সোনালী সূর্যের প্রত্যাশা
আটলান্টিকের পূর্ব উপকূল থেকে নিউগিনির পশ্চিম সীমান্ত এবং সোভিয়েত সাইবেরিয়ার দক্ষিন সীমান্ত থেকে মধ্য আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল ভূ- ভাগকেই প্রধানতঃ আমরা মুসলিম বিশ্ব বলে অভিহিত করতে পারি । এই মুসলিম বিশ্ব প্রায় ষাটটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্রে বিভক্ত । এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন জাতি- রাষ্ট্রের অধীন অনেকগুলো পরাধীন মুসলিম এলাকা । অর্থাৎ মুসলিম বিশ্বে- একক জাতি দেহ আজ বহু খণ্ডে বিভক্ত । বিভক্ত শুধু নয়, তারা অনেকে পারস্পরিক সংঘর্ষেও লিপ্ত । মুসলিম উম্মাহ এইভাবে দ্বন্দ্বমান জাতি রাষ্ট্রে বিভক্ত হওয়া ছাড়াও অভ্যন্তরীনভাবে বহু মত ও তরিকায় বিভক্ত খণ্ড- বিখণ্ড । বিখণ্ডিত মুসলিম বিশ্ব বিভক্ত উম্মাহ আপনাকে নিয়ে আপনি আজ এতোটাই সংকট কবলিত যে, বিশ্বের প্রতি, মানবতার প্রতি কোন দায়িত্বই পালন করতে পারছে না । পারছে না শুধু নয়, তারা আজ করুণার শিকার । একদিনের তাঁদের সেই দাতার হাত আজ নির্লজ্জের গ্রহীতার হাতে পরিনত। মুসলিম উম্মাহর অনৈক্য ও অধঃপতন আজ এতোটাই ভয়াবহ যে, ঐক্যের প্রয়োজন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আজ যেমন বেশি, তেমনি তা আজ এক দুর্লভ বস্তুও ।
মুসলিম অনৈক্য ও অধঃপতনের বিপজ্জনক শুরু খোলাফায়ে রাশেদিনের পর থেকেই । কিন্তু তখনকার সে অনৈক্য ছিল নিছকই একটা ক্ষমতার দ্বন্দ্ব যা ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল । জাতি- রাষ্ট্র ও ধর্ম নিরেপক্ষতার মতো জাহেলিয়াত তখন মুসলিম উম্মাহর দেহে প্রবেশ করে নি । এই রোগের অনুপ্রবেশ ঘটে মুসলিম বিশ্বে বিজাতীয় উপনিবেশিক শাসন চেপে থাকার সময় । আর এর উৎকট প্রকাশ ঘটে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দ্বন্দ্ব সংঘাত ও বিপর্যয়ের সুযোগে যখন ঔপনিবেশিকদের প্ররোচনায় মুসলিম উম্মাহ ভৌগলিক ও ভাষাভিত্তিক জাতি রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘাত সংঘর্ষে লিপ্ত হয় । ফল হয় ভয়াবহ । ওসমানিয়া খেলাফত টুকরো টুকরো হয়ে যায় এবং জাতীয়তাবাদের জাহেলিয়াত পূর্ণরূপে মাথা তুলে দাড়ায় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মুসলিম বিশ্বের জন্যে আশীর্বাদ হয়ে আসে । ঔপনিবেশিক কবল থেকে মুসলিম দেশগুলো স্বাধীনতা লাভ করে । কিন্তু মুসলিম উম্মাহর ভৌগোলিক ও ভাষাভিত্তিক বিভক্তি তীব্রতর হয়ে উঠে এবং সৃষ্টি হয় ডজন ডজন জাতীয়তাবাদী মুসলিম রাষ্ট্র । মুসলিম উম্মাহ আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয় ‘জাতীয়তাবাদ’ নামের এক নতুন জাহেলিয়াতের ক্লেদাক্ত সয়লাবে । এ যুগের শ্রেষ্ঠ চিন্তা নায়ক সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী বলেছেন—-
“পশ্চিমী জাতিসমূহের নিকট যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের পরাজয় তাঁদের চিন্তা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির কাছে আমাদের আত্মসমর্পণকে ব্যাপকতর করে দেয় । তাঁদের জীবন দর্শন তাঁদের তরবারীর চেয়ে ভয়াবহ প্রমানিত হয় । তাঁদের রাজনৈতিক আধিপত্য আমাদের দেহকেই মাত্র শৃঙ্খলিত করেছিলো, কিন্তু তাঁদের সংস্কৃতি ও আদর্শ আমাদের মন- মানসকে বিকৃত করে দেয় । ফলে বিজাতীয় জাতিতত্ত্ব, যা আমাদের কাছে গত শতাব্দী পর্যন্ত অপরিচিত ছিল, মুসলমানদের গ্রাস করলো । মুসলিম উম্মাহর গৌরবান্বিত সদস্য হবার বদলে তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি রাষ্ট্রের সদস্য হয়ে দাঁড়ালো ।” —( Movement for the unity of the Muslim states, by sayed abul a’la maududi, Muslim news international, Jan. 1967 )
