হালীমার কথা
হালীমা বর্ননা করেছেন যে, তিনি তাঁর স্বামী ও একটি দুগ্ধপোষ্য পুত্রকে সাথে নিয়ে বনু সা’দের একদল মহিলার সাথে দুধ-শিশুর সন্ধানে বের হন। ঐ মহিলারা সকলেই দুধ-শিশুর সন্ধানে ব্যাপৃত ছিল। বছরটি ছিল ঘোর অজন্মার। আমরা একেবারেই সকলেই দুধ-শিশুর সন্ধানে ব্যাপৃত ছিল। বছরটি ছিল ঘোর অজন্মার। আমরা একোরেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলাম। আমি একটি সাদা গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আমাদের সাথে ছিল আমাদের বয়স্ক উটটি। সেটি এক ফোটা দুধও দিচ্ছিল না। আমাদের যে শিশু-সন্তানটি সাথে ছিল ক্ষুধার জ্বালায় সে এত কাঁদছিল যে, তার দরুন আমরা সবাই বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছিলাম। তার ক্ষুধা নিবৃত্ত করার মত দুধ আমার বুকেও ছিল না, উষ্ট্রীর পালানেও ছিল না। বৃষ্টি ও স্বাচ্ছন্দ্য লাভের আশায় আমর উন্মুখ হযে ছিলাম। এ অবস্থায় আমি নিজের গাধাটার পিঠে চড়ে বেড়িয়ে পড়লাম। পথ ছিল দীর্ঘ এবং এক নাগাড়ে চলতে চলতে আমাদের গোটা কফিলা ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়লো। অবশেষে আমরা দুধ-শিশুর খোঁজে মক্কায় উপনীত হলাম। আমাদের প্রত্যেককেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু যখনই বলা হয় যে, তিনি পিতৃহীন, তখন প্রত্যেক্ েঅস্বীকার করে বসে। কারণ আমরা প্রত্যেকেই শিশুর পিতার কাছ থেকে উত্তম পারিতোষিক প্রত্রাশা করতাম। কারণ আমরা প্রত্যেকেই শিশুর পিতার কাছ থেকে উত্তম পারিতোষিক প্রত্যাশা করতাম। আমরা প্রত্যেকেই বলাবলি করতাম, “পিতৃতীন শিশু! শিশুর মা আর দাদা কিইবা পারিতোষিক দিতে পারবে?” এ কারণে আমরা সবাই তাঁকে গ্রহণ করতে অপছন্দ করছিলাম। ইতিমধ্যে আমার সাথে আগত সকল মহিলাই একটা না একটা দুধ-শিশু পেয়ে গেল। পেলাম না শুধু আমি। খালি হাতেই ফিরে যাবো বলে যখন মনন্থির করেছি, তখন আমি আমার স্বামীকে বললাম, “খোদার কসম, এতগুলো সহযাত্রীর সাথে শূন্য হাতে ফিরে যেতে আমার মোটেই ভাল লাগছে না। খোদার কসম, ঐ ইয়াতীম শিশুটার আছে আমি যাবোই এবং ওকেই নেব।” আমার স্বামী বকললেন, “নিতে পার। হয়তো আল্লাহ ওর ভেতরই আমাদের জন্য কল্যাণ রেখেছেন। ”
হালীমা বলেন, অতঃপর আমি গেলাম ও ইয়াতীম শিশুকে নিয়ে এলাম। আমি শুধু অন্য শিশু না পাওয়ার কারণেই তাকে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম তাকে নিয়ে কাফিলার কাছে চলে গেলাম। তাকে যখন কোলে নিলাম তখন আমার স্তন দু’টি দুধে অর্তি হয়ে গেল এবং তা থেকে শিশু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেট ভরে দুধ খেলেন। তার দুধভাইও পেট ভরে দুধ খেলো। অতঃপর দু’জনেই ঘুমিয়ে পড়লো। অথচ ইতিপূর্বে তার জ্বালায় আমরা ঘুমাতে পারতাম না। আমার স্বামী আমাদের সেই উষ্ট্রীটার কাছে যেতেই দেখতে পেলেন, সেটির পালানও দাধে ভত্যি। অতঃপর তিনি প্রচুর পরিমানে দুধ দোহন করলেন এবং আমরা দু’জনে তৃপ্ত হয়ে দুধ পান করলাম। এরপর বেশ ভালোভাবেই আমাদের রাতটা কাটলো।
