জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

জামায়াতে ইসলামীর কর্মনীতি

অন্তর্গতঃ আন্দোলন ও সংগঠন, উচ্চতর অধ্যয়ন, রাজনীতি
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. জামায়াতে ইসলামীকে বুঝতে হলে
  2. ভূমিকা
  3. কর্মনীতি দ্বারা কি বুঝায়?
  4. জামায়াতের গঠনতন্ত্রে কর্মনীতি সম্পর্কিত ধারা
  5. তানযীম ও তারবিয়াত
  6. ইসলাহে মুয়াশারার কর্মনীতি
  7. রাজনৈতিক ময়দানে কর্মনীতি
  8. ইসলামী বিপ্লবের সফলতা সম্পর্কে কর্মনীতি
  9. জামায়াত নির্বাচনকে একটি শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের পথ মনে করে
  10. প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করার কর্মনীতি
  11. ঈমান সম্পর্কে কর্মনীতি
  12. ইলম সম্পর্কে কর্মনীতি
  13. আমল সম্পর্কে কর্মনীতি
  14. কর্মনীতি সম্পর্কে শেষ কথা

ইসলাহে মুয়াশারার কর্মনীতি

জামায়াতে ইসলামীর তৃতীয় দফা হলো ইসলাহে মুয়াশারা বা সমাজ সংশোধনমূলক কাজ। এ কাজটি অত্যন্ত ব্যাপক ও বহুমুখী। এ কাজ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, কাজের ময়দান যেন প্রশস্ত হয়েই চলেছে। বুঝবারসুবিধার জন্য ইসলাহে মুয়াশারার কাজকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে: সমাজ সেবা ও সমাজ সংস্কার। এ সব কাজ বিভিন্ন পার্শ্ব সংগঠন ও সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে করা হয়।

সমাজ সেবামূলক কাজ

জনগণের সেবা ও কল্যাণমূলক কাজগুলোকে সমাজ সেবার কাজ বলা হয়। যেমন:

১। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় দুর্গত মানুষের জন্য রিলিফ বা ত্রাণ কার্য।

২। বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে দরিদ্র রোগীদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা।

৩। কর্মক্ষম পুঁজিহীন লোকদেরকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সহায়তা করা।

যেমন:

(ক) রিকশা, সেলাই মেশিন, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী সহজ কিস্তিতে কেনার সুযোগ দান।

(খ) সমবায় পদ্ধতিতে পাওয়ার পাম্বের সাহায্যে সেচ ব্যবস্থা এবং পাওয়ার টিলারের সাহায্যে চাষের ব্যবস্থা।

(গ) বিনা সুদে ক্ষুদ্র কাজের মাধ্যমে রোজগার করার সুযোগ দান।

(ঘ) বিভিন্ন ফসলের চাষের জন্য প্রান্তিক চাষীদেরকে বিনা সুদে ঋণ দান।

৪। পল্লী চিকিৎসার উপযোগী মেডিকেল শিক্ষার ব্যবস্থা করে অল্পশিক্ষিত বেকার যুবকদের উপার্জনের ব্যবস্থা।

৫। বিভিন্ন রকমের বৃত্তিমূলক অর্থকরী শিক্ষার মাধ্যমে বেকার যুবকদেরকে উপার্জনের সুযোগ দান।

৬। এতীম ছেলেমেয়েদের প্রতিপালন ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

৭। জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা নিয়ে সমাজ  কল্যাণমূলক কাজ করা।

যেমন:

(ক) রাস্তাঘাট ও পুল মেরামত ও তৈরি করা।

(খ) স্বল্পমূল্যের উন্নত চুল্লি ও সৌর চুল্লির শিক্ষা দান।

(গ) উন্নত কৃষি বিদ্যা শিক্ষার ব্যবস্থা।

(ঘ) স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা তৈরি শিক্ষা দান।

(ঙ) এলাকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দূর করা।

সমাজ সেবামূরক কাজের আসল লক্ষ্য

সরকারী উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ সব কাজ ব্যাপকভাবে করা সম্ভব নয়। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত জনশক্তিকে এ জাতীয় কাজের মাধ্যমেই বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে, যাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে এলে তারা সেবামূলক কাজে যোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। ক্ষমতায় যাওয়ার পূর্বে সীমিত আকারে কাজ করে যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা হাসিল হবে, তা ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় পর্যায়ে কাজে লাগানোর সুযোগ হবে।

কর্মীদেরকে জনগণের নিঃস্বর্থ সেবকরূপে গড়ে তোলাই সমাজ সেবামূলক কাজের আসল লক্ষ্য। আর এ কাজ জনগণের সহযোগিতা নিয়েই করতে হয় বলে জনগণও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার শিক্ষা ও প্রেরণা পায়। জনগণ শুধু সরকার নির্ভর হলে কোন সরকারই তাদের অবস্থা উন্নত করতে সক্ষম হবে না।

সমাজ সংস্কারমূরক কাজ

যে সব কারণে ইসলামী আন্দোলনে জনগণের এগিয়ে আসার পথে বাধা সৃষ্টি হয়, সে সব কারণ দূর করাই সমাজ সংস্কারমূলক কাজের আসল উদ্দেশ্য। এ জাতীয় বাধা কয়েক রকমের হতে পারে।

যেমন:

১। ধর্মের দোহাই তুলে জনগণকে ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলন সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।

