অতঃপর এসব ক্ষমতাসীন লোকেরা কতটুকু ভাঙ্গে এবং কতটুকু গড়ে -সেদিকে তিনি তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ভাঙ্গার চেয়ে গড়তে থাকে বেশী এবং তাদের চেয়ে বেশী গড়ে কম ভাঙ্গে -এমন কেউ কর্মক্ষেত্রে থাকে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ তাদের সমস্ত দোষ-ত্রুটি সত্ত্বেও দুনিয়া পরিচালনার ক্ষমতা তাদের হাতেই রাখেন। কিন্তু যখন তারা গড়ে কম এবং ভাঙ্গে বেশী, তখন আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমতাচু্যত করে অন্য লোকদেরকে ঐ একই শর্তে ক্ষমতা দিয়ে থাকেন।
এটা একটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আইন। আপনাদের বিচার বুদ্ধিও প্রমাণ করবে যে, আইনটি এমনই হওয়া উচিত। যদি আপনাদের কারোর একটি বাগান থাকে এবং তিনি একজন মালীকে তার রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত করেন, তাহলে আপনি নিজেই বলুন, তিনি ঐ মালীর নিকট সর্বাগ্রে কি আশা করতে পারেন? তিনি অবশ্যি নিজের বাগানের ক্রমোন্নতি চাইবেন। তার শ্রীবৃদ্ধি ও উন্নতি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, শোভা-সৌন্দর্য এবং উৎপাদন বৃদ্ধিই হবে তার কাম্য। যে মালীকে তিনি দেখবেন অত্যন্ত প্ররিশ্রম, যোগ্যতা ও মনোযোগ সহকারে সুনিপুণভাবে বাগানের সেবা যত্ন করছে, বাগানের সাজসজ্জার দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখছে, তার চেষ্টা ও যত্নে ভাল দরকারী গাছগুলো বেশ সতেজ ও সুন্দর হচ্ছে, সে আগাছা, আবর্জনা ও বন-জঙ্গল পরিষ্কার করছে তার সুরুচি ও শিল্প শক্তি দিয়ে উৎকৃষ্ট ও নতুন ফল-মূল এবং ফুলের উৎপাদন বৃদ্ধি করছে- তার উপর তিনি অবশ্যই সন্তুষ্ট হবেন। তিনি তাকে ভালবাসবেন এবং উচ্চ মর্যাদা দেবেন। এমন উপযুক্ত, কর্তব্যপরায়ণ, পরিশ্রমী, অনুগত ও সুযোগ্য মালীকে তাড়িয়ে দেয়া তিনি কোন দিনই পছন্দ করবেন না। কিন্তু এ না হয়ে যদি ঠিক এর উল্টোঁাই হয় অর্থাৎ, যদি তিনি দেখেন যে, মালী অযোগ্য-অপদার্থ, আলসে ও ফাঁকিবাজ, সে সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে বাগানের ক্ষতি করছে, গোটা বাগানটা আবর্জনা ও বন-জঙ্গলে ভরে গিয়েছে, গাছের পাতা ও ডালগুলো ভেঙে পড়েছে, কোথাও বিনা প্রয়োজনে পানি বয়ে যাচ্ছে, আবার কোথাও পানির অভাবে মাটি ও গাছপালা সব শুকিয়ে যাচ্ছে, ঘাস, আগাছা, বনজঙ্গল ও আবর্জনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, ফুল ও ফলবান গাছগুলোকে অকাতরে কেটে কেটে ফেলে দেয়া হচ্ছে, ভাল ভাল গাছগুলো মরে গিয়ে আগাছায় বাগান ভরে যাচ্ছে, তাহলে বলুন, বাগানের মালিক এমনতর মালীকে কি করে পছন্দ করতে পারে? কোন সুপারিশ, কাকুতি-মিনতি, সবিনয় নিবেদন ও প্রার্থনা এবং উত্তরাধিকার ও মনগড়া অধিকারের দরুন মালিক তার বাগানের দায়িত্বভার এমন অযোগ্য মালীর উপরই ন্যস্ত রাখবে? বড় জোর এতটুকু হতে পারে যে, সে মালীকে শাসিয়ে দিয়ে আর একবার তাকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেবে। কিন্তু যে মালীর কোন শাসনেই চৈতন্য হয় না এবং ক্রমাগত বাগানের ক্ষতিই করতে থাকে, তাকে কান ধরে বের করে দিয়ে অন্য কোনো ভাল মালী নিযুক্ত করা ছাড়া মালিকের পক্ষে এ সমস্যার আর কি সমাধান হতে পারে?