সকাল বেলা আমার স্বামী বললেন, “হালীমা, জেনে রেখো, তুমি এক মহাবল্যাণময় শিশু এনেছ।” আমি বললাম, “বাস্তবিকই আমারও তাই মনে হয়।”
এরপর আমরা রওয়ানা দিলাম। আমি গাধার পিঠে সওয়ার হলাম। আমার গাধা গোটা কাফিলাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চললো। কাফিলার কারো গাধাই তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হলোনা। আমার সহযাত্রী মহিলারা বরতে লাগলো, “হে আবু যুয়াইবের কল্যা, একটু দাঁড়াও আবং আমাদের জন্য অপেক্ষা কর। এটা কি তোমার সেই গাধা নয় যেটার পিঠে চড়ে তুমি এনছিলে?” আমি তাদেরকে বললাম, “হা্রাঁ, সেইটাই তো।” তারা বললো, “আল্লাহর কসম, এখন এর অবস্থাই পাল্টে গেছে।”
শেষ পর্যন্ত আমরা বনি সা’দ গোত্রে আমাদের নিজ নিজ গৃহে এসে হাজির হলাম। আমাদের ঐ এলাকাটার মত খরাপীড়িত এলাকা দুনিয়ার আর কোথাও ছিল বলে আমার জানা ছিল না। শিশু মাহাম্মাদকে নিয়ে বাড়ী পৌঁছার পরে প্রতিদিন আমাদের ছাগল ভেড়াগুলো খেয়ে পরিতৃপ্ত এবং পালান ভর্তি দুধ নিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসতো। আমরা তা যথামত দোহন করে পান করতে লাগলাম, অথচ অন্যান্য লোকেরা এক কাতরা দুধ দোহাতে পাতো না। তাদের ছাগল-ভেড়ার পালানে এক ফোঁটা দুধও পেতো না। এমনকি আমাদের গোত্রের লোকেরা রাখাদের বলতে লাগলো, “আবু যুরাইবের কন্যার (হালীমা) রাখল যেখানে মেষ চরায় সেখানে নিয়ে চড়াবে।” রাখালরা আমার (হালীমার) মেষ চড়ানো সত্বেও মেষপাল ক্ষুধার্ত আবস্থায় ফিরে আসতো। এভাবে ক্রমেই আমার সংসার প্রাচুর্য ও সুখ-সমৃদ্ধিমে ভরে উঠতে লাগলো। এ অবস্থার ভেতর দিয়েই দু’বছর অতি বাহিত হলো এবং আমি শিশু মুহাম্মাদের (সা) দুধ ছাড়িয়ে দলাম। অন্যান্য ছেলেদের চেয়ে দ্রুত গতিতে তিনি বড় হতে লাগলেন। দু’বছর বয়স হতেই তিনি বেশ চটপটে ও নাদুসনুদুস বালকে পরিনত হলেন। আমরা তাঁকে তাঁর মার কাছে নিয়ে গেলাম। তবে আমরা তাঁকে আমাদের কাছে রাখতেই বেশী আগ্রহী ছিলাম। আরণ তাঁর আসার পর থেকে আমর াবিপুল কল্যাণের অধিকারী হয়েছিলাম। তাঁর মাকে আমি বললাম, “আপনি যদি এই ছেলেকে আমার কাছে আরো হৃষ্টপুষ্ট হওয়া পর্যন্ত থাকতে দিতেন তাহলেই ভালো হতো। আমার আশংকা হয়, মক্কার রেগ-ব্যাধিতে বা মহামারিতে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন।” শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁকে আমাদের সাথে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন।
আমরা তাঁকে নিয়ে ফিরে এলাম। এর মাত্র কয়েক মাস পরে একদিন তিনি তাঁর দুধভাই-এর সাথে আমাদের বাড়ীর পেছনের মাঠে মেষ শাবক চরাচ্ছিলেন। এমন সময় তাঁর ভাই দৌড়ে এলো এবং আমাকে ও তাঁর পিতাকে বললো,“আমার ঐ কুরাইশী ভাইকে সাদা কাপড় পরিহিত দুটো লোক এসে ধরে শুইেেয় দিয়ে পেট চিরে ফেলেছে এবং পেটের সবকিছু বের করে নাড়াচড়া করছে।”
আমি ও তার পিতা-দুজনেই তাঁকে পড়িয়ে ধরলাম এবং বললাম, “বাবা তোমার কী হয়েছে?” তিনি বললেন, “আমার কাছে সাদা কাপড় পরা দু’জন লোক এসেছিলো। তারা আমাকে শুইয়ে দিয়ে আমার পেট চিরেছে। তারপর কি যেন একটা জিনিস খুঁজেছে, আমি জানি না তা কী?”
