জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

সূদ ও আধুনিক ব্যাংকিং

অন্তর্গতঃ uncategorized
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. ভূমিকা
  2. ইসলাম, পুঁজিবাদ ও কম্যুনিজমের নীতিগত পার্থক্য
    1. পুঁজিবাদী ব্যবস্থা
    2. কম্যুনিস্ট অর্থব্যবস্থা
  3. ইসলামী অর্থব্যবস্থা
  4. ইসলামী অর্থব্যবস্থা ও তার মূলনীতি
    1. একঃ উপার্জন মাধ্যমে বৈধ-অবৈধের পার্থক্য
    2. দুইঃ ধন সঞ্চয়ের নিষেধাজ্ঞা
    3. তিনঃ অর্থ ব্যয় করার নির্দেশ
    4. চার: যাকাত
    5. পাঁচঃ মীরাসী আইন
    6. ছয়: গনীমত লব্ধ সম্পদ ও বিজিত সম্পত্তি বণ্টন
    7. সাতঃ মিতব্যয়ীতার নির্দেশ
    8. একটি প্রশ্ন
  5. সুদ হারাম কেন
    1. ১ -নেতিবাচক দিক
      1. সুদের যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা
      2. প্রথম ব্যাখ্যা
      3. দ্বিতীয় ব্যাখ্যা
      4. তৃতীয় ব্যাখ্যা
      5. চতুর্থ ব্যাখ্যা
      6. ন্যায়সঙ্গত সুদের হার
      7. সুদের অর্থনৈতিক লাভ ও তার প্রয়োজন
      8. সুদ কি যথার্থই প্রয়োজনীয় ও উপকারী?
    2. ২-ইতিবাচক দিক
      1. সুদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষতি
      2. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষতি
      3. আর্থিক ক্ষতি
      4. অভাবী ব্যক্তিদের ঋণ
      5. বাণিজ্যিক ঋণ
      6. রাষ্ট্রের বেসরকারী ঋণ
      7. বৈদেশিক ঋণ
  6. আধুনিক ব্যাংকিং
    1. প্রাথমিক ইতিহাস
    2. দ্বিতীয় পর্যায়
    3. তৃতীয় পর্যায়
    4. ফলাফল
  7. সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান
    1. রিবার অর্থ
    2. জাহেলী যুগের রিবা
    3. ব্যবসায় ও রিবার মধ্যে নীতিগত পার্থক্য
    4. ব্যবসা ও সুদের মধ্যে নীতিগত পার্থক্য হচ্ছে নিম্নরূপঃ
    5. হারাম হবার কারণ
    6. সুদ হারামের ব্যাপারে কঠোর নীতি
  8. সুদের আনুসঙ্গিক বিষয়াদি
    1. রিবা আল ফযল এর অর্থ
    2. রিবা আল ফযলের বিধান
    3. আলোচিত বিধানসমূহের সংক্ষিপ্ত সার
    4. হযরত উমর (রা)-এর উক্তি
    5. ফকীহগণের মতবিরোধ
    6. পশু বিনিময়ের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি
  9. অর্থনৈতিক বিধানের পুনর্বিন্যাস ও তার মূলনীতি
    1. আধুনিকীকরণর পূর্বে চিন্তার প্রয়োজন
    2. ইসলামী আইনের পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন
    3. পুনর্বিন্যাসের জন্য অপরিহার্য শর্তাবলী
    4. প্রথম শর্ত
    5. দ্বিতীয় শর্ত
    6. তৃতীয় শর্ত
    7. চতুর্থ শর্ত
    8. কঠোরতা হ্রাসের সাধারণ নীতি
    9. সুদের ক্ষেত্রে শরীয়তের কঠোরতা হ্রাসের পর্যায়
  10. সংশোধনের কার্যকর পদ্ধতি
    1. কয়েকটি বিভ্রান্তি
    2. সংস্কারের পথে প্রথম পদক্ষেপ
    3. সুদ রহিত করার সুফল
    4. সুদ বিহীন অর্থ ব্যবস্থায় ঋণ সংগ্রহের উপায়
    5. ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ
    6. বাণিজ্যিক প্রয়োজনে
    7. সরকারের অলাভজনক প্রয়োজনের ক্ষেত্রে
    8. আন্তর্জাতিক প্রয়োজনের ক্ষেত্রে
    9. লাভজনক কাজে পুঁজি বিনিয়োগ
    10. ব্যাংকিং-এর ইসলামী পদ্ধতি
  11. পরিশিষ্ট: এক
    1. বাণিজ্যিক ঋণ বৈধ কিনা?
  12. পরিশিষ্টঃ দুই
    1. ইসলামী সংস্কৃতি সংস্থার প্রশ্নমালা ও তার জবাব
  13. পরিশিষ্টঃ তিন
    1. সুদ সমস্যা ও দারুল হরব
      1. জনাব মাওলানা মানাযির আহসান গিলানী মরহুম
      2. অনৈসলামিক শক্তি কর্তৃক অধিকৃত দেশ সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গী
      3. অনৈসলামী রাষ্ট্রে মুসলমানদের জীবন পদ্ধতি
      4. আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
      5. রক্ষিত ও অরক্ষিত সম্পদ এবং তার বৈধতা ও অবৈধতা
      6. মূল আলোচ্য বিষয়ে প্রত্যাবর্তন
      7. দারুল হরবে সুদ হালাল নয় ‘ফাই’ হালাল
      8. ‘ফাই’ ও ‘ফাও’-এর পরিভাষা
      9. ‘ফাই’ অস্বীকার করা জাতীয় অপরাধ
      10. ব্যাংকের সুদ
      11. ‘ফাই’ গ্রহন না করা জাতীয় অপরাধ
      12. ইসলামী রাষ্ট্র ও সরকারের বিধান
      13. মাওলানার দ্বিতীয় প্রবন্ধ
      14. সমালোচনা
      15. মাওলানার যুক্তির সংক্ষিপ্ত সার
      16. বর্ণিত যুক্তিসমূহের উপর সামগ্রিক মন্তব্য
      17. অবৈধ চুক্তি কি শুধু মুসলমানদের মধ্যেই নিষিদ্ধ?
      18. দারুল হরবের আলোচনা
      19. ইসলামী আইনের তিনটি বিভাগ
      20. বিশ্বাসমুলক আইন
      21. শাসনতান্ত্রিক আইন
      22. দারুল হরব ও দারুল কুফরের পারিভাষিক পার্থক্য
      23. বৈদেশিক সম্পর্কের আইন
      24. অমুসলিমদের শ্রেনী বিভাগ
      25. হরবীদের সম্পদের শ্রেণী বিভাগ ও তার বিধান
      26. গনীমত ও লুণ্ঠিত দ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য
      27. দারুল হরবে কাফেরদের মালিকানার অধিকার
      28. পূর্ববর্তী আলোচনার সংক্ষিপ্তসার
        1. একঃ দারুল ইসলামের মুসলমান
        2. দুইঃ দারুল কুফর ও দারুল হরবে নিরাপত্তা প্রাপ্ত মুসলমান-
        3. তিনঃ দারুল কুফর এবং দারুল হরবের মুসলমান নাগরিক-
      29. শেষ কথা

২-ইতিবাচক দিক

আগের অধ্যায়ে আমরা যে আলোচনা করেছি তা থেকে প্রমান হয়েছে যে, সুদ যুক্তি ও ন্যায়সংগত নয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এর আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই উপরন্তু এর মধ্যে যথার্থ লাভ ও উপকারের কোনো অংশও নেই। কিন্তু শুধুমাত্র এ নেতিবাচক কারণগুলোর ভিত্তিতে সুদ হারাম ঘোষিত হয়নি। বরং সুদ হারাম হবার আসল কারন হচ্ছে এই যে, এটি চূড়ান্তভাবে ক্ষতিকর এবং অনেক দিক দিয়ে অনেক বেশী ক্ষতিকর।

এ অধ্যায়ে আমরা এর প্রতিটি ক্ষতিকর দিকের বিস্তারিত পর্যালোচনা করবো। আমাদের এ আলোচনার পর ইনশাআল্লাহ কোনো বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য এ নাপাক বস্তুটির হারাম হওয়া সম্পর্কে কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকবে না।

সুদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষতি

প্রথমে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার দৃষ্টিতে বিচার করা যাক। কারণ নৈতিকতা ও আত্মিক অনুভুতিই মানবতার মূল প্রাণশক্তি। মানবতার এ প্রাণশক্তির পক্ষে ক্ষতিকর যে কোনো বস্তুই অন্যদিক দিয়ে যতই লাভজনক হোক না কেন তা পরিত্যাজ্য। এখন সুদের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, অর্থ সঞ্চয়ের আকাঙ্খা থেকে শুরু করে সুদী ব্যবসায়ের বিভিন্ন পর্যায় পর্যন্ত সমগ্র মানসিক কাঠিন্য ও অর্থ পূজার পারদর্শিতার প্রভাবাধীনে পরিচালিত হয় এবং ব্যবসায়ে মানুষ যত এগিয়ে যেতে থাকে এ পারদর্শিতা ততই তার মধ্যে বিকাশ লাভ করতে থাকে। বিপরীতপক্ষে যাকাতও সাদকার সংকল্প করা থেকে শুরু করে একে কার্যকর করা পর্যন্ত সমগ্র মানসিক কর্মকান্ড দানশীলতা, ত্যাগ, সহানুভূতি, ঔদার্য, উন্নতি মনন ও সদিচ্ছপুষ্ট গুণাবলীর প্রভাবাধীনে অনুষ্ঠিত হয় এবং এ পদ্ধতিতে অনবরত কাজ করতে থাকলে এ গুণগুলো মানুষের মধ্যে বিকাশ লাভ করতে থাকে। দুনিয়ায় কি এমন কোনো মানুষের সন্ধান পাওয়া যাবে যে ঐ দু’ধরনের নৈতিক গুণাবলীর মধ্যে প্রথমগুলোকে খারাপ ও শেষেরগুলোকে ভালো বলে স্বীকার করবে না?

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষতি

এবার সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে বিচার করা যাক। সামান্য চিন্তা-ভাবনা করলে প্রত্যেক ব্যক্তি সহজেই বুঝতে পারবে যে, যে সমাজের লোকেরা পারস্পরিক স্বার্থ সিদ্ধির ভিত্তিতে পরস্পরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, নিজের ব্যক্তি স্বার্থ উদ্বার ও ব্যক্তিগত লাভ ছাড়া কেউ অপরের কোনো কাজে আসে না, একজনের অভাব অন্যজনের মুনাফা অর্জনের সুযোগ করে দেয় এবং বিত্তশালী শ্রেণীর স্বার্থ বিত্তহীন শ্রেণীর স্বার্থের প্রতিকূল হয়, সে সমাজ কোনদিন সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হতে পারে না। তার অংশগুলো হামেশা বিশৃংখলা ও বিক্ষিপ্ততার শিকার হতে থাকবে। এ পরিস্থিতির সাথে অন্যান্য কারন এসে যুক্ত হলে এ ধরনের সমাজের বিভিন্ন অংশের পরস্পর সংঘর্ষশীল হওয়া মোটেই বিচিত্র নয়। বিপরীত পক্ষে যে সমাজের সামগ্রিক ব্যবস্থা পারস্পরিক সহানুভুতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, যার ব্যক্তিবর্গ পরস্পরের সাথে দানশীলতা ও ঔদার্যপূর্ণ ব্যবহার করে, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি অন্যের প্রভাব ও প্রয়োজনের সময় প্রশস্ত হৃদয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এবং বিত্তবানরা বিত্তহীনদের সাথে সহানুভুতিপূর্ণ সহযোগিতা বা কমপক্ষে ন্যায়ানুগ সাহায্যের পথ অবলম্বন করে, সেখানে পরস্পরের মধ্যে প্রেম-প্রীতি ভালোবাসা, কল্যাণাকাঙ্খা ও অন্তরঙ্গতা বিকাশ লাভ করবে। এ ধরনের সমাজের বিভিন্ন অংশ পরস্পরের সাথে সংযুক্ত ও পরস্পরের পরিপূরক হবে। সেখানে অভ্যন্তরীন বিবাদ ও সংঘর্ষ সৃষ্টির কোনো সুযোগ থাকবে না। সেখানে পারস্পরিক সহযোগিতা ও মঙ্গলাকাঙ্খার কারণে উন্নতির গতি প্রথম সমাজের তুলনায় অনেক বেশী দ্রুত হবে।

অনুরূপ অবস্থা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হবে। একটি জাতি অন্য জাতির সাথে দানশীলতা, ঔদার্য ও সহানুভুতিপূর্ণ ব্যবহার করবে এবং তার বিপদের সময় নিতান্ত অন্তরঙ্গতা সহকারে সাহায্যের হাত প্রসারিত করবে। এ অবস্থায় অন্য পক্ষ থেকে এর জবাবে প্রেম-প্রীতি, কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক কল্যাণ কামনা ছাড়া অন্য কিছুই প্রকাশ সম্ভব নয়। বিপরীত পক্ষে একই জাতি যদি তার প্রতিবেশী জাতির প্রতি ব্যবহারে স্বার্থপরতা ও সংকীর্ণমনতার পরিচয় দেয় এবং তার বিপদকে ব্যবহার করে অবৈধভাবে লাভবান হতে চায়,তাহলে হয়তো তা থেকে অর্থনৈতিক লাভ বিপুল পরিমানে অর্জনে সক্ষম হবে কিন্তু এরপর এ ধরনের ‘শাইলক’ প্রকৃতির প্রতিবেশীর প্রতি ঐ জাতির মনে কোনো আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও কল্যাণাঙ্খার অনুভূতি জাগরুক থাকবে না। বেশী দিনের কথা নয়,বিগত বিশ্বযুদ্ধকালে আমেরিকার নিকট থেকে বৃটেন একটি বড় অংকের ঋণ নিয়েছিল। BRETTON WOOD AGREEMENT নামে তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বৃটেন তার ধনাঢ্য মিত্র ও যুদ্ধক্ষেত্রের সহযোগী আমেরিকার নিকট থেকে সুদমুক্ত ঋণ চাচ্ছিল। কিন্তু আমেরিকা সুদ ছাড়তে রাজী হয়নি। কাজেই নিজের সমস্ত অক্ষমতা সত্ত্বেও বৃটেন সুদ দিতে রাজী হয়। ইংরেজ জাতির উপর এর যা প্রভাব পড়ে তা সমকালীন ইংরেজ কূটনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের বক্তৃতা, বিবৃতি ও রচনাবলী থেকে সুস্পষ্টরূপে অনুমান করা যায়। প্রখ্যাত অর্থনীতি বিশারদ লর্ডকনেজ আঞ্জাহানী বৃটেনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারটিকে চূড়ান্ত করেন। চুক্তি সম্পন্ন করার পরে দেশে ফিরে বৃটিশ পার্লামেন্টে বক্তৃতা প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃ “আমেরিকা আমাদেরকে সুদমুক্ত ঋণ দিতে রাজী হয়নি এ দু:খ আমি সারা জীবন ভুলবো না।” মি: উইনষ্টন চার্চিলের ন্যায় আমেরিকার শ্রেষ্ঠতম বন্ধুও বলেনঃ “আমাদের সাথে যে বেনিয়াসুলভ আচরন করা হয়েছে তার গভীরে আমি অনেক বিপদাশংকা দেখতে পাচ্ছি। সত্য বলতে কি আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের উপর এর অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব পড়েছে।” তদানিন্তন অর্থমন্ত্রী ডঃ ডাল্টন এ চুক্তিটিকে অনুমোদন লাভের জন্য পার্লামেন্টে পেশ করে বলেনঃ “যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় আমরা এ ভারি বোঝা মাথায় নিয়ে বের হচ্ছি। আমরা একই উদ্দেশ্য যে অসাধারণ ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করে এসেছি এটি তার চমৎকার ও অদ্ভুত প্রতিদান। ভবিষ্যতের ঐতিহাসিকগনই আমাদের এই মজার পুরস্কারটি সম্পর্কে যথার্থ মতামত প্রকাশ করতে পারবেন। ——–আমরা কর্জে হাসানা দানের আবেদন জানিয়েছিলাম কিন্তু জবাবে বলা হয়, এটা কার্যকর রাজনীতি নয়।”