যদি নিজের সামান্য একটা বাগান পরিচালনার ব্যাপারেও আপনি অনুরূপ পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। তাহলে চিন্তা করে দেখুন যে, আল্লাহ্ তাঁর এতবড় ভূমন্ডলটা এত সব উপায়-উপকরণসহ মানুষের কর্তৃত্বাধীনে রেখে দুনিয়া ও তার সমস্ত বস্তুর উপর তাকে এত ক্ষমতা ও অধিকার দিয়েছেন, এক্ষেত্রে মানুষ তাঁর দুনিয়াকে সুন্দর করে গড়ে তুলছে, না ধ্বংস করছে, এ বিষয়টা তিনি কি করে উপেক্ষা করতে পারেন? আপনি যদি তাঁর দুনিয়াকে সুন্দর করে গড়তে থাকেন তবুও তিনি আপনাকে ক্ষমতা থেকে অযথা সরিয়ে দেবেন- এমনতর হওয়ার কোন কারণ নেই। কিন্তু যদি আপনি গঠনমূলক কোন কিছু না করেন এবং আল্লাহর এ বিরাট বাগানখানাকে একেবারে উজাড় ধ্বংস করতেই থাকেন তাহলে আপনার দাবীকে নিজের বুদ্ধি-বিবেক অনুযায়ী যতই জোরদার মনে করুন না কেন তিনি তাঁর বাগানে আপনার কোন অধিকারই স্বীকার করবেন না। প্রথমে তিনি আপনাকে শাসিয়ে হুঁশিয়ার করে দেবেন এবং সংশোধনের দু’চারটে সুযোগ দেবেন। পরিশেষে আপানাকে পরিচালকের মর্যাদা থেকে পদচু্যত করেই ছাড়বেন।
এ ব্যাপারে একটা বাগানের মালিকের দৃষ্টিকোণ ও মালীর দৃষ্টিকোণ যেমন বিভিন্ন তেমনি আল্লাহর দৃষ্টিকোণ ও মানুষের দৃষ্টিকোণের মধ্যেও বিভিন্নতা রয়েছে। ধরুন, মালীদের এক পরিবার বংশানুক্রমে একজন লোকের বাগানে কাজ করে আসছে। তাদের পূর্ব পুরুষের কাউকে হয়তো তার যোগ্যতা ও জ্ঞান বুদ্ধির দরুন বাগানে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তার সন্তান-সন্ততিও বাগানের কাজ সুন্দরভাবে করেছিল, তাই বাগানের মালিক চিন্তাকরে দেখলো যে, অযথা এদেরেকে সরিয়ে অন্য মালী নিযুক্ত করার কি দরকার? এরা ও যখন ভালভাবেই কাজ করছে, তখন এদের অধিকার অন্যের চেয়ে বেশী। এভাবে মালীদের এই বংশ স্থায়ীভাবে বাগানে কাজ করতে লাগলো। কিন্তু কিছু কাল পরে এই বংশের মালীরা একেবারে অযোগ্য, অপদার্থ, ফাঁকিবাজ, আলসে, কুঁড়ে ও অবাধ্য হয়ে পড়ল। বাগান পরিচালনার কোন যোগ্যতাই তাদের রইল না। এখন তারা গোটা বাগানটার সর্বনাশ করতে শুরু করেছে, তবুও তদের দাবী এই যে তারা তাদের বাপদাদার আমল থেকে পুরুষানুক্রমে এ বাগানে বাস করে আসছে, তাদের পূর্ব পুরুষদের কারুর দ্বারা এ বাগান গড়ে উঠেছিল, কাজেই এতে তাদের জন্মগত অধিকার রয়েছে এবং তাদেরকে সরিয়ে অন্য কাউকে এ বাগানের পরিচালনার জন্য মালী নিযুক্ত করা কোনক্রমেই সংগত হতে পারে না। এটিই ঐ অযোগ্য ও অপদার্থ মালীদের দৃষ্টিকোণ। কিন্তু বাগানের মালিকের দৃষ্টিকোণও