাভার ইতিহাসে এতবড় সাফল্য সর্বপ্রথম এ দলটির বাগ্যেই যুটে।
রাডান রহমদের অভ্যুদ্বয়
জাভা দ্বীপের সবচেয়ে বড় ইসলাম প্রচারক রাডান রহমদ ১৫শ’ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনিই এ অঞ্চলে ইসলামকে দারিদ্রের ছিন্ন কুটীর থেকে তুলে রাজকীয় প্রসাদে ও কর্তৃত্বের আসনে পৌঁছিয়ে দেন। তিনি লালিত-পালিত হন রাজসিক আভিজাত্যে ও বিলাস ব্যসনে। ইচ্ছা করলে তিনি নিজেও কোনো সিংহাসনের অধিকারী হতে পারতেন কিন্তু আত্মসেবার পরিবর্তে ইসলামের সেবা করার আবেগে তার হৃদয় ছিল পরিপ্লুত। এজন্য তিনি ইসলামের প্রচার ও প্রসারকেই নিজের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারিত করেন। তিনি আল্লাহর প্রত্যাদেশ “নিকটতম আত্মীয়-স্বজনকে সতর্ক করে দাও” অনুসারে সর্বপ্রথম নিজের পরিবার থেকেই প্রচারের কাজ শুরু করেন। তিনি স্বীয় নানা চম্পার রাজাকে ইসলামের দাওয়াত দেন। তারপর পালপবাং গিয়ে সেখানকার গভর্নর ও নিজের আত্মীয় ভাই আঘদামিরকে মুসলমান বানিয়ে ফেলেন। এরপর মাওলানা জুমা দাল কুবরাকে সাথে নিয়ে ‘মাজা পাহিত’ রাজ্যে যান এবং সেখানকার রাজা তথা তাঁর খালুকে ইসলামের দাওয়াত দেন। রাজা নিজে ইসলাম কবুল করেননি বটে। তবে তাকে এম্পল অঞ্চলের গভর্নর নিয়োগ করে পূর্ণ স্বাধীনতার সাথে ইসলাম প্রচারের সুযোগ দেন। তিনি গভর্নর থাকাকালে এম্পলের প্রায় তিন হাজার পরিবারকে মুসলমান বানান এবং ইসলাম প্রচারকদের একটি বিরাট দলকে পাশ্ববর্তী সকল দ্বীপ ও রাজ্যে ছড়িয়ে দেন। ‘মুদোরা’কে যিনি ইসলামের আলোকে আলোকিত করেন সেই শেখ খলিফা হোসাইন ছিলেন রাডানেরই প্রেরিত। বালমিঙ্গন রাজ্যে যিনি ইসলাম প্রচার করেন সেই মাওলানা ইসহাকও ছিলেন তাঁরই শিষ্য। গ্রিস্ক অঞ্চলে যে রাডান পা পৌত্তলিকতা নির্মূল করেন তিনিও তারই ট্রেনিংপ্রাপ্ত শাগরিদ ছিলেন। স্বয়ং তার উভয় পুত্রও জাভায় খ্যাতনামা ইসলাম প্রচারক ছিলেন। তার দু’জন নিকটাত্মীয় রাডান পাট্টা ও রাডান হোসাইনের সবচেয়ে খ্যাতিপূর্ণ কৃতিত্ব এই যে, তারা হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ ‘মাজা পাহাত’কে চূড়ান্তভাবে ইসলামের নিকট নতি স্বীকার করান। রাডান হোসাইন মাজাপাহাতের সেনাপতি হিসেবে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং রাডান পাট্টা ১৪৭৮ সালে কাফেরী মতবাদকে শেষবারের মত পরাজিত করে মাজাপাহাতকে একটি ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করেন।
পশ্চিম জাভায় ইসলাম প্রচারের কাজ ছিল আরও কঠিন। কেননা সেখানকার হিন্দুরা সাধারণ জাভীদের চেয়ে অনেক বেশী গোঁড়া ছিল। সেখানে অবশ্য মাওলানা হাসান উদ্দীন চায়বিবুনীর মত প্রচারকগণ ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচার করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত হিন্দুরা ইসলামের মোকাবিলা করতে থাকে। অবশেষে ১৬শ’ শতাব্দীতে সত্যের চূড়ান্ত জয় হয় এবং হিন্দুরাজ্য ‘পজাজারান’ পুরোপুরিভাবে ইসলামে দীক্ষিত হয়। এভাবে ১২’শ শতাব্দী থেকে শুরু করে ১৬শ’ শতাব্দী পর্যন্ত ৪শ’ বছরের মধ্যে জাভা দ্বীপ পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দীক্ষিত হয়। হিন্দু মতবাদ কোনো প্রকার রক্তপাত ছাড়াই শুধুমাত্র প্রচারের বলে ইসলামের নিকট নতি স্বীকার করে।