এরপর আমরা মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিয়ে নেজেদের বাড়ীতে ফিরলাম। আমার স্বামী বললেন, “হালীমা, আমার আশংকা, এই ছেলের ওপর কোন কিছুর আছর হয়েছে। কাজেই কোন ক্ষতি হওয়ার আগেই তাঁকে তাঁর পরিবারের কাছে পৌঁছে দাও।”
যথার্থই আমরা তাঁকে কাঁর মার কাছে নিয়ে গেলাম। তাঁর মা বললেন, “ধাত্রী বোন, তুমি তো ওকে কাছে রাখতে খুব উদগ্রীব ছিলে। কি হয়েছে যে, একে নিয়ে এলে?” আমি বললাম, “আল্লাহ আমাকে দু’টি ছেলের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার যা করণীয় ছিল তা আমি করেছি। কোন অঘটন ঘটবে বলে আমার আশংকা হয়। এ নিয়ে আমার চিন্তার অবধি নেই। তাই আপনার ছেলেকে ভালোয় ভালোয় আপনার হাতে তুলে দিলাম।” আমিনা বললেন, “তুমি যা বলছো তা প্রকৃত ঘটনা নয়। আসল ব্যাপারটা কি আমাকে সত্য করে বলো।” এভাকে পুরো ঘটনা খুলে না বলা পর্যন্ত তিনি আমাকে ছাড়লেন না। ঘটনা শুনে আমিনা বললেন, “তুমি কি তাহলে মনে করছো ওকে ভূতে ধরেছ্ ে”আমি বললাম, “হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “ওকে যখন গর্ভে ধারণ করেছি তখন স্বপ্নে দেখি, আমার দেহ থেকে একটা জ্যোতি বেরিয়ে এলো এবং তার প্রভায় সিরীয় ভুখ-ের বুসরার প্রসাদগুলে আলোকিত হয়ে গেল। অতঃপর সে গর্ভে বড় হতে লাগলো। আল্লাহর কসম, এত হালকা ও বহজ গর্ভধারণ আমি আর কখনো দেখিনি। যখন ওকে প্রসব করলাম তখন মটিতে হাত রাখা ও আকাশের দিকে মাথা উঁচু করা অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হলো। তুমি ওকে রেখে নির্দ্বিধায় চলে যেতে পার।”
বক্ষ বিদারনের ঘটনা
ইবনে ইসহাক বলেন,
সাওর ইবনে ইয়াযীদ কতিপয় বিদ্বান ব্যক্তির নিকট থেকে (আমার ধারণা, একমাত্র খালিদ বিন মা’দান আল কালয়ীর নিকট থেকেই) বর্ণনা করেছেন যে, কতিপয় সাহাবী একরার হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লামকে বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আপনার নিজের সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলুন।” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, শোনো। আমি পিতা ইবরাহীমের দোয়ার ফল এবং ভাই ঈসার সুসংবাদের পরিণতি। আমি গর্ভে আসার পর আমার মা স্বপ্নে দেখেন যে, তাঁর মধ্য এথকে একটা জ্যোতি বেরুলো যা দ্বারা সিরিয়ার প্রসাদসমূহ আলোকিত হয়ে গেলো। আর বনু স’দ ইবনে বাক্র গোত্রে আমি ধাত্রীয় ােলে লালিত-পালিত হই। এই সময় একদিন আমার এক দুধভাই-এর সাথে আমেিদর (ধাত্রী মাতা হালীমার) বাড়ীর পেছনে মেষ চরাতে যাই। তখন সাদা কাপড় পরা দু’জন লোক আমার কাছে আসে। তাদের কাছে একটা সোনার তশতরী ভর্তি বরফ ছিল। তারা আমাকে ধরে আমার পেট চিড়লো। অতঃপর আমার হৃদপি- বের করে তাও চিরলো এবং তা থেকে এক ফোটা কালো জমাট রক্ত বের করে তা ফেলে দিল। তারপর ঐ বরফ দিয়ে আমার পেট ও হৃদপি- ধুয়ে পরিষ্কার করে দিল। অতঃপর তাদের একজন অপরজনকে বললো : মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লাম) তাঁর উম্মাতের দশজনের সাথে ওজন কর। সে আমাকে পরিমাপ করলো এবং আমি দশজনের চাইতে বেশী হলাম অতঃপর সে আবার বললো : তাঁকে তাঁর উম্মাতের একশে জনের সাথে ওজন কর। আমি একশো জনের চাইতেও বেশী হলাম। অতঃপর সে আবার বললো :তাঁকে তাঁর উম্মাতের এক হাজার জনের সাথে ওজন কর। আমাকে এক হাজার জনের সাথে ওজন করলে আমি এবারও ওজনে তাদের চাইতে বেশী হলাম। অতঃপর সে বললো : রেখে দাও, আল্লাহর কসম, তাঁকে যদি তাঁর সমগ্র উম্মাতের সাথেও ওজন করা হয় তাহলেও তিনিই তাঁদের সবার চাইতে ওজনে বেশী হবেন।”
