জি- ১০ ইসলামে পরিবারের গুরূত্ব- ভূমিকা
প্রশ্ন ঃ
১. পরিবারের গুরূত্ব কি এবং ইসলামের সামগ্রিক ব্যবস্থায় এর অবস্থান কোথায়?
২. ইসলামে পরিবারের গুরূত্ব আলোচনায় মূলতঃ কোন বিষয় গুলো আসে?
৩. ইসলামী মতে পরিবারের সংজ্ঞা কী?
৪. এটা কি সত্য যে মুসলিম পরিবার মূলথঃ একটি বধি©ত পরিবার?
৫. কেই যদি বলে পরিবারের দায়িত্ব কত©ব্য সম্পক© নিয়ন্ত্রণে কোন আইনের প্রয়োজন?
৬. ইসলামে পরিবারিক কাঠামোতে রক্ত সম্পকেলর ভূমিকা কি?
৭. কোন পালিত সন্তানের পিতৃপরিচয় পাওয়া না গেলে পালনকারীর পরিবারের নামে তার নাম রাখা যাবে কিনা?
৮. সন্তান পালক ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ না অবৈধ?
৯. ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবারের মূল উদ্দেশ্য কি?
উত্তরঃ
১. ইসলামে পরিবারের গুরূত্ব
ইসলামে পরিবারকে একক (The cornerstone of social system) হিসেবেই চিন্তা করে। পরিবারের শান্তি, ঐক্য ও সংহতি সমাজকেই সুসংহত ও শান্তিময় করে। আবার পরিবারের বিপয©য় সমাজে বিপয©য় আনে। পরিবারের দুব©লতা শুধুমাত্র কিশোর অপরাধ, ড্রগ মাদকাসক্তি, অবাধ যৌনাচার ও তালাকেরই সৃষিবট করেনা বরং সমাজ ব্যবস্থারও ধংস্বের সূচনা করে।
২. ইসলামে পরিবারের গুরূত্ব সংক্রান্ত আলোচনায় মূলতঃ যেসব প্রসঙ্গ আসে
ক. পরিবারের সঙজ্ঞা, রক্তের সম্পক© এবং পালিত সন্তান সংক্রান্ত।
খ. পরিবারের ভিত্তি ও কেন্দ্র হিসেবে নারীর ভূমিকা।
গ. ইসলামে নারীর মযা©দা ও গুরূত্ব।
ঘ. পরিবারের গঠন।
ঙ. পরিবারে পিতা-মাতা ও সন্তানের পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব ও কত©ব্য।
চ. পারিবারিক সমস্যা: বৈবাহিক সমস্যা, তালাক ও পুন©বিবাহ।
ছ. ইসলামের উত্তারাধিকার সংক্রান্ত আইন।
৩. ইসলামে পরিবারের সংজ্ঞা [সুত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৪:১, ৪৯:১০]
ইসলামে সাধারণভাবে সমগ্র মানব জাতিকে এক পিতামাতার সন্তান হিসেবে এক পরিবার রূপে বণ©না করা হয়েছে। কুরআন প্রায়ই মানব জাতিকে ‘আদমের (আঃ) সন্তান’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। এরপর ঈমানদারকে এক পরিবারের সদস্য হিসেবে বলা হয়েছে। উম্মাহ অথ© এক আল্লাহ এবং কিতাবসমূহ ও নবী-রাসূলের উপর ঈমান আনেন। সবো©পরি ইসলামে পরবিার বলতে বিবাহিত ও রক্তের সম্পকে© আবদ্ধদের বোঝানো হয়েছে।
৪. মুসলিম পরিবার কি প্রকৃত অথে© বধি©ত পরিবার (Extended Family)
নিউক্লিয়াস পরিবারের ধারণাটি মূলত আধুনিক পাশ্চাত্য সমাজের। যেখানে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানরাই থাকেন। বধি©ত পরিবারের ধারণাটি প্রাচ্য দেশীয় যার অন্ত©ভূক্ত হচ্ছে সন্তা, পিতামাতা, পিতামহ-মাতামহ এবং কখনো কখনো এক বাড়িতে বসবাসরত জ্ঞাতি ভাইতের পরিবারসমূহ। মুসলিম পরিবার নিউক্লিয়াস অথবা
বধি©ত পরিবার কোনটি হবে এমন কোন আদেশ ইসলামে নেই। এখানে স্বামী স্ত্রী তাদের সন্তান ও সন্তানের পিতামহ-মাতামহ নিয়েই সাধারণতঃ পরিবার গঠিত হয়। এছাড়া দ্বিতীয় ধারা বা তৃতীয় ধারার আত্মীয়রাও একই পরিবারের অন্ত©ভূক্ত হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা ইসলামে নেই। ইসলামে প্রথম ধারার আম্মীয়দের অধিকারের ব্যাপারে সুদিদি©ষ্ট বিধি বিধান আছে, যা অন্যদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাজহাবে বিভিন্নভাবে উল্লিখিত।
৫. পারিবারিক সম্পক© নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োজন কেন
যদিও পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক দায়িত্ব কি হবে তা মানুষ সহজাতভাবেই অবহিত, তবুও এই সহজাত প্রবৃত্তিকে স্বাভাবিক ভাবে পরিচালিত করতেই আইনের প্রয়োজন। পরিবারের সকল সদস্যদের অধিকার রক্ষায় গ্যারান্টি হিসেবেই আইন আবশ্যক। নচেৎ কোন স্তানের বেশি আবেগবশতঃ বাবা-মা অন্য সন্তানকে বঞ্চিত করে বসতেও পারেন। মুসলিম পারিবারিক আইন পরিবারের সকল সদস্যদের নূন্যতম অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। এজন্য ইসলামে পরিবারের সদস্যদের সম্পক© সহজান অনূভূতি ও আইন-উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ণা করে তৈরি হয়।
৬. ইসলামের পারিবারিক কাঠামোতে রক্ত সম্পকে©র ভূমিকা
[সুত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৩৩:৪-৬]
মুসলিম পরিবারে রক্ত সম্পকে©র ভূমিকা অপরিসীশ। কারণ এ থেকেই পরিবারের সদস্যদের সম্পক© এবং পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব ও কতৃ©ব্যেরবিধান সৃষ্ট। ইসরামের গুরূত্বপূণ© বিধান হচ্ছে কেই তার পালক সন্তানকে নিজের সন্তান রূপে দাবী করতে পারবে না। কোন পালক সন্তানও নিজেকে তার পালক পিতা-মাতার সন্তান বলে দাবী করতে পারবে না।
এক্ষত্রে ইসলামের আর দুটি বিধান হচ্ছে যে ঃ
ক. কেউ তার নিজ পরিবারের নামে পালিত সন্তানের নাম রাখতে পারবে না।
খ. কেউ প্রাচীন যুগের ‘আজ-জিহার’ পন্থায় তালাক দিতে পারবে না (স্বামী রাগের বশে স্ত্রীকে বলবে তুমি আমার মায়ের মত তাহলে তালাক হয়ে যাবে) কারণ এটা মিথ্যাচার।
৭. পালিত সন্তানের পিতৃপরিচয় পাওয়া না গেলে পালক পিতা-মাতার পারিবারের নামে তার নাম রাখা যাবে কি? [সুত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৩৩:৫ ]
কুরআন পালক সন্তান পালককারী মুসলিমদের আদেশ দেয় ‘তাদের পিতৃ পরিচয় অক্ষুন্ন রাখতে’। যদি তাদের পিতৃপরিচয় না থাকে তবে কুরআন বলে, ‘তারা তোমাদের ঈমানী ভাই, এবং তোমাদের পোষ্য, তাদের দয়ার সাথে লালন কর। কিন্তু তাদের পরিবারের নামে নাম রাখা ঠিক নয়।
৮. সন্তান পালক নেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ না অবৈধ?
