পঞ্চম অধ্যায়
আল-কুরআনের শৈল্পিক বিন্যাস
যখন আমরা বলি কুরআনী উপকরণের মধ্যে চিত্রায়ণ পদ্ধতি মূল সূত্রের বা ভিত্তির মর্যাদা রাখে এবং কল্পনা ও রূপায়ণ চিত্রায়ণের উজ্জ্বলতম নমুনা। তো এখানেই কথা শেষ নয়। শুধু একথা বলায় না কুরআনের বিশেষত্ব বর্ণনার হক আদায় হয়ে যায় আর না কুরআনের দৃশ্যায়নের পুরো বৈশিষ্ট্যসমূহ সামনে চলে আসে। সত্যি কথা বলতে কি, চিত্রায়ণ, কল্পনা ও রূপায়ণ ছাড়াও কুরআনে বহু আলংকারিক দিক রয়েছে। যতোক্ষণ সে অরণ্যে প্রবেশ করা নয যাবে ততোক্ষণ কুরআনের শৈল্পিক বিন্যাসের কথা বলা যেতে পারে, যা দৃশ্যায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে।
শৈল্পিক বিন্যাসের ধরন
শৈল্পিক বিন্যাসের কয়েকটি স্তর আছে। বিন্যাসের শৈল্পিক এবং আলংকারিক কতিপয় দিক এমন আছে, যে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞগণ বিশ্লেষণ করেছেন। আবার এমন কিছু দিকও আছে যে সবের মধ্যে তাদের স্পর্শ পর্যন্ত পড়েনি।
১. বিন্যাসের একটি ধরন, যার সম্পর্ক ইবাদতের বিন্যাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। যেমন- উপযোগী কিছু শব্দচয়নের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বিন্যাস করায়। যার বদৌলতে সে বাক্য কথা বা পরিশীলনে পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। এ বিষয়ে এতো বেশি আলোচনা হয়েছে যে, নতুন করে আর কিছু লেখার প্রয়োজনীয়তা নেই।
২. বিন্যাসের আরেকটি সম্পর্ক হচ্ছে, সুর ও ছন্দের সাথে। যা শব্দের সঠিক চয়ন এবং তাকে এক বিশেষ পদ্ধতিতে বিন্যাসের দ্বারা সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিটি আল-কুরআনে পুরো মাত্রায় দৃষ্টিগোচর হয় এবং কুরআনের শৈল্পিক ভিত্তিতে তা একাকার হয়ে আছে। তবু আগের মনীষীগণের দৃষ্টি বাহ্যিক সুর ও ছন্দ ছাড়িয়ে আগে বাড়তে পারেনি। এমনকি তারা এটিও জানতেন না যে সঙ্গীতের সুর, তাল ও মাত্রার সংখ্যা কতো এবং তা কোন ঢংয়ে কোথায় ব্যবহৃত হয়।
৩. অলংকার শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞগণ আল-কুরানের বিন্যাসের আলংকারিক যেসব দিক সম্পর্কে জানতে পেরেছেন, তার একটি হচ্ছে, আল-কুরআনের আয়অতের শেষ অথবা বক্তব্যের শেষ করা হয়েছে বক্তব্যের সাথে সংগতি রেখে। যেমন- যেসব আয়াতে আল্লাহ তা’আলার যাত ও সিফাতের বর্ণনা করা হয়েছে তা শেষ করা হয়েছে: (আরবী**********) বাক্য দ্বারা। আবার যেখানে কোন গুপ্ত রহস্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে তা শেষ করা হয়েছে: (আরবী**********) বাক্যটি দ্বারা। আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে প্রথমে ইসমে মাওসুল (সংযোজিত পদ) নিয়ে তারপর ছিলাহ বা সংযোজক পদ) ছাড়াই বাক্যকে পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যাওয়া। তারপর জাযা বা প্রতিফল বর্হৃনা করা। যেমন:
(আরবী**********)
যারা আমার আয়অতে মিথ্যা বলেছে এবং অহংকার করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং জান্নাতেও যেতে পারবে না, যতোক্ষণ সুচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করতে না পারবে। (সূরা আল-আ’রাফ: ৪০)
তেমিনভাবে যেখানে তা’লীম ও তারবিয়াতের আলোচনা এসেছে সেখানে ‘রব্ব’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যথা:
(আরবী**********)
পড় তোমার রব্ব-এর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পড়, তোমার রব্ব অত্যন্ত দয়ালু যিনি কলমের সাহায্যে শিখিয়েছেন। মানুষকে এমন জ্ঞান শিখিয়েছেন যা সে জানত না। (সূরা আল-আলাক: ১-৫)
যেখানে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও সম্মান প্রতিপত্তির আলোচনা এসেছে সেখানে (**) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যথা:
(আরবী**********)
নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটই কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। (সূরা লুকমান: ৩৪)
এমনিভাবে (***) শব্দটি স্থান ও কালভেদে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। কখনো আল্লাহ শব্দটি একবার বলে পরবর্তী আয়াতসমূহে শুধুমাত্র সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কোথাও বাক্যের প্রথমে, আবার শেষে, আবার কোথাও আল্লাহ শব্দ এবং তার সর্বনাম যৌথভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক জায়গায় প্রশ্নের অবতারণার জন্য আবার অনেক জায়গায় ইতিবাচক বর্ণনার জন্য নেয়া হয়েছে। এটি অনেক অলংকার শাস্ত্রের পণ্ডিতদের নিকট আলংকারিক শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত।