জাতীয়তাবাদ আর একটা ভয়াবহ রোগ সাথে করে নিয়ে এলো । সেটা হল ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ যার অনুপ্রবেশ মুসলিম মানসকে দ্বন্দ্ব ও বৈপরীত্যে আচ্ছন্ন করে তাঁর অধঃপতনকে দ্রুততর করে তোলে । পশ্চিমী চিন্তা ও আদর্শকে গ্রহন করার ফলে প্রাচ্যের মুসলমানরা মনের দিক থেকে পশ্চিমী বনে গেলো । পতনের এই প্রকৃতিকে তুরস্কের বিখ্যাত লেখক জিয়া গোকালপ সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন । তিনি বলেছেন—-
“যখনই আমরা বলবো আমরা তুর্কী জাতি, তখনই আমাদের ভাষা, নৈতিকতা, আইন, আদর্শ, দর্শন ও ব্যক্তিত্ব সবই তুর্কী সংস্কৃতি, রুচি ও স্বকীয়তার মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে । আবার যখনই আমরা বলবো, আমরা ইসলামী উম্মাহর সদস্য, তখনই আল কুরআন হবে আমাদের কাছে জীবন বিধান, মহানবী ( সাঃ ) হবেন আমাদের নেতা, কা’বা হবে পবিত্রতম কেন্দ্র এবং ইসলাম হবে আমাদের জীবন ব্যবস্থা । আর যখনই আমরা পশ্চিমী সভ্যতাকে আমাদের মনে করবো, তখনই দর্শন, বিজ্ঞান সবকিছুর দিক দিয়ে আমরা ইউরোপীয়ান বনে যাবো ।” ( The Principle of Turkism, by zia gokalp )
পশ্চিমী দর্শন ও কালচারের কাছে আমাদের আত্মসমর্পণ আমাদেরকে মনের দিক দিয়ে ইউরোপীয়ই করেছিলো । আশা ছিল ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের জনগনের স্বাধীনতা সংগ্রাম সফল হবার পর সুদিন ফিরে আসবে, ইসলামী সমাজ সংস্কৃতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে এবং তাঁর ফলে মুসলিম উম্মাহর খণ্ড- বিখণ্ডিত দেহ আবার জোড়া লাগার একটা পথ হবে । কিন্তু তা হল না । ঔপনিবেশিকদের শিক্ষায় শিক্ষিত নেতারা বিশ্বাসঘাতকতা করলেন । স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ইসলামের নামে জনগন জাগ্রিত হলো, নেতারা জনমতকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিতে পরিণত করার জন্যে ইসলামের কথা বললেন, কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পর তারা সুর পালটালেন । তুরস্কের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় কামাল পাশা “Jihad Armies of the Ummah of Muhammad” উপাধী লাভ করেছিলেন ( Islam and political movement in turkey by Binnas Tpopak, page 36-37 ) । এই মোস্তফা কামালই স্বাধীনতার পর তুরস্কের সমাজ- সংস্কৃতিকে ইসলাম থেকে মুক্ত করার জন্য সতের বার সামরিক শাসন জারি করেন । কায়েদে আযম মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহকে আমরা এই ভূমিকাতেই দেখি । পাকিস্তান আন্দোলনের সময় তিনি বলেছিলেন, তিনি প্রথমে ভারতীয় নন, তিনি প্রথমে মুসলিম, তারপর ভারতীয় । এবং তিনি বলেছিলেন, ‘মুসলমানদের আদর্শ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের লালনের জন্য তারা স্বাধীন আবাসভূমি চান ।’ কিন্তু সেই কায়েদে আযমই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তানের সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “I think we would keep that infront’ as our ideal, and you will find that in the course of time Hindus will cease to be Hindus and muslims cease to be muslims, not in the religious sense because that is the personal faith of —— individual, but in the political sense as citizens of the state.” ( Quated in ‘constitutional development of Pakistan by G. W. Chodhury, page 63-64 )
