জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

মৃত্যু যবনিকার ওপারে

অন্তর্গতঃ uncategorized
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. গ্রন্থকারের কথা
  2. মানব মনের স্বাভাবিক প্রশ্ন
  3. পরকাল সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ
  4. প্রকৃত জ্ঞানের উৎস
  5. যুগে যুগে নবীর আগমন
  6. পরকাল সম্পর্কে ইসলামী মতবাদ
    1. পরকালের বিরোধিতা
    2. পরকাল বিরোধিতা কেন?
    3. একমাত্র খোদাভীতি অপরাধ প্রবণতা দমন করে
  7. পরকালে বিশ্বাস ও চরিত্র
  8. পরকাল সম্পর্কে কুরআনের যুক্তি
  9. পরকালের ঐতিহাসিক যুক্তি
  10. দুনিয়া মানুষের পরীক্ষা ক্ষেত্র
  11. আলমে বরযখ
  12. কবরের বর্ণনা
  13. মহাপ্রলয় বা ধ্বংস
    1. জাহান্নামবাসীর প্রধান প্রধান অপরাধ
  14. শয়তান ও মানুষের মধ্যে কলহ
  15. জান্নাতবাসীর সাফল্যের কারণ
    1. অগ্রবর্তী দল
    2. দক্ষিণ পার্শস্থ দল
    3. বাম পার্শ্বস্থিত দল
  16. জাহান্নামবাসীদের দুর্দশা
  17. জান্নাতবাসীদের পরম সৌভাগ্য
  18. পরকাল জয় পরাজয়ের দিন
    1. বিরাট প্রবঞ্চনা
    2. পাপীদের পরস্পরের প্রতি দোষারোপ
    3. পরকাল লাভ-লোকসানের দিন
  19. পরকালের পাঁচটি প্রশ্ন
  20. আত্না
  21. পরকালে শাফায়াত
    1. শাফায়াতে ইসলামী ধারণা
  22. মৃত ব্যক্তি দুনিয়ার কোন কিছু শুনতে পায় কিনা
  23. একটা ভ্রান্ত ধারণা
  24. আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসের পার্থিব সুফল
  25. সন্তানের প্রতি পিতামাতার এবং পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব
  26. শেষ কথা

পরকালে বিশ্বাস ও চরিত্র

সকল যুগে এবং সকল জাতির কাছে চরিত্র গঠন কথাটি বরই সমাদৃত। তাই  চরিত্রবান লোককে সকল যুগেই শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়। সত্য কথা বলা, বৈধ উপায়ে জীবনযাপন করা, অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শন, বিপন্নকে সাহায্য করা, অপরের জীবন, ধন-সম্পদ ও উজ্জত-আবরুর প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সকলের প্রতি ন্যায় বিচার করা, কর্মঠ ও সৎকর্মশীল হওয়া, আত্মত্যাগ, ধৈর্য ও সহনশীলতা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ প্রভৃতি মহৎ চরিত্রের গুণাবলী হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত।

এখন প্রশ্ন হলো এই যে, এসব চারিত্রিক গুণাবলী কিভাবে অর্জন করা যায়। তা অর্জনের প্রেরণা কি করে লাভ করা যায় এবং সে প্রেরণা উৎসই বা কি হতে পারে।

অবশ্যি খোদা ও পরকাল বিশ্বাস না করেও উপরে উল্লেখিত গুণাবলীর কিছুটা যে অর্জন করা যায় না, তা নয়। তবে তা হবে আংশিক, অস্থায়ী, অপূর্ণ, ও একদেশিদশী (partial)। জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেম উদ্ভুদ্ধ হয়ে উক্ত গুণাবলী আংশিকভাবে অর্জন করা যেতে পারে শুধুমাত্র দেশ ও জাতির স্বার্থে। আবার দেশ ও জাতির স্বার্থেই উক্ত গুণাবলী পরিহার করাই মহৎ কাজ বলে বিবেচিত হয়। জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্য দেশ ও জাতিকে পদানত করা, অন্য জাতির লোককে দাসে পরিনত করে তাদের পশুর চেয়ে হেয় জীবনযাপন করতে বাধ্য করা মোটেই দূষণীয় মনে করা হয় না।

