নামাযের রাকয়াতসমূহ
ফজরের নামায
প্রথম দু’রাকয়াতের সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ [সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ঐ নামাযকে বলে যার বেশী তাকী করা হয়েছে। কোন ওযর ব্যতীত কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছা করে এ নামায ত্যাগ করে তাহলে শক্ত গুনাহগার হবে। সুন্নাতে গায়ের মুয়াক্কাদাহ (নফল) নামাযের অর্থ এই যে, এ জরুরী তো নয়, কিন্তু পড়লে খুব বেশী সওয়াব পাওয়া যায়। সময় সুযোগ এবং মনের আগ্রহ থাকলে পড়া ভালো। না পড়লে গুনাহ হবে না।] তারপর দু’রাকয়াত ফরয নামায। হাদীসগুলোকে ফজরের সুন্নাতের জন্যে খুব তাকীদ করা হয়েছে। যদিও নবী (স) অন্যান্য সুন্নাতের জন্যেও তাকীদ করেছেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশী ফজরের সুন্নাতের জন্যে করেছেন। নিজেও তিনি এব্যাপারে খুব বেশী যত্নশীল ছিলেন। তিনি বলেন, ফজরের সুন্নাত কিছুতেই ছাড়বে না যদিও ঘোড়া তোমাদেরকে পদদলিত করে। [(আহমদ আবু দাউদ) এ হাদীসের অর্থ এ নয় যে, জীবন গেলেও এ সুন্নাত আদায় করতে হবে। জানের ভয়ে তো ফরয নামাযও ছেড়ে দেয়া জায়েয। খুব বেশী তাকীদের; জন্যে এমন বলা হয়েছে।]
তিনি আরও বলেন, ফজরের সুন্নাত আমার কাছে দুনিয়া ও তার যাবতীয় সম্পদ থেকে বেশী প্রিয়। [মুসলিম, তিরমিযি, নাসায়ী।]
সুন্নাত নামাওগুলোর মধ্যে নবী পাক (স) ফজরের সুন্নাতের যতো পাবন্দি করতেন, অন্য কোন নামাযের সুন্নাতের এতটা করতেন না। [বুখারী, মুসলিম, আহমদ।] হযরত হাফসা (রা) বলেন নবী (স) ফজরের সুন্নাত আমার ঘরে পড়তেন এবং হালকা পড়তেন। [আহমদ, বুখারী, মুসলিম।] ফজরের সুন্নাতে তিনি প্রথম রাকয়অতে (*****) এবং দ্বিতীয় রাকয়াতে (*****) পড়তেন। [আহমদ, তাহাবী, তিরমিযী।]]
যোহরের নামায
প্রথম চার রাকয়াত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ (এক সালামসহ), তারপর চার রাকয়াত ফরয। তারপর দু’রাকয়াত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এবং তারপর দু’রাকয়াত নফল।
জুমার নামায
প্রথমে চার রাকয়াত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ (এক সালামসহ), তারপর দু’রাকায়াত ফরয জামায়াতসহ, তারপর চার রাকয়াত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এক সালামসহ। [এ হচ্ছে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মত। তাঁর সাহেবাইন (দুজন শাগরেদ) বলেন, ফরযের পর দু’রাকয়াত পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। প্রথমে এক সালামে চার রাকয়াত, পরে দু’রাকয়াত। উভয় মতেরই সমর্থন হাদীস থেকে পাওয়া যায়। হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, নবী (স) বলেছেন, জুমার নামাযের পর চার রাকয়াত পড় (তিরমিযী)। আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা) জুমার নামায বাদে ঘরে বসে দু’রাকয়াত সুন্নাত পড়তেন এবং বলতেন নবী (স)ও এমন করতেন। হযরত ইসহাকের অভিমত এই যে, যদি নামাযে জুমার পর মসজিদে পড়া যায় তাহলে চার রাকয়াত। এ জন্যে যে, নবী (স) বলতেন, জুমার নামায বাদে চার রাকয়াত পড়। আর যদি ঘরে পড়া হয় তাহলে দু’রাকয়াত। এ জন্যে যে, নবী (স) দু’রাকয়াত পড়তেন।]
আসরের নামায
প্রথম চার রাকয়াত সুন্নাতে গায়ের মুয়াক্কাতাহ অথবা মুস্তাহাব, তারপর চার রাকয়াত ফরয।
মাগরেবে
প্রথমে তিন রাকয়াত ফরয তারপর দু’রাকয়অত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তারপর দু’রাকয়াত নফল।
এশা
প্রথমে চার রাকয়াত সুন্নাতে গায়ে মুয়াক্কাদাহ, তারপর চার রাকয়াত ফরয, তারপর দু’রাকয়অত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, তারপর তিন রাকয়াত বেতের, তারপর দু’রাকয়াত নফল। [বেতেরের পর দু’রাকয়াত নফল। নবী (স)বলেন, যাদের পক্ষে রাতে উঠা কষ্টকর তাদের বলে দাও যেন বেতেরের পর দু’রাকয়াত পড়ে। রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ার সুযোগ হলে ভালো কথা। নতুবা এ দু’রাকয়াত তাহাজ্জুদ ধরা হবে। (মিশকাত)।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহর সংখ্যা ফজরে দুই, যোহরে ছয়, মাগরেবে দুই, এশায় দুই মোট বার (তিরমিযী)। পৃথক পৃথক হাদীসে তাদের ফজীলত বয়ন করে তাকীদ করা হয়েছে। যারা বিনা কারণে এসব ছেড়ে দেবে তারা শক্ত গুনাহগার হবে। নবী (স) বলেন, যে মুসলমান ফরয ছাড়াও দৈনিক বারো রাকয়াত আল্লাহর জন্যে পড়বে, তাদের জন্যে তিনি জান্নাতে ঘর দৈরী করবেন (মুসলিম)।