জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

আর রাহীকুল মাখতূম

অন্তর্গতঃ উচ্চতর অধ্যয়ন, সীরাত ও ইতিহাস
Share on FacebookShare on Twitter

আর রাহীকুল মাখতূম

রসূলুল্লাহ (স.)-এর মহান জীবনী গ্রন্থ

[আন্তর্জাতিক সীরাত প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার বিজয়ী]

আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী

অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা মোনাওয়ারা

 অনুবাদ ও প্রকাশনাঃ খাদিজা আখতার রেজায়ী


স্ক্যান কপি ডাউনলোড


মিনতি আমার রাখো

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

ইয়ুসকাওনা মির রাহীকিম মাখতুম

খেতামুহু মেসকুল ওয়া ফী মালেকা

ফাল ইতানা ফাসিল মোতানাফেসুন

ছিপি আঁটা (বোতল) থেকে তাদের সেদিন বিশুদ্ধতম পানীয় পান করানো হবে, (পাত্রজাত করার সময়ই) কস্তূরীর সুগন্ধি দিয়ে যার মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। (মূলত এই হচ্ছে সেই লোভনীয় প্রাপ্য) যার প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হবার জন্যে প্রতিটি প্রতিযোগীরই এগিয়ে আসা উচিৎ। (সূরা মোতাফফেফীন, আয়াত ২৫-২৬)

আর রাহীকুল মাখতুম-ছিপি আঁটা মূল্যবান পানীয় দিয়ে আল্লাহ তায়ালা সেদিন তার আরশে আযীমে যার জন্যে এই দস্তরখান সাজাবেন, তিনি হচ্ছেন কুল মাখলুকাতের নয়নমণি হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

হে নবী, দুনিয়ায় সেই দুর্লভ বস্তু পাওয়ার প্রতিযোগিতায় আল্লাহ তায়ালা সম্মানিত প্রতিযোগীদের তালিকায় আমার নাম আদৌ শামিল করেছেন কিনা- আমি জানিনা, তাই সেদিনের সাজানো দস্তরখানে তোমার কাছে ঠাঁই পাওয়ার আশা আমার জন্যে দুরাশা বটে।

হে আল্লাহ আর রাহীকুল মাখতুম-এর বাংলা অনুবাদের এই মেহনতটুকু তুমি আমার কাছে থেকে গ্রহণ করো। এর বিনিময়ে কোনো জান্নাত নয়, জান্নাতের বালাখানার সাজানো সেই দস্তরখানও নয়, আমি যে তোমার রসুলেরই লোক এই স্বীকৃতিটুকুই তুমি সেদিন তাকে দিতে বলো।

-খাদিজা আখতার রেজায়ী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালাও, যিনি সমগ্র দুনিয়া জাহানের মালিক। তিনি অসীম দয়ালু, অত্যন্ত মেহেরবান। তিনি বিচার দিনের মালিক। (হে আল্লাহ) আমরা তোমারই বন্দেগী করি এবং তোমারই সাহায্য চাই। আমাদের সরল সঠিক পথ দেখাও। তাদের পথে, যাদের ওপর তুমি অনুগ্রহ করেছো। তাদের পথে নয়, যাদের ওপর তুমি অভিশাপ দিয়েছো এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। (সূরা ফাতেহা)

১

সূচীপত্র

  1. সংক্ষিপ্ত পটভূমিকা
    1. গ্রন্থকারের নিজের ভাষায়
  2. আঁধার ঘেরা এই পৃথিবীঃ সোবহে সাদিকের প্রতীক্ষায়
    1. আরবের প্রশাসনিক অবস্থা
    2. আরবদের ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মীয় মতবাদ
    3. জাহেলী সমাজের কিছু খন্ড চিত্র
  3. কোন বংশে সেই সোনার মানুষঃ আল আমীন থেকে আর রাসূল
    1. আল্লাহর রসুলের আবির্ভাব ও পবিত্র জীবনের চল্লিশ বছর
  4. নিজ ঘরে তিনি পরদেশীঃ যুলুম নিপীড়নের তের বছর
    1. প্রথম পর্যায়ঃ ব্যক্তিগত উদ্যোগ
    2. দ্বিতীয় পর্যায়ঃ প্রকাশ্য তাবলীগ
    3. আবিসিনিয়ায় প্রথম হিজরত
    4. দুঃখ বেদনার বছর
    5. প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবাদের ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা
    6. তৃতীয় পর্যায়ঃ মক্কার বাইরে ইসলামের দাওয়াত
  5. ইয়াসরাবের দশ বছরঃ ফকীরের বেশে বাদশাহ
    1. প্রথম পর্যায়ঃ নতুন সমাজ ব্যবস্থা রূপায়ন
    2. সশস্ত্র সংঘাত
    3. বদরের যুদ্ধ
    4. বদর যুদ্ধের পরবর্তী সামরিক তৎপরতা
    5. ওহুদের যুদ্ধ
    6. খন্দকের যুদ্ধ
    7. খন্দক ও কোরায়যার যুদ্ধের পর সামরিক অভিযান
    8. মোরিসিঈ যুদ্ধের পরবর্তী সামরিক অভিযান
    9. হোদায়বিয়ার সন্ধি
    10. বাদশাহ এবং আমীরদের নামে চিঠি
    11. হোদায়বিয়ার সন্ধির পর সামরিক তত্পরতা
    12. আরো কয়েকটি ছারিয়্যা
    13. মুতার যুদ্ধ
  6. মহাবিজয়ের দার প্রান্তেঃ আজ কোনো প্রতিশোধ নয়
  7. তৃতীয় পর্যায়ঃ হোনায়েনের যুদ্ধ
    1. তবুকের যুদ্ধ
    2. যুদ্ধসমূহের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনাঃ
    3. বিদায় হজ্জ
  8. বিদায় হে আমার বন্ধুঃ অন্তিম যাত্রার পথে মহানবী
    1. নবী পরিবারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
    2. তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট ও শারীরিক সৌন্দর্যঃ
  9. সহায়ক গ্রন্থসমূহঃ যে ফুল দিয়ে গেথেছি মালা

সংক্ষিপ্ত পটভূমিকা

কিছু নিজের কথা কিছু অন্যের কথা

আল্লাহ তায়ালা বলেন

অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা নিজে ও তার ফেরেশতারা সবাই নবী মোহাম্মদের ওপর দরুদ পাঠান, অতএব হে মানুষ, তোমরা যারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছো- তোমরাও তার ওপর একনিষ্ঠ দরুদ ও সালাম পাঠাও। (সূরা আহযাব ৫৬)

হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও য়া সাল্লাম

গ্রন্থকারের নিজের ভাষায়

গ্রন্থটির পরিচয়

১৯৭৬ সালের মার্চ মাস। ১৩৯৬ হিজরির রবিউল আউয়াল।

করাচীতে প্রথম বিশ্ব মুসলিম সীরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মক্কার রাবেতায়ে আলামে ইসলামী এ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে বিশ্বের সকল লেখকের প্রতি এক অভিনব আহবান জানানো হয়। রাবেতার পক্ষ থেকে প্রচারিত এই আহবানে বিশ্বের জীবন্ত ভাষাসমূহে রসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী রচনার কথা বলা হয়। এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের প্রথম পাঁচজনকে পুরস্কার দেয়া হবে বলেও জানানো হয়। পুরস্কারের পরিমাণ যথাক্রমে ৫০, ৪০, ৩০, ২০ ও ১০ হাজার সৌদি রিয়াল। রাবেতায়ে আলামে ইসলামীর সরকারী মুখপত্র আখতার আল আলামুল ইসলামী পত্রিকার কয়েকটি সংখ্যায় প্রতিযোগিতার ঘোষণা প্রকাশ করা হয়। আমি অবশ্য এ ঘোষণার কথা তখনো জানতে পারিনি।

বেশ কিছুদিন পরের কথা। বেনারস থেকে গ্রামের বাড়ী মোবারকপুর গেলাম। সেখানে শায়খুল হাদীস মওলানা ওবায়দুল্লাহ সাহেবের পুত্র আমার ফুফাত ভাই মাওলানা আবদুর রহমান মোবারকপুরী আমাকে কথাটি জানালেন। তিনি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আমাকে পরামর্শ দিলেন। নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে আমি অক্ষমতা প্রকাশ করি। কিন্তু মাওলানা আবদুর রহমান নাছোড়বান্দা। তিনি বিনয়ের সাথে বারবার বলছিলেন যে, প্রতিযোগিতায় আপনি পুরস্কার পাবেন এ জন্য নয়, বরং আমি চাই যে এই ওছিলায় একটা ভালো কাজ হয়ে যাক। ফুফাত ভাইয়ের বারবার অনুরোধের পরও আমি চুপ করে থাকলাম। মনে মনে ভাবছিলাম যে, প্রতিযোগিতায় আমি অবশ্য অংশগ্রহণ করব না।