সুদের এ স্বাভাবিক প্রভাব ও এর অনিবার্য মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া সবসময় সব অবস্থায় প্রকাশ হতে থাকবে। এক জাতি অন্য জাতিকে বা এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে সুদভিত্তিক ঋণ দিলে সর্বাবস্থায় এ প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য। ইংল্যান্ডের লোকেরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে সুদী লেনদেনকে কোনো খারাপ কাজ বলে মেনে নিতে রাজী ছিল না এবং আজও রাজী নয়। আপনি কোনো ইংরেজকে সুদমুক্ত ঋণের কথা বললে সে তখনই জবাব দিয়ে বসবে,“জনাব এটা কার্যকর ব্যবসায়ের (PRACTICAL BUSINESS) নিয়ম নয়।” অথচ তার জাতীয় বিপদের দিনে তারই এক বন্ধু দেশ যখন তার সাথে ঐ একই কার্যকর ব্যবসায়ের পদ্ধতি অবলম্বন করে তখন প্রত্যেকটি ইংরেজ চীৎকার করে ওঠে। সুদ মনের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে এবং সম্পর্ক খারাপ করে, এ সত্যের সপক্ষে তারাই সারা দুনিয়ার সামনে সাক্ষ্য প্রদান করেছে।

আর্থিক ক্ষতি

এবার এর অর্থনৈতিক দিকের আলোচনায় আসা যাক। অর্থনৈতিক জীবনের যেসব বিষয় কোনো না কোনোভাবে ঋণের সাথে জড়িত সুদও সেসব বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। ঋণ বিভিন্ন প্রকারেরঃ

একঃ অভাবী লোকেরা নিজেদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যে ঋণ নিয়ে থাকে।

দুইঃ ব্যবসায়ী,শিল্পপতি ও চাষীরা নিজেদের লাভজনক কাজে খাটাবার জন্য যে ঋণ নেয়।

তিনঃ সরকার নিজের দেশবাসীর জন্য যে ঋণ নিয়ে থাকে। এ ঋণ হয় বিভিন্ন প্রকৃতির। এর মধ্যে কোনো কোনো ঋণ অলাভজনক কাজে ব্যবহার করার জন্য গ্রহণ করা হয়। যেমন,খাল-খনন,রেলপথ ও সড়ক নির্মাণ, পানি, বিদ্যুৎ পরিকল্পনা কার্যকর করণ প্রভৃতি।

চারঃ সরকার নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্যে বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে গ্রহণ করে।

সুদ আরোপিত হবার পর এগুলোর প্রত্যেকটি কোন ধরনের ক্ষতির অবতারনা করে পৃথক পৃথক আলোচনার সাহায্যে তা আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করব।

অভাবী ব্যক্তিদের ঋণ

মহাজনী ব্যবসায়ে (Money Lending Business) সবচেয়ে বেশী সুদের লেনদেন হয়। এ আপদটি কেবল এ হিমালয়ান উপমহাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বব্যপী এর প্রসার। দুনিয়ার কোনো দেশ এ আপদমুক্ত নেই। এর কারন হচ্ছে এই যে, দুনিয়ার কোথাও দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকদের জন্য জরুরী প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সহজ ঋণ লাভের কোনো ব্যবস্থা নেই। সুদমুক্ত ঋণ না হলেও অন্ততঃপক্ষে ব্যবসায়িক সুদের হারে ঋণ লাভের কোনো ব্যবস্থা কোথাও নেই। সরকার এ বিষয়টিকে নিজের দায়িত্ব বহির্ভূত মনে করে। সমাজ এর প্রয়োজন অনুভব করে না। ব্যংকে লাখো লাখো কোটি কোটি টাকার কারবারে হাত দেয়। তাছাড়া কোনো স্বল্প আয় সম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে নিজের কোনো আকস্মিক প্রয়োজনের জন্য ব্যাংক পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে ঋণ গ্রহণ করাও সহজসাধ্য নয়। এসব কারণে সব দেশের লোকেরা নিজেদের চরম দুর্দিনে এমনসব মহাজনের নিকট থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয় যাদেরকে তারা নিজেদের ধারে কাছে শকুনির ন্যায় নিরন্তর শিকারের সন্ধানে ঘোরাফেরা করতে দেখে। এ মহাজনী ব্যবসায়ে সুদের হর এতবেশী যার ফলে একবার যে ব্যক্তি এ জালে পা দিয়েছে তার পক্ষে আর নিজেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে দাদা যে ঋণ নিয়েছিল তা উত্তরাধিকার সূত্রে তার নাতিদের ঘাড়ে গিয়ে চেপে বসে এবং আসলের কয়েকগুন বেশী সুদ আদায় করার পরও আসল ঋণের পাহাড় পূর্ববৎ বুকের ওপর চেপে বসে থাকে। অতপর অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়,ঋণগ্রহীতা কিছুকাল যদি সুদ আদায়ের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে তাহলে আরোপিত সুদের অংককে আসলের অন্তর্ভুক্ত করে ঐ মহাজন নিজের আসল ও সুদ আদায় করার জন্য ঐ ব্যক্তিকে বর্ধিত সুদের হারে আর একটি বড় ঋণ দেয়, ফলে ঐ দরিদ্র ব্যক্তি আগের চেয়ে আরো বড় ঋণের বোঝার চাপে পিষ্ট হতে থাকে। ইংল্যান্ডে এ মহাজনী ব্যবসায় সর্বনিম্ন সুদের হার বছরে শতকরা ৪৮ এবং আইনের জোরে এ সুদ আদায় করা হয়। কিন্তু বাজারে এ সুদের সাধারন হার প্রচলিত এবং যার মাধ্যমে সেখানকার কাজ-কারবার চলছে তা হচ্ছে বছরে শতকরা ২৫০ থেকে ৪০০ ভাগ। এছাড়াও বছরে শতকরা বার তেরশো পর্যন্ত সুদের দৃষ্টান্তও পাওয়া গেছে। আমেরিকার মহাজনদের সুদের হার বছরে শতকরা ৩০ থেকে ৬০ পর্যন্ত কিন্তু তাদের সাধারন কাজ-কারবার চলে বার্ষিক শতকরা ১০০ থেকে ২৬০ হারে। অনেক সময় এ হার শতকরা ৪৮০-তেও পৌঁছে যায়। আমাদের এ উপমহাদেশে অত্যন্ত সদাশয় মহাজনরা বার্ষিক শতকরা ৪৮ ভাগ সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। অন্যথায় সুদের সাধারণ হার হচ্ছে বার্ষিক শতকরা ৭৫ এবং তা অনেক সময় শতকরা ১৫০-এ পৌঁছে যায় বরং শতকরা ৩০০ থেকে ৩৫০ এর দৃষ্টান্তও পাওয়া গেছে।