অর্থাৎ মুসলমানরা স্বাধীন পর হবার তাঁদের সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে ইসলামের আদর্শ, সংস্কৃতি বিতাড়িত হলো । এর ফল হলো ভয়াবহ । মুসলিম দেশে ইসলাম পরবাসী হয়ে গেলো, জাহেলিয়াত বিজয় লাভ করলো ইসলামের উপর । বার্নাড লুইসের ভাষায়, ‘‘এবার ইসলামের সংঘাত বাধল অতীতের মতো লাত, উজ্জার সাথে নয়, বরং নতুন প্রতিমা জাতি রাষ্ট্র ও জাতীয়তাবাদের সাথে, আর এই সংঘাতে ইসলামের উপর প্রতিমাই বিজয় লাভ করলো ।” ( Return of Islam, by Brnard Luis )
মুসলিম উম্মাহর সার্বিক অধঃপতিত অবস্থা যেমন তাঁর উত্থান ও ঐক্যের পথে একটা অন্তরায় হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, তেমনি তা আজ কতগুলো চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি । প্রথম চ্যালেঞ্জ পশ্চিমী ষড়যন্ত্র । এ ষড়যন্ত্র অত্যন্ত পুরানো । একসময় এ ষড়যন্ত্র চালিত হয়েছিলো মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিনষ্ট করার জন্য, তারপর অধঃপতন যুগের এই ষড়যন্ত্র মুসলিম উম্মাহকে আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে তাঁর পতনকে তরান্বিত করেছিলো । তুর্কী খিলাফতকে পশ্চিমা ষড়যন্ত্র কিভাবে যন্ত্রনা দিয়ে গেছে বছরের পর বছর, তাঁর কাহিনী রচিত হলে তা হবে আমার মনে হয় জগতের সবচেয়ে বড় বিয়োগান্ত মহাকাব্য । তুর্কী খিলাফতের অধীন বুলগেরিয়ার কৃষক হত্যা নিয়ে পশ্চিমী শক্তি যে নির্লজ্জ আচরনের পরিচয় দিয়েছিলো তা চিরকাল পশ্চিমী ষড়যন্ত্রের এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে । ব্রিটেনের গ্ল্যাডস্টোনের মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তি এ সম্পর্কে মিথ্যা কাহিনী রচনা করে ইউরোপের ঘরে ঘরে প্রচার করে গোটা ইউরোপকে তুর্কী খিলাফত ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল । অথচ ইউরোপীয় ঐতিহাসিকরা বলছেন বুলগেরীয় গণহত্যার জন্য একদিকে বুলগেরিয়ার খৃষ্টান কৃষক, অন্যদিকে রাশিয়া ও পশ্চিমী শক্তির ষড়যন্ত্রই সম্পূর্ণ দায়ী ছিল । এই পশ্চিমী ষড়যন্ত্র আজ আরো বিস্তৃত ও জোরদার হয়েছে । ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা, নাইজেরিয়ার আহমেদ বেল্লু ও আবু বকর বালেবা- তাফওয়ার হত্যা, ন্যাশনালিজম ও সেকুলারিজমের উত্থান, মুসলিম দেশগুলোর অশান্ত পরিস্থিতি ও পারস্পরিক সংঘাত, প্রভৃতি তাঁদের ষড়যন্ত্রেরই ফল । মুসলিম বিশ্ব ও ইসলামী উম্মাহর ঐক্যের পথে এই ষড়যন্ত্র আজ এক দুর্লঙ্ঘ বাঁধা । মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের পথে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ বিজাতীয় শিক্ষা- সংস্কৃতির অব্যাহত আগ্রাসন । পশ্চিমের অনাত্মীয় শিক্ষা দর্শন ও উপকরন আমাদের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবনকে আজও নিয়ন্ত্রণ করছে । তুর্কী খিলাফতের সময় তানজিমাত নেতৃত্বের আমলে আমাদের একক শিক্ষা ব্যবস্থা দ্বিধা- বিভক্ত হয়ে যায় । দুটি ধারাকেই পশ্চিমী শিক্ষা দর্শন নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে, কিন্তু প্রধান ধারাটি হয়ে ওঠে ঔপনিবেশিকদের কাছে নিজের মতো লোক তৈরির কারখানা । লর্ড ব্যাকলের ভাষায় এই শিক্ষার লক্ষ্য ছিল, “To form a class who may be interpreters of between us and the millions whom we govern a class of persons Indian in blood and color but English in task, in opinion, in morals and in intellect.”
