কুবায় উপস্থিতি
আবদুর রহমান ইবনে উয়াইমি ইবনে সায়েদা স্বগোত্রীয় বিপুল সংখ্যাক সাহাবীর এই বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন: আমরা যখন শুনতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে রওয়ানা হয়েছেন এবং যে কোন দিন মদীনায় পৌঁছতে পারেন বলে আমরা মনে করছিলাম, তখন থেকে প্রতিদিন ফজরের নামাযের পর আমাদের এলাকার উন্মুক্ত প্রন্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতীক্ষা করতাম। সূর্যের উত্তাপ অসহনীয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা সরতাম না। যখন আর কোন ছায়া থাকতো না তখন ফিরে যেতাম। তখন ছিলো প্রচ- গরমের মৌসুম। যে দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যি সত্যি এসে পৌঁছলেন, প্রতিদিনের মত সেদিনও আমরা প্রান্তরে বসে অপেক্ষা করছিলাম। সূর্য মাথার ওপর আসার কারণে যখন কোন ছায়া অবশিষ্ট থাকলো না তখন আমরা বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করলাম। আমরা বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৌঁছলেন। একজন ইহুদী সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছিলো। আমরা কিভাবে তাঁর অপেক্ষায় থাকতাম তা সে দেখেছিলো। তাই সে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বললো, “হে কায়লার বংশধরগণ, [৪৬. এ কথা দ্বারা সমগ্র আনসারদেরকে বুঝায়। কায়লা তাদের এক খ্যাতনামা পিতামহী ছিলেন।]
তোমাদের সৌভাগ্যের ধন এসে গিয়েছে।”
আমরা একটা খেজুর গাছের ছায়ায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাত করলাম। তাঁর প্রায় সমবয়সী আবু বাক্র (রা) তাঁর সঙ্গে ছিলেন। আমাদের অধিকাংশ লোকই তখন পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেনি। তাঁকে দেখার জন্য বিরাট জনতার ভিড় জমলো অথচ কে আবু বাক্র আর কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা কেউ বুঝতে পারছিলো না। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীরের ওপর থেকে ছায়া সরে গেলো, তখন আবু বাক্র (রা) নিজের চাদর দিয়ে তাঁকে ছায়া দিতে লাগলেন। তখন আমরা সবাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনতে পারলাম।
ইবনে ইসহাক বলেন, অনেকের মতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম কুলসূম ইবনে হিদামের, আবার কারো মতে সা’দ ইবনে খাইসামার মেহমান হন। যারা বলেন, তিনি কুলসূম ইবনে হিদামের মেহমান হয়েছিলেন, তাঁরা বলেন যে, তিনি কুলসূমের বাড়ীতে থাকলেও লোকজনকে সাক্ষাত দানের জন্য অকৃতদার সা’দ ইবনে খাইসামার বাড়ীতে গিয়ে বসতেন। মুহাজিরদের ভেতরে যারা অবিবাহিত তাঁরাও ঐ বাড়ীতেই থাকতেন। আবু বাক্র সিদ্দীক (রা) মেহমান হন হাবিব ইবনে ইসাফের, মতান্তরে খাবেজা ইবনে যায়িদের।
আলী ইবনে আবু তালিব (রা) মক্কায় তিন দিন অবস্থান করেন। এই সময়ের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গচ্ছিত আমানতসমূহ মালিকদের কাছে ফেরত দেয়ার কাজ সম্পন্ন করেন এবং তারপর হিজরাত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে চলে যান। তিনিও কুলসূম ইবনে হিদামের মেহমান হন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবাতে ইবনে আওফ গোত্রে সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার এই চার দিন অবস্থান করেন। এই সময় তিনি সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
মদীনায় উপস্থিতি
অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি শুক্রবার কুবা ত্যাগ করেন। বনু সালেম ইবনে আওফের বস্তিতে গিয়ে তিনি জুমার নামায পড়েন। বাতনুল ওয়াদীর মসজিদে তিনি জুমার নামায আদায় করেন। বাতনুল ওয়াদীর আর এক নাম ওয়াদীয়ে রানুনা। এখানেই তিনি মদীনায় প্রথম জুমার নামায আদায় করলেন।
ইতবান ইবনে মালিক ও আব্বাস ইবনে উবাদা ইবনে নাদলা সহ বনু সালেম ইবনে আওফের একদল লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললো, “হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের যা কিছু জনবল, সহায় সম্বল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে, তাতে খুশী হয়ে আমাদের এখানেই আপনি স্থায়ীভাবে বসবাস করুন।