৪. কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্যের অর্থগত ধারাবকাহিকতা থাকে। অতপর একটির উদ্দেশ্যকে অন্যটির উদ্দেশ্যে পরিবর্তন করার ফলে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তাও এক ধরনের শৈল্পিক বিন্যাসের নমুনা। অবশ্য অলংকার শাস্ত্রবিদগণ শৈল্পিক বিন্যাস সম্পর্কে যে নীতির কথা বলেন আল-কুরআন তা থেকে মুক্ত।
৫. সম্ভবত শৈল্পিক বিন্যারেস সর্বোচ্চ স্তর যে সম্পর্কে অলংকার শাস্ত্রবিদগণ এ পর্যন্ত পরিচিতি লাভ করেছেন তা হচ্ছে আল-কুরআনের স্বভাবজাত বিন্যাস, যা কাতিপয় আয়অতের বর্ণনা পরম্পরায় পাওয়া যায়। যেমন সূরা আল-ফাতিহা প্রসঙ্গে আমরা আল্লাম যামাখশারীর লেখা থেকে ‘আল-কুরআনের গবেষণা ও তাফসীর’ অধ্যায়ে উদ্ধৃতি দিয়েছি। অলংকার শাস্ত্রবিগদগণ যে বৈশিষ্ট্যসমূহ নিরূপণ করেছেন, কুরআনী বালাগাতের গবেষক আলিমগণ আজ পর্যন্ত তাকে শৈল্পিক বিন্যাসের উত্তম প্রকাশ বলে ঘোষণা দিয়ে আসছেন। আশ্চর্যের কথা এই যে, তারা শৈল্পিক বিন্যাসের অন্য দিকটির নাগালও পাননি। তারা বেশি অগ্রসর হয়ে করার মধ্যে এই করেছেন, আল-কুরআনের সুর ও ছন্দ নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করেছেন। সম্ভবত তাদের নিকট মনে হয়েছে কুরআনের অন্য কোন বৈশিষ্ট্যই আর নেই। প্রকৃতপক্ষে কুরআনী বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য মাত্র। কিন্তু এখানেই তারা পরিতৃপ্ত হয়ে বসে পড়েছেন।
কেননা বালাগাতের আলিমগণ এর মর্ম সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না যে, চিত্রায়ণ ও দৃশ্যাংকনের মাধ্যমে আল-কুরআনে যে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে তা মুল বা ভিত্তির মর্যাদা রাখে। তাই তারা শৈল্পিক বিন্যাসের ব্যাপারটি ভালভাবে আলোকপাত করতে পারেননি। এ বিষয়ে আমরা আমাদের নতুন চিন্তা-গবেষণা পেশ করবো বলেই এ পুস্তকটি লিখা হয়েছে। পুরোনো বিষয নিয়ে বিবাদ বা তর্ক-বিতর্ক করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা চাচ্ছি কুরআনের আলংকারিক দিক সম্পর্কে যা কিছু লেখা হয়েছে তা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝার চেষ্টা করা। আমাদের পূর্বসূরীরা যেখানে পৌঁছে থেমে গেছেন তা থেকে আরো সামনে অগ্রসর হবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। কেননা তার প্রচুর অবকাশ আছে। এ বিষয়ে আমরা ঐ সমস্ত উদাহরণকে যথেষ্ট মনে করি, যা আমরা প্রথমদিকে ‘সূরা আল-আলাক’ –এর ব্যাখ্যায় এবং ‘আল কুরআনের সম্মোহনী শক্তির উৎস’ অধ্যায়ে আলোচনা করেছি। ঐসব উদাহরণ থেকে প্রতীয়মান হয়, আল-কুরআনে চিন্তার যোগসূত্রতা এবং বাহ্যিক বিন্যাস প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোচনা করার যথেষ্ট সুযোগ ও অবকাশ আছে।
আমরা শুধু একথাটি ইঙ্গিত দিতে চাই, আল-কুরআনে বর্ণিত ঘটনাবলী এবং! ঐ সমস্ত স্থান, যা ঘটনার সাথে জড়িত এ দু’য়ের মধ্যে এক অদৃশ্য আত্মিক বন্ধন রয়েছে। সেই সাথে কুরআন সেসব ঘটনার দ্বীনি উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু এবং শৈল্পিক দিকের প্রতিও দৃষ্টি রাখে। এ ধরনের মিল সংক্রান্ত উদাহরণ ‘প্রসঙ্গ: আল-কুরআনে বর্ণিত ঘটনাবলী’ শিরোনামে উল্লেখ করা হবে। এছাড়াও কিয়ামতের দৃশ্য, শান্তি ও শাস্তির দৃশ্য, জান্নাতী ও জাহান্নামীদের কথপোকথনের দৃশ্যাবরীতেও এ ধরনের মিল পাওয়া যায়, যা আল-কুরআনে বর্ণিত ঘটনাবলীতে বিদ্যমান। এ সমস্ত বিষয় বর্ণনার সময় একটি ধারাবাহিকতা বা যোগসূত্রের প্রতিও লক্ষ্য রাখা হয়েছে। তাই বলে মূল উদ্দেশ্যটাকেও সরাসরি আলোচনায় নিয়ে আসা হয়নি, যে উদ্দেশ্যে ঐ ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে।
মূল কথা হচ্ছে কুরআনে কারীমের অর্থ ও তাৎপর্য এবং উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের মধ্যে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও গভীর তাৎপর্যপূর্ণ এবঙ অতি উন্নত। কিন্তু কুরআনের বর্ণনা ও ব্যাখ্যার নিগুঢ় যে সৌন্দর্য, দৃশ্যায়ণ থেকে তার বিস্তৃতি অনেক বেশি। আমাদের দ্বারা সম্ভব নয় যে, আলোচনার সহজ ও সমতল পথ ছেড়ে অগ্রসর হয়ে এক ঝটকায় কলমের গতি সেই বিষয়বস্তুর সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে উপনীত করবো। এজন্য আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে সেই চূড়ায় আরোহণের চেষ্টা করবো।
[৫.১] কুরআনুল কারীমে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে চিত্রায়ণ পদ্ধতে তার বক্তব্য পেশ করা হয়েছে, সেখানে বক্তব্য এবং অবস্থার মধ্যে পুরোপুরি মিল পাওয়া যায়। যেমন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বর্ণনার এ ঢং অথবা আভিধানিক অর্থ ছবির লক্ষণসমূহ পরিপূল্ণ করতে সহায়ক প্রমাণিত হয়্ এটি এমন একটি বাঁক যা বর্ণনার জন্য ব্যাখ্যা এবং ছবির মধ্যে যোগসূত্রের মর্যাদা রাখে। যেখান থকে হাল্কা ঢংয়ের বর্ণা এবং উঁচু মানের নির্মাণ শৈলীর রাস্তা পৃথক হয়ে যায়। যেমন পরবর্তী আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
