আযানের পদ্ধতি
আযানের জন্য কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ পদ্ধতি হলো হযরত বেলাল (রা) অনুসৃত পদ্ধতি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে আযান ছিল শব্গুলো দুবার দুবার আর একামতে একবার একবার। তবে বেলাল (রা) (আরবী**********************) দুবার বলতেন। তারপর রয়েছে আবু মাহজুয়ার অনুসৃত পদ্ধতি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আযান উনিশ শব্দে এবং একামত সতেরো শব্দে শিক্ষা দিয়েছেন। আমার মতে এটা পবিত্র কুরআনের ন্যায়। এটাই যথার্থ।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
(আরবী******************************************************************************)
“ফজরের নামাযের আযানে ‘ঘুম হতে নামায ভালো, ঘুম হতে নামায ভালো বলবে”।
আমি বলি, সকালবেলা যেহেতু ঘুম ও অলসতার সময় তখন কড়াভাবে নির্দেশ দেয়ার প্রয়োজন অত্যধিক। এজন্য এ শব্দগুলো বৃদ্ধি করাকে পছন্দ করা হয়েছে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- (আরবী****************************************) “যে আযান দিয়েছে সেই একামত বলবে।
আমি বলি, এর রহস্য হলো, যখন কোনো ব্যক্তি আযান দিল তখন তার অপর ভাইয়ের জন্য তার এ বৈধ কাজে প্রতিবন্ধক হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- (আরবী**********************************) “কেউ যেন তার অপর ভাইয়ের বিবাহরে প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না করে”।
আযানের ফজিলত
আযান ইসলামের বিশেষ শেয়ার (চিহ্ন)-এর মধ্যে অন্যতম। আযানের মাধ্যমে কোনো ভূখণ্ড ইসলামী রাষ্ট্ররূপে পরিগণিত হয়। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ কালে আযানের শব্দ শুনতে পেলে যুদ্ধ বন্ধ করে দিতেন। তা না হলে হামলা করতেন। আযান নবুয়তের কাজ (আরবী*********) গুলোর মধ্যে একটি গুরত্বপূর্ণ (আরবী********) তথা কাজ। কারণ আযান ইসলামের সবচেয়ে বড় রোকনের প্রতি আহবান জানায় এবং তা বুনিয়াদী ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের দিকে লোকদের ডাকে। আল্লাহর অধিক পছন্দনীয় এবং শয়তানের নিকট অধিক পছন্দনীয় কাজ হলো সেটি, যেটির কল্যাণ অপরের নিকট পৌঁছায় এবং যার মাধ্যমে আল্লাহর আওয়াজ বুলন্দ হয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
(আরবী*********************************************************************)
“শয়তানের উপর একজন ফকীহ (দ্বীনের গভীর জ্ঞান) হাজারো আবেদের চেয়েও ভারী”। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী******************************************************************************)
“যখন নামাযের জন্য ডাকা হয় তখন শয়তান হাওয়া ছাড়তে ছাড়তে বক্র হয়ে পালাতে থাকে”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
(আরবী**************************************************************************)
“হাশরের দিন মোয়াজ্জেন সবচেয়ে লম্বা গলা বিশিষ্ট হবে”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
(আরবী*****************************************************************************************)
“মোয়াজ্জেন যতটুকু উচ্চস্বরে আওয়াজ করবে তার মাগফেরাত তথা ক্ষমাও তত উচ্চমানের হবে এবং তার জন্য মানুষ ও জিন সকলেই সাক্ষী দেবে।
আমি বলি, রূপক বিষয়ের মোয়ামেলা আধ্যাত্মিকতার উপর নির্ভরশীল আর রূহের বিষয়ের সম্পর্ক অবয়বের তথা চেহারার সাথে। সুতরাং মোয়াজ্জেনের গলা লম্বা হওয়া তার আওয়াজ বড় হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত, আখেরাতে তার গলা লম্বা ও দীর্ঘ হবে। আর তার হকের প্রতি দাওয়াত দেয়ার কারণে তার ক্ষমাও হবে বিশাল। তার প্রতি আল্লাহর রহমতও হবে সীমাহীন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
(আরবী*********************************************************************************)
“যে ব্যক্তি সওয়াবের (আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের) উদ্দেশ্যে সাত বছর আযান দেবে, তাকে দোযখ হতে মুক্ত বলে লিপিবদ্ধ করা হবে”। কারণ সাত বছর পর্যন্ত আযান দেয়া তার বিশুদ্ধ ঈমানের প্রমাণ। এত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আযান দেয়া ঐ ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব, যে আল্লাহর জন্য সব কিছু কুরবানী করতে পেরেছে। আল্লাহর নিকট পরিপূর্ণভাবে সমর্পিত হতে পেরেছে এবং তার অন্তরে আল্লাহর রহমত পাহাড়ের ন্যায় জায়গা করে নিয়েছে।
পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থানরত বকরীর রাখাল সম্পর্কে আল্লাহর বাণী-
