আলোর খোঁজে বহুদূর
গ্রামটির নাম ‘জায়ান’।
পারস্যের ইসফাহান অঞ্চলের একজন ধনাঢ্য পিতার ঘরে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে একটি শিশু।
প্রকৃতির আলেঅ-হাওয়ায় বাড়তে থাকে শিশুটি। বাড়তে বাড়তে হয়ে যায় নওজোয়ান।
রাজপুত্রের মতো সুন্দর ফুটফুটে নওজোয়ানকে সবচেয়ে ভালোবাসে তার পিতা।
তিনি গ্রামের সর্দার। একমাত্র পুত্র তার নয়নের মণি। কলিজার টুকরা। পিতা চান না ছেলের অমঙ্গল। চান না কোনো রকম বিপদ তার ছেলেকে স্পর্শ করুক। এজন্যে তিন ছেলেকে ঘরের ভেতর আবদ্ধ করে রাখেন।
নওজোয়ান ঘরের ভেতর আবদ্ধ থাকে সারাকষণ।
খাঁচার পাখির মতো তার হৃদয়ে দুলে ওঠে মুক্তির দুর্বার ঢেউ।
সে মুক্তি পেতে চায়। পেতে চায় মুক্ত বাতাসের ছোঁয়া। দেখতে চায় চাঁদ জোছনা আর প্রতৃতির নির্মল শোভা।
দিন যায়, মাস যায়। নওজোয়ানের প্রতীক্ষার প্রহর বাড়তে থাকে। কিন্তু মুক্তির সুযোগ আর আসে না।
অবশেষে একদিন এলো।
তার পিতার ছিল বিশাল খামার। তিনি সেদিন নিজে আর খামারে যেতে পারলেন না। আদরের ছেলেকে বললেন,
আমিতো আজ খামারে যেতে পারছিনে। তুমিই যাও। কাজ কর্ম একটু দেখাশুনা করে এসো।
পিতার কথা শুনে নওজোয়ানের বুকে আনন্দের ঝড় বয়ে গেল। আবদ্ধ ঘর থেকে সে বের হয়ে আসে। দু’চোখ ভরে দেখে পাখির ঝাঁক। ফুলোর শোভা। সবুজ প্রকৃতি। নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে টেনে নেয় বুকের ভেতর শীতল হওয়া।
আহ! মুক্তির স্বাদই আলাদা!
নওজোয়ান হাঁটছে মনের আনন্দে। ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে চারপাশের সবুজ গাছ-গাছালি গুল্মলতা। শুনছে পাখির কলরব। দেখছে আকাশে মেঘের খেলা। দেখছে আর ভাবছে। ভাবছে আর হাঁটছে।
হঠাৎ সে থমকেদাঁড়ালো ওপাশে কাদের আওয়াজ?
গুন গুন করে কথা বলছে কারা?
নওজোয়ান কান খাড়া করে শুনতে থাকে।
এক পা দু’পা করে এগিয়ে যায়।
ধীরে ধীরে সেই ঘরটির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। আবারও তার কানে ভেসে এলো প্রার্থনার শব্দ।
ঘরটি শুধু ঘর নয়। একটি গির্জা। এখানে খ্রিস্টানরা উপাসনা করে।
নওজোয়ান তো আর এদের উপাসনার খবর জানে না। তার পিতা একজন বিখ্যাত অগ্নি-উপাসক। পিতার কাছ থেকে সে আগুনের উপাসনাই শিখেছে
গির্জার লোকদের কাছে নওজোয়ান জিজ্ঞেস করলো তোমরা এখানে কি করছো?
আমরা প্রভুর প্রার্থনা করছি। তারা জবাব দিল।
তাদেরকে দেখে নওজোয়ান খুশি হলো। তার হৃদয়ে অন্যরকম হাওয়া বইতে থাকলা। সে ভুলে গেল খামারে যাবার কথা।
ভুলে গেল পিতার নির্দেশ। সারাদিন সে কাটিয়ে দিল তাদের সাথে গির্জায়।
বেলা বাড়তে থাকে। একসময় দিনের সূর্য হারিয়ে যায়।
নেমে আসে সন্ধ্যার কালো ছায়া। নওজোয়ানের মনে পড়ে বাড়ি ফেরার কথা। ফেরার সময় তার মনে প্রশ্ন জাগে, এ ধর্মের উৎস কোথায়?
গির্জার লোকেরা বললো- শামে।
ক্লান্ত। অথচ প্রশান্ত নওজোয়অন। চোখে মুখে আন্দের ফোয়ারা। পিতা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি খামারে গিয়েছিলে? কেমন দেখলে?
