মনোনিবেশ সহকারে ও একাগ্র চিত্তে কুরআন পাঠ করো
আরবী***
৪৬। হযরত জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- তোমাদের দীল যতক্ষন পর্যন্ত কুরআনের সাথে লেগে থাকে ততক্ষন তা পাঠ করো। যখন আর পাঠে মন বসে না তখন উঠে যাও ( অর্থাৎ পড়া বন্ধ করো)। ———— ( বুখারী ও মুসলিম )
এ হাদীসের তাৎপর্য হচ্ছে এই যে, মানুষ যেন এমনাবস্থায় কুরআন পাঠ না করে যখন তাঁর মন পূর্ণরূপে কুরআনের দিকে নিবিষ্ট হচ্ছে না। সে গভীর মনোযোগের সহকারে এবং আগ্রহের সাথে যতটা সম্ভব কুরআন পাঠ করবে। মূল বিষয় মনযিলের পর মনযিল কুরআন পড়ে যাওয়া নয়। বরং পূর্ণ একাগ্রতা সহকারে এবং অর্থ ও তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করে পড়াই হচ্ছে আসল ব্যাপার। এটা নয় যে, আপনি একপারা কুরআন পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- তখন আপনি এমন অবস্থায় বসে কুরআন পরছেন যে, আপনার মনোযোগ মোটেই সে দিকে নেই। এর চেয়ে বরং আপনি গভীর মনোযোগের সাথে এক রুকু পাঠ করুন। মানুষ যদি তা না করতে পারে তাহলে মনযিলের পর মনযিল কুরআন পাঠ করে কি হবে? এজন্যই বলা হয়েছে- কুরআন পড়ার সময় যদি মন ছুটে যায় তাহলে পড়া বন্ধ করে দাও।
রাসুলুল্লাহর কিরাত পাঠের পদ্ধতি
আরবী***
৪৭। হযরত কাতাদা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস ( রাঃ ) কে জিজ্ঞেস করা হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিরাত পাঠের ধরন কিরূপ ছিল? তিনি বললেন- তিনি শব্দগুলো টেনে টেনে ( অর্থাৎ পূর্ণাংগ ভাবে উচ্চারন করে ) পড়তেন। অতঃপর আনাস
( রাঃ) “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করে শুনালেন এবং প্রতিটি শব্দ টেনে টেনে আদায় করলেন। বিসমিল্লাহ, আর-রাহমান, আর- রাহীম ( আল্লাহ, রহমান এবং রহীম শব্দক’টি টেনে টেনে পড়লেন )। ——————– ( সহীহ বুখারী )
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্রুত গতিতে কুরআন পাঠ করতেন না বরং প্রতিটি শব্দ টেনে টেনে পরিস্কার ভাবে উচ্চারন করে পাঠ করতেন। এর অর্থও এই নয় যে, তিনি অস্বাভাবিক পন্থায় কুরআন পাঠ করতেন। বরং এর অর্থ হচ্ছে এই যে, তিনি প্রতিটি শব্দ ধীর স্থিরভাবে এবং পূর্ণাংগভাবে উচ্চারন করে এমন ভঙ্গিতে পাঠ করতেন যে, পড়ার সময় মানুষের মনমগজ পূর্ণভাবে সেদিকে নিয়োজিত হতো যে- কি পাঠ করা হচ্ছে এবং এর তাৎপর্য কি?