প্রত্যেক দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটা বিরাট অংশ এ মহবিপদজালে নিজেদেরকে মারাত্মকভাবে জড়িয়ে ফেলেছে। এর ফলে স্বল্প আয়ের লোকদের উপার্জনের বৃহত্তর অংশ মহাজনের সিন্দুকে চলে যাচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে সামান্য রুজি রোজগার তারা করে তার থেকে সুদ আদায় করার পর দু’বেলা দু’মুঠো পেট ভরে আহার করার মতো পয়সা তাদের হাতে অবশিষ্ট থাকে না। এ অবস্থা কেবল তাদের চরিত্র নষ্ট করে ক্ষান্ত হয় না,তাদেরকে অপরাধ প্রবণতার দিকেও ঠেলে দেয়,তাদের জীবনযাপনের মান নিম্নমুখী করে এবং সন্তানদের নিম্নমানের শিক্ষা দিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। উপরন্তু এর একটি মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এই যে,চিরন্তন দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী। দেশের সাধারণ কর্মজীবীদের কর্মশক্তি ও যোগ্যতা অনেকাংশে কমিয়ে দেয় এবং যখন তারা নিজেদের মেহনতের ফল অন্যদের ভোগ করতে দেখে তখন নিজেদের কাজে তাদের আগ্রহ ও মনযোগ কমে যায়। এ প্রেক্ষিতে বিচার করলে দেখা যাচ্ছে সুদী ব্যবসায় কেবল একটি যুলুমই নয় বরং একই সঙ্গে এর মধ্যে সামগ্রিক অর্থব্যবস্থার জন্য বিপুল ক্ষতি নিহিত রয়েছে। এটাকে চরম নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই বলা যেতে পারে না যে,জাতির যারা আসল উৎপাদক এবং যারা নিজেদের শ্রম-মেহনত বিপুল ধন-ঐশর্য ও সম্পদ সৃষ্টি করে জাতিকে সামষ্টিক সমৃদ্ধির দ্বারে এনে পৌঁছে দিয়েছে জাতি তাদের গায়ে অনেকগুলো জোঁক বসিয়ে দিয়েছে। এ জোঁকগুলো রক্ত চুষে তাদেরকে নিস্তেজ করে ফেলেছে। ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবে কত কর্ম-ঘন্টার ক্ষতি হয় এবং এর ফলে দেশের উৎপাদন কি পরিমানে কমে যায় তার হিসেব লাগিয়ে এ বিপুল পরিমাণ ক্ষতির পথরোধ করার জন্য মশা নিধনযঞ্জ শুরু করা হয়। কিন্তু সুদখোর মহাজনরা দেশের লাখো লাখো কর্মী বাহিনীকে কি পরিমাণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত,পেরেশান ও মনমরা করে দিচ্ছে,তাদের কর্মপ্রেরনাকে নিস্তেজ করে কি পরিমান কর্মশক্তি ক্ষয় করছে এবং দেশের উৎপাদনের উপর এর কি প্রভাব পড়েছে তার হিসেব লাগানো হচ্ছে না। বরং উল্টো ঐ মাহজনদের হাত শক্তিশালী করা হচ্ছে। দেশের বিপুল পরিমাণ কর্ম ঘাটতি ও উৎপাদন হ্রাসের নায়ক মহাজনদেরকে নির্মূল করার পরিবর্তে ঋণগ্রস্তদেরকে পাকড়াও করা হচ্ছে এবং মহাজনরা তাদের দেহ থেকে যে রক্ত শুঁষে নিতে পারছিল না দেশের আদালতগুলো তা তাদের দেহ থেকে নিংড়িয়ে নিয়ে মাহজনদের হাতে সোপর্দ করে দিচ্ছে।

এর দ্বিতীয় অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে এই যে,এভাবে সুদখোর মহাজনরা দরিদ্র শ্রেণীর অবশিষ্ট ক্রয়শক্তিও ছিনিয়ে নেয়। অবশ্যি পূর্বেই লাখো লাখো লোকের বেকারত্ব ও কোটি কোটি লোকের অকিঞ্চিৎ আয় দেশের শিল্প ব্যবসায়ের উন্নতির পথে বাধার পাহাড় তৈরী করে রেখে ছিল। তদুপরি সচ্ছল পরিবারকে খরচ না করার পথ দেখানো হয়েছে বরং বেশী বেশী সম্পদ জমা করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যবসা-বানিজ্য আর এক দফা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সর্বোপরি লাখো লাখো কোটি কোটি দরিদ্র শ্রমিক-মজুররা নিজেদের অকিঞ্চিৎ বেতন ও পারিশ্রমিকের আকারে যে সামান্য ক্রয়শক্তির অধিকারী হয় তাকেও তারা নিজেদের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ে ব্যয় করতে পারছে না। বরং তার একটি বড় অংশ মহাজনরা ছিনিয়ে নিচ্ছে এবং তার সাহায্যে প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র কেনার পরিবর্তে সমাজের মাথায় অতিরিক্ত সুদী ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার জন্য তাকে ব্যবহার করছে। হিসাব করে দেখুন,দুনিয়ার ৫ কোটি লোক যদি মাহজনদের জালে জড়িয়ে পড়ে থাকে এবং তারা গড়পড়তায় মাসে ১০ টাকা করে সুদ আদায় করতে থাকে তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে প্রতি মাসে ৫০ কোটি টাকার পণ্য অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে এবং এ বিপুল পরিমাণ অর্থ উৎপাদন যন্ত্রের দিকে ফিরে আসার পরিবর্তে প্রতি মাসে অতিরিক্ত সুদী ঋণ সৃষ্টির কাজে ব্যয়িত হচ্ছে।*

[*উল্লেখযোগ্য ১৯৪৫ সালে বিভাগপূর্ব বৃটিশ ভারতের এক হিসাব মতে দেশে মহাজনী ঋণের পরিমাণ ছিল কমপক্ষে দশশো কোটি টাকা। এতো মাত্র একটা দেশের অবস্থা। এ থেকে সারা দুনিয়ায় এ ধরনের ঋণের পরিমাণ এবং ঐ ঋণ বাবদ মহাজনদের ঘরে যে পরিমাণ সুদ পৌঁছেছে তা আন্দাজ করা যেতে পারে।]

বাণিজ্যিক ঋণ

এবার আমরা শিল্প ব্যবসায় ও অন্যান্য লাভজনক উদ্দেশ্যে গৃহীত ঋণে সুদ বৈধকরণের ক্ষতি পর্যালোচনা করতে চাই। শিল্প, ব্যবসায়, কৃষি ও অন্যান্য সমস্ত অর্থনৈতিক কাজ-কারবার পরিচালনার যেসব লোক অংশগ্রহণ করে তাদের সবার স্বার্থ ও আগ্রহ ঐসব কারবারের উন্নতি বিধানে নিয়োজিত হওয়া উচিত। এসব কারবারের লোকসান তাদের সবার লোকসান হিসেবে বিবেচিত হতে হবে, তবেই তারা এর বিপদ থেকে বাঁচার সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাবে। আবার এগুলোর লাভ তাদের সবার লাভ হিসেবে বিবেচিত হতে হবে, তবেই তারা এর উন্নতি ও শ্রীবৃদ্ধিতে সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করবে। এ কারণে ব্যবসায়ে যারা নিজেদের দৈহিক শক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি ব্যবহার করছে না বরং শুধুমাত্র পুঁজি সরবরাহের দায়িত্ব গ্রহণ করছে তাদের ব্যবসায়ে অংশগ্রহণ এমন পর্যায়ে হতে হবে যাতে করে তারা ব্যবসায়ের ভাল-মন্দের সাথে জড়িত থাকতে পারে এবং তার উন্নতি বিধানেও তাকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে পরিপূর্ণ আগ্রহশীল থাকে। কিন্তু সুদ আইনসংগত ঘোষিত হবার পর পুঁজি মালিকদের জন্য শরীক বা অংশীদার হিসেবে ব্যবসায়ে পুঁজি খাটাবার পরিবর্তে ঋণদাতা হিসেবে ব্যবসায়কে পুঁজি ঋণ দিয়ে তা থেকে একটি নির্ধারিত হারে নিজের মুনাফা আদায় করার পথ প্রশস্ত হয়ে গেছে। এভাবে সমাজের অর্থনৈতিক কার্যক্ষেত্রে এমন একজন অসাধারণ ও অস্বাভাবিক কর্মীর আগমন ঘটেছে, যে উৎপাদন কাজে রত অন্যান্য সকল কর্মীর বিপরীতপক্ষে এ সমগ্র কাজের ভালো-মন্দ ও লাভ-ক্ষতির প্রতি কোনো প্রকার আগ্রহশীল হয় না। এ কাজে লোকসান হতে থাকলে সবার জন্য বিপদ দেখা দেয় কিন্তু তার জন্য লাভের গ্যারান্টি রয়ে গেছে। কাজেই সবাই লোকসান বন্ধ করার চেষ্টা করবে কিন্তু ব্যবসাটি পুরোপুরি দেউলিয়া না হওয়া পর্যন্ত সে চিন্তিত হবে না। ব্যবসা যখন লোকসানের খাতে চলবে তখন সে তাকে রক্ষা করার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে না বরং নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে নিজের প্রদত্ত টেনে নেতে চাইবে। অনুরূপভাবে খাদ্য উৎপাদন বাড়াবার ক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষভাবে সে মোটেই আগ্রহশীল হবে না। কারণ তার মুনাফা সর্বাবস্থায় নির্ধারিত রয়েছে। কাজেই এ কাজের উন্নতি ও সাফল্য বিধানে সে মাথা ঘামাবে কেন? মোটকথা সমগ্র সমাজের লাভ লোকসানের কোনরূপ তোয়াক্কা না করে এ অদ্ভূত ধরনের অর্থনৈতিক কমিটি একা আলাদা বসে নিজের পুঁজিকে ভাড়ায় খাটাতে থাকে এবং নির্ঝঞ্ঝাটে নিজের নির্ধারিত ভাড়া আদায় করতে থাকে।