নওজোয়ান মিথ্যে বললো না। বললো, খামারে না গিয়ে সারাদিন গির্জায় থেকে উপাসনা করেছি।
সর্দার পিতা ছেলের কথা শুনে ক্ষেপে গেলন। তার চোখ দিয়ে আগুনের হুলকা ছুটছে।
থেলে আগুনের উপাসনা না করে গির্জায় উপাসনা করেছে? ধর্মান্তরিত হচ্ছে?
পিতা ভুলে গেলেন স্নেহের কথা। আদরের কথা। তিনি নিষ্ঠুরভাবে ছেলের পায়ে বেড়ি দিয়ে পুনরায় ঘরে আবদ্ধ করে রাখলেন।
আবদ্ধ ঘরে হাওয়া ঢোকে না।
ছেলেটি কাঁদে মুক্তির প্রার্থনা করে।
খ্রিস্টানদে কাছে গোপনে খবর পাঠায়। শামের দিকে যদি কোনো কাফেলা যায় তাহলে যেন তাকে কৌশলে মুক্ত করে নিয়ে যায়।
খ্রিস্টান ধর্মের মূল উৎস শামে। সেও শামে যাবে। সেখানেই গিয়ে তার হৃদয়ের ইচ্ছা পূরণ করবে।
কিন্তু তার ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না। সে পায়ে বেড়ি নিয়ে প্রতীক্ষায় থাকে। কেবলই প্রতীক্ষা করে- কখন আসবে সেই সোনালি সুযোগ?
একদিন সুযোগ এলো।
রাতের গভীরে নওজোয়ানকে উদ্ধার করে একটি কাফেলা তাকে নিয়ে গেল শামে।
নতুন শহর শাম। নওজোয়ানের চোখে মুখে অবাক- বিস্ময়। সে জিজ্ঞেস করলো, এখানকার সর্বোত্তম এবং সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে?
তারা জবাব দিল- বিশপ। গির্জার পুরোহিত।
নওজোয়ান তার কাছে গেল।
পুরোহিতের খেদমতে নিজেকে উজাড় করে দিল। পুরোহিতকে সে ভালো করে দেখতে থাকলো। তার স্বভাব, তার চরিত্র, তার আচরণ- সবকিছু। তাকে দেখে আর তার সাথে থেকে নওজোয়ানের মনটা খারাপ হয়ে গেল। তার বুজে জমে উঠলো ঘৃণা ও কষ্টের মেঘ।
সবাই যাকে ভালো মানুষ বলে জানে- আসলে সে আদৌ ভালো মানুষ ছিল না।
তার ছিল লোভ আর মিথ্যার ছলনা। সে সবাএক সওয়াবের লোভ দেখিয়ে দান খয়রাত করতে বলে। পুরোহিতের কথায় সবাই দান করে অঢেল টাকা। অনের্ক স্বর্ণ অনেক সম্পদ। পুরোহিত এসব দানের সম্পদ গচ্ছিত রাখে তার গোপন গুদামে। আর সেসব সম্পদ এবং অর্থ নিজেই আত্মসাৎ করে।
পুরোহিত মারা গেলে তার ভক্তরা তাকে দাফন করতে এলো।
নওজোয়অন সবাইকে বললেঅ- এ পুরোহিত ভালো মানুষ ছিল না। তোমাদের দানের সম্পদ আত্মসাৎ করে নিজেই ভক্ষণ করেছে আর জমা করে রখেছে গোপন গুদামে।
সত্যি বলছো? তা হতেই পারে না। উনি আমাদর বিশপ। আমাদের পুরোহিত। এমন কাজ তার পক্ষে কি করা সম্ভব?
নওজোয়ান গোপন গুদামে তাদেরকে নিয়ে গেল। তারা দেখলো গচ্ছিত সম্পদের পাহাড়।
এমন ভণ্ড তাপসকে কি দাফন করা যায়?
তারা তাদের বিশপের লাশকে ঘৃণায় আর ক্ষোভে শূলে বিদ্ধ করে ঝুলিয়ে রাখলো।
মানুষেরা দেখুক- ভণ্ডামির এবং পাপের কি সাজা।
ভণ্ড বিশপের মৃত্যুর পর এলা আর একজন বিশপ। নওজোয়ান তার সেবা করা শুরু করলো। বিশপের সে জিজ্ঞেস করলো-
আপনার মৃত্যুর পর আমি আর কার কাছে যেতে পারি? কে সবচেয়ে সত্যবাদী পুরুষ? বেশি ধর্মভীরু?
বিশপ বললো, মাওসেলে এক ব্যক্তি আছেন। তার নামও তোমাকে বললাম। তিনি অপেক্ষাকৃত ভালো এবং সৎ মানুষ। তুমি তার কাছে যেতে পারো।
বিশপের মৃত্যুর পর নওজোয়ান মাওসেল গেল। খুঁজে বের করলো লোকটিকে। তাকে দেখে নওজোয়ানের ভালো লাগলো। শ্রদ্ধা করার মতো ব্যক্তি বটে! কিন্তু তিনি অনেক বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। নওজোয়ান তাকে মনপ্রাণ দিয়ে সেবা করে।
একদিন বৃদ্ধের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলো। নওজোয়ান কেঁদে ফেললো। এবার আমি কার কাছে যাবো?