কি অনুরূপ হতে পারে? সে কি একথাই বলবে না_ আমার কাছে তো বাগানের সুন্দর ও সুষ্ঠ পরিচালনাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আমি তো মালীদের কোন পূর্ব পুরুষের জন্য এ বাগান করিনি। বরং তাদের পূর্ব পুরুষের কাউকে আমার বাগানের কাজের জন্য চাকর রেখেছিলাম। বাগানে তাদের যা কিছু অধিকার আছে তা যোগ্যতা ও কাজের শর্তাধীন। তারা বাগানকে ঠিকমত গড়ে তুললে তাদের সমস্ত অধিকার বিবেচনা করা হবে। নিজের পুরানো মালীদের সংগে আমার এমন কি শক্রতা থাকতে পারে যে, তারা ভালভাবে কাজ করলেও আমি অযথা তাদেরকে তাড়িয়ে অন্য মালীদেরকে নিযুক্ত করবো? কিন্তু যে বাগানের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য তোমাদেরকে নিযুক্ত করা হয়েছিল সেটিকেই যদি তোমরা নষ্ট ও উজাড় করে ফেল, তাহলে তোমাদের কোন অধিকারই আমি স্বীকার করবো না। অন্য যারা এ কাজ ঠিকমত করতে চায় আমি তাদেরকে বাগান পরিচালনার দায়িত্ব ও ক্ষমতা দান করবো এবং তাদের অধীনে তোমাদের চাকুরি করতে হবে। এতেও যদি তোমরা ঠিক না হও এবং অধীনস্ত হিসেবেও যদি তোমরা অকেজো প্রমাণিত হও; বরং শুধু নষ্ট করতেই থাক, তাহলে আমি তোমাদেরকে এ বাগান থেকে তাড়িয়ে দিয়ে অন্য মালীদেরকে এখানে নিযুক্ত করবো।
দৃষ্টিকোণের এই পার্থক্য যেমন একটা বাগানের মালিক ও মালীর মধ্যে রয়েছে, তেমনি রয়েছে দুনিয়ার মালিক ও দুনিয়াবাসীদের মধ্যেও। দুনিয়ার বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন জাতি তাদের আপন আপন এলাকাকে স্বদেশ ভূমি বলে দাবী করে। বংশানুক্রমে তারা এবং তাদের পূর্ব-পুরুষগণ সেখানে বসবাস করে আসছে। তাদের দেশের উপর তাদের কর্তৃত্ব করার জন্মগত অধিকার রয়েছে বলে তারা বিশ্বাস করে। কাজেই তাদের মতে দেশ পরিচালনার ক্ষমতা একমাত্র তাদেরই প্রাপ্য। বাইরের আর কারুর সেখানে কর্তৃত্ব করার কোন অধিকার নেই। এ হচ্ছে দুনিয়াবাসীদের দৃষ্টিকোণ। কিন্তু দুনিয়ার আসল মালিক আল্লাহর দৃষ্টকোণ এটা নয়। তিনি কখনো এ সব জাতীয় অধিকার স্বীকার করেননি। প্রত্যেক দেশের উপর তার অধিবাসীদের জন্মগত অধিকার রয়েছে এবং সে অধিকার থেকে তাদেরকে কোনক্রমেই বঞ্চিত করা চলবে না- এমন কোন কথা তিনি স্বীকার করেন না। তিনি তো দেখেন, কোন্ দেশে কোন্ জাতি কি কাজ করছে। যদি কোন জাতি তার দেশে গঠনমূলক কাজে লিপ্ত থাকে, তার সমস্ত শক্তিসামর্থ দুনিয়ার সংশোধন ও উন্নতির জন্য নিয়োগ করে থাকে, সব রকমের মন্দ কাজ প্রতিরোধ করে এবং ভাল কাজের ক্ষেত্র প্রশস্ত করতে ব্যস্ত