এ ভুল পদ্ধতির ফলে পুঁজি ও ব্যবসায়ের মধ্যে সখ্যতা ও সহানুভূতিপূর্ণ সহযেগিতার পরিবর্তে নিকৃষ্ট ধরনের স্বার্থপরতামূলক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সমাজে যারা অর্থ সঞ্চার করার ও উৎপাদিত পণ্য কাজে লাগাবার ক্ষমতা রাখে তারা নিজেরা ঐ সমস্ত অর্থ কোন ব্যবসায়ে খাটায় না, অথবা কোন ব্যবসায়ীর সাথে ব্যবসায়ে অংশীদারও হয় না বরং তারা নিজেদের অর্থাদি একটি নির্ধারিত মুনাফার জামানত সহকারে ঋণ হিসেবে ব্যবসায়ে খাটাতে চায়। আবার এ নির্ধারিত মুনাফার ব্যাপারেও তারা সর্বাধিক পরিমাণের প্রত্যাশা করে। এর বহুবিধ ক্ষতির মধ্য থেকে নীচে কয়েকটি সুষ্পষ্ট ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হলোঃ

একঃ নিছক সুদের হার বাড়ার অপেক্ষায় পুঁজির একটি বিরাট অংশ আবার অনেক সময় বৃহত্তম অংশ নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে। ব্যবহারযোগ্য উপকরণের উপস্থিতি সত্ত্বেও তাকে কোন লাভজনক কাজে খাটানো হয় না। রুজি-রোজগারের সন্ধানে বহু লোক হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির চাহিদাও বাজারে যথেষ্ট থাকে, এতদসত্ত্বেও উপকরণাদি ব্যবহার করা হয় না, বেকার লোকদের কাজে লাগানো হয় না এবং বাজারে যথার্থ চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহও করা হয় না। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে এই যে, পুঁজিপতি যে হারে সুদ নিয়ে লাভবান হতে চায় তা পাওয়ার কোনো আশা না থাকার কারণে সে অর্থ ঋণ দিতে প্রস্তুত হয় না।

দুইঃ অধিক সুদের হার এমন একটি লোভনীয় বস্তু যার ফলে পুঁজিপতি শ্রেণী ব্যবসায়ের দিকে পুঁজির প্রবাহকে ব্যবসায়ের যথার্থ প্রয়োজন ও স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী নয় বরং নিজের স্বার্থ অনুযায়ী কখনো বাড়াতে, কমাতে, আবার কখনো সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে থাকে। এর ফলে বিপুল পরিমান ক্ষতি সাধিত হয় তা একটি দৃষ্টান্ত থেকে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। মনে করুন, কোন পানি সেচ কেন্দ্রের মালিক কৃষি ক্ষেত্রের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী পানি ছাড়তে ও বন্ধ করতে রাজি নন। বরং তিনি পানি ছাড়ার ও বন্ধ করার জন্য নিজস্ব একটি বিধান তৈরী করেছেন। তার বিধান হচ্ছে যখন পানির প্রয়োজন থাকবে না তখন তিনি অত্যন্ত সস্তা দামে প্রচুর পানি ছাড়বেন আর যখনই ক্ষেতে পানির চাহিদা বেড়ে যাবে তখনই তিনি পানির দামও বাড়াতে থাকবেন, অবশেষে পানির দাম এতবেশী বাড়িয়ে দেবেন যার ফলে ঐ দামে ক্ষেতে পানি সিঞ্চন করা মোটেই লাভজনক বিবেচিত হবে না। এ পানি সেচ কেন্দ্রের মালিক কৃষকদের ও সারা দেশের খাদ্য ব্যবস্থার যে ক্ষতি সাধন করলেন অত্যাধিক সুদের লোভে পুঁজি মালিকগণ দেশের সমগ্র অর্থব্যবস্থায় অনুরূপ ক্ষতির পথ উন্মুক্ত করেন।

তিনঃ সুদ ও সুদের হারের বদৌলতে ব্যবসা-বানিজ্য শিল্প ব্যবস্থা স্বাভাবিক নিয়মে ও স্বচ্ছন্দ গতিতে চলার পরিবর্তে এমন এক ব্যবসায়িক চক্করে (Trade Cycle) পড়ে যায় ফলে তা বার বার মন্দার শিকারে পরিণত হয়। আগের আলোচনায় এ বিষয়টির উপর বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। তাই এখানে এর জের টানার কোন প্রয়োজন নেই।

চারঃ যেসব কাজে সাধারণ মানুষের লাভ ও সাধারণের স্বার্থে যেগুলো অত্যন্ত জরুরী কিন্তু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে যেগুলো বাজারের প্রচলিত হারের সুদের মোটেই লাভজনক নয়, পুঁজি সেসব কাজের দিকে অগ্রসর হতেও রাজী হয় না। বিপরীত পক্ষে যেসব কাজ অপ্রয়োজনীয় হওয়া সত্ত্বেও অধিক লাভজনক, পুঁজি সেসব কাজের দিকে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে সে ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় সব রকমের উপায় অবলম্বন করে সুদের হারের চেয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যবসায়ীকে বাধ্য করে। এ ক্ষতিটির ব্যাখ্যাও আমরা ইতিপূর্বে করে এসেছি তাই এখানে তার পুনরাবৃত্তি করার কোন প্রয়োজন নেই।

পাঁচঃ পুঁজিপতি দীর্ঘমেয়াদী ঋণে পুঁজি খাটাতে অনিচ্ছুক। কারণ একদিকে সে সাট্টাবাজীর জন্য বেশ বড় অংকের পুঁজি সবসময় নিজের কাছে জমা রাখতে চায় আবার অন্যদিকে সে মনে করে যদি ভবিষ্যতে কখনো সুদের হার বেশ বেড়ে যায় তাহলে কম সুদে তার বেশী টাকা আটক হয়ে যাওয়ায় সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে শিল্প মালিকগণও নিজেদের সমস্ত কাজ-কারবারে সংকীর্ণমনা ও স্বল্পোদ্যমের পরিচয় দিতে বাধ্য হয় এবং স্থায়ী কল্যাণ ও উন্নতি বিধানার্থে কিছু করার পরিবর্তে কেবলমাত্র চালু কাজটি সম্পন্ন করতেই প্রয়াসী হয়। যেমন এধরনের স্বল্প মেয়াদী পুঁজি নিয়ে তাদের পক্ষে নিজেদের শিল্প-কারখানার জন্য অত্যাধুনিক মেশিন ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বড় অংকের অর্থ ব্যয় করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। বরং তারা পুরানো মেশিনগুলোই ঝালাই করে কোনোরকমে ভাল মন্দ দ্রব্যসামগ্রী বাজারে ছাড়তে বাধ্য হয়। এভাবে তারা ঋণ ও সুদ আদায় করতে এবং এ সংগে নিজেদের জন্য কিছু মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবে। অনুরূপভাবে স্বল্পমেয়াদী ঋণের বদৌলতেই বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যেতে দেখে সংগে সংগেই কারখানার মালিক পণ্য উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং অন্তত কিছুক্ষণের জন্যেও উৎপাদনের গতি অপরিবর্তিত রাখার সাহস করে না। কারণ সে ভয় করে বাজারে পণ্যের দাম কমে গেলে সে দেউলিয়ার প্রান্তদেশে পৌঁছে যাবে।