ইংরেজ জাতির দৃষ্টান্ত পেশ করে বলা হয় যে, তারা সমষ্টিগতভাবে খোদা ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী না হয়েও অন্যান্য জাতি অপেক্ষা অধিকতর নির্ভরশীল, নায়পরায়ণ, সত্যবাদী, মহানুভব ও মানবদরদী, মনবতার সেবায় তারা নিবেদিত প্রাণ। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার এই যে, ব্যক্তিগতভাবে তাদের কারো মধ্যে কিছু চারিত্রিক গুন পাওয়া গেলেও গোটা জাতি মিলে তারা যাদেরকে তাদের জাতীয় প্রতিনিধি মনোনীত করে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকাশ্যে মিথ্যা, প্রতারণা, প্রতিশ্রুতি ভংগ, বিশাসঘাতকতা, অন্যায়, অবিচার, নর হত্যা প্রভৃতি ঘৃণ্য অপরাধগুলো নির্দ্বিধায় করে ফেলে। এরপরও সমগ্র জাতির তারা অভিনন্দন লাভ করে। ব্রিটিশ শাসকগন তাদের উপনিবেশগুলোর অধিবাসীদের সাথে যে আচরণ করেছে বর্বরতার চেয়ে তা কোন দিক দিয়ে কম? ইংরেজ জাতির প্রাতঃস্মরণীয় ও চিরস্মরণীয় নেতা ফ্লাইভ পলাশীর আম্রকাননে ব্রিটিশ সম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপনের জন্য যে প্রতারণা ও বিশ্বাস-ঘাতকতার ভুমিকা পালন করে তা ইতিহাসের স্মরণীয় ঘটনা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন বিত্তহীন কেরানী ১৭৪৪ সালে ভারত আগমন করে। ১৭৬০ সালে যখন ঘরে ফিরে যায়, তখন তার কাছে নগদ টাকা ছিল প্রায় দু’কোটি। তার স্ত্রীর গয়নার বাক্সে মনি-মুক্তা ছিল দু’লাখ টাকার। তখন সে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। এসব অরথ-সম্পদ বিজিত রাজ্যের প্রজাদের থেকে অন্যায়ভাবে লুণ্ঠন করা সম্পদ। তাদের জীবন দর্শনে অপরের ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করা নৈতিকতা বিরোধী নয়। ডালহৌসী, ওয়ারেন হেস্টিংসের অন্নায়-অবিচার ও নিষ্ঠুর আচরণ কি কোন কাল্পনিক ঘটনা? বর্তমান জগতের সভ্যতার ও মানবাধিকার প্রবক্তা আমেরিকানগন কোন মহান চরিত্রের অধিকার? আপন স্বার্থে লক্ষ কোটি মানব সন্তানকে পারমাণবিক অস্ত্রের সাহায্যে নির্মূল করতে তারা দ্বিধাবোদ করেনি। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল নামে একটি ইহুদী রাস্ট্রের পত্তন করে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি নষ্ট করা হয়েছে, লাখ লাখ  মানুষ গৃহহারা, সর্বহারা হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেছে। এর জন্যে আমেরিকাবাসী কি দায়ী নয়? এটা কি মানবদরদী চরিত্রের নিদর্শন?

কমিউনিজম-সোশ্যালিজমে তো নীতি-নৈতিকতার কোন স্থানই নেই। খোদা ও আখেরাতে অবিশ্বাসী হিটলার, লেলিন, স্টালিন প্রমুখ রাস্টনায়ক কোটি কোটি মানুষের রক্ত স্রোত প্রবাহিত করে কোন চরিত্রের অধিকারী ছিল? চীনেও আমরা একই দৃশ্য দেখি।

আখেরাতকে অবিশ্বাস করে যে সত্যিকার চরিত্রবান হওয়া যাই না সে সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা নিম্নরুপঃ

(আরবী***************************)

“ আসল ব্যাপার এই যে, যারা আমাদের সাথে (আখেরাতে) মিলিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখতে পায় না এবং দুনিয়ার জীবন নিয়েই সন্তুস্ট ও নিশ্চিন্ত থাকে এবং যারা আমাদের নিদর্শনগুলোর প্রতি উদাসীন থাকে, তাদের শেষ আবাসস্থল হবে জাহান্নাম-ঐসব কৃতকাজের বিনিময়ে যা তারা (তাদের ভ্রান্ত মতবাদ ও ভ্রান্ত কর্মপদ্ধতির দ্বারা) করেছে ।”

-সূরা উইনুসঃ ৭-৮)

আখেরাত অবিশ্বাস করার পরেও চরিত্রবান হয়ে সৎকর্ম করতে পারলে তার বিনিময়ে বেহেশতের পুরস্কারের পরিবর্তে জাহান্নাম তাদের শেষ আশ্রয়স্থল কেন হবে? অবশ্য আংশিক কিছু চারিত্রিক গুন লাভ করা যেতে পারে শুধু মাত্র উপযোগবাদের (UTILITARIANISM- যাহা জনহিতকর তাহাই নায়সংগত এই মতবাদ) ভিত্তিতে।এই চারিত্রিক গুন ব্যক্তি ও জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ।অত-এব জাতি-ধর্ম নিরবিশেসে মানবতার স্বার্থে এক অসীম শক্তিমানের নিরংকুশ আনুগত্য স্বীকার করা ব্যতীত উপায় থাকে না।

উপরন্তু ভাল-মন চরিত্র নির্ণয়ের একটা পদ্ধতি বা মাপকাটি হওয়াও বাঞ্ছনীয়।দেশ ও জাতির মানুষের জন্যে না কোন সঠিক জীবন বিধান দেতে পারে, আর না ভাল-মন্দের কোন মাপকাঠি নির্ণয় করে দিতে পারে। কাল, অবস্থা ও জাতীয় স্বার্থের প্রেক্ষিতে ভাল-মন্দ নির্ণীত হয়। আজ যা ভাল বলে বিবেচিত হয়, কাল তা হয়ে পরে মন্দ। তাই দেখা যায় কোন কোন দেশের আইন সভায় একবার মদ্যপান নিষিদ্ধ করা হয় এবং পরবর্তীকালে তা আবার বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। জাতীয়তাবাদী দেশগুলোতে আপন জাতির নাগরিকদেরকে যে মর্যাদায় ভূষিত করা হয়, অন্য জাতির লক সে মর্যাদা থেকে হয় সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। আইনের চোখেও আপন জাতীয় লোক এবং বিজাতীয়রা সমান ব্যবহার পায় না।

এ জন্যেই খোদা ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পরে। খোদা মানুষের জন্যে একটা সুন্দর, সুষ্ঠু ও পূর্ণাংগ জীবন বিধান দিয়েছে, ভাল-মন্দ ঘোষণা করেছেন এবং ন্যায়-অন্যায় নির্ণয়ের জন্য একই ধরনের আইন ও আচরণ পদ্ধতি ঠিক করে দিয়েছেন। এসব নিয়ম-পদ্ধতি থাকবে অটল ও অপরিবর্তনীয়।

ভাল-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায় নির্ধারিত করে দেয়ার পর আল্লাহ ঘোষণা করেন যে, ভাল-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায়ের ভিত্তিতেই মানুষের বিচার হবে পরকালে। ভাল চরিত্রের লোক সেখানে হবে পুরস্কৃত এবং লাভ করবে চিরন্তন সুখী জীবন। পক্ষান্তরে মন্দ চরিত্রের লোকের পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। এ এক অনিবার্য সত্য যা অস্বীকার কারার কোন ন্যায়সংগত কারন নেই।