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের উষ্ট্রীকে দেখিয়ে বললেন, “একে তোমরা পথ ছেড়ে দাও। আল্লাহর তরফ থেকে এটির ওপর নির্দেশ রয়েছে আমাকে যথাস্থানে নিয়ে যাওয়ার।” সবাই তাই করলো। উষ্ট্রী নিজের ইচ্ছামত চলতে লাগলো। বনু বায়াদা গোত্রের বস্তির নিকট যখন হাজির হলো, তখন যিয়াদ ইবনে লাবীদ ও ফারওয়া ইবনে আমরের নেতৃত্বে বনু বায়াদা গোত্রের একদল লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাজির হয়ে বললো, “হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের এখানে আসুন, আমাদের যে জনবল, সহায় সম্বল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে তাঁর মধ্যে এসে বসবাস করুন।” তিনি বললেন, “এই উষ্ট্রীকে তার ইচ্ছামত যেতে দাও। কেননা ওকে যথাস্থানে আমাকে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ” উষ্ট্রীটি চলতে লাগলো। বনু সায়েদার বস্তিতে পৌঁছলে সা’দ ইবনে উবাদা ও মুনযির ইবনে আমরের নেতৃত্বে বনু সায়েদার একদল লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ আগলে দাঁড়ালো। তারাও বনু বায়াদা ও বনু সালেমের মত একই অনুরোধের পুনরাবৃত্তি করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু বায়াদা ও বনু সালেমকে যে কথা বলেছিলেন বনু সায়েদাকেও তাই বললেন। উষ্ট্রী অগ্রসর হতে লাগলো। যখন সেটি খাযরাজ গোত্রের বনু হারেস পরিবারের বাড়ীর পাশ দিয়ে চলতে লাগলো, তখন সা’দ ইবনে রাবী, খবেজা ইবনে যায়িদ ও আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা বনু হারেস পরিবারের আরো কিছু লোককে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ আগলে দাঁড়ালো। তারা তাদের পরিবারে অবস্থান করা ও তাদের জনবল, সহায় সম্বল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ওপর আস্থা রাখার আমন্ত্রণ জানালো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা উষ্ট্রীকে যেতে দাও। কেননা এটি আমাকে উপযুক্ত স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদিষ্ট।” সকলে পথ ছেড়ে দিলো এবং উষ্ট্রীটা সামনের দিকে এগিয়ে চললো। চলতে চলতে উষ্ট্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মামাদের পরিবার বনী আদী ইবনে নাজ্জারের বাড়ী অতিক্রম করলো। তখন বনী আদী ইবনে নাজ্জারের কতিপয় লোককে সাথে নিয়ে সালীত ইবনে কায়েস ও আবু সালীত উসাইরা ইবনে আবি খাবিজা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এসে দাঁড়ালো। তারা বললো, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনারা আমাদের কাছে আসুন এবং আমাদের যা কিছু জনবল, সহায় সম্বল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে, তার ওপর আস্থা রাখুন।” তিনি বললেন, “উষ্ট্রীকে তার খেয়াল খুশীমত যেতে দাও। কারণ ওকে উপযুক্ত স্থানে আমাকে পৌঁছিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” এখানে উল্লেখ থাকে যে, বনী আদী ইবনে নাজ্জারেরই মেয়ে ছিলেন আবদুল মুত্তালিবের মা সালামা বিনতে আমর।
বনু মালিক ইবনে নাজ্জারের বাসস্থানের কাছে এসে উষ্ট্রী হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। সে যেখানে বসলো সেখানেই পরবর্তীকালে সমজিদে নববীর প্রবেশদ্বার তৈরী হয়। তৎকালে ঐ জায়গাটা ছিলো বনু নাজ্জারের দুটো ইয়াতীম শিশুর খেজুর শুকাবার জায়গা। শিশু দুটো হলো আমরের ছেলে সাহল ও সুহাইল। তাদের লালন পালন করতো মায়য ইবনে আকরা। উষ্ট্রী হাঁটু গেড়ে বসলেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পিঠ থেকে নামলেন না। স্থির হয়ে বসে রইলেন। কিছুক্ষন পর উষ্ট্রীটি সামান্য কিছুদূর এগিয়ে গেলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনও তার লাগাম শক্ত করে ধরে রাখলেন। অতঃপর উষ্ট্রী পিছনের দিকে ফিরে তাকালো এবং পুনরায় তাঁর প্রথম বিরতি স্থানে ফিরে এলা। সেখানে এসে হাঁটু গেড়ে বসলো। এবারে সে নড়াচড়া ও শব্দ করলো। তার বুক ও গলার নিম্নাংশ মাটিতে ঠেকিয়ে দিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উষ্ট্রীর পিঠ থেকে নামলেন। আবু আইয়ুব খালিদ ইবনে যায়িদ তাঁর আসবাবপত্র নামিয়ে নিলো এবং নিজের ঘরে নিয়ে রাখলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু আইয়ুবের মেহমান হলেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “খেজুর শুকাবার জায়গাটা কার?” মায়ায ইবনে আকরা বললো, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, ওটা আমরের ছেলে সাহল ও সুহাইলের। ওরা আমার পালিত ইয়াতীম। আমি তাদেরকে সম্মত করিয়ে নেবো। আপনি এখানে মসজিদ তৈরী করুন। ” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ স্থানে মসজিদ নির্মাণে আদিষ্ট হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মসজিদ ও ঘরবাড়ী তৈরী হওয়া পর্যন্ত আবু আইয়ুবের বাড়ী অবস্থান করলেন। এই মসজিদ নির্মাণের কাজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই যোগদান করেন, যাতে মুসলমানরাও অংশগ্রহণ করার প্রেরণা পায়। ফলে মুহাজির ও আনসারগণ সকলেই ঐ কাজে পূর্ণ আগ্রহের সাথে অংশ নেন। এ সম্পর্কে জনৈক মুসলমান স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন,