বৃদ্ধ দুঃখভরা হৃদয়ে বললেন, তোমার সত্য সন্ধানের নেশা আমাকে মুগ্ধ করেছে যুবক! তোমার মতো এতো ভালো- উৎসাহী ব্যক্তি আমি আর পাইনি। নসিব মন্দ! আমি বিদায় নিচ্ছি। আমরা যে বিশ্বাসের ওপর অটল ছিলাম, এখন আর তেমন কোনো সত্যপুরুষ এ ধর্মে নেই। তুবি তুমি আমার মৃত্যুর পর নাসিবীনে যেতে পারো। সেখানে এক ব্যক্তি আছেন এই নামের লোকটির কাছে তুমি থাকতে পারো।
বৃদ্ধের মৃত্যুর পর নওজোয়ান সেখানে। খুঁজে বের করলো তাকে।
অল্প দিনের মধ্যে তিনিও মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। নওজোয়ান বললো, এবার আমি কার কাছে যাবো?
তিনি বললেন আম্বুরিয়াতে এক ব্যক্তি আছেন। তুমি তার কাছে যেতে পারো।
নওজোন আম্বুরিয়ার সেই ধার্মিকের কাছে গেল।
নওজোয়ানের মুখে তার অতীতে ত্যাগ এবং সত্য সন্ধানের কথা শুনে খুব খুশি হলেন। তাকে কিছু গরু এবং ছাগল প্রদান করলেন।
নওজোয়ানের বুকটা ফুলে উঠলো আনন্দে। মনে পড়লো তার পিতার ঐশ্বর্যের কথা। সম্পদের কথা। কত আদর যত্নে সে পালিত হয়েছে- সে কথা।
কিন্তু সত্য ধর্মের প্রতি হৃদয়ের দুর্বার টানে মুহুর্তে সে ভুলে গেল পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধির কথা।
নওজোয়ান হৃদয়-মন ঢেলে দিযে সেবা করে যায় বৃদ্ধকে।
কিন্তু বার্ধক্যের তো আর কোনো ঔষধ হয় না!
মৃত্যুকে তো কেউ আর ফেরাতে পারে না।
ঝরে পড়ার সময় হলে গাছের পাতা যেমন ঝরে যায়, তেমনি- মৃত্যু এলেই তাকে মৃত্যুমুখে সমর্পিত হতে হয়। এর কোনো বিকল্প নেই।
দিনে দিনে বৃদ্ধও মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
নওজোয়ানের চোখে বিষাদের কালো ছায়অ। এবার সে কোথায় যাবে?
নওজোয়ানের উৎকণ্ঠা দেখে বৃদ্ধ তাকে কাছে ডাকলেন। আদরে আদরে ভরে দিলেন যুবকের হৃদয়। তারপর আস্তে করে বললেন,
আমি জানিনে- এরপর তুমি কোথায় যাবে। আমিতো তেমন কোনো ব্যক্তিকে আর খুঁজে পাচ্ছিনে। যার কাছে তোমাকে পাঠানো যায়। আমরা যে ধর্মের ওপর আস্থাশীল ছিলাম, যে সত্যের ওপর সুদৃঢ় ছিলাম, এখন আর তার ওপর তেমন কোনো সৎব্যক্তি অবশিষ্ট নেই। নেই কোনো সত্য পুরুষ। তবে হতাশ হবার কিছু নেই। অদূর ভবিষ্যতে আরবে একজন ব্যক্তি আসবেন। তিনি বনী। ইব্রাহীমের ধর্মকে তিনি নতুনভাবে প্রচার কবেন। তাঁর ওপর আল্লাহর কিতাব অবতীর্ণ হবে। তাঁর প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে তিন বড় বড় পাথরের জমিনের মাঝখানে খেজুর উদ্যান বিশিষ্ট ভূমির দিকে হিজরত করবেন। নবুওয়তের নিদর্শন থাকবে তাঁর কাছে। তাঁর দু’কাঁধের মাঝখানে থাকবে নবওয়তের মোহর। তিনি হবেন সর্বশেষ নবী। সত্যনবী। মহা সম্মানী এই নবী হাদিয়ার জিনিস খাবেন। কিন্তু সাদকার জিনিস তিনি কখনোই খাবেন না। সম্ভব হলে তুমি সেখানে যেতে পারো। তাঁর কাছ থেকে পান করতে পারো সত্য পিপাসার অঢেল পানি। তোমার যাবতীয় তৃষ্ণা মিটে যাবে তখন।
বৃদ্ধ মারা যাবার পর নওজোয়ান সিদ্ধান্ত নিলেন আরবে যাবার। কালব গোত্রের কিছু আরব ব্যবসায়ী আম্বুরিয়াতে এলো। নওজোয়ান বললো, আমার এই গরু ছাগলগুলি তোমাদেরকে দেব। বিনিময়ে আমাকে তোমরা আরবে নিয়ে যাবে?