২। সংস্কৃতির নামে চরিত্র বিনষ্টকারী কার্যকলাপের মাধ্যমে মানুষকে দ্বীনের পথে আসার অযোগ্য করে তোলা।

৩। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, কল-কারখানা ও সকল পেশায় নারী-পুরুষের অবাধ মেলা মেশার মাধ্যমে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার বিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা।

৪। সুদ, ঘুষ, জুয়া, মদ ইত্যাদিতে লিপ্ত করে মানুষকে ভোগবাদী বানিয়ে নৈতিক বন্ধন মেনে চলতে অক্ষম করে দেয়া।

জনগণকে এ সবের কুফল থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে যা কিছু করা সম্ভব তাই সমাজ সংস্কারমূলক কাজ। এ জাতীয় কাজ ইতিহাবচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের হতে পারে।

ইতিবাচক কাজ

১। ধর্মীয় মতভেদকে ভিত্তি করে মুসলিম সমাজকে বিভিক্ত করে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা হয়ে থাকে। ধর্মীয় বিষয় নিয়ে ঝগড়া করা থেকে মানুষকে বিরত করার উদ্দেশ্যে চেষ্টা করা।

২। দ্বীনের বিভিন্ন রকম খেদমতে নিয়োজিত সকলকে পরস্পর শ্রদ্ধাশীল করে তুলবার উদ্দেশ্যে দ্বীনি  মহলে ঐক্যবোধ সৃষ্টি করা এবং ইসলাম বিরোধীদের মোকাবিলায় ইসলাম পন্থীদের একটা প্লাটফর্ম গড়ে তোলার চেষ্টা করা।

৩। জনগণের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে যে অজ্ঞতা রয়েছে তা দূর করার উদ্দেশ্যে-

(ক) মসজিদে মুসল্লীদেরকে মসজিদভিত্তিক সংগঠনের মাধ্যমে মুবাল্লিগের ভূমিকা পালনের যোগ্য করে গড়ে তোলা।

(খ) তাফসীর ও ওয়ায মাহফিলের মাধ্যমে ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষাকে সহজবোধ্য ভাষায় পেশ করা।

৪। সকল দ্বীনি মহলকে ইকামাতে দ্বীনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সাহায্য করা যাতে তারা খেদমতে দ্বীনকে যথেষ্ট মনে না করেন।

৫। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইসলামী ছাঁচে ঢেলে নতুনভাবে গড়ে তুলবার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে গবেষণা করা এবং বাস্তব নমুনা স্বরূপ প্রতিষ্ঠান কায়েম করা।

নেতিবাচক কাজ

১। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক ও নৈতিক ব্যর্থতা এবং চরিত্রবান মানুষ তৈহরি করার চরম ব্যর্থতা তুলে ধরে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা।

২। সহ শিক্ষার মারাত্মক কুফলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও মেয়েদের জন্য সর্বস্তরে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবার জন্য আন্দোলন করা।

৩। অশ্লীল সাহিত্য, পত্র-পত্রিকা, সিনেমা, নাটক, ভিডিও ইত্যাদির বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন সৃষ্টি করা।

৪। সুদ, ঘুষ, জুয়া ও মদের প্রচলন বন্ধ করার জন্য জোর দাবী জানাতে থাকা।

[এ নেতিবাচক কর্মসূচিকে সফল করতে হলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ইসলামী নৈতিকতার সীমা রক্ষা করে গান, নাটক, ভিডিও, সাহিত্য ও পত্র পত্রিকা দ্বারা জনগণের নিকট অপসংস্কৃতির বিকল্প পথও দেখাতে হবে।]

রাজনৈতিক ময়দানে কর্মনীতি

জামায়াতে ইসলামীর চতুর্থ দফা কর্মসূচি হলো ইসলাহে হুকুমাত বা শাসন সংস্কার। এ দফাটি জামায়াতের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক দফা। জামায়াতের চার দফা কর্মসূচির একটি দফাই শুধু সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত। সুতরাং জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি সর্বস্ব সংগঠন নয়। ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু করতে হলে রাজনীতি থেকে দূরে থাকাও সম্ভব নয়। আল্লাহর রাসূল (সা) যে রাজনীতি করেছেন, সে রাজনীতি করা দ্বীনেরই দাবী এবং সবচেয়ে বড় দ্বীনি দায়িত্ব।

জামায়াতে ইসলামী যেহেতু “ইসলামের সুবিচারপূর্ণ শাসন” কায়েমকরতে চায়, সেহেতু রাজনীতির ময়দানে জামায়াতের কর্মনীতি সাধারণ রাজনৈতিক দলের মতো হতে পারে না। রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াতের কর্মনীতির নিম্নরূপ:

১। জামায়াত ক্ষমতা দখলের সুবিধাবাদী রাজনীতি করে না কোন রকমের পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা হাসিল করা জামায়াতের কর্মনীতির সম্পূর্ণ বিরোধী। ক্ষমতাসীনদের সাথে যোগসাজশ করে ক্ষমতায় অংশীদার হওয়া দ্বারা জামায়াতের উদ্দেশ্য সফল হতে পারে না।

