নেফাসের বিবরণ
বাচ্চা পয়দা হওয়ার পর স্ত্রীলোকের বিশেষ অংগ থেকে যে রক্ত বের হয় তাকে নেফাস বলে। অবশ্য শর্ত এই যে, বাচ্চা অর্ধেকের বেশীর ভাগ বাইরে আসার পর যে রক্ত বের হয় তাই নেফাস এবং তার পূর্বে যা বেরোয় তা নেফাসের রক্ত নয়।
নেফাসের রক্ত আসার মুদ্দত খুব জোর চল্লিশ দিন। আর কমের কোন নির্দিষ্ট মুদ্দত নেই। এটাই হতে পারে যে, মেয়েলোকদের নেফাসের রক্ত মোটেই আসবে না।
নেফাসের মাসয়ালা
১. যদি বাচ্চা পয়দা হবার পর কোন মেয়েলোকের মোটেই রক্ত না আসে, তবুও বাচ্চা হওয়ার পর তার গোসল করা ওয়াজিব।
২. নেফাসের মুদ্দতের মধ্যে একবারে সাদা রং ব্যতীত যে রঙেরই রক্ত আসুক তা নেফাসের রক্ত হবে।
৩. নেফাসের পর হায়েয হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে পাক থাকার সময় সমপক্ষে ১৫ দিন।
৪. গর্ভপাত হওয়ার অবস্থায় বাচ্চার অংগ গঠন হয়ে থাকলে তারপর রক্ত এলে তা হবে নেফাসের রক্ত। কিন্তু বাচ্চা যদি শুধু একটা মাংসপিণ্ড হয় তাহলে যে রক্ত বেরুবে তা নেফাসের হবে না। কিন্তু এতে যদি হায়েযের শর্ত পূর্ণ হয় তাহলে হায়েয মনে করতে হবে। নতুবা এস্তেহাযা। যেমন ধরুন, তিন দিনের কম রক্ত এলো অথবা পাক থাকার সময় পূর্ণ ১৫ দিন হলো না তাহলে এস্তেহাযা হবে।
৫. যদি কোন মেয়ে মানুষের ৪০ দিনের বেশী রক্ত এলো এবং এ হচ্ছে তার প্রথম বাচ্চা, তাহলে ৪০ দিন নেফাসের এবং বাকী এস্তেহাযার। ৪০ দিন পর গোসল করে পাক সাফ হয়ে দ্বীনী ফরযগুলো আদায় করবে, রক্ত বন্ধ হওয়ার অপেক্ষা করবে না, যদি তার প্রথম বাচ্চা না হয় এবং নির্দিষ্ট অভ্যাস জানা যায় তাহলে তার অভ্যাস অনুযায়ী নেফাসের মুদ্দত হবে, বাকী দিনগুলো এস্তেহাযার।
৬. কোন মেয়েলোকের অভ্যাস হয়ে পড়েছে যে, ৩০ দিন নেফাসের রক্ত আসে। কিন্তু কোন বার ৩০ দিনের পরও রক্ত বন্ধ হলো না ৪০ দিন পুরা হওয়ার পর বন্ধ হলো হাতলে এ ৪০ দিনই তার নেফাস হবে। তারপর রক্ত এলে তা হবে এস্তেহাযার। এ জন্যে ৪০ দিনের পর সংগে সংগেই গোসল করে নামায ইত্যাদি আদায় করবে এবং পূর্বের ১০ দিনের নামায কাযা আদায় করবে।
৭. যদি কারো ৪০ দিন পুরা হবার আগেই রক্ত বন্ধ হয়, তাহলে ৪০ দিন পুরা হবার অপেক্ষা না করে গোসল করে নামায ইত্যাদি পড়া শুরু করবে। যদি গোসল কোন ভীষণ ক্ষতির আশংকা থাকে, তাহলে তায়াম্মুম করে পাক হবে এবং নামায আদায় করবে। নামায কিছুতেই কাযা হতে দিবে না।
হায়েয নেফাসের হুকুম
১. হায়েযের দিনগুলোতে নামায রোযা হারাম। নামায একেবারে মাফ। কিন্তু পাক হওয়ার পর কাযা রোযা রাখতে হবে।
২. হায়েয নেফাসের সময় মেয়েদের জন্যে মসজিদে যাওযা, কা’বা ঘরের তাওয়াফ করা এবং কুরআন পড়া হারাম।
৩. সিজদায়ে তেলাওয়াত এবং কুরআন স্পর্শ করাও জায়েয নয় অবশ্য জুযদান অথবা রুমালের সাহায্যে কুরআন স্পর্শ করা যায়। পরিধানের কাপড় দিয়েও জায়েয নয়। কুরআনের সাথে সেলাই করা কাপড় দিয়ে স্পর্শ করাও নাজায়েয।
৪. সূরায়ে ফাতেহা দোয়ার নিয়াতে পড়া জায়েয। এমনি দোয়ার নিয়তে দোয়ায়ে কুনুত এবং কুরআনের অন্যান্য দোয়া পড়া জায়েয।
