২৪. গণচেতনার স্তর
ইসলামী বিপ্লবের সাফল্যের জন্য সংশ্লিষ্ট জনপদে জনগণের মধ্যে জাগ্রত চেতনা সৃষ্টি করা অপরিহার্য। জনগণের চেতনা বা গণচেতনা স্তর যদি পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থ হয় তাহলে জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা আশা করা যায় না। আন্দোলনের আহ্বান সম্পর্কে প্রশ্ন ও বিভ্রান্তি দূর করে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার পরিণতি সম্পর্কে সজাগ না হলে জনতা আন্দোলনের ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণে এগিয়ে আসতে পারে না। ইসলাম বিরোধী শক্তি ইসলামী জাগরণের বিরুদ্ধে যেভাবে সম্মিলিত শক্তি ব্যবহার করছে তাতে সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। অনুভূতির দিক থেকে দেশটি যদি মৃতপুরীতে পরিণত হয় এবং জাতীয় আদর্শ, কৃষ্টি এবং সংস্কৃতির উপর অব্যাহত হামলা সম্পর্কে জনসচেতনতা না থাকে তখন সেই জনমণ্ডলীকে সাথে নিয়ে কোন পরিবর্তন আশা করা যায় না।
ঔপনিবেশিক ও পুঁজিবাদী শাসনে শোষণে মুসলিম সমাজে যে উদাসীনতা ও হতাশা পুঞ্জিভূত হয়ে আছে তার ফলে সর্বোত্তম জাতি হিসেবে ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় প্রতিরোধের বিপ্লবী ধারা থেকেই তারা আজ বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। জাতীয় আদর্শ ইসলামের প্রতনিধিত্বের যে সুমহান দায়িত্ব মুসলিম সমাজের উপর অর্পিত হয়েছে সে সম্পর্কে তাদের অসচেতনতাই যে জাতীয় চেতনায় উজ্জীবনের বড় অন্তরায় তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। ঈমানী চেতনায় উদ্দীপ্ত একটি জনগোষ্ঠী অনৈসলামী ব্যবস্থার মধ্যে নিষ্ক্রীয় বা নিশ্চুপ থাকতে পারে না। ইসলামী ব্যবস্থার অনুপস্থিতি তারা কোনক্রমেই মেনে নিতে পারে না।
মুসলিম হিসাবে দুনিয়ায় যুদ্ধে সর্বোত্তম জাতির দায়িত্ব পালন ও বিশ্ব নেতৃত্ব দেয়ার মত উন্নততর মনোবৃত্তি না থাকলে বর্তমান হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতির অবসান ঘটানো সম্ভব নয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে এ যে এক বিরাট দায়িত্ব এবং এ কাজটি যে কারো ব্যক্তিগত কাজ নয় বরং আল্লাহর কাজ এ অনুভূতি তীব্রতাই গণচেতনাকে শাণিত করবে।
২৫. জনতার দাবী
আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন অন্য কথায় ইসলামী শাসন বা খেলাফত আলা মিনহাজিন নবুয়াত প্রতিষ্ঠার দাবী যদি সংশ্লিষ্ট কোন দেশের জনগণের দাবীতে রূপান্তরিত না হয় তাহলে ইসলামী বিপ্লবের সাফল্য আশা করা যায় না। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই যেহেতু আদর্শের বক্তব্য মানুষের অর্থনৈতিক বাস্তব দাবী দাওয়ার পিছনে পড়ে গিয়েছে এবং মানুষের দুনিয়ার জীবনের সমস্যা সমাধানের বক্তব্য প্রধান্য পেয়েছে তাই ইসলামী শাসন কায়েমের দাবীকে জনতার দাবীতে পরিণত করতে হবে। সবাই এটা অনুভব করবেন যে আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসনই জনগণের মুক্তির একমাত্র পথ। এ সময় জনগণকে দাবী আদায়ে ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। কোন আদর্শের জন্য জনগণকে ত্যাগ স্বীকারে নামাতে পারলে আন্দোলন এগিয়ে যাবে। আন্দোলনের বক্তব্য জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও বক্তব্যে পরিণত হবে। গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টির