এখন খোদা ও পরকালের প্রতি দৃঢ় প্রত্যেয়ের ভিত্তিতেই ভাল চরিত্র লাভ করে ভালভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব। কারন ভাল চরিত্র গঠনের স্বতঃস্ফূর্ত প্রেরণা একমাত্র পরকাল বিশ্বাসের দ্বারাই লাভ করা যেতে পারে। এ বিশ্বাস মনের মধ্যে যতদিন জাগরূক থাকবে, ততদিন ভাল কাজ করা ও ভাল পথে চলার প্রেরণা লাভ করা যাবে।

মানব জাতির ইতিহাসও একথারই সাক্ষ্য দেয় যে, যখন মানুষ ও কোন জাতি খোদা ও আখেরাতকে অস্বীকার করেছে, অথবা ভুলে গিয়েছে, তখনই তারা চারিত্রিক অধঃপতনের অতল তলে নিমজ্জিত হয়েছে। তাদের কৃত অনাচার-অবিচারে সমাজ জীবনে নেমে এসেছে হাহাকার, আর্তনাদ। অবশেষে সে জাতি হয়েছে নিস্তনাবুদ এবং মুছে গেছে দুনিয়া থেকে তাদের নাম নিশানা।

এখন দেখা যাক আখেরাত সম্পর্কে কুরআন পাকে কি অকাট্য যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে। আখেরাতের বিশ্বাস এমন গুরুত্বপূর্ণ যে, এর প্রতি অবিশ্বাস স্বয়ং আল্লাহ এবং তার নবী-রসুলগনের প্রতি অবিশ্বাসেরই নামান্তর। তৌহিদ ও রিসালাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সাথে আখেরাতের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় সৃষ্টি হলেই নবী-রসুলগনের কর্তৃক প্রদর্শিত ইসলামী জীবন দর্শন ও ইসলামী জীবনব্যবস্থার প্রাসাদ সুরক্ষিত হবে। আর আখেরাতের প্রতি অবিশাসের কারনেই ই প্রাসাদ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে।

তাই আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

( আরবী *******************************)

“অবিশ্বাসীরা আল্লাহর নামে কড়াকড়া কসম করে বলে যে, আল্লাহ মৃত ব্যক্তিদেরকে পুনর্জীবিত করবেন না। কেন করবেন না? এত এমন এক প্রতিশ্রুতি যা পুরন কড়া তাঁর (আল্লাহর) কর্তব্য। কিন্তু অধিকাংশ লোক এটা জানে না, পুনর্জীবন প্রয়োজন এ জন্য যে, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছিল, তাঁর প্রকৃত তত্ত্ব আল্লাহ সেদিন উদ্ঘাটিত করবেন। এতে করে অবিশ্বাসীরা জানতে পারবে যে, তারা ছিল মিথ্যাবাদী। কোন কিছুর অস্তিত্ব দান করতে এর চেয়ে বেশী কিছু করতে হয় না, যখন বলি “হয়ে যা” আর তক্ষনি তা হয়ে যায়।”-(সূরা আন নাহলঃ৩৮-৪০)

আল্লাহ তায়ালা এখানে মৃত্যুর পর পুনজীবন ও পুনরুথানের বিবেকসম্মত ও নৈতিক প্রয়োজন বর্ণনা করছেন। মানব জন্মের প্রারম্ভ থেকেই প্রকৃত সত্য সম্পর্কে বহু মতবিরোধ, মতানৈক্য হয় এসেছে। এসব মতানৈক্যের কারণে বংশ, জাতি ও গোত্রের মধ্যে ফাটল ও দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ হয়েছে। এসবের ভিত্তিতে বিভিন্ন মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গির ধারক ও বাহকগন তাদের পৃথক ধর্ম, সমাজ-ব্যবস্থা ও সভ্যতা-সংস্কৃতি গরে তুলেছে। এক একটি মতবাদের সমর্থনে ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন সময়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ জান-মাল, সম্মান-সম্ভ্রম বিসর্জন দিয়েছে। ভিন্ন মতা্বলম্ভীর সাথে রক্তাক্ত সংঘর্ষও হয়েছে। এক মতাবলম্ভীর লোক ভিন্নমত পোষণকারীদেরকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছে। আক্রান্ত মতাবলম্ভীগন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের আপন বিশ্বাস ও মতবাদ বর্জন করেনি। বিবেকও এটাই দাবী করে যে, এ ধরনের প্রচণ্ড মতবিরোধ সম্পর্কে এ সত্য অবশ্যই উদ্ঘাটিত হওয়া বাঞ্ছনীয় যে, তাদের মধ্যে সত্য কোনটা ছিল এবং মিথ্যা কোনটা। কে ছিল সত্য পথের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং কে পথভ্রষ্ট। দুনিয়ার বুকে এ সত্য উদ্ঘাটনের কোন সম্ভবনাই দেখা যায় না। দুনিয়াটার ব্যবস্থাই এমন যে, এখানে সত্য আবরনমুক্ত হওয়াই কঠিন। অতএব বিবেকের এ দাবী পূরণের জন্যে অন্য এক জগতের অস্তিত্তের প্রয়োজন।