(আরবী************************************************************************)
“পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থানরত আমার এ বান্দার দিকে লক্ষ কর, সে আযান দেয়, নামায কায়েম করে এবং আমাকে ভয় করে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব।
আল্লাহর বাণী- (আরবী********************************) “সে আমাকে ভয় করে”। অর্থাৎ যেমনি নিয়ম ও অন্তরের দাবি তেমনি হয়ে থাকে আমল। আর আমল হচ্ছে প্রকাশ্য অবস্থা আর তার রূহ হচ্ছে অন্তরের নিয়ত ও কলবের দাবি। যখন সে আল্লাহকে ভয় করেছে এবং সেজন্য তার এখলাছও ছিল, তাই তার মাগফেরাতের কারণ হয়েছে।
যেহেতু আযান দ্বীনের শেয়ার (চিহ্ন)। সেহেতু তাকে মানুষ কতটুকু আল্লাহর হেদায়েত কবুল করল কি করল না তার প্রমাণ স্বরূপ করা হয়েছে। আযানের মৌখিক জবাবও তাকে মেনে নেয়ার দ্বারা তার প্রমাণ উপস্থাপিত হবে যা আল্লাহর পক্ষ হতে কাম্য। অতএব যিকির ও শাহাদাতাইনের জবাব দেবে হুবহু সে শব্দ দুটি উচ্চারণের মাধ্যমে এবং নামাযের জন্য আহবানের জবাব দেবে ঐ বস্তু দিয়ে যাতে তাওহীদের শক্তি ও ক্ষমতা বিদ্যমান। ইবাদতের দিকে অগ্রগামী হওয়ার সময় অপারগতা দূর করার জন্য।
যে ব্যক্তি এ কাজগুলো উপরোক্ত পদ্ধতিতে আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কারণ এ জবাব দান আল্লাহর আনুগত্যের এবং নিজেকে আল্লাহর নিকট সোপর্দ করে দেয়ার প্রমাণ।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দোয়া করার হুকুম দেয়া হয়েছে তার দ্বীনকে কবুল করার এবং তাকে মহব্বত করার পরিপূর্ণতার জন্য। অর্থাৎ যেভাবে দোয়া করবে সেভাবে উক্ত দুটি বিষয় পূর্ণথা পেতে থাকবে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
(আরবী******************************************************************************)
“আযান ও একামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া বৃথা যায় না”।
আমি বলি, অর্থাৎ এ সময়ে দোয়া করায় আল্লাহর রহমতের পরিপূর্ণতা এবং দোয়াকারীর আন্তরিকতা ও আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ থাকে, এজন্য এ সময়ের দোয়া আল্লাহর নিকট কবুল হয়।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী*********************************************************************)
“রাতের বেলায় আযান দেবে তখন তোমরা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না ইবনে উম্মে মাখতুম আযান দেয়”।
আমি বলি ইমামের (আমীরুল মুমিনীনের) জন্য মোস্তাহাব হলো যদি তিনি প্রয়োজন অনুভব করেন তাহলে দুজন মোয়াজ্জিন নিযুক্ত করতে পারেন। যাদের আযান –লোকেরা বুঝতে পারবে এবং লোকদের বলে দেবেন যে, অমুক মোয়াজ্জিন রাতে আযান দেবে তখন তোমরা রোজার সেহেরী খেতে ও পান করতে থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত না অমুক মোয়াজ্জিন আযান দেবে। যাতে তাদের প্রথম ব্যক্তির আযান হবে নামায আদায়কারীদের জন্য ও সেহেরী গ্রহণকারীদের জন্য যাতে তারা ঘরে ফিরে সেহেরী গ্রহণ করতে পারে। আর যারা ঘুমন্ত থাকে তারা জেগে উঠবে এবং নামাযে প্রবৃত্ত হবে এবং সেহেরী খাওয়ার বা বাকি থাকবে তা পাবে।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী***************************************************************************)
“যখন নামায আরম্ভ হয়ে যাবে তখন দৌড়ায়ে নামাযে এসো না, বরং স্বাভাবিকভাবে হেঁটে নামাযে উপস্থিত হও”।
আমি বলি এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে ইবাদতের ক্ষেত্রে গভীর মনোযোগের দিকে।
মসজিদ
মসজিদ তৈরি করা, মসজিদে অবস্থান করা ও মসজিদে নামাযের জন্য অপেক্ষা করার ফজিলত হচ্ছে-
(১) মসজিদ ইসলামের শেয়ার (বিশেষ চিহ্ন) গুলোর অন্যতম চিহ্ন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
(আরবী**************************************************************)
“যখন তোমরা কোনো মসজিদ দেখতে পাবে বা কোনো মোয়াজ্জিনকে আযান দিতে শুনবে তখন কাকেও হত্যা করবে না”।
মসজিদ নামাযের স্থান, ইবাদতকারীদের অবস্থানের স্থান, রহমত অবতীর্ণ হওয়ার জায়গা এবং একদিক থেকে তা কাবার সমতূল্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী হলো-
(আরবী*************************************************************************)
যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ফরজ নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে বাহির হয় তার সওয়াব এহরাম বাঁধা হাজিদের ন্যায়, যে ব্যক্তি চাশদের নামাযের জন্য বের হলো অন্য কোনো উদ্দেশ্য ব্যতীত শুধুমাত্র এ উদ্দেশ্যে বের হলো তার সওয়াব উমরাকারীর সওয়াবের ন্যায়।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী*****************************************************************************************)