তারা রাজি হয়ে গেল। যুবক চললো তাদের সাথে।
সুদূর আরবে।
কিন্তু লোকগুলো ছিল অসৎ, বিশ্বাসঘাতক।
পথিমধ্যে তারা তাকে বিক্রি করে দিল এক ইহুদির কাছে।
ধনীর ঘরের আদরের সন্তান শুরু করলো দাসত্বের জীবন। আর দাসত্বের জীবন মানেই তো কষ্টের জীবন।
আগুনের জীবন!
অল্পদিনের মধ্যেই হাত বদল হলো যুবক।
বনী কুরাইজা গোত্রের এক ব্যক্তি তাকে কিনে নিল। তারপর তাকে নিয়ে গেল ইয়াসরিবে (মদীনায়)।
মদীনায় এসে নওজোয়অন চারদিকে তাকিয়ে দেখে।
সবকিছু অচেনা অজাা।
কোথাওবা পাহাড় পর্বত। আবার কোথাওবা পাথর কুঁচির বিস্তীর্ণ ভূমি। তারই মধ্যে আবার খেজুরের সুন্দর সাজানো বাগান।
মুহূর্তেই মনে পড়লো তার আম্বুরিয়ার বৃদ্ধের কথা। বৃদ্ধের দেয়া নির্দেশের মধ্যে একটি ছিল- খেজুরের বাগান।
খেজুরের বাগান দেখে নওজোয়ানের প্রাণে আনন্দের মৌমাছি গুন গুন করে উঠলো। মনিবের সাথে সে এখানে অবস্থান করলো।
মন দিয়ে সে মনিবের কাজ করে যায়। তার কাজে কোনো ফঅঁকি নেই। সততা আর শ্রমে নেই কোনো চালাকি।
নওজোয়ান খেজুর বাগানে। খেজুর গাছের চূড়ায় উঠে কাচে ব্যস্ত।
মনিব গাছের নিচে বসে আরামে বিশ্রাম করছে।
এমন সময় মনিবের ভাতিজা এসে বললো, মক্কা থেকে আজ এক ব্যক্তি ইয়াসরিবে। বনী কায়লারা তাঁর কাছে ছুটে গেছে।
লোকটি নিজেকে ‘নবী’ বলে দাবি করছে। লোকটির কথা কানে যেতে না যেতেই নওজোয়অন চমকে উঠলো।
তার হৃদপিণ্ডে রক্তের চাপ বেড়ে গেল। মনে পড়লো- বৃদ্ধের কথা। এ কি তাহলে সেই নবী! যিনি মক্কা থেকে বিতাড়িত হয়ে মদীনায় হিজরত করেছেন
গাছ থেকে নে এলো সে।
জিজ্ঞেস করলো তার কাছে- তুমি কি বললে? আর একবার বলো তো?
দাসের জিজ্ঞাসায় মনিব রেগে গেল। তার গালে সজোরে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো, তোমার তাতে কী হে?
মনিবের চড়েড় আঘাতেও দমে গেল না দাস। বৃদ্ধের কথা মতো সে মক্কা থেকে আগত লোকটিকে পরীক্ষা করতে চাইলো। সত্যিই তিনি নবী কি না।
সন্ধ্যার পর নওজোয়অন কিছু খেজুর নিয়ে মক্কা থেকে আগত লোকটির কাছে গেল। খেজুরগুলো তাঁকে দিয় বললো,
শুনেছি আপনি পুণ্যবান ব্যক্তি। আমার কাছে কিছু সদকার জন্যে খেজুর আছে। এগুলি আপনি গ্রহণ করুন।
লোকটি খেজুরগুলি নিয়ে তাঁর সঙ্গীদেরকে বললেণ- তোমরা খাও।
আশ্চর্য! তিনি নিজে একটি খেজুরও খেলেন না।
নওজোয়ান প্রথম পরীক্ষায় সত্যের সাফল্যে আনন্দিত হলো।
তার বিশ্বাসের ভীত শক্ত হয়ে উঠলেঅ- ইনি সত্যিই সেই নবী। যার কথা বৃদ্ধ আমাকে বলেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় পরীক্ষাটিও করা প্রয়োজন।
একদিন- বাকি আলগারকাদ গোরস্তানে নবী (সা) তাঁর এক সঙ্গীকে দাফন করেছিলেন। তাঁর গায়ে ছিল এক ধরনের ঢিলা পোশাক।
যুবকটি সেখানে গেল। নবীকে দেখতে থাকলো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। ভালো কর। যুবকটি নবীর কাঁধের দিকে বারবার তাকাতে থঅকলো। খুঁজতে থাকলো তার প্রার্থিত নমুনাটি।
যুবকটির উৎসাহ নবী (সা) দৃষ্টিগোচর হলো।
তিনি বুঝলেন- সে কী দেখতে চায়।
নবীজী নিজের পিঠের চাদরটি সরিয়ে নিলেন। আর সাথে সাথেই বিদ্যুতের মতো চমকে উঠলো নবুওয়াতের মোহরটি।
নওজোয়ান বিশ্বাসের সমুদ্রে নেমে যায়। আন্দে দিশাহারা হয়ে সে নবীজীর মোহরটি চুমুতে চুমুতে ভরে দেয়।
তার দু’চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। সে পানি বিষাদের নয়, বিশ্বাসের।
আনন্দের।
পাওয়ার তৃপ্তিতে ভরে উঠলো তার তৃষিত হৃদয়ের দু’কূল।
নবীজী জিজ্ঞেস করলেন- তোমার পরিচয়?