যদি পালক নেয়া বলতে কেউ এটা বোঝাতে চান যে তিনি সন্তান দত্তক নেবেন, তাকে নিজের সন্তান পরিচয়ে বড় করবেন, তাকে নিজের সন্তানের মত সম্পদে উত্তারাধিকার দেবেন, তবে এই অথে© সন্তান পালক নেয়া অবৈধ। কারণ এক্ষেত্রে পালিত সন্তানের নিজ বংশ পরিচয় লুকান হয় বা হারিয়ে যায় এবং নিজ সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের হক নষ্ট করা হয়। আর যদি পালক নেয়া বলতে কেউ এটা বোঝান যে, কোন এতিম ও অসহায় বাচ্চাকে দয়াবশতঃ লালন পালন করে বড় করা হল তার পূব© পরিচয় অক্ষুন্ন রেখে, তবে এটা ইসলামের দৃষ্টিতে শুধু বৈধই নয় বরং পরম সওয়াবর কাজ। আল্লাহ এমন ব্যাক্তিদের জন্য বড় পুরষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও পালিত শিশু সম্পদে উত্তরাধিকার পায়না তবুও পালনকারী ইচ্ছে করলে তার সম্পদের কিছু অংশ (সবো©চ্চ এক তৃতীয়াংশ) দান করতে পারেন।
৯. ইসলামের দৃষ্টিতে পারিবারের মযা©দা ও বিশেষত্ব
ক. ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার শুধুমাত্র মানুষের ঐচ্ছিক বা স্বঃস্ফুত© কোন প্রতিষ্ঠান নয় বরং আল্লাহর নিধা©রিত আধ্যাত্মিক ইনিষ্টিটিউশন। পরিবারের নামে কিছু কিছু সমাজে যে সব বিকৃত চচা© চলছে (যৌথবিবাহ, সমকামী বিবাহ ইত্যাদি) ইসলামে তা নিষেধ।
খ. পরিবার এবং বিয়ে ইসলামে এক পবিত্র বন্ধন হিসেবে স্বীকৃত, যা স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মযা©দা ও দায়িত্ব নিশ্চিত করে।
গ. পরিবারের প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাস আল্লাহ তায়ালার বিশ্বাস ও আনুগত্যেকে অতিক্রম করতে পারে না।
ঘ. ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কে সমমযা©দা প্রদান করে। স্বামী-স্ত্রী সম্মতির ভিত্তিতে আল্লাহ নিধা©রিত সীমার মধ্যে পরিবারের সকল দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারেন।
১০. পরিবারের কাজ ও লক্ষ্য
ক. সন্তান জন্মের মাধ্যমে মানব বংশধারা রক্ষা।
খ. একমাত্র বৈধ যৌনানন্দ লাভের সুযোগ দিয়ে সমাজ এবং ব্যাক্তির নৈতিক জীবন রক্ষা করা।
গ. সন্তানের সমাজিক মযা©দা ও স্বীকৃতি।
ঘ. মানুষের মানবিক ও আবেগসূচক চাহিদা পূরণ।
ঙ. সামাজিক ও আথি©ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
চ. মানুষের কঠোর পরিশ্রমী করা, দায়িত্ব অনূভূতি জাগ্রত করে পরিবারের স্বাথ© ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি করা।
জি-১১ প্রাচীন সভ্যতা সমূহে নারীর অবস্থান
প্রশ্নঃ
১. প্রাচীন বিভিন্ন সভ্যতায় নরীর মযা©দা ও অবস্থান নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন কোথায়?
২. প্রাচীন প্রাচ্য দেশীয় সভ্যতা সমূহে নারীর অবস্থান কেমন ছিল?
৩. প্রাচীন ইউরোপীয় সভ্যতা সমূহে নারীর অবস্থান কি কিছুটা ভাল ছিল?
৪. প্রাচীন মধ্য প্রাচ্যে নারীরা কি মযা©দা পেত?
৫. নারীর প্রতি এই বিশ্বজনীন নেতিবাচক আচরণের কোন ব্যাতিক্রম কি প্রাচীন সভ্যতার কোথাও দেখা যায়?
৬. বাইবেল এবং কুরআনে নারীর অবস্থান সম্পকে© সংক্ষেপে তুলনামূলক আলোচনা করুন।
উত্তরঃ
১. বিভিন্ন সভ্যতায় নরীর মযা©দা ও অবস্থান নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন প্রসঙ্গে
নারীর মযা©দা ও অধিকার প্রদানে তৎকালীন সকল সভ্যতার চেয়ে ইসলাম যে অগ্রগামী ছিল তা অনুধাবন করার জন্যেই বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতার নারীর মা©দা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। যেহেতু ইসলাম ছিল আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান সেহেতু এমন হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক।
২. প্রাচীন প্রাচ্য দেশীয় সভ্যতা সমূহে নারীর অবস্থান
নারীদের প্রতি প্রাচীন চীনাদের আচরণের উদ্ধিতি পাওয়া যায় খ্রীষ্টর্পূব© তৃতীয় শতকে হুসুয়ান নামক কবির লেখায়, “নারী হওয়াটা বড় দুঃখের, পুথিবীতে কোন কিছুই নারীর মত এত সস্তা নয়।”কনফুরিয়াস বলেন, “নারীর মূল কাজ আনুগত্য, শৈশব কিশোরে পিতার, বিয়ের পর স্বামীর এবং বিধবা হবার পর পুত্রের।” তিনি আরও বলেন যে, এই আনুগত্য হবে প্রশ্নাতীত এবং একচ্ছত্র (অথচ ইসলামে আল্লাহ ছাড়া আর কারো প্রশ্নাতীত এবং একচ্ছত্র আনুগত্য হারাম)। বৌদ্ধ ধমে©ও নারীকে নীচ এবং পাপে পূণ© হিসেবেই দেখানো হয়েছে, বলা হয়েছে নারীর মত ভয়াভহ আর কিছুই নেই।
হিন্দু ধমে© নারীর অবস্থান আরও খারাপ ছিল। বেদ বা অন্যান্য ধম© গ্রন্থে পড়া অথবা কোন ধমী©য় কম©কান্ডে নারীর কোন ভুমিকা ছিল না। বিধবা হবার পর পুনবি©বাহ বা সম্পত্তির অধিকার তো দূরের কথা, স্বামীর সাথে এক চিতায় সহমরণই ছিল তার একমাত্র পরিণতি।
৩. প্রাশ্চাত্য সভ্যতায় নারীর অবস্থান
পিতা, ভাই আ অন্য পুরুষ আত্মীয়ের অধীনে তাদের কে minor মনে করা হত। বিয়ের সময় তাদের মতামতের
কোন প্রয়োজন হত না এবং পিতার কাছ থেকে সে যেত স্বামী প্রভূর ঘরে। রোমান সভ্যতায় নারী যে পৃথকভাবে কিছু করতে সক্ষম তাই বিশ্বাস করা হত না। এনসাইক্যোপেডিয়া ব্রিটেনিকা অনুসারে কোন মহিলা বিয়ে করলে স্বাভাবিকভাবেই তার সম্পদের মালিক হত তার স্বামী। সেই সম্পত্তি আর সে ফেরত নিতে বা স্বামীর অনুমতি ছাড়া খরচ করতেও পারত না। মহিলারা কোন উইল বা চুক্তি করতে পারতনা;এমনকি নিজের সম্পদের ব্যাপারেও না।
৪. প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যে নারীর অবস্থান