একটি দল হিসাবে শুধু শাসন ক্ষমতা দখল করাই জামায়াতে ইসলামীর আসল রাজনৈতিক লক্ষ্য নয়। ইসলামী আদর্শকে শাসকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই জামায়াত কাজ করে যাচ্ছে। এ কথা অবশ্যই সত্য যে, জামায়াতের ঐ লক্ষ্য হাসিল করতে হলে রাষ্ট্র-ক্ষমতা জামায়াতের হাতে আসতে হবে। অর্থাৎ ক্ষমতা লাভ করা জামায়াতের লক্ষ্য হাসিলের মাধ্যম মাত্র। তাই জামায়াতে ইসলামী মন, মগজ ও চরিত্র বিশিষ্ট নেতৃত্ব ও কর্মীবাহিনী তৈরি হওয়ার পূর্বে ক্ষমতা হাতে নিতে চায়না। জামায়াত এক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে রাজনৈতিক ময়দানে কাজ করে যাচ্ছে।

২। জামায়াতে ইসলামী এমন এক আদর্শ কায়েমের উদ্দেশ্যে কাজ করছে যা নৈতিকতাকে প্রাধান্য দেয়। তাই রাজনীতির ময়দানেও জামায়াত নৈতিকতার মান বজায় রাখার উপর গুরুত্ব দেয়। মিথ্যা বলা, ধোঁকা দেয়া, নৈতিকতাবর্জিত চালবাজি করা, রাজনৈতিক অঙ্গনে দূষণীয় মনে করা হয় না। সম্ভবত এ কারণেই ধর্মকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে দূরে রাখা অনেকেই প্রয়োজন মনে করে।

আমাদের দেশে সুবিধাবাদী, স্বার্থপর, দুর্নীতিবাজ, প্রতারক, এমন কি লম্পট প্রকৃতির লোকও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে। রাজনীতির চরিত্র ও নৈতিকতার গুরুত্ব থাকলে এ অবস্থা কখনও হতে পারতো না।

জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক ময়দানেও নৈতিকতার প্রাধান্য দেখতে চায়। মানুষ আসলেই নৈতিক জীব। যদি রাজনীতি নৈতিকতাবিরোধী লোকদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে সমাজ নৈতিক মূল্যবৈাধের উন্নয়ন কিছুতেই সম্ভব নয়।

এ কারণেই জামায়াত সৎলোকের শাসনের উপর এত গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। শাসন ক্ষমতা অসৎ লোকের হাতে থাকলে সমাজে সততা কোথাও বহাল থাকতে পারেনা। আজ সমাজে যোগ্য লোকেরা প্রায়ই অসৎ। তাই তারা যোগ্যতার সাথেই অসৎ কাজ চালু করছে। জামায়াত শাসন ক্ষমতা থেকে অসৎ লোকদের উৎখাত করতে চায় এবং সৎলোকের শাসন কায়েমের মাধ্যমেই শুধু তা সম্ভব।

৩। রাজনৈতিক ময়দানে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতালিপ্সু লোকেরা এমনভাবে প্রচারণা চালায় যা আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও জনদরদের পরিচয় বহন করে না। এরই নাম রাখা হয়েছে পলিটিকস। তাই বিভ্রান্তিমূলক কথা শুনলেই মন্তব্য হয় যে, “আমার সাথে পলিটিকস করবেন না।” পলিটিকস করা যে ধোঁকাবাজি এ কথা যেন সবার নিকট স্বীকৃত। জনমত গঠন করার জন্য সঠিক তথ্য জনগণের নিকট পৌঁছা দরকার। জামায়াত তাই তথাকথিত পলিটিকস করাকে রাজনৈতিক নীতির বিরোধীমনে করে।

৪। জামায়াতে নীতিভিত্তিক রাজনীতি করে, নেতিভিত্তিক নয়। আদর্শিই জামায়াতের রাজনীতির লক্ষ্য। যারা নেতাসর্বস্ব রাজনীতি করে, তাদের নিকট নেতার ভাবমূর্তিই প্রধান মূলধন। এমন কি নেতার মৃত্যুর পরও নেতার ছবিকে নিয়েই তারা রাজনীতি করতে বাধ্য হয়। নির্বাচনেও মৃত নেতার ছবিকে দলীয় প্রার্থদের নির্বাচনী প্রচারপত্রে বড় করে প্রদর্শন করতে হয়। নীতি ও আদর্শের প্রাধান্য থাকলে মৃত নেতার ছবিকে পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করতে হয় না।

গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে সুখ্যাত কোন দেশেই পরলোকগত নেতার ছবি নিয়ে রাজনীতি করর রেওয়াজ চালু হয়নি। দলীল রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ এবং দেশ গড়া ও পরিচালনার প্রোগ্রামই সেখানে রাজনীতির ভিত্তি। দলীয় নেতার চেয়ে দলীয় নীতিই সেখানে প্রাধান্য পায়।

জামায়াত দলীয় নেতাকে আদর্শের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করে না। বরং নেতাকে ইসলামী আদর্শের কষ্টিপাথরে বিচার করে সমালোচনা ও সংশোধন করে। জামায়াতের নিকট আদর্শ নেতা একমাত্র মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা)। ঐ মহান নেতার আনুগত্যই জামায়াতের কাম্য। তাই দলীয় নেতাকে ঐ আনুগত্যের মানদণ্ডে বিচার করেই প্রাপ্য মর্যাদা দেয়া হয়। দলীয় নেতা নিরঙ্কুশ আনুগত্যের অধিকারী নয়।