দাদার অভিভাবকত্বে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লাম তাঁর মা আমিন বিনতে ওযাহাব ও দাদা আবদুর মুত্তালিব ইবনে হাশিমের জীবদ্দশায়ও আল্লাহর তদারক ও তত্ত্বাবধানে ছিলেন। এই সময় আল্লাহ পতি দ্রুত তাঁর শারীরিক প্রবৃদ্ধি দান করেন, যাতে আল্লাহর ইস্পিত অলৌকিকত্ব তাঁর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যখন তাঁর বয়স হয় ছয় বছর, তখন মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী ‘আবওয়া’ নামক স্থানে তাঁর মাতা ইনতিকাল করেন। সেখানে শিশু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লামকে সাথে নিয়ে তিনি বনী আদ ইবনে নাজ্জার গোত্রে মুহাম্মাদের (সা) মামাদের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। মক্কা অভিমুখে প্রত্যাবর্তনের সময় তিনি ইনতিকাল করেন। মায়ের ইনতিকালের পর হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লাম দাদা আবদুল মুত্তালিবের একক তত্ত্বাবধানে লালিত পালিত হতে থাকেন। আবদুল মুত্তালিবের জন্য কা’বা শরীফের ছায়ায় চাদর বিছানো হতো। আবদুল মুত্তালিব সেখানে উপস্থিত না হওযা পর্যন্ত ঐ চাদরের আশে পাশে বসে থাকতো তাঁর পুত্র পৌত্ররা আবদুল মুত্তালিবের সম্মানার্থে কেই তাঁর ওপর বসতো না। কিন্তু দৃঢ়চেতা কিশোর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লাম এসেই বিছানার ওপর গিয়ে বসে পড়তেন। তাঁর চাচা তাঁকে ধরে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করতেন। তা দেখে আবদুল মুত্তালিব বলতেন, “তোমরা আমার পৌত্রকে বাধা দিও না। আল্লাহর কসম, সে এক অসাধারন ছেলে।” অতঃপর তাঁকে সাথে নিয়ে চাদরের ওপর বসতেন এবং তাঁর পিঠে হাত বুলিয়ে আদার করতেন। তাঁর সব কাজই তাঁর ভাল লাগতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বযস আট বছর পূর্ণ হলে আবদুল মুত্তালিব মারা যান। আবরাহার হস্তী বাহিনী নিয়ে কা’বা শরীফ আক্রমণ করার আট বছর পর তিনি মারা যান।
চাচা আবু তালিবের অভিভাবকত্বে
আবদুল মুত্তালিবের তিরোধানের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লাম তাঁর চাচা আবু তালিবের কাছে লালিত-পালিত হতে লাগলেন। তৎকালে বনু লেহাব গোত্রের এক ব্যক্তি মানুষের দৈহিক লক্ষণসমূহ দেখে ভাগ্য বিচার করতো। সে যখন মক্কায় আসতো, কুরাইশরা তাদের ছেলেদের নিয়ে তার কাছে ভীড় জমাতো। সে ছেলেদের শরীরের ওপরে নজর বুলিয়ে তাদের ভাগ্য বলতো। অন্যদের সাথে আবু তালিবও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে উক্ত গণকের কাছে গেলেন। গণক তাঁর দিকে তাকালো এবং পরক্ষণেই যেন এবটু ভাবতে আরম্ভ করলো। ক্ষণিকের জন্য সে বালক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লামের কথা এড়িয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর বললো, “এই বালককে নিয়ে একটু বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হবে।” আবু তালিব বালক মুহাম্মাদের প্রতি গণকের অধিক মনোযোগ লক্ষ্য করে তাঁকে কৌশলে সরিয়ে দিলেন। এতে গণক বললো, “তোমাদের এ কি কা-! বালকটাকে আমার কাছে আবার নিয়ে এসো। আল্লাহর কসম, এ এক অসাধারণ বালক।”