“আমরা যদি বসে থাকি আর নবী কাজ করেন, তা হবে আমাদের চরম ভ্রষ্টতার পরিচায়ক। ” মসজিদ নির্মানের সময় মাঝে মাঝেই মুসলমানরা উদ্দীপনার সাথে কবিতা বলতেন। যেমন: “আখিরাতের জীবন ছাড়া আর কোন জীবনের গুরুত্ব নেই। হে আল্লাহ, আপনি আনসার ও মুহাজিরদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। ” আর তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,“আখিরাতের জীবন ছাড়া আর কোন জীবনের গুরুত্ব নেই। হে আল্লাহ, আপনি আনসার ও মুহাজিরদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন।”
মসজিদ ও থাকার ঘর নির্মিত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু আইয়ুবের বাড়ী থেকে নিজের ঘরে গিয়ে বাস করতে লাগলেন।
আবু আইয়ুব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমার বাড়ীতে মেহমান হলেন, তখন তিনি নিচের তলায় থাকতে লাগলেন আর আমি ও আমার স্ত্রী উপরে। আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল, আমি উপরের তলায় থাকি আর আপনি নীচের তলায় থাকেন তা আমার কাছে নিতান্ত অপছন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। অতএব আপনি ওপরে থাকুন। আর আমরা নেমে এসে নীচে থাকি।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, “আমাদের নীচে থাকাটা আমাদের জন্য এবং যারা আমাদের সাথে দেখা সাক্ষাত করতে আসে তাদের জন্য অধিকতর সুবিদাজনক।”
এ জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীচের তলায় এবং আমরা ওপরের তলায় বাস করতে লাগলাম। একবার আমাদের একটা পানি ভর্তি কলসী ভেঙ্গে গেলো। আমাদের একটি মাত্র কম্বল ছিলো আর কোন লেপ বা শীতবস্ত্র ছিলোনা। অগত্যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গায়ে তা থেকে পানি পড়বে এবং তাতে তিনি কষ্ট পাবেন এই আশংকায় আমি ও আমার স্ত্রী ঐ কম্বলটা দিয়েই পানি মুছে ফেললাম।
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের জন্য খাবার তৈরী করে পাঠাতাম। তিনি ঐ খাবারের উদ্বৃত্তটুকু ফেরত পাঠালে আমি ও আমর স্ত্রী বরকতের আশায় তাঁর হাত লাগানো জায়গা থেকেই খেয়ে নিতাম। একদিন রাত্রে এইভাবে তাঁর জন্য খাবার পাঠালাম। সেই খাবারে আমরা কিছু পিঁয়াজ বা রসুনও দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ফেরত পাঠালেন। আমরা ঐ খাবারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত স্পর্শ করার কোন চিহ্ন দেখতে পেলাম না। ফলে আমি ঘাবড়ে গিয়ে তাঁর কাছে গেলাম। বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল, আপনার জন্য আমার বাপ-মা কুরবান হোক। আপনি খাবার ফেরত পাঠালেন অথচ তাতে আপনার হাতের স্পর্শের কোন চিহ্নই দেখলাম না। আপনি যখনই খাবার ফেরত দিতেন, আমি ও আমার স্ত্রী বরকত লাভের জন্য সেই খাবার আপনার হাত লাগানোর জায়গা থেকে খেতাম।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি খাবারের মধ্যে অমুক গাছের গন্ধ পেয়েছি। যেহেতু আমাকে অনেকের মুখের কাছে মুখ নিয়ে আলাপ করতে হয়, তাই আমি খাইনি। অবশ্য তোমরা ওটা খেতে পার।” এরপর আমরা ঐ খাবার খেয়ে নিলাম। অতঃপর আর কখনো আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য পিঁয়াজ বা রসুন পাঠাইনি ইবনে ইসহাক বলেন এরপর মুহাজিররা হিজরাত করে একের পর এক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট চলে আসতে লাগলেন। একমাত্র যারা বন্দী ছিলেন অথবা কঠোর নির্যাতনে ইসলাম ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁরাই মক্কায় থেকে গেলেন। মুষ্টিমেয় কয়েকটি পরিবার ছাড়া আর সব কয়টি পরিবারেরই অবস্থা এরূপ ছিলো যে, তারা তাদের পরিবারের সব লোক এবং ধন সম্পদ মদীনায় নিয়ে আসতে পারেনি। যে কয়টি পরিবার তাদের সকল সদস্যসহ হিজরাত করতে সক্ষম হয়েছিলো তারা হলো,বনু জুমাহ গোত্রের বনু মাযউন পরিবার, বনু উমাইয়ার মিত্র বনু জাহাশ ইবনে রিয়াব এবং বনু সা’দ ইবনে লাইসের বনু বুকাইর পরিবার যারা বনু কা’বের মিত্র ছিলো। হিজরাতের পর এদের ঘরবাড়ী একেবারেই জনশূন্য ও অর্গলবদ্ধ ছিল।