“যখন তোমরা বেহেশতের বাগানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে তখন তার ফল ভক্ষণ করো, বলা হলো যে, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বেহেশতের বাগান কি? তিনি বললেনঃ মসজিদসমূহ।
নামাযের সময়গুলোতে মসজিদে গমন করা, কাজকর্ম ও ঘরবাড়ি ত্যাগ করে, দ্বীনের প্রতি এখলাছ এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ। সে ব্যক্তি শুধুমাত্র নামাযের উদ্দেশ্যেই ঘর ছেড়ে মসজিদে নামাযের উদ্দেশ্যেই গমন করে থাকে। এ কারণে নামাযে অনেক সওয়াব লাভ হয়।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী*************************************************************************)
কোনো ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে মসজিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে –উদ্দেশ্য শুধু নামায আদায় করা হলে –তাহলে তার প্রতি কদমে তার একটি মর্তবা বৃদ্ধি করে দেয়া হয় এবং তার একটি পাপ মার্জনা করে দেয়া হয়, অতঃপর নামায আদায় করলে যতক্ষণ সে মসজিদে অবস্থান করে ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরিশতা তার জন্য এ বলে দোয়া করতে থাকে, হে আল্লাহ! তার প্রতি রহমত বর্ষিত করুন, তার প্রতি মেহেরবানী করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযরত অবস্থায় থাকে।
মসজিদ তৈরির মাধ্যমে আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করা হয়, সত্যের আহবান প্রচারিত হয় ও আল্লাহর বাণী প্রচারে সহযোগিতা করা হয়।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী*******************************************************************************)
যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় মসজিদে গমন করে আল্লাহ তার জন্য বেহেশতে গমনের ব্যবস্থা করেন, যখনি সে সকাল এবং সন্ধ্যায় মসজিদে যাওয়া আসা করে।
আমি বলি, এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, প্রত্যেক যাওয়া ও আসার মধ্যে জান্নাতের মালিকানার ক্ষেত্রে প্রাধান্য বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ও তার অন্তরে আনুগত্যের আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী*******************************************************************************)
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ বানাবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করবেন”।
আমি বলি –এর রহস্য হলো, আমল অনুযায়ী প্রতিদান হয়ে থাকে।
মসজিদে হদছ হয়ে যাওয়া ব্যক্তি (যার অযু নষ্ট হয়ে যায়) নামাযের জন্য অপেক্ষাকারীতে পরিগণিত হবে না। কারণ সে ব্যক্তি তখন নামাযের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণকারী থাকে না।
কয়েকটি কারণে মসজিদে নববীতে নামায আদায় করা এবং মক্কায় হেরেমে –হেরেম শরীফে নামায আদায় করার সওয়াব কয়েকগুণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
তন্মধ্যে রয়েছে সেখানে এমন সব ফিরিশতা নিয়োজিত থাকেন যারা সেখানে ইবাদতকারীদের ঘিরে থাকে এবং যারা সে স্থানে নামায আদায়ের জন্য উপস্থিত হয় তাদের জন্য দোয়া করে।
তন্মধ্যে রয়েছে ঐ স্থানগুলোকে ইবাদতের জন্য আবাদ করার দ্বারা আল্লাহর শায়ায়ের তথা প্রতীক ও চিহ্নকে সম্মান প্রদর্শন করা হয় এবং তার দ্বারা আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করা হয়।
তন্মধ্যে রয়েছে ঐ সব স্থানে নামাযের জন্য পৌঁছানো দ্বারা মিল্লাতের আকাবেরদের স্মরণকে নতুন করে দেয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী*******************************************************************************)
“তিন মসজিদের উদ্দেশ্য ব্যতীত সুদীর্ঘ সফর করা যাবে না –মসজিদে হারাম অর্থাৎ পবিত্র মক্কা নগরীর মসজিদ, মসজিদে আকছা অর্থাৎ বায়তুল মোকাদ্দাস ও আমার মসজিদ তথা মসজিদে নববী”।
আমি বলি –জাহেলী যুগে লোকেরা এমন সব স্থানের যেয়ারতের ও বরকত লাভ করার উদ্দেশ্যে গমন করত যেগুলো তাদের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত ছিল। এটা সর্বজন বিদিত যে, এর দ্বারা দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতো। এ কারণে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এ বাণী দ্বারা ঝগড়া বিবাদের ও দ্বন্দ্ব-কলহের এ পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। যাতে করে যা দ্বীনের চিহ্ন ও প্রতীক নয় এমন জিনিস দ্বীনের চিহ্ন ও প্রতীক রূপে স্থান দখল না করে। এবং তা আল্লাহ ব্যতীত অপর সত্তার তথা গায়রুল্লাহর ইবাদতের মাধ্যম না হয়ে থাকে।