এ শুধু বিবেকের দাবীই নয়, নীতি-নৈতিকতার দাবীও তাই। কারন এসব বিরোধ ও সংঘাত-সংঘর্ষে বহু দল অংশগ্রহন করেছে। তাদের মধ্যে কেউ করেছে অত্যাচার-উৎপীড়ন এবং কেউ তা সহ্য করেছে। কেউ জান-মাল বিসর্জন দিয়েছে এবং কেউ তাঁর সুযোগ গ্রহন করেছে। প্রত্যেকের তাঁর মতবাদ অনুযায়ী একটা নৈতিক দর্শন ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহন করেছে এবং এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে ভাল অথবা মন্দ প্রতিক্রিয়া সুচিত হয়েছে। এখন এমন এক সময় অবশ্যই হওয়া উচিত ফখন এসবের ফলাফল পুরস্কার অথবা শাস্তির রুপ নিয়ে প্রকাশিত হবে। এ দুনিয়ার ব্যবস্থাপনায় যদি পরিপূর্ণ নৈতিক ফলাফল প্রকাশ সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই আর এক জগতের প্রয়োজন যেখানে তা পরিপূর্ণ রুপে প্রকাশ লাভ করবে।

আল্লাহ বলেনঃ

(আরবী ****************************************)

“তোমাদের সবাইকেই তাঁর দিকে ফিরে যেতে হবে। এ আল্লাহ তায়ালার পাকাপোক্ত ওয়াদা। সৃষ্টির সুচনা অবশ্যই তিনি করেন এবং দ্বিতীয় বার সৃষ্টিও তিনি করবেন। দ্বিতীয়বার সৃষ্টির কারণ এই যে, যারা ঈমান আনার পর সৎকাজ করেছে তাদেরকে তিনি ন্যায়পরায়ণতার সাথে প্রতিদান দিবেন। আর যারা অবিশ্বাসীদের পথ অবলম্বন করেছে তারা উত্তপ্ত পানি পান করবে এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে। সত্যকে অস্বীকার করে তারা যা কিছু করেছে তার জন্যেই তাদের এ শাস্তি।“-(সূরা ইউনুসঃ৪)

এখানে পরকালের দাবী ও তার প্রমান পেশ করা হয়েছে। দাবী কড়া হচ্ছে যে, পরকাল অর্থাৎ মানুষের পুনর্জীবন অবশ্যই হবে। এ কাজটা মোটেই অসম্ভব নয়। তার প্রমাণ স্বরূপ বলা হচ্ছে যে, জিনি একবার সৃষ্টি করতে পারেন তিনি তো বার বার সে কাজ করতে সক্ষম। অতএব একবার তিনিই যদি মানুষকে সৃষ্টি করে থাকেন, তাহলে দ্বিতীয়বার কেন পারবেন না?

অতপর আখেরাতের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। উপরের যুক্তি একথার জন্যে যথেষ্ট যে, দ্বিতীয়বার সৃষ্টি সম্পূর্ণ সম্ভব। এরপর বলা হচ্ছে, বিবেক ও ন্যায় নিষ্ঠার দিক দিয়ে পুনজীবনের বিশেষ প্রয়োজন আছে এবং এ প্রয়োজন পুনর্জীবন ব্যতীত কিছুতেই পুরন হওয়া সম্ভব নয়। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে স্রস্তা ও  প্রভু স্বীকার করার পর যারা সত্যিকার দাসত্ত ও আনুগত্যের জীবনযাপন করছে, ন্যায়সংগতভাবে তারা পুরস্কার লাভের অধিকার রাখে, আর যারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে বিপরীত জীবনযাপন করছে তাদেরও কৃতকর্মের জন্যে পরিণাম ভোগ করা উচিত। কিন্তু এ প্রয়োজন দুনিয়ার জীবনে কিছুই পুরন হলো না এবং হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এ প্রয়োজন পূরণের জন্যেই পুনর্জীবন বা আখেরাতের জীবন একান্ত আবশ্যক।

(আরবী ***********************************)

“প্রত্যেককেই মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহন করতে হবে এবং কিয়ামতের দিনে তোমাদেরকে পরিপূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। অতএব সেদিন যাদেরকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করে বেহেশতে স্থান দেয়া হবে তারাই হবে সাফল্যমণ্ডিত।“-(সূরা আলে ইমরানঃ১৮৫)

এখানেও আখেরাতের প্রয়োজনীয়তার যুক্তি পেশ কড়া হয়েছে। প্রথমেই এক পরীক্ষিত সত্যের কথা বলা হয়েছে এবং তাহলো এই যে, প্রতিটি মানুষ মরণশীল। প্রতিটি জীবকেই মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহন করতে হচ্ছে জেতা মানুষের এক দৈনন্দিন বাস্তব অভিজ্ঞতা।

অতপর এ দুনিয়ার বুকে মানুষ তার জীবদ্দশায় ভাল-মন্দ উভয় কাজই করে যাচ্ছে। ভাল এবং মন্দ কাজের যথার্থ প্রতিদান এখানে পাওয়া যাচ্ছে না। একজন সৎকর্মশীল ব্যক্তি সারাজীবন করেও তার প্রতিদান পান না এবং একজন দুর্বৃত্ত সারা জীবন কুকর্ম করেও শাস্তি ভোগ করলো না। এসব অতি বাস্তব সত্য যা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। অথচ সৎকাজের পুরস্কার এবং কুকর্মের শাস্তিও একান্ত বাঞ্ছনীয়। ভাল কাজের জন্যে সঠিক এবং পরিপূর্ণ পুরস্কার দুষ্কৃতির জন্যেও যথোপযুক্ত শাস্তি যেহেতু এ দুনিয়ার ব্যবস্থাপনায় সম্ভব না, সে জন্যে মৃত্যর পর আর একটি জীবনের প্রয়োজন অনস্বীকার্য।

(আরবী ***************************************************)

“প্রত্যেককে মৃত্যুবরণ করতে হবে এবং এই দুনিয়াতে তোমাদেরকে সুখ-দুঃখ দিয়ে আমরা পরীক্ষা করব এবং এ পরীক্ষার ফলাফল লাভের জন্যে তোমাদেরকে আমাদের নিকটেই ফিরে আসতে হবে।”