পাদ্রী বাহীরার ঘটনা
কিছুদিন পরের ঘটনা। আবু তালিব এক কাফিলার সাথে সিরিয়ায় রওয়ানা হলেন বাণিজ্যোপক্ষে। যাত্রার প্রক্কালে বালক মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লাম) তাঁর সাথে যাওয়ার আবদার করলেন। স্নেবিগলিত চাচা তাঁর আবদার উপেক্ষা করতে পারলেন না। তিনি বললেন, “আমি তাঁকে সাথে নিয়ে যাবো, তাঁকে রেখে আমি কক্ষণও কোথাও যাবো না।”
আবু তালিব তাঁকে সাথে নিয়ে সফরে বেরুলেন। কাফিলা বুসরা এলাকায় পৌঁছলে যাত্রবিরতি করলো। সেখানে ছিলেন বাহীরা নামে এক খৃস্টান পাদ্রী। এক গীর্জায় তিনি থাকতেন। ঈসায়ী ধর্ম সম্পর্কে তিনি ছিলেন খুবই পারদর্শী। দীর্ঘকাল ব্যাপী ঐ গীর্জায় একখানা আসমানী কিতাব রক্ষিত ছিলো। পুরুষানুক্রমে ঐ জ্ঞানের উরাধিকার চলে আসছিলো। বাহীরর কাছ দিয়ে ইতিপূর্বে তারা প্রায়ই আসা-যাওয়া করতেন। কিন্তু তিনি কারো সামনে বেরুতেন না বা কারো সাথে কথা বলতেন না। কিন্তু এই বছর যখন কুরাইশদের কাফিলা আবু তালিব ও বালক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ ঐ স্থানে বাহীরার গীর্জার পাশে যাত্রাবিরতি করলো তখন বাহীরা তাদের জন্য প্রচুর খাদ্যের ব্যবস্থা করলেন।
কথিত আছে বাহীরা তাঁর গীর্জায় বসেই একটা আশ্চর্য ব্যাপার দেখতে পান। তিনি কাফিলার এগিয়ে আসার সময় দেখেন যে, সমগ্র কাফিলার মধ্যে একমাত্র বালক মৃহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই আকাশ থেকে একখ- মেঘ ছায়া দিয়ে চলেছে। অতঃপর তারা একটা গাছের ছায়ায় যাত্রাবিরতি করলে মেঘ এবং সেই গাছের ডালপালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ঝুঁকে ছায়া দিতে লাগলো। এ দৃশ্য দেখে বাহীরা গীর্জা থেকে বেরিয়ে আসলেন এবং লোক পাঠিয়ে কাফিলার লোকদেরকে বলে পাঠালেন, “হে কুরাইশ বনিকগণ, আমি আপনাদের জন্য খাওয়ার বন্দোবন্ত করেছি। আপনাদের মধ্যে ছোটবড় দাস বা মনিব সবাইকে এসে খাদ্য গ্রহণ করতে অনুরোধ করছি।” কুরাইশদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বললো, হে বাহীরা, আজকে আপনি নতুন মহিমায় ম-িত হয়েছেন। ইতপূর্বে আমরা বহুবার আপনার নিকট দিয়ে যাতায়াত কেরছি। কিন্তু কখনো আপনি এরূপ আতিথেয়তা দেখাননি। আজকে আপনার এরূপ করার কারণ কি?” বাহীরা বললেন, “সে কথা ঠিকই। আগে আমি কখনো এরূপ করিনি। তবে আজ আপনারা আমার অতিথি। তাই মনের ইচ্ছা আপনাদের যত্ন করি,আপনাদের জন্য খাবার তৈরী করি এবং আপনার সকলেই খাবার গ্রহণ করুন।”