আমার নিকট বিশুদ্ধ করা হলো চাই সেটি কোনো আউলিয়ার কবরই হোক, কি কোনো অলীর তাকিয়াই হোক, অথবা তা তুর পাহাড়ই হোক, নিষিদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে সবই সমান। আল্লাহই ভালো জানেন।
মসজিদের আদব
মসজিদের আদব কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। তন্মধ্যে রয়েছে মসজিদের তাজিম করা –মসজিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। যখন কেউ মসজিদের প্রবেশ করবে তখন তার মধ্যে এ অনুভূতি জাগ্রত হবে যে, আমি একটি সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করছি। এ অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলার জন্য মসজিদে প্রবেশকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণী পাঠ করবে-
(আরবী*******************************************************************)
“তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন বলবে –হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দিন”।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী*************************************************************************)
“তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, বসার পূর্বে দুরাকাত নামায আদায় করবে”।
তন্মধ্যে রয়েছে মসজিদকে কুটকাট, ধূলি ময়লা, ময়লা আবর্জনা এ জাতীয় যাবতীয় অপছন্দনীয় বস্তু হতে পরিচ্ছন্ন রাখবে। বর্ণনাকারীর বর্ণনা হচ্ছে –নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং মসজিদ পরিচ্ছন্ন ও মসজিদকে খুশবুদার তথা সুগন্ধিযুক্ত রাখতে বলেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী********************************************************************)
আমার উম্মতের সকল সওয়াব আমার নিকট উপস্থাপন করা হয়েছে এমনকি কোনো ব্যক্তি যে খড়কুটা মসজিদ হতে বের করে তার সওয়াবও আমার নিকট উপস্থাপন করা হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
মসজিদে থুথু ফেলাও গুনাহের কাজ। তার কাফফারা তথা প্রতিবিধান হলো তা ঢেকে দেয়া তথা পরিস্কার করে ফেলা।
তন্মধ্যে রয়েছে- মসজিদে এমন কোনো কাজ করা হতে বিরত থাকা যা মসজিদে ইবাদতকারীদের বিভ্রান্তিরতে ফেলে দেয়। মসজিদে বাজারের ন্যায় শোরগোল না করা কর্তব্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (আরবী****************************) “তার তীরের ফলা তথা অগ্রভাগ ধরে ফেলা। (যাতে কারো গায়ে লেগে না যায়।)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী****************************************************************************)
কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে তার হারানো বস্তু ঘোষণা মসজিদে দিতে শুনতে পায় তাহলে তার কর্তব্য হবে একথা বলা যে, আল্লাহ তোমাকে সে হারানো বস্তু ফিরিয়ে না দেন। কারণ মসজিদ এ জন্য তৈরি করা হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী*********************************************************************************)
কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে মসজিদে বেচা কেনা করতে দেখ তাহলে বল- আল্লাহ তোমার ব্যবসায় বরকত না দিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কবিতা পাঠ করতে, মসজিদে কাউকে সাজা দিতে ও মসজিদে হক কায়েম না করতে অর্থাৎ কোনো হত্যাকারীকে তার হত্যার সাজা স্বরূপ হত্যা না করতে বলেছেন।
আমি বিল –মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দেয়া নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো এতে মসজিদে গণ্ডগোলের সৃষ্টি হয় এবং এ শোরগোল নামাযিদের ও এতেকাফকারীদের বিভ্রান্তিতে ফেলবে। আর মসজিদ এজন্য তৈরিও করা হয়নি। মসজিদ শুধুমাত্র আল্লাহর স্বরণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি কেউ মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা করে তাহলে মোস্তাহাব হলো তার উদ্দেশ্যের বিপরীত দেয়া করবে। যাতে সে নাখোশ হয়ে একাজ হতে বিরত থাকে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কারণ হিসেবে বলেছেন যে, মসজিদ এ জন্য তৈরি করা হয়নি। মসজিদ শুধুমাত্র আল্লাহর যিকির ও নামাযের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।
মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো –এতে করে মসজিদ মার্কেটে পরিণত হয়ে যাবে। মানুষ যখন মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় ও কায়-কারবার শুরু করে দেবে তখন মসজিদের সম্মান নিঃশেষ হয়ে যাবে। অপরদিকে তার দ্বারাও নামাযীদের ও এতেকাফকারীদের পেরেশানী হবে।
মসজিদে কবিতা প্রতিযোগিতা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো –এতে মসজিদে শোরগোলের সৃষ্টি হবে এবং যে কবিতা প্রতিযোগিতা করবে সে নিজেও আল্লাহর স্মরণ হতে বিরত হবে এবং অন্যদেরকেও আল্লাহর স্মরণ হতে বিরত থাকতে আহবান করবে।
মসজিদে কেছাছ কায়েম করা ও শাস্তি দিতে নিষেধ করার কারণ হলো –মসজিদ রক্ত, পেশাব ও এ জাতীয় বস্তু দ্বারা অপবিত্র ও অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়বে অথবা অপরাধী চিৎকার করবে, ক্রন্দন করবে ও হট্টগোলের সৃষ্টি করবে। এতে মসজিদে অবস্থানরত লোকদের সমস্যার সৃষ্টি করবে।
মসজিদে যদি এমন কবিতা পাঠ করা হয় যাতে হামদ ও নায়াত রয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রশংসা রয়েছে এবং কাফেরদের (আরবী*******) তথা রাগান্বিত হওয়ার কারণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এরূপ কবিতা পাঠ করা বৈধ। কারণ একটি একটি শরীয়ত সম্মত কাজ। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন (আরবী********************) “হে আল্লাহ! হাসানকে জিবরাঈল দ্বারা সাহায্য করুন”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী*********************************************************************)
“আমি মসজিদকে কোনো ঋতুবতী ও কোনো অপবিত্রের জন্য হালাল করব না”।
আমি বলি-এর কারণ হলো মসজিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। মসজিদের বড় তাজিম হলো পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কোনো ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে না। অযু ব্যতীত প্রবেশ এজন্য নিষেধ করা নয় যে, এরূপ হুকুম দেয়ার মধ্যে সংকীর্ণতা পরিলক্ষিত হয়। অপবিত্র ও হায়েজার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সংকীর্ণতা নেই এজন্য যে, অপবিত্র ব্যক্তি ও হায়েজা তথা ঋতুবতী নারী নামায হতে বহু দূরে অবস্থান করে থাকে। মসজিদ তো শুধুমাত্র নামায আদায়ের জন্যেই তৈরি করা হয়েছে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী*************************************************************************************)
“যে এ দুর্গন্ধযুক্ত বৃক্ষেল থেকে ভক্ষণ করবে সে যেন কখনো আমাদের মসজিদের নিকট না আসে। নিশ্চয়ই যে বস্তু মানুষকে কষ্ট দয়ে সে বস্তু ফেরেশতাদেরও কষ্ট দেয়”।
আমি বলি তা হচ্ছে পিঁয়াজ ও রসুন। প্রত্যেক দুর্গন্ধযুক্ত জিনিসই এর বিধানের অন্তর্ভুক্ত। (আরবী*******) অর্থ অপছন্দ করে ও তা হতে দূরে অবস্থান করে। কারণ তারা উত্তম চরিত্র ও পবিত্র বস্তু পছন্দ করে এবং খারাপ চরিত্র দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু অপছন্দ করে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী*******************************************************************************)
তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করার সময় বলবে, ‘হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন। আর যখন মসজিদ হতে বের হবে তখন বলবে –হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার রহমত ও করুণা কামনা করছি’।
আমি বলি –মসজিদে প্রবেশকালে রহমত কামনা করা ও বের হওয়ার সময় কৃপা কামনা করার কারণ হলো পবিত্র কুরআনে রহমত শব্দ রূহানী ও পরকালীন নেয়ামত যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভ, নবুয়াত লাভ।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
(আরবী***************************************************************************)
“তোমার প্রভু প্রতিপালকের রহমত দুনিয়ার জমাকৃত সম্পদ হতে উত্তম”।
আর ফজল তথা কৃপা বলতে দুনিয়ার নেয়ামত বুঝানো হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-
(আরবী**********************************************************************)
“তোমাদের এতে কোনো গুনাহ নেই যে, তোমরা জীবিকা তালাশ করবে যা তোমাদের প্রভু প্রতিপালকের পক্ষ হতে”।
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-
(আরবী***************************************************************************)
“অতঃপর যখন তোমরা জুমার নামায সমাপ্ত করবে তখন জমিনে চলে যাও এবং আল্লাহর দেয়া রিজিক তালাশ কর। যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে নিশ্চয়ই আল্লাহর নৈকট্যই কামনা করে। আর বের হওয়ার সময় হলো রিজিক তালাশের সময়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-