কয়েকদিন পর জমিয়াতে আহলে হাদীস হিন্দ এর পাক্ষিক মুখপত্রেও এ খবর প্রকাশ করা হয়। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে জামেয়া সালাফিয়ার সর্বস্তরের ছাত্রদের এক বিরাট অংশ আমাকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন জানাতে শুরু করে। মনে মনে ভাবলাম, এতো কন্ঠের প্রতিধ্বনি সম্ভবত আল্লাহ পাকের ইচ্ছারই প্রতিফলন। তবুও প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে মনে মনে আমি প্রায় অটল থাকলাম। কিছুদিন পর অনুরোধ পরামর্শের তাকিদ কমে গেল। তবে কয়েকজন ছাত্র তাদের তাকিদ তখনো অব্যাহত রাখলেন। কেউ কেউ বিষয়ভিত্তিক নানা পরামর্শও দিতে লাগলেন। প্রিয়ভাজন কয়েকজন ছাত্রের অনুনয় বিনয় এবং তাকিদে কান এক সময় আমার ঝালাপালা হয়ে উঠলো।

কাজ শুরু করলাম, কিন্তু খুবই ধীরগতিতে। কাজের প্রাথমিক  পর্যায়ে এসে গেল রমযানের ছুটি। এদিকে রাবেতার ঘোষণায় বলা হয়েছিল যে, পরবর্তী মুহররমের প্রথম তারিখ হবে পাণ্ডুলিপিটি গ্রহণের শেষ তারিখ। সাড়ে পাঁচ মাস কেটে গেছে। হাতে সময় আছে মাত্র সাড়ে তিনমাস। এ সময়ের মধ্যেই পাণ্ডুলিপি তৈরী করে ডাকে দিতে হবে, তবেই সময়মতো তা পৌঁছুবে। এদিকে সব কাজ বাকি পড়ে আছে। বিশ্বাস ছিল না যে এতো কম সময়ে পাণ্ডুলিপি তৈরী, পুনরায় দেখে দেয়া এবং  কপি করানোর কাজ শেষ করা যাবে। কিন্তু তাকিদ যারা দিচ্ছিলেন তার বলছিলেন যে, কোন প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই যেন আমি কাজ চালিয়ে চাই। প্রয়োজনে যেন ছুটি নেই। ছুটির সময়কে আমি সুবর্ণ সুযোগ মনে করলাম। পুরো ছুটি স্বপ্নের মতো কেটে গেল। অনুরোধকারীরা ফিরে এসে দেখলেন যে, পাণ্ডুলিপির দুই তৃতীয়াংশ তৈরী হয়ে গেছে। রিভাইজ দেয়ার সময় না থাকায় কপি করার জন্য দিয়ে দিলাম। অবশিষ্ট অংশের মাল মসলা যোগানো কাজে তারা সহযোগিতা করলেন। জামেয়া খোলার পর কর্মব্যস্ততা শুরু হলো। একারণে ছুটির সময়ের মতো দ্রুত লেখার কাজ অব্যাহত রাখা সম্ভব হলো না। ঈদুল আযহার সময় দিনরাত লিখছিলাম এবং মহররম মাস শুরু হওয়ার বারো তেরদিন আগেই পাণ্ডুলিপি রেজিস্ট্রি ডাকে পাঠিয়ে দিলাম।

কয়েক মাস পরের কথা। রাবেতার পক্ষ থেকে এক রেজিস্ট্রি চিঠিতে পাণ্ডুলিপির প্রাপ্তিস্বীকার করা হয় এবং জানানো হয় যে, আমার পাণ্ডুলিপি তাদের শর্তানুযায়ী হওয়ায় প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়েছে। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

দিন কাটতে লাগলো। ইতিমধ্যে দেড় বছর কেটে গেল। রাবেতার কোন সাড়া নেই। দুটি চিঠি পাঠালাম। কি হচ্ছে জানতে চাইলাম। কিন্তু কোন জবাব পাওয়া গেলো না। এরপর ডুবে গেলাম নিজের কাজে। প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে, সীরাতুন্নবী বিষয়ক একটি প্রতিযোগিতায় আমি অংশ নিয়েছিলাম। ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসের ৬, ৭ ও ৮ তারিখে অর্থাৎ ১৩৯৮ হিজরির শাবান মাসে করাচীতে প্রথম এশীয় ইসলামী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্পর্কিত বিভিন্ন সংবাদ মনোযোগের সাথে পড়ছিলাম। ভাদুহি ষ্টেশনে একদিন ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলাম। ট্রেন একটু লেট ছিল। সেদিনের কাগজ কিনে পড়তে লাগলাম। ছোট একটি খবরে চোখ পড়লো। করাচীতে অনুষ্ঠানরত ইসলামী সম্মেলনের এক অধিবেশনে সীরাতুন্নবী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিজয়ী পাঁচজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ভারতীয় প্রতিযোগী রয়েছেন। এ খবর পড়ে মনে মনে চঞ্চল হয়ে উঠলাম। বেনারসে এসে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম।

১৯৭৮ সালের ১০ই জুলাই সকাল বেলা। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। গভীর রাত পর্যন্ত জামেয়ার এক বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয়াবলী নির্ধারণসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল। ফজরের নামায পড়ে পুনরায় বিছানায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। হঠাৎ একদল ছাত্র শোরগোল করতে করতে ভেতরে প্রবেশ করলো। তাদের চোখ মুখে খুশীর ঝিলিক। তারা আমাকে মোবারকবাদ জানাচ্ছিল। কি ব্যাপার? প্রতিপক্ষ কি বিতর্কে অবতীর্ণ হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে? না সে কথা নয়। তবে কি? সীরাতুন্নবী প্রতিযোগিতায় আপনি প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।

হে আল্লাহ তায়ালা, তোমার শোকর। কোথায় খবর পেলেন আপনারা? আমি শায়িতাবস্থা থেকে এবার উঠে বসলাম।

মাওলানা ওযায়ের শামস এ খবর নিয়ে এসেছেন। কিছুক্ষণ পর সম্মেলন থেকে আগত মাওলানা শামস নিজেই আমাকে বিস্তারিত খবর শোনালেন।

১৯৭৮ সালের ২৯শে জুলাই, ১৩৯৮ হিজরির ২২শে শাবান তারিখে রাবেতার পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রি একটি চিঠি পেলাম। বিজয়ী হওয়ার খবরের সাথে সাথে ১৩৯৯ হিজরির মহররম সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত রাবেতার অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার গ্রহণের জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। পরে অবশ্য এ অনুষ্ঠান মুহররমের পরিবর্তে রবিউস সানিতে অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ওছিলায় আমি প্রথমবার প্রিয় নবীর দেশ হারামাইন শরীফাইন যিয়ারতের সৌভাগ্য লাভ করি। ১০ই রবিউস সানি মক্কায় পৌঁছলাম। এরপর অনুষ্ঠানে হাযির হলাম। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রায় সকাল দশটায় তেলাওয়াতে কোরআনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কাজ শুরু হয়। সউদী আরবের প্রধান বিচারপতি শেখ আবদুল্লাহ ইবনে হোমায়েদ ছিলেন অনুষ্ঠানের সভাপতি। বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সউদের পৌত্র মক্কার সহকারী গভর্নর আমীর সউদ ইবনে আবদুল মোহসিন পুরস্কার বিতরণের জন্য প্রধান অথিতি হিসাবে আগমন করেন। তিনি পরে কিছু বক্তৃতাও দেন। এরপর রাবেতায়ে আলামে ইসলামীর নায়েবে সেক্রেটারী জেনারেল শেখ আলী আল জেনারেল শেখ আলী আল মোখতার ভাষণ দেন। তিনি কিছুটা বিস্তারিতভাবে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। বিজয়ীদের কিভাবে বাছাই করা হয়েছে সে সব কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান যে, রাবেতার ঘোষণার পর ১১৮২টি পাণ্ডুলিপি জমা পড়ে। প্রাথমিক বিবেচনায় নির্বাচন কমিটি ১৮৩টি পাণ্ডুলিপি প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত করেন। চূড়ান্ত বাছাইয়ের জন্য সুনির্বাচিত একটি কমিটির ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়। এ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী শেখ হাসান ইবনে আবদুল্লাহ আল শেখ। কমিটির সদস্যরা ছিলেন জেদ্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়ত বিভাগের শিক্ষক সীরাতুন্নবী ও ইসলামের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ। তাদের নাম নিম্নরূপ, ডক্টর ইবরাহীম আলী সউত, ডক্টর আবদুর রহমান ফাহমি মোহাম্মদ, ডক্টর মোহাম্মদ সাঈদ সিদ্দিকী, ডক্টর ফিকরি আহমদ ওকায, ডক্টর আহমদ সাইয়েদ দারাজ, ডক্টর ফায়েক বকর সওয়াফ, ডক্টর শাকের মাহমুদ আবদুল মোনয়েম, ডক্টর আবদুল ফাত্তাহ মনসুর।