মদীনাতে ভাষণ দান ও চুক্তি সম্পাদন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসে মদীনায় পৌঁছেন এবং পরবর্তী বছর সফর মাস পর্যন্ত মদীনাতেই অবস্থান করেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁর জন্য মসজিদ ও ঘর তৈরী করা হয়। উপরন্তু মদীনার আনসারদের এই গোত্রটির (বনু মালিক ইবনে নাজ্জার) ইসলাম গ্রহণের ফলে ইসলাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। একমাত্র খতমা, ওয়াকেদ, ওয়ায়েক ও উমাইয়া এই চারটি পরিবার ছাড়াও আওস গোত্রের একটি গোষ্ঠী পৌত্তলিকতা আঁকড়ে থাকে।
আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান আমর কাছে বর্ণনা করেছেন যে, মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সা) প্রথম যে ভাষণ দেন তাতে প্রথমে জনতার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করেন। তারপর নিম্নবর্ণিত কথাগুলো বলেন:
“হে জনম-লী, তোমরা আখিরাতের জন্য পুণ্য সঞ্চয় কর। জেনে রেখো, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ হয়তো সহসাই মারা যাবে, তার মেষপাল দেখার লোকও থাকবে না। অতঃপর তার রব জিজ্ঞেস করবেন। কোন দোভাষীও সেখানে থাকবে না। তিনি বললেন,‘তোমার কাছে কি আমার রাসূল আসেনি? আমি কি তোমাকে ধন সম্পদ অনুগ্রহ বিতরণ করিনি? তা থেকে তুমি কতটুকু আখিরাতের জন্য পাঠিয়েছো?’ তখন সে ডানে বামে তাকাবে। কিন্তু কিছুই দেখতে পাবে না। সামনের দিকে তাকাবে। সেখানে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না। যে ব্যক্তি নিজেকে দোযখ থেকে রক্ষা করতে পারে, তার নিজেকে রক্ষা করতে যত্নবান হওয়া উচিত তা যদি একটা খোরমার অংশ দিয়েও হয়। যার এটুকু ক্ষমতা সেই তারও উচিত অন্তত ভালো কথা বলে নিজেকে দোযখ থেকে রক্ষা করা। কেননা প্রতিটি ভালো কাজের পুরস্কার দশগুণ থেকে সাতশো গুণ পর্যন্ত দেয়া হয়। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।”
আরেকবার তিনি নিম্নরূপ ভাষণ দেন,
“সকল প্রশংসা। আমি তাঁর প্রশংসা করি ও তাঁর কাছেই সাহায্য চাই। আমরা তাঁর কাছে প্রবৃত্তির কুপ্ররোচনা ও খারাপ কাজ থেকে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন তাকে কেউ বিপথগামী করতে পারে না। আর আল্লাহ যার জন্য গুমরাহীর অনুমোদন দান করেন তাকে কেউ সুপথগামী করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক ও লা শরীক। বস্তুত: আল্লাহর কিতাব হলো সর্বোত্তম কথা। যে ব্যক্তির অন্তরে তিনি কুরআনকে আকর্ষণীয় করেছেন এবং যাকে কুফরীতে নিমজ্জিত থাকার পর ইসলাম গ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন এবং যে মানুষের কথা বাদ দিয়ে কুরআনকে গ্রহণ করেছে সে সফলকাম। কেননা কুরআনের চেয়ে সুন্দর ও অলংকারম-িত কথা আর নেই। আল্লাহ যা পছন্দ করেন তোমরা তাই পছন্দ কর। আল্লাহকে সমগ্র মন দিয়ে ভালবাস। আল্লাহর বাণী চর্চা ও তাঁর স্মরণে গাফিল হয়ো না এবং মনকে কঠিন হতে দিও না। কেননা আল্লাহ তাঁর প্রত্যেক সৃষ্টি থেকেই কিছু সংখ্যককে বাছাই করেন। তার আমল থেকেও কিছু আমলকে মনোনীত বলে স্থির করেছেন। তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকেও কিছু সংখ্যাক বান্দাকে মনোনীত করেছেন। তিনি উত্তম কথা পছন্দ করেন। মানুষকে কিছু দেয়া হয়েছে তার মধ্যে হালাল ও হারাম দুই-ই আছে। অতএব আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করো না। তাঁকে যথার্থভাবে ভয় কর। তোমরা যে সব কথা মুখে বলে থাক তার ভেতরে যে কথা উত্তম তাকে কার্যে পরিণত করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সম্যবাদী হও, আল্লাহর অনুগ্রহ দ্বারা পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা গড়ে তোল। আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার লংঘিত হলে তিনি ক্রুদ্ধ হন। তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।”
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে একটি ঘোঘনাপত্র সম্পাদন করেন। এই দলীলের মাধ্যমে তিনি ইহুদীদের সাথে শাস্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতিশ্রুতি প্রদান ও গ্রহণ করেন, তাদের ধর্মপালনের স্বাধীনতা ও ধন সম্পদে তাদের মালিকানার স্বীকৃতি দেন এবং তদের সাথে কিছু শর্ত প্রদান ও গ্রহণ করেন। সে ঘোষণাপত্র নিম্নরূপ:
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কুরাইশ ও ইয়াসরিবের মু’মিন মুসলমানগণ এবং পরবর্তীকালে যারা তাদের অনুসারী হয়ে তাদের সাথে শরীক হবে ও একসাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করবে, তাদের পক্ষ থেকে এ একটি ঘোষণাপত্র। সমগ্র মানব জাতির মধ্যে তারা একটি স্বতস্ত্র উম্মাহ। কুরাইশদের মধ্য থেকে আগত মুহাজিররা তাদের ইসাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থকবে, তাদের পরস্পরের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দানের নীতি অক্ষুণœ থাকবে, তাদের পরস্পরের মধ্যে সাবেকী ক্ষতিপূরণ দানের নীতি অটুট থাকবে, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মু’মিনদের মধ্যে মুক্তিপণ নিয়ে বন্দীকে মুক্তি দেয়ার বিধান চালু থাকবে। বনু সায়েদাও তাদের ইসলাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মুমিনদের মধ্যে বন্দীকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া চলবে। বনু হারেস তাদের ইসলাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের পরস্পরের মধ্যে সবেকী ক্ষতিপূরণ দানের নীতি অক্ষুণœ থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মু’মিনদের মধ্যে বন্দীকে মুক্তপণের ভিত্তিতে মুক্তি দেয়ার রীতি অব্যাহত থাকবে। আর বনু জুশামও ইসলাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের সাবেকী ক্ষতিপূরণ দানের রীতি চালু থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মু’মিনদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মুক্তিপণের ভিত্তিতে বন্দী মুক্তির নীতি অক্ষুণœ থাকবে। বনু নাজ্জারও ইসলাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মু’মিনদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মুক্তিপণ নিয়ে বন্দী মুক্তির নীতি অব্যাহত থাকবে। বনু আমর ইবনে আওফ ইসলাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের সাবেকী ক্ষতিপূরণ দানের রীতি অব্যাহত থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মু’মিনদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মুক্তিপণের ভিত্তিতে বন্দীকে মুক্তি দেয়া চলবে। বনু নাবীত ইসলাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের সাবেকী ক্ষতিপূরণ দানের রীতি চালু থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মু’মিনদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মুক্তিপণ নিয়ে বন্দী মুক্তির নীতি অব্যাহত থাকবে। বনু আওস ইসলাম গ্রহনকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মু’মিনদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মুক্তিপণের ভিত্তিতে বন্দীকে মুক্তি দেয়া চলবে। মু’মিনগণ তাদের মধ্যকার ঋণগ্রন্ত ও অধিক সন্তানধারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ ও মুক্তিপণদানে সঙ্গতভাবে আর্থিক সাহায্য করবে। কোন মু’মিন অন্য মু’মিনের মিত্রের বিরোধিতা করবে না। খোদাভীরু মু’মিনগণ তাদের মধ্যকার বিদ্রোহী, ঘোরতর নির্যাতক, অপরাধী, মুসলিম সমাজের স্বার্থের ক্ষতিকারক ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারকের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যাবস্থা নেবে এবং এ ধরনের অপরাধীর বিরুদ্ধে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেবে, চাই সে তাদের কারো ছেলেই হোক না কেন। কোন কাফিরের স্বার্থে এক মু’মিন অন্য মু’মিনকে হত্যা করবে না এবং কোন কাফিরকে কোন মুমিনের বিরুদ্ধে সাহায্য করবে না। মুসলিম রাষ্ট্রে অনুগত অমুসলিমের অধিকার সমানভাবে নিরাপদ। একজন নগণ্যতাম অমুসলিমকেও মুসলমানরা পূর্ণ নিরাপত্তাসহ আশ্রয় দেবে। মু’মিনরা পরস্পরের মিত্র হয়ে থাকবে, তবে অন্যদের বেলায় এ কথা প্রযোজ্য নয়। আর ইহুদীদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি আমাদের আনুগত্য ও অনুসরণ করবে, সে আমদের সমান অধিকার ও সাহায্য লাভ করবে। এ ধরনের লোকদের ওপর কোন যুলুম চলতে দেয়া হবে না এবং তাদের ওপর কাউকে হামলা চালাতে সাহায্য করা হবে না। মু’মিনদের রক্ষাকবচ সবার ক্ষেত্রে এক ও অভিন্ন। ইসলামের স্বার্থে কোন যুদ্ধ সংঘটিত হলে সেই যুদ্ধে মুসলমান কোন অমুসলমানের সাথে সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে ছাড়া আপোষরফা করবে না। আমাদের মধ্য হতে প্রতিটা যোদ্ধাদল অন্য যোদ্ধাদলকে অনুসরণ করবে। মুমিনদের একজন অন্যজনকে হত্যা করতে পারবে শুধুমাত্র হত্যার বিনিময়ে এবং আল্লাহর বিধান অনুসারে। খোদাভীরু মু’মিনগণ সর্বশ্রেষ্ঠ ও দৃঢ়তম আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত। মদীনার কোন মুশরিক কুরাইশ সম্প্রদায়ের কারো জানমালেরর্ কষক বা জিম্মাদার হতে পারবে না, আর কোন মু’মিনের ক্ষতি সাধনে তাকে প্রশ্রয় দেবে না। যে ব্যক্তি কোন মু’মিনকে মৃত্যুদ- অপরাধ না করা সত্ত্বেও হত্যা করবে এবং তা যথাযথভাবে প্রমাণিত হবে, তাকে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করা হবে। অবশ্য নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে অন্য