৫। শক্তির বদলে যুক্তিই জামায়াতের নিকট রাজনৈতিক হাতিয়ার। তাই শক্তি প্রয়োগ ও সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয়া জামায়াতের কর্মনীতির সম্পূর্ণ বিরোধী। জামায়াতে ইসলামী কুরআন ভিত্তিক রাজনীতি করে। তাই কুরআনী যুক্তির মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েই এক শ্রেণীর লোক শক্তি প্রয়োগ করে জামায়াতকে প্রতিহত করা প্রয়োজন মনে করছে। কিন্তু যুক্তির বলিষ্ঠ অস্ত্রের সাথে শক্তির ভোঁতা অস্ত্র স্থায়ীভাবে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হয় না।

ইসলামী বিপ্লবের সফলতা সম্পর্কে কর্মনীতি

ইসলামকে বাস্তবে কায়েম করার উদ্দেশ্যে জামায়াত অবশ্যই শাসন ক্ষমতার গুরুদায়িত্বভার কাঁধে নিতে চায়। কিন্তু এর জন্য কোন চোরাপথের আশ্রয় নেয়া বা অস্বাভাবিক উপায় অবলম্বন করা জামায়াতের কর্মনতির সম্পূর্ণ বিরোধী। আল্লাহ পাক সূরা আন-নূরের ৫৫নং আয়াতে ঘোষণা করেছেন:

(আরবী ************)

“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার ও সৎকর্মশীল তাদের নিকট আল্লাহ ওয়াদা করছেন যে, তিনি তাদের হাতে অবশ্য অবশ্যই দুনিয়ায় প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা তুলেদেবেন। যেমন তাদের পূর্ববর্তীদের হাতে দিয়েছিলেন। আর তাদের জন্য তিনি যে দ্বীনকে পছন্দ করেছেন তা তাদের জন্য মযবুত বুনিয়াদের উপর কায়েম করে দেবেন এবং তাদের (বর্তমান) ভীতিজনক অবস্থা পরিবর্তন করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেবেন।”

সূরা আন-নূরে আল্লাহপাক যে ওয়াদা করেছেন তাতে বুঝা গেল যে, তিনি নিজেই ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার জন্য ব্যস্ত। তিনি শুধু এর শর্ত পূরণের অপেক্ষায় আছেন। তাই জামায়াতে ইসলামী ঐ শর্ত পূরণের চেষ্টায়ই লেগে আছে। ক্ষমতার পাগল হওয়া জামায়াত মোটেই দরকার মনে করেনা। আল্লাহর বিধান মতো দেশকে চালানোর যোগ্য ঈমান ও চরিত্র সৃষ্টি হলেই ক্ষমতা হাতে আসবে-এ কথাই জামায়াত বিশ্বাস করে।

এ শর্তটি পূরণ না হওয়ায় নূহ (আ), হূদ (আ), সালেহ (আ) শোয়াইব (আ) এবং আরও অনেক নবীর সময় ইসলামী হুকুমাত কায়েমহয়নি। এর জন্য নবীগণ দায়ী নন। জনগণের মধ্য থেকে ঈমানদার ও সৎকর্মশীল একদল লোক যোগাড় হয়নি বলেই ইসলাম বিজয়ী হয়নি। আল্লাহপাক ঐ সব কাওমকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।

যেস সব নবীর সময় ইসলামী হুকুমাত কায়েম হয়েছে তাঁদের সবার ক্ষমতা একই ধরনের পথে আসেনি। আল্লাহ পাক ইউসুফ (আ) কে একভাবে ক্ষমতা দিয়েছেন। মূসা (আ) কে অন্যভাবে ক্ষমতাসীন করেছেন। শেষ নবী (সা) কে হিজরতের পর বিনা যুদ্ধেই ক্ষমতা দেয়া হয়। অবশ্র পরে তাঁকে যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হয়।

জামায়াতে ইসলামী শেষ নবীর শেখান কর্মনীতি অনুযায়ী লোক তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ঐ লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য জামায়াত নির্বাচনকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছে। ইসলামী বিপ্লবকে সফল করতে হলে একদিকে যেমন নেতৃত্ব দেয়ার লোক যোগাড় হতে হবে, অপরদিকে তেমনি জনগণের মন-মগজও সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে এ কাজ সহজভাবে এগুতে পারে। সঠিক নিয়মে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা হলে এ উদ্দেশ্য পূরণ হওয়া সম্ভব।

জামায়াত নির্বাচনকে একটি শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের পথ মনে করে

সাম্প্রতিক ইরানী বিপ্লব ও আফগান জিহাদের উল্লেখ করে কেউ কেউ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামী বিপ্লব সম্ভব নয় বলে মনে করেন এবং সে কারণেই তারা নির্বাচনকে ইসলামী বিপ্লবের উপযোগী মনে করেন না। তারা ‘গণবিপ্লবের’ পক্ষে যুক্তি দিয়ে থাকেন।

সত্যিকার গণতন্ত্র ও গণবিপ্লবের বুনিয়াদী কোন তফাৎ নেই। জনগণ কোন আন্দলনের পক্ষে সচেতনভাবে সমর্থন জানালে নির্বাচনের মাধ্যমে শক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতা বদলের চেষ্টা সফল করতে হলে বিপুল লোকক্ষয় ও ফাসাদ সৃষ্টি হয়। আর যদি সে চেষ্টা সফল না হয়, তাহলে ক্ষতির শেষ নেই।

ইরান ও আফগানিস্তানের উদাহরণ বাংলাদেশে অবান্তর। ইরানে নির্বাচনের সুযোগই ছিল না। তাই গণ বিপ্লব ছাড়া উপায় ছিল না। আর আফগানিস্তানকে রুশ সেনাবাহিনী দখল করে ফেলায় গেরিলা যুদ্ধ ছাড়া কোন পথই ছিল না।