এইভাবে পশ্চিমী শিক্ষার এই ধারা জাতির জন্য প্রয়োজনীয় মানুষ তৈরি না করে বিভীষণ বানাচ্ছে । অন্যদিকে তথাকথিত ইসলামী শিক্ষার ধারা যাদের তৈরি করছে তারা যুগের প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে অযোগ্য প্রমানিত হচ্ছে । এরা দু’দলই মুসলিম উম্মাহর উত্থান ও ঐক্যের পথে বাঁধা সৃষ্টি করছে — এক পক্ষ ভ্রান্তিজনিত শত্রুতা বশতঃ , অন্যপক্ষ অযোগ্যতাজনিত কারনে । এ ধরনের মৌল চ্যালেঞ্জ পাশ কাটিয়ে মুসলিম বিশ্ব ও ইসলামী উম্মাহর ঐক্য সম্ভব নয় । মুসলিম বিশ্বের উত্থান ও ইসলামী উম্মাহর ঐক্যের পথে তৃতীয় চ্যালেঞ্জ আমাদের অর্থনৈতিক ও কারিগরি পশ্চাৎপদতা । পশ্চিমীরা আমাদের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সাহায্য দেয়ার নামে আমাদের শুধু শোষণ নয়, শাসনও করছে । আমরা তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে একপাও এগুতে পারি না । আমাদের অর্থনীতি, শাসনপদ্ধতি এবং সরকার পদ্ধতি কেমন হবে তা তারাই নির্ধারণ করে । এমনকি মন্ত্রীসভার গঠন পর্যন্ত তাঁদেরই মর্জি মোতাবেক হয় । আমাদের রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক আন্দোলন উভয়কেই তারা নিয়ন্ত্রণ করে । এই অবস্থায় হাত-পা বাঁধা মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ইসলামের উত্থান ও মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের জন্যে কিছুই করতে পারছে না । হাত-পা এইভাবে বাঁধা থাকার কারনেই মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানগণ ইসলামের উত্থানকে মৌলবাদ নামে অভিহিত করে তাঁর বিরোধিতা করতে বাধ্য হচ্ছেন । আর এই কারনেই আল্লাহর ঘর কা’বার ছায়ায় বসে স্বাক্ষর করা তাঁদের ঐতিহাসিক মক্কা ঘোষণা তারা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না । পশ্চিমের উপর নির্ভরতা থেকে সৃষ্ট এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা না গেলে মুসলিম বিশ্বের ঐক্য বিধানের স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে ।
মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের পথে চতুর্থ চ্যালেঞ্জ হল, পশ্চিমী দুনিয়ার অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ এবং তাঁদের প্রপাগান্ডা । এই ক্ষেত্রে পশ্চিমী দুনিয়া এতই নিপুন যে, বহু ক্ষেত্রে তাঁদের ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করা যায় না । পড়েছিলাম, ইন্দোনেশিয়ায় তারা কম্যুনিস্ট পার্টি ঠেকাবার জন্য কম্যুনিস্ট পার্টি গড়েছিল যাদের বিপ্লবী শ্লোগান আসল কম্যুনিস্ট পার্টিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলো । অনুরূপভাবে তারা ইসলামী আন্দোলনকে ঠেকাবার জন্য ইসলামের সাইনবোর্ডে দল গঠন করতে পারে, যারা অতি বিপ্লবী শ্লোগান এবং অতি বিপ্লবী সব কাজ করে ইসলামী আন্দোলনের ক্ষতি সাধন করতে পারে । একটু খুজলেই হয়তো আমরা মুসলিম বিশ্বে এর দৃষ্টান্তের দেখা পাবো । পশ্চিমের বিচিত্র ধর্মীয় প্রচার কৌশলের মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে কাজ হাসিল করে নেয়া তাঁদের একটা মারাত্মক অস্ত্র । ডঃ সুকর্ণের আমলে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া যুদ্ধের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে ছিল পশ্চিমের ছড়ানো ভুল তথ্যের উপরে ভিত্তি করেই । সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি ছদ্ম পরিচয়ে ভুল তথ্য দিয়ে উভয়কেই বুঝিয়েছিল যে, সে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে । ফলে উভয় দেশই