মালাক্কা দ্বীপপুঞ্জ
জাভার পর ইসলামী শক্তির দ্বিথীয় কেন্দ্র চিল মালাক্কা দ্বীপপুঞ্জ। এখানে ইসলাম প্রচারিত হয় অনেক পরে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্পেনীয় ও পর্তুগীজ বাণিজ্য এবং ইসলাম এক সাথেই পৌঁছে। মুসলিম বনিকগণ জঙ্গী খৃষ্টবাদের মোকাবিলায় শাক্তিপূর্ণ উপায়ে সাফল্যজনকভাবে ইসলাম প্রচার করেন। ১৫শ’ ও ১৬শ’ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এখানে জাভা ও মালয়ের বণিকরা ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তাদের এই প্রচার কার্যের কল্যণে অল্পদিনের মধ্যেই সমগ্র মালাক্কা দ্বীপপুঞ্জে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে এবং চারটি শক্তিশালী ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি ছিল ‘টার্ণেট’-এর সরকার। এর সুলতান টার্নেট আল-মাহেরার একটি বিরাট অংশে শাসন চালাতেন। দ্বিতীয়টি ছিল ‘টোডোরের সরকার’। সমগ্র টেডোর, আল-মাহেরার একটি অংশ, সিরামের একটি অংশ এবং নউগিয়েনার পশ্চিম অংশ এ শাসনের আওতায় ছিল। তৃতীয়টি ছিল সুলতান গুরুলুর –যার শাসনাধীন এলাকার মধ্যে ছিল মধ্য আল-মাহেরা ও উত্তর সিরাম। আর চতুর্থ সরকার ছিল হেজান দ্বীপের সরকার। এর শাসন তেজান দ্বীপ ও ওবি দ্বীপমালার ওপর বিস্তৃত ছিল। এ চারটি রাজ্যই কিছুদিন জ্যোলুস প্রকাশের পর খৃষ্টীয় সাম্রাজ্যবাদের বিষাক্ত হাওয়ায় ধ্বংস হয়ে যায়। তবে ইসলামের অস্তিত্ব এসব সরকারের করুণার উপর নির্ভরশীল ছিলো না, তাদের করুণায় তার আবির্ভাবও হয়নি। পরে হল্যাণ্ড প্রভৃতি খৃষ্টীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এগুলোকে গ্রাস করে নেয়ার পরও মালাক্কা দ্বীপপুহ্জে দ্রুত ইসলাম ছড়িয় পড়ে। একথা নিশ্চয় করে বলা যায় যে, শীঘ্রই এমন দিন আসবে যখন সেখানে ইসলাম ছাড়া আর কোনো ধর্মের স্থান থাকবে না।
এ দ্বীপগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম টেডোর দ্বীপ ইসলামে দীক্ষিত হয়। ১৫শ’ শতাব্দীতে শেখ মনসুর নামক জনৈক আরব বণিক এখানকার রাজাকে মুসলমান বানিয়ে তার নাম জামালুদ্দীন রাখেন। ১৫২১ সালে যখন স্পেনীয় বণিকদের দ্বিতীয় দল এখানে আসে তখন শাসন ছিলেন জামালুদ্দীনের পুত্র সুলতান মনসুর এবং তখন ঐস্থানে ইসলামের বয়স হয়েছে মাত্র ৫০ বছর। পর্তুগীজ বণিকদের বর্ণনা মতে টার্ণেটে টেডোরেরও আগে ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল। ১৫২১ সালে যখন সেখানে পর্তুগীজ দল আসে তখন সেখানে ইসলাম প্রচারের বয়স ৮০ বছর হয়েছে। এ দ্বীপে ইসলাম প্রচার সম্পর্কে একটা মজার গল্প আছে। ওয়াতো মোল্লা হোসাইন নামক জনৈক জাভাবাসী বণিক ওখানে বাণিজ্যোপলক্ষে বসতিস্থাপন করেন। তিনি প্রতিদিন সকালে উচ্চস্বরে কুরআন শরীফ পড়তেন। তাঁর তেলাওয়াত শুনে পৌত্তলিকরা মোহিত হয়ে যেতো ও তার কাছে ভীড় জমাতো। এভাবে অল্পদিনের মধ্যেই তিনি বহু লোককে ইসলামে দীক্ষিত করেন। শেষ পর্যন্ত ১৪৯৫ খৃষ্টান্দে স্বয়ং রাজাও গ্রীস্ক গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।