পূর্বশর্ত হিসাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার দাবীকে গণদাবীতে রূপ দিতে হবে অবশ্যই। গণদাবীকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করে গণঅভ্যূত্থান ঘটানোর পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ফলে সকল প্রকার যুলুম-নির্যাতনের অবসান ঘটবে ও ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু এ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যারা অতীতে সংগ্রাম করেছেন তাদের সামনে কোন পার্থিব ওয়াদা করা হয়নি। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের মাত্র একটি পুরস্কারের ওয়াদাই দেয়া হয়েছে। আর সে পুরস্কারটি হলো জান্নাত। নির্ভেজালভাবে জনগণকে ইসলামের জন্য অর্থাৎ তাওহীদের বাণীতে উজ্জীবিত করা না যেতো তাহলে এত বাধার পাহাড় অতিক্রম করে আন্দোলনের কাফেলায় আসতে পারতো না।
আন্দোলনের সাফল্যের জন্য যে গণঅভ্যুত্থান আমাদের চাই তা সৃষ্টি করতে হলে জনগণের হৃদয়ে ইসলামের দাবীকে একটি জীবন্ত চেতনায় পরিণত করতে হবে। নিঃস্বার্থভাবে ইসলামের ভিত্তিতে জাগ্রত জনতাই ইসলামী বিপ্লব সৃষ্টি করতে পারে। ইসলামের বিজয় তথা প্রতিষ্ঠার দাবীটিই জনতার দাবীতে পরিণত হবে।
২৬. ইসলামী বিপ্লবের শর্ত
ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَىٰ قَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ ۙ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
‘‘এটা আল্লাহ তায়ালার নিয়ম যে, আল্লাহ তায়ালা কোন নিয়ামতকে যা তিনি কোন লোক সমষ্টিকে দান করেন-ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত সেই জাতি নিজেকে বা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না করে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা সবকিছু শুনেন ও জানেন।’’- (সূরা আল আনফালঃ ৫৩)
অনুরূপভাবে কোরআন মজিদের আরেক জায়গায় বলা হয়েছেঃ
إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ
‘‘প্রকৃত কথা এই যে, আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ পর্যন্ত জাতির লোকেরা নিজেদের গুণাবলীর পরিবর্তন না করে।’’- (সূরা আর রা’দঃ ১১)
সুতরাং সমাজের পরবর্তনের জন্য বা ইসলামী বিপ্লবের জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে- যে জনপদে বিপ্লব সংঘটিত হবে সেখানকার জনগণের এজন্য আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে এবং এমন একটি বিপ্লবের জন্য নিজেদের প্রচেষ্টা নিয়োজিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট জনগণ যদি বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষী না হয় কিংবা এজন্য নিজেরা তৈরী না হয় বা ভূমিকা পালন না করে তাহলে সেই জনপদে বিপ্লব হওয়া স্বাভাবিক নয়। এমতাবস্থায় ধরে নিতে হবে যে, ইসলামী বিপ্লবের জন্য প্রথম শর্তটিই পূরণ হয়নি।
ইসলামী বিপ্লবের জন্য দ্বিতীয় শর্তটি হচ্ছে, একদল সত্যানুসন্ধানী নিবেদিত প্রাণ কর্মী। ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত হকপরস্ত একদল যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীর উপস্থিতি ছাড়া ইসলামী বিপ্লবের প্রত্যাশা অর্থহীন। তাই আম্বিয়ায়ে কেরাম ও নবী রসূলগণের কর্মপন্থায় লক্ষ্য করা যায় যে, তারা একদল সৎ ও যোগ্যতাসম্পন্ন লোক তৈরীতে অর্থাৎ মজবুত ঈমানদারদের একটি বাহিনী গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেঃ
وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِنْ بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ
‘‘আর ‘যাবুর’ কিতাবে নসিহতের পর আমরা লিখে দিয়েছি যে, যমীনের উত্তরাধিকারী আমাদের নেক বান্দাগণ হবে।’’ – (সূরা আম্বিয়াঃ ১০৫)
আর এমন সকল বান্দারাই নেক বান্দা হবে যাদের সম্পর্কে কোরআন মজিদে এরশাদ হয়েছেঃ
وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ ۖ وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي صَدَقَنَا وَعْدَهُ وَأَوْرَثَنَا الْأَرْضَ نَتَبَوَّأُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ نَشَاءُ ۖ فَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِل ۖ
‘‘আর যেসব লোক নিজেদের খোদার নাফরমানী হতে বিরত ছিল তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত তারা যখন সেখানে উপস্থিত হবে, জান্নাতে দরজাসমূহ আগে থেকেই উন্মুক্ত হয়ে থাকবে, তখন সেখানকার ব্যবস্থাপকরা তাদের বলবে, সালাম-শান্তি বর্ষিত তোক তোমাদের প্রতি-খুব ভালোভাবেই ছিলে। প্রবেশ করো এতে চিরকালের জন্য। তারা আরও বলবে, শোকর সেই খোদার, যিনি আমাদের প্রতি তার ওয়াদাকে সত্য করে দেখিয়েছেন এবং তোমাদেরকে যমীনের ওয়ারিস বানিয়েছেন। এখন আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা নিজেদের স্থান বানিয়ে নিতে পারি। অতএব অতি উত্তম প্রতিফল আমলকারীদের জন্য।’’- (সূরা আয যুমারঃ ৭৩-৭৪)
আরো পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছেঃ
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا ۚ يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا ۚ وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
‘‘তোমাদের মধ্য হতে সেইসব লোকের সাথে যারা ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে, তিনি তাদেরকে তেমনিভাবে যমীনে খলীফা বানাবেন যেমনভাবে তাদের পূর্বে চলে যাওয়া লোকদের বানিয়েছিলেন, তাদের জন্য তাদের এ দ্বীনকে মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে দিবেন যা আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের বর্তমান ভয়ভীতির অবস্থা পরিবর্তিত করে দিবেন। তারা শুধু আমারই বন্দেগী করবে এবং আমার সাথে কাউকেও শরীক করবে না। অতঃপর যারা কুফরী করবে তারাই আসলে ফাসেক লোক।’’- (সূরা আন নূরঃ ৫৫)
আজকের বিশ্বে বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক মতবাদের ব্যর্থতার পর ইসলামের যে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তাতে একথা আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না যে, ইসলাম শ্রেষ্ঠ। মানব রচিত ব্যবস্থার অন্তঃসারশূণ্যতা এবং মানব সমস্যা সমাধানে ঐসব মতবাদের ব্যর্থতা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করার পর ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের চাইতে ইসলামী রাষ্ট্র বিপ্লবের মাধ্যমে অসহায় বঞ্চিত পথহারা মানব সমাজকে সঠিক দিকদর্শন দেয়াই আজকের সবচেয়ে বড় কর্তব্য। শুধুমাত্র মুসলমান পণ্ডিত বুদ্ধিজীবীগণই নন বরং অমুসলিম বিশ্ব ইসলামের তথা আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন।