-(সূরা আল আম্বিয়াঃ ৩৫)

________________________

পরকাল সম্পর্কে কুরআনের যুক্তি

মৃত্যুর পর মানবদেহের অস্থি, চর্ম, মাংস ও অনু-পরমানু ক্ষয়প্রাপ্ত হবার বহুকাল পরে তাদের পুনর্জীবন হবার কোন সম্ভাবনা নেই বলে অবিশ্বাসীরা যে উক্তি করে, তার জবাবে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

( আরবী ***************************************************)

“মাটি (মৃতদেহের) যা কিছুই খেয়ে ফেলে, তা সব আমাদের জানা থাকে। আর প্রতিটি অনু-পরমানু কথায় আছে তা আমাদের গ্রন্থেও সুরক্ষিত রয়েছে। ”-(সূরা আল কাফঃ৪)

খোদার পক্ষে পুনর্জীবন দান কি করে সম্ভব আ যদি জ্ঞানহীন অবিশ্বাসীদের বুদ্ধি-বিবেচনায় না আসে তো সেটা তাদের জ্ঞানের সংকীর্ণতারই পরিচায়ক। তার অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে অপারগ। তারা মনে করে যে, আদিকাল থেকে জেসব মানুষ মৃত্যুবরণ করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও করবে, তাদের মৃতদেহ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে শূন্যতায় পরিনত হবার হাজার হাজার বছর পরে পুনর্বার তাদের দেহ ধারন এক অসম্ভব ও অব্যস্তব ব্যাপার। কিন্তু আল্লাহ বলেন যে, মানবদেহের ক্ষয়প্রাপ্ত অনু-পরমানু মানুষের দৃষ্টি ও জ্ঞানের অগোচর হলেও। তাঁর জ্ঞানের অগোচর তা কখনো হয় না। সেসব কোথায় বিরাজ করছে তা আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানেত আছেই, উপরন্তু তা পুংখানুপুংখরুপে লিপিবদ্ধ আছে সুরক্ষিত গ্রন্থে। আল্লাহর আদেশ মাত্রই তা পুনঃ একত্র হয়ে অবিকল পূর্বের দেহ ধারন করবে। মানুষ শুধু পুনর্জীবন হবে না, বরঞ্চ দুনিয়ায় তাঁর যে দেহ ছিল, অবিকল সে দেহই লাভ করবে। এ আল্লাহর জন্যে কঠিন কাজ নয় মোটেই।

ঠিক এ ধরনের প্রশ্নের জবাব আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বহুস্থানেও দিয়েছেনঃ

( আরবী ****************************************)

“আমি তোমাদেরকে পয়দা করেছি। তবে কেন এর (পরকালের) সত্যতা স্বীকার করছো না?”-(সূরা ওয়াকেয়াঃ৫৭)

পরকালে অবিশ্বাসী ব্যক্তি যদি একথা স্বীকার করে যে, আল্লাহই তাকে পয়দা করেছেন, তাহলে দ্বিতীয় বারও যে তিনি তাকে পয়দা করতে পারেন, একথা স্বীকার কতে বাধা কেন?

( আরবী ******************************************)

“হে মানব জাতি ! কিয়ামতের দিনে তোমাদেরকে পুনর্জীবিত করা হবে-এ বিষয়ে তোমরা যদি সন্দেহ পোষণ কর তাহলে মনে করে দেখ দেখি, আমি তোমাদেরকে প্রথম মাটি থেকে পয়দা করেছি। অতপর একবিন্দু বীর্য থেকে। অতপর রক্তপিণ্ড থেকে। অতপর মাংস পিণ্ড থেকে যার কিছু সংখ্যক হয় পূর্ণাংগ, কিছু রয়ে যায় অপূর্ণ। এতে করে তোমাদেরকে সামনে আমার কুদরত প্রকাশ করি এবং আমি মাতৃগর্ভে যাকে ইচ্ছা তাকে  নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অর্থাৎ প্রসবকাল পর্যন্ত রেখে দেই। অতপর তোমাদেরকে শৈশব অবস্থায় মাতৃগর্ভ থেকে বহির্জগতে নিয়ে আসি জাতে করে তোমরা যৌবনে পদার্পণ করতে পার এবং তোমাদের মধ্যে এমনও আছে যারা যৌবনের পূর্বেই মৃত্যুবরণ করে এবং এমনও আছে যারা দীর্ঘায়ু লাভ করে বার্ধক্য প্রাপ্ত হয়। ফল এই হয় যে, কোন বিষয়ে ওয়াকিবহাল হয়ে আবার তোমরা সে বিষয়ে বেখেয়াল হয়ে যাও। (দ্বিতীয় কথা এই যে) তোমরা জমিনকে শুল্ক পরে থাকতে দেখ। অতপর আমি যখন তার উপরে বারি বর্ষণ করি, তখন তা উর্বর ও সজীব হয়ে পরে এবং নানাপ্রকার সুন্দর শস্য উৎপন্ন করে।”–(সূরা আল হাজ্জঃ ৫ )

উপরের ঘটনাগুলো বাস্তব সত্য যা হর-হামেশা ঘটতে দেখা যায়। তা কারো অস্বীকার করারও উপায় নেই। পরকাল অবিশ্বাসকারীগন এসব সত্য বলে বিশ্বাস করলেও পরকালকে তারা বলে অবাস্তব। এ তাদের শুধু গায়ের জোরে অস্বীকার করা। নতুবা এর পেছনে কোন যুক্তি নেই।

আল্লাহ তায়ালা মানুষের ভ্রম ঘুচাবার জন্যে তার জন্ম সহস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেনঃ

( আরবী ***********************************************)