এ কমিটির বিশেষজ্ঞরা পর্যায়ক্রমিক বাছাইয়ের পর এই ৫টি পান্ডুলিপির্ জন্য পাঁচজনকে পুরস্কার পাওয়ার উপযুক্ত ঘোষণা করেন। ১. আর রাহীকুল মাখতুম, (আরবী) ছফিউর রহমান মোবারকপুরী, জামেয়া সালাফিয়া, বেনারস, ভারত-প্রথম, ২. খাতামুন নবীইঈন (ইংরেজী) ডক্টর মাজেদ আলী খান, জামেয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া-দিল্লী, ভারত-দ্বিতীয়, ৩. পয়গাম্বরে আযম ওয়া আখের (উর্দু) ডক্টর নাসির আহমদ নাসের, ভাইস চ্যান্সেলর জামেয়া ইসলামিয়া, ভাওয়ালপুর, পাকিস্তান-তৃতীয়, ৪. মোনতাকাউন নকুল ফী সিরাতে আযামির রসূল (আরবী) শেখ হামেদ মাহমুদ ইবনে মোহাম্মদ মনসুর লেমুদ, জিজাহ মিসর-চতুর্থ, ৫. সীরাতুন নবীইল হাদীইর রহমত (আরবী) ওস্তাদ আবদুস সালাম হাসেম হাফেজ, মদিনা মোনাওয়ারা সউদী আরব-পঞ্চম।

নায়েবে সেক্রেটারী জেনারেল শেখ আলী আল মোখতার এ বিবরণের পর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।

এরপর আমাকে আমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার জন্য অনুরোধ করা হয়। আমি আমার বক্তব্যে ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচারের জন্য রাবেতাকে কিছু কৌশল ও কর্মপন্থা গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করি। এর ফলাফল কি হবে পরে সে সম্পর্কেও আলোকপাত করি। রাবেতার পক্ষ থেকে পরামর্শ গ্রহণের আশ্বাস দেয়া হয়। এরপর আমীর সউদ ইবনে আবদুল মোহসেন পর্যায়ক্রমে পাঁচজনকে পুরস্কারের অর্থ ও সার্টিফিকেট প্রদান করেন। পুরস্কার বিতরণ শেষে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

১৭ই রবিউস সানি মদিনায় গেলাম। পথে বদর প্রান্তর প্রত্যক্ষ করালাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা মোবারক যিয়ারত করলাম। কয়েকদিন পর এক সকালে খায়বরে গেলাম। ঐতিহাসিক দুর্গসমূহ ভেতর ও বাইরে থেকে দেখলাম। এদিক সেদিক বেড়িয়ে বিকেলে ফিরে এলাম মদিনায়। দু সপ্তাহ মদিনায় কাটিয়ে পুনরায় মক্কায় ফিরে এলাম। তাওয়াফ ও সাঈ করলাম। এক সপ্তাহ মক্কায় কাটালাম। মক্কা ও মদিনায় পরিচিত অপরিচিত সর্বস্তরের গুণী জ্ঞানীদের সাথে অন্তরঙ্গভাবে ভাব বিনিময় করলাম। স্বপ্নের দেশ সউদী আরবে একমাস অতিবাহিত করে পুনরায় জন্মভূমি ভারতে ফিরে এলাম।

সউদী আরব থেকে ফিরে আসার পর ভারত ও পাকিস্তানের উর্দু ভাষা-ভাষীদের পক্ষ থেকে অনেকেই গ্রন্থটির উর্দু অনুবাদের অনুরোধ জানালেন। ইতিমধ্যে কয়েকদিন কেটেও গেছে। নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিছুতেই সময় করে উঠতে পারছিলাম না। অনুরোধকারীদের অনেকের ক্রমাগত অনুরোধে এক সময় কাজের ব্যস্ততার মধ্যেই অনুবাদে হাত দিলাম। এক সময় আল্লাহর রহমতে অনুবাদের কাজ শেষ হলো।

পরিশেষে এই গ্রন্থ রচনায় আমাকে উৎসাহ প্রদানকারী সহায়তাকারী বুযর্গানে দ্বীন, বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা জরুরী মনে করি। বিশেষ করে ওস্তাদ মোহতারাম মওলানা আবদুর রহমান রহমানী, শেখ ওযায়ের সাহেব, হাফেজ মোহাম্মদ ইলিয়াসের আন্তরিক সহযোগিতার কথা স্মরণ করছি। তাদের পরামর্শ ও উৎসাহ যথা সময়ে পাণ্ডুলিপি রচনায় আমাকে সহায়তা করেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করুন। আল্লাহ পাক এ গ্রন্থ কবুল করুন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক নাজাতের ব্যবস্থা করুন।

ছফিউর রহমান মোবারকপুরী

১৮ই রমযানুল মোবারক

১৪০৪ হিজরি

নতুন সংস্করণের জন্যে

রাবেতায়ে আলামে ইসলামীর

সেক্রেটারী জেনারেলের ভূমিকা

সুন্নতে নববী হচ্ছে এক জীবন্ত আদর্শ। এর আবেদন থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। এই আদর্শের বর্ণনা, এই আদর্শ সম্পর্কে গ্রন্থ রচনা আল্লাহর রসূলের আবির্ভাবের সময় থেকেই শুরু হয়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত  অব্যাহত থাকবে। প্রিয় নবীর আদর্শ মুসলমানদের জন্যে এক বাস্তব নমুনা ও ঘটনাবহুল কর্মসূচী। এর আলোকে মুসলমানদের কথা ও কাজ নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হবে এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সাথে মানুষের সম্পর্ক, আত্মীয় স্বজন, ভাই বন্ধুদের সাথে মানুষের সম্পর্ক আল্লাহর রসূলের আদর্শ অনুযায়ী হওয়া উচিত।

সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক বলেন, নিশ্চয়ই প্রত্যেকের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। যারা আল্লাহ পাকের রহমত আশা করে এবং আখিরাত কামনা করে আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করে।

হযরত আয়েশাকে (রা:) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র কেমন ছিল? তিনি বলেছিলেন, পবিত্র কোরআনই ছিল তাঁর চরিত্র।

কাজেই যে ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কাজে আল্লাহ পাকের পথের পথিক দুনিয়া থেকে মুক্তি পেতে চায়, তার জন্য আল্লাহর রসূলের অনুসরণ ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। এ ধরনের মানুষকে যথেষ্ট ভেবে-চিন্তে, বুঝে-শুনে অবিচল বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর রসূলের সীরাত অনুসরণ করতে হবে। তাকে বুঝতে হবে যে, এটাই হচ্ছে পরওয়ারদেগারের সোজা পথ। আমাদের নেতা আমাদের পথ প্রদর্শক আল্লাহর রসূল জীবনের সকল দিক ও বিভাগে অনুসরণযোগ্য আদর্শ রেখে গেছেন। তাঁর আদর্শের মধ্যেই নেতা, কর্মী, শাসক শাসিত, পথ প্রদর্শক ও মোজাহেদদের জন্য হেদায়েতের আলো রয়েছে। প্রিয় নবীর আদর্শ মানুষের রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, পারস্পরিক সম্পর্ক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তথা প্রতিটি ক্ষেত্রেই সর্বোত্তম আদর্শ।

মুসলমানরা বর্তমানের আল্লাহর রসূলের পথ থেকে দূরে সরে হিয়ে মূর্খতা ও অধঃপতনের অতল গভীরে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। তাদের সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পাঠ্যসূচীতে বিভিন্ন সমাবেশে আলোচনা অনুষ্ঠানে সীরাতুন্নবীকে সবকিছুর শীর্ষে রাখতে হবে। বুঝতে হবে যে, এটা শুধু চিন্তার খোরাকই নয় বরং এটাই হচ্ছে আল্লাহ পাকের কাছে ফিরে যাওয়ার পথ। এই আদর্শের মধ্যেই রয়েছে মানুষের সংশোধন ও কল্যাণের উৎস। কেননা আল্লাহর রসূলের চরিত্র ও কাজই হচ্ছে আল্লাহপাকের কেতাব কোরআন করিমের বাস্তব রূপ। এই আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে মোমেন বান্দা আল্লাহ রব্বুল আলামীন শরীয়তের অনুসারী হতে পারে।