মুসলিম দেশের অনেক রাষ্ট্রনেতাও আজ স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামের নিজস্ব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে। পুঁজিবাদ ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মুকাবিলায় ইসলামী ব্যবস্থাই যে শ্রেষ্ঠ একথা তাত্ত্বিকভাবে উপস্থাপনার যে প্রয়োজন ছিল তার কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে। এখন প্রয়োজন রাষ্ট্র বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামী ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা। রাষ্ট্র বিপ্লব ছাড়া ইসলামী ব্যবস্থা কার্যকরী করাও সম্ভব নয়। তাই ইসলাম ভালো জিনিস এবং ইসলামের শিক্ষা মানুষের জন্য উপকারী বা কল্যাণকর এমন সব প্রচারণার কোন গুরুত্ব নেই যদি ইসলামী ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে মানব জাতির কল্যাণে এর কার্যকারিতা প্রমাণ করা না যায়। সুতরাং ইসলামী আন্দোলনের শক্তি ও সম্পদ রাষ্ট্রশক্তি নিয়ন্ত্রণে বা রাষ্ট্রবিপ্লব সাধনের জন্যই ব্যবহৃত হওয়া সমীচীন। কিভাবে ইসলামের রাষ্ট্রবিপ্লব ত্বরান্বিত করা যায় এ ব্যাপারেই ইসলাম প্রতিষ্ঠাকামীদের এখন বেশী তৎপর হওয়া উচিত বলে মনে হয়। জনগণ বিশেষভাবে মুসলিম বিশ্বের জনগণ ইসলামের খেলাফতি ব্যবস্থার অধীন বাস করতে চায় এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় তারা নানাভাবে তাদের আগ্রহ উদ্দীপনার কথা জানিয়েছে। শাসক গোষ্ঠীই বরং জনগণকে তাদের কাঙ্ক্ষিত ব্যবস্থার বিপরীত দিকে টেনে নিয়ে যেতে চায়। এমতাবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠাকামীরা যদি ইসলামী রাষ্ট্রবিপ্লব সাধনে ত্বরান্বিত পদক্ষেপ নিতে পারেন তাহলে জনগণ এ বিপ্লবের পক্ষ অবলম্বন করবেন এবং বিপ্লবকে পরিণতির দিকে এগিয়ে নিতে বিশেষ অবদান রাখবেন আশা করা যায়। অবশ্য এর অর্থ এটা নয় যে, কেবলমাত্র ক্ষমতা দখলই ইসলাম প্রতিষ্ঠাকামীদের লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। ক্ষমতা গ্রহণ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দায়দায়িত্ব বহন করার ব্যাপারটাকে সবচাইতে বেশী প্রাধান্য দেয়াই একথার তাৎপর্য। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট কৌশল অবলম্বন ছাড়া কেবল মাত্র ইসলাম প্রচার প্রসার ও ইসলামের মহত্ব তুলে ধরাই যথেষ্ট নয় তা বুঝানোর জন্যই এর উপর সবিশেষ জোর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে হয়।
আল্লাহ মুসলমানদের খেলাফত দানের যে ওয়াদা করেছেন তা কেবল তাদের জন্য যারা সত্যিকার ঈমানদার, আমল ও চরিত্রের দিক দিয়ে নেক। যারা খোদার মনোনীত দ্বীনকে অনুসরণ করে চলে এবং যারা সব রকমের শির্ক হতে পাক হয়ে এখলাসের সাথে নিয়মিতভাবে আল্লাহর বন্দেগী ও গোলামী করে।
আলোচিত দুটি শর্তের মধ্যেই নিহিত রয়েছে যে বিপ্লবের স্বপক্ষের জনমত সংগঠিত করার জন্য যে ঈমানদার ও সৎকর্মশীল বাহিনীর কথা উল্লেখিত হয়েছে তাতেই নেতৃত্বের ব্যাপারটা এসে গিয়েছে। সর্বপর্যায়ে নেতৃত্ব দানের উপযোগী সুশৃংখল একদল কর্মী থাকতে হবে। যেসব দেশে জনগণ সাধারণভাবে এমন একটি বিপ্লবকে স্বাগত জানাবেন সেসব দেশের জন্য একটি গতিশীল কর্মীবাহিনী প্রয়োজন। অর্থাৎ বিপ্লবের নেতৃত্ব দেয়ার মত একদল ঈমানদার ও যোগ্যতাসম্পন্ন দক্ষ লোকের অগ্রাধিকার দিতে হবে। সমাজের মধ্য থেকেই এমন একদল উদ্যোগী লোক তৈরী করতে হবে যারা হবেন এ বিপ্লবের চালিকা শক্তি।