বাংলাদেশে ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনই সব মহলের নিকট স্বীকৃত। এমন কি সামরিক একনায়কও নির্বাচনকে অস্বীকার করার সাহস রাখে না। অবশ্য একথা ঠিক যে, সরকার গণতান্ত্রিকরীতি অনুযায়ী নিবৃঅচন হতে দিচ্ছে না। এ অবস্থায় নির্বাচনী এলাকায় ও ভোট কেন্দ্রে গণবিপ্লবের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। অর্থাৎ ব্যালট ডাকাতি ঠেকানোর জন্য ভোটারদেরকে সংগঠিত করে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বাধ্য করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আইন ও নৈতিকতার দাবী সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে হওয়ায় এ পদ্ধতি চালু করা যে কোন ধরনের গণ বিপ্লবের চাইতে সহজ ও শান্তিপূর্ণ। এ কারণেই বাংলাদেশে বদর ও উহুদের যুদ্ধ এখন ভোট কেন্দ্রেই করতে হচ্ছে।

এ ‍যুদ্ধ যদি ইসলামের পক্ষে লড়া হচ্ছে বলে জনগণ বুঝতে পারে, তাহলে নির্বাচনকেই গণবিপ্লবের রূপ দেয়া সম্ভব। জামায়াত সন্ত্রাসে বিশ্বাসী নয় বলে নির্বাচনকেই বাংরাদেশে ইসলামী বিপ্লবের সহায়ক মনে করে।

কেউ কেউ নির্বাচনকে পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের অঙ্গ মনে করেন এবং যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাদেরকে পাশ্চাত্য গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলে ভুল ধারণা পোষণ করেন। সার্বভৌম ক্ষমতা কার হাতে আছে এ প্রশ্নেই ইসলামের সাথে পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের মৌলিক তফাৎ রয়েছে। ইসলাম একমাত্র আল্লাহকেই সার্বভৌমত্বের মালিক মনে করে। পাশ্চাত্য গণতন্ত্র জনগণ বা জনগণের নির্বাচিত আইনসভাবে সার্বভৌম মনে করে। আর সরকারী ক্ষমতা যে নির্বাচিত লোকদের হাতেই থাকা উচিত এ বিষয়ে ইসলাম ও গণতন্ত্রে কোন মতবিরোধ নেই। নির্বাচনের বাস্তব রূপ কী হবে সে সম্পর্কে মতপার্থক্য থাকতে পারে।

প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করার কর্মনীতি

জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সরকারী ও বেসরকারী রাজনৈতিক শক্তি হাজারো অপপ্রচার চালায় এবং অত্যন্ত অশালীন ভাষায় কঠোর সমালোচনা করে। জামায়াতকে নির্মূল করার জন্য তাদের বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে থাকে। এমন কি কোন কোন মহল বিনা উস্কানিতেই জামায়াত ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা ও কর্মদের উপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে অমানুষিক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড ঘটায়। তাদের এ জাতীয় দুশমনীর জবাবে জামায়াত যে কর্মনীতি গ্রহণ করেছে তা নিম্নরূপ:

১। জামায়াত গালির জবাবে যুক্তিভিত্তিক বক্তব্য পেশ করে। জামায়াত কখনও অশালীণ ভাষা কারো বিরুদ্ধে ব্যবহার করে না।

২। জামায়াতের মিছিল, সমাবেশ ও অফিসে যারা বর্বরোচিত আক্রমণ চালায়, তাদের মিছিল-মিটিং-অফিসে জামায়াত কখনও পালটা হামলা করে না।

৩। জামায়াত ও শিবিরের উপর অব্যাহত সন্ত্রাস চালানো সত্ত্বেও জামায়াত কখনও পাল্টা সন্ত্রাসী ভূমিকা পালন করে না। জামায়াত তার কর্মীদের সন্ত্রাসী হতে দিতে চায় না বলেই এত সন্ত্রাস বরদাশত করতে বাধ্য হচ্ছে।

৪। জামায়াত নৈতিক দল ও উন্নত চরিত্র দ্বারা বিরোধিতার মোকাবিলা করতে চায়। দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে যে, কারা অন্যায় করছে আর কারা ন্যায়ের পথে আছে। ন্যায়ই চূড়ান্ত বিজয় লাভ করবে বলে জামায়াত বিশ্বাস করে।

৫। আত্মরক্ষা বা প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে হামলাকারীদেরকে প্রতিহত করার ন্যায়সঙ্গত অধিকার জামায়াতের অবশ্যই আছে। তবু জামায়াত কোন অবস্থায়ই বেআইনী অস্ত্র ব্যবহার করা সমর্থন করে না। কারণ বেআইনী অস্ত্র নিজস্ব সিদ্ধান্ত মেনে চলে। সে অস্ত্র আইন বা নীতি মানে না। আর জামায়াত নীতিতে দৃঢ় বিশ্বাসী।

প্রতিপক্ষ এটাকে জামায়াতের দুর্বল দিক মনে করে যথেষ্ট সুযোগ নিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বশীলরাও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকেই সমীহ করে। তবুও জামায়াত এ নীতির উপরই অটল রয়েছে।