অতঃপর সকলেই খেতে গেলেন। কিন্তু অল্পবয়স্ক হবার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফিলার বহরের সাথে গাছের ছায়ায় বনে রইলেন। খাওয়ার জন্য সমবেত কুরাইশী বণিকদের সবাইকে ভালভাবে পরখ করে বাহীরা সেই পরিচিত হাব-ভাব ও চালচনের কোন লক্ষণ দেখতে পেলে না, যা বালক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে তিনি দেখেছিলেন। তাই তিনি বললেন, হে কুরাইশী অতিথিবৃন্দদ, আপনাদের কেউই যেন আমার খাবার গ্রহণ থেকে বঞ্চিত না থকেন।” তারা বললেন, “হে বাহীরা, যারা এখনে আসার মত তারা সবাই এসেছেন। শুধুমাত্র একটি বালক কাফিলার বহরে রয়েছে। সে কাফিলার মধে কনিষ্ঠতম।” বাহীরা বললেন, “না, তাঁকে বাদ রাখবেন না। তাঁকেও ডাকুন। সেও আপনাদের সাথে খাবার গ্রহণ করুক।” জনৈক কুরাইশী বললো, “লাত-উয্যার শপথ, আবদুল্লাহ ইবনে আবুদল মুত্তালিবের ছেলে আমাদের সাথে থাকবে অথচ আমাদের সাথে খাবার গ্রহণ করবে না। এটা হতে পারে না। এটা আমাদের জন্য নিন্দনীয় ব্যাপার।” একথা বলেই সে উঠে গিয়ে বালক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাকে কোলে করে নিয়ে এলো এবং সবার সাথে খাবারের বৈঠকে বসিয়ে দিলো। এই সময় বাহীরা তাঁর সমগ্র অবয়ব গভীরভাবে দেখতে লাগলেন এবং দেহের বিশিষ্ট নিদর্শনগুলো পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। তাঁর বিবরণ তিনি পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে পেয়েছেন। সমাগত অতিথিদের সকলের খাওয়া শেষ হলে এবং তারা এক এক করে সবাই বেরিয়ে গেলে বাহীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন, “হে বৎস, আমি তোমাক লাত ও উয্যার দোহাই দিয়ে অনুরোধ করছি, আমি যা জিজ্ঞেস করবো তুমি তার জবাব দেবে।” বাহীরা লাত ও উয্যার দোহাই দিলেন এই জন্য যে, তিনি কুরাইশদেরকে পরস্পর কথাবার্তা বলার সময় ঐ দুই মূর্তির শপথ করতে শুনেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমাকে লাত-উয্যার দোহাই দিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আল্লাহর শপথ, আমি ঐ দুই দেবতাকে সর্বাধিক ঘৃণা করি।” বাহীরা বললেন, “আচ্ছা তবে আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, যা জিজ্ঞেস করবো তার জবাব দেবে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “বেশ, কি কি জানতে চান বলুন।” অতঃপর বাহীরা তাঁকে নানা কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। তাঁর ঘুমন্ত অবস্থার কথা, তাঁর দেহের গঠন-প্রকৃতি ও অন্যান্য অবস্থার কথা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সব প্রশ্নের যা জবাব দিলেন, তা বাহীরার জানা তথ্যের সাথে হুবহু মিলে গেল। তারপর তিনি তাঁর পিঠ দেখলেন। পিঠে দুই স্কন্ধের মধ্যবর্তী স্থানে নবুওয়াতের মোহর অংকিত দেখতে পেলেন। মোহর অবিকল সেই জায়গায় দেখতে পেলেন যেখানে বাহীরার পড়া আসমানী কিতাবের বর্ণনা অনুসারে থাকার কথা ছিল।
এসব করার পরে বাহীরা আবু তালিবকে জিজ্ঞেস করলেন, “বালকটি আপনার কে?” তিনি বললেন, “আমার ছেলে।” বাহীরা বললেন, “সে আপনার ছেলে নয়। এই ছেলের পিতা জীবিত থাকতে পারে না।” আবু তালিব বললেন,“বালকটি আমার ভ্রাতুষ্পুত্র।” বাহীরা বললেন, “ওর পিতার কি হয়েছিল?” আবু তালিব বললেন, “এই ছেলে মায়ের পেটে থাকতেই তার পিতা মারা গেছে।” বাহীরা বললেন, “এই ছেলে মায়ের পেটে থাকতেই তার পিতা মারা গেছে।” বাহরিা বললেন, “ঠিক, এ রকম হওয়ার কথা। আপনার ভ্রাতুষ্পুত্রকে নিয়ে গৃহে ফিরে যান। খবরদার, ইয়াহুদীদের থেকে ওকে সাবধানে রাখবেন। আল্লাহর কসম, তারা যদি এই বালককে দেখতে পায় এবং আমি তার যে নিদর্শন দেখে চিনেছি তা যদি চিনতে পারে তাহলে তারা ওর ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করবে। কেননা আপনার এ ভ্রাতৃষ্পুত্র অচিরেই এক মহা মহামানব হিসাবে আবির্ভূত হবেন।”অতঃপর তাঁকে নিয়ে তিনি তাড়াতাড়ি স্বদেশে ফিরে গেলেন।