(আরবী**********)
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলার নিকট সমস্ত প্রাণীর তুলনায় নিকৃষ্ট সেইসব মুক ও বধির- যারা উপলব্ধি করে না। (সূরা আল-আনফাল: ২২)
(****) শব্দটি সাধারণ জীবজন্তুর বেলায় ব্যবহৃত হয়। অবশ্য অনেক সময় এ শব্দটি দিয়ে মানুষকে বুঝানো হয়। কেননা (****) শব্দ দিয়ে ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকল প্রাণীকেই বুঝায় যেহেতু মানুষও ভূপৃষ্ঠে বিচরণ করে তাই মানুষের বেলায়ও এ শব্দটি প্রয়োগ করা যায়। কিন্তু (***) শব্দটি মানুষ অর্থে গ্রহণ করতে বিবেক বাধ্য নয়। এটি স্বাভাবিকতার বিপরীত। এখানে মানুষের জন্য (***) শব্দটি ব্যবহার করে বুঝানো হয়েছে তাদের চরিত্র ও আচার আচরণে পশু সুলভ মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়, যা তাদের হেদায়েতের পথে প্রতিবন্ধক। এ থেকেই তাদের গাফলতি ও পশুত্বের ছবি পরিপূর্ণ হয়ে যায় (***) ( তারা উপলব্ধি করে না) শব্দ দিয়ে একথাটিকে আরো পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে।
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে:
(আরবী**********)
আর যারা কাফির তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুষ্পদ জন্তুর মতো আহার করে, তাদের বাসস্থান জাহান্নাম। (সূরা মুহাম্মদ : ১২)
এ আয়াতে কাফিরদেরকে জন্তু-জানোয়ারের সাথে তুলনা করে এক চমৎকার চিত্র অংকন করা হয়েছে। কারণ তারা অল্প ক’দিনের দুনিয়ায় খুব আনন্দ ফূর্তি করছে এং বিভিন্নবাবে তারা দুনিয়ার রং-তামাসাকে উপভোগ করার প্রয়াস পাচ্ছে। কিন্তু পরকালের শাস্তি সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ উদাসীন যা তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। যে আচরণ একমাত্র জন্তু-জানোয়ারের দ্বারাই শোভা পায়। সেগুলো খাওয়া-দাওয়া ও আনন্দ ফূর্তিতে মশগুল থাকে কিন্তু একবারও ভেবে দেখে না, কসাইয়ের ছুরি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সেগুলোর একমাত্র কাজই যেন শুধু খাওয়া- দাওয়া ও আনন্দ-ফুর্তি করা।
আরো একটি উদাহরণ দেখুন:
(আরবী**********)
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ। নিজেদের ক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছে যাও। (সূরা আল-বাকারা: ২২৩)
এ আয়অতে কয়েক প্রকার গোপন ও প্রকাশ্য মিল পাওয়া যায়। এখানে স্বামী-স্ত্রীর স্পর্শকাতর সম্পর্ককে বড় সূক্ষ্ম ও আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় উপমা হচ্ছে স্বামসী-স্ত্রীর সম্পর্কে একজন কৃষক ও তার জমির সাথে তুলনা করা হয়েছে। জমি যেমন ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্র তদ্রূপ স্ত্রীও সন্তান উৎপাদনে ক্ষেত্র। জমির ফসল দিয়ে যেমন গোলা পরিপূর্ণ করা হয়, তেমনি স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন করে বংশধারাকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েকটি শব্দের মাধ্যমে গোটা উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সঠিক ও সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
[৫.২] অনেক সময় শুধুমাত্র একটি শব্দ-পুরো বাক্য নয়- ছবির আংশিক পূর্ণতার স্বাক্ষর বহন না করে বরং পুরো ছবিটিকেই উদ্ভাসিত করে তোলে। চিত্রায়ণ পদ্ধতিতে এ মিল পূর্বের চেয়েও জোরালো। এটি পূর্ণতার কাছাকাছি প্রায়। এর গুরুত্ব বেশি হওয়ার কারণ পূর্ণবাক্য ব্যতিরেকে শুধুমাত্র একটি শব্দই একটি চিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম। সেই শব্দটি কর্ণগোচর হওয়া মাত্র মনের মুকুরে ভেসে উঠে একটি পরিপূর্ণ চিত্র।
(আরবী**********)
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হয়েছে, যখন আল্লহর পথে তোমাদেরকে বের হওয়ার জন্য বলা হয়, তখন তোমরা জমিন আঁকড়ে পড়ে থাক। (সূরা আত-তাওবা: ৩৮)
এ আয়াত পাঠকালে যখন (***) শব্দটি কর্ণগোচর হয় তখনই চিন্তার জগতে একটি ভারী বস্তুর প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে। মনে হয় কোন ব্যক্তি যেন ভারী কোন বস্তুকে উঠানোর জন্য বারবার চেষ্টা করছে কিন্তু তা ভারী হওয়ার কারণে উঠাতে পারছে না। মনে হয় শব্দটি ওজনে কয়েক টন। যদি আয়াতে (***) বলা হতো (মূলত দুটো শব্দের অর্থ একই) তবে পূর্বের শব্দের মতো এতো ভারী বুঝাত না। উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যেত। কিন্তু ব্যবহৃত শব্দটির এতো যথার্থ প্রয়োগ হয়েছে যে, শ্রোতা শোনামাত্র দুঃসাধ্য এক ভারী বোঝার চিত্র তার কল্পনার চোখে ভেসে উঠে।