আম্বুইনাতে ‘পাটিপুটা’ নামক জনৈক স্থানীয় ব্যবসায়ী ইসলাম প্রচার করেন এবং জাভা থেকে ইসলামের শিক্ষা বনহ করে সমগ্র আম্বুইনা উপকূলে ছড়িয়ে দেন। তখন ছিল পর্তুগীজ উপনিবেশবাদরে অভ্যূদয়ের যুগ। পর্তুগীজরা শক্তি প্রয়োগ করে এই ধর্মের অগ্রগতি রুখতে চেষ্টা করে। তারা আসলে ক্রুসেড যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। কিন্তু পর্তুগীজদের কঠোর মোকাবিলা সত্ত্বেও সত্য দ্বীনের প্রসার স্তিমিত হয়নি। বরঞ্চ সাধারণ মানুষেল মধ্যে তা আরো বেশী জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর ১৬শ’ শতাব্দীতে যখন পর্তুগাল অভ্যন্তরীণ সংকটে পড়ে তখন আম্বুইনার লোকেরা সমস্ত খৃষ্টান মিশনারীদের মেরে তাড়িয়ে দেয় এবং দলে দলে ইসলামে দীক্ষিত হতে থাকে। এ দ্বীপগুলোর সাথে বানিজ্যিক সম্পর্ক থাকার কারণে মালাক্কার অবশিষ্ট দ্বীপগুলোও মুসলমান হয়ে যায়।
বোর্ণিও দ্বীপ
১৫২১ সালে গুলুলুর রাজা ইসলাম গ্রহণ করেন। এ শতাব্দীতে বোর্ণিও ইসলামের আলোকে আলোকিত হয়। সর্বপ্রথম ‘বাঞ্চার মাসিম’ রাজ্যটি ইসলামে দীক্ষিত হয়। তারপর উত্তরে বোর্ণিওর ব্রুনাই রাজ্য মুসলমান হয়। এরপর ১৫৫০ সালে পালম্বাং-এর বণিকগণ সোকডনা রাজ্যে ইসলাম প্রচার করেন এবং ১৫৯০ সালে বোর্ণিওর সবচেয়ে শক্তিমান রাজা মুসলমান হন। তার নাম রাখা হয় সুলতান মুহাম্মদ সফউদ্দীন। ১৬০০ সালে জনৈক পাশ্চাত্য পর্যটক যখন বোর্ণিও পৌঁছেন তখন তিনি দেখতে পান যে সমগ্র উপকূলীয় এলাকা ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং শুধুমাত্র আভ্যন্তরীণ এলাকায় কুফরী ও পৌত্তলিকতার সামান্য প্রভাব রয়েছে। ১৮শ’ শতাব্দীর শুরু থেকেই বোর্ণিওর অভ্যন্তরেও ইসলাম প্রচারিত হতে আরম্ভ করে। একদিকে পুঁজিপতি ও সুসংগঠিত খৃষ্টান দলগুলো নিজ ধর্মের প্রচার চালাচ্ছিলেন। অপরদিকে দরিদ্র ও বিচ্ছিন্ন মুসলমান বণিকগণ ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিল। কিন্তু দুনিয়ার মানুষ দেখে বিস্মিত হয়েছে যে, খৃষ্টানরা ব্যর্থ এবং মুসলমানরা সফল হয়েছে। তারা মাত্র কয়েখ বছরের চেষ্টায় উত্তর বোর্ণিওর একটি বড় সম্প্রদায় ‘ইদান’কে মুসলমান বানিয়ে নেয়। মধ্য বোর্ণিওর ‘ডাইক’ সম্প্রদায়ও খৃষ্টবাদের তুলনায় ইসলামকে ভালো মনে করে।
সিলিবিস দ্বীপ
সিলিবিস দ্বীপেও এই সাধারণ নিয়ম অনুসারেই ইসলাম প্রচারিত হয়। প্রথমে জাভাবাসী ও মালয়ী বণিকরা ইসলামকে উপকূল এলকায় পৌঁছিয়ে দেয়। তারপর স্থানীয় বণিকদের সাহায্যে তা দেশের অভ্যন্তরভাগে পৌঁছে। ১৫৪০ সালে যখন পর্তুগজ উপনিবেশবাদীরা এখানে আসে তখন সবে ইসলামের প্রসার শুরু হয়েছে এবং শুধুমাত্র গোভাতে কয়েকজন মুসলমান বাস করতো। ৬০ বছরের মধ্যেই তা এতখানি উন্নতি লাভ করে যে সমগ্র উপকূল এলাকা মুসলমান হয়ে যায় এবং মোকাসের রাজা সমেত ইসলাম গ্রহন করে। মোকাসের থেকে আলফুর ও বোগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসলামের বিস্তার ঘটে। বোগী সম্প্রদায়ের মধ্যে তো ইসলামের এমন প্রভাব পড়ে যে, এর ফলে তারা সমস্ত সহজাত প্রতিভা ও যোগ্যতা জেগে ওঠে। তার মেধা ও কর্মঠতা তাকে মালাক্কা দ্বীপ পুঞ্জের সেরা সুসভ্য জাতিতে পরিণত করে। আজকাল সমগ্র অঞ্চলে একটি ইসলাম প্রচারক সম্প্রদায় হিসেবে এ জাতি সুপরিচিত। নিউগিনি থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত এর বণিকরা নিজস্ব বহর নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাদের প্রভাবে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ছে। এদেরই বদৌলতে সুমবাদা, লোমবোক, চন্দন দ্বীপ, প্রভৃতি সমস্ত দ্বীপে ইসলাম প্রচারিত হয় এবং খোদ সিলিবিস দ্বীপে খৃষ্টবাদন শোচনীয়ভাবে পরাভূত হয়। ১৮শ’ শতাব্দীতে খৃষ্টয়ি প্রচারকগন বোলাং ও মেছোণ্ডাও রাজ্যের রাজাকে খৃষ্টান বানিয়ে ফেলেছিল। তার প্রভাবে সমগ্র রাজ্য খৃষ্টান হয়ে গিয়েছিল। কিনউত বোগী বণিকগণ এক শতাব্দীর মদ্যে তাকে খৃষ্টবাদের কবল থেকে মুক্ত করেন এবং ১৮৪৪ সালে স্বয়ং রাজা জেকোবিস ইসলাম গ্রহণ করেন।
ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে
নিরস্ত্র ইসলামের সবচেয়ে অলৌকিক কীর্তি প্রকাশ পেয়েছে ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে। মালয়ের জনৈক ব্যবসায়ী শরীফ কাবুং সুয়ান এখানে ইসলামের ভিত্তি পত্তন করেন। তিনি তার কয়েকজন সঙ্গী-সাথী নিয়ে মিন্দানাও এসে বসতি স্থাপন করেন। এখানে তিনি বিপুল সংখ্যক ফিলিপাইনবাসীকে ইসলামে দীক্ষিত করেন। এখানে তিনি বিপুল সংখ্যক ফিলিপাইনবাসীকে ইসলামে দীক্ষিত করেন। তারপর মুসলিম বণিকদের আগমনও ইসলামের প্রচারের ধারা দীর্ঘ দিন ব্যাপী অব্যাহত থাকে। এখানকার অসভ্য জাতিগুলোর উপনিবেশবাদীরা এখানে আসে তখন তারা মুসলমান ও অমুসলমানদের সমাজ, সভ্যতা ও আচরণে সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখতে পায়। তারা ভেবে অবাক হয় যে, এত অল্প সময়ের মধ্যে সভ্যতা বিবর্জিত পৌত্তলিক জাতিগুলোর জীবনে এতবড় বিপ্লব এলা কেমন করে? যেহেতু এখানে ইসলামের প্রভাব ছিল খুবই সাম্প্রতিক। এজন্য ইসলামকে হটিয়ে দিয়ে খৃষ্টবাদ ছড়ানোর জন্য তারা অত্যন্ত নিষ্ঠুর কার্যক্রম গ্রহণ করলো এবং তরবারীর জোরে গোত্রগুলোকে খৃষ্টান বানাতে লাগরো। বিংশ শতাব্দীর সভ্য দিনগুরোর প্রারম্ভ পর্যন্ত এ কার্যক্রম চালু থাকে। স্পেন এখানে ধর্মের নামে সব রকমের যুলুম-নির্যাতন অব্যাহত রাখে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেখানে খৃষ্টবাদের মোকাবিলায় ইসলাম খুবই দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করেছে। ফিলিপাইনের লোকেরা মিন্দানাও ও সেলো নামক মুসলিম রাজ্যগুরোতে হাজারে হাজারে আসতো এবং দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতো। বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে যখন এখানে মার্কিন আধিপত্য বিস্তৃত হয় এবং ধর্মীয় জোর-যুলুমের সমাপ্তি গটে তখন ইসরাম প্রচারের সেই প্রবলতা অব্যাহত থাকেনি। তথাপি মুসরিম বণিকগণ ব্যাপকভাবে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিকতম খবর থেকে জানা যায় যে, ফিলিপাইনে নীরবে ইসলাম প্রচারের কাজ আবার নতুন করে চালু হয়ে গেছে।