ফিজারের যুদ্ধ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিশ বছরের তরুন, তখন ফিজার যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। ফিজার যুদ্ধ নামকরনের কারণ এই যে, এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কিনানা ও কাইস ঈলান গোত্রদ্বয়ের উভয়েই তাদের পরস্পরের নিষিদ্ধ জিনিসসমূহ লংঘন করেছিল। কুরাইশ ও কিনানার যৌথ বাহিনীর নেতা ছিলেন হারব ইবনে উমাইয়া। দিনের প্রথমাংশে যুদ্ধে কাইস কিনানাকে পরাজিত করে। কিন্তু দিনের মধ্যাহ্ন ভাগে কিনানা জয়ী হয়।[১৫.ইবনে হিশাম উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিজার যুদ্ধে কয়েকদিন অংশগ্রহণ করেন। তাঁর চাচারা তাঁকে সঙ্গে করে রণাঙ্গনে নিয়ে গিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমি শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর ও বর্শাগুলো প্রতিহত করতাম এবয় তা কুড়িয়ে এনে চাচাদের হাতে তুলে দিতাম।” এটা ছিল সর্বশেষ ফিজার যুদ্ধ। এটি ফিজার আল-বারাদ নামে খ্যাত। ইতপূর্বে আরো তিনটি ফিজার যুদ্ধ সংগটিত হয়েছিল। প্রথমটি কিনানা ও হাওয়াযিন গোত্রের মধ্যে, দ্বিতীয়টি কুরাইশ ও হাওয়াযিন গোত্রের মধ্যে এবং তৃতীয়টি কিনানা ও হাওয়াযিন গোত্রের মধ্যে।]
খাদীজা রাদিয়ল্লাহ আনহার সাথে বিয়ে
খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ ছিলেন তৎকালীন আরবের একজন সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মহিলা। তিনি লোকজনকে নির্দিষ্ট বেতনে ও লভ্যাংশের ভিত্তিতে ব্যবসায়ে নিয়োগ করতেন। ব্যবসায়ী গোত্র হিসেবে কুরাইশদের নাম-ডাক ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা ও চারিত্রিক মহত্ত্বের কথা জানতে পেরে তিনি তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে তাঁর পণ্যসামগ্যী নিয়ে সিরিয়া যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বললেন যে, এজন্য তিনি অন্যদেরকে যা গিয়ে থাকেন তার চেয়ে উত্তম সম্মানী তাঁকে দেবেন। মাইসারাহ নামক এক কিশোরকেও তাঁর সাহায্যের জন্য সঙ্গে দিতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং খাদীজার পণ্য সামগ্রী ও দাস মাইসারাহকে সাথে নিয়ে সিরিয়ায় রওয়ানা হলেন। অনতিবিলম্বে তিনি সিরিয়ায় গিয়ে পৌঁছলেন।
