শিকার
আরব ও দুনিয়ার অন্যান্য জাতিগুলোর বিপুল সংখ্যক লোকই শিকার কার্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন যাবন করছে। এ কারণে কুরআন ও সুন্নাতে এ বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ফিকাহ গ্রন্থ রচয়িতাগণ নিজ নিজ গ্রন্থে এজন্যে স্বতন্ত্র্য অধ্যায় রচনা করেছেন। তাঁরা এর মধ্যে কি হালাল ও কি হারাম, এ ক্ষেত্রে কি ওয়াজিব কি মুস্তহাব, তা বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। এভাবে বিস্তারিত বলার প্রয়োজনও ছিল। কেননা যে সব জন্তু বা পাখির গোশত পবিত্র ও উত্কষ্ট তার অনেক গুলোই এমন যে, তা মানুষের আওতাধীন থাকে না। তা ধরা ও কাবু করাও সহজসাধ্য নয়। কেননা সেগুলো মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত নয়। এ কারণে ইসলাম আয়ত্তাধীন জন্তু প্রাণী যবেহ করার ব্যাপারে গলায় বা গলার নিম্ন দেশে ছুরি চালানোর যে শর্ত আরোপ করেছে, এসব জন্তু-প্রাণী হালাল হওয়ার জন্যে সে ধরনের শর্ত আরোপ করা হয়নি। বরং সেগুলো যবেহ করার জন্যে সহজ পন্থা নির্ধারণ করেছে। এতে করে মানুষের কষ্ট অনেকটা লাঘব করা হয়েছে এবং খাদ্যের ক্ষেত্রে প্রশস্ত করা হয়েছে।
ইসলাম মানুষের স্বাভাবিক প্রয়োজন সমূহের প্রতি পূর্ণমাত্রায় দৃষ্টি রক্ষা করেছে। এ পর্যায়ে যে সব শর্ত আরোপিত হয়েছে তার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ ইসলামের মৌল বিশ্বাস ও তার বিধান ব্যবস্থা সমূহের কাছে আত্মসমর্পণ করুক। আর একজন মুসলিমকে যেমন সর্ব ব্যাপারে ও ক্ষেত্রে ইসলামের নিয়ামাদি পালন করতে হয়, এক্ষেত্রেও যেন সে ইসলামের নিয়মগুলো যথাযথভাবে পালন করে।
এ পর্যায়ের কতগুলো শর্ত হচ্ছে শিকারকারী সংক্রান্ত, কতগুলো শিকার করা জীব সংক্রান্ত এবং কতকগুলো শিকার কার্য সংক্রান্ত।
এখানে স্থলভাগের প্রাণী শিকার সম্পর্কে বলা হচ্ছে। জলভাগের শিকার সম্পর্কে তো ইতিপূর্বে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আর তার সারকথা হচ্ছে, কোনরূপ নিষেধ ছাড়াই সব কিছুকে আল্লাহ তা‘আলা হালাল করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে :
(আরবী***************)
সামুদ্রিক শিকার ও সেখানে থেকে পাওয়া খাদ্যই তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। (সূরা মায়িদা : ৯৬)
শিকারী সম্পর্কিত কথা
স্থলভাগে শিকারীর জন্যে সেই শর্ত যা যবেহকারীর জন্যে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে, তাকে মুসলিম হতে হবে অথবা আহলি কিতাব। আহলি কিতাব পর্যায়ে পড়ে এমন লোকের শিকারও খাওয়া যাবে- যেমন দাবি ও মাজুসী।
ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে, নিরর্থক শিকার করা অর্থাত্ খাওয়ার উদ্দেশ্য না নিয়ে অথবা অপর কোন সুফল পূর্ণ কাজের উদ্দেশ্যে না রেখে শিকার করা বাঞ্ছনীয় নয়। কেননা বিনা কারণে ও উদ্দেশ্যহীনভাবে প্রাণী হত্যা করার অনুমতি ইসলাম দেয়ানি। হাদীসে বলা হয়েছে : (আরবী********৯৫***********)
যেলোক কোন পাখি অর্থহীন উদ্দেশ্যহীনভাবে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করবে, হে আল্লাহ অমুক লোকটি আমাকে অর্থহীনভাবে হত্যা করেছিল, কোন ফায়দা লাভের জন্যে হত্যা করেনি।
অপর একটি হাদীসে বলা হয়েছে : (আরবী***********************)
যে লোক কোন চড়ুই বা তার বড় কোন পাখি অন্যায়ভাবে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার বিষয়ে নিশ্চয়ই কৈফিয়ত চাইবেন। সাহাবী বললেন হে রাসূল, ওদের আবার কি হক রয়েছে? বললেন : ওদের হক হচ্ছে ওদের যবেহ করে খেতে হবে, ওদের মস্তক কেটে নিক্ষেপ করে দেয়া নয়।