প্রাচীন আরবে হিব্রু এবং আরবী রীতি চালু ছিল। প্রাচীনকালে আরবরা যখন শুনতো তার কণ্যা সন্তান হয়েছে তখন রাগে তাদের মুখ রক্তবণ© ধারণ করত। এটা ছিল এমন একটা যুগ যখন কণ্যা শিশুকে জীবন্ত মাটি চাপা দিয়ে হ্ত্যা করা হত। ধারণা করা হত যে কণ্যা শিশু পিতার অসম্মানের কারণ হবে। পক্ষান্তরে পুত্র সন্তানের জন্ম সংবাদে তারা আনন্দে মাতোয়ারা হত। পিতার মৃত্যূর পর সন্তানরা পিতার বিধবা স্ত্রীদেরও মালিক হত।
৫. বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি এই নেতিবাচক আচরণের ব্যাতিক্রম
এটা ঢালাওভাবে বলা ভূল হবে যে সকল প্রাচীন সভ্যতাই সকল ক্ষেত্রে নারীর অবমূল্যায়ন করত বা তার প্রতি নেতিবাচক আচরণ দেখাত। এর কিছু ব্যাতিক্রম নিশ্চয় ছিল। কোন কোন সভ্যতায় ভদ্রঘরের নারীদের বিশেষ মযা©দা ছিল। স্বীয় অধ্যাবসায় ও মেধার গুণে কোন কোন নারী সমাজে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। প্রত্নতাত্তিক খননে আবিস্কৃত বেশ কিছু সভ্যতায় দেখা যায় প্রভুকে নারীর আকৃতিতে কল্পনা করা হয়েছে। মিসর, ব্যবিলন, গ্রীস, সুমারিয়া ও রোমে একজন মহিলা দেবীর পূজা করা হত। যার থেকে অন্য দেব-দেবীর সৃষ্টি। এসব মিথলজির সাথে বাইবেলে বণি©ত গড-দি-মাদার এবং তাঁর ‘পবিত্র পুত্রের‘ মিল লক্ষ্য করা যায়।
৬. বাইবেল ও কুরআনে নারীর তুলনামূলক অবস্থান
বিভিন্ন সভ্যতায় নারীর অবস্থান আলোচনার পর তিনটি প্রধান ধমে© যথা ইহুদী, খ্রীষ্ঠান ও ইসলামে নারীর অবস্থান নিয়ে আলোচনা পরবদী© অধ্যায়ে করা হবে। এখানে ভুমিকায় এতুটুকু বলা যায় যে, এই তিন ধমে© প্রদত্ত নারীর অধিকারে কোথাও কোথাও মিল আছে, আবা কোথাও অমিল আছে। কিন্তু ইহুদী ও খ্রীষ্টান প্রচার মাধ্যমে ইসলামে নারীর অধিকার সম্পকে© এত বেশী নেতিবাচক প্রচারণা পাশ্চাত্যে রয়েছে যা প্রাশ্চাত্যের বিপুল সংখ্যক মানুষের মনে ইসলাম সম্পকে© ভ্রান্ত ধারণার জন্ম দিয়েছে।
জি-১২ ইহুদী, খ্রীষ্টান এবং মুসলিম ধম©গ্রন্থে নারী- ১
প্রশ্নঃ
১. কুরআন এবং বাইবেলে বণি©ত নারীর মযা©দা ও অবস্থানের তুলনামূলক আলোচনায় কোন কোন বিষয় আসে?
২. বিবি হাওয়া (আঃ)- এর জন্ম সংক্রান্ত বিষয়ে দুটো ধম©গ্রন্থের বণ©ণায় কি কি অীমল আছে?
৩. প্রথম পাপের জন্য কে দায়ী ছিল? আদম (।অঃ) নাকি বিবি হাওয়া (আঃ)?
৪. প্রথম পাপের সাথে সংশ্লিষ্ট সরীসৃপ (সাপ)- এর কথা কি শুধু কি বাইবেলেই আছে?
৫. গভ©ধারণ ও সন্তান প্রসব প্রসঙ্গে ইসলাম, ইহুদী ও খ্রীষ্ট ধমে©র দৃষ্টিভঙ্গি কি কি অমিল আছে?
৬. মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব সম্পকে© ইসলাম যে বিধান দেয় ইহুদী-খ্রীস্ট ধমে©ও কি একই রকম বিধান দেয়?
উত্তরঃ
১. কুরআন এবং বাইবেলে বণি©ত নারীর মযা©দা ও অবস্থানের তুলনামূলক আলোচনায় যেসব বিষয় আসে?
ক. বিবি হাওয়া (আঃ) এর সৃষ্টি প্রসঙ্গে।
খ. পৃথিবীর প্রথম পাপ ও তার জন্য দায়ী কে।
গ. গভা©বস্তায় এবং প্রসবকালীন যণ্ত্রার প্রসঙ্গে।
ঘ. মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব সংক্রান্ত প্রসঙ্গ।
২. বিবি হাওয়া (আঃ) এর জন্ম প্রসঙ্গে বাইবেল ও কুরআন
[সূত্র নিদে©শিকাঃ আল কুরআন- ৪:১ জেনেসিস- ২:২-১২
বাইবেল ও কুরআনে উভয়ই এ বিষয়ে একমত যে প্রথমে আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করাহয়, অতঃপর বিবি হাওয়া
(আঃ)- এর সৃষ্টি। এখানে বাইবেল আর একটু বণ©ণা দেয় যে হযরত আদম (আঃ) এর পাজরের হাড় থেকে বিবি হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয় (যার ভিত্তিতে অনেক নারী বাঁকা ও ভঙ্গুর স্বভাবের বলে থাকে)। কিন্তু কুরআনে এরকম কিছুর উল্লেখ নেই। বরং কুরআনে বলা হয়েছে আল্লাহ প্রথমে এক আত্মার সৃষ্টি করেন এবং তা থেকে উভয়ের সৃষ্টি। কাজেই এ ক্ষেত্রে কুরআনের বণ©ণায় নারী-পুরুষের সমান মযা©দা এবং সম অধিকারের ইঙ্গিত আছে।
৩. প্রথম পাপ (আদিপাপ)- এর জন্য দায়ী কে
[সূত্র নিদে©শিকাঃ জেনেসিস-৩ চাপ্টার-৩, ৩৮:৭১, ৭:১১, ২:৩১, ১৫:২৮, ১৭:৬১, ২০:১১৫]
ইহুদী, খ্রীষ্টান এবং ইসলাম ধমে© এবিষয়ে উল্লেখিত আছে যে, আল্লাহ আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া (আঃ ) কে নিদি©ষ্ট গাছের ফল খেতে নিষেধ করেন (কুরআনে অবশ্য গাছের নাম ও প্রকৃতি উল্লেখ করা হয়নি)। এই নিষেধাজ্ঞা যে অমান্য হয়েছিল তাও সব ধম©গ্রন্থ উল্লেখ আছে। তবে এই ভঙ্গের কাজটি কিভাবে হয়েছিল তার বণ©ণায় ধম© গ্রন্থগুলোতে পাথ©ক্য আছে। বাইবেলে এ নিষেধাজ্ঞা অঙ্গের জন্য প্রাথমিকভাবে বিবি হাওয়াকে দায়ী করে। বাইবেল বলে বিবি হাওয়া (আঃ) এক সরীসৃপ কতৃ©ক উক্ত গাছ থেকে ফল খেতে প্রলুব্ধ হন এবং তিনি নিজে আদম (আঃ) কে প্রলুব্ধ করেন। কুরাআনে এমন কোন সরীসৃপের উল্লেখ নেই । কুরআন বলে আদম (আঃ) এর বিশেষ মযা©দার হিংসাগ্রস্ত হয়ে শয়তান প্রথম থেকেই তাদের ক্ষতি সাধনের চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। কু্রআনের পর পর আটটি আয়াতে যেখানে আদম-হাওয়ার ঘটনা বিবৃত হয়েছে সেখানে পনের বার তারা দুজন বলা হয়েছে। অথা©ৎ
এই ভুলের জন্য কুরআনে নিদি©ষ্টভাবে কাইকে দায়ী করেনি । বরং কুরআন ও হাদীসের বণ©ণায় প্রাথমিক দায়িত্ব কিছুটা হলেও আদম (আঃ) এর উপর দেয়া হয়েছে। কুরআনে আরও বলা হয়েছে যে আদম ও হাওয়া (আঃ) অনুতপ্ত হলে আল্রাহ তাদের ক্ষমা করে দেন। কাজেই কুরআনে কোন আদি পাপের ধারণা নেই।
৪. সরীসৃপের ধারণাটি ক শুধু বাইবেলেই এসছে?