থাকে, তাহলে দুনিয়ার মালিক বলেন, অবশ্য তোমরা দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার অধিকারী। তোমরা পূর্ব থেকেই এ দেশে বসবাস করে আসছো এবং দেশ পরিচালনারও যোগ্যতা রাখ। কাজেই অন্যান্য জাতির চেয়ে তোমাদের অধিকারই অগ্রগণ্য। কিন্তু যদি ব্যাপারটা উল্টো হয় অর্থাৎ, যদি গড়ার পরিবর্তে শুধু ভাঙ্গার কাজই হতে থাকে, সৎ কাজের বদলে দেশ জুড়ে কেবল অসৎ ও অবৈধ কাজই সংঘটিত হয় এবং আল্লাহ্ দুনিয়ায় যা সৃষ্টি করেছেন তাকে কোন ভাল কাজে না লাগিয়ে বেপরোয়া ভাবে নষ্ট করা হয়- এক কথায় দেশকে গড়ার বদলে ভেঙ্গে ফেলা হয়- তাহলে আল্লাহ্ এহেন জাতিকে প্রথমে কিছুটা হালকা এবং কিছুটা কঠিন আঘাত দেন, যাতে করে তারা সতর্ক হয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করতে পারে। এতেও যে জাতি ঠিক না হয়, তার কাছ থেকে দেশের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে অন্তত এর চেয়ে যোগ্যতর জাতিকে দেয়া হয়।
এখানেই শেষ নয়। যদি পূর্ববর্তী জাতির লোকেরা পরাধীন হওয়ার পরও কোন যোগ্যতা ও গুণবৈশিষ্ট্যের প্রমাণ না দেয় এবং কার্যকলাপের মাধ্যমে এ কথাই প্রমাণ করে যে, বিকৃতি করা ছাড়া তাদের দ্বারা আর কোন কাজই হবে না, তাহলে এহেন জাতিকে আল্লাহ্ নিশ্চিহ্ন করে দেন। তারপর তাদের স্থানে অন্য কোন জাতিকে আনেন। এ ব্যাপারে সব সময়ই মালিকের যে দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত, আল্লাহরও তাই হয়ে থাকে। তিনি তাঁর দুনিয়া পরিচালনার ক্ষেত্রে দাবীদার ও প্রার্থীদের উত্তরাধিকার অথবা জন্মগত অধিকার দেখেন না। তিনি দেখেন কার গড়ার যোগ্যতা বেশী এবং ভাঙ্গার দিকে ঝোঁক প্রবনতা কম রয়েছে। একই সময়ের প্রার্থীদের মধ্যে যারা এ দিক দিয়ে যোগ্যতর বলে প্রমাণিত হয়, তাদেরকেই দেশ পরিচালনার জন্য নির্বাচন করা হয়। যতদিন এদের ধ্বংসাত্মক কাজের চেয়ে গঠনমূলক কাজ বেশী হতে থাকে অথবা এদের তুলনায় বেশী ভাল করে গঠনমূলক কাজ করে এবং ধ্বংসাত্মক কাজও কম করে- এমন কেউ এগিয়ে না আসে- ততদিন দেশ পরিচালনার ক্ষমতা এদের হাতেই রাখা হয়।
এসব যা কিছু আমি বলছি, ইতিহাসে এর জ্বলন্ত প্রমাণ রয়েছে। আল্লাহ্ চিরকালই এ নীতি অনুযায়ী তাঁর দুনিয়া পরিচালনার ব্যবস্থা করছেন। দূর দেশের কথা না হয় ছেড়েই দিন। নিজেদের এ দেশের ইতিহাসটাই পর্যালোচনা করুন। এ দেশে যে সব জাতি প্রথমে বাস করতো, তাদের গঠনমূলক যোগ্যতা ও কর্ম ক্ষমতা যখন শেষ হয়ে গেল, তখন আল্লাহ্ আর্য জাতিকে এ দেশ পরিচালনার সুযোগ দিলেন। সে সময় অন্যান্য জাতি গুলোর মধ্যে যোগ্যতম ছিল আর্যজাতি। তারা এখানে এসে এক উন্নত তামাদ্দুন ও সভ্যতা গড়ে তুললো। বহু জ্ঞান ও শিল্প আবিস্কার করল। ভূগর্ভের গোপন সম্পদ উদ্ধার করে তাকে ভাল কাজে ব্যবহার করল। ধ্বংসাত্মক কাজের তুলনায় গঠনমূলক কাজই তারা বেশী করেছিল। এসব যোগ্যতা যতদিন পর্যন্ত তাদের মধ্যে ছিল ততদিন ইতিহাসের সমস্ত উত্থান-পতন সত্ত্বেও তারাই ছিল এদেশের পরিচালক। অন্যান্য জাতি ক্ষমতা দখলের জন্য বার বার এগিয়ে এসেছে কিন্তু তাদেরকে হটিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ, আর্যদের মতো যোগ্য জাতি ক্ষমতাসীন থাকা কালে অন্যকোন পরিচালকের প্রয়োজন ছিল না। আর্যরা যখন উচ্ছৃঙ্খল হয়ে বিপথে চলা শুরু করে, তখন তাদের উপর যেসব বৈদেশিক আক্রমন হয়, সেগুলোকে তাদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে সতর্ককারী দূত স্বরূপ বলা যায়। কিন্তু তারা সতর্ক না হয়ে ধ্বংসাত্মক কাজেই লিপ্ত থাকে। গঠনমূলক কাজের তুলনায় তারা ধ্বংসাত্মক কাজ করতে থাকে অনেক বেশী। তাদের নৈতিক অধঃপতন এমন চরমে পৌঁছে যে, বামমার্গ আন্দোলনে আজো তার চিহ্ন আপনারা সুস্পষ্ট প্রত্যক্ষ করতে পারেন। মানবতাকে বিভক্ত করে তারা নিজেদেরই সমাজকে বর্ণ ও গোত্রে খণ্ডিত করল। সমাজ জীবনকে একটি সিঁড়ির মতো করে গঠন করল। এ সিঁড়ির প্রত্যেক ধাপের লোকেরা তাদের উপরের ধাপের লোকদের বান্দা বা দাস এবং নীচু ধাপের লোকদের খোদা বনে বসল। তারা আল্লাহর লাখো লাখো বান্দার উপর নির্মম যুলুম নির্যাতন চালাতে লাগল। এ যুলুম আজো অচ্ছুত শ্রেণীর আকারে বিদ্যমান রয়েছে।
তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথ সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ করে দিল। তাদের পন্ডিত ও পুরোহিতরা সাপের মত জ্ঞান ভাণ্ডারের চারদিক বেষ্টন করে বসে রইল। তাদের উপরের তলার কর্তারা দেশের জনসাধারণের উপর নিজেদের বহু অন্যায় অধিকার চাপিয়ে দিল। এ অধিকার আদায় করা এবং আরাম কেদারায় বসে বসে অন্যের পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে বিলাসী জীবন যাপন করা ছাড়া তাদের আর কোন কাজ রইলো না। এহেন পরিস্থিতিতে আল্লাহ্ তাদের কাছ থেকে দেশ পরিচালনার ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে মধ্য এশিয়ার কতিপয় জাতিকে এখানে পরিচালনার সুযোগ দিলেন। এ জাতিগুলো সে সময় ইসলামী আন্দালনের সংস্পর্শে এসে জীবন যুদ্ধের উন্নততর যোগ্যতা অর্জন করেছিল।