এ ধরনের আরেকটি আয়াত হচ্ছে:
(আরবী**********)
আর তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও আছে যারা (ইচ্ছেকৃত) বিলম্ব করবে। (সূরা আন-নিসা: ৭২)
এ আয়াতটি পড়া মাত্র বিলম্বের একটি ধারণা সৃষ্টি হয় বিশেষ করে (***) শব্দটি পাঠ কিংবা শ্রবণ করা মাত্র চোখের সামনে এক চিত্র ভেসে উঠে। তা হচ্ছে সেই কথা বলতে তাদের জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে যায়। বহু কষ্টে এবং অনেক বিলম্বৈ শেষ পর্যন্ত পৌঁছে।
আল-কুরআনে হযরত নূহ (আ)-এর কথাটি এভাবে তুলে ধরা হয়েছে:
(আরবী**********)
(নূহ বললেন: ) হে আার জাতি। দেখ তো আমি যদি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট দলিলের ওপর থাকি, তিনি যদি তার পক্ষ থেকে আমাকে রহমত দান করে থাকেন, তার পরেও যদি তা তোমাদের চোখে না পড়ে, তবে আমি কি তা তোমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারি, তোমাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে? (সূরা হুদ: ২৮)
এ আয়াতে (*****) শব্দটি পাঠ করা মাত্র অপছন্দ ও পীড়াপীড়ির এক চিত্র ভেসে উঠে মনের মুকুরে। তার সমস্ত চেতনা ও বাকশক্তি পরস্পর এমনভাবে সম্পৃক্ত হয়ে যায়, যেমন (****) বা ঘৃণাকারী সেই জিনিসের সাথে আচরণ করে যা সে ঘৃণা করে। এ আয়াতে শব্দ ও অর্থের মধ্যে যে নিবিড় সম্পর্ক প্রতিভাত হয় তা বালাগাত ও ফাসাহাতের এক বলিষ্ঠতম প্রয়োগ। যাকে পূর্ব যুগের ও বর্তমান যুগের মুফাসসিরগণ আল-কুরআনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যত্র বলা হয়েছে:
(আরবী**********)
আর যারা কাফির,তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদেরকে মৃত্যুর আদেশ দেয়া হবে না যে, তারা মরে যাবে এবং তাদের থেকে শাস্তিও লাঘব করা হবে না। আমি অকৃতজ্ঞদেরকে এভাবেই শাস্তি প্রদান করি। সেখানে তারা আর্ত চীৎকার করে বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এখান থেকে বের করে দিন, আমরা সৎকাজ করবো, পূর্বে যা করেছি তেমনটি আর করবো না। (সূরা ফাতির: ৩৬-৩৭)
এ আয়াতে (****) শব্দটি শোনামাত্র মনে হয়, জাহান্নামীরা চীৎকার করছে, সে আওয়াজ চতুর্দিকে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। সেই সাথে আরেকটিচিত্র ভেসে উঠে- তাদের এ মর্মান্তিক চীৎকার কেউ শুনছে আর না এর কোন প্রতিকার করার জন্য কেউ এগিয়ে আসছে সেই প্রাণান্তকর চীৎকারের কারণে। এ চিত্র থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে, শাস্তির তীব্রতা কতো ভয়াবহ।
যখন একটি মাত্র শব্দ সমস্ত বাক্যের বক্তব্যকে প্রস্ফুটিত করে তোলে তখন তা হয় (***) বা (শৈল্পিক) বিন্যাসের চূড়ান্ত রূপ। যেমন:
(আরবী**********) কঠোর স্বভাব তদুপরি কুখ্যাত। (সূরা ক্বলম: ১৩)
এ আয়অতে (***) শব্দটি কঠোর স্বভাব ও নির্মমতার পূর্ণ চিত্র অংকন করার জন্য যথেষ্ট।
এ রকম আরেকটি আয়াতে কারীমা :
(আরবী**********) কিন্তু এতো দীর্ঘজীবন তাদেরকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। (সূরা আল-বাকারা: ৯৬)
এ আয়অতে (****) –এর কর্তা হচ্ছে (***) যা পরিপূর্ণ এবং প্রাণবন্ত একটি চিত্র অংকন করেছে। কথা ক’টি মুখে উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে চোখের সামনে ভেসে উঠে সেই চিত্র।
পরবর্তী আয়াতটিও একটি উত্তম উদাহরণ:
(আরবী**********)
অতপর তাদেরকে এবং পথভ্রণ্টতের (অর্থাৎ মূর্তি এবং মূর্তিপূজকদের অধোমুকি করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং ইবলিস বাহিনীর সকলকেও। ( সূরা আশ-শুআরা: ৯৪-৯৫)
এ আয়াতে (****) শব্দটি জাহান্নামে পতিত হওয়ার যে আওয়াজ তার প্রতিনিধিত্ব করছে।
উল্লেখ্য যে, আয়াত দুটোতে (***) এবং ((***) শব্দদ্বয়ের আক্ষরিক অর্থই গোটা ছবিটিকে চোখের সামনে উদ্ভাসিত করে তোলে। কথা এটি নয় যে, কুরআনের বিশেষ ব্যবহারে তার মধ্যে এ ধরনের ধারণা সৃষ্টি হয়। প্রকৃতপক্ষে এই মাত্র যে শব্দগুলো স্মরণ করা হলো তা কুরআনের বিশেষ এক প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে এবং একবার মাত্র তা বর্ণিত হয়েছে। অবশ্যই একথা বলা যায় যে, উল্লেখিত শ্বদ্বয় যে স্থানে প্রয়োগ করা হয়েছে নিঃসন্দেহে তা আলংকরিক বর্ণনাসমূহের মধ্যে উৎকৃষ্ট বর্ণনা হিসেবে গণ্য।
কুরআনে কারীমে কিয়ামতের বিশেষণমূলক যে কটি প্রতিশব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তার মধ্যে (****) (বধিরকারিণী) এবং (***) (সকল কিচুর ওপর বিস্তার লাভকারী) শব্দ দুটোও আছে। (***) শব্দের মধ্যে এমন পরিমাণে গর্জন ও কাঠিন্য পাওয়া যায়, শব্দটি শোনামাত্র মনে হয়, সে গর্জনে কান ফেটে যাবে। এ শব্দটি বাতাস ভেত করে কর্ণকুহরে গিয়ে আঘাত করে এবং বধির করে দেয়। তেমনিভাবে (****) শব্দটিও মনে হয় তীব্রবেগে চলমান। এটি ঝড়েরর গতিতে সকল কিছুতে ছেয়ে যাচ্ছে এবং সেগুলোকে গ্রাস করে ফেলছে। এ রকম আরেকটি আয়াত:
(আরবী**********) সকাল বেলার শপথ, যখন সে শ্বাস গ্রহণ করে (অর্থাৎ উদ্ভাসিত হয়) । (সূরা তাকবীর: ১৮)
আমি (***)-এর মতো সূক্ষ্ম ও মনোরম শব্দ চয়ন দেখে এবং এর বিকল্প প্রতিশব্দের কথা চিন্তা করে ‘থ’ খেয়ে গেলাম। আপনিও কুরআনের অলৌকিকত্ব সম্পর্কে অবাক হয়ে যাবেন এবং একথা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, সঠিক জায়গায় সঠিক শব্দটি নির্বাচনে আল-কুরআনের সৌন্দর্য ও অলৌকিকত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যত্র বলা হয়েছে:
(আরবী**********)
যখন তিনি তোমাদের প্রশান্তির জন্য নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর নিদ্রার চাদর বিছিয়ে দিলেন। (সূরা আল-আনফাল: ১১)
এ আয়অতে নিদ্রাকে (****) (তন্দ্রাবেশ) শব্দ দিয়ে প্রচণ্ড প্রভাবের কথা বুঝানো হয়েছে। মনে হয় নিদ্রা এক ধরনের পাতলা ও সূক্ষ্ম চাদর যা খুব আরাম ও মসৃণতার সাথে ঢেকে দেয়। (***) শব্দ থেকে মনে হয় গোটা পৃথিবীব্যাপী প্রশান্তি ও নিরাপত্তা ছেয়ে আছে।
শব্দ ও উচ্চারণ থেকে চিত্রায়ণ আমরা আল-কুরআনের সর্বশেষ সূরা- সূরা আন- নাসেও দেখতে পাই। চিন্তা করে দেখুন:ঢ়
(আরবী**********)
বলে দাও, আমি মানুষের প্রতিপালকের নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। (আশ্রয় চাচ্ছি) লোকদের প্রকৃত বাদশাহরে নিকট। মানুষের ইলাহ্র নিকট। শয়তানের খারাপ ওয়াসওয়াসা থেকে (যে আল্লাহর নাম শুনে ভেগে যায়), যে লোকদের অন্তরে কুমন্ত্রণা সৃষ্টি করে। চাই সে মানুষের থেকে হোক কিংবা জ্বিনদের মধ্য থেকে। (সূরা আন-নাস: ১-৬)
এ সূলাটিকে বার বার পড়ুন এবং দেখুন আপনার আওয়াজ একটি পরিপূরণ ওয়াসওয়াসার সৃষ্টি করবে যা অবিকল সূরায় বর্ণিত ওয়াসওয়াসার মতো। বিশেষ করে নিম্নোক্ত আয়াত পাঠে সৃষ্টি হয়।
(আরবী**********)
আরেকটি উদাহরণ লক্ষ্য করুন। ইরশাদ হচ্ছে:
(আরবী**********)
কতো কঠিন তাদের মুখের কথা, তারা যা বলে তাতো সবই মিথ্যে। (সূরা কাহাফ: ৫)
এ আয়াতটিও আলোচ্য বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখে। তবে সামান্য পার্থক্য আছে। এ আয়াতে একটি দোষের কথা বলা হয়েছে যে, আল্লাহর সন্তান আছে। এ আয়াতে সম্ভাব্য সকল পন্থায় এ চরম মিথ্যে কথাটিকে খণ্ডন করা হয়েছে। যেমন প্রথমে (***) কথাটি বলে কর্তকে গোপন রাখা হয়েছে। আবার (***) শব্দটি তমীয ও নাকারা (অনির্দিষ্ট) হিসেবে নিয়ে জঘণ্যতার মাত্রাধিক্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর (***) বলে বুঝান হয়েছে, কথাগুলো মুখ থেকে অনিচ্ছাকৃত এবং অজ্ঞতা প্রসূত বের হয়েছে। (****)এর মাধ্যমে যে ঘৃণা ও নীচতা সৃষ্টি হয় তাকে বলবৎ রাখা হয়েছে। এ শব্দটি উচ্চারণের সময় মুখকে সামান্য ফাঁক করা হয় কিন্তু শেষ মীম (**) টি উচ্চারণের সাথে সাথে তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। অথচ তখনও কণ্ঠনালী থেকে বাতাস বেরিয়ে মুখ ভর্তি থাকে।
এক ধরনের শব্দ আছে, যা বিষয়বস্তুর প্রতিনিধিত্ব করে ঠিকই কিন্তু নিজের বক্তব্য ও আওয়াজকে কানে প্রবেশ করিয়ে নয়। তার চিত্রের পরিধি শুধুমাত্র ঐ ছায়ার মতো যা চিন্তার জগতে সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য যে, শব্দ এবং বাকের নিজস্বএক ছায়া বা প্রতিবিম্ব থাকে, যখন মানুষের দৃষ্টি পড়ে তখন তা দৃষ্টিগোচর হয়। এর উদাহরণ হচ্ছে নিচের এ আয়াতটি:
(আরবী**********)
তাদেরকে ঐ ব্যক্তির অবস্থা শুনিয়ে দাও যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। (সূরা আরাফ: ১৭৫)
এ আয়াতে ‘ফানসালাখা’ (***) শব্দটি দ্বারা অনুমিত হয়, ঐ ব্যক্তিকে যে নিদর্শন দেয়া হয়েছিল সে তা থেকে কিভাবে বেরিয়ে গেছে। নিচের আয়াতটিও আরেকটি উত্তম উদাহরণ: (আরবী**********)
অতপর তিনি প্রভাতে শঞরে ভীত শংকিত অবস্থায় প্রবেশ করলেন। (সূরা কিসাস: ১৮)
এ আয়াতে (***) শব্দে হযরত মূসা (আ)-এর ভীত ও শংকিত হবার চিত্র প্রস্ফুটিত হয়েছে। সাথে সাথে একথাও সামনে রাখতে হবে যে, হযরত মূসা (আ) ভয়ের প্রকাশ স্থল ‘ফিল মাদীনাতি’ (***) অর্থা শহরকে মনে করেছেন যা সাধারণ শান্তি ও নিরাপত্তার হয়ে থাকে। যদিও ‘ইয়াত্তারাক্কাবু’ ((*****) ঐ সমস্ত জায়গাকেই বলা হয় যেখানে ভয়-ভীতি লুকিয়ে থাকে। কিন্তু এখানে শান্তি নিরাপত্তার জায়গাকে ভীতিকর চিত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আমরা ইতোপূর্বে ‘কল্পনা ও রূপায়ণ’ অধ্যায়ে এ ধরনের উদাহরণ পেশ করেছি, সেগুলোও এর সাথে পূর্ণ সঙ্গতি রাখে।
কখনো কখনো একই শব্দে আওয়াজ এবং প্রভাব একত্রিত হয়ে থাকে। যেমন:
(আরবী**********) যেদিন তাদেরকে জাহান্নামের আগুনের দিকে ধাক্কিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। (সূরা আত-তুর: ১৩)
এ আয়াতে (***) শব্দটি আওয়াজ ও প্রভাবের সাথে সাথে তার তাৎপর্যের চিত্র সৃষ্টি করে। এখানে চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে (***) শব্দের অর্থ জোরের সাথে ধাক্কা দেয়া। যখন খুব জোরে কাউকে ধাক্কা দেয়া হয় তখন তার মুখ থেকে তার অজানে ্ত (***) (ওহ্) শব্দটি বেরিয়ে যায়। এ শব্দটি (***) শব্দের সাথে অত্যন্ত সামঞ্জস্যশীল। নিচের আয়াতটিও লক্ষ্য করুন:
(আরবী**********) একে ধরো এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে। (সূরা দুখান: ৪৭)
এ আয়অতে (****) শব্দটির আওয়াজ কানে প্রবেশ করা মাত্র ভাবজগতে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং একটি জীবন্ত ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠে।
এ অধ্যায়ে আমরা সেইসব শব্দের উল্লেখ করতে পারি, যে সম্পর্কে আমরা বলেছিলাম, আওয়াজটাই তার আক্ষরিক অর্থের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেমন (****) (তন্দ্রা), (***) (শ্বাস গ্রহণ করা), (****) (কিয়ামত)। এসব শব্দ আওয়াজের সাথে সাথে একটি ছায়াও সৃষ্টি করে। কিন্তু এর আওয়াজ ও ছায়ার মধ্যে যে সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান তার সীমা নির্ধারণ অত্যন্ত কঠিন কাজ। যখন শব্দ তার অর্থ ও ভাবের ছবি অংকন করে তার ধ্বনি ও ভাব একত্রিত হয়ে যায়। তা শুধু অর্থগত দিকে নয় বরং চিন্তা ও চিত্রের দিকেও ধাবিত হয়। আর ঐ জায়গাটিই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্যস্থল।
[৫.৩] আল-কুরআন তার বক্তব্য তুলে ধরার জন্য দৃশ্যায়নের যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে তার মধ্যে তাকাবুল বা বৈপরিত্যও একটি। কুরআন যেখানে শব্দের মাধ্যমে সূক্ষ্ম চিত্র অংকন করতে চায় সেখানে অধিকাংশ সময় তাকাবুল পদ্ধতির অনুসরণ করে থাকে। যেমন :
(আরবী**********)
তার এক নিদর্শন আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব প্রাণী ছড়িযে দিয়েছেন। তিনি তখন ইচ্ছে এগুলোকে একত্রিত করতে সক্ষম। (সূরা আশ শুরা: ২৯)
এ আয়াতে (***) (বিক্ষিপ্ত) এবং (***) (একত্রিত করা) শব্দদ্বয় তাকাবুল বা বৈপরিত্যের। বিপরীতমুখী এ শব্দ দুটোকে একই আয়অতে একত্রে প্রয়োগ ঘটিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ছবি আঁকা হয়েছে। যা চিন্তার জগতে একের পর এক ছবির মতো আবির্ভূত হয়। যদিও শব্দ দুটো বিপরীতার্থক তবু তা সুন্দরভাবে মিলে গেছে।
নিচের আয়াতটিতে জীবন ও মৃত্যু বিপরীতধর্মী দুটো চিত্রকে একত্রিত দেয়া হয়েছে।
(আরবী**********)
এতে কি তাদের চোখ খুলেনি, আমি তাদের পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, যাদের বাড়ি-ঘরে এরা বিচরণ করে। অবশ্যই এতে নিদর্শনাবলী রয়েছে। তারা কি শোনে না? তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি উষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত করে শস্য উৎপন্ন করি। যা তারা এবং তাদের পশুগুলো খেয়ে থাকে। তারা কেন এ ব্যাপারটি লক্ষ্য করে না? (সূরা সাজদা: ২৬-২৭)
দেখুন, এ আয়াতে জীবন মৃত্যুর মধ্যে কতো পার্থক্য। প্রথমে ঐ সমস্ত লোকের কথা বলা হয়েছে যার একদিন জমিনের ওপর চলাফেলা করতো। আজ তারা মৃত, তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তাদের আবাসভূমি বিরাণ। আবর পলকের মধ্যে অন্য রকম এক চিত্রের অবতারণা। মৃত জমিনকে সবুজ-শ্যামল করে সুশোভিত করার চিত্র। এখানে তাকাবুল বা বৈপরিত্ব মূলত এক অবস্থার সাথে আরেক অবস্থার মধ্যে নয় বরং জীবন ও মৃত্যুর সাথে।
এ ধরনের ‘তাকাবুল’ (বৈপরিত্য)-এর চিত্র পরকালীন জীবনের শান্তি ও শাস্তি প্রসঙ্গে যেসব জায়গায় বলা হয়েছে সেখানে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এ ধরনের কতিপয় উদাহরণ আমরা নিচে বর্ণনা করলাম।
(আরবী**********)
এটি অনুচিত। যখন পৃথিবী চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে এবং তোমার প্রতিপালক আবির্ভূত হবেন। ফেরেশতাগণ কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িযে যাবে এবং জাহান্নামকে উপস্থিত করা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে। কিন্তু এ স্মরণ তার কী কাজে আসবে? সে বলবে : হায় আমিযদি এ জীবনের জন্য আগেই কিছু পাঠিয়ে দিতাম। সেদিন তার শাস্তির মতো শাস্তি কেউ দেবে না এবং সে বাঁধনের মতো বাঁধনও কেউ দেবে না। (সূরা ফজর: ৩০)