শিকারীর জন্যে আরও শর্ত হচ্ছে, সে যেন হজ্জ কিংবা উমরার জন্যে ইহরাম বাধা অবস্থার লোক না হয়। কেননা ইহরাম বাধা অবস্থায় মুসলিম পূর্ণাঙ্গ শান্তি নিরাপত্তা ও বিপদ মুক্তির অবস্থায অবস্থান করে। এ ব্যাপারে তার ক্ষেত্রে অত্যান্ত প্রশস্ত। তার চারপার্শ্বের সব জীব এবং পাখিরাও পূর্ণ নিরাপত্তা লাভ করে থাকে। এমন কি ইহরাম বাধা মুসলিমের হাতের বা তীরের নাগালের মধ্যেও যদি কোন শিকার এসে যায়, তবুও সে শিকার থেকে বিরত থাকবে। এ হচ্ছে মুসলিমের ধৈর্যের প্রশিক্ষণ পর্যায়ের ব্যবস্থা। তাই কুরআনে বলা হয়েছে : (আরবী***********************)
হে ঈমানদার লোকেরা, আল্লাহ শিকার জাতীয় জিনিস দ্বারা তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করবেন। তোমাদের হাত ও তীর তা নাগালের মধ্যে পেয়ে যাবে। আল্লাহকে অজ্ঞাতসারে কে সে ভয় করে, তা তিনি জানতে চান। এতদসত্ত্বেও যদি কেউ সীমালংঘন করে, তবে তার জন্যে পীড়াদায়ক আযাব রয়েছে।
(আরবী********************)
হে ঈমানদার লোকেরা ! তোমরা ইহরাম বাঁধা থাকা অবস্থায় শিকার করবে না। (সূরা মায়িদা : ৯৫)
(আরবী*******************)
তোমরা যতক্ষণ ইহরাম বাধা অবস্থায় থাকবে, ততক্ষন তোমাদের জন্যে স্থলভাগে শিকার করা হারাম করা হয়েছে। (সূরা মায়িদা:৯৬)
শিকার প্রাণী সম্পর্কিত শর্ত
যে জন্তু বা প্রাণী শিকার করা হবে, সে সম্পর্কে শর্ত হচ্ছে, তা এমন জন্তু বা প্রাণী হবে যাকে ধরে তার গলা বা মজ্জাস্থি (marrow) তে যবেহ করা সম্ভব হবে না। যদি তা সম্ভব হয় তা হলে তা অবশ্যই নির্দিষ্ট নিয়মে যবেহ করতে হবে, তা না করা হলে হালাল হবে না।
যদি তীর নিক্ষেপ করা বা শিক্ষাপ্রাপ্ত কুকুরের দ্বারা শিকার করা না হয়, আর তা এমন অবস্থায় হস্তগত হয় যে, তার মধ্যে এখনও জীবনের স্থিতি রয়েছে তা হলে প্রচলিত নিয়মে গলদেশে যবেহ করতে হবে। কিন্তু যদি তা স্থিতিশীল জীবন নেই, এমন অবস্থায় হস্তগত হয় তাহলে সেটি যবেহ না করাই সঙ্গত। আর যদি তার সেই অবস্থায় সেটিকে মৃত্যুর জন্যে ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে কোন গুনাহ হবে না। বুখারী ও মুসলিম এ হাদীস উদ্বৃত হয়েছে :
(আরবী*****************)
তুমি যখন তোমার শিকারী কুকুর পাঠাবে তখনই তার ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে। পরে তা যদি শিকারকে তোমার জন্যে আটকে রাখে আর তুমি সেটি জীবন্ত অবস্থায় হাতে পাও তাহলে তুমি যবেহ করবে।
শিকার করার উপায়
যে সব উপায়ে শিকার করা যায় তা দুধরনের :
১. তীক্ষ্ণ শানিত অস্ত্র, যেমন তলোয়ার, বল্লম ইত্যাদি। কুরআনের আয়াতে এ দিকের ইঙ্গিত পাওয়া যায় :
(আরবী********)
তা পায় তোমাদের হস্ত এবং তীরসমূহ। (সূরা মায়িদা : ৯৪)
২. শিকারী জন্তু, যাকে শিকার কার্যের জন্যে রীতিমত শিক্ষিত ও ট্রেনিং প্রাপ্ত করা হয়েছে, যেমন কুকুর, বাজ ইত্যাদি। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : (আরবী******************)
তোমাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে সব পাক-পবিত্র জিনিস, আর তোমাদের যেসব শিকারী জন্তু ট্রেনিং প্রদত্ত, আল্লাহ তোমাদের যা শিখিয়েছেন তা দিয়ে তোমরাও শিক্ষিত করে তোল………। (সূরা মায়িদা : ৪)
শানিত অস্ত্র দ্বারা শিকার করা
অস্ত্র দ্বারা শিকার করানোর দুটি শর্ত রয়েছে :
প্রথম, অস্ত্রটি শিকারের দেহের মধ্যে এমনভাবে বিদ্ধ হয়ে যাবে যে, এই জখমই সেটির মৃত্যুর কারণ হবে। অস্ত্রের চাপে পড়ে যেন মৃত্যু না হয়। হযরত আদী ইবনে হাতিম (রা) নবী করীম (সা) কে জিজ্ঞাসা করলেন :
(আরবী***************)
আমি ফলা ছাড়া তীর দ্বারাই শিকার করি। আর তা লক্ষ্য ভেদ করে, সেটি খাওয়া কি জায়েয?