আর রাহীকুল মাখতুম নামের এই গ্রন্থ আল্লামা শেখ ছফিউর রহমানের পরিশ্রমের চমৎকার ফসল। ১৩৯৬ হিজরিতে তিনি রাবেতায়ে আলামে ইসলামীর সীরাতুন্নবী রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং এই গ্রন্থ প্রথম স্থান অধিকারের শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ রাবেতার সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল শেখ মোহাম্মদ আলী আল হারাকানের লিখিত ভূমিকায় মজুদ রয়েছে।

এই গ্রন্থ অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল এবং প্রশংসা ধন্য হয়েছিল। প্রথম সংস্করণ ১০হাজার কপি অল্পদিনেই নিঃশেষ হয়ে যায়। প্রকাশক হাসান হামুবি হেফজুল্লাহ দ্বিতীয় সংস্করণেও ১০ হাজার কপি প্রকাশ করেন।

তৃতীয় সংস্করণের প্রকাশকালে প্রকাশক কিছু কথা লিখে দেয়ার জন্য আমার কাছে আবেদন জানান। একারণে আমি সামান্য কিছু কথা লিখছি। আল্লাহ পাক এই লেখাকে তার রহমত লাভের ওছিলা করুন। তিনি এই গ্রন্থের ওছিলায় মুসলমানদের যাবতীয় দুর্যোগ থেকে উদ্ধার করুন। উম্মতে মোহাম্মদী পুনরায় বিশ্ব নেতৃত্ব গ্রহণের উঁচু মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হোক। আল্লাহ পাকের এই ঘোষণা বাস্তব রূপ লাভ করুক, তোমরাই শ্রেষ্ঠ দল, তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য বাছাই করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দেবে, মন্দ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখবে, সর্বোপরি তোমরা আল্লাহ পাকের ওপর ঈমান আনবে।

আল্লাহর প্রিয় রসূলের প্রতি দরুদ ও সালাম।

ডক্টর আবদুল্লাহ ওমর নাসিফ

সেক্রেটারী জেনারেল

রাবেতায়ে আলমে ইসলামী

মক্কা মোকারামা

সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল

অভিমত প্রকাশ করেছেন-

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় রসূলকে মাকামে শাফায়াত এবং উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন। তাঁকে ভালোবাসার জন্যে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহ পাককে ভালোবাসার প্রমাণ দেয়া হবে বলে আমাদের জানিয়েছেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, হে নবী, তুমি বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ পাককে ভালোবেসে থাকো, তাহলে আমার আনুগত্য করো, আল্লাহ পাক তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন।

আল্লাহ পাকের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ তাঁর রসূলের প্রতি ভালোবাসা। এই কারণেই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অন্তরে একটা আকর্ষণ অনুভূত হয় এবং তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকেই মুসলমানরা আল্লাহর রসূলের প্রশংসা করে চলেছে এবং তাঁর পবিত্র সীরাতের প্রচার প্রসারে রীতিমত প্রতিযোগিতাসূলভ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আল্লাহর প্রিয় রসূলের লেখা, কাজ এবং চরিত্রই হচ্ছে তাঁর সীরাত। হযরত আয়েশা (রা:) বলেছেন, পবিত্র কোরআনই হচ্ছে তাঁর চরিত্র। কোরআনে করিম হচ্ছে আল্লাহ পাকের কেতাব এবং আল্লাহ পাকের বাণী সমষ্টি। কাজেই যে মহান ব্যক্তিত্ব কোরআনের প্রতিচ্ছবি, তিনি অবশ্যই সকল মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং পরিপূর্ণ। তিনি সমগ্র মাখলুকের ভালোবাসা পাওয়ার সর্বাধিক উপযুক্ত।

আল্লাহর রসূলের প্রতি মুসলমানরা সব সময়েই ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে এসেছে। সেই প্রমাণের অংশ হিসাবেই ১৩৯৬ হিজরিতে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত প্রথম সীরাত সম্মেলনটি হয়েছে। এই সম্মেলনে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী ঘোষণা করেছে যে, কয়েকটি শর্তাধীনে সীরাতুন্নবী সম্পর্কিত গ্রন্থ রচনায় ৫টি পুরস্কার প্রদান করা হবে। পুরস্কার হিসাবে দেড় লাভ সউদী রিয়াল নগদ অর্থ বিজয়ীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

শর্তসমূহ হচ্ছে,

এক, সীরাতুন্নবী পূর্নাঙ্গ হতে হবে। এতে ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ঘটনাকাল অনুযায়ী পর্যায়ক্রমিকভাবে বিন্যস্ত করতে হবে।

দুই, রচনা উন্নতমানের হতে হবে. এমন হতে হবে যা ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়নি।

তিন, রচনায় সহায়ক গ্রন্থাবলীর যথাযথ বিবরণ উল্লেখ করতে হবে।

চার, লেখকের জীবন কথা লিপিবদ্ধ করে নিজের শিক্ষা জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করতে হবে এবং কোন প্রকার সাহিত্য কর্ম থেকে থাকলে উল্লেখ করতে হবে।

পাঁচ, লেখা পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট হতে হবে। টাইপ করে দিলে ভালো হবে।

ছয়, রচনা আরবী এবং অন্যান্য সচল ও আধুনিক ভাষায় লেখা যাবে।

সাত, ১৩৯৬ হিজরির ১লা রবিউস সানি থেকে পাণ্ডুলিপি গ্রহণ করা হবে এবং  পাণ্ডুলিপি গ্রহনের শেষ তারিখ হবে ১৩৯৭ হিজরির ১লা মহররম।

আট, পাণ্ডুলিপি মক্কার রাবেতা আলমে ইসলামী সচিবালয়ে মুখ বন্ধ খামে করে পাঠাতে হবে। রাবেতা সেই পাণ্ডুলিপিতে একটি ক্রমিক নাম্বার লিখে রাখবে।

নয়, বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটি পাণ্ডুলিপি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবেন।

রাবেতায়ে আলমে ইসলামীর এই ঘোষণার ফলে জ্ঞানপিপাসু রসূল প্রেমিক লেখকদের মনে আগ্রহের আতিশয্য লক্ষ্য করা যায়। বহুসংখ্যক লেখক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। রাবেতায়ে আলমে ইসলামীও আরবী, ইংরেজী, উর্দুসহ অন্যান্য ভাষায় পাণ্ডুলিপি গ্রহণের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল।

আমাদের শ্রদ্ধেয় ভাইয়েরা বিভিন্ন ভাষায় পাণ্ডুলিপি পাঠাতে শুরু করেন। আরবী, উর্দু, ইংরেজী, ফরাসী এবং হিব্রু ভাষায় পাণ্ডুলিপি জমা পড়ে।

সংগৃহীত পাণ্ডুলিপি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য রাবেতায়ে আলমে ইসলামী বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে। পুরস্কার প্রাপ্তদের বিবরণ নিম্নরূপ।

(১) প্রথম পুরস্কার, শেখ ছফিউর রহমান মোবারকপুরী, জামেয়া সালাফিয়া, ভারত, ৫০ হাজার সউদী রিয়াল।

(২) দ্বিতীয় পুরস্কার, ডক্টর মাজেদ আলী খান, জামেয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া, নয়াদিল্লী, ভারত, ৪০ হাজার সউদী রিয়াল।

(৩) তৃতীয় পুরস্কার, ডক্টর নাসির আহমেদ নাসের, পাকিস্তান, ৩০ হাজার সউদী রিয়াল।

(৪) চতুর্থ পুরস্কার, ওস্তাদ হামেদ মাহমুদ মোহাম্মদ মনসুর লেমুদ, মিসর, ২০ হাজার সউদী রিয়াল।

(৫) পঞ্চম পুরস্কার, ওস্তাদ আবদুস সালাম হাশেম হাফেজ, মদিনা মোনাওয়ারা, সউদী আরব, ১০ হাজার সউদী রিয়াল।

রাবেতায়ে আলমে ইসলামী ১৩৯৮ হিজরিতে করাচীতে অনুষ্ঠিত প্রথম এশীয় ইসলামী সম্মেলনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে। সকল সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় এ খবর পাঠানো হয়।