প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে বহু প্রাচীন ধমে© সাপকে শয়তানের প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে। এমনকি দেবমাতার প্রাচীন চিত্রে দেো যায় জীবন বৃক্ষকে পেচিয়ে রেখেছে সাপ। সাপ প্রসঙ্গে এই ধারণা হিব্রু ধম©গ্রন্থে উদ্ভবের বহু আগেই প্রচলিত ছিল।
৫. গভ©ধারণ ও সন্তান প্রসব সম্পকে© ইহুদী-খ্রীষ্ট মত ও ইসলাম
[সূত্র নিদে©শি©কাঃ জেনেসিস- ৩:১৬, ৭:১৮৯, ৩১:১৪, ৪৬:১৫]
বাইবেল বলে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে আদি পাপ করায় বিবি হাওয়াকে সৃষ্টা এই অভিশাপ দেন যে তার পাপের জন্য তিনি তার কষ্টকে বহুগুণ বাড়াবেন। এই কষ্টই প্রত্যেক নারী গভা©বস্থায় ও সন্তান জন্মের সময় ভোগ করেন। সন্তান জন্মের পর নারীর পবিত্রতা সম্পকে© বাইবেল যা বলে তা লক্ষ্য করার মত। যদি পুত্র সন্তান জন্ম দেয় তবে সে এক সপ্তাহ ও আরও তেত্শি দিনের জন্য অপবিত্র (অশুছি)। যদি সে কণা সন্তান জন্ম দেয় তবে দুই সপ্তাহ ও আরও ছেষট্টি দিনের জন্য অপবিত্র। এই অপবিত্র মেয়াদ শেষে সে ধম©যাজকের কাছে গিয়ে নিজের অপবিত্রতা
এবং পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করবে।
পক্ষান্তরে ইসলাম নারীর গভা©বস্থাকে মযা©দা ও সহানূভূতির সাথে বণ©ণা করেছে। ইসলাম বলে এই সময় স্বামী-স্ত্রী সন্তানের জন্য যৌথভাবে দোয়া করবে। ইসলাম সন্তানদের আদেশ দেয় পিতা মাতার প্রতি, বিশেষভাবে মাতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে কারন তিনি দুব©লতার উপর দুব©লতা সহ্য করে সন্তানকে গভে© ধারণ করেছেণ। হাদিসে গভা©বস্থাকে জেহাদের সাথে তুলনা করে বলা হয়েছে প্রসবকালীন মৃত নারী শহীদের মযা©দা পাবে। সন্তান জন্মের পর নামাজ, রোজা, এবং স্বামীর সহবাসের পূবে© অপেক্ষার সময়টি ইসলামে সব্বো©চ্চ চল্লিশ দিন এবং এটি কোন ঘৃণার বিষয় বা প্রায়শ্চিত্তের নয়। শুধু স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়।
৬. মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব সম্পকে© দুই ধারার দৃষ্টিভঙ্গি
[সূত্র নিদে©শিকাঃ Lev. Ch. 15 V. 19]
বাইবেল বলে মহিলাদের মাসিকের সময় তাদের সাতদিন পৃথক রাখতে হবে। যদি এর মাঝে কেই তাদের স্পশ© করে অথবা তাদের বিছানা স্পশ©, এমনকি তারা যে জায়গায় বসেছে সে জায়গাও স্পশ© করে তবে সে পরবতী© সন্ধ্যা পয©ন্ত অপবিত্র হবে এবং তাকে গোসল করতে হবে। এই সাতদিন পর মহিলাকে ধম©যাজকের কাছে উপস্থিত হয়ে দুবার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে- একটি অপবিত্রতার জন্য, অন্যটি পাপের জন্য, কারণ ঋতুস্রাব একটি পাপ।
পক্ষান্তরে কুরআন নারীর ঋতুস্রাবকে কোন পাপ বা নোংরামী হিসেবে বণ©ণা করেনি। বা এর জন্য কোন প্রায়শ্চিত্ত নিধা©রণ করেনি। যৌক্তিত কারণেই স্বামীর সাথে সহবাস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে পৃথক বসবাস বা পরিবারের অন্যান্য কাজ থেকে দূরে থাকতেবলা হয়নি। খোদ রাসূল (সাঃ) তাঁর স্ত্রীদের ঋতুস্রাবের সময় আলাদা বিছানায় থাকতেন না। কুরআনে এটাকে ব্যাখ্যা হিসেবে বণ©ণা করেছে যাতে মেযেদের প্রতি আরও সহানূভূতি প্রকাশ পায়। পরিশেষে মাসিক ঋতুস্রাব শেষ হলে প্রায়শ্চিত্ত করার কোন প্রশ্নই আসে না, বরং কেবল গোসল করলেই হ্য়।
জি- ১৩ ইহুদী, খ্রীষ্টান এবং মুসলিম ধম©গ্রন্থে নারী- ২
প্রশ্ন ঃ
১. ধষ©ণের শিকার নারীর প্রতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কুরআন ও বাইবেল কি বলেছে?
২. যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যাভিচারের অভিযোগ আনে তবে সে ক্ষেত্রে দুই ধম© গ্রন্থে কি বিধান দেয়?
৩. দুই ধম©গ্রন্থে বিয়ে সম্পকে© কি দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়?
৪. অনেক খ্রীষ্টান বলেন যে, যেহেতু ওল্ড টেষ্টমেন্ট এখন চালু নেই সেহেতু এর সাথে কুরআনের তুলনা করা ঠিক নয়, এই যুক্তির ব্যাপারে কি বলবেন?
৫. নিউ ষ্টেটমেন্ট অনুসারে যীশু খ্রীষ্টের মতে নারীর মযা©দা ও অবস্থান কেমন?
৬. যীশুর অনুসারীরা কি এই প্রশ্নে যীশুর দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেছিল?
৭. মেরী (রাঃ)-এর ব্যাপারে সম্মান পোষণকারী পল-এর নারীর অধিকার প্রশ্নে অবস্থান কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
৮. নারী সংক্রান্ত পল এর দৃষ্টিভঙ্গি যে চাচ©কে প্রভাবিত করেছিল তার কোন প্রমাণ আছে কি?