একে অপরের বুকে বন্দুক তাক করে ধরেছিল । পরে একজন কেজিবি এজেন্ট বিস্ময়ের সাথে এ সম্পর্কে বলেছিল, “আমাদের তথ্য প্রচারনা এমন ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করে যা আমাদেরকেই হতবাক করে দেয় ।” পশ্চিমের প্রচার শক্তি আগের চেয়ে আজ আরো বেড়েছে । তারা সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য করবার ক্ষমতা রাখে । পশ্চিমের এই শক্তি ইসলামের উত্থান ও মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের পথে আজ এক বিপজ্জনক বাঁধা ।
মুসলিম বিশ্বের ঐক্য বলতে আমরা বুঝি খিলাফতের মতো ব্যবস্থার অধীনে গোটা মুসলিম বিশ্বে একক এক রাষ্ট্র । অথবা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর একটা ফেডারেশন বা কনফেডারেশন । এমন একটা ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমেই মুসলমানরা আজ দুনিয়াকে কিছু দান করতে পারে । আর আজকের দুনিয়াও এটাই প্রত্যাশা করে । আমরা যদি চোখ মেলে চাই তাহলে দেখবো দুনিয়ার মানব সভ্যতা আজ এক পরিবর্তনের দাড় প্রান্তে দাঁড়িয়ে । পি, এ সরোকিন বলেছেন—-
“We are living and acting at one of the epoch-making turning points of human culture and society sensate is declining and different from is emerging.” অর্থাৎ পুরাতনের বিদায় হচ্ছে, আর নতুন কিছুর আগমন আসন্ন । কারো কারো মতে, “Mans very survival hings on the emergence of a new order.” এই ‘নিউ অর্ডার’ টা কি ? সবাই এ ব্যাপারে একমত যে, বস্তুবাদের পক্ষে যা দেবার তা দিয়ে বস্তুবাদ আজ শেষ হয়ে যাচ্ছে । বস্তুবাদ একদিন বলেছিল, বস্তুর বাইরে কিছু নেই, সেই বস্তুবাদই আজ পরিনত বয়সে পৌছার পরে বলছে, বস্তুর অরূপ অস্তিত্বই বেশি বলশালী যা ছিল এতোদিন আধ্যাত্মবাদীদের কথা । এইভাবে বিজ্ঞান যেমন আজ অরূপ জগতের যাত্রী, তেমনি বস্তুবাদ ক্লান্ত মানুষও আজ দৈহিক শান্তির চেয়ে মনের শান্তির জন্যে বেশি আকুল হয়ে উঠছে । এই অবস্থায় আজ দৈহিক ও মানসিক ভারসাম্যের বিধানকারী ইসলাম মানবতার জন্য একমাত্র বিকল্প হয়ে দাঁড়াচ্ছে । কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে এই কথা বলা যতো সহজ, বাস্তবক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে ইসলামকে দাড় করানো তত সহজ নয় । এরজন্য প্রয়োজন মুসলমানদেরকেই প্রথমে মুসলমান হওয়া, তারপর প্রয়োজন মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানো । তাহলেই শুধু মুসলমানরা বিশ্বের মানুষদেরকে পথ দেখানোর দায়িত্ব পালনে সমর্থ হবে । মুসলমানদের যে সামর্থ্য ও যে চ্যালেঞ্জের কথা উপরে বলেছি, সেদিক থেকে বিচার করলে আজকের দুনিয়ায় এই কাজ সহজ বা হওয়ার কারন বিশ্বের সবাই ইসলামের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন । ইসলামের উত্থান এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের যে কোন উদ্যোগ পশ্চিমের তরফ থেকে বাঁধার সম্মুখীন হবে । তাছাড়া মুসলমানদের মুসলমান বানাবার কাজ রাতারাতি করে ফেলা সম্ভব নয় । এজন্য সুকৌশল এবং ধীর পদ্ধতিতে সমাজের তলদেশ থেকে আমাদেরকে ইসলামের উত্থান ও মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের যাত্রা শুরু করতে হবে । প্রথমে ব্যক্তি হবে লক্ষ্য, তারপর জাতি, রাষ্ট্র, সবশেষে মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তর অংগন । বিষয়টি আরো একটু বিস্তারিত করে বলা যেতে পারে ।