পুরস্কার বিতরণের জন্য রাবেতা ১৩৯৯ হিজরির ১২ই রবিউস সানি সকালে মক্কায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মক্কার গভর্নর আমীর ফাওয়ায ইবনে আবদুল আজিজের সেক্রেটারী আমীর সউদ তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে পুরস্কার বিতরণ করেন।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের ঘোষণা করা হয় যে, পুরস্কারপ্রাপ্ত পাণ্ডুলিপি সমূহ পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ভাষায় ছেপে বিতরণ করা হবে। সেই ঘোষণা অনুযায়ী শেখ ছফিউর রহমান মোবারকপুরীর আরবী পাণ্ডুলিপি প্রথমে প্রকাশ করে পাঠকদের কাছে পেশ করা হয়েছে। তিনি প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পাণ্ডুলিপিও প্রকাশ করা হবে। আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের আমল সমূহ তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য নিবেদন করার তওফিক দেন এবং নেক আমল তিনি যেন কবুল করেন। নিঃসন্দেহে তিনি আমাদের উত্তম অভিভাবক, উত্তম সাহায্যকারী।

শায়খ মোহাম্মদ আলী আল হারাকান

সেক্রেটারী জেনারেল

রাবেতায়ে আলামে ইসলামী

মক্কা মোকাররামা

বইটি যিনি লিখেছেন তার

নিজের পরিচয়

রাবেতা আয়োজিত প্রতিযোগিতার শর্তাবলীর মধ্যে প্রতিযোগীদের পরিচিতি সম্পর্কে আলোকপাত করতে বলা হয়েছিল। এ কারণে নীচে আমার সংক্ষিপ্ত একটি পরিচিতি তুলে ধরছি।

ছফিউর রহমান ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মোহাম্মদ আকবর ইবনে মোহাম্মদ আলী ইবনে আবদুল মোমেন ইবনে যাকির উল্লাহ মোবারকপুরী আযমী। জন্ম তারিখ সার্টিফিকেটে ৬ই জুল ১৯৪৩ উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, প্রকৃত জন্ম তারিখ ১৯৪২ সালের মাঝামাঝি। জন্মস্থান আযমগড় জেলায় হোসাইনাবাদের মোবারকপুরে।

কোরআন পাঠ করেছিলাম ১৯৪৮ সালে। মোবারকপুরেই ৬বছর পড়াশোনা করি। আরবী ভাষা, ব্যাকরণ, সাহিত্য এবং অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনা করি। এরপর দুবছর মোবারকপুর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের মউনাথ ভঞ্জনে লেখাপড়া শিখেছি। ১৯৫৬ সালে ভর্তি হই ফয়েযে আম মাদ্রাসায়। সেখানে পাঁচ বছর কাটিয়েছি। এ প্রতিষ্ঠানে আরবী ভাষা, ব্যাকরণ সাহিত্য ফেকাহ, উছুলে ফেকাহ, তাফসীর হাদীস প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করি।

১৯৬১ সালের জানুয়ারি মাসে আমাকে শিক্ষা সমাপনী সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। ফযিলত ফিশ শরীয়ত ফযিলত ফিল উলুম বিষয়ক সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা করা এবং ফতোয়া প্রদানের ছাড়পত্র দেয়া হয়।

সকল পরীক্ষায় আমি ভালো ফলাফল লাভ করতে সক্ষম হই। এলাহাবাদ বোর্ডের পরীক্ষায়ও আমি অংশ নিয়েছিলাম। ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মৌলবি এবং ১৯৬০ সালে আলেম পরীক্ষা দিয়েছিলাম। উভয় পরীক্ষায় আমি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। দীর্ঘকাল পর ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষকতার সাথে সম্পর্কিত ফাযেল আদব পরীক্ষায় এবং ফাযেল দীনিয়াত পরীক্ষায় ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে অংশগ্রহণ করি। উভয় পরীক্ষায়ই প্রথম বিভাগ পেয়েছিলাম।

১৯৬১ সালে ফয়েযে আম মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথমে এলাহাবাদে পরে নাগপুরে শিক্ষকতা করি। ১৯৬৩ সালে ফয়েযে আম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমাকে ডেকে পাঠান। সেখানে দু বছর শিক্ষকতা করি। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে আমাকে সেখান থেকে বিদায় নিতে হয়। পরের বছর আযমগড়ের জামেয়াতুর রাসাদে এবং ১৯৬৬ সালে মহিলা মাদ্রাসা দারুল হাদিসে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করি। সেখানে কাটিয়েছি তিন বছর। সেখানে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছি। এরপরে ইস্তফা দিয়ে মাদ্রাসা ফয়যুল উলূমে শিক্ষকতা শুরু করি। এ মাদ্রাসা মউনাথ ভঞ্জন থেকে ৭ম কিলোমিটার দূরে মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শিক্ষকতা ছাড়াও মাদ্রাসার প্রশাসনিক কাজের সাথে নিয়োজিত ছিলাম। দূর দূরান্তে তাবলীগে দ্বীনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে জন্মস্থান মোবারকপুরে দারুত তালিম মাদ্রাসায় শিক্ষকতার দায়িত্ব গ্রহণ করি। ১৯৭৪ সালে বেনারসের জামেয়া সালাফিয়ায় শিক্ষকতা শুরু করি এবং এখনো এ প্রতিষ্ঠানে দ্বীনী শিক্ষা দান কাজে নিয়োজিত রয়েছি।

আমার গুরুত্বপূর্ণ কিছু গ্রন্থের তালিকা নীচে উল্লেখ করছি,

এক) তাযকেরায়ে শায়খুল ইসলাম মোহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব (আরবী) ১৯৭২ সাল। এ গ্রন্থের চারটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। দুই) তারিখে আলে সউদ (উর্দু) ১৯৭২, এ গ্রন্থের দুটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। তিন) ইতহাফুল কেরাম তালিকু বুলুগিল মারাম লে ইঃ হাজার আসকালানী (আরবী) ১৯৭৪। চার) কাদিয়ানিয়াত আপন আয়নে মে (উর্দু) ১৯৭৬। পাঁচ) ফেতনায়ে কাদিয়ানিয়াত আওর মওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (উর্দু) ১৯৭৭। ছয়) আর রাহীকুল মাখতুম, (আরবী)। সাত) ইনকারে হাদীস হক ইয়া বাতেল (উর্দু) ১৯৭৭। আট) রজমে হক ও বাতেল, (উর্দু) ১৯৭৮। নয়) আবরাজুল হক ওয়াস সওয়াব ফি মাসআলাতে ছছফুর আল হেজাব (আরবী) ১৯৭৮। দশ) তাতাউরুস শুয়ুব আদ দীনিয়াত ফিল হিন্দ ওয়া মাজালূত দাওয়াতুল ইসলামিয়া ফিহা (আরবী) ১৯৭৯। এগারো) আল ফেরকাতুন নাজিয়া আল ফেরাকুল ইসলামিয়াতুল উখরা (আরবী) ১৯৮৮। বারো) ইসলাম আওর আদমে তাশাহুদ (উর্দু) ১৯৮৪, ইংরেজী ও হিন্দীতেও প্রকাশিত হয়েছে। তেরো) আহলে তাছাউউফ ফি কারছতানিয়া (উর্দু) ১৯৮৬। চোদ্দ) আল আহযাবুছ সিয়াসিয়া ফিল ইসলাম (আরবী) ১৯৮৬। বেনারসের মাসিক মোহাদ্দেস পত্রিকার সম্পাদরার দায়িত্বও পালন করছি।

নতুন সংস্করণ প্রকাশে

লেখকের ভূমিকা

১৩৯৬ হিজরি সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সীরাত সম্মেলনে রাবেতা আলামে ইসলামী সীরাত বিষয়ে রচনার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা আহবান করে। এর উদ্দেশ্য ছিল লেখকদের মধ্যে চিন্তা চেতনার ঐক্য এবং তাদের সাধনার সুবিন্যস্তকরণ। আমার মতে এটা প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। কেননা গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায় যে, সীরাতুন্নবী এবং ওসওয়ায়ে মোহাম্মদীই একমাত্র বিষয় যার মাধ্যমে মুসলিম জাহানের জীবন এবং মানব সমাজের সৌভাগ্য পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে। আল্লাহর প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি হাজার হাজার দরুদ ও সালাম।

এ মোবারক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ছিল আমার জন্য এক বিরাট সৌভাগ্য। কিন্তু সাইয়েদুল আউয়ালিন ওয়াল আখেরিনের সুমহান জীবনের প্রতি আলোকপাত করার মতো শক্তি কি আমার ছিল? প্রকৃতপক্ষে আমি আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবিবের পুণ্যের কিছু অংশ লাভ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেন? কারণ, আমি চেয়েছিলাম যে, অন্ধকারে পথ খুঁজে বেড়ানোর চেয়ে নবী (স.) একজন উম্মত হিসাবে তাঁর উজ্জ্বল সুন্দর রাজপথের পথিক হয়ে জীবন যাপন করতে। এরপর একদিন সে পথের পথিক হয়েই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবো। পরলোকের জীবনে আল্লাহর রসূলের শাফায়াতের বরকতে আল্লাহপাক আমার গুনাহসমূহ মার্জনা করবেন।