কোন উপায়ে খুশী করে থাকলে প্রাণদ- হবে না। তবে সর্বাবস্থায় মুমিনরা সকলে ঐ মুসলিম হন্তার বিরুদ্ধে থাকবে এবং তার পক্ষপাতিত্ব করা কোন মুমিনের জন্য হালাল হবে না। এই ঘোষণাপত্রকে মেনে নিয়েছে এবং আল্লাহ ও আখিরাতে অটুট বিশ্বাস রাখে এমন কোন মু’মিনের জন্য ইসলামী বিধানে উদ্ভট জিনিস সংযোজনকারীর সাহায্য করা বা আশ্রয় দেয়া বৈধ নয়। যে ব্যক্তি এ ধরনের লোককে সাহায্য করবে কিংবা আশ্রয় দেবে তার ওপর আল্লাহর লা’নত এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহর গজব নামবে। তার পক্ষে কোন সুপারিশ বা পণ গ্রহণ করা হবে না। আর তোমরা যখনই কোন বিষয়ে মতবিরেধে লিপ্ত হবে, তখন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শরণাপন্ন হবে।
মু’মিনরা যতদিন যুদ্ধরত থাকবে ততদিন ইহুদীরা তাদের যুদ্ধের রসদ যোগানোতে অংশ নেবে। বনু আওফের ইহুদিরা মু’মিনদের সাথে একই উম্মাতভুক্ত বলে গণ্য হবে, তারা নিজে এবং তাদের মিত্ররাও। কিন্তু মুসলমানরা ও ইহুদীরা সে অবস্থায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। তবে যে ব্যক্তি যুলুম অত্যাচার ও অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হবে সে কেবল নিজের পরিবার পরিজনের ধ্বংসই ডেকে আনবে। বনু নাজ্জারভ্কুত ইহুদীদের অধিকার বনু আওফের ইহুদীদের সমান। অনুরূপভাবে বনু হারেস, বনু সায়েদা, বনু জুশাম, বনু আওস, বনু সা’লাবা ও বনু শতাইবার ইহুদীদের অধিকার বনু আওফের ইহুদীদের সমান। তবে যুলুম অত্যাচার ও পাপাচারে লিপ্ত ব্যাক্তি নিজের ও নিজের পরিবার পরিজনের কেবল ধ্বংসই সাধন করবে। সা’লাবার যাবতীয় বাহ্যিক ব্যাপার তাদের ভেতরকার ব্যাপারের সমপর্যায়ে তাদের প্রাণের মতই সম্মানার্হ। আনুগত্য ও প্রতিশ্রুতিপরায়ণতা যেন সাবাইকে পাপাচার থেকে রক্ষা করে। সা’লাবার মিত্রদের অধিকার তাদের নিজেদেরই সমান। ইহুদেিদর আভ্যন্তরীণ ব্যাপার তাদের প্রাণের মতই সম্মানার্হ। তাদের ভেতর থেকে কেউ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতি ছাড়া মদীনার বাইনে যেতে পারবে না। প্রত্যেকের জেনে রাখা উচিত যে, কোন প্রকারের তর্ক বা জেরা দ্বারা আগুন থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করলো সে নিজের ও নিজের পরিবার পরিজনের ধ্বংসের বিনিময়েই হত্যা করলো। অবশ্য নিহত ব্যক্তি অপরাধী হলে আলাদা কথা। আল্লাহ তায়ালা এ ক্ষেত্রে অধিকতর মহানুভবতা পছন্দ করেন। ইহুদীদের ব্যয়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে এবং মুসলামানদের ব্যয়ভারও তারা নিজেরাই বহন করবে। এই ঘোষণাপত্রকে যারা মেনে নিয়েছে তদের কর্তব্য, কোন শরীক যুদ্ধরত থাকলে তাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করা এবং পরস্পরের মধ্যে হিতকামনা, সদুপদেশ ও মহানুভবতার সম্পর্ক থাকবে, কোন পাপা কাজে একজন আর একজনের সাথে শরীক হবে না। নিজের মিত্রের ক্ষতি সাধন এক ভয়ংকর নজিরহীন অপরাধ। মাযলুমকে সাহায্য করা সকলের কর্তব্য। মু’মিনরা যতদিন যুদ্ধরত থাকবে ততদিন ইহুদীরা তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে যাবে। [৪৭. অর্থাৎ আল্লাহ ও মুমিনগণের তাদের সহযোগিতা নিতে আপত্তি নেই।] এই ঘোষণাপত্রের শরীকদের জন্য ইয়াসরিবের অভ্যন্তরে ভাগ সম্পূর্ণ নিরাপদ। প্রতিবেশী যদি অপরাধী না হয় এবং ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত না থেকে থাকে তা হলে তার জান, মাল ও ইজ্জত নিজের জান, মাল ও ইজ্জতের মতই পূর্ণ নিরাপত্তার অধিকারী। কারো বাড়ীর ভেতরে বাড়ীর মালিকের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। এই ঘোষণাপত্র গ্রহণকারীদের মধ্যে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা ঝগড়া কলহ ঘটুক না কেন, তার ফায়সালার জন্য আল্লাহ ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরণাপন্ন হতে হবে। আল্লাহ সর্বাধিক সতর্কতা ও সততার সাথে এই ঘোষণাপত্রের বাস্তবায়ন দেখতে আগ্রহী।