ঈমান সম্পর্কে কর্মনীতি

আল্লাহ, রাসূল (সা) ও আখিরাতকে সাধারণভাবে বিশ্বাস করে নিলেই ঈমান বিশুদ্ধ হয় না। আল্লাহকে যারা বিশ্বাস করে, তারাই তো শিরকে লিপ্ত হয়। যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে না সে কাফির কিন্তু মুশরিক নয়। আল্লাহকে স্বীকার করেই মুশরিকরা অন্য সত্তাকে আল্লাহর সাথে বিভিন্নভাবে শরীক করে। তেমনি মুহাম্মাদ (সা) কে রাসূল বলে স্বীকার করেও অনেকে রাসুল (সা) ছাড়া অন্য লোককেও অন্ধভাবে অনুসরণ ও অনুকরণ করে। পরকালে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও অনেকে শাফায়াতের ভ্রান্ত ধারণায় বেপরোয়া হয়ে আল্লাহর নাফরমানি করে।

জামায়াতে ইসলামী এ কারণেই ঈমানকে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী বিশুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে নিম্নরূপ কর্মনীতি অবলম্বন করে:

১। আল্লাহর প্রতি ঈমানকে খালেস ও মযবুত করতে হলে সচেতনভাবে সকল প্রকার শিরক থেকে বেঁচে থাকতে হবে এবং তাগুতকে অস্বীকার করতে হবে।

(ক) আল্লাহ যাত (সত্তা), সিফাত (গুণাবলী), হক (অধিকার) ও ইখতিয়ার (ক্ষমতা) ইত্যাদির দিক দিয়ে কোন সত্তাকে আল্লহর সাথে শরীক করা চলবে না। (তাফসীর “তাফহীমুল কুরআনের” সূরা আল-আনয়ামের ১২৮ নং টীকায় শিরকের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দেখুন)।

(খ) আল্লাহর প্রতি বিশুদ্ধ ঈমানের পূর্বশর্ত হলো তাগুতকে অস্বীকার করা, (আয়াতুল কুরসীর তাফসীর দ্রষ্টব্য)।

সূরা আল-বাকারার ১৫৬ নং আয়াতে রয়েছে:

(আরবী *********)

“সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করল এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল, সে এমন মযবুত রজ্জু ধারণ করল যা ছিন্ন হবার নয়।”

তাগুতকে অমান্য করার সিদ্ধান্ত ছাড়া আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাবী কিছুতেই পূরণ করা সম্ভব নয়। নাফস, শয়তান, অনৈসলামী শাসনশক্তি, বেদ্বীন অর্থশক্তি, অন্ধ অনুরণের দাবীদার যাবতীয় শক্তি যারা আল্লাহর বিধানের বিরোধী জীবন যাপনের জন্য চাপ দেয় বা উদ্বুদ্ধ করে, তারাই তাগুতী শক্তি। একই সাথে তাগুত ও আল্লাহর আনুগত্য অসম্ভব এবং এটা মুনাফিকী কর্মনীতি।

২। রাসূল (সা) এর উপর ঈমানের তাৎপর্য সঠিকভাবে না জানলে রাসূলের প্রতি মহব্বত ও ভক্তি-শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও ঈমানের দাবী পূরণ হতে পারে না। এর জন্য কর্মনীতি নিম্নরূপ:

(ক) একমাত্র মুহাম্মাদ (সা) কেই “উসওয়াতুন হাসানা” (সুন্দরতম আদর্শ) মেনে নিতে হবে। আর কোন মানুষকে এ মর্যাদার অধিকারী বলে মানা চলবে না। কারণ একমাত্র রাসূলই মাসুম (নিষ্পাপ), নির্ভুল এবং নিরঙ্কুশ আনুগত্যের অধিকারী। তিনিই একমাত্র সত্যের মাপকাঠি। সাহাবায়ে কেরাম (রা) এ মাপকাঠিতেই অবশ্যই উত্তীর্ণ, কিন্তু তাঁরা স্বয়ং মাপকাঠি নন। রাসূল (সা) ও সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা এক সমান হতে পারে না। রাসূল (সা) এর আনুগত্যের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম অবশ্যই উম্মতের শাশ্বত আদর্শ।

(খ) মুহাম্মদ (সা) কে সর্বশেষ রাসূল হিসাবে মানতে হবে এবং আল্লাহ পাক আর কোন নবী পাঠাবেন না বলে বিশ্বাস করতে হবে।

(গ) রাসূল (সা) এর পূর্ণ আনুগত্য করার উদ্দেশ্যে দ্বীনের উস্তাদ হিসাবে যাদেরকে মানা প্রয়োজন তাদেরকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা চলবে না। কুরআন ও সুন্নাহর দলীলের ভিত্তিতেই তাঁদের নির্দেশ পালন করতে হবে। বিনা দলীলে তাঁদের কথা মানা নবীর আনুগত্যের বিরোধী।

৩। আখিরাতের উপর বিশ্বাসকে খালেরস করার প্রয়োজনে নিম্ন কর্মনীতি মেনে নিতে হবে:

(ক) আখিরাতে আল্লাহর ক্ষমতাই নিরঙ্কুশ ও চূড়ান্ত। সুপারিশ করে আল্লাহকে তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে চাপ দেয়ার সাধ্য কারো নেই।

(খ) সুপারিশ একমাত্র তাঁরাই করতে পারবেন, যাঁদেরকে আল্লাহ তায়ালা অনুমতি দেবেন। আর তাঁরা একমাত্র ঐ সব লোকের পক্ষেই সুপরিশ করতে পারবেন যাদের পক্ষে আল্লাহর অনুমতি থাকবে।