রাসূলে করীম (সা) জবাবে বললেন : (আরবী*******************)
যখন তুমি তীর নিক্ষেপ কর, তার ধারালো দিকটা যদি দেহে ঢুকে যায় তাহলে তা খাও। আর যদি পাশাপাশি লাগে ও তার আঘাতে মরে তাহলে তা খাবে না। (বুখারী, মুসলিম)
এ হাদীস থেকে জানা গেল, শিকরীর দেহে ঢুকে পড়াটাই আসল লক্ষ্য। যদি শিকারের মৃত্যু হয় ভারী বোঝার তলায় চাপা পড়ে তাহলে তা খাওয়া জায়েয হবে না। এ হিসেবে বন্দুক ও পিস্তল রিভালবারের গুলী দ্বারা শিকার করা জন্তু হালাল হবে। কোননা এই গুলী দেহভ্যন্তরে তীর, বল্লম, ও তরবারীর তুলনায়ও অধিক শানিত ও গভীরভাবে প্রবেশ করে। এ পর্যায়ে ইমাম আহমদ কর্তৃক উদ্বৃত একটি হাদীস হচ্ছে : (আরবী****************)
বন্দুক দ্বারা শিকার করা জন্তু বা পাখি খাবে না, তবে যবেহ করলে তা খেতে পার। আর বুখারী উদ্বৃত হযরত ইবনে উমর (রা) এর একটি উক্তিহচ্ছে : বন্দুক দ্বারা করা শিকার মওকযা লাঠির আঘাতে মরা জন্তুর মতোই হারাম, এতে বন্দোকা অর্থ মাটির ঢিলা। তা নিক্ষেপ করে শিকার করা জন্তু নিশ্চয়ই হারাম। কিন্তু এখানে বন্দুক বলতে আমরা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র মনে করছি এবং তার দ্বারা শিকার করা জন্তু অবশ্যই হালার হবে।
বুন্দেকার সাথে সাদৃশ্য সম্পন্ন জিনিস হচ্ছে প্রস্তর খণ্ড বা পাকা ইটের টুকরা। নবী করীম (সা) বলেছেন :
(আরবী*********৯৮***********)
প্রস্তরখণ্ড বাইটের টুকরা দ্বারা শিকার কারা যায় না, শত্রুকেও গভীরভাবে যখম করা চলে না। তবে তাদ্দারা দাঁত ভাঙ্গা যায় ও চক্ষু ফোটান যায়। (বুখারী, মুসলিম)
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, হাতিয়ার নিক্ষেপ করা বা অস্ত্র চালানর সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে হবে। নবী করীম (সা) হযরত আদী ইবনে হাতিম (রা) কে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন। ও বিষয়ে তাঁর বর্ণনা করা হাদীসসমূহ বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী।
কুকুর দ্বারা শিকার করা
কুকুর বা বাজ, শিকার ইত্যাদি দ্বারা যখন শিকার করতে চাওয়া হবে, তখন নিম্নোক্ত শর্তসমূহ পালন করতে হবে :
একটি হচ্ছে, জন্তু বা পাখিটিকে শিকার করার কাজটি রীতিমত শিক্ষা ও ট্রেনিং দিতে হবে।
দ্বিতীয় এই যে, শিক্ষাপ্রাপ্ত জন্তু বা পাখিটী তার মালিকের জন্যে শিকার করবে, নিজের খাওয়ার জন্যে নয়। কুরআনের ইঙ্গিত থেকে তাই বুঝতে পারা যায়।
আর তৃতীয় হচ্ছে, সেটিকে শিকারের উদ্দেশ্য পাঠানোর সময় সেটির উপর বিসমিল্লাহ বলে দিতে হবে।
নিম্নোদ্বৃত আয়াতে এ সব কটি শর্তের কথা বলে দেয়া হয়েছে :
(আরভী******************)
লোকেরা তোমার কাছে জিজ্ঞাস করে তাদের জন্যে কি কি হালাল করা হয়েছে? তুমি বল, তোমাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে সব পাক-পবিত্র উত্কষ্ট দ্রব্য এবং যেসব শিকারী জন্তু বা পাখি তোমরা শিখিয়ে পড়িয়ে তৈয়ার করে নিয়েছ শিকার করার জন্যে- ওরা যা তোমাদের জন্যে আটকিয়ে রাখবে তা তোমরা খাও এবং তার ওপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর।
১. শিকারী জন্তু বা পাখি শিক্ষাদানের ব্যাপারটিও সুস্পষ্ট। তা হচ্ছে সেটির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রন কার্যকর করা, নিজ আদেশ মতো সেটিকে পরিচালিত করতে পারা, যখন যেদিকে ইচ্ছা সেটিকে চালিত করতে পারা এবং সেটির সে অনুযায়ী কাজ করতে প্রস্তুত হওয়া। শিকার করে মালিকের কাছে উপস্থিত করতে অভ্যস্ত হওয়া, মালিকের অনুপস্থিতিতে তার জিনিসপত্রের রক্ষণাবেক্ষণ। করা। মালিক সেটিকে তাড়ালে তাড়িত হওয়া। এ সব শর্ত আরোপের ব্যাপারে কোন কোন ফিকাহবিদের কিছুটা দ্বিমত আছে বটে, কিন্তু মোট কথা হলো, প্রচলিত নিয়মে শিকারী জন্তু বা পাখিকে সুশিক্ষিত করে তুলতে হবে।
২. মালিকের জন্যে শিকার রক্ষা করার অর্থ, শিকারী জন্তু বা পাখি শিকারটিকে নিজে খাবে না, মালিকের জন্যে রেখে দেবে। নবী করীম (সা) বলেছেন : (আরবী*******************)
তুমি যখন শিকার করার উদ্দেশ্যে কুকুর প্রেরণ কর, তখন সে শিকার করে তা থেকে যদি কিছু খায়, তাহলে তুমি তা খাবে না। কেননা প্রমাণিত হয়েছে যে, সেটি শিকারকে নিজের জন্যেই ধরে রেখেছে। আর পাঠানর পর শিকার করে যদি নিজে না খায়, তাহলে তুমি তা খেতে পার। কেননা প্রমাণিত হয়েছে যে, সেটি তার মালিকের জন্যে শিকারকে ধরে রেখেছে। (আহমদ)
কোন কোন ফিকাহবিদ শিকারী জন্তু – কুকুর ও শিকারী পাখি যেমন বাজ শিকরার মধ্যে পার্থক্য করেছেন। বলেছেন, শিকারী পাখি যদি শিকার থেকে কিছু খায়ও তবু তা খাওয়া মুবাহ। কিন্তু কুকুর খেলে তা খাওয়া যায়েয নয়।
এই দুটি শর্তে যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। কুকুরকে শিকার কার্যের জন্যে শিক্ষিত করে তোলা ও তার শিকার করে শিকারটিকে মালিকের জন্যে ধরে রাখা মানুষের উচ্চ মর্যাদার সথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কুকুরের উচ্ছিষ্ট খাবার থেকে মানুষকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যেই এ শর্ত আরোপ করা হয়েছে। কেননা কুকুর শিক্ষাপ্রাপ্ত হলে ও শিকার করে সেটিকে মালিকের জন্যে ধরে রাখলে সেটি এক শিকার যন্ত্র মাত্র, শিকারী শিকার কাজে ব্যবহার করেছে। যেমন শিকারী তীর বল্লম বা বন্দুক চলিয়ে থাকে।
৩. কুকুর পাঠানর সময় বিসমিল্লাহ বলাটা তীর নিক্ষেপ বা বল্লম কিংবা ছুরি চালান করে বিসমিল্লাহ বলার মতোই। কুরআনের আয়াতে তারই নির্দেশ দেয়া হয়েছে : (আরবী*******************)
৪. এ বিষয়ে বহু সহীহ হাদীসও বর্ণিত হয়েছে, যেমন হযরত আদী ইবনে হাতিম (রা) বর্ণিত হাদীসমূহ।
উপরিউক্ত শর্ত থেকে একথাও সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, প্রেরিত কুকুরটির সাথে অপর কোন কুকুর শরীক হলে এ দুয়ের শিকার খাওয়া হালাল হবে না। হযরত আদী (রা) জিজ্ঞাস করলেন :
(আরবী******************)
আমি আমার কুকুর শিকারের জন্যে পাঠাই, পরে সেটির সঙ্গে দ্বিতীয় একটি অপরিচিত কুকুরও দেখতে পাই, তখন কি করব?