মহান নবীর সুললিত কণ্ঠে কুরআন পাঠ
আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয়
আরবী***
৪৮। হযরত আবু হুরাইরাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন – আল্লাহ তায়ালা কোন কথা এতটা মনোযোগ সহকারে শুনেন না যতটা মনোযোগের সাথে কোন নবীর কণ্ঠস্বর শুনে থাকেন- যখন তিনি সুললিত কণ্ঠে কুরআন পাঠ করেন।——– ( সহীহ বুখারী ও মুসলিম )
আরবী***
৪৯। হযরত আবু হুরাইরাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- একজন নবী যখন সুললিত কণ্ঠে উচ্চ স্বরে কুরআন পাঠ করেন- তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর পাঠ যতটা যত্ন সহকারে শুনেন অন্য কোন কিছু ততটা যত্ন সহকারে শুনেন না। —— ( বুখারী ও মুসলিম )
পূর্ববর্তী হাদীস এবং এ হাদীসের বক্তব্য মূলত একই। এর অর্থ হচ্ছে- সুললিত কণ্ঠে নবীর কুরআন পাঠ এমন এক জিনিস যার প্রতি আল্লাহ তায়ালার সর্বাধিক আকর্ষণ রয়েছে। এ জন্য তিনি নবীর কুরআন পাঠ যতটা মনোযোগ সহকারে শুনেন তদ্রূপ অন্য কিছু শুনেন না।
যে ব্যক্তি কুরআনকে নিয়ে স্বয়ং
সম্পূর্ণ হয় না সে আমাদের নয়
আরবী***
৫০। হযরত আবু হুরাইরাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি সুমধুর স্বরে কুরআন পাঠ করে না অথবা কুরআনকে পেয়ে অন্য সবকিছু থেকে বিমুখ হয় না সে আমাদের দলভুক্ত নয়। ——- ( সহীহ বুখারী )
এখানে ‘সুমধুর স্বর’- অর্থ কি তা ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করে নেয়া প্রয়োজন। কুরআনকে সুললিত কণ্ঠে পাঠ করা এক কথা, আর তা গানের সুরে পাঠ করা আরেক কথা। সুমধুর কণ্ঠে পড়া হচ্ছে এই যে, মানুষ কুরআনকে উত্তম পদ্ধতিতে, উত্তম সুরে পাঠ করবে। তাহলে কোন শ্রবণকারী উপস্থিত থাকলে তাঁর পাঠ সে মনোযোগের সাথে শুনবে এবং এর দ্বারা প্রভাবিত হবে। উত্তম সুরে পাঠ করার মধ্যে কেবল কণ্ঠস্বর উত্তম হওয়াই নয়- বরং সে এমন পদ্ধতিতে কুরআন পাঠ করবে- যেন সে নিজেও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। কুরআন পাঠ করার ভঙ্গি এরূপ হওয়া উচিৎ যে, সে যে বিষয়বস্তু সম্বলিত আয়াত পাঠ করছে তদনুযায়ী তাঁর কণ্ঠস্বর ও উচ্চারন ভঙ্গির মধ্যেও পরিবর্তন সাধিত হবে এবং সেই আয়াতের প্রভাবও তাঁর মধ্যে সঞ্চারিত হবে। উদাহরণ স্বরূপ, যদি শাস্তি সম্পর্কিত কোন আয়াত এসে যায় তাহলে তাঁর অবস্থা ও উচ্চারন ভঙ্গিও এমন হবে যেন তাঁর মধ্যে ভীত সন্ত্রস্র অবস্থা ক্রিয়াশীল রয়েছে। যদি সে সওয়াব বা আখিরাতের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কিত কোন আয়াত পাঠ করে, তখন তাঁর মধ্যে আনন্দ ও খুশির ভাব জাগতে হবে। সে যদি কোন প্রশ্নবোধক আয়াত পাঠ করে তখন সে তা প্রশ্নবোধক বাক্যের ধরন অনুযায়ী পাঠ করবে। পাথক কুরআন শরীফ এভাবে নিজে হৃদয়ঙ্গম করবে এবং প্রভাবান্বিত হয়ে পাঠ করবে। শ্রবণকারী যেন শুধু তাঁর মধুর সুরের দ্বারাই প্রভাবিত না হয়, বরং তাঁর প্রভাবও যেন সে গ্রহন করতে পারে- যেমন একজন উন্নত মানের বক্তার বক্তৃতার প্রভাব তাঁর শ্রোতাদের উপর পড়ে থাকে। এদিকে যদি লক্ষ্য দেয়া না হয় এবং গানের সুরে কুরআন পাঠ করা হয়- তাহলে সে কুরআনের সমঝদার নয়। বর্তমান যুগের পরিভাষায় এর নাম সংস্কৃতি তো রাখা যায়, কিন্তু তা প্রকৃত অর্থে কুরআন তেলাওয়াত হতে পারে না। সুর এবং লয়ের মাধ্যমে কুরআন পাঠ সুমধুর স্বরে কুরআন পাঠ করার সংজ্ঞার আওতায় পড়ে না।
‘তাগান্না বিল কুরআন’- এর আরেক অর্থও হচ্ছে এই যে, কুরআনকে নিয়ে মানুষ দুনিয়ার অন্য সবকিছুর মুখাপেক্ষীহীন হয়ে যাবে। সে কুরআন মাজীদকে আয়-উপার্জনের হাতিয়ার পরিনত করবে না। বরং সে কুরআনের ধারক হয়ে- যে মহান খোদার এই কালাম- তাঁর উপরই ভরসা করবে। কারো কাছে সে হাত পাতবে না এবং কারো সামনে তাঁর মাথা নত হবে না। সে কাউকেও ভয় করবে না, কারো কাছে কিছু আশাও করবে না। যদি এটা না হয় তাহলে সে কুরআনকে তো ভিক্ষার পাত্র বানিয়েছে- কিন্তু সে কুরআনকে পেয়েও দুনিয়াতে স্বয়ং সম্পূর্ণ হতে পারে নি।