“তোমরা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছ যে স্ত্রীসংগমে তোমরা স্ত্রী যোনীতে যে বীর্য প্রক্ষিপ্ত করছ, তা থেকে সন্তানের উৎপত্তি করছ কি তোমরা, না আমি? আমি তোমাদের মধ্যে মৃত্যু বণ্টন করে দিয়েছি। তোমরা আকৃতি পরিবর্তন করে তোমাদের জ্ঞানবহির্ভূত অন্য আকৃতিতে পয়দা করতেও আমি অপারগ নই। তোমাদের প্রথম বারের সৃষ্টি সম্পর্কেও তোমরা পরিজ্ঞাত। তবে কেন শিক্ষা গ্রহন করছ না।”

-(সূরা ওয়াকায়াঃ ৫৮-৬২)

আল্লাহ তায়ালা তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে মানব জাতির সামনে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের অবতারণ করেছেন। মানুষ সব যুক্তিতর্ক ছেড়ে দিয়ে শুধু তাঁর জন্মরহস্য নিয়ে যদি চিন্তা করে, তাহলে সবকিছুই তার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। অতপর খোদার অস্তিত্ব ও একত্ব এবং পরকাল সম্পর্কে তার মনে সন্দেহের কোনই অবকাশ থাকবে না,

আল্লাহ তায়ালা প্রশ্ন করছেন, নারী-পুরুষের বীর্য একত্রে মিলিত হবার পর কি আপনা-আপনি তা থেকে সন্তানের সুচনা হয়? সন্তান উৎপাদনের কাজটা কি মানুষের, না অন্য কোন শক্তির? নারী এবং পুরুষের এমন কি ক্ষমতা আছে যে, উভয়ের বীর্য সম্মিলিত হলেই তা থেকে তারা সন্তানের জন্ম দেবে?

প্রত্যেক সুস্থ মস্তিস্ক ও বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি উত্তর দেবে, “না-না-না, এ সবকিছুই মানুষের ক্ষমতার অতীত।” নারী-পুরুষের সম্মিলিত বীর্য স্ত্রীর ডিম্বকোষে প্রবেশ করার প্র থেকে ভূমিষ্ঠ হবার পূর্ব পর্যন্ত তার ক্রমবিবর্তনের দিকে লক্ষ্য করুন।

নারী-পুরুষের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম শুক্রকীট (spermatozoa and ova) একত্রে মিলিত হবার পর কোষ (cell) এবং তা থেকে রক্ত পিণ্ডের সৃষ্টি হয়। কিছুকাল পরে বর্ধিত রক্তপিণ্ড একটা ক্ষুদ্র মানুষের আকৃতিতে পরিনত হয়। সে আকৃতি অনুপম, অদ্বিতীয়। অন্য কোনটার মত নয়। সে আকৃতি হতে পারে সুন্দর অথবা অসুন্দর। সমুদয় অংগ-প্রত্যংগ বিশিষ্ট অথবা বিকলাংগ। অতপর তাকে অসাধারন প্রতিভা, জ্ঞান-বুদ্ধি, প্রখর স্মৃতিশক্তি ও অপূর্ণ উদ্ভাবন ক্ষমতার উপাদানে ভূষিত করা, অথবা এর বিপরীত কিছু করা-এসব কি কোন মানব শিল্পীর কাজ? না, খোদা ব্যতীত কোন দেব-দেবীর দৈত্য-দানবের কাজ?

গর্ভাবস্থায় মানব সন্তানটির ক্রমবর্ধমান দেহের জন্যে বিচিত্র উপায়ে খাদ্যের সংস্থান এবং ভূমিষ্ঠ হবার পূর্বেই এ দুনিয়ায় তার উপযোগী খাদ্য, পানীয়, আশ্রয়স্থল এবং এক অকৃত্রিম স্নেহ-মায়া-মমতা-ঘেরা পরিবেশে তার লালন-পালনের অগ্রিম সুব্যবস্থাপনা সবকিছুই একই শিল্পীর পরিকল্পনার অধীন, সে সর্বশক্তিমান অদ্বিতীয় শিল্পী বিশ্বস্রষ্টা ও পালনকর্তা আল্লাহ ব্যতীত কি আর কেউ?

কেউ হয়তো বলবেন, এ সবকিছুই প্রকৃতির কাজ। কিন্তু ‘প্রকৃতি’ বলতে কি বুঝানো হয়? তাদের মতো লোকেরা তো সব সৃষ্টিকেই দুর্ঘটনার পরবর্তী ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া (action and reaction after an accident) বলে অভিহিত করেন। কিন্তু ‘প্রকৃতির’ নিজস্ব কোন জ্ঞান, পরিকল্পনা, প্রতিটি সৃষ্টির পৃথক পৃথক ডিজাইন, ইচ্ছা ও কর্মশক্তি, অথবা কোন কিছুর করার এক্তিয়ার আছে কি? আপনি যাকে ‘প্রকৃতি’ বলতে চান, সে-ও তো সেই বিশ্বস্রষ্টার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রানাধীন। আলো, বাতাস, আকাশের মেঘমালা, বারি বর্ষণ, বরশনের ফলে উদ্ভিদরাজির জন্মলাভ, চারিদিকের সুন্দর শ্যামলিমা, কুলকুল তানে ব্যয়ে যাওয়া স্রোতস্বিনী, কুঞ্জে কুঞ্জে পাখীর কাকলি-এসবই তো একই মহাশক্তির নিপুন হস্তে নিয়ন্ত্রিত।