ছয়ঃ বৃহৎ শিল্প ও ব্যবসায় পরিকল্পনার জন্য যে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ পাওয়া যায় সেগুলোর উপর নির্ধারিত বিশেষ সুদের হারও অনেক বড় বড় ক্ষতির সম্মুখীন করে। সাধারণত দশ, বিশ বা তিরিশ বছরের জন্য এধরনের ঋন নেয়া হয়। শুরুতেই এ সমগ্র সময়ের জন্য সুদের একটি বার্ষিক হার নির্ধারিত হয়। এ হার নির্ধারন করার সময় আগামী দশ, বিশ বা তিরিশ বছরের দ্রব্য মূল্যের ওঠা-নামা কোথা গিয়ে ঠেকবে এবং ঋণগ্রহীতার মুনাফার সম্ভাবনা কি পরিমাণ কম-বেশী হবে বা আদৌ কোন মুনাফাই হবে কিনা, সেদিকে দৃষ্টি রাখা হয় না এবং এ ব্যাপারে উভয় পক্ষের পূর্বাহ্নেই কোন জ্ঞানের অধিকারী না হলে সেদিকে দৃষ্টি রাখাও সম্ভবপর নয়। মনে করুন ১৯৪৯ সালে এক ব্যক্তি ২০ বছরের জন্য শতকরা ৭ ভাগ সুদে একটি বড় অংকের ঋণ লাভ করলো এবং ঐ ঋণলব্ধ অর্থের সাহায্যে একটি বড় কাজ শুরু করলো। এখন সে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ঐ হিসেবে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে আসল টাকার কিস্তি ও সুদ আদায় করতে বাধ্য। চুক্তি সাধিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালে কিন্তু যদি ১৯৫৫ সালে পৌঁছতে পৌঁছতে দ্রব্যমুল্য কমে গিয়ে আগের মূল্যের অর্ধেকে এসে ঠেকে তাহলে এর অর্থ দাড়াবে যতক্ষণ চুক্তি শুরুর সময়ের তুলনায় ঐ সময় দ্বিগুণ পণ্য বিক্রি সম্ভব না হয় ততক্ষণ আসলের কিস্তি ও সুদ আদায় করা সম্ভব হবে না। এর অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ দেখা যাবে, ঐ চড়া মূল্যের যুগে এ ধরনের অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা দেউলিয়া হয়ে গেছে। অথবা দেউলিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দূষিতকারী অবৈধ কাজ-কর্ম শুরু করেছে। এ ব্যাপারটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে যে কোন স্বাভাবিক বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি নিসঃন্দেহ হবেন যে, বিভিন্ন যুগে ওঠা-নামাকারী দ্রব্যমূল্যের মধ্যে ঋণদাতা পুঁজিপতির এমন কোন মুনাফা যা সব যুগে সমান থাকে ন্যায়নীতি ও অর্থনীতির দৃষ্টিতে কোনক্রমে যথার্থ হতে পারে না এবং তাকে সামগ্রিক সমৃদ্ধির সহায়কও প্রমাণ করা যেতে পারে না। দুনিয়ার কোথাও কি এমন কোন কথা শুনা গেছে যে, কোন কোম্পানি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহের ঠিকে নিয়ে এমন কোন চুক্তি করেছে যাতে বলা হয়েছেঃ আগামী তিরিশ বা বিশ বছর পর্যন্ত একই দামে সে ঐ দ্রব্যটি সরবরাহ করবে? কোন দীর্ঘমেয়াদী পণ্য ক্রয় চুক্তির ক্ষেত্রে যদি এটা সম্ভব না হয়ে থাকে তাহলে একমাত্র সুদী ঋণদাতা পুঁজিপতির স্বার্থে এটা সম্ভব হবে কেমন করে? কোন নীতির ভিত্তিতে ঐ পুঁজিপতি সুদীর্ঘ কয়েক বছরের জন্য নিজের ঋণের মূল্য পূর্বাহ্নেই নির্ধারণ করবে এবং বছরের পর বছর ঐ একই মূ্ল্য আদায় করে যেতে থাকবে?

রাষ্ট্রের বেসরকারী ঋণ

বিভিন্ন দেশের সরকার রাষ্ট্রের নিজস্ব প্রয়োজনে নিজের দেশের জনগণের নিকট থেকে যেসব ঋণ নেয় এবার তার আলোচনায় আসা যাক। এর মধ্যে এক ধরনের ঋণ অলাভজনক কাজে লাগানো হয়।

প্রথম ধরনের ঋণের সুদ অভাবী লোকদের নিজেদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য গৃহীত ঋণের সুদের সমপর্যায়ভুক্ত। বরং একে তার চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ভুক্ত বলা যেতে পারে। এ সুদের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, সমাজ যে ব্যক্তির জন্ম দিয়েছে, যাকে লালন-পালন করেছে, অর্থোপার্জনের যোগ্যতাসম্পন্ন করেছ, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেছে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়েছে এবং নিজের তমদ্দুনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় যার শান্তিতে বসবাস করার ও কাজ-কারবার চালাবার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে নিরন্তর সেবা করে যাচ্ছে, সে ব্যক্তি এহেন সমাজের আর্থিক লাভ বিমুক্ত প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সবার সাথে সাথে তার নিজের স্বার্থও যেসব প্রয়োজন পূর্ণ হবার সাতে জড়িত—সুদমুক্ত ঋণদান করতে প্রস্তুত হচ্ছে না। সে নিজেই তার প্রতিপালনকারী সমাজকে বলছে, তুমি ঐ অর্থের সাহায্যে মুনাফা অর্জন করা বা না কর, আম নিজের অর্থের এ বিশেষ পরিমাণ মুনাফা প্রতি বছর অবশ্যি নিতে থাকবো।

জাতি যখন যুদ্ধের সম্মুখীন হয় এবং সবার সাথে সাথে জাতির ঐ পুঁজিপতি ব্যক্তির ধন, প্রাণ ও মান-সম্মান সংরক্ষণের প্রশ্নও দেখা দেয় তখন এ বিষয়টি আরো বেশী জটিল আকার ধারণ করে। এ সময় জাতীয় অর্থ ভান্ডার থেকে যা কিছু ব্যয় করা হয় তা কোন ব্যবসায়ে খাটানো হয় না বরং অগ্নিকুন্ডেই নিক্ষেপ করা হয়। তাতে মুনাফার প্রশ্নই ওঠে না। এমন একটি কাজে এ বিরাট ব্যয় সাধিত হয় যার সাফল্য ও অসাফল্যের উপর সমগ্র জাতির সাথে সাথে তার নিজের জীবন-মৃত্যুও নির্ভরশীল। এ কাজে জাতির অন্যান্য লোকেরা নিজেদের ধন-প্রাণ-সময়-শ্রম সবকিছুই ঢেলে দেয়। তাদের একজনও প্রশ্ন উঠায় না যে, জাতির প্রতিরক্ষায় সে যে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে তাতে সে বার্ষিক কত হারে মুনাফা পাবে? কিন্তু সমগ্র জাতির মধ্যে পুঁজিপতিই নিজেদের ধন-সম্পদ দেয়ার পূর্বে এ শর্ত আরোপ করে যে, তাকে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট হারে মুনাফা দিতে হবে এবং জাতির সমস্ত সদস্যরা মিলে যতদিন পর্যন্ত তার প্রদত্ত আসল অর্থ আদায় করতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত তাকে এ মুনাফা আদায় করে যেতে হবে, তাতে একশো বছর লেগে গেলেও তার দাবীর একটু্ও নড়চড় হবে না। এ সংগে যেসব লোক দেশ, জাতি ও ঐ পুঁজিপতিকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের হাত-পা কাটিয়েছে বা নিজেদের বাপ, ভাই ও স্বামীকে হারিয়েছে তাদের পকেট থেকেও মুনাফার অংশ আসতে হবে।*

[* এ প্রসংগে উল্লেখ করা যায়, ইংলণ্ডের বর্তমান অধিবাসীদের পূর্বপুরুষরা আজ থেকে সোয়াশো বছর পূর্বে নেপোলিয়ানের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ করেছিল এবং সে যুদ্ধে ইংরেজ পূঁজিপতিরা যে যুদ্ধঋণ দিয়েছিল আজও ইংরেজরা তার সুদ আদায় করে যাচ্ছে। ১৮৬১-৬৫ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের ব্যয় বাবদ যে ঋণ গ্রহণ করা হয়েছিল আমেরিকানরা আজ পর্যন্ত তার চারগুণ অর্থ আদায় করেছে এবং এখনো তাদেরকে একশো কোটি ডলার সুদ হিসাবে আদায় করতে হয়।]

– প্রশ্ন হচ্ছে, সমাজের একটি শ্রেনীকে এভাবে সুদ খাইয়ে মোটা করার যৌক্তিকতা কোথায়? তাদেরকে কি শেয়াল-কুকুরের ন্যায় বিষপান করিয়ে মেরে ফেলা উচিত নয়?