(আরবী***************************************************************************)
“তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে বসার পূর্বে দু’রাকাত নামায আদায় করে নেবে”।
আমি বলি –মসজিদে প্রবেশ করেই নামায আদায় করা বিধান এজন্য দেয়া হয়েছে যে, যখন সে স্থানে প্রবেশ করবে যে স্থানটি ইবাদতের জন্যই নামাযের জন্য তৈরি করা হয়েছে সেখানে প্রবেশ করেই নামায না পড়া বঞ্চিত হওয়া ও দুঃখের বিষয়। আর এ দু’রাকাত নামায আদায়ের মাধ্যমে ফরজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে। আর এতে মসজিদের তাজিম তথা মসজিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শিত হয়।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
(আরবী***********************************************************************************)
“কবর স্থান ও স্নানাগার ব্যতীত সমগ্র জমিন সিজদার স্থান”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত জায়গায় নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন –গোবর ফেলার স্থান, কবর স্থান, জবাইয়ের জায়গা, রাস্তার মধ্যখানে, গোসলখানায়, উটের বসার জায়গায় এবং বায়তুল্লাহর ছাদের উপর এবং বাবেলের জমিনে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন, কারণ তা অভিশপ্ত।
আমি বলি –গোবর ফেলার স্থান ও জবাইয়ের স্থানে নামায আদায় করতে নিষেধ করার কারণ হলো –এ দুটো স্থান নাপাক। নামাযের স্থান পাক পবিত্র হওয়া নামাযের জন্য শর্ত।
কবরস্থানে নামায পড়তে নিষেধ করার কারণ হলো –শিরকের নূন্যতম পথ বন্ধ করা। কারণ যেমনিভাবে মূর্তিকে সামনে রেখে পূজা করা হয় যদি তেমনিভাবে ওলামাদের ও বুজুর্গদের কবরকে সামনে রেখে নামায পড়া হয় তাহলে তা শিরকে জলি (আরবী******************) আর যদি বরকতের জন কবরের নিকটে নামায পড়া হয় তাহলে তা শিরকে খফি অর্থাৎ তাতেও শিরকের গন্ধ পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস থেকে তা বুঝা যায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
(আরবী****************************************************************)
“আল্লাহ তা’আলা ইহুদী ও নাছারাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ করে নিয়েছে”। এর প্রমাণ তিন সময়ে নামায আদায় করতে নিষেধ করা। এ নিষেধ কাফেরদের সাথে সামঞ্জস্য হওয়ার কারণে করা হয়েছে। সূর্য উদয় কালে, সূর্য মাথার উপর সোজাভাবে অবস্থানকালে ও সূর্যাস্তের সময়। কারণ এসময়ে কাফেরেরা সূর্যকে সিজদা করে থাকে।
স্নানাগারে নামায পড়তে নিষেধ করার কারণ হলো –এ স্থান হচ্ছে সতর খোলার স্থান। অনেক লোক একসাথে স্নান করতে এলে ভীড় হয়ে যায় ফলে নামাযে হুজুরী কলব হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে।
উট বসার স্থানে নামায পড়তে নিষেধ হওয়ার কারণ হচ্ছে –উট হচ্ছে বিশাল দেহী প্রাণী। তার আক্রমণও কঠিন। সে শক্তি প্রয়োগও করে অতিরিক্ত। এ কারণে উট নামাযীর উপর হামলা করে বসতে পারে; এতে নামাযীর নামাযে হুজুরী কলব হওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। ছাগলের বিষয়টি এর বিপরীত।
রাস্তার মধ্যে নামায পড়তে নিষেধ করার কারণ হলো –লোকদের রাস্তা অতিক্রমের প্রতি লক্ষ্যের কারণে নামাযে মন বসবে না। রাস্তায় নামায আদায়ের কারণে হিংস্র জন্তুর চলাচলের স্থান; তার দ্বারা নামাযির ক্ষতি সাধিত হতে পারে। হাদীস শরীফে বিশুদ্ধ বর্ণনায় রাস্তায় নামায পড়ার বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে।
বায়তুল্লাহর ছাদে নামায পড়তে নিষেধ করার কারণ হলো –বিনা প্রয়োজনে বায়তুল্লাহর ছাদে আরোহণ করা মাকরূহ। এতে বায়তুল্লাহর সম্মান বিনষ্ট হয়। নামায পড়ার সময় সন্দেহ থাকবে যে কেবলা হলো কি হলো না? কারণ সেখানে দৃষ্টির সীমা রক্ষার কিছু নেই।
অভিশপ্ত জমিনে যেখানে পাথর নিক্ষিপ্ত হয়েছে বা যে স্থানে দাবিয়ে দেয়া হয়েছে নামায পড়তে নিষেধ করার কারণ –কোনো স্থানে নামায পড়ার কারণে সে স্থানের সম্মান বৃদ্ধি পায়। অভিশপ্ত জমিন এ সম্মান পাওয়ার যোগ্য নয়। বরং সে স্থানের অবমাননাই করা উচিত। সে স্থানে নামায পড়তে বারণ করার মাধ্যমে সে স্থানের অবমাননা করাই উদ্দেশ্য। ইচ্ছা করে আল্লাহর অসন্তুষ্টি কাঁধে নেয়া উচিত নয়। অভিশপ্ত স্থানে নামায আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হতে পারে না। আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণে এসব স্থান হতে দূরে অবস্থান করা উচিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