এ গ্রন্থের রচনাশৈলী সম্পর্কে কিছু কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি। গ্রন্থ রচনার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, এটি অস্বাভাবিক দীর্ঘ করব না যাতে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে, আবার খুব সংক্ষিপ্তও করব না বরং মাঝামাঝি সাইজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখব। কিন্তু সীরাতুন্নবীর ওপর লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠে দেখা গেল যে, সবদিক সামনে রেখে পর্যালোচনা করে যা নির্ভুল মনে হবে সেটাই উল্লেখ করব। বিস্তারিত যুক্তি প্রমাণ, তথ্য দলিলের উল্লেখ থেকে বিরত থাকব। যদি সব উল্লেখ করি তবে গ্রন্থের কলেবর অনেক বৃদ্ধি পাবে। সেসব ক্ষেত্রে সন্দেহ দেখা দেবে যে, আমার পর্যালোচনামূলক বক্তব্য যথেষ্ট নয়, পাঠক বিস্মিত হবেন বা যেসব ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণকারীদের বক্তব্য আমার বিবেচনায় সঠিক নয় সেসব ক্ষেত্রে শুধু যুক্তি-প্রমাণের প্রতি ইঙ্গিত দেব। কার্যত তাই করছি। হে আল্লাহ পাক, তুমি আমার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নির্ধারণ করো। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল, করুণাময়। তুমি আরশে আযিমের মালিক, তুমি সুমহান তুমি সর্বশক্তিমান।

ছফিউর রহমান মোবারকপুরী

২৪শে রজব, ১৩৯৬ হিজরি

২৩শে জুলাই, ১৯৭৬ সাল

বাংলা ভাষায় বইটির

অনুবাদ ও প্রকাশনা সম্পর্কে

আল হামদুলিল্লাহ,

এক সুদীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে আমরা মহানবীর বহুল আলোচিত ও প্রশংসিত জীবনী গ্রন্থ আর রাহীকুল মাখতূম বাংলা ভাষা-ভাষী মুসলমানদের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হলাম।

আর রাহীকুল মাখতূম কোরআন মজীদে আল্লাহ তায়ালার ব্যবহৃত একটি বাক্যাংশ, যার অর্থ ছিপি আঁটা উত্তম পানীয়। সূরা আল মোতাফফেফীন-এ আল্লাহ তায়ালা তাঁর নেক বান্দাহদের পুরস্কার হিসেবে জান্নাতে এই পানীয় সরবরাহের ওয়াদা করেছেন। প্রিয়জনদের জন্য এই পানীয় শুধু ছিপি আঁটা বোতলেই তিনি ভরে রাখেননি-পাত্রজাত করার সময় এতে কস্তূরীর সুগন্ধিও তিনি মেখে রেখেছেন।

কোরআনে বর্ণিত আর রাহীকুল মাখতূম মোমেনদের জন্যে সত্যিই এক শ্রেষ্ঠ পাওনা, যাদের জন্যে এই মহা আয়োজন তাদের সর্দারের জীবনী গ্রন্থ আর রাহীকুল মাখতূম সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী একটি ভিন্ন স্বাদের সীরাত গ্রন্থ। এমন একটি গ্রন্থ রচনা করে সীরাতের মহান পণ্ডিত আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপূরী একটি অসামান্য কাজ সম্পাদন করেছেন সন্দেহ নেই, মূলত এর মাধ্যমে তিনি যমীনের রাহীক-এর সাথে আসমানের রাহীক-এর এক ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র স্থাপন করে দিয়ে গেলেন।

আর রাহীকুল মাখতূম বইটির বিশ্বব্যাপী আবেদন ও অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা সম্পর্কে আমি আমার নিজের থেকে আর কিছুই বলতে চাই না, মূল বইয়ের শুরুতে লেখকের মূল্যবান গ্রন্থ পরিচিতি, রাবেতায়ে আলামে ইসলামীর মতো বিশ্ব মুসলিমের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার দু দুজন মহাসচিবের প্রতিবেদনের পর এ বিষয়ে আসলেই আর কিছু বলার থাকে না। মূল পুস্তকের গভীরে যাওয়ার আগে একবার এই পটভূমিকার কথাগুলো পড়ে নিলে সহজেই আপনি একথাটা বুঝতে পারবেন যে, বিশ্বজোড়া প্রতিযোগিতায় প্রায় ১২০০ শত পুস্তকের মধ্যে এই বইটিকে কেন এই বিরল সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে, কোন সে বৈশিষ্ট্য যে কারণে বইটি যুগের সেরা সীরাত গ্রন্থের মর্যাদা পেয়েছে। সারা দুনিয়ার নবী প্রেমিকরা মনে হয় এমন একটি সীরাত গ্রন্থের জন্যে বহুদিন ধরে অপেক্ষা করছিলো-যাকে এই বিষয়ের ওপর রচিত অতীতের সব কয়টির নির্ভরযোগ্য উপাদানের সমন্বয়ে তৈরী করা হবে, অপর কথায় যা হবে সীরাত সংক্রান্ত বিশাল পাঠাগারের একটি নির্যাস। সেদিক থেকে বিচার করলে আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপূরীর এই মোবারক উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। বলার অপেক্ষা রাখেনা, বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানদের পক্ষ থেকে রাবেতায়ে আলামে ইসলামীর বইটিকে প্রথম পুরস্কার প্রদান করার মাধ্যমে এ প্রশংসারই স্বীকৃতি মিলেছে।

বিদগ্ধ গবেষক মূল বইটি রচনা করেছেন আরবী ভাষায়, জানা কথাই সীরাতে ওপর রচিত হাজার, হাজার বইয়ের বিশাল মৌলিক উপাদানগুলোও রয়েছে এই আরবীতে। মূল আরবী গ্রন্থের বিভিন্ন ভাষায় যখন এর অনুবাদ বেরিয়েছে তাতে যোগ্য অনুবাদকরা মূল গ্রন্থের ভাষা ও ভাবধারার মান বজায় রাখার যে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন তা আমি যথার্থই অনুভব করতে পারি, বিশেষ করে এই বইটিতে ব্যবহৃত সাহাবীদের নাম, তাদের গোত্র কবিলার নাম, নবী আগমনের আগে পরে আরবের সমাজ, রাষ্ট্র, যুদ্ধ কলহ ও অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ডের সাথে জড়িত অসংখ্য ব্যক্তিও স্থানের নামগুলোকে নিজ নিজ ভাষায় লিখতে গিয়ে তারা কি সমস্যায় পড়েছেন, তাও আমি কিঞ্চিত অনুভব করি। এই হাজার হাজার নামের যথার্থ উচ্চারণ সত্যিই একটা দুরূহ ব্যাপার বলে আমার কাছে মনে হয়েছে, তদুপরি আরবী বর্ণমালায় বাংলা উচ্চারণ নিয়ে আমাদের আলেম ওলামা ও ভাষাবিদ গবেষকদের মাঝেও নানা এখতেলাফ রয়েছে, একজন যে বানানকে শুদ্ধ বলেন আরেকজন তাকে সম্পূর্ণ অশুদ্ধ বলে উড়িয়ে দেন। এক্ষেত্রে সহজ পদ্ধতি হিসেবে যে নামের যে উচ্চারণকে আমার কাছে মূল বইয়ের কাছাকাছি মনে হয়েছে আমি তাকেই ব্যবহার করেছি। যথা সম্ভব গোটা বইতে নাম ও জায়গার ব্যাপারে একটা অভিন্ন পদ্ধতি আমি ফলো করার চেষ্টা করেছি। তারপরও একথা বলবো না যে, আমি সব ঠিক করে লিখতে পেরেছি। আল্লাহ তায়ালা আমার ভুল ত্রুটি ক্ষমা করুন।