[৪৮. উল্লেখযোগ্য যে, এই ঘোষণাপত্র যখন গ্রহণ করা হয় তখন জিজিয়া আরোপ করা হয়নি এবং মুসলমানগণ দুর্বল ছিল। সে সময় ইহুদীরা মুসলমানদের পক্ষে যুদ্ধ করলে যুদ্ধলব্ধ সম্পদে ইহুদীদের অংশ থাকতো। এই ঘোষণাপত্রে তাদের জন্য যুদ্ধের ব্যয়ভার বহনে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল।] জেনে রাখা দরকার যে, কুরাইশ ও তাদের সহযোগীদের আশ্রয় দেয়া চলবে না। ঘেষনাপত্র গ্রহণকারীগণ মদীন আক্রমণকারীকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবে। আর যখন সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপনের আহ্বান জানানো হবে তখন তারা আহ্বানকারীর সাথে সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপন করবে। এ ধরনের কোন সন্ধি ও মৈত্রীর দিকে তাদেরকে যখন আহ্বান জানানো হবে তখন তা মেনে চলা মু’মিনদের জন্যও বাধ্যতামূলক হবে। তবে যে বা যারা ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণকরবে তখন তারা তাদের প্রাপ্য অংশ সেই পক্ষের নিকট থেকে নেবে যে পক্ষ তাদেরকে বাহিনীতে ভর্তি করেছিল। আওসে ইহুদীদের ও তাদের মিত্রদের অধিকার ও দায়দায়িত্ব এই ঘোষণাপত্র গ্রহণকারীদের অধিকার ও দায়দায়িত্বের মতই এবং ঘোষণাপত্র সম্পাদনকারীদের কাছ থেকে তারা পূর্ণ ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লাভ করতে পাবে। কেউ সততার পথ অবলম্বন করলে তার পূর্বতন পাপাচার ক্ষমার চোখে দেখতে হবে। কেউ খারাপ কাজ করলে তা তার নিজেরই ক্ষতি সাধন করবে। আল্লাহ এই ঘোষণাপত্রের আনুগত্রের ব্যাপারে সর্বধিক সততা ও সত্যবাদিতা দেখতে চান। এই ঘোষণাপত্র কোন অত্যাচারী বা অপরাধীর জন্য রক্ষকবচ নয়। যুলুম কিংবা অপরাধে লিপ্ত না হলে য্দ্ধু থেকে বেরিয়ে যাওয়া কিংবা নিস্ক্রিয় বসে থাকা লোকও মদীনার চৌহদ্দির ভেতরে নিরাপত্তা লাভ করবে। যে ব্যক্তি সততা ও খোদাভীতির পথে অবিচল থাকবে, আল্লাহ ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আশ্রয়দাতা ও সহায়ক থাকবেন।”
আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃ সম্পর্ক স্থাপন
ইবনে ইসহাক বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাজির ও আসসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করেন। তিনি যা বলেননি, তা তার ওপর আরোপ করা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। আমি জানতে পেরেছি যে, তিনি প্রতি দুইজনের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করেছিলেন। এরপর তিনি আলী ইবনে আবু তালিবের হাত ধরে বললেন, “এ হলো আমার ভাই।” এভাবে নবীদের সরদার, মুত্তাকীদের নেতা, বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের রাসূল, বিশ্বজাহানে যাঁর কোন জুড়ি নেই- তিনি আর আবু তালিব তনয় আলী (রা) নতুন করে ভ্রাত্র বন্ধনে আব্দধ হলেন। আর আল্লাহ ও রাসূলের সিংহ এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব ও যায়িদ ইবনে হারেসার ভ্রাতৃ সম্পর্ক স্থাপিত হলো। উহুদ যুদ্ধে যাওয়ার প্রক্কালে হামযা অছিয়ত করে গিয়েছিলেন যে, তাঁর মৃত্যু হলে যায়িদ ইবনে হারেসা তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন। আবু তালিবের পুত্র জাফর তাইয়ার ও বনু সালামা বংশোদ্ভূত মুয়ায ইবনে জাবাল পরস্পর ভ্রাতৃ বন্ধনে আবদ্ধ হন। উমার ইবনুল খাত্তাব ও ইতবান ইবনে মালিক পরস্পর ভাই হন। আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ ও সা’দ ইবনে মুয়ায, আবদুর রহমান ইবনে আওফ ও সা’দ ইবনে রাবী, যুবাইর ইবনুল আওয়াম ও সালামা ইবনে সুলামা, উসমান ইবনে আফফান ও আওস ইবনে সাবিত, তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ ও কা’ব ইবনে মালিক, সাঈদ ইবনে যায়িদ ও উবাই ইবনে কা’ব, মুসআব ইবনে উমাইর ও আবু আউয়ূব ভালিদ, আবু হুযাফা ইবনে উতবা ইবনে কা’ব, মাসআব ইবনে উমাইর ও আবু আইয়ূব খালিদ, আবু হুযাইফা ইবনে উতবা ও ‘উব্বাদ ইবনে বিশর, আম্মার ইবনে ইয়াসার ও হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান এবং আবু যার গিফারী ও মুনযির ইবনে আমর পরস্পর ভ্রাতৃ সম্পর্ক স্থাপন করেন। এছাড়াও হাতিব ইবনে আবু বালতাআ ও উয়াইম ইবনে সায়েদা, সালমান ফারসী ও আবুদ্ দারদা এবং আবু বাক্রের (রা) আযাদকৃত দাস বিরার ও আবু রুয়াইহার মধ্যে ভ্রাতৃ বন্ধন স্থাপিত হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর যে সব সাহাবীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করেন তাদের মধ্যে উল্লিখিত সাহাবীদের নামই আমি জানতে পেরেছি।
আযানের সূচনা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় তাঁর মুহাজির ভাইদের সবাইকে কাছে পেয়ে এবং আনসারদের ঐক্যবদ্ধ সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করে যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তখন ইসলাম একটি সুসংহত শক্তিতে পরিণত হলো। সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত নামায কায়েমের ব্যবস্থা হলো, যাকাত ও রোযা ফরয হলো এবং অপরাধ দমনের আইন চালু হলো। হালাল হারামের বিধানও কার্যকর হলো। এভাবে ইসলাম তাদের মধ্যে পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করলো। আনসারদের এই গোত্রটিই ঈমান গ্রহণের পর এখানে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসার পর মুসলমানগণ নামাযের সময় হলেই তাঁর কাছে আপনা থেকেই জমায়েত হতো, ডাকতে হতো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনস্থ করলেন, ইহুদীরা যেমন শিঙ্গা বাজিয়ে নামাযের জন্য লোক জমায়েত করে থাকে তিনিও তেমনি শিঙ্গা বাজানোর ব্যাবস্থা করবেন। কিন্তু পরক্ষণেই ব্যাপারটা তাঁর মনঃপূত না হওয়ায় বাদ দিলেন। এরপর ঘণ্টা বাজিয়ে মুসলমানদেরকে নামাযে ডাকায় বিষয়টি চিন্তা করলেন।