উপরন্তু আল্লাহ বলেন যে, তিনি আমাদের মধ্যে মৃত্যু বণ্টন করে দিয়েছেন, অর্থাৎ সকলেই মরনশীল এবং সকলের আয়ু একরূপ নয়। কেউ ভূমিষ্ঠ হবার পর মুহূর্তেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছে, কেউ শতাধিক বছর বাঁচে। মৃত্যু যে কোন মুহূর্তেই অপ্রত্যাশিতভাবে মানুষের দুয়ারে এসে পৌছে। তার আগমনের সময় ও ক্ষণ আল্লাহই নির্ধারিত করে রেখেছেন। তার এক মুহূর্ত অগ্র-পশ্চাৎ হবার জো নেই। কিন্তু কই মৃত্যু আসার পর তো কেউ কাউকে ধরে রাখতে পারে না, দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী সম্রাট, যার সম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যায় না, তাকে শত চেষ্টা করেও কি কেউ ধরে রাখতে পেরেছেন? এমনি কত সন্তান তার পিতা-মাতাকে শোক সাগরে ভাসিয়ে, কত প্রেমিক তার প্রিয়তমকে চির বিরহানলে প্রজ্জলিত করে, কত মাতা-পিতা তাদের কচি সন্তানদেরকে এতিম অসহায় করে, চলে যাচ্ছে মৃত্যুর পরপারে, কিন্তু কারো কিছু করার নেই এতে, বিজ্ঞান তার নব নব অত্যাশ্চর্য আবিস্কারের গর্ভ করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কি কেউ মৃত্যুর কোন ঔষধ আবিস্কার করতে পেরেছে? কেউ কি পেরেছে এর কোন প্রতিষেধক আবিস্কার করতে? জীবন ও মৃত্যু এক অটল ও অপরিবর্তনীয় নিয়ম-নীতির শৃঙ্খলে বাঁধা। এড্ডএমন এক শক্তিশালী হস্তের নিয়ন্ত্রণ যার ব্যতিক্রম স্ত্রবার উপায় নেই। সেই শক্তির একচ্ছত্র মালিকই আল্লাহ তায়ালা। তিনি জীবন এবং মৃত্যুরও মালিক, তিনি দুনিয়ারও মালিক প্রভু এবং পরকালেরও।

কুরআন পাকের আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ একথাও ঘোষণা করেছেন যে, তিনি মানব জাতিকে যে একই বাঁধাধরা পদ্ধিতিতে পয়দা করতে সক্ষম তা নয়। মানুষের জ্ঞানবহির্ভূত অন্য আকৃতি ও পদ্ধতিতেও পয়দা করতে তিনি সক্ষম। তিনি আদি মানব হযরত আদমকে (আ) একভাবে পয়দা করেছেন। হযরত ঈসাকে (আ) জন্মগ্রহণের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম করে পয়দা করেছেন। মৃত ব্যক্তিকে পুনর্বার পয়দা করতে শুক্রকীট আকারে কোন নারীর ডিম্বকোষে স্থাপন করার প্রয়োজন হবে না। যে শারীরিক গঠন ও বর্ধন নিয়ে সে মৃত্যুবরণ করেছে, ঠিক সেই আকৃতিতেই তাকে পুনঃজীবন দান করতে তিনি সম্পূর্ণ সক্ষম। অতএব এমনি রহস্যপূর্ণ সৃষ্টি নৈপুণ্যের মালিক যে আল্লাহ তায়ালা তাঁর-অসীম শক্তি ও জ্ঞান সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে পরকাল অস্বীকার করা মূঢ়তা ছাড়া কি হতে পারে?

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, “দুনিয়ার জীবনে তোমাদের দ্রিস্টিশক্তি, শ্রবনশক্তি এবং অন্যান্য ইন্দ্রিয়নিচয়ের একরূপ প্রদত্ত হয়েছে। পরকালে তা পরিবর্তন করে অন্যরুপ করতেও আমি সক্ষম। সেদিন তোমরা এমন কিছু দেখতে ও শুনতে পাবে যা এখনেও পাও না। আজ তোমাদের চর্ম, হস্ত-পদ, চক্ষু প্রভৃতিতে কোন বাকশক্তি নেই, তোমাদের জিহ্বায় যে বাকশক্তি, সে তো আমারই দেয়া। ঠিক তেমনি পরকালে তোমাদের প্রতিটি অংগ-প্রত্যংগকে বাকশক্তি দান করতেও আম্মি সক্ষম। দুনিয়ায় আমি তোমাদেরকে একটা নির্দিষ্ট আয়ু দান করেছি। যার ব্যতিক্রম কোনদিন হয়নি এবং হবে না। কিন্তু পরকালে আমার এ নিয়ম পরিবর্তন করে তোমাদেরকে এমন এক জীবন দান করব যা হবে অনন্ত, অফুরন্ত। আজ তোমাদের কষ্ট ভোগ করার একটা সীমা আছে যা অতিক্রম করলে তোমরা আর জীবিত থাকতে পার না। এখানকার জন্ম এবং মৃত্যু আমারই আমোঘ আইনের অধীন। পরকালে এ আইন পরিবর্তন করে তোমাদেরকে এমন এক জীবন দান করব যার অধীনে অনন্তকাল কঠিনতম শাস্তি ভোগ করেও তোমরা জীবিত থাকবে, এ তোমাদের ধারণার অতীত  যে, বৃদ্ধ কখনো আবার যৌবন লাভ করবে। মানুষ একেবারে নীরোগ হবে, অথবা বার্ধক্য কাউকে স্পর্শ করবে না। এখানে যা কিছু ঘটছে, যথাঃ শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্যের পরপর আগমন, রোগের আক্রমন ও আরোগ্য লাভ- সবইতো আমার এক অপরিবর্তনীয় বিধি-বিধান। পরকালে তোমাদের জীবনের এক নতুন বিধি-বিধান আমি রচনা করব। সৌভাগ্যবান ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করার সাথে সাথে চির যৌবন লাভ করবে। না তখন তাঁর জীবনাকাশের পশ্চিম প্রান্তে তার যৌবন সূর্যের ঢলে পড়ার কোন সম্ভাবনা আছে, আর না তাকে কোনদিন সামান্যতম রোগও স্পর্শ করতে পারবে!”