আর রাহীকুল মাখতূম বইটিতে অসংখ্য গ্রন্থের নাম ও তার পৃষ্ঠা নম্বর দেয়া আছে, সে ব্যাপারেও মনে হয় একটা কথা বলে নেয়া প্রয়োজন। যেসব পৃষ্ঠার নম্বর এখানে দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে আরবী ও উর্দু গ্রন্থের পৃষ্ঠা। এর ভেতরে এমন অনেক বইর তিনি রেফারেন্স দিয়েছেন যা এখনো বাংলায় অনূদিত হয়নি, যেগুলোর অনুবাদ হয়েছে সেখানেও এই পৃষ্ঠার নম্বর দিয়ে মূল তথ্যের কোনো সন্ধান পাওয়া যাবে না। যেমন মূল লেখক তার বই-এর বহু জায়গায় সাইয়েদ কুতুব শহীদের বিখ্যাত ফী যিলালিল কোরআন-এর উদ্ধৃতি দিয়েছেন, কিন্তু সেখানে তিনি যে খন্ড ও পৃষ্ঠা নম্বর দিয়েছেন তা শুধু আরবী সংস্করণের বেলায় প্রযোজ্য। বাংলা ভাষায় তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন-এর যে অনুবাদ বেরিয়েছে স্বাভাবিকভাবেই তার খন্ড ও পৃষ্ঠার কোনোটাই এর সাথে মিলবে না। এ সমস্যা জেনেও একান্ত আমানতদারীর খাতিরে আমরা মূল লেখকের দেয়া কোনো তথ্য সূত্র পরিবর্তন করিনি।

আপনারা জানেন, বিশ্ববাজারে এ অমূল্য সীরাতগ্রন্থটির আরবী সংস্করণগুলো প্রথম প্রকাশ করেছেন রাবেতায়ে আলামে ইসলামী স্বয়ং নিজে, রাবেতার তদারকিতেই অন্য একটি প্রতিষ্ঠান বইটি প্রকাশ করেন, পরে অবশ্য নানা প্রতিষ্ঠান নানা ভাষায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বইটির অনুবাদ প্রকাশ করেছেন। আমরাও তাদের পথ অনুসরণ করে বাংলা ভাষায় এই গুরুত্বপূর্ণ বইটি প্রকাশের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এ ভাষাভাষী মানুষের সাথে এই মহান পুস্তকটির পরিচয় করানোই ছিলো এখানে আমাদের উদ্দেশ্য। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, যে মহামানবের জীবনী গ্রন্থ আজ আমরা প্রকাশ করতে যাচ্ছি, তিনি ছিলেন এমন এক কাফেলার সর্দার যারা নিজ নিজ জাতিকে বলেছেন, ওয়া মা আসআলুকুম আলাইহি মিন আজরিন ইন আজরিয়া ইল্লা আ লা রাব্বিল আলামীন। আমি তোমাদের কাছে এ কাজের জন্যে কোনো পারিশ্রমিক চাইনা, আমার পারিশ্রমিক তো আমার মালিকের কাছেই রয়েছে।

সর্বশেষে আল কোরআন একাডেমী লন্ডন বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি অশেষ ধন্যবাদ জানাই, তারা বইটির পরিবেশনার দায়িত্ব না নিলে আমি লন্ডনে বসে শুধু স্বপ্নই দেখে যেতাম, বইটি বহু দিনেও হয়তো আলোর মুখ দেখতো না। বিশেষ করে শামীম ভাইয়ের সহযোগিতার কথা ভোলার নয়। তার আন্তরিক প্রচেষ্টা না থাকলে এই বিশাল পাণ্ডুলিপিটি এতো দ্রুত লেখা সম্ভব হতো না। এর সাথে আরো যারা বিভিন্নভাবে আমাকে উৎসাহিত করেছেন, আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে স্ব-স্ব জায়গায় পুরস্কৃত করুন। আমীন।

আমার প্রিয়নবীর মানে অসংখ্য দরুদ অসংখ্য সালাম।

খাদিজা আখতার রেজায়ী

রবিউল আওয়াল, ১৪১৯ হিজরি, জুলাই ১৯৯৮

লন্ডন

চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশের মুহূর্তে

পরিবেশকের নিবেদন

১৯৯৯ সালে সীরাতুন্নবীর মাস ছিল ইংরেজী জুন-জুলাই। সে হিসেবে আমরা চিন্তা করেছিলাম, নবীর স্মৃতি বিজড়িত মাসেই আমরা প্রিয় নবীর এ যুগ শ্রেষ্ঠ জীবনী গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ পরিবেশন করবো। এই মহান গ্রন্থের যিনি অনুবাদক ও প্রকাশক তার এই ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের আলোকে আমরা একাজের জন্যে আমাদের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে রেখেছিলাম, কিন্তু একটা বিশাল বইকে হস্তাক্ষর থেকে পাঠকের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত আরো যতোগুলো পর্যায় অতিক্রম করতে হয় তার সব কয়টির ওপর আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আমরা সীরাতুন্নবীর মাস তথা রবিউল আওয়ালের ভেতর বইটি পরিবেশন করতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত মুদ্রণ শিল্পের সব কয়টি ঘাট পেরিয়ে বইটি যখন আলোর মুখ দেখলো তখন নবীর দুনিয়ায় আগমনের মাসটি শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সম্ভবত এ গুনাহগার বান্দাহদের নিয়তের প্রতি তাকিয়ে তাদের নিরাশ করেননি-তাই অনন্য সাধারণ এই গ্রন্থটি তার প্রথম পরিবেশনার সুনির্দিষ্ট টার্গেট হিসেবে প্রিয় নবীর আবির্ভাবের সময়টি মিস করলেও অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানেই তিনি আমাদের তার মদিনায় পদার্পণের স্মৃতিময় সুযোগটি এনে দিলেন।

একই বছরের ২৪শে সেপ্টেম্বর, প্রিয় নবীর ইয়াসরাব তথা মদিনায় পদার্পণের দিন। ১৪২০টি বছরের সিঁড়ি পার হয়ে এই বরকতপূর্ণ দিনে আমরা তারই একনিষ্ঠ প্রেমীর ভালোবাসার সিঞ্চন এই অনুবাদ গ্রন্থটির দ্বিতীয় পরিবেশন করেছিলাম। এই মোবারক গ্রন্থটির যখন আমরা তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেছি তখন আমাদের সামনে ইয়াওমুল আরাফার মুহূর্তটি উপস্থিত ছিলো। এই আরাফার উপকণ্ঠে দাড়িয়ে এই দিনেই তিনি তাঁর প্রায় দেড় লক্ষ জাঁ-বায সাহাবীর সামনে সেই ঐতিহাসিক বিদায় হজ্জের ভাষণ তথা মানবাধিকারের মহাসনদটি পেশ করেছিলেন, যার ওপর বলতে গেলে আজ গোটা মানব জাতির সভ্যতা সংস্কৃতির বুনিয়াদ দাড়িয়ে আছে।

আজ আবার যখন আমরা এর সংশোধিত অষ্টম সংস্করণ ছাপতে শুরু করেছি তখন কোরআন নাযিলের মাস রমজানুল মোবারক আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে। আল্লাহ তায়ালা এই পবিত্র মাসে কোরআনের বাহকের এই অমূল্য জীবনী গ্রন্থটিকে কবুল করুন!

আর রাহীকুল মাখতূম যেমন বিশ্ব সভায় যুগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে সর্বশ্রেষ্ঠ সীরাত গ্রন্থের মর্যাদা লাভ করেছে, তেমনি এই বইটির বাংলা অনুবাদও আমাদের দেশের সাহিত্য জগতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে আপন মহিমায় মহিমান্বিত হয়েছে। মাত্র পঞ্চান্ন দিনের মাথায় আমরা বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেছি, আল হামদু লিল্লাহ তিন বছর শেষ হবার আগেই বইটির অষ্টম সংস্করণ প্রকাশ হতে যাচ্ছে। বিষয়টি সাম্প্রতিক কালে শুধু ইসলামী সাহিত্যই নয় গোটা বাংলা ভাষার ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এক দুর্লভ সম্মান। এই দুর্লভ সম্মানের পুরোটাই আসলে নবী (সঃ)-এর প্রাপ্য-কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের এতে কৃতিত্ব নেই। এই বইয়ের লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক ও পরিবেশক কারোই এই কৃতিত্বে বিন্দুমাত্র পাওনা আছে বলে আমরা মনে করি না। এই গ্রন্থটির অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তার সবটুকু তারিফ শুধু তার জন্যে-যিনি স্বয়ং নিজে তার ফেরেশতাদের নিয়ে নবীর নামে সালাম পাঠান।

তিন বছর আগে বইটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হবার পর দেশের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় কয়েকজন বিদগ্ধ সুধী চিন্তাবিদ যেভাবে এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা সম্বলিত পর্যালোচনা করেছেন তাতেই আমরা এই মহান গ্রন্থটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা টের পেয়েছিলাম। এক পর্যায়ে আমাদের শুভানুধ্যায়ীরা বইটির একটি প্রকাশনা অনুষ্ঠানের কথাও বলেছিলেন, তাই আমরা অধীর আগ্রহে এর অনুবাদক প্রকাশক মোহতারামা খাদিজা আখতার রেজায়ীর ঢাকায় আগমনের অপেক্ষা করছিলাম। আল্লাহ তায়ালার শোকর, সে বছর ১৪ সেপ্টেম্বর পবিত্র ওমরা হজ্জ পালনের পথে মাত্র কয়েক দিনের জন্যে তিনি ঢাকায় এলে সে মাসের ১৮ তারিখে আমরা জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বইটির এক শানদার প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করি।