নওজোয়ান তার পরিচয় দিল। সেই সাথে বললো তার পেছনের সকল কথা।
সব শুনে নবীজী খুশি হলেন। আনন্দিত হলেন।
তিনি সঙ্গী-সাথীদেরকে বললেন- নওজোয়ানর জীবনের কথা। তার সত্য অনুসন্ধানের কথা। তার ত্যাগের কথা।
নবীর (সা) সঙ্গীরা সে কথা শুনে খুব খুশি হলেন।
নবীজীর পরামর্শে একদিন দাসত্বের জীবন থেকে মুক্তি পেল নওজোয়ান। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে।
মুক্তির পর নবীজীর সাথে থেকেই কাটিয়ে দেন সারাটি জীবন। সত্যের আলোতে গড়ে তোলেন নিজের জীবন।
দাসত্ব জীবনের কারণে তিনি বদর এবং উহুদ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি। এই না পারার কারণে তার বুকে জমে থাকে কষ্টের কুয়াশা।
বেদনার বৃষ্টি ঝরতে থাকে অষ্ট প্রহর।
এরপর এলো খন্দকের যুদ্ধ। নওজোয়ান ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং প্রাজ্ঞ। তিনি পরামর্শ দিলেন এই যুদ্ধে পরিখা খননের জন্য। নবীজী তার এই সুন্দর পরামর্শ গ্রহণ করলেন।
খন্দকের যুদ্ধে খনন করা হলো পরিখা।
আদরে আদরে বেড়ে ওঠা এক যুবক।
সত্য গ্রহণের জন্যে ত্যাগ করেছেন জীবনের যাবতীয় সুখ। দুনিয়ার অস্থঅয়ী জীবনের প্রতি তার ছিল না এতটুকু মোহ। তাইতো তিনি বসবাসের জন্যে তৈর করননি কোনা সুন্দর ঘর। বানাননি বিলাসের সামগ্রী ।
অতি সাধারণভাবে জীবন যাপন করতেন তিনি।
তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত অর্থেই মুসাফির।
মুসাফিরের মতোই ছিল তার জীবন যাপন, কিন্তু আখেরাতের প্রতি ছিল তার অবিচল আস্থা।
আল্লাহর প্রতি ছিল পর্বতের মতো সুদৃঢ় বিশ্বাস এবং নবীজীর প্রতি ছিল অসীম ভালোবাসা।
নওজোয়ানের বয়স বাড়তে থাকে।
বার্ধক্যের সিঁড়িতে পা রাখলেন তিনি। ধাপে ধাপে এগিয়ে গেলেন মৃত্যুর দিকে।
অন্তিম রোগ শয্যায় শায়িত তিনি।
তিনি কাঁদছেন। তার দু’গণ্ড ভিজে যাচ্ছে অশ্রুধারায়।
হযরত সা’দ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন- আপনি কাঁদছেন কেন? রাসূল (সা) তো আপনার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন। হাউজে কাউসারের কাছে আপনি রাসূলের সাথে মিলিত হবেন।
তিনি কম্পিত কণ্ঠে বললেন, আমি মৃত্যুভয়ে কাঁদছিনে।
তবে?