উত্তরঃ
১. ধষ©ণের শিকার নারীর প্রতি আচরণ প্রশ্নে ইসলাম ও খৃষ্টবাদ
[সূত্র নিদে©শিকাঃ Deut. CH. 22 v. 22; CH. 24 v. 26]
ওল্ড টেষ্টমেন্ট মতে যদি কেউ কোন বিবাহিত মহিলাকে ধষ©ণ করে তবে উভয়কেই পাথর মারতে হবে। যদি ধষি©তা অবিবাহিতা হয় তবে ধষ©ক ধষি©তার পিতাকে জরিমানা দেবে এবং ধষি©তাকে বিয়ে করবে এবং তাকে কখনো তালাক দিতে পারবে না । কিন্তু ইসলাম বলে ধষি©তা হচ্ছে আক্রমণের শিকার, কাজেই তার কোন শাস্তির প্রশ্ন উঠেনা। ধষ©কের শাস্তি মৃত্যূদন্ড, তবে কোন ক্ষেত্রে ধষি©তার পিতাকে বিপুল অথ© জরিমানা দিয়ে সে মৃত্যূদন্ড থেকে অব্যাহিত পেতে পারে। ইসলাম কখনোই ধষ©কের সাথে ধষি©তার বিয়ের বিধান দেয়না কারণ এটা তো ধষ©কের জন্য শাস্তি না হয়ে উল্টে পুরষ্কার হয়ে দেখা দেয়। বরং ইসলাম নরনারী অসৎ উভয়কে লোককে বিয়ে না করতে বলে, আর ধষ©ক তো নিঃসন্দেহে অসৎ।
২. স্বামী কতৃ©ক ব্যাভিচারের অভিযুক্ত স্ত্রী সম্পকে© দুই ধম© যা বলে
[সূত্র নিদে©শিকাঃ Numb. CH. 5 v. 12-28]
এক্ষেত্রে ওল্ড টেষ্টমেন্ট বলে অভিযুক্ত স্ত্রীকে ধম©যাজক নানাভাবে জেরা করবেন। যার এক পযা©য়ে তিনি কিছু ময়লা, তিক্ত পানি নিয়ে তাকে স্বীকারোক্তি দিতে বলবেন। যদি সে তা দেয় তবে তার পেট না ফুলে যাওয়া পয©ন্ত ঐ ময়লা তিক্ত পানি খেতে বাধ্য করা হবে। অথা©ৎ সেখানে স্বামীর অভিযোগ সত্য ধরেই এগিয়ে যাওয়া হয়।
পক্ষান্তরে ইসলাম বলে এক্ষেত্রে স্বামীকে তার বক্তব্যের সত্যতার বিষয়ে পাঁচবার আল্লাহর নামে খেয়ে বলতে হবে
তার দাবী সত্য। এর জবাবে মহিলাও যদি পাঁচবার কসম খেয়ে বলে যে সে নিদো©ষই থেকে যাবে এবং অবশেষে বিয়ে ভেঙ্গে যাবে।
কোন ব্যাক্তি অন্য কোন স্ত্রীলোক সম্পকে© ব্যাভিচারের অভিযোগ উথাপনই না যদি তার দাবীর সমথ©নে আরও কমপক্ষে তিনজন ধামি©ক এবং সত্যবাদী চাক্ষুস সাক্ষী না আনতে পারে। যদি এমন অভিযোগকারী তিনজন সাক্ষী না আনতে পারে তবে অভিযোগকারীকে কমপক্ষে আশি ঘা দোররা মেরে শাস্তি দিতে বলা হয়েছে। ইসলাম মূলতঃই নারীদের সম্মানিত এবং সতী মনে করে, তাই কোন নারীর বিরুদ্ধে ব্যাভিচারের অভিযোগ উথাপনের এমন কড়া পূব©শত© আরোপ করেছে। এতে সমাজে সবসময় নারীদের ব্যাপারে সুধারণা বিরাজ করেবে। {এ পদ্ধতি হৃদযোগ্য ব্যাভিচারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তাযীরযোগ্য ব্যাভিচারের ক্ষেত্রে নয় (দ্রষ্টব্য- পাকিস্তান ও অন্যান্য ইসলামী রাষ্ট্রের হদুদ আইন]- অনুবাদক}
3. দুই ধমে© বিয়ের প্রসঙ্গ যেভাবে এসেছে
[সূত্র নিদে©শিকাঃ Gen. CH. 3 v. 16- Gen. CH 24 v. 58, CH. 4 v.4]
ইহুদী আইন এবং ওল্ড টেষ্টামেন্ট মতে সমগ্র বিশ্বে প্রচলিত যে বিয়ে, তাতে স্ত্রী স্বামীর লড©শীপে (রাজত্বে) প্রবেশ করে। শাইয়ান সম্পাদিত এন্সাক্লোপিডিয়া বাইব্লিকা বলে, “বিয়েতে মেয়েদের মতামত অপ্রয়োজনীয়”……। একই পুস্তকে বেট্রোথাল নামক বিয়ের কথা বলা হয়েছে ,যেখানে ক্রয়মূল্যের বিনিময়ে স্ত্রী লাভ করা যায়। এক্ষত্রে তালাকের একমাত্র অধিকার স্বামীর। কারণ তার স্ত্রী তার সম্পত্তি।
পক্ষান্তরে ইসলামে বিয়ের জন্য মেয়ের মতামত ‘অত্যাবশ্যক’ শত© । মোহরানার অথ© স্ত্রী উপহার হিসেবে লাভ করে, কোন ক্রয়মূল্য হিসেবে নয়। তালাকের অধিকার উভয়ের সমান (যদিও পদ্ধতি ভিন্ন- অনুবাদক)।
৪. ইসলামের সাথে ইহুদী-খ্রীষ্টান রীতির তুলনায় ওল্ড টেষ্টামেন্টের উদ্ধিতি গ্রহণ প্রসঙ্গে
যদিও এটা সত্য যে ওল্ড টেষ্টামেন্টের ইহুদী আইনগুলো এখন আর চালু নেই তবু নিন্ম লিখিত কারণে এর উদ্ধৃতি নেয়া যায়ঃ
ক. নিউ টেষ্টামেন্ট লেখকরা প্রায়ই যীশুখৃষ্টের আগমন সংক্রান্ত ভবিষ্যতবাণী প্রশ্নে ওল্ড টেষ্টামেন্টের উদ্ধৃতি নিয়েছেন; কাজেই অন্যান্য বিষয়েও এর উদ্ধৃতি গ্রহণযোগ্য।
খ. যীশু বলেছেন তিনি মুসার (আঃ) আইনকে পূণ©তা দিতে এসছেন; একে ধ্বংস্ করতে নয়। কাজেই সেই আইনের আবেদন এখনো আছে।
গ. তদুপরি ওল্ড টেষ্টামেন্ট এর আবেদন যীশুর অন্ত©ধানের পরও বঞাল ছিল বিশেষত সেন্ট পলের কাছে।
৫. নারীর মযা©দা ও অবস্থান প্রশ্নে যীশুর দৃষ্টিভঙ্গি
[সূত্র নিদে©শিকাঃ Jhon. CH. 16]
নারীর প্রতি যীশু কোন নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতেন না। শোনা যায় তিনি আদি পাপের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন। মেয়েরা এই পাপ বয়ে চলেছে বলে তিনি মনে করতেন না। প্রসব কালীন যন্ত্রণা সম্পকে© তিনি বলতেন এটা যন্ত্রণার হলেও সন্তান জন্মের পর মা সুখী হয়। তার এই সহানুভূতিশীল মন্তব্য ওল্ড টেষ্টামেন্টের নেতিবাচক
মন্তব্য থেকে পৃথক। তার অনুসারীদের কয়েকজন মহিলা ছিলেন যারা তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনার গুরুত্বপূণ© সাক্ষী।
৬. যীশুর অন্ত©ধানের পর নারী প্রসঙ্গে তাঁর শিষ্যদের অবস্থান
[সূত্র নিদে©শিকাঃ 1st Peter CH. 16, 1st Tim CH. 3, 1st Corinth CH. 11 v. 3, 2nd Corinth CH. 11]
যদিও যীশুর কয়েকজন অনুসারী নারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন কিন্তু তবুও সেন্ট পলসহ অধিকাংশ নারীর ব্যাপারে যীশুর দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত অবস্তান গ্রহণ করেন। সেন্ট পল বলেন, নারী নিরবতার মধ্যেই জীবন যাপন করবে, তাকে শিক্ষিত করা বা পুরুষের উপর কতৃ©ত্ব করার সুযোগ দেয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি নারী প্রসঙ্গে ওল্ড টেষ্টামেন্টের দৃষ্টিভঙ্গির পুণ©ব্রাক্ত করে বলেন যে, আদম (আঃ) কে প্রথম সৃষ্টি করা হয় এবং তার পাঁজরের হাড় থেকেই বিবি হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়। বিবি হাওয়া (আ+) এর সাপের প্রচোরণায় আদম (আঃ) কে আদি পাপ করতে উৎসাহিত করেন। এই আদি পাপের গ্লানি সকল মহিলাকেই বহন করতে হবে। শুদুমাত্র সন্তান জন্ম, সততা এবং সেবার মাধম্যে
পাপ মোচন সম্ভ্যব। তিনি আরও বলতেন আল্লাহ নিজের মত করে পুরুষকে বানিয়েছেন আর পুরুষ থেকে নারী। ফলে নারী অবশ্যই পুরুষের চেয়ে নিন্ম মানের। নারীর ঘৃণাবশতঃ তিনি চিরকুমার থেকে যান এবং তার অনুসারীদেরও চিরকুমার থাকতে আদেশ দেন।
৭. নারীর প্রতি নেতিবাচক আচরণকে মেরী (আঃ) কে সম্মান করার সাথে তুলনা প্রসঙ্গে
যদিও যীশুর শিশ্যরা নারীর প্রতি চরম নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতেন কিন্তু মেরী (আঃ) কে বিশেষ সম্মান করতেন কারন তিনি “ঈশ্বরের জন্মদাত্রী” । এ ধরণের দ্বীমুখী আচরণ কিন্তু বিভিন্ন ধরণের প্রাচীন সভ্যতায়ও দেখা যায় যেখানে নারীকে দেব-দেবীর জন্মদাত্রী ভাবা হত, নারীমুতি©র পূজা হত অথচ সেসব সমাজের নারীর কোন মযা©দা বা অধিকার ছিল না।
৮. পল এর দৃষ্টিভঙ্গি চাচ©কে প্রভাবিত করার প্রমাণ
প্রাথমিক কালের খ্রীষ্টান যাজকদের উপর পল-এর চিন্তাধারার ব্যাপক প্রভাব সব©ক্ষেত্রে ছিল। নারীর প্রতি পল এর নেতিবাচক ধারণার প্রভাব প্রথম যুগের যাজকদের বিভিন্ন লেখায় দেখা যায়, যেমন Lecki তে দেখা যায় “নারী হচ্ছে সমস্ত দোযখের দরজা, সকল রোগের জননী”। আরও বলা হয় নারী হয়ে জন্ম নেয়ার জন্য সাব©ক্ষনিক অনুশোচনায় থাকা উচিৎ। সেন্ট পাষ্টিনসহ প্রথম প্রায় সকল যুগের ফাদার বিবি হাওয়া আদি পাপে বিশ্বাস করতেন এবং সব নারীই যে এই পাপ বয়ে চলেছে তা মানতেন।
জি- ১৪ ইসলামে নারীর মযা©দাঃ আধ্যাত্মিক প্রেক্ষিত
প্রশ্নঃ
১. ইসলামে নারীর অবস্থান কোথায়?