ব্যক্তিগত পর্যায়ঃ ব্যক্তি হল সমাজের মৌল একক । বহু ব্যক্তির সমন্বয়ই হল সমাজ । সুতরাং জাতির সংস্কার এবং সংশোধনের কাজ ব্যক্তি পর্যায় থেকেই শুরু করতে হবে । কেউ বলতে পারেন এই সংস্কারের কাজ উপর থেকে অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকেও হতে পারে । তবে এরজন্য যারা এই সংশোধনের সংস্কার কাজ করতে চান তাঁদের ক্ষমতা দখল করতে হবে । শুধু ক্ষ্মতা দখল নয়, ক্ষমতার যারা নিয়ামক বা ভিত্তি সেগুলোকেও আপনার করে নিতে হবে । কিন্তু এটা করার কোন শর্টকার্ট পথ নেই । আর যে চ্যালেঞ্জগুলো মুখ ব্যাদান করে আছে তারা এটা হতেও দেবে না । বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে আফগান জিহাদ মুখ থুবড়ে পড়লো কেন ? হিজরি পঞ্চদশ শতককে ইসলামের ইসলামের শতক হিসেবে ঢাক- ঢোল পিটানো হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো কেন ? বিভিন্ন মুসলিম দেশে ইসলামী আন্দোলন কেন অনাত্মীয়ের আচরনের শিকার ? তাঁর জবাবগুলো সামনে আসলেই এর সত্যতা বুঝা যায় । সুতরাং উপর থেকে নয়, ব্যক্তি সংশোধনের মাধ্যমেই সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও পরিবর্তনের পথে এগুতে হবে ।
জাতি রাষ্ট্র পর্যায়ঃ ব্যক্তি সংশোধনের উপযুক্ত ও অব্যাহত কাজ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৎলোক ও সৎ নেতৃত্বের উত্থান ঘটাবে । এদের ক্রামশিক সংখ্যা বৃদ্ধি রাজনৈতিক দলগুলো এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে শুভ প্রভাব ফেলবে । সমাজের সব ক্ষেত্রে এই সংশোধন- মুখীতা দেশের শাসনতন্ত্র ও শাসনকাজেও সংশোধন আনবে ।
মুসলিম আন্তঃরাষ্ট্র পর্যায়– জাতি-রাষ্ট্র পর্যায়ের সংশোধন মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ঐক্যের বাধাগুলোকে অপসারিত করবে এবং মুসলিম বিশ্বের ফলপ্রসূ ঐক্য সম্ভব করে তুলবে । মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা কেউ একাহ্নে তুলতে পারেন । লিবিয়া- মিশর, মিশর-সিরিয়া, সিরিয়া- ইরাক, মিশর- ইয়েমেন প্রভৃতি ঐক্য টিকে নি । আরব লীগের ঐক্যেরও কোন মূল্য নেই । এমনকি ও,আই,সি- র ঐক্যও কোন কাজ দিচ্ছে না । এর জবাব খুব সোজা । মুসলিম দেশগুলোর সার্বিক জনমত ইসলামের ভিত্তিতে গড়ে উঠেনি, মুসলিম রাষ্ট্রের সরকারগুলোও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমলের দিক থেকে ইসলামী নয়, সুতরাং তাঁদের ঐক্য ইসলামী হবে কি করে এবং টিকবে কিভাবে ? জাগতিক স্বার্থের কারনে যে ঐক্য হয়, জাগতিক স্বার্থের কারনে তা ভেঙ্গে যায় । সন্দেহ নেই, অ,আই,সি-এর ঐক্য ইসলামের ভিত্তিতে হয়েছে, কিন্তু সদস্য সরকারগুলোর অধিকাংশ যেহেতু ইসলামের ভিত্তিতে গঠিত নয় এবং যেহেতু ইসলামী আমল তাঁদের নেই, তাই ও, আই,সি- এর মহৎ ঘোষণা এবং প্রতিশ্রুতিগুলো তারা বাস্তবায়ন করতে পারছে না । সরকারগুলো ইসলামী হলেই কেবল দেখা যাবে অ,আই,সি বিস্ময়কর কাজ দিচ্ছে ।
যদিও আমাদের পতন অত্যন্ত গভীর, যদিও মুসলিম বিশ্ব খন্ড- বিখন্ড এবং বেদনাদায়ক দ্বন্দ্ব- সংঘাতে পূর্ণ, যদিও হতাশার অন্ধকার বড় তীব্র, তবুও আশার আলোকবর্তিকা আর মাঝে দৃশ্যমান । আমরা দেখছি, পতনের ষোলকলা যখন পূর্ণ, আশার প্রদীপ তাঁর পাশে জ্বলে উঠছে। মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক ঐক্যের প্রতীক খিলাফত ব্যবস্থার অবলুপ্তি ঘটানো হলো ১৯২৩ সালে । প্রায় সংগে সংগেই আবার ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলো । এই সময়ের দুটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য । মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রয়াসে ১৯২৬ সালে দুটি আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । প্রথমটি