দ্বিতীয় প্রকারের ঋণটি সাধারণ লোকেরা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে যে ঋণ নেয় তা থেকে আলাদা প্রকৃতির নয়। কাজেই ইতিপূর্বে ব্যবসায়িক ঋণের সুদের বিরুদ্ধে আমরা যে আপত্তি উত্থাপন করেছি তার সবগুলোই এখানে উত্থাপিত হয়। সাধারণত বিভিন্ন দেশের সরকার লাভজনক কাজে লাগাবার জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নেয়। কিন্তু কোন সরকার একটি নির্দিষ্ট হারে সুদে ঋণ নেয়ার সময় একথা জানতে পারে না যে, আগামী দশ-বিশ বছরে দেশের আভ্যন্তরীন অবস্থা কি রূপ পরিগ্রহ করবে ও আর্ন্তজাতিক অবস্থা কোন দিকে মোড় নেবে এবং এ সংগে যে কাজে ব্যয় করার জন্য এ সুদী ঋণ নেয়া হচ্ছে তাতে কি পরিমাণ মুনাফা অর্জিত হবে। সাধারণত দেখা গেছে এসব ক্ষেত্রে সরকারের অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সুদের হারের চেয়ে বেশী হওয়া তো দুরের কথা সমপরিমাণ মুনাফা অর্জনও সম্ভবপর হয় না। এটিই বিভিন্ন রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ এবং এরি কারণে বিভিন্ন লাভজনক পরিকল্পনায় অতিরিক্ত পুঁজি লাগানো দুরে থাক অতীতের ঋণের আসল টাকা ও তার সুদ আদায় করাও কঠিন হয়ে পড়ে।

উপরন্তু এখানেও সে একই অবস্থার সৃষ্টি হয় যেদিকে আমরা বার বার ইংগিত করেছি। অর্থাৎ বাজারের সুদের হার এমন একটি সীমা নির্ধারন করে দেয় যার ফলে কোনো কম মুনাফাজনক কাজে জনগণের জন্য তা যতই ভালো ও প্রয়োজনীয় হোক না কেন পুঁজি খাটানো সম্ভবপর হয় না। অনাবাদী এলাকায় বসতি স্থাপন, অনাবাদী জমিকে কৃষি কাজের উপযোগী করা, অনুর্বর জমিকে উর্বর করা, শুষ্ক জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করা, গ্রামীণ এলাকায় পথ, ঘাট, আলো ও স্বাস্থ্যরক্ষার ব্যবস্থা করা, স্বল্প বেতনভুক কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্য রক্ষাকারী গৃহাদি নির্মাণ এবং এ ধরনের আরো বিভিন্ন কাজ যতই প্রয়োজনীয় হোক না কেন এবং সেগুলো না হলে জাতির যতই ক্ষতি হোক না কেন, যতক্ষন না সেগুলো থেকে প্রচলিত সুদের হারের সমপরিমাণ বা তারচেয়ে বেশি মুনাফা অর্জিত হবার সম্ভাবনা থাকে ততক্ষন কোন সরকার সেসব প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করতে প্রস্তুত হয় না।

উপরন্তু এ ধরনের যেসব কাজে সুদী ঋণ নিয়ে পুঁজি খাটানো হয় সেগুলোর ব্যাপারে আসল পরিস্থিতি হচ্ছে এই যে, সরকার এ পর্যায়ের সমস্ত সুদের বোঝা জনগনের মাথায় চাপিয়ে দেয়। ট্যাক্সের মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তির পকেট থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সুদের টাকা বের করা হয় এবং বছরের পর বছর লাখো লাখো টাকা জমিয়ে দীর্ঘকাল অবধি পুঁজিপতিদেরকে যোগান দেয়া হয়।

মনে করুন আজ পাঁচ কোটি টাকার একটি পানি সেচ প্রকল্প কার্যকরী করা হলো। বার্ষিক শতকরা ৬ টাকা সুদে এ পুঁজি সংগ্রহ করা হয়েছে। এ হিসেবে সরকারকে বছরে ৩০ লাখ টাকা সুদ আদায় করতে হবে। বলা বাহুল্য এ বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকার কোথাও থেকে মাটি খুঁড়ে বের করে আনবে না। বরং যেসব চাষী ও কৃষি সেচ প্রকল্প থেকে লাভবান হবে সরকার তাদের মাথায় এ বোঝাটি চাপিয়ে দেবে। প্রত্যেক চাষীর উপর যেসব কর লাগানো হবে তার উপর এ সুদের অংশও থাকবে। চাষীও এ সুদ নিজের পকেট থেকে আদায় করবে না বরং সে উৎপাদিত ফসলের দাম থেকে এ সুদের অর্থ উসুল করবে। এভাবে পরোক্ষভাবে যেসব ব্যক্তি শস্য ব্যবহার করবে তাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে এ সুদ আদায় করা হবে। প্রত্যেক দারিদ্র পীড়িত ও অনাহারে ক্লিষ্ট ব্যক্তির ভাতের বাসন থেকে অন্ততঃপক্ষে এক মুটো ভাত কেড়ে নেয়া হবে এবং তা পুঁজিপতির বিরাট উদরে ঢেলে দেয়া হবে যেহেতু বার্ষিক ৩০ লাখ টাকা সুদের ভিত্তিতে সে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ দিয়েছিল। এ ঋণ আদায় করতে যদি সরকারের ৫০ বছর লেগে যায় তাহলেও সে গরীবদের নিকট থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে ধনীদের পকেট ভারী করার এ দায়িত্ব অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে পালন করে যেতে থাকবে।

এ কর্মপদ্ধতি সামাজিক অর্থব্যবস্থায় ধনের প্রবাহকে নির্ধনদের দিক থেকে ধনীদের দিকে ফিরিয়ে দেয়। অথচ সমাজের কল্যাণার্থে তাকে ধনীদের দিক থেকে নির্ধনদের দিকে ফিরিয়ে দেয়া উচিত ছিল। সরকার মুনাফাজনক ঋণে যে সুদ আদায় করে কেবল তার মধ্যে এ ক্ষতি নিহিত নেই বরং সাধারণ ব্যবসায়ী সমাজ সুদী ঋণের সাহায্যে যেসব ব্যবসায় চালায় তার প্রত্যেকটির মধ্যেও এ ক্ষতি রয়েছে। বলা বাহুল্য কোন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি বা কৃষক পুঁজিপতিকে প্রদেয় সুদ নিজের পকেট থেকে আদায় করে না। তারা সবাই নিজেদের পণ্যের দামের উপর বোঝাটি চাপায়। এভাবে সাধারণ মানুষের নিকট থেকে এক পয়সা দু’ পয়সা চাঁদা উঠিয়ে লাখপতি ও কোটিপতিদের ঝুলিতে ঢেলে দেয়। এ উল্টো ব্যবস্থায় দেশের সবচেয়ে বড় ধনাঢ্য মহাজনই সবচেয়ে বেশি ‘সাহায্য’ লাভের অধিকারী। আবার এ সাহায্য দানের দায়িত্ব যেসব ব্যক্তির উপর সবচেয়ে বেশী বর্তায় তারা হচ্ছে দেশের দরিদ্রতম শ্রেণী যারা সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যৎসামান্য রোজগার করে আনে কিন্তু দেশের সবচেয়ে বেশী ‘করুণার পাত্র’ কোটিপতির ‘অধিকার’ তা থেকে বের করে নেয়ার আগে তাদের সারাদিনের অভুক্ত সন্তানদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেয়া তাদের জন্য হারাম গণ্য হয়েছে।