৪। আল্লাহর কুরআনের সবটুকুর উপরই ঈমান আনতে হবে। কুরআনের কোন অংশ মানা ও কোন অংশ অপছন্দ বা অমান্য করা ঈমানের পরিচয় বহন করে না। কুরআনের কোন কথার যুক্তি বুঝে আসুক বা নাই আসুক তা নির্ভুল ও সঠিক বলে বিশ্বাস করতে হবে এবং তার যুক্তি তালাশ করতে থাকতে হবে। কিন্তু যুক্তি বুঝে না আসলেও আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে হবে।

ইলম সম্পর্কে কর্মনীতি

জ্ঞানই মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। সকল সৃষ্টির উপর জ্ঞানের কারণেই মানুষের মর্যাদা এত উন্নত। জ্ঞানের সাধনাই মনুষত্বের বিকাশ সাধন করে। জ্ঞানই সঠিক পথের সন্ধান দেয। কিন্তু নির্ভুল জ্ঞানের অভাবেই মানুষ বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট হয়। জ্ঞান মাত্রই সঠিক ও নির্ভুল নয়। একমাত্র নির্ভুল জ্ঞানই কল্যাণকর। আবার সকল অকল্যাণের মূল কারণ ভ্রান্তিপূর্ণ জ্ঞান। প্রকৃতপক্ষে ভ্রান্তিপূর্ণ জ্ঞান সত্যিকার জ্ঞানই নয়। কুরআনপাক নির্ভুল জ্ঞানকেই ইলম বলেছে। আর যা নির্ভুল নয় তা কুরআনের ভাষায় ধারণা বা কল্পনা মাত্র।

ইসলামের দৃষ্টিতে নির্ভুল জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর নিকটই রয়েছে। মানুষের নিকট সঠিক জ্ঞান পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম হলো ওহী। তাই ওহীর কষ্টিপাথরে যাচাই না করে কোন জ্ঞানকেই সঠিক বলে সিদ্ধান্ত করা চলে না। ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা এবং বোধি (ইলহাম) অবশ্যই জ্ঞানের উৎস। কিন্তু ওহীর মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ না হলে এ সব উৎস থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানকে নির্ভুল মনে করা মোটেই নিরাপদ নয়। এ যুক্তির ভিত্তিতেই জামায়াতে ইসলামী জ্ঞানচর্চার নিম্নরূপ কর্মনীতি নির্ধারণ করেছে:

১। ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ পাক রাসুল (সা) এর নিকট যে জ্ঞান দান করেছেন একমাত্র তাই নির্ভুল ও সঠিক। কুরআন ও সুন্নাহই ওহীর জ্ঞানের উৎস।

২। জীবনের সর্বক্ষেত্রে যাবতীয় দায়িত্ব পালনের বেলায়ই ওহীর ইলম তালাম করা ফরয। যে সব বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহতে প্রত্যক্ষবিধান পাওয়া যায় না সে সব বিষয়ে ওহীর জ্ঞানের আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওহীর জ্ঞানকে কোন অবস্থাতেই উপেক্ষা করা যাবে না।

৩। হালাল রূযী তালাশ করা যেহেতু ফরয, সেহেতু উপার্জনের উদ্দেশ্যে যে পেশা গ্রহণ করা হয়, সে বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করাও পরোক্ষভাবে ফরয। যে ব্যক্তি চিকিৎসাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করলসে যদি যথাসাধ্য যত্নসহকারে চিকিৎসা বিজ্ঞান আয়ত্ত না করে, তাহলে তার রূযী হালাল হতে পারে না। চিকিৎসাবিদ্যা অর্জন না করে চিকিৎসা পেশা চালিয়ে যাওয়া সুস্পষ্ট প্রতারণা।

৪। বিজ্ঞান ও দর্শনের মাধ্যমে বহু সাধনা দ্বারা মানুষ যত জ্ঞান আহরণ করে, তা যেমন যাচাই-বাছাই না করে গ্রহণ করা যুক্তিসিদ্ধ নয়, তেমনি বিচার-বিবেচনা না করেই বর্জন করাও বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। সকল জ্ঞানকে ওহীর কষ্টিপাথরে যাচাই করতে হবে।

অমুসলিম বিজ্ঞানী ও দার্শনিকের গবেষণালব্ধ জ্ঞানও সঠিক হতে পারে। আবার মুসলিম বিজ্ঞানী ও দার্শনিক হলেই তার সাধনার ফসল সঠিক হবে মনে করা যুক্তিপূর্ণ নয়। যার মাধ্যমেই জ্ঞান পরিবেশিত হোক তা গ্রহণ ও বর্জনের পূর্বে দেখতে হবে যে, ওহীর সাথে এর কোন বিরোধ আছে কিনা।

৫। বিজ্ঞান চর্চা করা কুরআনেরই দাবী। আল্লাহ পাক গোটা সৃষ্টিজগতই মানুষের প্রয়োজনে পয়দা করেছেন বলে কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে। বিজ্ঞান চর্চাই সৃষ্টিলোকের প্রতিটি বস্তু ও শক্তির সন্ধান দেয়। মানুষের উপর আল্লাহ তায়ালা খিলাফতের যে বিরাট দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তা পালন করতে হলে মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যে সকল বস্তু ও শক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। পারমাণবিক শক্তিকে মানব কল্যাণের পরিবর্তে যে ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা খিলাফতের দায়িত্বের বিরোধী।