নবী করীম (সা) বললেন : (আরবী***************)
তাহলে তুমি শিকার খাবে না। কেননা তুমি তো বিসমিল্লাহ বলেছ তোমার নিজের প্রেরিত কুকুরটির উপর, অপরটির ওপর নয়। (আর তুমি জান না এ দুটির মধ্যে কোনটি শিকার করেছে?)
তীর নিক্ষেপ করা বা শিকার পাঠানর সময় বিসমিল্লাহ বলতে যদি ভুলে যায়, তাহলে খাওয়ার সময় এই ভুল শুধরে নিলেই চলবে। আল্লাহ দয়া করে মসলিম উম্মতের অনেক ভুল-ভ্রান্তিই মাফ করে দিয়েছেন এবং দেন। এটাই সেই পর্যায়ের গণ্য।
তীর নিক্ষেপের পর শিকার মৃতাবস্থায় পাওয়া
এ রকমটা প্রায় ঘটে ও ঘটতে পারে যে, শিকারী শিকারের উদ্দেশ্যে তীর নিক্ষেপ করল, তা শিকারকে বিদ্ধ করল, পরেতা চোখের আড়ালে পড়ে যায়, হারিয়ে যায়। কিছু সময় পর সেটি মৃত্যু অবস্থায় পাওয়া যায়- কয়েকদিন পর পাওয়ার ঘটনাও বিরল নয়। এরূপ অবস্থায় কয়েকটি শর্তে শিকারটি হালাল হতে পারে :
১. সেটি যেন পানিতে পড়ে না থাকে। এ পর্যায়ে হাদীস হচ্ছে : রাসূলে করীম (সা) বলেছেন :
(আরবী***********)
তুমি যখন তোমার তীর নিক্ষেপ করলে শিকারকে লক্ষ্য করে তখন সেটি পাও নিহত অবস্থায়, তাহলে তুমি সেটি খাও। তবে যদি সেটিকে পানিতে পড়া অবস্থায় দেখ, তাহলে খাবে না। কেননা শিকারটি তোমার তীরের আঘাতে মরেছে না পানিতে ডুবে মরেছে, তা তুমি জান না।
২. অপর কোন তীরের চিহ্ন তার উপর থাকবে না, যার ফলে জানা যেতে পারে যে, অপর কোন তীরই তার মৃত্যুর কারণ হয়নি। হযরত আদী ইবনে হাতিম (রা) বললেন : (আরবী********************)
ইয়া রাসূল! আমি তো শিকার করার জন্যে তীর নিক্ষেপ করি। পরের দিন সেটি আমি পাই, তার ওপর আমার তীর বিদ্ধ হয়ে আছে।
নবী করীম (সা) বললেন : (আরবী****************)
তুমি যদি নিশ্চিতভাবেই জানতে পার যে, তোমার নিক্ষিপ্ত তীরই ওটিকে মেরেছে এবং তার ওপর কোন হিংস্র জন্তুর কোন চিহ্ন না পাওয়া যায়, তাহলে তুমি তা খেতে পার। (তিরমিযী)
৩. শিকারটা যেন পচেঁ যাওয়ার উপক্রম না হয়। কেননা সুস্থ মানব প্রকৃতি পঁচা জিনিস খেতে ঘৃণা করে। তা ছাড়া তার ক্ষতিকর দিক তো রয়েছেই। মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে : নবী করীম (সা) হযরত আবু সা‘লাবা (রা) কে বললেন :
(আরবী*****************)
তুমি তীর নিক্ষেপ করার পর তা যদি তিনটি দিন অদৃশ্য হয়ে থাকে এবং তার পর তুমি শিকারের খোঁজ পাও, তাহলে তা পঁচে না গেলে তুমি খেতে পার।