এইসব চিন্তাভাবনা চলাকালেই আবদুল্লাহ ইবনে যায়িদ কিভাবে মানুষকে ডেকে জমায়েত করতে হয় তা স্বপ্নে দেখলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখলাম, অচেনা একজন লোক সবুজ কাপড় পড়ে এবং একটা ঘণ্টা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লোকটা আমার কাছ দিয়ে চলে যাওয়ার সময় আমি তাকে বললাম, ‘ওহে আল্লাহর বান্দা, তুমি কি এই ঘন্টাটা বিক্রি করবে?’ সে বললো, ‘ঘণ্টা দিয়ে তুমি কি করবে?’ আমি বললাম, ‘নামাযের জন্য লোকজনকে ডাকবো।’ সে বললো, ‘তোমাকে এর চেয়ে ভালো জিনিস শিখিয়ে দেবো?’ আমি বললাম, ‘কি জিনিস, বলতো।’ সে বললো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাল ফালাহ, হাইয়া আলাল ফালাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু।” রাসূলুল্লাহকে স্বপ্নের বৃত্তান্ত জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি বললেন, “ইনশাআল্লাহ এই স্বপ্ন সত্য। তুমি বিলালকে নিয়ে এক জায়গায় দাঁড়াও। তাকে কথাগুলো শিখিয়ে দাও। সে আযান দিক। কেননা ওর আওয়াজ তোমার আওয়াজের চেয়ে বড়।” বিলাল আযান দিলেন। উমার ঘরে বসে তা শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি চাদর টানতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, আল্লাহর কসম, আবদুল্লাহ ইবনে যায়িদ যে স্বপ্ন দেখেছে, আমিও সেই রকম দেখেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন।”
কতিপয় সাহাবীর রোগাক্রান্ত হওয়ার বিবরণ
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
মদীনায় জ্বরের প্রাদুর্ভাব ছিল সর্বাদিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের অনেকেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে এ থেকে ম্ক্তু রেখেছিলেন। আবু বাক্র ও তাঁর দুই ভৃত্য বিলাল ও ‘আমের ইবনে ফুহাইরা একই ঘরে বাস করতেন। তাঁরা সবাই জ্বরে আক্রান্ত হলেন। আমি তাঁদেরকে দেখতে গেলাম। তখনো পর্দার বিধান নাযিল হয়নি। আক্রান্তদের রোগযন্ত্রণা ছিল অবর্ণনীয়। আমি প্রথমে আবু বাকরের (রা) কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আব্বা, আপনার কেমন লাগছে?” তিনি একটা কবিতা আবৃত্তি করে জবাব দিলেন,
“প্রত্যেক মানুষ তার আপনজনের কাছে অবস্থান করে। অথচ মৃত্যু তার অতি নিকটেই।”
আমি বুঝতে পারলাম এবং মনে মনে বললাম, “আব্বা নিশ্চয়ই প্রলাপ বকছেন। ’
অতঃপর আমের ইবনে ফুহাইরার কছে গিয়ে বললাম, “আমের, আপনার শরীর কেমন?”
তিনিও কবিতা আবৃত্তি করে জবাব দিলেন, “মৃত্যুর সাদ উপভোগ করার আগেই মৃত্যু লাভ করেছি,
কাপুরুষের মৃত্যু তার মাথার ওপরেই থাকে,
প্রত্যেকটি লোক তার সর্বশক্তি দিয়ে জিহাদ করে, ষাঁড় যেমন শিং দিয়ে নিজের চামড়া বাঁচায়।”
আমি বুঝতে পারলাম, ‘আমের সংজ্ঞা হারিয়ে প্রলাপ বকছেন।
বিলালের জ্বরের প্রকোপ যখন বৃদ্ধি পেতো তিনি বাড়ীর উঠানে গিয়ে শুয়ে পড়তেন।
তারপর উচ্চস্বরে কবিতা আবৃত্তি করে বলতেন,
“আহা! আমি কি একটি রাত ইযখের ও গোলাপের সাহচর্যে ফাখখে কাটাতে পারবো?
আর একটি দিনও কি আমি মাজান্নার [৪৯. ফাখ্খ: মক্কায় বাইরের একটি জায়গার নাম। উযখের : এক ধরনের সুগন্ধী উদ্ভিদের নাম। মাজান্না: মক্কার নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত একটি বাজার।] জলাশয়ে নামবার সুযোগ পাবো? আর শামা ও তাফীল পর্বত দুটোকে কি আর একবারও দেখতে পাবো?[৫০. শামা ও তাফীর মক্কার দুটো পাহাড়ের নাম।]
তাঁদের কাছে যা শুনলাম তা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গিয়ে জানালাম। আমি বললাম, “জ্বরের প্রচ-তায় তাঁরা সবাই প্রলাপ বকছেন। যা বলছেন তা তাঁরা নিজেরাই বুঝেন না।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে আল্লাহ, আপনি মদীনাকে আমাদের কাছে মক্কার মত বা তার চেয়েও বেশী প্রিয় করে দিন। এখানে যেসব ফসল ফলে তাতে আমাদের জন্য বরকত দিন। এখান থেকে যাবতীয় রোগব্যাধি দূর করে মাহইয়ায়াতে [৫১. মাহইয়ায়া সিরিয়ার হাজীদের ইহরাম বাঁধার জায়াগা জুহফার অপর নাম।] নিয়ে যান।”