কুরআন মানুষকে সৃষ্টিজগত সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করার সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ রাখার তাকীদ দিয়েছে যাতে মানুষ বিজ্ঞানের ফসলকে আল্লাহর মরযীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে না পারে। (সূরা আলে ইমরান-১৯১ আয়াত) এ আয়অতে যিকর ও ফিকরের সমন্বয় সাধনের উপদেশ দেয়া হয়েছে। মুসলিম শাসনের অবসানের পর বিগত কয়েক শ’বছর থেকে যাঁরা বিজ্ঞানের নেতৃত্ব দিচ্ছে, তারা আল্লাহর যিকরের ধার ধারেনি। আর যারা আল্লাহর যিকরে মশগুল, তারা বিজ্ঞানচর্চার প্রয়োজন মনে করেননি। বিজ্ঞানকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে হলে যিকর ও ফিকরের সমন্বয় অপরিহার্য।

আমল সম্পর্কে কর্মনীতি

আমল মানে কাজ। আল্লাহর আদেশ বাস্তবে পালন করাকেই আমল বলে। আল্লাহ যা করতে বলেছেন তা করা এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা না করাই আমল। আল্লাহর মরযীর বিরুদ্ধে কাজ না করা এবং সব কাজ আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের (সা) তরীকা মত করাই আমল। আমলেল দাবী হলো আল্লাহর সব আদেশ ও নিষেধ মেনে চলা। সঠিকভাবে আমল করার জন্য নিম্নরূপ কর্মনীতি অপরিহার্য।

১। রাসূল (সা) এর শেখানো তরীকা অনুযায়ী আল্লাহর হুকুম পালন করতে হবে। অন্য কোন মানুষ থেকে এমন কোন তরীকা কবুল করা চলবে না, যা রাসূল (সা) এর তরীকার সাথে মিল খায় না।

২। আমল মানে বাস্তব কাজ। রূযী-রোজগারের আমল হলো হালাল পথে আয়ের চেষ্টা করা। চেষ্টা না করে কোন দোয়া বা ওযীফা করতে থাকা আমল নয়। চেষ্টা করার সাথে সাথে অবশ্যই দোয়া করতে থাকতে হবে। শুধু দোয়া করা রূযীর আমল বলে গণ্য হতে পারে না।

৩। আল্লাহ তায়ালা বৈরাগ্য জীবন মোটেই পছন্দ করেন না। রাসূল (সা) বলেছৈন, “আমার উম্মতের বৈরাগ্য হলো জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ।” ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্বের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করে ব্যক্তিগত নফল ইবাদাত নিয়ে মশগুল থাকাকে ইসলামী দৃষ্টিতে সহীহ আমল বলা চলে না।

৪। আল্লাহর রাসূল (সা) এর বাস্তব জীবন ও হিদায়াত এ কথাই প্রমাণ করে যে, নফল ইবাদাতের চেয়ে জন কল্যাণমূরক কাজের মর্যাদা আল্লাহর নিকট বেশী।

৫। যিকর, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত হলো ঐ সব বুনিয়াদী ইবাদত, যা দুনিয়ার সব কাজকে ইবাদতে পরিণত করে। এ সব বুনিয়াদী ইবাদতের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে যারা দুনিয়ার দায়িত্ব পালন করে, তাদের আমল বাহ্যিক দৃষ্টিতে দুনিয়াদারী বলে মনে হলেও এ ধরনের জীবনধারা দ্বীনদারীরই পরিচয় বহন করে। ঐ সব বুনিয়াদী ইবাদতের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্যঐ জাতীয় আমলেরই নফলও আদায় করা কর্তব্য। নফল যিকর, নফল নামায, নফল রোযা, নফল হজ্জ ও নফল দান-সদকা ফরযের উদ্দেশ্যকেই পূরণ করতে সাহায্য করে।

কর্মনীতি সম্পর্কে শেষ কথা

জামায়াতে ইসলামীর কর্মনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর উপসংহারে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বলতে চাই যে, বাস্তব সঠিকভাবে এ কর্মনীতি মেনে চলা সাধনার ব্যাপার। নীতিকথা বলা যত সহজ, করা ততই কঠিন।

এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, জামায়াতের সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীলগণ এ কর্মনীত বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ যত্ন নিলেই সংগঠনভুক্ত জনশক্তির পক্ষেও এর মর্যাদা উপলব্ধি করা সম্ভব। আর সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত লোকদের মাধ্যমেই সর্বসাধারণ জামায়াতের এ উন্নত কর্মনীতি দ্বারা আকৃষ্ট হওয়ার সুযোগ পেতে পারে।

এ কর্মনীতি বাস্তবে পালন করা হলে এ দেশের মুখলিস দ্বীনদারদের পক্ষে ইকামাতে দ্বীনের এ মহান আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা কিছুতেই সম্ভব হবে না। তাই আল্লাহ পাক যাদের অন্তরে ঈমানের দৌলত দান করেছেন, তাদেরকে এ আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট করার বিরাট দায়িত্ব  জামায়াতের সদস্য (রুকন) ও কর্মদের উপর রয়েছে। আর এ দায়িত্ব যথাযথরূপে পালন করতে হলে জামায়াতে ইসলামীর কর্মনীতি সঠিকভাবে পালন করতে হবে।

আল্লাহ পাক সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের (সা) শেখান কর্মনীতি অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীকে পরিচালিত করার জন্য সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীলকে তাওফীক দান করুন। আমীন!

সমাপ্ত

Page 2 of 2
Prev12

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক

@BJI Dhaka City South