তিনি বললেন- রাসূল (সা) আমাদেরকে মুসাফিরের মতো চলতে বলেছিলেন। অথচ আমার কাছে অনেক জিনিসপত্র জমা হয়ে আছে।
সেই জিনিসগুলো আর কিছু নয়। মাত্র একটি বড় পিয়ালা, আমার একটি থালা ও একটি পানির পাত্র। সত্য সন্ধানী, বুদ্ধিদীপ্ত এবং আত্মত্যাগী এই দুঃসাহসী মুসাফিরের নাম সালমান আল ফারসী।
সত্যের আলোর খোঁজে যিনি ছুটছেন অনন্ত জীবন- দিক থেকে দিগন্তে। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।
আলোর আবাবিল
মসজিদে জাবিয়া।
একান্তে বসে কথা বলছেন আলোর পাখিরা।
কথা বলছেন ইবন গানাম, আবু দারদা এব উবাদা ইবনে সামিত।
তাঁরা কথা বলছেন ‘আল্লাহর দীন’ নিয়ে। ইসলাম নিয়ে। কথা বলছেন প্রাণপ্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা) কে নিয়ে। আরও কত প্রসঙ্গে!
তাঁরা কথা বলছেন আর একে অপারের দিকে মহব্বতের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন। তাঁদের দৃষ্টিতে জড়িয়ে আছে ভ্রাতৃত্ববোধ, সৌহার্দ্য আর বন্ধুসুলভ-বৃষ্টিধোয়া জোছনার পেলব।
তাঁরা মগ্ন হলেন একে অপরের প্রতি। নিজেদের কথার প্রতি।
গভীল মনোযোগের সাথে তাঁরা শুনছেন পরস্পরের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা।
এমনি সময়-
ঠিক এমনি সময় তাদের মনোযোগ ভেদ করে সেখানে উপস্থিত হলেন আর এক বেহেশতী আবাবিল –হযরত শাদ্দাদ।
শাদ্দাদ উপস্থিত!
সুতরাং সবার দৃষ্টি এখন তাঁর দিকে। কারণ তিনিও যে তাঁদের ভাই! একান্ত আপনজন।
সহোদর ভাইয়ের চেয়েও অনেক কাছের।
কেন নয়?
সবাই যে সেই রাসূল (সা)-এর একই স্নেহের ছায়ায় লালিত! যে রাসূল (সা)-কে ভালোবাসেন প্রাণের চেয়েও অনেক বেশি।
শাদ্দাদ এসেছেন!
তাঁর দিকেই সবার দৃষ্টি। সম্ভবত তিনি কিছু বলবেন। সবাই মনোযোগী হলেন তাঁর দিকে।
শাদ্দাদ এবার গাম্ভীর হলেন।
চোখে মুখে কী যেন এক ভয়ের রেখা দুলে উঠলেঅ।
কী যেন এক শঙ্কা!
সে কি শঙ্কা, না কি উদ্বেগ!
ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। প্রায় ক্লান্তকণ্ঠে শাদ্দাদ বললেন:
হে প্রাণপ্রিয় বন্ধুগণ!
আপনাদের নিয়ে আমার ভয় হচ্ছে। দারুণ ভয়!
কী সে ভয়?
জিজ্ঞেস করলেন তারা।
শাদ্দাদ বললেন, সেই ভয়টা হলো: রাসূল (সা) তো বলেছেন, আমার উম্মতের প্রবৃত্তি বা ইচ্ছা অনুসাী হয়ে পড়বে। এবং তারা লিপ্ত হবে শিরকে!
চমকে উঠলেন আবু দারদা এবং উবাদা।
বলেন ক? আমরা তো শুনেছি রাসূল (সা)-এর একটি হাদীস:
আরব উপদ্বীপের শয়তান তার উপাসনার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে পড়েছে।
তাহলে বলুন, বলুন ভাই শাদ্দা- মুশরিক হওয়ার অর্থ কী? কী বুঝাতে চাইছেন আপনার ঐ বেদনা-বিধূর বাক্য দিয়ে?
শাদ্দাদ বললেন, ধরুন কোনো ব্যক্তি নামায পড়ে লোক দেখানোর জন্যে। এবার বলুন, ঐ লোকটি সম্পর্কে আপনাদের ধারণা কী?
আবু দারদা এবং উবাদা জবাব দিলেন, সে নিশ্চয়ই মুশরিক!
শাদ্দাদ বললেন, ঠিক বলেছেন। আমি রাসূল (সা)-এর কাছে শুনেছি। তিনি বলেছেন, যারা লোক দেখানোর জন্যে এসব কাজ করবে, তারা হবে মুশরিক।
এখানে উপস্থিত ছিলেন আউফ ইবন মালিকও।
তিনি বললেন, যতটুকু কাজ লোক দেখানো থেকে মুক্ত হবে,
ততোটুকু কবুল হওয়ার আশা আছে আল্লাহর কাছে। আর বাকি কাজ, যাতে শিরকের মিশ্রণ আছে, তা কখনো কবুল হবে না। এই হিসেবে আমাদের কাজের ওপর আস্থাবান হওয়া উচিত।
তাঁর কথাশুনে শাদ্দাদ বললেন, রাসূল (সা) বলেছেন, মুশরিকের যাবতীয় আমল তার মাবুদকে দেয়া হবে। আল্লাহ তার মুখাপেক্ষী নন।
পবিত্র আল-কুরআনেও এমনি কথা। আল কুরআন বলছে:
‘আল্লাহ পাক কোনো অবস্থাতেই শিরকের গুনাহ মাফ করবেন না।’
হযরত শাদ্দাদ।
হাদীসের ব্যাপারে তাঁর ছিল দারুণ পাণ্ডিত্য এবং জ্ঞান। তিনি ছিলেন ইসলামের একজন খাঁটি অনুসারী। ছিলেন দীনের ব্যাপারে আপসহীন।
আর ছিলেন ইবাদাতের প্রতি অসীম মনোযোগী।
আল্লাহর ভয়ে তিনি সব সময় থাকতেন কম্পমান। ইবাদাত সেরে হয়তো বা শুয়ে পড়েছেন শাদ্দাদ। গভীর রাত। কিন্তু না, ঘুম আসছে না তাঁর চোখে। কেবলই ভাবছেন। ভাবছেন মৃত্যুর কথা। ভাবছেন আখেরাতের কথা।
ব্যস!