এমন বিভিষিকাময় অবস্থায়ও একজন মু’মিনকে দরদ ও স্নেহমাখা বাক্যে আহ্বান করা হবে- ‘হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমার রব্ব-এর দিকে ফিরে যাও।’ আর এ ফিরে যাওয়ার মধ্যে ঐ বান্দা এবঙ প্রতিপালকের সাথে গভীর ভালবাসা ও সন্তোষের প্রমাণ পাওয়া যায়। (***) অর্থাৎ উভয়ে উভয়ের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শন। এসব শব্দে প্রেম-ভালবাসার যে নিদর্শন পাওয়া যায় মনে হয় পুরো পরিবেশটাই প্রীতিডোরে বাধা। তারপর বলা হয়েছে: (আরবী**********) আমার বিশেষ বান্দাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করো এবং তাদের তাদের সাথে হৃদ্যতা সৃষ্টি করো। (আরবী**********) তারপর আমার জান্নাতে প্রবেশ করো। জাহান্নামের বর্ণনা পুরো পরিবেশটিকে ভয় ও পেরেশানীর এক চিত্রে ঘিরে রেখেছিল। এখানে তার সম্পূর্ণ বিপরীত এক চিত্র পাওয়া যায়। যা প্রেম-প্রীতিতে পরিপূর্ণ।
ওপরের উদাহরণটি ছিল কাফির ও মু’মিনের মধ্যে বিপরীতধর্মী এক চিত্র। একন আমি জাহান্নামীদের আযাব ও জান্নাতীদের নিয়ামতের বিপরীতধর্মী এক চিত্র পেশ করছি।
(আরবী**********)
তোমার কাছে আচ্ছন্নকারী কিয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? অনেক মুখমণ্ডলণ সেদিন হবে লাঞ্ছিত, ক্লিষ্ট-ক্লান্ত। তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে। তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে, আর কাঁটাযুক্ত ঝাড় ছাড়া তাদের জন্য কোন খাদ্য নেই। এতে তাদের দেহের পুষ্টি সাধন কিংবা ক্ষুধা নিবারণ হবে না। আবার অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে সজীব। তাদের কর্মের কারণে সন্তুষ্ট। তারা থাকবে সুউচ্চ জান্নাতে। সেখানে কোন অসার কথাবার্তা তারা শুনবে না। সেথায় থাকবে প্রবাহিত ঝর্ণা, উন্নত সুসজ্জিত আসন এবঙ সংরক্ষিত পানপাত্র ও সারি সারি গালিচা এবং বিস্তৃত বিছানো কার্পেট।
আযাব ও নিয়ামতের বিপরীতধর্মী একটি সুন্দর চিত্র পূর্বের আয়াত কটি। এ ধরনের উদাহরণ আল-কুরআনে অনেক।
[৫.৪] ওপরর উদাহরণগুলো ছিল দু’টো বিপরীতধর্মী চিত্র। কিন্তু এবার আমরা এমন কিছু উদাহরণ পেশ করবো যা বিপরীতধর্মী বটে কিন্তু তার একটি অতীতের এবং অপরটি বর্তমানকালের। অতীতকে কল্পনায় বর্তমানে নিয়ে এসে দুটো অবস্থার বিপরীতধর্মী ছবি আঁকা হয়েছে। যেমন:
(আরবী**********)
তিনি মানুষকে এক ফোটা বীর্য দিয়ে সৃষ্টি করেচেন। তা সত্ত্বেও সে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী। (সূরা আন-নাহল: ৪)
যে অবস্থা বর্তমানে আমাদের সামনে উপস্থিত তা একজন প্রকাশ্য ঝগড়াটে (****) ব্যক্তির, কিন্তু অতীতে সে ছিল সামান্য এক ফোটা বীর্য মাত্র। এ দু’ অবস্থার মধ্যে যে ব্যাপক ব্যবধান তাই এখানে বুঝান উদ্দেশ্য। এজন্র দুটো অবস্থার মধ্যবর্তী অবস্থাকে উহ্য রাখা হয়েছে। যেমন একথা প্রকাশ করা যায় যে, মানুষের শুরু যদি এই হয়ে থাকে, তাহলে তার ঝগড়া করা সাজে না। অনুরূপ আরেকটি উদাহরণ:
(আরবী**********)
বিত্তবৈভবের অধিকারী মিথ্যারোপকারীদেরকে আমার হাতে ছেড়ে দাও এবং তাদেরকে কিছু অবকাশ দাও। নিশ্চয়ই আমার কাছে আছে শিকল, অগ্নিকুণ্ড, গলগ্রহ হয়ে যায় এমন খাদ্য এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা মুজাম্মিল: ১১-১৩)
এখানেও দুটো অবস্থার মধ্যে বৈপরীত্য দেখা যায়। এক অবস্থাতো বর্তমানে উপস্থিত অর্থাৎ বিত্তবৈভবের অহংকার। আরেক অবস্থা বর্তমান অনুপস্থিত শুধু কল্পনার রাজ্যে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই। এ উদাহরণ থেকে শৈল্পিক ও দ্বীনি গুরুত্বই প্রকাশ পাচ্ছে। নিচের আয়াতগুলো লক্ষ্য করুন:
(আরবী**********)
পশ্চাতে ও সম্মুখে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ; যে ধন-সম্পদ সঞ্চয় করে এবং গুণে গুণে হিসেব রাখে। সে মনে করে, তার সম্পদ চিরকাল তার সাথে থাকবে। কক্ষণ নয়্ সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে ‘হুতামায়’। তুমি কি জান, ‘হুতামাহ’ কি? তা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন, যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছুবে। এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে, লম্বালম্বি খুঁটিতে। (সূরা হুমাজাহ: ১-৯)
এ সূরাটিতে বিপরীতধর্মী দুটো অবস্থার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। একটি দুনিয়ার অবস্থা এবং অপরটি আখিরাতের। কিছু দাম্ভিক ও অহংকারী আছে যারা দুনিয়ার বিত্ত বেসাতে মত্ত হয়ে আখিরাতকে ভুলে গেছে এবং দুনিয়ার রঙ-তামাশায় লিপ্ত আছে। কিন্তু তাদের এ চলার পথের অপর প্রান্তে অপেক্ষা করছে জাহান্নাম। এমন জাহান্নাম যা সবকিছুকে পিষ্ট করে দেয় এবং তার আগুন হৃদয় পর্যন্ত স্পর্শ করে। ঐ হৃদয় যা আজ অহংকার ও দাম্ভিকতায় উন্মাতাল। তাদেরক সেখানে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখা হবে, যেখান থেকে তারা স্বেচ্ছায় বেরিয়ে আসতে পারবে না কিংবা অন্য কেউ বের করে আনতেও সক্ষম হবে না।