অনুষ্ঠিত হয় কায়রোতে ১৯২৬ সালের ১৩ই মে থেকে ১৯শে মে পর্যন্ত । দ্বিতীয়টি অনুষ্ঠিত হয় মক্কায় ঐ বছরেই ৭ই জুন থেকে ৫ই জুলাই পর্যন্ত । বাদশাহ ইবনে সৌদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মক্কা সম্মেলনটাই সফল হলো । এই সম্মেলনে গঠিত হয় মোতামা আল- আলম আল ইসলামী । মোতামার ফিলিস্তিন কেন্দ্রিক কিছু কাজ করা ছাড়া মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিধানে বেশি কিছু না করতে পারলেও এর গঠন বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে । মোতামার সম্পর্কে বলতে গিয়ে H. A. R GIBB লিখছেন, “a new and important element in the structure of Muslim society, by which for the first time the and middle classes were organized for the furtherence of Muslim object. They there for represented —- the genuine ‘public opinion’ of Muslim countries and were able to influence opinion to a much greater degree.”
মোতামার আলোড়ন সৃষ্টি করলেও নানা কারনে ফলপ্রসূ সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠতে ব্যর্থ হয় । অনেক পরে ১৯৬২ সালে সৌদি আরবের উদ্যোগে মুসলিম বিশ্বের ইসলামী ব্যক্তিত্বদের নিয়ে মক্কায় একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । লক্ষ্য ছিল আরব জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রের সয়লাবের বিরুদ্ধে একটা ইসলামী প্রতিরোধ সৃষ্টি করা । এই সম্মেলনেই গঠিত হয় ‘রাবেতা আল আলম আল- ইসলামী’ । আর মুসলিম উম্মাহর যুবকদের সংগঠন হিসেবে ১৯৭২ সালে সৌদি আরবের রিয়াদে গঠিত হয় ‘ওয়ার্ল্ড এসেম্বলী অব মুসলিম ইয়ুথ’ । মুসলিম উম্মাহর যুবকরা যদি জ্ঞান, নিষ্ঠা ও শক্তিতে সজ্জিত হয়, তাহলে তারা ইসলামী রেনেসাঁর ভিত্তি, ক্ষমতার উৎস এবং জাতীয় আশা- আকাঙ্ক্ষার ধারক ও বাহক হতে পারে – এই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই ওয়ামীর প্রতিষ্ঠা হয় । মুসলিম ছাত্রদের আন্তর্জাতিক ফোরাম হিসেবে গঠিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফেডারেশন অব স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন’ ( IIFSO )
মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের আর একটা ফোরাম হল ‘অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স’ ( ও,আই,সি ) । ওআইসি- এর গঠন মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব ঘটনা । ইসলামের ভিত্তিতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর এ ধরনের সংগঠন অতীতে আর কোন সময়ই হয়নি। বিশেষ করে যে পটভূমিতে আর যে উদ্দেশ্য নিয়ে ওআইসি গঠিত হয়েছে, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ । সমাজবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতার ঢেউ- এ যখন মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে আরব বিশ্ব সয়লাব হতে চলেছে, তখন সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল বিন আব্দুল আজীজ ইসলামের ভিত্তিতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ঐক্যের শ্লোগান তুললেন । তিনি বললেন, “It is moments, when islam is facing many undercurrents that are pulling Muslims left and right, east and west, that we need time for more co-operation and closer ties to enable us to face all the problems and difficulties that obstruct our ways as an islamik nation, believing in god, His prophet and His laws.”