কোথায় আর ঘুম কিংবা শো!
তিনি উঠে পড়লেন। উঠে পড়লেন এবং দাঁড়িয়ে গেলেন আবারও নামাযে। মশগুল হয়ে পড়লেন আল্লাহর ইবাদাতে। আর এভাবেই কেটে গেল সারাটি রাত।
একদিন নয়, দু’দিন নয়। এভাবে কেটে যেত শাদ্দাদের রাতগুলো। এবাদাতের মাধ্যমে, নির্ঘুম অবস্থায়। আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে।
ইন্তেকাল করেছেন দয়ার নবীজী (সা)।
এসেছেন খোলাফায়ে রাশেদার যুগ।
এ সময়ে বেশ কিছুটা পরিবর্তন এসে গেছে মুসলমানদের মধ্যে।
তাদের এই পরিবর্তনে দারুণভাবে ব্যথিত হলেন শাদ্দাদ। ভয়ে এবং শঙ্কায় কেঁপে উঠলো তাঁর কোমল বুক। তিনি কাঁদছেন। কাঁদছেন আর অঝোর ধারায় ঝরে পড়ছে বেদনার বৃষ্টি।
শাদ্দাদ চলেছেন সামনের দিকে।
পথে দেখা পেলেন উবাদা ইবনে নাসীকে। নাসীর হাতটি ধরে শাদ্দাদ তার বাড়িতে নিয়ে এলেন।
তারপর-
তারপর আবার কাঁদতে শুরু করলেন। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন শাদ্দাদ।
তাঁর কান্না দেখে উবাদা ইবনে নাসী কাঁদছেন।
আপনি কাঁদছেন কেন? শাদ্দাদ জিজ্ঞেস করলেন । নাসী বললেন, আপনার কান্না দেখে আমারও কান্না পাচ্ছে। কিন্তু আপনিই বা কাঁদছেন কেন?
শাদ্দাদ কম্পিত কণ্ঠে বললেন, কাঁদছি- কারণ, রাসুল (সা)-এর একটি হাদীস আমার মনে পড়ছে।
হাদীসটি কী? জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
শাদ্দাদ বললেন, হাদীসটি হলো: রাসুল (সা) বলেছৈন,
‘আমার সবচেয়ে বেশি ভয় হয় আমার উম্মতের প্রবৃত্তির গোপন কামনা-বাসনার পূজারী হওয়া এবং শিরকে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে।’
রাসূল (সা)-এর কথা শুনে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার উম্মত কি মুশরিক হয়ে যাবে?
রাসূল বললেন, হ্যাঁ। তবে তারা চন্দ্র-সূর্যকে পূজা করবে না। পূজা করবে না মূর্তি, পাথর বা অন্য কোনো বস্তুরও। বস্তুত তারা পূজা করবে রিয়া এবং প্রবৃত্তির। সকল রোযা রাখবে। কিন্তু যখন তার প্রবৃত্তি চাইবে, আর সাথে সাথে নিঃসঙ্কোচে তখন তা ভেঙ্গে ফেলবে।
কী নিদারুণ পরিতাপের বিষয় বলূন! সেই জন্যই আমি কাঁদছি। বললেন শাদ্দাদ।
এমনি তাকওয়ার অধিকারী ছিলেন শাদ্দাদ। আল্লাহর প্রতি ছিল তাঁর এমনি ভয়, ঈমান আর মুসলমানদের প্রতি ছিল তাঁর এমনি অপরিসীম ভালোবাসা।
রাসূল (সা) বসে আছেন।
তাঁর চারপাশে ঘিরে আছে আলোর পরশ।
এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলেন শাদ্দাদ।
এ কি!
এ কেমন চেহারা শাদ্দাদের?
সারা চেহারায় বিষণ্ণতার কালো ছাপ!
চোখে-মুখে মেঘের আস্তরণ!
