ইসলামাবাদের ইউনিটি সম্মেলনে যোগদানঃ
লন্ডন ভিত্তিক ইসলামী কাউন্সিলে উদ্যোগে ১৬ ও১৭ ফেব্রুয়ারী’১৯৮৮ পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে দুইদিন ব্যাপী ‘ইউনিটি কনফারেন্স’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম উম্মার ঐক্য। মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশের প্রতিনিধি এ সম্মেলনে যোগদান করেন। এছাড়াও অমুসলিম দেশের ইসলামী দল ও আন্দোলনের প্রতিনিধিরাও এত যোগদান করেন। কয়েকটি দেশ যেমন সৌদি আরব, ইরান ও মালয়েশিয়ার সরকারী প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনের স্ব স্ব দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সৌদি প্রতিনিধি দলের নেতা ছিলেন মুহাম্মদ বিন সউদ ইউনিভার্সিটি রিয়াদের ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ আব্দুল্লাহ তুর্কী এবং চার সদস্য বিশিষ্ট ইরানী দলের নেতা ছিলেন সর্ব্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংস্তা ‘মুরুব্বি কাউসিল এর সদস্য আয়াতুল্লাহ জান্নাতী। পাকিস্তান ও আফগান মোজাহিদীনের প্রতিনিধি ছাড়াও মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃস্থানীয় প্রায় একশত প্রতিনিধি এত যোগদান করেন। ইখওয়ানুল মুলিমিনের মুরশিদে আম, মিসরের শেখ আবু নাসেরের নেতৃত্বে মিসরের ও সুদানের ৬ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল এতে যোগদান করেন। জাবহাতুল ইসলামিয়া সুদানে চার সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সুদানের সাবেক মন্ত্রী ও জাবহাতুল ইসলামিয়া পার্টির প্রেসিডেন্ট ডঃ হাসান তোরাবী। সুদান থেকে সাবেক সামরিক প্রধান ও সাবেক মার্শল’ল প্রধান জনাব সুয়েরোজাহাব ও সুদানের আরও একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনাব আলজাযুলি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। মিসরীয় পার্লামেন্টের বিরোধী দলের নেতা জনাব ইব্রাহীম সাকুরীও প্রতিনিধি হিসেবে সম্মেলনে তাঁর বক্তব্য রাখেন। জর্দানের দুই সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন এডভোকেট আঃ রহমান খলিফা। নাইজেরিয়ার নয় সদস্য বিশিষ্ট দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ সালেহ। লেবাননের চার সদস্যের নেতা ছিলেন সাইয়েদ সাবান। মালয়েশিয়ার তিন সসদ্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলে নেতা ছিলেন মালয়েশিয়ার হেজবে ইলামীর সহ সভাপতি জনাব ডাঃ ফাজিল নূল। তুর্কীর মিল্লি সালামাত পার্টির চার সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতা ছিলেন মিল্লি সালামত পার্টির (বর্তমান রেফা পার্টি) নেতা তুর্কীর সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনাব নাজমুদ্দিন আরবাকান। তিউনিসিয়ার ‘হারকাতে ইত্তেজাহুল ইসলামী’ পার্টির সেক্রেটারী জেনারেল জনাব আবদুল ফাতাহ মমেরা তার দলে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আফগানিস্তান প্রতিরোধ যুদ্ধের সাত দলীয় ফ্রনেটর নেতা মাওলানা ইউনুস খালিস এছাড়াও হিজবে ইসলামী নেতা গুলবদীন হিকমত ইয়ার, ইত্তেহাদে ইসলামী প্রধান আব্দুর রব রসূল সাইয়াফ, জমিয়াতে ইসলামী নেতা বুরহানুদ্দীন রব্বানী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তুর্কী সাইপ্রাসেরও দু’জন প্রতিনিধি এসেছিলেন। মিন্দানাওর (ফিলিপাইন) মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের চার সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল নূর মাইসুরীর নেতৃত্বে এ সম্মেলনে যোগদান করেন। ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষের লোকও এখানে এসেছিলেন। এছাড়াও এশিয়া ও উইরোপের বিভিন্ন দেশের ইসলামী দলের প্রতিনিধিরাও এ সম্মেলনে যোগদান করেন। মোট কথা, মুসলিম উম্মার ঐক্যের ইদ্দেশ্যে অনিুষ্ঠিত এ সম্মেলন সবদিক দিয়েই প্রতিনিধিত্বমূলক ছিল। বেসরকারী উদ্যোগে অনুষ্ঠিত কোন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই বোধ হয় প্রথমবার ইরান ও সৌদি আরবের সরকারী প্রতিনিধিরা একত্রে বসলেন, এটা এ সম্মেলনের বিরাট কৃতিত্ব।
‘ইসলামাবাদ হোটেল’ নামীয় একটি উন্নত মানের ১ম শ্রেণীর হোটেলে প্রতিনিধিদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হোটেলটির পরিবেশ মোটামুটি ভালই ছিল। জামায়াতে নামায পড়ার ব্যবস্থা এবং প্রতি রুমে তাফসীরসহ কুরআন কারীম রাখার এন্তজাম হোটেলটির ইসলামী পরিবেশের পরিচায়ক।
বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের কে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য ইসলামাবাদ বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে ইসলামী কাউন্সিলের প্রতিনিধি এবং পাকিস্তান সরকারের প্রোটকল অফিসার উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ইসলামাবাদ হোটেলের লাউঞ্জে রিসিপশানের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। আমি করাচী ও লাহোর হয়ে ১৫ই ফেব্রুয়ারী সকাল ৮টায় পিআইএর বিমানে ইসলামাবাদ বিমান বন্দরে অবতরণ করি। বিমান বন্দরে ইসলামী কাউন্সিলের সেক্রেটারী জেনারেল জনাবা সালেম আযযাম এবং পাকিস্তান সরকারের প্রোটকল অফিসার আমাকে অভিনন্দন জানান। ইতিমধ্যেই এখানে বিবিন্ন দেশের আরও কয়েকজন বিশিষ্ট মেহমান উপস্থিত হয়েছিলেন। আমাদেরকে এখান থেকে ইসলামাবাদ হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে আমরা দু’ন প্রতিনিধি আমন্ত্রিত ছিলাম। আমি এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রধান ইমাম মাওলানা ওবায়দুল হক সাহেব। শেষ পর্যন্ত মাওলানা ওবায়দুল হক সাহেব অনুপস্থিত থাকায় আমি একাই বালাদেশ থেকে সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করি।
…………………………… অসম্পুর্ন