নিচের আয়াতে বলা হয়েছে:
(আরবী*********)
বামপন্থী লোক, (হায়!) বামপন্থী লোকেরা কী আযাবে থাকবে। তারা থাকবে প্রখর বাষ্প ও উত্তপ্ত পানিতে এবং ধুম্রকুঞ্জের ছায়ায়। যা শীতল নয় এবং আরামদায়কও নয়। তারা ইতোপূর্বে স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল। (সূরা আল-ওয়াকিয়া: ৪১-৪৫)
এখানে দুটো অবস্থাকে মুখোমুখি পেশ করা হয়েছে। এক অবস্থা হচ্ছে জাহান্নামীদের বর্তমান অবস্থা অর্থাৎ গরম বাষ্প, গরম পানি, ধুয়ার ছায়া যা শুধু নামেমাত্র ছায়া। এ কঠিন অবস্থাকে তাদের পূর্বের অবস্থার (অর্থাৎ সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের) সাথে মুখোমুখি করে পেশ করা হয়েছে।
ওপরে বর্ণিত অবস্থা এবং তার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য অবস্থার মধ্যে এক সূক্ষ্ম চিন্তার ব্যাপার আছে। এ আয়াতে যেসব লোকের কথা বলা হচ্ছে তারা রীতিমতো জীবিত এবং দুনিয়ায় বিচরণত। দুনিয়ার সমস্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য তাদের করায়ত্ব্ এ অবস্থাটি বর্তমানে বিদ্যমান। আখিরাতে তাদের জন্য য দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে তা পরের কথা। কিন্তু সেই পরের অবস্থাকে কুরআন বর্তমান অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে। পাঠক মনে করেন দুনিয়ার লেনদেন চুকিয়ে ঐ অবস্থায় তারা ইতোমধ্যেই প্রবেশ করেছে, যে অবস্থা তাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। তাদের পেছনের সমস্ত সুখ-সম্ভোগ শেষ হয়ে গেছে। তারা তীব্র আযাবের সম্মুখীন। এমতাবস্থায় তাদের পেছনের কথা, সেই সুখের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে।
মনে হতে পারে, এটি আশ্চরয ধরনের চিন্তা-ভাবনা। কিন্তু তাতে কি? কুরআন বহু জায়গায় এ ধরনর স্টাইলে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে। কুরআনের এ বর্ণনা শৈল্পিক এবং দ্বীনি দুটোরই আবেদন রাখে। শিল্পের অনুসন্ধানী মনে করে- এ শুধু উপমা উৎক্ষেপণ নয় বরং এটি অনুভব ও বোধের সীমানা ছাড়িযে চোখের সামনেই সংঘটিত একটি ঘটনা, যা ঘটে চলছে।
দ্বীনি অনুসন্ধানীদের অনুভূতি হচ্ছে জাহান্নামে সংঘটিতব্য ঘটনাবলীর ওপর এমন দৃঢ় বিশ্বাস (ইয়াকীন) করা উচিত, যেন তা এখনই সংঘটিত হচ্ছে। তার সম্পর্ক উপলব্ধির সাথে। আর এ দৃঢ় বিশ্বাস মানুষকে ঈমানের দাওয়াত কবুল করার জন্য প্রস্তুত করে।
নিচের আয়াতটিও ওপরের উদাহরণের সাথে সম্পর্ক রাখে।
(আরবী*********)
একে ধরো এবং টেনে জাহান্নামে নিয়ে যাও। তারপর তার মাথার ওপর ফুটন্ত পানির আযাব ঢেলে যাওদ। (এখন) মজা বুঝ। তুমিতো সম্মানত সম্ভ্রানত। (সূরা আদ-দুখান: ৪৭-৪৯)
নিচের আয়াতটিও বিপরীত ধর্মী এক চিত্র পেশ করে:
(আরবী*********)
কখনো না, যখন প্রাণ কণ্ঠাগত হবে এবং বলা হবে, কে ঝাড়-ফুঁক করবে? আর সে মনে করবে, বিদায়ের মুহূর্তটি এসে গেছে এবং পায়ের গোছা অপর গোছার সাথে জড়িয়ে যাবে। সেদিন তোমার রব্ব-এর কাছে সবকিছু উপস্থিত করা হবে। সে বিশ্বাস করেনি এবঙ নামায পড়েনি। পড়ন্তু মিথ্যা মনে করেছে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। তারপর সে দম্ভভরে পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে গেছে। (সূরা কিয়ামাহ: ২৬-৩৩)
উক্ত আয়াতগুলোতে দুটো অবস্থার বিপরীতধর্মী চিত্র উল্লেখ করা হয়েছে। এক, অতীতে যা অতিবাহিত হয়েছে। মন হয় যেন, গোটা সৃষ্টি জগৎ তার সমস্ত সৌন্দর্য হারিয়ে ম্রিয়মান হয়ে গেছে। এমন একটি সময় ছিল- যখন মৃত ব্যক্তি নামায আদায় করেনি, কুরআনের সত্যতা মেনে নেয়নি। এক অবস্থা (অর্থাৎ মৃত্যুর সময়) চোখের সামনে উপস্থিত। আর সে নির্বিকার। মৃত্যুর সময় উপস্থিত, ভয়ে এতোটা বিহ্বল যে, দু’ পা ঠক্ঠক করে কাঁপছে। আত্মা গলা পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে্ প্রশ্নকারী প্রশ্ন করছে, কোন ঝাড় ফুঁককারী নেই? যে এ বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। যেভাবে জ্বিন-প্রেতের আসর থেকে মুক্তির জন্য ঝাড়-ফুঁকের আশ্রয় গ্রহণ করা হয়।
মুমূর্ষ ব্যক্তি মনে করে, আজ আমার পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হবার দিন। বিগত দিনের স্মৃতি তার হৃদয়পটে ভেসে উঠে। নবী করীম (স)-এর দাওয়াত থেকে দাম্ভিকতার সাথে মুখ ফিরিয়ে নিজের পরিজনের কাছে চলে আসা, তাঁর দাওয়াতকে মিথ্যে মনে করা। দুটো ছবিই তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। কিন্তু তাতে কোন কল্যাণ হবে না। কারণ পা তো একটির সাথে আরেকটি পেঁচিয়ে রয়েছে। এখন আর সময় নেই। এখন তো রব্ব-এর দিকে প্রত্যাবর্তনের জন্য যাত্রা।