প্রিয় নবীর শানে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক বাংলা সাহিত্যের মনীষী বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আলী আহসান তার লিখিত প্রবন্ধে বলেন, খাদিজার অনুবাদে মাতৃভাষার দীপ্ত অহংকার ও অঙ্গীকার দুটোই রয়েছে, খাদিজা অসাধারণ নৈপুণ্যের সাথে এবং অনুপম বাক্য বিন্যাসে গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ করেছেন, তার অনুবাদটি যেন অনুবাদ নয়-এ এক নতুন সৃষ্টি। তার এ বিরল সাফল্যের উল্লেখ করে তিনি এই মহান গ্রন্থটির বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করেন। দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা ওবায়দুল হক আর রাহীকুল মাখতূম –এর বাংলা অনুবাদকে সীরাত সাহিত্যে অনুবাদকের একটি বড়ো ধরনের কৃতিত্ব বলে উল্লেখ করেন এবং এই অনুবাদ যেন আমাদের জীবনের পাথেয় হিসেবে কাজ করে সে জন্যে আল্লাহর রহমত কামনা করেন। আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ জেড এম শামসুল আলম এই দুরূহ কাজের জন্যে এই প্রবাসী লেখকের মূল্যায়ন করেছেন এভাবে যে, মাত্র এক মাসে তার এ বিশাল অনুবাদ গ্রন্থের যতো পরিমাণ পর্যালোচনা পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে দেশের অন্য কোনো গ্রন্থের ব্যাপারে তা হয়নি।

প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত বিশিষ্ট সাংবাদিক দৈনিক দিনকাল সম্পাদক আখতার-উল-আলম কালের এই সেরা সীরাত গ্রন্থটির অনুবাদের ভূয়সী প্রশংসা করতে গিয়ে অনুবাদ শিল্পকে কাশ্মীরী শালের উল্টো পিঠের সাথে তুলনা করে প্রকাশিত গ্রন্থ আর রাহীকুল মাখতূম বইটিতে কাশ্মীরী শালের আসল পিঠ নকল পিঠ যেন চিহ্নিতই করা যায় না বলে অভিমত প্রকাশ করেন। দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমীন খান এ কালজয়ী গ্রন্থের অনুবাদ কাজটি সঠিক হাতে সম্পাদিত হয়েছে দেখে আনন্দ প্রকাশ করেন, তার মতে মোহতারামা খাদিজা আখতার রেজায়ী পাঠকদের একথা ভুলিয়ে দিয়েছেন যে, বইটি আসলেই একটি অনুবাদ গ্রন্থ। বিশিষ্ট নাট্যকার আরিফুল হক বইটিকে আল্লাহর রসূলের জীবনের একটি পূর্নাঙ্গ পর্যায়ক্রমিক ও ঐতিহাসিক ধারা বলে অভিহিত করেন। তিনি অনুবাদকের অনুবাদ কর্মে সৃজনের সাথে অনুসৃজনেরও যে দক্ষতা রয়েছে সেকথা উল্লেখ করেন। বিশিষ্ট অভিনেতা ওবায়দুল হক সরকার মাওলানা আকরাম খাঁর মোস্তফা চরিত, কবি গোলাম মোস্তাফার বিশ্বনবী ও অনুদিত সীরাতুন্নবী সহ আরো শত শত সীরাত গ্রন্থের পাশাপাশি আর রাহীকুল মাখতূমকে যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সীরাত গ্রন্থ বলে উল্লেখ করেন।

দৈনিক ইত্তেফাকের সাহিত্য সম্পাদক কবি আল মুজাহিদী উপমহাদেশের কোটি কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের হাতে এমনি একটি বিরল গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ তুলে দেয়ার জন্য অনুবাদক ও পরিবেশককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এর ব্যাপক প্রসার কামনা করেন। এছাড়াও বইটির ওপর লিখিত প্রবন্ধে বাংলা সাহিত্যের সাহসী লেখক কবি আল মাহমুদ সমকালীন বাংলা সাহিত্যের একজন প্রতিভাময়ী লেখিকা ও কথাশিল্পী মোহতারামা খাদিজা আখতার রেজায়ীর সাম্প্রতিক অনুবাদ গ্রন্থটিকে একটি নতুন নির্মাণ বলে অভিহিত করেন, পরিশেষে বিশিষ্ট লেখিকা ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য হাফেজা আসমা খাতুন এই গ্রন্থটির পর্যালোচনা করতে গিয়ে বইটিকে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য পুস্তক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক প্রধান ও ইসলামী ব্যাংক লি. এর চেয়ারম্যান সচিব শাহ আবদুল হান্নান বাংলা ভাষায় বিশ্ব জোড়া খ্যাতির অধিকারী এই মূল্যবান গ্রন্থের অনুবাদ উপহার দেয়ার জন্যে অনুবাদক ও প্রকাশকের শোকরিয়া আদায় করেন। তিনি এর পরিবেশক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আল কোরআন একাডেমী লন্ডন বাংলাদেশ কার্যালয়কেও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। গ্রন্থটির অনুবাদক প্রকাশক মোহতারামা খাদিজা আখতার রেজায়ী নিজেও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আগত সুধীমন্ডলীর উদ্দেশ্যে লিখিত একটি প্রবন্ধে তিনি এই গ্রন্থের সার্বিক সাফল্যের জন্যে একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই শোকর আদায় করেন। যেসব বিদগ্ধ সুধী বইটির ওপর পত্র-পত্রিকায় মূল্যবান পর্যালোচনা লিখেছেন, যারা এই মোবারক অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করেছেন এবং যারা এখানে উপস্থিত হয়ে এই অনুষ্ঠানকে সফল করেছেন-তিনি তাদের সবার কৃতজ্ঞতা আদায় করেন। তার লিখিত বক্তব্য ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের প্রবন্ধ পাঠ করেন কবি মতিউর রহমান মল্লিক।

আমাদের এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ মেহমান হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মোফাসসেরে কোরআন হযরত মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবেরও উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। তিনি লন্ডনে অবস্থান কালে মোহতারামা খাদিজা আখতার রেজায়ীর কাছে নিজেই এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে তার আন্তরিক আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেছিলেন। বিশেষ কারণে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিনে না পারলেও তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানটির সাফল্য কামনা করেছেন। তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে আমাদের প্রকাশিত তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন ও তাফসীরে ওসমানী –কে যেভাবে তিনি পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ বাংলা ভাষা-ভাষীদের কাছে পরিচিত করেছেন, সেজন্যেও আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে তার জন্যে দোয়া করি। হাশরের কঠিন প্রান্তরে যখন আদম সন্তানরা এক ফোটা পানির জন্যে হাহাকার করতে থাকবে তখন মহান আল্লাহ তায়ালা আর রাহীকুল মাখতূম ও খেতামুহু মেসকুন তথা ছিপি আঁটা বোতলের কস্তূরীর সুগন্ধি যুক্ত পানীয় দ্বারা তাকে পরিতৃপ্ত করুন!

আমরা সত্যিই আনন্দিত যে, যখন আমরা বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ পরিবেশন করছিলাম তখন অনুবাদক প্রকাশক স্বয়ং ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তাইই তার সযত্ন তত্ত্বাবধানে গোটা বইটিকে আমরা বলতে গেলে নতুন করে সাজিয়ে দিতে পেরেছি। এবারও আমরা তার মূল্যবান পরামর্শকে সামনে রেখেই বইটির অষ্টম সংস্করণ পেশ করছি। এখানে সেখানে যা কিছু ভুল-ভ্রান্তি ছিলো, যথাসম্ভব আমরা তাও পরিশুদ্ধ করে দিতে পেরেছি। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মোহাতারামার ইচ্ছা অনুযায়ী বেশী থেকে বেশী মানুষকে প্রিয় নবীর এ মূল্যবান জীবনী গ্রন্থের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যে আমরা বইটির দাম প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছি।

আসমান যমীনের সর্বত্র যার প্রশংসা সেই প্রিয় মানুষের নামে আমাদের লক্ষ সালাম।

আল কোরআন একাডেমী লন্ডন

বাংলাদেশ সেন্টার

Page 1 of 37
12...37Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • রমাদান ২০২২
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
  • লেখক

@BJI Dhaka City South