২. আধ্যাত্মিক প্রেক্ষিতে নারীর অবস্থান কেমন?
৩. বিশ্বাসী মহিলারা যে বিশ্বাসী পুরুষের সমান পুরষ্কার পাবেন এমন কোন প্রমাণ কুরআনে আছে কি?
৪. এই আধ্যাত্মিক সমতা কি প্রথাগত ধমী©য় কাজের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়েছে?
৫. ধমী©য় দায়িত্ব পালনে ইসলাম মেয়েদের কোন সুবিধা বা ছাড় দিয়েছে কি?
৬. যদি কেউ বলে যে এসব ছাড় নারীর অবস্থানকে নীচ করেছে এবং কিছু মেয়েলী সমস্যায় তাদের আল্লাহর এবাদতের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে তবে তার উত্তরে কি বলবেন?
৭. নারীর ধমী©য় ক্ষমতায়ন এর ধারণাটি খ্রীষ্টানদের মধ্যে বিস্তৃত হচ্ছে, ইসলামে এমন কোন সুযোগ আছে কি?
৮. যদি কেউ অভিযোগ করে যে নামাজের জামাতে মেয়েদের পুরুষের পেছনে স্থান নিয়ে দ্বীতিয় শ্রেণীর মযা©দা দেয়া হয়েছে, তবে কি বলবেন?
৯. কেন সকল নারীরা পুরুষ এবং তা থেকে একথাই কি বলা যায় যে, সকল ধম©ই পুরুষ কেন্দ্রিক?
উত্তরঃ
১. ইসলামে নারীর অবস্থান
ইসলাম নারীকে সম্মনিত করেছে এবং তার মযা©দা ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। যদিও কোন কোন মুসলিম সমাজ অজ্ঞতা এবং কুসংস্কারে আছন্ন হয়ে নারীর ইসলাম প্রদত্ত অধিকার ও মযা©দা দিচ্ছেনা; তথাপি কুরআন এবং হাদিস বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে একমাত্র ইসলাম নারীকে আধ্যাত্মিক, রাজনৈতিক, মানবিক ইত্য্যাদি সকল ক্ষেত্রে অনুপম মযা©দা দিয়েছে।
২. ইসলামে নারীর আধ্যাত্মিক অবস্থান
[সূত্র নিদে©শিকাঃ আল কুরআন- ৭:১৮৯, ৪২:১১, ৪:১, ১৬:৭২, ৩০:২১, ৩২:৯, ১৫:২৯]
প্রথমত: ইসলামে কোন আদিপাপের ধারণা নেই এবং এর দায়ভার বিবি হাওয়া (আঃ) থেকে সকল মহিলাদের
উপর আসবারও কোন সুযোগ নেই। দ্বিতীয়ত: যখন খ্রীষ্টান বিশ্ব নারীর আত্মা আছে কিনা এবং নারী মানব প্রজাতীর অন্তভূক্ত কিনা- এই বিতকে© ছিল তখনই ইসলাম ঘোষণা করে যে, প্রথম মানব-মানবী এ্কই রুহ থেকে সৃষ্টি। আল্লাহ মানব-মানবী উভয়কে সৃষ্টি করে নিজের নূর থেকে তাদের রুহ ফুঁকে দিয়েছেন। এভাবে ইসলাম মানব-মানবী উভয়কে মূলতঃ একই মযা©দা দেয়।
৩. বিশ্বাসী নারী যে বিশ্বাসী পুরুষের সমান পুরষ্কার পাবেন তার প্রমাণ
[সূত্র নিদে©শিকাঃ আল কুরআন- ৭৪:৩৮, ৩:১৯৫, ১৬:৯৭]
কুরাআনে বুহু আয়াতে আছে যাতে দেখা যায় বিশ্বসী পুরুষ এবং নারীর পুরষ্কার সমান। সূরা আল ইমরান- এর ১৯৫ নং আয়াতে নারী পুরুষের আধ্যাত্মিক সমতার একটি উদাহরণ। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “যে ব্যাক্তি নেক আমল করবে, সে পুরুষ হোক কি নারী, যদি সে মুমীন হয় আল্লাহ তাকে দুনিয়ার পবিত্র জীবন যাপন করাবেন, আর (পরকালে) এ ধরনের লোকদেরকে উত্তম আমল অনুপাতে প্রতিফল দান করবেন।” (১৬:৯৭)
৪. প্রথাগত ধমী©য় কাজে আধ্যাত্মিক সমতার প্রতিফলন
ইসলামে পুরুষ নারী উভয়ের জন্য একই ধমী©য় আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে বলা হয়েছে। ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত উভয় (সামথ©বানদের জন্য) এর জন্যই সমানভাবে ফরজ। অবশ্য মহিলাদের কিছু প্রাকৃতিক অসুবিধার জন্য কিছু ছাড় দেয়া হয়েছে।
৫. মহিলাদের জন্য সুবিধা /ছাড়
মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব এবং প্রসোবত্তর সময়ে নামাজ এবং রোজা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে রোযা পরে কাজা করতে হয় আর নামাজ কাযা করতে হয় না। এমনকি স্তনদানকারী ও গভ©বতী মায়েদেরও রোযা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে যা পরে কাযা আদায় করে নিতে হয়।
সমাজের দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যক্ষ জেহাদ এর বাধ্যবাধকতা থেকেও মেয়েদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
৬. এসব ছাড় কি মেয়েদের মযা©দা কি মেয়েদের মযা©দা নীচু করে?
এসব ছাড় মেয়েদের অসুবিধার সময় স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত সুবিধা, এতে মযা©দা খাটো হবার প্রশ্নই উঠেনা। গভ©বতী অবস্থায় বা প্রসোবত্তর কালে বা ঋতুস্রাবের সময় সারাদিন রোযা রাখা মেয়েদের স্বাস্থ্যহানির কারণ হকে পারে; এজন্যেই আল্লাহ এই ব্যবস্থা রেখেছেন॥ এর মানে এবাদত থেকে বঞ্চিত রাখা নয়। কারণ এবাদত বলতে ইসলামে নিদি©ষ্ট কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালনকে বুঝায় না। বরং বিশুদ্ধ নিয়তে যেকোন বৈধ কাজ করা হোক না কেন, তাই এবাদত। আল্লাহর আদেশ পালনই এবাদত। এসব বিশেষ অবস্থা শেষে খ্রীষ্ঠানদের মত মুসলিম মহিলাদের কোন প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়না শুধু গোসল করতে হয়।
৭. নারীর ধমী©য় ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে
খ্রীষ্টবাদের মত ইসলাম কোন চাচ© বা যাজক নেই। কাজেই ধমী©য় ক্ষমতাবান এর সুযোগ ইসলামে কারো জন্যেই নেই। যদিও ইসলাম মুসলমানদের ধমী©য় জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক ব্যুৎপত্তি অজ©ন করতে বলে কিন্তু সেটা সাধারণের উপর ধমী©য় প্রভুত্ব করার কোন সুযোগ বুঝায় না- তারা বিষেশজ্ঞ বা নেতা হতে পারেন মাত্র।
খ্রীষ্টবাদে যাজকদের দুটো প্রধান দায়িত্ব, ক. প্রথাগত ধমী©য় অনুষ্ঠানাদি পরিচালনা এবং খ. সমাজের সেবা দেয়া এবং সমাজকে ধমী©য় নিদে©শনা দেয়া।
ইসলামে ইবাদতের ধারণা নিছক কিছু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং জীবনের সকল কাজের মধ্যেই পরিব্যাপ্তি। সমাজের ও জীবনের অধিকাংশ কাজে নারীর অগ্রণী ভূমিকায় ইসলাম বাধা দেয় না।
৮. মেয়েরা কেন পুরুষের পেছনে নামাজ পড়বেন?