রাসুলুল্লাহ সাঃ, কুরআন এবং সত্যের সাক্ষ্যদান
আরবী***
৫১। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরের উপরে থাকা অবস্থায় আমাকে বললেন- “আমাকে কুরআন পড়ে শুনাও”। আমি আরজ করলাম, আমি আপনাকে কুরআন পাঠ করে শুনাবো? অথচ তা আপনার উপরই নাযিল হচ্ছে, তিনি বললেন- “আমি অপরের মুখে কুরআন তেলাওয়াত শুনতে চাই”। অতএব আমি সূরা নিসা তেলাওয়াত করতে থাকলাম। যখন আমি এই আয়াতে পৌছলাম- “আমি যখন প্রত্যেক উম্মাতের মধ্য থেকে একজন করে সাক্ষী হাযির করবো এবং এই সমস্ত সম্পর্কে- তোমাকে ( হে মুহাম্মাদ ) সাক্ষী হিসেবে পেশ করবো তখন তারা কি করবে ” তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বললেন- “আচ্ছা যথেষ্ট হয়েছে”। হঠাৎ আমার দৃষ্টি তাঁর চেহারায় পতিত হলে আমি দেখলাম- তাঁর দুচোখ দিয়ে আশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ————- ( সহীহ বুখারী ও মুসলিম )
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়্যুত প্রাপ্তির পরে এই দুনিয়ায় যতো লোক এসেছে তারা সবাই তাঁর উম্মত। যদি তারা তাঁর উপর ঈমান এনে থাকে তাহলে এক অর্থে তারা তাঁর উম্মত। আর যদি তারা ঈমান না এনে থাকে তাহলে তারা অন্য অর্থে তাঁর উম্মত। কেননা, প্রথমত- যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনে থাকবে তারা তাঁর উম্মত। দ্বিতীয়ত- যেসব লোকের কাছে তাঁকে নবী হিসেবে পাঠানো হয়েছে তাঁরাও তাঁর উম্মত। রাসুলুল্লাহকে ( সাঃ ) যেহেতু সমস্ত মানব জাতির কাছে নবী হিসেবে পাঠানো হয়েছে, এজন্য তাঁর নবুয়্যত প্রাপ্তি থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত যতো লোকের আবির্ভাব হবে তারা সবাই তাঁর উম্মত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের মুখে সূরা নিসার আয়াত শুনে আশ্রুসজল হয়ে পড়লেন কেন? এ ব্যাপারটি গভীরভাবে চিন্তা করুন।
আখেরাতে যখন আল্লাহর আদালতে সব জাতিকে উপস্থিত করা হবে এবং প্রত্যেক জাতির উপর নিজ নিজ নবীকে সাক্ষী হিসেবে দাড় করানো হবে- তিনি তখন সাক্ষী দেবেন, আমি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশসমূহ তাঁদের কাছে যথাযথভাবে পৌছে দিয়েছি। তখনই তাঁদের বিরুদ্ধে হুজ্জাত ( পূর্ণাংগ প্রমান ) সম্পন্ন হবে। নবীর পক্ষ থেকে যদি এ ব্যাপারে কন ত্রুটি থেকে গিয়ে থাকে ( আল্লাহ না করুন ) তাহলে তিনি আল্লাহর বানী পূর্ণরূপে পৌছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করার সাক্ষী দিতে পারেন না। নবী যদি এই সাক্ষ্য না দিতে পারেন ( যদিও এরূপ হবে না ) তাহলে তাঁর উম্মাতগন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবে এবং মোকদ্দমার সাক্ষ্যও খতম হয়ে যাবে।
নিজের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কঠোর অনুভূতি ছিল। নবী ( সাঃ ) যখন উল্লেখিত আয়াত শুনলেন তখন এই অনুভূতির ফলশ্রুতিতেই তাঁর দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। তিনি কতবড় দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন যে, আজ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যতো মানুষের আবির্ভাব হবে- তাঁর মাধ্যমেই তাঁদের উপর আল্লাহর হুজ্জাত ( চূড়ান্ত প্রমান ) পূর্ণ হবে। এই অনুভুতিই তাঁকে অস্থির করে রেখেছিল। তিনি সব সময়ই ভাবতেন, এই হুজ্জাত পুরা করার ক্ষেত্রে আমার যদি সামান্য পরিমান ত্রুটিও থেকে যায় তাহলে এই উম্মতকে গ্রেফতার করার পরিবর্তে আমাকেই পাকড়াও করা হবে।
গভীরভাবে চিন্তা করুন, এর চেয়ে বড় যিম্মাদারী কি কোন মানুষের হতে পারে? আর এর চেয়েও কি কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ হতে পারে যে, সেই যুগ থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত গোটা মানব জাতির সামনে আল্লাহ তায়ালার হুজ্জাত পুরা করার দায়িত্ব এককভাবে এক ব্যক্তির উপর পড়বে। কার্যত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই গুরুত্বপূর্ণ পদেই সমাসীন ছিলেন। এই কঠিন যিম্মাদারীর অনুভুতিই তাঁর কোমরকে নুজ করে দিত। এমনকি আল্লাহ তায়ালা তাঁকে শান্তনা দেয়ার জন্য এই আয়াত নাযিল করেন-