অবশেষে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা তো নিশ্চয়ই জান যে, কোন এক রহস্যময় ও আলৌকিক পদ্ধতিতে তোমরা জন্মগ্রহণ করেছ। কিভাবে পিতার বীর্যকোষ থেকে মাতৃগর্ভে এক ফোঁটা বীর্য স্থানান্তরিত হলো, যা হলো তোমাদের জন্মের কারণ। কিভাবে অন্ধকার মাতৃগর্ভে তোমাদেরকে প্রতিপালন করে জীবিত মানুষ হিসেবে দুনিয়ায় পাঠানো হলো। কিভাবে একটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শুক্রকীটকে ক্রমবিকাশ ও ক্রমবর্ধনের মাধ্যমে এহেন মন, মস্তিস্ক, হস্ত-পদ, নাসিকা, কর্ণ, চক্ষু তার মধ্যে স্থাপন করা হলো সুসামঞ্জস্য করে। কিভাবে তাকে বিবেক, অনুভুতিশক্তি, গান-বুদ্ধি, বিভিন্ন শিল্প ও কলাকৌশল, অভূতপূর্ব উদ্ভাবনা শক্তি দান করা হলো। এ সবের মধ্যে যে অনুপম অলৌকিকতের পরিচয় পাওয়া যায়, তা কি মৃতকে জীবিত করার চেয়ে কোন অংশে কম?  এ অলৌকিক ঘটনা তো তোমরা দিবারাত্র কত শতবার স্বচক্ষে অবলোকন করছ। এরপরেও কেন তবে পরকালের প্রতি অবিশ্বাস। ”

(আরবী************************************)

(আখেরাত অবিশ্বাসী) বলে, “মৃত্যুর পর হার-মাংস ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার পর এমন কে আছে যে, এগুলোকে পুনর্জীবিত করবে?” (হে নবী) তাকে বলো, “প্রথমে তাকে যিনি সৃষ্টি করেসছিলেন, তিনিই তাকে পুনর্জীবন দান করবেন। তাঁর সৃষ্টিকৌশল্যে পরিপূর্ণ দক্ষতা আছে। তিনিই তো তোমাদের জন্যে শ্যামল বৃক্ষরাজি থেকে আগুন সৃষ্টি করেছেন এবং তাই দিয়ে তোমরা তোমাদের উনুন জ্বালাও। যিনি আসমান যমীন পয়দা করেছেন, তিনি কি এ ধরনের কিছু পয়দা করতে সক্ষম নন? নিশ্চয় সক্ষম। তিনি তো নিপুন সৃষ্টিকৌশল্যে অতি দক্ষ। তিনি যখন কোন কিছু করার ইচ্ছা করেন তখন শুধু হুকুম করেন যে, হয়ে যা, আর তখন তা হয়ে যায়।”

-(সূরা ইয়াসীনঃ ৭৮-৮২)

পুনর্জীবন সম্পর্কে এর চেয়ে বড়ো যুক্তি আর কি হতে পারে? দৃষ্টান্ত স্বরূপ একজন ঘড়ি প্রস্তুতকারকের কথাই ধরা যাক যে ব্যক্তি শত শত ঘড়ি তৈয়ার করছে। তার চোখের সামনে একটি ঘড়ি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে যদি কেউ বলে এ ঘড়ি আর পুনরায় কিছুতেই তৈরী করা যাবে না। তাহলে তার নির্বুদ্ধিতা সকলেই স্বীকার করবে। নিত্য নতুন ঘড়ি তৈরী করাই যার কাজ সে একটা ভাঙা ঘড়ির ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অংশগুলোর সমন্বয়ে অবিকল আর একটি ঘড়ি নিশ্চয়ই তৈরী করতে পারবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। যে সর্বশক্তিমান স্রষ্টা ও শিল্পী প্রথমবার মানুষকে বিচিত্র উপায়ে যেসব উপাদান দিয়ে তৈরী করেছেন পুনর্বার তিনি তা পারবেন না এ চিন্তাটাই অদ্ভুত ও হাস্যকর। একটা পূর্ণাংগ মানুষ সৃষ্টির পশ্চাতে ক্রমবিকাশ ক্রিয়াশীল থাকে। প্রথমে নারী গর্ভে একটি কোষ অতপর রক্তপিণ্ড, অতপর মাংস পিণ্ড, অতঃপর একটা পূর্ণাংগ মানুষ। এ ক্রমবিকাশের পশ্চাতে একমাত্র মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাই কাজ করে। মানুষ সৃষ্টির এমন ক্রমিক পদ্ধতি থালকেও আল্লাহর হুকুম হওয়া মাত্রই কোন কিছু অস্তিত্ব লাভ করতে পারে। এ ক্ষমতাও তার আছে। অতএব মৃত্যুর পর মানুষের পুনর্জীবনলাভের জন্যে নারী গর্ভের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে আসার প্রয়োজন হবে না এবং আল্লাহর ইচ্ছাও তা নয়। শুধু প্রয়োজন তাঁর ইচ্ছা এবং নির্দেশের। তাঁর ইচ্ছা এবং নির্দেশে মানবদেহের ক্ষয়প্রাপ্ত অনু-পরমানুগুলো সমন্বিত হয়ে মুহূর্তেই রক্ত-মাংস অস্থি-চর্মের একটি পূর্ণাংগ মানুষ হবে জীবিত অবস্থায় অস্তিত্ব লাভ করবে। এ এক অতি সহজ ও বোধগম্য কথা।

                                   _________________________

Page 3 of 9
Prev1234...9Next

@BJI Dhaka City South

কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক

@BJI Dhaka City South