সিরিয়ায় পৌঁছে তিনি জনৈক ধর্মযাজকের গীর্জার নিকটবর্তী এক গাছের নীচে বিশ্রাম করলেন। ধর্মযাজক মাইসারাহকে জিজ্ঞেস করলেন, “গাছটির নীচে যিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন তিনি কে?” মাইসারাহ বললেন, “তিনি হারামের অধিবাসী জনৈক কুরাইশ বংশীয় ব্যক্তি।” ধর্মযাজক কললেন, “এই গাছের নীচে নবী ছাড়া আর কেউ কখনো বিশ্রাম নেয়নি!”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আনীত পণ্য বিক্রি করে দিলেন এবং নতুন কিছু জিনিস ক্রয় করলেন। অতঃপর তিনি মক্কা অভিমুখে রওনা হলেন। পথে যেখানেই দুপুর হয় এবং প্রচ- রৌদ্র ওঠে, মাইসারাহ দেখতে পায় যে, দু’জন ফিরিশতা মুহাম্মাদকে ছায়া দিয়ে রৌদ্র থেকে রক্ষা করেছে এবং তিনি উটের পিঠে সওয়ার হয়ে এগিয়ে চলেছেন। মক্কায় পৌঁছে তিনি খাদীজাকে তাঁর ক্রয় করা পণ্যদ্রব্য বুঝিয়ে দিলেন। খাদীজা ঐ মাল বিক্রি করে প্রয় দ্বিগুণ মুনাফা লাভ করলেন। মাইসারাহ খাদীজাকের যাজকের বক্তব্য ও নবীকে (সাঃ) দুই ফিরিশতার ছায়াদানের বিষয় অবহিত কললেন। খাদীজা ছিলেন দৃঢ় ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বুদ্ধিমতি ও সম্ভ্রান্ত মহিলা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহত্ত্ব ও সততার সাথে পরিচিত হওয়া তার জন্য একটা অতিরিক্ত সৌভাগ্য রূপে বিবেচিত হলো, যা নিছক আল্লাহর ইচ্ছাক্রমেই তিনি লাভ করলেন। মাইসারাহ কাছে উক্ত অলৌকিক ঘটনার কথা শুনে খাদীজা লোক পাঠিয়ে তাঁকে বললেন, “ভাই, আপনাদের গোত্রের মধ্যে আপনার যে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান, যে আত্নীয়তার বন্ধন এবং সর্বোপরি আপনার বিশ্বস্ততা, চরিত্রমাধুর্য ও সত্যবাদিতার যে সুনাম রয়েছে, তাতে আমি মুগ্ধ এবং অভিভূত।” এই কথা বলে খাদীজা তাঁকে বিয়ে করার প্রন্তাব দেন। কুরাইশদের মধ্যে খাদীজা ছিলেন সর্বাপেক্ষা অভিজাত বংশীয়া, সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সম্ভ্রান্ত এবং অতিশয় ধনাঢ্য মহিলা। এ কারণে সম্ভব হলে তাঁর গোত্রের সকলেই তাঁকে বিয়ে করার অভিলাষ পোষণ করতো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজার এ প্রস্তাব চাচাদেরকে জানালেন। চাচা হামযা খাদীজার পিতা খুয়াইলিদ ইবনে আসাদের (ইবনে আবদুল উযযা ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুররাহ ইবনে কা’ব ইবনে লুয়াই) সাথে দেখা করে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলেন এবং বিয়ে সম্পন্ন হলো।[১৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মোহরানা হিসেবে খাদীজাকে ২০ টি উট দিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম স্ত্রী এবং তাঁর জীবদ্দশায় তিনি আর কোন বিয়ে করেননি।]
খাদীজার গর্ভে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একমাত্র ইবরাহীম ছাড়া সব সন্তান জন্মে তাঁরা হলেন : কানিম, তাহির তাইয়েব, যয়নব, উম্মে কুলসুম ও ফাতিমা। কাসিমের নামানুসারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবুল কাসিম নামেও খ্যাত হন। কাসিম ও তাহির জাহেলিাতের যুগেই মারা যান। কিন্তু মেয়েরা সবাই ইসলামের আবির্ভাব প্রত্যক্ষ করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করে পিতার সাথে হিজরাত করেন।[১৭. বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, তাহির ও তাইয়েব দুই ব্যক্তি। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হলো এ দুটোই আবদুল্লাহর উপনাম। তাঁকে এই দুই নেিমই ডাকা হতো।]