(আরবী********************************************************************)
তাবুক যাওয়ার পথে ছামুদ জাতির বস্তি দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“এখানে ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রবেশ কর”।
নামাযীর পোশাক
জেনে রাখুন –পোশাক অন্যান্য প্রাণী হতে মানুষের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে। পোশাক পরিধান করা মানুষের সর্বোত্তম অবস্থান নির্ণয় করে। পোশাকের মধ্যে মানুষের পবিত্রতার অংশ বিদ্যমান। এতে নামাযের প্রতি সম্মান রয়েছে। মহান আল্লাহর দরবারে মুনাজাতের হকও এর মাধ্যমে আদায় হয়ে থাকে। উলঙ্গ অবস্থায় কারো সামনে উপস্থিত হওয়া বেয়াদবীর কারণ হয়। নামায ছাড়াও অন্য সময় পোশাক পরিধান করা শরয়ী ওয়াজেব। এটি একটি মূল ওয়াজিব কাজ। নামাযের পরিপূর্ণতার জন্য লেবাছ তথা পোশাক পরিধান করাকে শর্ত করে দেয়া হয়েছে। শরীয়ত পোশাকের দুটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ওয়াজিব সীমা, যা করা ব্যতীত গত্যন্তর নেই। এ পোশাক পরিধান করা নামায বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত। অপর সীমাটি হচ্ছে মোস্তাহান।
প্রথমটি সীমা অর্থাৎ ওয়াজিব পোশাকের সীমা হচ্ছে –উভয় লজ্জাস্থান ঢাকা। এ উভয়কে ঢাকার ব্যাপারে বিশেষভাবে তাকিদ করা হয়েছে। এদের সাথে উভয় রানকে মিলিয়ে নেয়া হয়েছে। নবীদের ক্ষেত্রে তাদের সমগ্র দেহ ঢাকা।
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস হচ্ছে-
(আরবী*****************************************************************************)
“বালেগা নারীর নামায ওড়না ব্যতীত কবুল করা হবে না”। তা এজন্য যে, রাত কামভাব উত্তেজক স্থান। এমনিভাবে নারীর সমগ্র দেহ। সুতরাং নারীর হুকুম উভয় লজ্জাস্থানের হুকুম।
দ্বিতীয় প্রকারের পোশাকের সীমা হলো –নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস-
(আরবী*******************************************************************************)
তোমাদের কেউ এক কাপড়ে ততক্ষণ নামায পড়বে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তা তার কাঁধ পর্যন্ত কিছু না থাকবে। এবং তিনি আরো বলেছেন, যদি কাপড় বড় হয় তাহলে তার এদিক সেদিক করে করে নেবে। অর্থাৎ গাতী বেঁধে নেবে।
এর মধ্যে গুপ্ত রহস্য হলো –মানুষের পরিবেশ অনুযায়ী পোশাক বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আরব অনারবের মধ্যমপন্থী সকল লোকই আচকান, কামীছ, দুল্লা ইত্যাদি পরিধানের ব্যাপারে একমত যে, তাদের পরিপূর্ণ পোশাক হবে যা তাদের পেট, পিঠ ও কাঁধে ঢেকে নেবে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এক কাপড়ে নামায আদায়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলো। তিনি বললেন- (আরবী************************************) তোমাদের প্রত্যেকের কি দু’খানা করে কাপড় রয়েছে? অতঃপর হযরত উমর (রাঃ)-এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন –(আরবী*************) “আল্লাহ যখন তোমাদের জন্য সুযোগ দিয়েছেন তখন তোমরা তা ব্যবহার কর”। এক ব্যক্তি একাধিক কাপড় পরিধান করবে।
আমি বিল –এর থেকে প্রমাণ হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পোশাকের প্রথম সীমা অর্থাৎ ওয়াজিব সীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আর হযরত উমর (রাঃ)-এর বাণী পোশাকের দ্বিতীয় সীমা রেখা অর্থাৎ মোস্তাহাব সীমার বর্ণনা। আবার এও হতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পোশাকের দ্বিতীয় সীমা অর্থাৎ মোস্তাহাব সীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কিন্তু তিনি তা বলেননি যা হযরত উমর (রাঃ) বলেছেন। অর্থাৎ একাধিক কাপড় পরিধানের বিষয়। যদি তিনি তা বলতেন তাহলে তা শরীয়তের বিধান হয়ে যেত। তাহলে যার নিকট দু’কাপড় নেই সে অন্তরে কষ্ট পেত। আর এক কাপড়ে তার নামায পরিপূর্ণ হতো না। কারণ সে তার ধারণা অনুযায়ী পরিপূর্ণ পোশাকে নামায আদায় করথে না। হযরত উমর (রাঃ) অবগত ছিলেন যে, শরীয়ত অবতীর্ণ হওয়ার সময় শেষ ও সমাপ্ত হয়ে গেছে। এবং তিনি এও অবগত ছিলেন যে, নামাযের মধ্যে পরিপূর্ণ পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব। এজন্য তিনি নামাযের মোস্তাহাব পোশাকের বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহই ভালো জানেন।
যে ব্যক্তি চুল মাথার পেছনে ঝুটি বেঁধে নামায আদায় করে তার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
(আরবী*******************************************************************************)