মুসলমানদের নামাজ শুধুমাত্র এক আসনে (শুধু বসে অথবা শুধু দাড়িয়ে) সম্পন্ন করা যায় না। নামাজের অন্তভূ©ক্ত আছে, রুকু, সেজদা, তাশাহুদ ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ। শুধু এই এক এবাদতে মেয়েদের পুরুষের পেছসে স্থান দেয়া হয়েছে যৌক্তিক কারণে। মেয়েরা পুরুষের সামনে অথবা পাশে দাড়িয়ে রুকু সেজদা করলে উভয়েরই নামাজের প্রতি মনোযোগ নষ্ট হতে পারে, নামাজের গাম্ভীয© ক্ষুন্ন হতে পারে। কাজেই জামাতে নামাজে মেয়েদের পেছনে জায়গা দেয়ার মধ্যে তাদের কোন অসম্মানের দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামে নেই বরং এখানে ভদ্রতা ও রুচিশীলতাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
৯. নারীরা সবাই পুরুষ কেন?
ইসলাম এই শিক্ষা দেয় যে কে নবী হবেন তা মানুষ নিবা©চন করেনা এবং তা নিধা©রণ করেন স্বয়ং আল্লাহ যিনি পুরুষ বা নারী নন। কাজেই পুরুষের প্রতি পক্ষপাতিত্বের প্রশ্ন উঠেনা। শুধুমাত্র পুরুষদেরই নবী হিসেবে মনোনীত করার কারণ সম্ভবতঃ এটাই যে নবুয়তের দায়িত্ব শুধু উপদেশ প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটা ছিল সাবি©ক জীবন ব্যবস্থা কায়েমের মিশন। প্রতিষ্ঠিত শয়তানী শক্তি নবুয়তের মিশনে বাধা দিত। তাদের হাতে প্রায় সব নারীকে নিযা©তন, লাঞ্চনা এমনকি মৃত্যূবরণ করতে হয়েছে। একজন নারীর পক্ষে এসব বহুমূখী দায়িত্ব পালন ও ঝুঁকি গ্রহণ সম্ভব হত বলেই আল্লাহ হয়তো নবী হিসেবে তাদের দায়িত্ব দেননি। এর অথ© এর নর নারীর আধ্যাতিক ভাবে অযোগ্য বরং এর অথ© এই যে নবুয়তের দায়িত্ব ব্যাপক ঝুঁকি, প্ররিশ্রম ও বিপদসংকুল।
জি- ১৫ ইসলামে নারীর মযা©দা- অথ©নৈতিক প্রেক্ষিত
প্রশ্নঃ
১. স্বামীর উপর নিভ©রশীলতা ছাড়া স্বাধীনভাবে নারীর সম্পদ অজ©ন কি ইসলাম কি সমথ©ন করে?
২. ইসলামে দেয়া অধিকারের সাথে শিল্প বিপ্লবোত্তর ইউরোপের তুলনা করুন।
৩. ইসলামী আইনে স্বামী এবং অন্য আত্মীয়দের (পিতা-মাতা) সম্পদে নারীর অংশ আছে কি?
৪. নারীর অংশ পুরুষের অধে©ক হবার বিষয়টি কি নারীর প্রতি জুলুম নয়?
৫. মুসলিম মেয়েদের চাকুরি করার অধিকার আছে কি? সেক্ষেত্রে তারা কি পুরুষের সমপরিমাণ বেতন পাবে?
৬. যে মহিলা বাইরে কাজ না করে , ঘরের কাজে ব্যাস্ত থাকেন, তিনি কি অনুৎপাদনশীল কাজে সময় নষ্ট করছেন?
৭. এভাবে ঘরে বসে থাকার যুক্তি কি নেতিবাচক ঐতিহ্য থেকেই এসেছে?
উত্তরঃ
১. নারীর সম্পদ অজ©ন প্রসঙ্গে
ইসলামী মতে একজন নারী বিয়ের পূবে© বা পরে যে কোন পরিমাণ সম্পদত অজ©ন করতে পারেন। তার সম্পদ তিনি কারো পরামশ© ছাড়া ইচ্ছেমত বিক্রী করতে, ভাড়া দিতে, ঋণ দিতে, দান করতে পারেন। ইসরাম আরও বলে যে বিয়ের পর মেয়েদের স্বামীর নামে নাম রাখার প্রয়োজন নেই। এটি একটি প্রতীকী প্রমাণ যে, ইসলাম তার ব্যাক্তিত্ত্ব সবসময়ই হেফাজত করে।
২. নারী ও তার সম্পদের ব্যাপারে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি
[সূত্র নিদে©শিকাঃ Encyclopacdia Americana (International Edition), 1969, Vol. 19 Page- 108] Muslim Institutios by Maurice Gaudefroy Demombynes
এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানার মতে ইংরেজী সাধারণ আইনে একজন মহিলার যাবতীয় সম্পত্তি কতার বিয়ের পর স্বামীর মালিকানায় চলে আসত। স্বামী তার জমি থেকে ভাড়া গ্রহণ বা যে কোন লাভ তোলার সামথ© রাখতেন। পরবতী©তে ১৮৭০ সালের পর ইংল্যান্ডে; তারও পরে ইউরোপে এই আইন সামান্য সংশোধন করা হয় যে স্বামী, স্ত্রীর অনুমতী ছাড়া এই সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেনা। এই সংশোধনীর পর বিবাহিত মহিলারা সম্পত্তি ক্রয় ও চুক্তি করার অধিকার পায়। ফ্রান্সে ১৯৩৮ সালের পূবে© এ অধিকার স্বীকৃত ছিল না। অথচ সপ্তম শতকে অন্ধকার যুগে ইসলাম নারীকে এর অনেক বেশি অধিকারই দিয়েছিল। তা দেখে অনেক পশ্চিমা লেখকই অবাক হন যে সেই অন্ধকার যুগে মুহাম্মদ (সঃ) কিভাবে এত সুন্দর আইন প্রণয়ন করলেন। তারা জানতেন না যে, এই আইন মুহাম্মদ (সঃ) প্রণয়ণ করেননি; এই আইন সমগ্র বিশ্বের বিধাতা আল্লাহ সুবাহানাহুতায়ালার যিনি সুবিচক্ষন ও সুবিচারক।
৩. সম্পদে মুসলিম নারীর উত্তোরাধিকার
[সূত্র নিদে©শিকাঃ আল কুরআন ৪:৭]
রাসূল (সাঃ) এর আগমনের সময় সম্পত্তিতে নারীর তো কোন অধিকার ছিলনা বরং নারী নিজেই ছিল সম্পত্তির অংশ। স্বামীর মৃত্যূর পর তার ছেলে সন্তানেরা অন্য সম্পত্তির সাথে স্ত্রীদেরও ভাগ করে নিত। শুধু যে আরবের মধ্যেই ছিল তা নয়। সে যুগেই কুরআন সম্পদে নারী পুরুষের ন্যায্য অধিকার ঘোষণা করে। তাদের পাওনা অংশ স্বয়ং আল্লাহ কতৃ©ক নিধা©রিত, যা কারো পক্ষে বদলানো সম্ভব নয়। কেউ চাইলে তার কোন বংশধরকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না।
আরও লক্ষ্য করার বিষয়, এই কু্রআনের যে আয়াতে সম্পদ বন্টন সংক্রান্ত আলোচনা এসছে তা নাযিল হয়েছিল এক জন মহিলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে। মুসলিম উত্তরাধিকার আইন কুরআনে বিস্তৃতভাবে বণি©ত আছে। তার দুটো বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ
ক. এখানে সম্পকে©র ভিত্তিতে সম্পদ বন্টিত হয়।
খ. অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষের অংশ মহিলার দ্বিগুণ, এটা পুরুষের বহুমুখী দায়-দায়িত্বের কারণে হয়েছে।
৪. সম্পদে নারীর অংশ অধে©ক হওয়া কি জুলুম?