৫. কালেমা পড়া, দরূদ পড়া, আল্লাহর যিকির করা, ইস্তেগফার এবং অন্য কোন অযীফা পড়া জায়েয। যেমন যদি কেউ “লা হুওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ” পড়ে তো দোষ নেই।
৬. ঈদগাহে যাওয়া, কোন দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া এবং অনিবার্য প্রয়োজনে মসজিদে যাওয়া জায়েয। তবে তায়াম্মুম করে মসজিদে যাওয়া ভালো।
৭. যে মেয়েলোক কাউকে কুরআন শিক্ষা দেয় সে হায়েয অবস্থায় কুরআন শিখাতে পারে। তবে গোটা আয়াত এক নিঃশ্বাসে না পড়ে থেমে থেমে আয়াতকে খণ্ড খণ্ড করে পড়াবে। এ ধরনের মেয়েদের জন্যে এভাবে পড়া জায়েয।
৮. হায়েয নেফাসের সময় স্ত্রী সহবাস হারাম। এ একটি কাজ ব্যতীত অন্য সব জায়েয, যেমন চুমো দেয়া, এক সাথে খানাপিনা করা, এক বিছানায় শুয়ে থাকা ইত্যাদি। কিন্তু এ সময়ে এক বিছানায় থাকা, এক সাথে খানাপিনা করা, চুমো দেয়া, আদর করা ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত থাকা মাকরুহ। [মাকরুহ হওয়ার কারণ এই যে, নবী (সা) তাঁর বিবিগণের হায়েযের অবস্থায় তাঁদের সাথে মেলামেশা করতেন। আর একটা কারণ এই যে, ইহুদীরা হায়েযের সময় তাদের বিবিদেরকে অছ্যুৎ বানিয়ে রাখতো। সে জন্যে মুসলমানদেরকে ইহুদীদের অনুকরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।]
৯. কোন মেয়েলোকের ৫দিন রক্ত আসার অভ্যাস, কিন্তু ৪ দিনের পর রক্ত বন্ধ হলো। এ ধরনের মেয়েদের গোসল করে নামায পড়া ওয়াজেব। অবশ্য ৫ দিন পূরণ হওয়ার পূর্বে স্বামী সহবাস করা যাবে না- হয়তো তারপর রক্ত আসতে পারে।
১০. কারো পুরো ১০ দিন ১০ রাত পর রক্ত বন্ধ হয়ে গেল। এ অবস্থায় সে গোসল না করলেও তার সাথে সহবাস জায়েয।এমনি যার ৬ দিনের অভ্যাস আছে এবং তারপর রক্ত বন্ধ হলো। এ অবস্থাতেও তার গোসলের পূর্বে সহবাস জায়েয। কিন্তু নির্দিষ্ট অভ্যাসের পূর্বে রক্ত বন্ধ হলে অভ্যাসের দিনগুলো পূরণ হওয়ার পূর্বে সহবাস জায়েয নয়। সে মেয়েলোক যদি গোসলও করে ফেলে তবুও না।
১১. কোন মেয়ে মানুষের ৬ দিনে রক্ত বন্ধ হওয়ার অভ্যাস। কিন্তু কোন মাসে এমন হলো যে, ৬ দিন পুরো হয়ে গেল কিন্তু রক্ত বন্ধ হলো না, তাহলে সে গোসল করে নামায পড়বে না, বরঞ্চ রক্ত বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায় থাকবে। তারপর ১০ দিন পুরো হওয়ার পর অথবা তার আগে রক্ত বন্ধ হলে এ পুরো সময়টা হায়েয বলে গণ্য হবে। কিন্তু ১০ দিনের পরও যদি রক্ত বন্ধ না হয়, তাহলে হায়েযের মুদ্দত ঐ ৬ দিনই থাকবে। বাকী দিনগুলো এস্তেহাযার মধ্যে শামিল হবে।
১২. যে মেয়েলোক রমযান মাসে দিনের বেলায় পাক হলো, তার জন্যে দিনের বাকী অংশে খানাপিনা থেকে বিরত থাকা ওয়াজেব। সন্ধ্যা পর্যন্ত রোযাদারদের মতো কাটাবে এবং ঐ দিনের রোযা কাযা করবে।
১৩. কোন মেয়েলোক পাক থাকা অবস্থায় তার নির্দিষ্ট স্থানে কাপড়ের টুকরা গুজেঁ রেখে শুয়ে পড়লো। অতপর সকালে দেখলো যে সে কাপড়ে রক্তের দাগ। এ অবস্থায় যখন রক্তের দাগ দেখা গেল তাখন থেকে হায়েযের সূচনা ধরতে হবে।