নিউগিনি
নিউগিনিতে ইসলাম প্রচার সবচেয়ে আধুনিক কালের ঘটনা। একানে ইসলাম প্রধানতঃ উপকূলভাগে সীমাবদ্ধ থাকে। প্রথমতঃ এর পশ্চিম অঞ্চল তেজানের সুলতানের শাসনাধীন ছিল। এজন্য ১৬শ’ শতাব্দীতে উত্তর-পশ্চিম গিনীতে ইসলামের প্রভাব অধিকতর ব্যাপক হয়। ১৬০৬ সালে মুসলিম বণিকগণ তা পশ্চিম উপকূলেও ছড়িয়ে দেন এবং ‘উনীম’ উপদ্বীপের পৌত্তলিক জনবসতিতে ইসলামের প্রসার ঘটান। তবে এসব অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের আসল যুগ ঊনবিংশ শতাব্দী। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে আদী দ্বীপ ইসলাম গ্রহণ করে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সিরাম ও গোরামের মুসলমান বণিকগণ পুলাভা প্রভৃতি দ্বীপকে ইসলামে দীক্ষিত করেন। কাই দ্বীপে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত মুসলমানদের নাম-নিশানাও ছিলো না। কেবল বণ্ডা দ্বীপের কতিপয় ব্যবসায়ী সেখানে থাকতেন। সহসা ১৮৭৮ সালে প্রচারের কাজ শুরু হলো। মুদোরা, জাভা ও বামীর মুসলমান ব্যবসায়ীগণ অল্পদিনের মধ্যেই কাই দ্বীপের লোকদেরকে এতবেশী করে মুসলমান বানালো যে, এখন সেখানে মুসলমানদের সংখ্যা ১৬ হাজারেরও বেশী অর্থাৎ মোট লোক সংখ্যার অর্ধেকের কাছাকাছি।
মালয় দ্বীপপুঞ্জে ইসলামের এ বিস্ময়কর সাফল্য ছয় শতাব্দীর নীরব প্রচারের ফল। এ প্রচার কার্য সম্পাদন করেছেন প্রধানতঃ ব্যবসায়ীরা ও সাধারণ পর্যটকরা। তাদের কাছে কোনো তরবারীও ছিলো না, কোনো আধিপত্যকারী শক্তিও ছিলো না। ছিল শুধু আল্লাহর দ্বীন প্রচারের এক অনিবার্য উদ্যম ও উদ্দীপনা। এ উদ্দীপনার জন্যই তারা বিদেশ ভ্রমণের বিপদ ও ঝুঁকি এবং বাণিজ্যিক লাভালাভের চরম ধনবাদী জীবনের মধ্যে ইসলামের সেবার জন্য আত্মনিবেদিত থেকেছেন। এজন্য তাদের মধ্যে এমন নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা ছিল যে, তারা অন্য সব উদ্দেশ্যকে দ্বিতীয় পর্যায়ে রাখতেন আর ইসলাম প্রচারকে প্রাথমিক লক্ষ্য বলে গ্রহণ করতেন। আধুনিক যুগেও, যখন একমাত্র আফ্রিকা ছাড়া সারা দুনিয়ার মুসলমানরা ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব সম্পর্কে শিথিল হয়ে গেছে, পূর্ব-ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মুসলমানদের মধ্যে এখনো এ ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ্ ও উদ্দীপনা রয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এখনো সেখানে ব্যবসায়ীরা ছাড়াও হল্যাণ্ড সরকারের সরকারী কর্মচারীরা পর্যন্ত ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তারা মালয়ী ভাষায় এতবেশী সংখ্যক ইসলামী বই-পুস্তক প্রকাশ করেছেন যে, কোনো অমুসলিম সরকারী ভাষা হিসাসে মালয়ী ভাষা শিখরে তার ইসলাম দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে উপায় থাকে না। অধিকাংশ সময় তার মুসলমান হওয়া ছাড়াও গত্যন্তর থাকে না।