শুধুমাত্র সম্পদ বন্টনে প্রাপ্ত অংশের ভিত্তিতে এমন মন্তব্য করা অজ্ঞতাপ্রসূত এবং অন্যায়। কারণ নারী শুধু এই এক উৎস থেকেই সম্পদ পায়না। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা তাকে আরও আয়ের উৎস দিয়েছেন। দিয়েছেন অনেক দায়িত্ব থেকে মুক্তি, পক্ষান্তরে পুরুষের রয়েছে অনেক আথি©ক দায়িত্ব। নীচে নারীর আথি©ক সুবিধাগুলি উল্লেখ করা হলোঃ
ক. বিয়ের পূবে© বাগদানে নারী যা উপহার পায় তা সবই তার।
খ. বিয়ের সময় সে স্বামীর কাছ থেকে মোহরানা পায়, যা সাধারণতঃ নগদ অথে© দেয়া হয়।(মোহরানা বকেয়া থাকলে তা স্বামীর সম্পদ থেকে দিতে হবে এবং এটা তার নিজের সম্পত্তি।- অনুবাদক)
গ. বিয়ের পূবে© সে কোন সম্পদের মালিক থাকলে বিয়ের পরও অব্যাহত খাকবে। তার স্বামী ঐ সম্পদ দাবী করতে পারবে না।
ঘ. স্ত্রী যদি আথি©কভাবে স্বামীর চেয়ে ধনীও হন তবুও তার উপর সংসারের কোন খরচের দায়িত্ব নেই। তার এবং সন্তানের খাবার, পোশাক, বাসস্থান, নিরাপত্তা, চিকিৎসা, বিনোদনসহ সকল খরচের দায়িত্ব স্বামীর।
ঙ. বিবাহিত জীবনে সে চাকরী করে বা টাকা খাটিয়ে যা আয় করবে তা সবই তার এবং ইচ্ছেমত খরচ করতে পারবে।
চ. কোন কারনে তালাক হলে সোহরানার অবশিষ্ট অংশ সে তাৎক্ষনিকভাবে পাবে।
ছ. তালাকের পর ইদ্দত কালে সে পুরো ভরণ পোষণ পাবে এবং পরবতী©তেও সন্তানদের পুরো খরচ পেতে থাকবে।
উপরের আলোচনায় দেখা যায় যে, সাবি©কভাবে ইসলাম নারীকেকে আথি©কভাবে লাভবানকরেছে পুরুষের উপর সব আথি©ক দায়িত্ব দিয়ে নারীকে তা থেকে অব্যাহতি দেয়া হযেছে। পুরুষের এতসব দায়িত্বের জন্যই পিতার সম্পদ বন্টনের সময় তার অংশ একটু বেশী ধরা হয়েছে। এ দায়িত্ব কেবল পরিবার ভরণ পোষণের জন্যেই নয়, দরিদ্র আত্মিয়দের ক্ষেত্রেও বতা©য়। মনে রাখা দরকার যে এই বন্টন ব্যাবস্থা স্বয়ং আল্লাহ করেছেন। যিনি নারী বা পুরুষ নন। যিনি সারা জাহানের প্রভু, সব©দ্রষ্টা ও ন্যায়ের প্রতীক (আল মীজান)।
৫. মেয়েদের কাজ করা প্রসঙ্গে
কুরআন ও সুন্নাহ এর মতে মেয়েদের কাজ করার কোন বাধা নেই। বরং একটি আদশ© ইসলামী সমাজে কিছু কাজ মেয়দের জন্যই বেশী উপযুক্ত। যেমন- প্রাইমারী স্কুল (যেখানে বাচ্চা ছেলে মেয়েরা তাদের শিক্ষকা থেকে জ্ঞান অজ©ন করবে) থেকে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পয©ন্ত মেয়েরাই লেখাপড়া করাবে; নাসিং, চিকিৎসা ইত্যাদি। ইসলামী আইনে নারীর সবচেয়ে গুরুত্বপূণ© কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মাতৃত্ব, শিশু পালন ও সংসার পরিচালনা। যদি বাইরের কাজ ও ঘরের কাজে দ্বন্ধ বাধে তবে সামাজিক গুরুত্বের কথা ভেবে, ঘর রক্ষাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়া সামগ্রিক ভাবে মেয়েদের চাকরী বাকরী করায় ইসলামে বাধা নেই। কম©স্থলে তারা পুরুষের হারে মজুরি পাবে।
৬. মাতৃত্ব ও গৃহস্থালির কাজ কি অনুৎপাদনশীল কাজ?
সামাজিক উন্নতি ও উৎপাদনকে যারা শুধু টাকা উপাজ©নের মাপকাঠিতে বিবেচনা করে, তারা মনে করতে পারেন মাতৃত্ব অনুৎপাদনশীল কাজ। কিন্তু যখন মানবিকতা আর নৈতিকতার বিবেচনায় এটা মাপা হয় তখন শিশু পরিচযা© আর সংসার রক্ষার মত গুরুত্বপূণ© কাজ আর খুজে পাওয়া যায় না। এটা কেন ভাবা হয় যে, যখন নারী ঘর অরক্ষিত ফেলে ক্যারিয়ার তৈরি করতে যায় তখন সে উৎপাদনশীল কাজ করছে, যে নারী ঘরে কাজ করছে, সে উৎপাদনশীল কিছু করছে না? একটা মেয়ে ঘর ছেড়ে হোটেলে রান্না করে অথ© উপাজ©ন করলে সেটা কাজ, আর যে মেয়েটি ঘরে আপনজনদের রান্না করে খাওয়াচ্চে, সেলাই করছে ও পরিচযা© করছে সেটা কাজ নয়?
আধুনিক পাশ্চাত্য সমাজের সবচেয়ে বিপয©য় হয়েছে এখানেই যে মাতৃত্বের দায়িত্বটিকে সেখানে ছোট করে দেখা
হচ্ছে। যদি মাতৃত্ব, শিশু পালন ও ঘর রক্ষার জন্য পারিশ্রমিকের দেয়ার বিধান থাকত তাহেলে একজন স্বামী তার পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে যেত। বিশেষ করে যিনি প্রয়োজনে ২৪ ঘন্টাই তৈরি! সুখী সংসার গড়া আর সন্তানদের ভালভাবে মানুষ করার চেয়ে বড় আনন্দ জগতে আর নেই।
৭. উপরের যুক্তি কি নেতিবাচক ঐতিহ্য থেকে উদ্ভুত?
ঐতিহ্যকে খারাপ এবং আধুনিকতাকে ভাল মনে করা সঠিক নয়। ঘরের কাজকে গুরুত্ব না দেয়ার এবং সন্তানদের প্রতি খেয়াল না করায় প্রাশ্চাত্য সমাজের নতুন প্রজন্মের কি অধঃপতন হচ্ছে তার দিকে একবার তাকলে মাতৃত্বের ঐতিহ্যকে নেতিবাচক বলা যায় না। তাদের পারিবারিক কাঠামো ভেঙ্গে যাওয়ায় আদরের সন্তান পথে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে, দুষ্ট লোকের শিকারে পরিণত হচ্ছে। ড্রাগ এবং মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। (এর ফলস্বরূপ যুবসমাজের অবিবাহিত থাকার প্রবণতাসহ আরো অন্যান্য সমস্যা তৈরি করেছে।- অনুবাদক)