বৈদেশিক ঋণ

দেশের বাইরের মহাজনদের নিকট থেকে রাষ্ট্রীয় সরকার যে ঋণ গ্রহণ করে সর্বশেষে তার আলোচনায় আসছি। এ ধরনের ঋণ সাধারণত বড় বড় অংকের হয়ে থাকে। অনেক সময় তা দশ বিশ কোটির মাত্রা পেরিয়ে একশো কোটি ও হাজার কোটির পর্যায়ে পৌঁছে যায়। দেশ কোন অস্বাভাবিক সংকটাবর্তে নিপতিত হলে, দেশের নিজস্ব অর্থনৈতিক উপায়-উপাদান এ সংকট ও বিপদ থেকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রমাণিত না হলে দেশীয় সরকার এ ঋণ গ্রহণ করে। আবার কখনো অতিরিক্ত লোভের বশবর্তী হয়ে এ কৌশল অবলম্বন করা হয়। মনে করা হয় উন্নয়নমূলক প্রকল্পসমূহকে বড় অংকের পুঁজি বিনিয়োগ করলে স্বল্প সময়ে দেশের উপায়-উপকরণ বৃদ্ধি পাবে। এসব ঋণে সাধারণত সুদের হার শতকরা ৬/৭ থেকে ৯/১০ পর্যন্ত হয়। এ হারে একশো কোটি টাকার সুদ বছরে কয়েক কোটি টাকা হয়। আর্ন্তজাতিক অর্থনৈতিক বাজারের শেঠ ও মহাজনরা নিজেদের সরকারের মধ্যস্থতায় এ পুঁজি ঋণ দেয় এবং এ জন্য জামানত হিসেবে ঋণ গ্রহীতা দেশের কোনো একটি শুল্ক; যেমন নগর শুল্ক, তামাক, চিনি, লবণ বা অন্য কোন খাতের আয়কে বন্ধক রাখা হয়।

এ ধরনের সুদী ঋণ যেসব ক্ষতি সাধন করে পূর্ববর্তী আলোচনায় আমরা সেগুলোর উল্লেখ করেছি। ব্যক্তিগত ঋণ, ব্যবসায়িক ঋণ ও সরকারের আভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে এমন কোন ক্ষতিকর দিক নেই ঐসব আন্তর্জাতিক ঋণের সুদের মধ্যে যার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। কাজেই এখানে ঐসব ক্ষতির পুনরুল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ জাতীয় ঋণের মধ্যে ঐগুলো ছাড়া আর একটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে। এ ক্ষতিটি পূর্বালোচিত ক্ষতিগুলোর চেয়ে অনেক বেশী ভয়াবহ। এ ক্ষতিটি হচ্ছে, এ আর্ন্তজাতিক ঋণগুলোর কারণে সমগ্র জাতির আর্থিক মর্যাদা বিনষ্ট ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়। সারা দুনিয়ায় অর্থনৈতিক অবস্থার উপর এর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। অতপর এর বদৌলতে বিভিন্ন জাতির মধ্যে শত্রুতার বীজ উপ্ত হয়। অবশেষে বিপদগ্রস্থ জাতির যুব সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে চরমপন্থী রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দর্শন গ্রহণ করতে থাকে এবং একটি রক্তাক্ত বিপ্লব ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের মধ্যে নিজের জাতির দুর্দশা ও বিপদ নিরসনের স্বপ্ন দেখতে থাকে।

বলা বাহুল্য নিজেদের সংকট নিরসন ও প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য যে জাতির অর্থনৈতিক উপকরণ পূর্বেই যথেষ্ট ছিল না সে কেমন করে প্রতি বছর আসলের কিস্তিসহ পঞ্চাশ ষাট লাখ বা এক কোটি দু’ কোটি টাকা কেবলমাত্র সুদের খাতে আদায় করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে? বিশেষ করে যখন তার আয়ের উৎসগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি বড় ও অধিক মুনাফাদায়ক উৎসকে পূর্বেই জামানত রাখা হয়েছে এবং তার চাদর আগের চেয়ে অনেক বেশী সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এ কারণে এসব ক্ষেত্রে নিজের সংকটের নিরসনের জন্য যেসব জাতি বড় বড় সুদী ঋণ গ্রহন করেছে তাদের অতি অল্প সংখ্যকই সফলকাম হতে দেখা গেছে। বিপরীতপক্ষে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বরং দেখা গেছে, এ ঋণ তার সংকট বৃদ্ধিতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে, ঋণের কিস্তি ও সুদ আদায় করার জন্য তাদের নিজেদের দেশবাসীর উপর অত্যাধিক করভার চাপিয়ে দিতে হয়েছে এবং অনেক দিক দিয়ে ব্যয় কমাতে হয়েছে। এর ফলে একদিকে জাতির সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে যায়। কারণ তারা যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তার বিনিময়ে যা পায় তা ঐ ব্যয়ের সমতুল্য হয় না। অন্য দিকে নিজের দেশের লোকদের মাথায় এতবড় বোঝা চাপিয়ে দিয়েও সরকারের পক্ষে ঋণের কিস্তি ও সুদ নিয়মিত আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে। অতপর ঋণগ্রহীতা দেশের পক্ষ থেকে ঋণ আদায়ে যখন অনবরত শৈথিল্য দেখা দেয় তখন বৈদেশিক ঋণদাতারা তার বিরুদ্ধে বেঈমানী, অসদুদ্দেশ্য ও ঋণের অর্থ ফাঁকি দেয়ার অসৎ মনোভাব ও চক্রান্তের অভিযোগ আনে। তাদের ইংগিতে তাদের জাতীয় সংবাদপত্রগুলোতে এ দরিদ্র দেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হয়, কটুক্তি করা হয়। পরিস্থিতি এ পর্যায়ে উপনীত হলে ঐ দেশের সরকার এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে এবং নিজের পুঁজিপতিদের পক্ষাবলম্বন করে ঋণগ্রহীতা দেশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হয় না বরং তার সমস্যা ও সংকট থেকে অবৈধভাবে লাভবান হবার চেষ্টা করে। ঋণগ্রস্ত দেশের সরকার জনসাধারণের উপর করভার আরো অধিক বাড়িয়ে এবং অধিকতর ব্যয় সংকুলান করে কোনো প্রকারে দ্রুত এ ফাঁদ থেকে বের হবার চেষ্টা করে। কিন্তু দেশবাসীর উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। অনবরত ও নিত্যকার অর্থনৈতিক বোঝা ও আর্থিক দুর্দশা তাদের মন-মেজাজ তিক্ত করে তোলে। বৈদেশিক ঋণদাতাদের কটূক্তি ও রাজনৈতিক চাপ এ তিক্ততা আরো বাড়িয়ে তোলে। নিজের দেশের ভারসাম্যপূর্ণ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং দূরদর্শী নেতাদেরকে ত্যাগ করে চরমপন্থী রাজনৈতিক জুয়াড়ীদের পেছনে সারিবদ্ধ হয়। এ চরমপন্থী জুয়াড়ীরা এক কথায় সমস্ত ঋণ অস্বীকার করে ময়দানে নেমে আসে এবং চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে থাকেঃ আমরা কারোর ঋণের কোন ধার ধারি না, কারো দাবী মানতে আমরা প্রস্তুত নই ক্ষমতা থাকলে আমাদের নিকট থেকে ঋণ আদায় করে নিয়ে যাও।

এ পর্যায়ে সুদের ধ্বংসকারিতা ও সর্বনাশা প্রভাব চরমে পৌঁছে যায়। এরপরও কি কোন বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি সুদের চরম হারাম হবার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করতে পারে? সুদের এ ধ্বংসকারিতা ও ভয়াবহ পরিণাম প্রত্যক্ষ করার পরও কি কোন ব্যক্তি রাসূলে করীম (সাঃ) এর নিম্মোক্ত

(আরবী টেক্সট ————————————————————————— আরবী টেক্সট)

“সুদ এমন একটি গোনাহ যে, একে সত্তরটি ভাগে বিভক্ত করলে সবচয়ে হালকা অংশটিও নিজের মায়ের সাথে যিনা করার সমান শামিল”। – (ইবনে মাজা, বায়হাকি)

———-

 

Page 4 of 19
Prev1...345...19Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক

@BJI Dhaka City South