“তার অবস্থা হলো যেন সে মশক ঝুলিয়ে নামায পড়ছে”।
আমি বলি –এ হাদীসে এভাবে নামায আদায় করাকে মাকরূহ তথা অপছন্দ করার কারণ হচ্ছে –এভাবে ঝুটি বেঁধে নামায পড়ায় সাজসজ্জার কমতি এবং নামাযের আদব অনুযায়ী পরিপূর্ণ পোশাক হয় না এ কারণে তা মাকরূহ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে চাদরে ফুল আর্ট করা ছিল সে চাদর সম্পর্কে বলেছেন-
(আরবী******************************************************************)
“এ চাদর আমাকে আমার নামায হতে অমনোযোগী করেছে”।
হযরত আয়েশা (রাঃ) ঘরের পর্দা সম্পর্কে বলেছেন-
(আরবী******************************************************************************)
“তোমার এ পর্দা আমার থেকে দূরে সরিয়ে নাও। এর ছবি আমার নামাযে বার বার আমার সামনে আসছে”।
রেশমের কাবা সম্পর্কে বলেছেন-
(আরবী********************************************************)
“পরহেজগারদের জন্য, আল্লাহভীরু মোত্তাকীদের জন্য এটা পরিধান করা উচিত নয়”।
আমি বলি –নামাযীর জন্য উচিত হলো এমন সাজসজ্জা পরিহার করা যা তাকে নামাযের প্রতি অমনোযোগী করে দেয়। তার সৌন্দর্যের কারণে। অথবা তার মনে আনন্দ অনুভূত হওয়ার কারণে। যাতে নামায পরিপূর্ণতা লাভ করে, যে উদ্দেশ্যে সে নামায আদায় করছে।
ইহুদীরা সেণ্ডেল পায়ে ও মোজা পায়ে নামায পড়ত না। তাদের দৃষ্টি এরূপ করা তাজিমের খেলাপ। কারণ লোকেরা যখন বড়দের সামনে গমন করে তখন সেণ্ডেল জুতা ইত্যাদি খুলেই গমন করে থাকে।
যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-
(আরবী****************************************************************************)
আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা (আঃ)-কে বলেছিলেন –“হে মুসা! তোমার জুতা খুলে নাও কারণ তুমি এক পবিত্র স্থানে অবস্থান করছ”।
কিন্তু এখানে অন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে –আর তা হলো জুতা এবং মোজা ব্যক্তির পরিপূর্ণ পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। খালি পায়ে কাকেও ভালো দেখায় না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করেছেন এবং ইহুদীদের থেকে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে অন্য দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন। এবং বলেছেন-
(আরবী*******************************************************************************)
“ইহুদিদের বিপরীত কর, তারা জুতা এবং মোজা পরিধান করে নামায পড়ে না”। বিশুদ্ধ কথা হলো জুতা পরে নামায পড়া এবং খালি পায়ে নামায পড়া উভয় সমান।
নামাযের সময় শরীরে কাপড় জড়িয়ে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। শরীরে কাপড় জড়িয়ে নেয়া বলতে বুঝানো হয়েছে দেহে কাপড় লটকিয়ে উভয় হাত তার ভেতরে নিয়ে নেয়া –এরূপ মত কারো কারো।
এভাবে কাপড় পরিধান করাকে (আরবী***********************) বলা হয়। আর এরূপভাবে কাপড় পরিধান করা অত্যন্ত অপছন্দনীয় পদ্ধতি। কারণ তা মানুষের চরিত্র ও অভ্যাসের খেলাফ। মানুষের চরিত্র ও অভ্যাস হলো কাপড় পরিধানের সময় উভয় হাত কাপড়ের বাহিরে রাখা।
এভাবে কাপড় পরিধান করার দ্বারা ছতর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকে। হাত যদি কাপড়ের ভেতরে থাকে তাহলে কাপড় সামলানো কষ্টকর হবে এবং মানুষ তথা ব্যক্তি উলঙ্গ হয়ে যেতে পারে। কোনো কিছু ধরার জন্য হাত বের করার প্রয়োজন দেখা দিলে তাতেও ছতর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কারো কারো মতে (আরবী***********) ‘ছদল’ বলতে বুঝানো হয়েছে মাথার উপর বা উভয় কাঁধের উপর কাপড় ঝুলিয়ে দেয়া, তা দেহের সাথে না মিলানো। বা কাপড়ের উভয় দিক না মেলানো। এরূপ করা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো এতে সাজসজ্জার ও পরিপূর্ণ পোশাক পরিধানের কমতি হয়। কারণ এরূপ কাপড় পরিধান করা একটি অপছন্দনীয় ও নিন্দনীয় পদ্ধতি।
পরিপূর্ণ আকৃতি দ্বারা বুঝানো হয়েছে প্রচলিত পদ্ধতি ও অভ্যাস ফয়সালা করবে যে, পোশাক কি ধরনের হবে। কোনো ভ্যক্তি তার জন্য উপযোগী পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে কমতি করবে না। যদিও লোকেরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে পোশাক পরিধান করে থাকে। কিন্তু আপনি তালাশ করলে দেখতে পাবেন যে, প্রত্যেকেই পরিপূর্ণ আকৃতির পোশাক পরিধান করে থাকে। এক্ষেত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সময়কার আরবদের প্রচলিত নীতি পদ্ধতিই গ্রহণ করেছেন এবং তার উপরই তার সকল আদেশের ভিত্তি স্থাপন করেছেন।
দ্বিতীয় খণ্ড সমাপ্ত