চোখ দু’টো ভারাক্রান্ত।
বিমর্ষতায় ছেয়ে আছে শাদ্দাদ।
অবাক হলেন দয়ার নবীজী (সা)। জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ? নাকি অন্য কিছু?
শাদ্দাদের কণ্ঠটি ধরে এলো।
বলরেণ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! মনে হচ্ছে- মনে হচ্ছে আমার জন্যে পৃথিবীটা সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে!
হাসলেন রাসূলুল্লাহ (সা)।
বললেন, না। তোমার জন্যে পৃথিবী সঙ্কীর্ণ হবে না কখনো। নিশ্চিন্তে থাকতে পার তুমি। জেনে রেখ, একদিন বিজিত হবে শাম এবং বাইতুল মাকদাস। আর সেদিন, সেদিন তুমি এবং তোমার সন্তানরা হবে সেখানকার ইমাম।
রাসূল (সা)-এর ভবিষ্যদ্বাণী।
সত্যি তো হতেই হবে।
সত্যিই শাম এবং বাইতুল মাকদাস একদিন বিজিত হলো। আর শাদ্দাদই হলেন সেখানকার নেতা।
তিনি সেখানে সপরিবারে বসতি স্থাপন করলেন।
কেমন ছিল তার তাকওয়া আর পরহেজগারি?
সে এক অনুকরীণয় ইতিহসই বটে!
একবার একদল মুজাহিদ যাচ্ছেন জিহাদের ময়দানে।
তাদেরকে বিদায় জানাচ্ছেন শাদ্দা।
যাবার সময় হলে মুজাহিদরা খাবার জন্যে আহ্বান জানালেন তাকে।
সবিনয়ে শাদ্দাদ বললেন, রাসুল (সা)-এর হাতে বাইয়াতের পর থেকে খাবারটি কোথা থেকে এলো তা না জেনে খাবার অভ্যাস থাকলে অবশ্যই আজ তোমাদের সাথে খেতাম। কিছু মনে নিও না ভাই! তোমরা খাও।
এমন ছিল শাদ্দাদের আল্লাহভীতি।
এমনি ছিল তাঁর দীনদারি।
তিনি বলতেন, কল্যাণের সবকিছুই জান্নাতের। আর অকল্যাণের সবকিছুই জাহান্নামের। এই দুনিয়া একটি উপস্থিত ভোগের বস্তু। সৎ এবং অসৎ সবাই তো ভোগ করে। কিন্তু আখেরাত হচ্ছে সত্য অঙ্গীকার। যেখানে রাজত্ব করেন এক মহাপরাক্রমশালী রাজা। অর্থাৎ মহান রাব্বুল আলামীন। প্রত্যেকেরই আছে সন্তানাদি। তোমরা আখেরাতের সন্তান হও। দুনিয়ার সন্তান হয়ো না।
কী চমৎকার কথা!
শাদ্দাদের মত সোনার মানুষ, খাঁটি মানুষই কেবল বলতে পারেন এমন সোনার চেয়ে দামি কথা।
শাদ্দাদ ছিলেন যেমন খোদাভীরু, তেমনি ছিলেন সাহসী।
তাঁ সাহসের অনেক উপমা আছে।
আছে আগুনঝরা ইতিহাস।
হযরত মুয়াবিয়া (রা) তখন শাসনকর্তা। কী তার দাপট আর ক্ষমতা। একদিন তিনি জিজ্ঞেস করলেন শাদ্দাদকে।
আচ্ছা, বলুন তো আমি ভালো, নাকি হযরত আলী? আমাদের দু’জনের মধ্যে আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি কে?
স্পষ্টভাষী শাদ্দাদ।
তিনি অকপটে বললেন, আলী (রা) আপনার আগে হিজরত করেছন। তিনি রাসূল (সা)-এর সাথে অনেক বেশি ভালো কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন আপনার চেয়ে বেশি সাহসী। তাঁর ছিল আপনার চেয়ে অনেক বেশি উদার ও প্রস্ত একটি হৃদয়। আর ভালোবাসার কথা বলছেন? আলী চলে গেছেন। তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। সুতরাং মানুষ আজ আপনার কাছে তো বেশি কিছু অবশ্যই আশা করে।
এই ছিল শাদ্দাদের সততা। এই ছিল তার সত্যবাদিতা এবং অমলিন জীবন।
ছিল সাগরের মত বিশাল আর আকাশের মত প্রশস্ত একটি হৃদয়। ছিলেন অসীম সাহসী আর ঈমানের ওপর পর্বতের মত অবিচল।
কেন হবেন না?
তিনি তো ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, মহান নেতা-প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)- এরই একান্ত স্নেহ আর ভালোবাসায় সিক্ত।
তিনি তো ছিলেন সত্যের সৈনিক, বেহেশতের আবাবিল।