“আমি কি আপনার উপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে রাখিনি যা আপনার কোমর ভেঙ্গে দিচ্ছিল?”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিকে এই মহান এবং কঠিন দায়িত্বের অনুভূতি রাখতেন, অপরদিকে এটা সব সময় তাঁকে অস্থির করে রাখতো, আমি যাদের হেদায়াতের পথে ডাকছি তারা কেন তা থেকে দূরে স্বরে যাচ্ছে- এবং কেনই বা তারা নিজেদের জন্য একটি ভয়াবহ পরিনতি নির্দিষ্ট করে নিচ্ছে? যেমন কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে-
“আপনি মনে হয় এই চিন্তায়ই নিজের জীবনটাকে শেষ করে দেবেন যে, এরা কেন ঈমান আনছে না? ” ( সূরা আশ শুয়ারা, আয়াত- ৩ )
এ কারনেই তিনি যখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদকে এই আয়াত ( সূরা নিসা ) পাঠ করতে শুনলেন তখন তাঁর দুচোখ থেকে আশ্রু গড়িয়ে পড়লো এবং তিনি বললেন, আচ্ছা হয়েছে, আর নয়, থেমে যাও। এখন আর সামনে অগ্রসর হতে হবে না।
কুরআনী ইলমের বরকতে উবাই ইবনে কা’বের মর্যাদা
আরবী***
৫২। হযরত আনাস ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই ইবনে কা’বকে বললেন- আল্লাহ তায়ালা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমি যেন তোমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাই। উবাই ( রাঃ ) বলেন, আল্লাহ তায়ালা কি আমার নাম উল্লেখ করে আপনাকে একথা বলেছেন? তিনি বললেন- হ্যাঁ। উবাই ( রাঃ ) পুনরায় বললেন- সত্যিই কি মহাবিশ্বের প্রতিপালকের দরবারে আমার সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে? তিনি বললেন- হ্যাঁ। আনাস ( রাঃ ) বলেন- একথা শুনে উবাই ইবনে কা’বের দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। অপর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমি যেন তোমাকে “লাম ইয়াকুনিল্লাযিনা কাফারু” সূরা পাঠ করে শুনাই। উবাই ( রাঃ ) বললেন- আল্লাহ তায়ালা কি আমার নাম উল্লেখ করে আপনাকে একথা বলেছেন? তিনি বললেন- হ্যাঁ। এতে উবাই ইবনে কা’ব ( আবেগাপ্লুত হয়ে ) কেদে দিলেন। –( বুখারী ও মুসলিম )
হযরত উবাই ইবনে কা’বের এমন কি বিশেষত্ব ছিল যার ভিত্তিতে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে এতো উচ্চ স্থান, এতো বড় সম্মান ও পদমর্যাদা দান করলেন? হাদীস সমূহের বর্ণনায় এসেছে- হযরত উবাই ইবনে কা’ব সাহাবাদের মধ্যে কুরআনের জ্ঞানে সর্বাধিক পারদর্শী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা যে অসংখ্য পন্থায় সাহাবাদের প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা করেন তাঁর মধ্যে একটি ছিল, যে সাহাবীর মধ্যে কোন বিশেষ প্রতিভা এবং অসাধারন যোগ্যতার সমাবেশ ঘটতো- আল্লাহ তায়ালা তাঁর সাথে বিশেষ ব্যবহার করতেন। যাতে এই বিশেষ যোগ্যতা ও প্রতিভার বিকাশ এবং লালন ঘটতে পারে এবং তাঁর শৌর্য-বীর্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। এজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হেদায়াত দান করা হয়েছে, আপনি উবাই ইবনে কা’বকে কুরআন পাঠ করে শুনান। হযরত উবাই ইবনে কা’ব এটা জানতে পেরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বললেন, আল্লাহু আকবর, আমার এই মর্যাদা যে, আল্লাহ তায়ালার দরবারে আমার নাম নিয়ে আমার উল্লেখ করা হয়েছে।
আপনি এ থেকে অনুমান করতে পারেন, সাহাবাদের অন্তরে কুরআন মাজীদের প্রতি কি ধরনের মহব্বত ও আকর্ষণ ছিল। তাঁদের কতো সম্মান ও মর্যাদা ছিল যে, তারা আল্লাহ তায়ালার নজরে পড়েছেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁদের সাথে বিশেষ আচরন করেছেন।