কিন্তু বাদশাহ ফয়সালের উদ্যোগ তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয় । তুরস্ক, সিরিয়া, মিশর এবং লিবিয়ার মতো দেশ ইসলামের ভিত্তিতে এধরনের ঐক্য প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে । তাঁদের মতে ইসলামের ভিত্তিতে কোন রাষ্ট্রীয় ঐক্য সংস্থা গঠন ঠিক হবে না । ১৯৬৯ সালে ইহুদীরা মসজিদে আকসায় আগুন দিলে পরিস্থিতি বাদশাহ ফয়সালের অনুকূলে চলে যায় । শেষ ১৯৬৯ সালের সেপ্টেম্বরে রাবাতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । ইরাক এবং সিরিয়া বৈঠক বয়কট করে । শেষ পর্যন্ত ২৫ জন রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে ওআইসি গঠিত হয় । মুসলিম ঐক্যের এই সংস্থাগুলো থেকে আকাঙ্ক্ষিত ফল এখনো পাওয়া যায়নি একথা সত্য, কিন্তু মুসলিম ঐক্যের বিষয়টা যে কোন আকাশকুসুম কল্পনা নয়, তা প্রমানিত হয়েছে । এমন একদিন ছিল যখন অমুসলিমরা তো বটেই, এমনকি মুসলিম রাজনিতীকরা পর্যন্ত রাবেতা এবং ওআইসির মতো ঐক্য সংগঠন করার কথা কল্পনাও করতে পারে নি । বরং এমন আইডিয়াকে তারা বিদ্রূপ করতেন । পাকিস্তানের এককালের প্রধানমন্ত্রী জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারদী মুসলিম ঐক্যের চিন্তাকে ‘জিরো’ বলে অভিহিত করে মন্তব্য করেছিলেন, “Zero plus zero plus zero plus zero is after all equal to zero.”
কিন্তু সবার মুখে ছাই দিয়ে ইসলাম প্রমান করেছে আজকের চরম আদর্শিক অবক্ষয়ের যুগেও ইসলামের ভিত্তিতে ঐক্য গড়া সম্ভব । এক সময় যা স্বপ্নেরও অতীত ছিল আজ তা বাস্তব । এই বাস্তবতাই ইংগিত দিচ্ছে যে, আমরা মুসলিম উম্মাহ ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে ধরনের ঐক্য চাই তা ভোরের সূর্যোদয়ের মতই তাঁর পূর্ণ অবয়ব নিয়ে সামনে অপেক্ষা করছে।
কিন্তু এজন্য চাই নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সাথে আমাদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা । আমরা ইসলামের উত্থান এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের জন্যে যে পথ অনুসরন করবো তা হতে হবে সুবিবেচিত । ইসলামের উত্থান ও মুসলিম ঐক্যের শত্রুরা শুধু সংখ্যায় বেশি নয়, তারা কুশলী এবং শক্তিশালীও । তারা শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে । আমাদের যে কোন উদ্যোগ তারা নস্যাৎ করে দিতে প্রস্তুত, সেটা কখনো শত্রু হিসেবে, কখনো বিপথে চালনাকারী বন্ধু হিসাবে, কখনো বা আবার ছদ্মবেশী অনুপ্রবেশকারী হিসেবে । সুতরাং ঐক্য ও উত্থানের পথে প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের হতে হবে সুচিন্তিত । আমাদের কথা ও আবেগকে অবশ্যই অনুসরন করতে হবে জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার নির্দেশ । মাক্কী জীবনে মহানবী ( সাঃ ) যা করছেন সেই বেশি কাজ, কম প্রদর্শনী এবং প্রতিশোধ গ্রহন না করার শান্তিবাদী নীতিই এখন আমাদের অনুসরন করতে হবে । বিশ্ব পরিস্থিতির যে পর্যায়ে আমরা অবস্থান করছি তাতে নেতিবাচক নয়, ইতিবাচক কাজই আমাদের সাফল্যের সোনালী পথ ।
( প্রবন্ধটি ১৯৯৩ সালে লিখিত হয় । )